ভূত বা অতিলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। পশ্চিমা দেশেও ব্যাপক মাত্রায় রয়েছে ভূত বিশ্বাস। ভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা কি সত্যিই বাস্তব। এ বিষয়ে পরিচালিত হয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা। বিষয়টি নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক ফ্রিল্যান্স লেখক ক্যাথরিন হিউলিক। সায়েন্স নিউজ ফর স্টুডেন্টসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন সঞ্জয় দে।
আবছায়া কেউ একজন যেন দরজা গলে ছুটে এলো। ডোমের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর, তরুণ বয়সেও সেদিনের স্মৃতি একদম পরিষ্কার।
যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ডোম বলছিলেন, ‘ছায়ামূর্তির শরীর বলতে শুধু একটি কঙ্কাল। সাদাটে ঝাপসা আভায় বেষ্টিত। দেহটি খুব নড়ছিল, মনে হয়নি ওর কোনো মুখ আছে। আমি আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে দিলাম। মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য ওকে দেখেছি।’
ডোম সেদিন যা দেখেছিলেন, তা কি একটি ভূত ছিল? যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও লোকবিশ্বাসে ভূত বা আত্মা হলো একজন মৃত ব্যক্তি, যিনি সজীব বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিভিন্ন গল্পে ভূত ফিসফিস করে বা কান্নাকাটি করতে পারে, জিনিসপত্র নাড়াচড়া করতে বা ফেলে দিতে পারে, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীতে গণ্ডগোল বাধাতে পারে; এমনকি একটি ঝাপসা অবয়ব নিয়ে দৃশ্যমান হতে পারে।
ভূতের গল্পগুলো বেশ মজার, বিশেষ করে হ্যালোইনসংক্রান্ত গল্পগুলো। তবে কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, ভূত বিষয়টি বাস্তব। ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ চ্যাপম্যান পরিচালিত একটি সমীক্ষায় অতীন্দ্রিয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বিশেষ কোনো স্থান বিদেহী আত্মার মাধ্যমে ‘ভুতুড়ে’ হয়ে যেতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসির পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত আরেক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় একজন বলেছেন, তারা ভূত দেখেছেন বা ভুতুড়ে পরিবেশে ছিলেন।
ভূতবিষয়ক টেলিভিশন শোতে অনেকে আত্মার কার্যকলাপ রেকর্ড বা পরিমাপের জন্য বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে অসংখ্য ভয়ংকর ছবি ও ভিডিও দেখে মনে হয় সত্যিই যেন ভূত আছে।
যাহোক, এসবের কোনোটিই ভূতের অস্তিত্বের ভালো প্রমাণ দেয় না। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য অনেকে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নেন।
এ ছাড়া ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো কখনও কখনও এমন সব শব্দ, ছবি বা অন্যান্য সংকেত ধারণ করে, যা সাধারণত লোকজন আশা করেন না। এর সম্ভাব্য অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ভূতের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
বৈজ্ঞানিকভাবে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বা দেয়ালের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মতো কাজ ভূতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া নির্ভরযোগ্য গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেও বিজ্ঞানীরা ভূতের অস্তিত্বহীনতার প্রমাণ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু কারণ আবিষ্কার করেছেন যার জন্য লোকজন ভূতের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারেন। এসব বৈজ্ঞানিক ডেটা প্রমাণ করে, আপনার চোখ, কান বা মস্তিষ্কও সব সময় আপনাকে সঠিক তথ্য দেয় না।
‘চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখছি’
