ভূত বা অতিলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। পশ্চিমা দেশেও ব্যাপক মাত্রায় রয়েছে ভূত বিশ্বাস। ভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা কি সত্যিই বাস্তব। এ বিষয়ে পরিচালিত হয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা। বিষয়টি নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক ফ্রিল্যান্স লেখক ক্যাথরিন হিউলিক। সায়েন্স নিউজ ফর স্টুডেন্টসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন সঞ্জয় দে।
আবছায়া কেউ একজন যেন দরজা গলে ছুটে এলো। ডোমের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর, তরুণ বয়সেও সেদিনের স্মৃতি একদম পরিষ্কার।
যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ডোম বলছিলেন, ‘ছায়ামূর্তির শরীর বলতে শুধু একটি কঙ্কাল। সাদাটে ঝাপসা আভায় বেষ্টিত। দেহটি খুব নড়ছিল, মনে হয়নি ওর কোনো মুখ আছে। আমি আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে দিলাম। মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য ওকে দেখেছি।’
ডোম সেদিন যা দেখেছিলেন, তা কি একটি ভূত ছিল? যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও লোকবিশ্বাসে ভূত বা আত্মা হলো একজন মৃত ব্যক্তি, যিনি সজীব বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিভিন্ন গল্পে ভূত ফিসফিস করে বা কান্নাকাটি করতে পারে, জিনিসপত্র নাড়াচড়া করতে বা ফেলে দিতে পারে, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীতে গণ্ডগোল বাধাতে পারে; এমনকি একটি ঝাপসা অবয়ব নিয়ে দৃশ্যমান হতে পারে।
ভূতের গল্পগুলো বেশ মজার, বিশেষ করে হ্যালোইনসংক্রান্ত গল্পগুলো। তবে কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, ভূত বিষয়টি বাস্তব। ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ চ্যাপম্যান পরিচালিত একটি সমীক্ষায় অতীন্দ্রিয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বিশেষ কোনো স্থান বিদেহী আত্মার মাধ্যমে ‘ভুতুড়ে’ হয়ে যেতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসির পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত আরেক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় একজন বলেছেন, তারা ভূত দেখেছেন বা ভুতুড়ে পরিবেশে ছিলেন।
ভূতবিষয়ক টেলিভিশন শোতে অনেকে আত্মার কার্যকলাপ রেকর্ড বা পরিমাপের জন্য বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে অসংখ্য ভয়ংকর ছবি ও ভিডিও দেখে মনে হয় সত্যিই যেন ভূত আছে।
যাহোক, এসবের কোনোটিই ভূতের অস্তিত্বের ভালো প্রমাণ দেয় না। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য অনেকে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নেন।
এ ছাড়া ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো কখনও কখনও এমন সব শব্দ, ছবি বা অন্যান্য সংকেত ধারণ করে, যা সাধারণত লোকজন আশা করেন না। এর সম্ভাব্য অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ভূতের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
বৈজ্ঞানিকভাবে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বা দেয়ালের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মতো কাজ ভূতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া নির্ভরযোগ্য গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেও বিজ্ঞানীরা ভূতের অস্তিত্বহীনতার প্রমাণ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু কারণ আবিষ্কার করেছেন যার জন্য লোকজন ভূতের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারেন। এসব বৈজ্ঞানিক ডেটা প্রমাণ করে, আপনার চোখ, কান বা মস্তিষ্কও সব সময় আপনাকে সঠিক তথ্য দেয় না।
‘চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখছি’