ডোম আট বা নয় বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে শুরু করেন। ঘুম ভাঙার পরও তিনি নড়াচড়া করতে পারতেন না। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন, বিশেষ ওই অবস্থাটির একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে, সেটি হলো স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের পক্ষাঘাত।
এটি এমন এক অবস্থা যখন কেউ জাগ্রত অবস্থাতেও নিজেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা নিশ্চল বোধ করেন। তিনি নড়াচড়া বা কথা বলতে পারেন না, এমনকি গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। তিনি এমন কিছু দেখতে, শুনতে বা অনুভব করতে পারেন, যা আসলে সেখানে নেই। একে বলা হয় হ্যালুসিনেশন।
ডোমের কখনও কখনও মনে হতো কোনো প্রাণী তার ওপর হাঁটছে বা বসে আছে। অন্য সময় তিনি চিৎকার শুনতে পান। সেই কিশোর বয়সেই তিনি দরজাভেদী ওই ছায়ামূর্তিটি দেখেছিলেন।
মস্তিষ্কের ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা ঘটলে সাধারণত ঘুমের পক্ষাঘাত তৈরি হয়। সাধারণত আমরা পুরোপুরি ঘুমানোর পরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। ঘুম থেকে ওঠার আগে এই স্বপ্ন দেখাও বন্ধ হয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের স্নায়ুবিজ্ঞানী বালান্দ জালাল বলছিলেন, ‘স্লিপ প্যারালাইসিস হলো চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখার মতো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে প্রাঞ্জল স্বপ্নগুলো ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে ঘটে। এ সময় চোখের বন্ধ পাতার নিচে মণির দ্রুত সঞ্চালন ঘটে। স্বপ্ন দেখার সময়ে চোখ নড়াচড়া করলেও শরীরের বাকি অংশ থাকে নিশ্চল, অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। (স্বপ্ন দেখার সময় শরীর নিশ্চল না হলে কিন্তু বেশ বিপদ ঘটতে পারে। ধরা যাক, স্বপ্নে আপনি হাত-পা ছুড়ে বাস্কেটবল খেলছেন। সে সময় বাস্তবে হাত-পা সচল থাকলে বিছানার পাশের দেয়ালে আঘাত কিংবা মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে হতো।)’
ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগে মস্তিষ্ক ফের শরীরের সচলতা ফিরিয়ে দেয়। তবে স্লিপ প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক ওভাবে ঘটে না।
মেঘে ভাসা মুখচ্ছবি
যেখানে যা নেই, সেটি দেখতে সব সময় যে আপনার স্লিপ প্যারালাইসিস থাকতে হবে- তাও কিন্তু নয়। কখনও কি মনে হয়েছে, আপনার ফোন বাজছে, অথচ ধরার পর দেখা গেল সেটি নিশ্চল? অথবা এমন কি কখনও মনে হয়েছে, চারপাশে কেউ নেই, তার পরও কেউ যেন এইমাত্র আপনার নাম ধরে ডাকল? আবার অন্ধকার ছায়ায় হঠাৎ যেন একটি মুখ উঁকি দিয়ে গেল?
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থামব্রিয়ার মনোবিদ ডেভিড স্মাইলেস বলেছেন, এসবও এক ধরনের হ্যালুসিনেশন। তিনি মনে করেন, প্রায় সবারই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ এটি উপেক্ষা করেন, তবে কেউ কেউ ভাবেন এটা ভূতের কাণ্ডকারখানা।
বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো সব সময় সঠিক তথ্য দেবে, এমনটা ভাবতেই আমরা অভ্যস্ত। তাই কখনও হ্যালুসিনেশনের অভিজ্ঞতা হলে আমাদের প্রথম প্রবৃত্তিটি সাধারণত বিশ্বাস স্থাপনের দিকেই যায়।
ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘আপনি যদি মৃত প্রিয়জনের উপস্থিতি দেখেন বা অনুভব করেন এবং সেই উপলব্ধিতে বিশ্বাস স্থাপন করেন- তাহলেই কিন্তু বিষয়টি ভৌতিক ঘটনায় পরিণত হয়ে যায়। কারণ মস্তিষ্ক আপনাকে মিথ্যা বলছে এমন ধারণার চেয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা অনেক বেশি সহজ।’