ডোম আট বা নয় বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে শুরু করেন। ঘুম ভাঙার পরও তিনি নড়াচড়া করতে পারতেন না। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন, বিশেষ ওই অবস্থাটির একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে, সেটি হলো স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের পক্ষাঘাত।
এটি এমন এক অবস্থা যখন কেউ জাগ্রত অবস্থাতেও নিজেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা নিশ্চল বোধ করেন। তিনি নড়াচড়া বা কথা বলতে পারেন না, এমনকি গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। তিনি এমন কিছু দেখতে, শুনতে বা অনুভব করতে পারেন, যা আসলে সেখানে নেই। একে বলা হয় হ্যালুসিনেশন।
ডোমের কখনও কখনও মনে হতো কোনো প্রাণী তার ওপর হাঁটছে বা বসে আছে। অন্য সময় তিনি চিৎকার শুনতে পান। সেই কিশোর বয়সেই তিনি দরজাভেদী ওই ছায়ামূর্তিটি দেখেছিলেন।
মস্তিষ্কের ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা ঘটলে সাধারণত ঘুমের পক্ষাঘাত তৈরি হয়। সাধারণত আমরা পুরোপুরি ঘুমানোর পরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। ঘুম থেকে ওঠার আগে এই স্বপ্ন দেখাও বন্ধ হয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের স্নায়ুবিজ্ঞানী বালান্দ জালাল বলছিলেন, ‘স্লিপ প্যারালাইসিস হলো চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখার মতো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে প্রাঞ্জল স্বপ্নগুলো ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে ঘটে। এ সময় চোখের বন্ধ পাতার নিচে মণির দ্রুত সঞ্চালন ঘটে। স্বপ্ন দেখার সময়ে চোখ নড়াচড়া করলেও শরীরের বাকি অংশ থাকে নিশ্চল, অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। (স্বপ্ন দেখার সময় শরীর নিশ্চল না হলে কিন্তু বেশ বিপদ ঘটতে পারে। ধরা যাক, স্বপ্নে আপনি হাত-পা ছুড়ে বাস্কেটবল খেলছেন। সে সময় বাস্তবে হাত-পা সচল থাকলে বিছানার পাশের দেয়ালে আঘাত কিংবা মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে হতো।)’
ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগে মস্তিষ্ক ফের শরীরের সচলতা ফিরিয়ে দেয়। তবে স্লিপ প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক ওভাবে ঘটে না।
মেঘে ভাসা মুখচ্ছবি
যেখানে যা নেই, সেটি দেখতে সব সময় যে আপনার স্লিপ প্যারালাইসিস থাকতে হবে- তাও কিন্তু নয়। কখনও কি মনে হয়েছে, আপনার ফোন বাজছে, অথচ ধরার পর দেখা গেল সেটি নিশ্চল? অথবা এমন কি কখনও মনে হয়েছে, চারপাশে কেউ নেই, তার পরও কেউ যেন এইমাত্র আপনার নাম ধরে ডাকল? আবার অন্ধকার ছায়ায় হঠাৎ যেন একটি মুখ উঁকি দিয়ে গেল?
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থামব্রিয়ার মনোবিদ ডেভিড স্মাইলেস বলেছেন, এসবও এক ধরনের হ্যালুসিনেশন। তিনি মনে করেন, প্রায় সবারই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ এটি উপেক্ষা করেন, তবে কেউ কেউ ভাবেন এটা ভূতের কাণ্ডকারখানা।
বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো সব সময় সঠিক তথ্য দেবে, এমনটা ভাবতেই আমরা অভ্যস্ত। তাই কখনও হ্যালুসিনেশনের অভিজ্ঞতা হলে আমাদের প্রথম প্রবৃত্তিটি সাধারণত বিশ্বাস স্থাপনের দিকেই যায়।
ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘আপনি যদি মৃত প্রিয়জনের উপস্থিতি দেখেন বা অনুভব করেন এবং সেই উপলব্ধিতে বিশ্বাস স্থাপন করেন- তাহলেই কিন্তু বিষয়টি ভৌতিক ঘটনায় পরিণত হয়ে যায়। কারণ মস্তিষ্ক আপনাকে মিথ্যা বলছে এমন ধারণার চেয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা অনেক বেশি সহজ।’