মস্তিষ্কের কিন্তু খুব কঠিন একটি কাজ আছে। বিশ্বের অজস্র তথ্যের সংকেতের ব্যবস্থাপনায় অক্লান্ত কাজ করে যায় আমাদের মগজ। চোখ রঙের সংকেত দেয়, কান নানান শব্দের সংকেত পাঠায়। ত্বক চাপ-তাপের অনুভব তৈরি করে।
মস্তিষ্ক এই জগাখিচুড়ি সংকেতের জঞ্জাল থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সুবিন্যস্ত করার কাজ করে। একে বলা হয় বটম-আপ প্রসেসিং। আর এ কাজে দারুণ দক্ষ আমাদের মস্তিষ্ক। এই দক্ষতা এতটাই ভালো যে কখনও কখনও অর্থহীন জিনিসগুলোরও অর্থ খুঁজে পায় মাথার মগজ। একে বলা হয় প্যারিডোলিয়া। আপনি মেঘের দিকে তাকিয়ে খরগোশ, জাহাজ বা কোনো মানুষের মুখ যখন দেখেন, সেটি ঘটে এই প্যারিডোলিয়ার কারণে।
মস্তিষ্ক টপ-ডাউন পদ্ধতিতেও সংকেতের প্রক্রিয়াজাত করে। ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সংকেতের সঙ্গে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার উপলব্ধির তথ্য যুক্ত হয়। বেশির ভাগ সময় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অজস্র সংকেত মস্তিষ্কে আসে। এর সবগুলোতে মনোযোগ দিলে আপনি উন্মাদ হয়ে যাবেন। এ জন্য মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বেছে নেয়। তারপর তথ্যের বাকিটা পূরণ করে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার আগে থেকে তৈরি উপলব্ধি বা পারসেপশন দিয়ে।’
আর তাই আপনি এই মুহূর্তে যা দেখছেন, বাস্তবের পৃথিবী তা নাও হতে পারে। যেটি দেখছেন তা আসলে এমন একটি ছবি, যা চোখের মাধ্যমে ধারণ করা সংকেতের ভিত্তিতে মস্তিষ্ক আপনার জন্য এঁকে দিয়েছে। অন্য ইন্দ্রিয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ সময় এই ছবিটি সঠিক। তবে কখনও কখনও মস্তিষ্ক এমন কিছু যোগ করে দেয়, যার অস্তিত্ব আদৌ নেই।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আপনি কোনো গানের কথা শুনতে ভুল করলে মস্তিষ্ক ঠিকই সেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো শব্দ যোগ করে দেয়। (এবং আপনি পরে সঠিক শব্দ শিখলেও মস্তিষ্ক সম্ভবত সেই ভুল শোনাকেই অব্যাহত রাখবে।)
তথাকথিত ভূত-শিকারিরা তাদের যন্ত্রে বিশেষ শব্দ ধারণ করে সেগুলোকে ভূতের কথাবার্তা হিসেবে প্রচার করার সময়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এই রেকর্ডিং সম্ভবত শুধু একরাশ বিশৃঙ্খল শব্দমালা। অনুমান শক্তির ওপর নির্ভর না করলে আপনি এই শব্দমালার কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না। তবে যখন অনুমান করতে চাইবেন, তখন মনে হবে যেন সহজেই তা বুঝতে পারছেন।
আমাদের মস্তিষ্ক বিশৃঙ্খলতার মাঝে কোনো অবয়ব যুক্ত করে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগী ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন অনুভব করেন, তাদের প্যারিডোলিয়ার মাত্রা সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
ডেভিড স্মাইলেসের মতে, মানুষ সাধারণত একাকী, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়ার্ত পরিবেশে ভূতের অস্তিত্ব অনুভব করেন। অন্ধকার পরিবেশে মানব মস্তিষ্ক বিশ্ব থেকে পর্যাপ্ত চাক্ষুষ তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় মস্তিষ্কের নিজস্ব সৃষ্টিকে বাস্তবতার ওপর চাপিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
আপনি কি গরিলা দেখেছেন?
মস্তিষ্ক বাস্তবতার চিত্রে কখনও কখনও এমন জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে যার অস্তিত্ব আসলে নেই। আবার অনেক সময় বাস্তবে থাকা কোনো জিনিসকে শনাক্ত করতে ব্যর্থতার ঘটনাও ঘটে। একে বলা হয় ‘অমনোযোগী অন্ধত্ব’ বা ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেস।
এটি কীভাবে কাজ করে বুঝতে চাইলে নিচের ভিডিওটি দেখুন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাদা ও কালো শার্ট পরা লোকজন বাস্কেটবল খেলছেন। সাদা শার্ট পরা খেলোয়াড়েরা কতবার বল পাস করছেন গণনা করুন। কয়বার দেখতে পেলেন?
ভিডিওটির এক অংশে গরিলা স্যুটে এক ব্যক্তি খেলোয়াড়দের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছেন। সেটি কি দেখতে পেয়েছেন? এই ভিডিও নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক দর্শক ভিডিও দেখার সময় গরিলার পোশাকে চলে যাওয়া ব্যক্তিকে দেখতে পারেননি।
আপনিও যদি গরিলাকে মিস করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে এটা আপনার ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেসের কারণে ঘটেছে। আপনার মস্তিষ্ক এমন একটি অবস্থায় ছিল, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় অ্যাবজরপশন। এমন অবস্থায় আপনি একটি কাজে এতটাই মনোযোগী হন যে, আশপাশের আর সবকিছু নজর এড়িয়ে যায়।
লন্ডনের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ বলেছেন, ‘মস্তিষ্কের মেমরি ভিডিও ক্যামেরার মতো কাজ করে না। আপনি কেবল সেটাই মনে রাখবেন যাতে আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। কিছু লোকের অন্যদের তুলনায় মনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তাদের ভূতসহ উচ্চমাত্রার অলৌকিকতায় বিশ্বাসের মাত্রাও বেশি।’
ক্রিস্টোফার ও তার সহকর্মীরা ২০১৪ সালে একটি সমীক্ষা চালান। এতে দেখা গেছে, উচ্চতর মাত্রায় অলৌকিকতায় বিশ্বাস এবং অভিনিবেশের উচ্চ প্রবণতা থাকা ব্যক্তিদের অসাবধানতাবশত অন্ধত্বে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। তাদের মস্তিষ্কে একসঙ্গে অনেক স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা কম।
স্মৃতিতে প্রচুর তথ্য রাখতে বা একবারে একাধিক জিনিসের প্রতি মনোযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে চারপাশ থেকে সংবেদনশীল সংকেতগুলো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর সে ক্ষেত্রে অনেকে ভুল ধারণার দায় চাপাতে পারেন ভূতের ওপর।
বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার শক্তি
যেকোনো ব্যক্তি ঘুমের পক্ষাঘাত, হ্যালুসিনেশন, প্যারিডোলিয়া বা অমনোযোগী অন্ধত্ব অনুভব করতে পারেন। তবে এই অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যার উপায় হিসেবে সবাই ভূত বা অন্য কোনো অতিপ্রাকৃত সমাধানের পথ খোঁজেন না। এমনকি ডোম কখনও ভাবেননি, ছোটবেলায় তিনি সত্যিই কোনো ভূতের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বড় হয়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে ঘেঁটেছেন এবং কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন।
তিনি বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাপদ্ধতি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় উত্তর পেয়েছিলেন। এখনও তিনি স্নায়ুবিজ্ঞানী বালান্দ জালালের তৈরি একটি কৌশল ব্যবহার করেন। ঘুমের পক্ষাঘাত এড়াতে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেন, শরীরকে যতটা সম্ভব শিথিল করার চেষ্টা করেন এবং কিছুটা সময় এভাবে পার হতে দেন। ডোম বলেন, ‘আমি এখন একে অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করি। আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাই এবং ঘুমকে উপভোগ করি।’
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ওয়েলসের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রবিন অ্যান্ড্রুসের ধারণা ছিল, শক্তিশালী বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির মানুষের অতিলৌকিক বিশ্বাসের প্রবণতা কম। আর এই ধারণা প্রমাণের জন্য তিনি মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ টাইসনের সঙ্গে একটি গবেষণা করেছেন।
গবেষণায় ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘মৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব’ অথবা ‘মন বা আত্মা শরীর ছেড়ে ভ্রমণ করতে পারে’- এমন ধারণার সঙ্গে তারা কতটা একমত।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতর বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির শিক্ষার্থীদের অলৌকিক বিশ্বাসের মাত্রা কম। একই সঙ্গে কলা বিভাগে অধ্যয়নরতদের তুলনায় ভৌতবিজ্ঞান, প্রকৌশল বা গণিতের শিক্ষার্থীদের ভূত বিশ্বাস অনেকটা কম। অন্য আরও কয়েকটি গবেষণায় একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
তবে অবাক করা বিষয় হলো, বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত বা বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত অনেকের মধ্যেও অলৌকিকতায় বিশ্বাস দেখা যায়। একে একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবেই মনে করছেন রবিন অ্যান্ড্রুস ও ফিলিপ টাইসন।