মস্তিষ্কের কিন্তু খুব কঠিন একটি কাজ আছে। বিশ্বের অজস্র তথ্যের সংকেতের ব্যবস্থাপনায় অক্লান্ত কাজ করে যায় আমাদের মগজ। চোখ রঙের সংকেত দেয়, কান নানান শব্দের সংকেত পাঠায়। ত্বক চাপ-তাপের অনুভব তৈরি করে।
মস্তিষ্ক এই জগাখিচুড়ি সংকেতের জঞ্জাল থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সুবিন্যস্ত করার কাজ করে। একে বলা হয় বটম-আপ প্রসেসিং। আর এ কাজে দারুণ দক্ষ আমাদের মস্তিষ্ক। এই দক্ষতা এতটাই ভালো যে কখনও কখনও অর্থহীন জিনিসগুলোরও অর্থ খুঁজে পায় মাথার মগজ। একে বলা হয় প্যারিডোলিয়া। আপনি মেঘের দিকে তাকিয়ে খরগোশ, জাহাজ বা কোনো মানুষের মুখ যখন দেখেন, সেটি ঘটে এই প্যারিডোলিয়ার কারণে।
মস্তিষ্ক টপ-ডাউন পদ্ধতিতেও সংকেতের প্রক্রিয়াজাত করে। ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সংকেতের সঙ্গে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার উপলব্ধির তথ্য যুক্ত হয়। বেশির ভাগ সময় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অজস্র সংকেত মস্তিষ্কে আসে। এর সবগুলোতে মনোযোগ দিলে আপনি উন্মাদ হয়ে যাবেন। এ জন্য মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বেছে নেয়। তারপর তথ্যের বাকিটা পূরণ করে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার আগে থেকে তৈরি উপলব্ধি বা পারসেপশন দিয়ে।’
আর তাই আপনি এই মুহূর্তে যা দেখছেন, বাস্তবের পৃথিবী তা নাও হতে পারে। যেটি দেখছেন তা আসলে এমন একটি ছবি, যা চোখের মাধ্যমে ধারণ করা সংকেতের ভিত্তিতে মস্তিষ্ক আপনার জন্য এঁকে দিয়েছে। অন্য ইন্দ্রিয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ সময় এই ছবিটি সঠিক। তবে কখনও কখনও মস্তিষ্ক এমন কিছু যোগ করে দেয়, যার অস্তিত্ব আদৌ নেই।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আপনি কোনো গানের কথা শুনতে ভুল করলে মস্তিষ্ক ঠিকই সেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো শব্দ যোগ করে দেয়। (এবং আপনি পরে সঠিক শব্দ শিখলেও মস্তিষ্ক সম্ভবত সেই ভুল শোনাকেই অব্যাহত রাখবে।)
তথাকথিত ভূত-শিকারিরা তাদের যন্ত্রে বিশেষ শব্দ ধারণ করে সেগুলোকে ভূতের কথাবার্তা হিসেবে প্রচার করার সময়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এই রেকর্ডিং সম্ভবত শুধু একরাশ বিশৃঙ্খল শব্দমালা। অনুমান শক্তির ওপর নির্ভর না করলে আপনি এই শব্দমালার কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না। তবে যখন অনুমান করতে চাইবেন, তখন মনে হবে যেন সহজেই তা বুঝতে পারছেন।
আমাদের মস্তিষ্ক বিশৃঙ্খলতার মাঝে কোনো অবয়ব যুক্ত করে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগী ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন অনুভব করেন, তাদের প্যারিডোলিয়ার মাত্রা সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
ডেভিড স্মাইলেসের মতে, মানুষ সাধারণত একাকী, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়ার্ত পরিবেশে ভূতের অস্তিত্ব অনুভব করেন। অন্ধকার পরিবেশে মানব মস্তিষ্ক বিশ্ব থেকে পর্যাপ্ত চাক্ষুষ তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় মস্তিষ্কের নিজস্ব সৃষ্টিকে বাস্তবতার ওপর চাপিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
আপনি কি গরিলা দেখেছেন?
মস্তিষ্ক বাস্তবতার চিত্রে কখনও কখনও এমন জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে যার অস্তিত্ব আসলে নেই। আবার অনেক সময় বাস্তবে থাকা কোনো জিনিসকে শনাক্ত করতে ব্যর্থতার ঘটনাও ঘটে। একে বলা হয় ‘অমনোযোগী অন্ধত্ব’ বা ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেস।
এটি কীভাবে কাজ করে বুঝতে চাইলে নিচের ভিডিওটি দেখুন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাদা ও কালো শার্ট পরা লোকজন বাস্কেটবল খেলছেন। সাদা শার্ট পরা খেলোয়াড়েরা কতবার বল পাস করছেন গণনা করুন। কয়বার দেখতে পেলেন?