টাইসন বলছেন, ‘একটি ভূতের গল্প বা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা বাস্তব কি না তা বিচারের সক্ষমতা না থাকলে আপনি যেকোনো বিজ্ঞাপন, অপচিকিৎসা বা ভুয়া খবরের মাধ্যমেও বোকা বনে যেতে পারেন। কীভাবে তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করা যায় এবং যুক্তিসংগত ও বাস্তব ব্যাখ্যা খোঁজা যায় তা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’
আর তাই কেউ ভূতের গল্প বললে উপভোগ করুন। তবে এতে বিশ্বাস স্থাপনের কিছু নেই, যা বর্ণনা করা হয়েছে সে বিষয়ে সম্ভাব্য সব ব্যাখ্যা নিয়ে চিন্তা করুন। মনে রাখবেন, ভয়ংকর কোনো ধারণায় ডুবিয়ে দিয়ে আপনার মন কিন্তু যেকোনো সময় আপনাকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন:পুরুষ ইঁদুরের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করে প্রথমবারের মতো ইঁদুরশাবকের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা।
জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা৷ এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপত কাতসুহিকো হায়াশি৷
গবেষণাপত্রের পাশাপাশি একটি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির স্টেম সেল এবং প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডায়ানা লেয়ার্ড এবং তার সহকর্মী জোনাথন বায়ের্লের একটি মন্তব্যও প্রকাশ হয়েছে৷ তাদের মতে এই গবেষণাটি ‘প্রজনন গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে'৷
তারা লিখেছেন, সমকামীদের ক্ষেত্রে অন্যের ডিম্বাণু ব্যবহারের নৈতিক এবং আইনি সংকট এড়িয়ে নিজেদের সন্তান জন্মদানের সুযোগও তৈরি করছে এই গবেষণা ৷
হায়াশি অবশ্য বলছেন, এই গবেষণা এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ গত সপ্তাহে লন্ডনের ক্রিক ইনস্টিটিউটে জিন এডিটিং সম্মেলনে তিনি বলেন, ইঁদুর এবং মানুষের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে৷
২০১৮ সালে এক চীনা গবেষণায় দুই নারী ইঁদুর থেকে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু পুরুষ ইঁদুর থেকে সন্তান জন্ম দিতে পারলেও তাদের বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি৷
জাপানের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় একটু ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছেন৷ তাদের গবেষণায় পুরুষ ইঁদুর থেকে জন্ম দেয়া শাবক স্বাভাবিকভাবে বড় হয়েছে, নিজেরাও আবার ছানার জন্ম দিয়েছে৷
এই পদ্ধতিতে প্রথমে পুরুষ ইঁদুরের লেজ থেকে একটি কোষ নেয়া হয়েছে৷ এরপর সেই কোষকে স্টেম সেলে রূপ দেয়া হয়েছে৷
এরপর পুরুষ ইঁদুরের সেই স্টেম সেলকে নারী কোষে, তারপর সেটিকে ডিম্বাণুতে রূপান্তর করা হয়েছে৷ এরপর সেই ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে এক নারী ইঁদুরের গর্ভে স্থাপন করা হয়েছে৷
গবেষণাটি এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং যে পদ্ধতি এখানে অনুসরণ করা হয়েছে সেটা এখনও অনেক অপর্যাপ্ত ৷
গবেষণায় ৬৩০টি ভ্রুণ নারী ইঁদুরের গর্ভে স্থাপন করা হলেও কেবল এর সাতটি থেকেই সন্তান জন্ম দেয়া গেছে৷
কেন এত অল্প সংখ্যক ভ্রুণ বাঁচলো সেটি এখনও গবেষকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি৷
মানুষের স্টেম সেলে কিভাবে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, সেটিও নিশ্চিত নন গবেষকেরা৷
জিনের পরিবর্তন ঘটানোর প্রক্রিয়ায় ভুল বা অন্য কোনো কারণে যেসব জটিলতা তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্ক থাকার ওপর জোর দিয়েছেন লেয়ার্ড৷
আরও পড়ুন:মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ সবজি জাতীয় ফসল ও বিভিন্ন ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধিতে সাফল্য পাওয়ার দাবি করেছেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের ওজন হ্রাস, পচন ও স্পাউটিং কমিয়ে আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের গুণগত মান বজায় রেখে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের সংরক্ষণউত্তর ক্ষতি কমবে এবং অসময়ে বাজারে এসব ফসলের যোগান দিয়ে দাম স্থিতিশীল রাখা যাবে।