ভিডিওটির এক অংশে গরিলা স্যুটে এক ব্যক্তি খেলোয়াড়দের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছেন। সেটি কি দেখতে পেয়েছেন? এই ভিডিও নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক দর্শক ভিডিও দেখার সময় গরিলার পোশাকে চলে যাওয়া ব্যক্তিকে দেখতে পারেননি।
আপনিও যদি গরিলাকে মিস করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে এটা আপনার ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেসের কারণে ঘটেছে। আপনার মস্তিষ্ক এমন একটি অবস্থায় ছিল, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় অ্যাবজরপশন। এমন অবস্থায় আপনি একটি কাজে এতটাই মনোযোগী হন যে, আশপাশের আর সবকিছু নজর এড়িয়ে যায়।
লন্ডনের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ বলেছেন, ‘মস্তিষ্কের মেমরি ভিডিও ক্যামেরার মতো কাজ করে না। আপনি কেবল সেটাই মনে রাখবেন যাতে আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। কিছু লোকের অন্যদের তুলনায় মনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তাদের ভূতসহ উচ্চমাত্রার অলৌকিকতায় বিশ্বাসের মাত্রাও বেশি।’
ক্রিস্টোফার ও তার সহকর্মীরা ২০১৪ সালে একটি সমীক্ষা চালান। এতে দেখা গেছে, উচ্চতর মাত্রায় অলৌকিকতায় বিশ্বাস এবং অভিনিবেশের উচ্চ প্রবণতা থাকা ব্যক্তিদের অসাবধানতাবশত অন্ধত্বে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। তাদের মস্তিষ্কে একসঙ্গে অনেক স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা কম।
স্মৃতিতে প্রচুর তথ্য রাখতে বা একবারে একাধিক জিনিসের প্রতি মনোযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে চারপাশ থেকে সংবেদনশীল সংকেতগুলো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর সে ক্ষেত্রে অনেকে ভুল ধারণার দায় চাপাতে পারেন ভূতের ওপর।
বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার শক্তি
যেকোনো ব্যক্তি ঘুমের পক্ষাঘাত, হ্যালুসিনেশন, প্যারিডোলিয়া বা অমনোযোগী অন্ধত্ব অনুভব করতে পারেন। তবে এই অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যার উপায় হিসেবে সবাই ভূত বা অন্য কোনো অতিপ্রাকৃত সমাধানের পথ খোঁজেন না। এমনকি ডোম কখনও ভাবেননি, ছোটবেলায় তিনি সত্যিই কোনো ভূতের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বড় হয়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে ঘেঁটেছেন এবং কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন।
তিনি বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাপদ্ধতি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় উত্তর পেয়েছিলেন। এখনও তিনি স্নায়ুবিজ্ঞানী বালান্দ জালালের তৈরি একটি কৌশল ব্যবহার করেন। ঘুমের পক্ষাঘাত এড়াতে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেন, শরীরকে যতটা সম্ভব শিথিল করার চেষ্টা করেন এবং কিছুটা সময় এভাবে পার হতে দেন। ডোম বলেন, ‘আমি এখন একে অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করি। আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাই এবং ঘুমকে উপভোগ করি।’
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ওয়েলসের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রবিন অ্যান্ড্রুসের ধারণা ছিল, শক্তিশালী বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির মানুষের অতিলৌকিক বিশ্বাসের প্রবণতা কম। আর এই ধারণা প্রমাণের জন্য তিনি মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ টাইসনের সঙ্গে একটি গবেষণা করেছেন।
গবেষণায় ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘মৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব’ অথবা ‘মন বা আত্মা শরীর ছেড়ে ভ্রমণ করতে পারে’- এমন ধারণার সঙ্গে তারা কতটা একমত।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতর বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির শিক্ষার্থীদের অলৌকিক বিশ্বাসের মাত্রা কম। একই সঙ্গে কলা বিভাগে অধ্যয়নরতদের তুলনায় ভৌতবিজ্ঞান, প্রকৌশল বা গণিতের শিক্ষার্থীদের ভূত বিশ্বাস অনেকটা কম। অন্য আরও কয়েকটি গবেষণায় একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
তবে অবাক করা বিষয় হলো, বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত বা বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত অনেকের মধ্যেও অলৌকিকতায় বিশ্বাস দেখা যায়। একে একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবেই মনে করছেন রবিন অ্যান্ড্রুস ও ফিলিপ টাইসন।
টাইসন বলছেন, ‘একটি ভূতের গল্প বা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা বাস্তব কি না তা বিচারের সক্ষমতা না থাকলে আপনি যেকোনো বিজ্ঞাপন, অপচিকিৎসা বা ভুয়া খবরের মাধ্যমেও বোকা বনে যেতে পারেন। কীভাবে তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করা যায় এবং যুক্তিসংগত ও বাস্তব ব্যাখ্যা খোঁজা যায় তা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’
আর তাই কেউ ভূতের গল্প বললে উপভোগ করুন। তবে এতে বিশ্বাস স্থাপনের কিছু নেই, যা বর্ণনা করা হয়েছে সে বিষয়ে সম্ভাব্য সব ব্যাখ্যা নিয়ে চিন্তা করুন। মনে রাখবেন, ভয়ংকর কোনো ধারণায় ডুবিয়ে দিয়ে আপনার মন কিন্তু যেকোনো সময় আপনাকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন:ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট গ্রেগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক বিজ্ঞান উৎসব। বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এই মেলা।
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গ্রেগরিয়ান সায়েন্স ক্লাব এই আয়োজন করেছে।
বিজ্ঞান মেলায় সেন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাই স্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার্স, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে।
মেলার ইভেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে অলিম্পিয়াড, সায়েন্স প্রজেক্ট ডিসপ্লে, বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়াল ম্যাগাজিন কম্পিটিশন ও প্রোজেক্ট আইডিয়া প্রেজেন্টেশন। প্রতিটি ইভেন্টের জন্য স্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জন্য কিডস গ্রুপ, পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য জুনিয়র গ্রুপ, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির জন্য ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপ, নবম-দশম শ্রেণির জন্য সিনিয়র গ্রুপ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য কলেজ গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ব্রাদার উজ্জ্বল প্লাসিড পেরেরা সি. এস. সি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. শাহজাহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোতোয়ালি থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারহানা শাহীন লিপি।
মেলায় প্রায় ২৫০-৩০০টি প্রজেক্ট প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি আয়োজক কমিটি প্রায় ৩৩৫টি পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছে। প্রজেক্টগুলো মূল্যায়ন করবেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক।
৯ই মার্চ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. শৌকত আকবর।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক গ্রেগরিয়ান ড. মো. শহিদুল ইসলাম এবং সিএসআরএম-এর পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করে সাড়া ফেলে দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এই সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেয়া হয় ‘পিপীলিকা’। তবে গত তিন বছর ধরে থমকে আছে এর কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ সংকটে সার্চ ইঞ্জিনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেবল সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ই নয়, একই অবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’-এরও। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও তা একপ্রকার নিস্ক্রিয়। দ্রুত ক্যানসার শনাক্তের সম্ভাবনাময় ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ ডিভাইসটিও অর্থ সংকটে আটকে গেছে। করোনা মহামারি এবং অর্থ ও জনবলের অভাবে এগোতে পারেনি বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’।
দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তেত্রিশ বছর আগে সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কিছু উদ্ভাবন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গত কয়েক বছর ধরেই নেই নতুন কোনো উদ্ভাবন। এমনকি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে আছে পুরনোগুলোও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তারা গবেষণা, উদ্ভাবনসহ সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে এখন কোনো উৎসাহ দেয়া হয় না।
পিপীলিকা
২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল ১১ জন ডেভেলপার মিলে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। পিপীলিকার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন মো. রুহুল আমীন সজীব।
শাবির আইআইসিটি বিভাগ জানায়, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ সংক্রান্ত কিছু সার্ভিস গ্রহণের বিনিময়ে সরকারের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম থেকে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ টাকা দেয়া হয়। শেষ কিস্তির (৯ম কিস্তি) ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৩ টাকা পিপীলিকাকে পরিশোধের আগেই সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই অর্থ সংকটে পিপীলিকা বন্ধ রয়েছে।
আগের মতো ৫-৬ জন পূর্ণকালীন আইটি/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করানোর জন্য মাসিক ৩-৪ লাখ টাকা অনুদান পেলে পিপীলিকার উন্নয়ন কাজ চলমান রাখা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে টিম লিডার মো. রুহুল আমীন সজীব বলেন, ‘আমি এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত নই।’
শাবির আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রজেক্টের ফান্ডিং আসত সরকারের কাছে থেকে। ২০২০ সাল থেকে আমাদের প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট সবকিছু সঠিক সময়ে পাঠালেও কোনো অর্থ পাইনি। সর্বশেষ আমাদের প্রায় ২২ লাখ টাকা আটকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া তো আমরা গবেষক ও কর্মচারীদের কাজ করাতে পারি না। আমরা যতটুকু সম্ভব দিয়েছি। তবুও তাদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের আর টাকা দেয়া হয়নি। আবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সাপোর্ট না পাওয়ায় কারণে বর্তমানে তা বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও এটুআইয়ের পিডিসহ সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের সব রিসোর্স আছে। সরকারের কাছে থেকে আবার সাপোর্ট পেলে আমরা তা সচল করতে পারব।’
এটুআই প্রোগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, “যতটুকু মনে পড়ে ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইঞ্জিনটা যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মানের হয়নি। এজন্য ফান্ডিং বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান পিডি ভালো বলতে পারবেন।’
বর্তমান পিডি (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমার জানা নাই। এটা আসলে কী অবস্থায় আছে, খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করব।’
একুশে বাংলা কি-বোর্ড
কি-বোর্ড নিজেই বুঝে ফেলবে ব্যবহারকারী কী লিখতে চাইছেন- ২০১৮ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এমন কি-বোর্ড কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এর নাম দেয়া হয় ‘একুশে বাংলা কিবোর্ড’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের পাশাপাশি দ্রুত টাইপিং ও স্পর্শ করে লেখার ব্যবস্থা রয়েছে এ কি-বোর্ডে। ফলে টাইপ না জানলেও যে কেউ সহজেই বাংলা টাইপিং শিখতে পারে এর মাধ্যমে।
২০২০ সালে কি-বোর্ডটির উদ্ভাবক তৎকালীন শাবির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বিদেশে চলে গেলে সেটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে এই প্রজেক্টের কোনো আপডেট নেই। আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে আর কোনো কাজ করা হয়নি।’
ননলিনিয়ার অপটিকস
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবনেও রয়েছে শাবিপ্রবির সাফল্য। অল্প খরচে ও কম সময়ে ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে দাবি ছিল উদ্ভাবকদের।
হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেসময়কার অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসার শনাক্তকরণের এ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন, মনজ কান্তি বিশ্বাস ও এনামুল হক।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ফান্ডিংসহ অনেক সমস্যা আছে। মূলত ফান্ডিংয়ের জন্য আমরা আটকে গেছি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট শিগগিরিই চালু হবে। সম্ভবত পিডি নিয়োগ হয়ে গেছে। ওটা হলেই আমরাও ফান্ড পেয়ে যাব।
‘বর্তমানে আপগ্রেডের কাজ চলছে। ফান্ডিং পেলে আমরা ক্লিনিক্যালি ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে এটাকে সর্বসাধারণের ব্যবহাপযোগী করে তোলা। হেকাপের আওতায় কাজটি চলছিল, পরে হিট আসার কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রজেক্ট পেলে আমরা বাকি কাজ করে ফেলতে পারব।’
প্রকল্পটি একেবারে বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ আমাদের মতো করে চলছে।’
রোবট রিবো
২০১১ সাল থেকে শাবির তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব উদ্যোগে ১১ জনের একটি দল রোবট নিয়ে কাজ শুরু করে।
২০১৫ সালে বার্ষিক সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি রোবোসাস্টকে মানবসদৃশ রোবট তৈরির করতে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। দলটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবসদৃশ রোবট তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘রিবো’।
রোবটটি ২৪ ডিগ্রি কোণে স্বাধীনভাবে ঘুরতে, নাচতে, মুখের অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ, হ্যান্ডশেক, হাত উপর-নিচে তোলা, বাংলায় কথা বলা, এমনকি নিজের নামও বলতে পারত। বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত।
রোবটটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া শাবির সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।
দলের সদস্য মেহেদী হাসান রূপক বলেন, ‘আমরা ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছিলাম। সেখানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফান্ডিং করবেন। আমরা তখন উনাকে একটা আবেদনপত্রও দিয়েছিলাম। পরে করোনা ও জনবল সংকটে আর এগোতে পারিনি। এর মধ্যে আমাদেরও পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এই উদ্ভাবনগুলোর বর্তমান অবস্থার বিষয়ে আমি খোঁজখবর নেব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আমরা কথা বলব।’
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের শিশুরা কেমোথেরাপির চেয়ে স্বস্তি দেয় এমন এক ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।
লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হসপিটালে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ১১ বছর বয়সী শিশু আর্থারকে দিয়ে এই ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয় বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বুধবার জানানো হয়েছে।
আর্থারের পরিবার এ চিকিৎসাকে ‘আশার আলো’ আখ্যা দিয়ে দিয়ে বলেছে, এই ওষুধ তাকে বেশি অসুস্থতা বোধ না করিয়েই কাজ করেছে। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিবর্তে বাসাতেও এই চিকিৎসা দেয়া যায়। এতে শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় দিতে পারছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্লিনাটুমোমাব বা ব্লিনা নামের এ ওষুধ এখন শিশুদের পাশপাশি ক্যানসারে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসারও লাইসেন্স পেয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদে ব্যবহার করা যাচ্ছে ওষুধটি।
শিশু আর্থারের পরিবার বলছে, তা জন্য ব্লিনাটুমোমাব বা ব্লিনা একমাত্র আসল বিকল্প ছিল। এক পর্যায়ে কেমোথেরাপি যখন ব্যর্থ হয় এবং সে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে তখন তার জন্য ওই ওষুধ খুব কার্যকর স্বস্তির কারণ হয়।
যুক্তরাজ্য জুড়ে প্রায় ২০টি কেন্দ্র বি-সেল অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (বি-এএলএল) আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় এটি অফ-লেবেল ব্যবহার করছে। ওষুধটি একটি ইমিউনোথেরাপি যা ক্যান্সার কোষ খুঁজে বের করে, যাতে শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম তাদের চিনতে পারে এবং ধ্বংস করতে পারে।
ব্লিনা একটি পাতলা প্লাস্টিকের টিউবের মাধ্যমে পরিচালিত তরলের একটি ব্যাগে থাকে যার মাধ্যমে রোগীর বাহুতে অনেক মাস ধরে শিরায় প্রবাহিত থাকে। একটি ব্যাটারি চালিত পাম্প নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত ওষুধটি রক্তে প্রবেশ করে, একটি ব্যাগ অনেক দিন স্থায়ী হতে পারে।
বিবিসি বলছে, ব্লিনার কিট একটি ছোট ব্যাকপ্যাকে বহন করা যেতে পারে। কেমোথেরাপির বিপরীতে এখন এই ওষুধ বেশি স্বস্তির কারণ হয়েছে আর্থারের মতো অনেক রোগীর জন্য।
আরও পড়ুন:বিশ্বে বিগত এক লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে ২০২৩ সালের উষ্ণতম বর্ষ হওয়া ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’ বলে বুধবার জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিজ্ঞানীরা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে প্রকাশিত ডেটা অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর স্মরণকালের সবচেয়ে উষ্ণ অক্টোবর হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা উল্লিখিত তথ্য জানিয়েছেন।
ইইউর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) জানায়, অক্টোবরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যায় গত মাসে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবর স্মরণকালের উষ্ণতম অক্টোবর ছিল বলে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
সিথ্রিএসের উপপরিচালক সামান্থা বুরগেস এ বছরের অক্টোবরের তাপমাত্রা ‘অতি চরমভাবাপন্ন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গত মাসে তাপমাত্রা দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হওয়ার মধ্য দিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন, চলতি বছরে এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়নের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে।
সিথ্রিএস জানায়, চলতি বছরের অক্টোবরে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর তাপমাত্রা ছিল ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল নাগাদ একই মাসের তাপমাত্রার চেয়ে এক দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ইইউর সার্ভিসটি জানায়, তাপমাত্রার রেকর্ডভাঙা অক্টোবরের অর্থ হলো ২০২৩ সাল যে স্মরণকালের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে, তা ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’।
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন গবেষক।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার এ তিন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, কোয়ান্টম ডটস নিয়ে আবিষ্কার ও সংশ্লেষণের জন্য ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে মোঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুইস ব্রুস ও অ্যালেক্সেই একিমভকে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়, একিমভ ও ব্রুস স্বতন্ত্রভাবে কোয়ান্টম ডটস সৃষ্টিতে সক্ষম হন। আর বাওয়েন্ডি রাসায়নিক উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আনেন।
কোয়ান্টাম ডটস বা কিউডিস সেমিকন্ডাক্টর ন্যানোক্রিস্টাল হিসেবেও পরিচিত। এগুলো সেমিকন্ডাক্টর কণা, যেগুলো আকারে কয়েক ন্যানোমিটার। ন্যানোটেকনোলজি ও বস্তুবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই কিউডিস।
রসায়নে এবারের নোবেল পুরস্কারজয়ী মোঙ্গি জি. বাওয়েন্ডির জন্ম ১৯৬১ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) কাজ করছেন।
যৌথভাবে রসায়নের আরেক নোবেলজয়ী লুইস ই. ব্রুসের জন্ম ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইর ক্লিভল্যান্ডে। তিনি নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত।
উল্লিখিত দুজনের সঙ্গে এবার রসায়নে নোবেল পাওয়া আরেক ব্যক্তি অ্যালেক্সেই আই. একিমভের জন্ম ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। তিনি নিউ ইয়র্কভিত্তিক ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকরপোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
রসায়নে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১৪ জন এ শাস্ত্রে নোবেল পান।
এ শাস্ত্রে ২৫ বার নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে দুজন করে ব্যক্তিকে। এ শাস্ত্রে দুবার নোবেল পুরস্কার পান ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার ও ব্যারি শার্পলেস।
সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ৩৫ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পান ফ্রেডেরিক জোলিয়ট, যিনি ১৯৩৫ সালে এ পুরস্কার পান। সবচেয়ে বেশি ৯৭ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জন বি. গুডএনাফ। পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বজ্যেষ্ঠ নোবেলজয়ীও তিনি।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।
এবার নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরস্কারটি সোমবার সুইডেনের স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার। বুধবার রসায়নের পর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার।
আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছেছেন দুই রুশ ও এক আমেরিকান নভোচারী।
রুশ-আমেরিকা সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যেই উভয় দেশের নভোচারীরা যৌথভাবে মহাকাশ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রোসকসমস মহাকাশচারী ওলেগ কোনোনেনকো ও নিকোলাই চুবসহ নাসার নভোচারী লোরাল ও’হারা কাজাখস্তানের বাইনোকুর কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ এমএস-২৪ মহাকাশযানে ওঠেন।
মহাকাশযানটি তিন ঘণ্টা পর আইএসএসে পৌঁছায়। সেখানে তিন রাশিয়ান, দুই আমেরিকান, এক জাপানী নভোচারী ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার এক প্রতিনিধির সাঙ্গে যোগ দেন।
রাশিয়ার প্রায় ৫০ বছর পর চালানো চন্দ্রাভিযান গত মাসে ব্যর্থ হওয়ার পর মহাকাশ স্টেশনে গেল নভোচারীরা।
আইএসএস আমেরিকা ও রাশিয়ার সহযোগিতার একটি ব্যতিক্রমী ভেন্যু। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।
নভোচারীরা এমএস-২৩ মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন বলে জানায় রসকসমস। সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:মহাশূন্যে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল-১। চন্দ্রাভিযানের ঠিক পর পরই সৌর অভিযানে নেমেছে দেশটি।
ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ‘এল-১’-এর পথে রওনা দেয়ার সময় পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে পৃথিবী ও চাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে পাঠিয়েছে ওই সৌরযান।
বৃহস্পতিবার ইসরো এ ছবি প্রকাশ করেছে বলে এনডিটিভর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। টুইটারে ছবিগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছে ইসরো।
পোস্টে লেখা হয়েছে, আদিত্য এল-১ অভিযান: প্রত্যক্ষদর্শী! আদিত্য এল-১ সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ এল-১ পয়েন্টের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পথে সেলফি তুলল, ছবি তুলল পৃথিবী এবং চাঁদেরও।
৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতে ভারতীয় সৌরযানের তোলা সেলফি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে সৌরযান আদিত্য-এর ভিইএলসি এবং সুইট দৃশ্যমান।
এর পর ভারতীয় সৌরযানে বসানো ক্যামেরার তোলা পৃথিবী এবং চাঁদের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঘন কালো আকাশে আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীর একদিক। তার ডানদিকে চোখে পড়ছে একটি চলমান বিন্দু। সেটি চাঁদ বলে জানিয়েছে ইসরো। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে আদিত্য এল-১ সৌরযানের উৎক্ষেপণ হয়। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর চারদিকে দুবার চক্কর কেটেছে সেটি।
সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছানোর আগে, আরও দুবার গতি বাড়িয়ে চক্কর কাটবে এই যান। ১২৫ দিন পর ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছনোর কথা ভারতের সৌরযানের।
মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্বিঘ্নে নজরদরি চালানো যায়।
সূর্যের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য, গণিত বিশারদ জোসেফ লুইস ল্যাগ্রেঞ্জ এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ আবিষ্কার করেন।
ইসরো জানিয়েছে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ থেকে কোনো রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ঠিক কী ঘটছে, মহাকাশের সার্বিক আবহাওয়ায় তার কী প্রভাব পড়ছে, তৎক্ষণাৎই সব তথ্য হাতে পাওয়া সম্ভব।
মন্তব্য