এই গবেষণার ফলে কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে এবং বিদেশে রপ্তানি করে কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। শুধু শীতকালে পেঁয়াজ চাষ করে পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। দেশে সারা বছর পেঁয়াজ চাষাবাদ না হওয়ায় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে মাঝেমধ্যেই সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে থাকে এই মসলা জাতীয় খাদ্যটি।
২০২০-২১ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ওই সময়ে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩ মিলিয়ন টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ৩০ শতাংশ পচে যাওয়ার কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজ দাঁড়ায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন। বাকি চাহিদা পূরণের জন্য পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে।
পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধির জন্য এক পর্যায়ে বিনার বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন। পেঁয়াজ ছাড়া আদা, রসুন, আলু, সবজি, টমেটো, করলা, পটল, আম, কলাসহ সর্বশেষ পান নিয়ে চলছে এই গবেষণা।
বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরীন আখতার জানান, মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, আদা, রসুন, সবজি জাতীয় আলু, পটল, করলা ও ফল জাতীয় আম, কলায় গামা রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করতে ২০২০ সালে গবেষণা কাজ শুরু করা হয়।
তিনি জানান, গবেষণায় দীর্ঘ ট্রায়ালের মাধ্যমে এসব ফসলের ওজন হ্রাস ও পচনের মাত্রা অনেকাংশেই কমে আসে এবং পেঁয়াজে অংকুরোধগম হয় না। এর ফলে ৭ থেকে ৯ মাস সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আদ্রতার কারণে কৃষক নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিন মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে কৃষককে উচ্চ মূল্যে পেয়াঁজ কিনতে হয় এবং বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাত থেকে নয় মাস পর্যন্ত কৃষক নিজ বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এর ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে। শুধু পেঁয়াজ না, এ রকম মসলা সবজি এবং ফুল জাতীয় ফসলেও গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা যায়।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিপণ্যের সংরক্ষণকাল বেড়ে গেলে আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে কৃষিপণ্যের অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। লাভবান হবে কৃষকও।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিপণ্যের সংরক্ষণকাল বাড়ানোর লক্ষ্যে গাজীপুরে বৃহৎ আকারে ইরাডিয়েশন সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এই প্রকল্পের কাজ শেষে পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যে গামা রশ্মি প্রয়োগের ব্যবস্থা করা গেলে এসব পণ্যের সংরক্ষণকাল ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ ভেঙে গিয়ে এর উত্তর মেরুর চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ ঘটনায় বিস্মিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কী কারণে এমন হল, তা বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছেন তারা।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে গত সপ্তাহে এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখা গেছে।
মহাকাশের আবহাওয়া নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া ট্যামিথা স্কোভ সম্প্রতি এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে টুইটে লেখেন, ‘‘একেই বলে ‘পোলার ভর্টেক্স’! সূর্যের উত্তর মেরুর প্রধান ফিলামেন্ট থেকে একটা বড় অংশ ভেঙে পড়েছে এবং ওই জায়গায় একটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
সূর্যের রশ্মির বিকিরণের ফলে অনেক সময়ই পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়। সাম্প্রতিক এই মহাজাগতিক ঘটনায় পৃথিবীর ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল বেড়েছে।
বহু দশক ধরে সূর্যের পর্যবেক্ষণ করছেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ’-এর সৌর-পদার্থবিদ স্কট ম্যাকইনটশ। ‘স্পেস ডট কম’ নামে একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের দৃশ্য তিনি কখনও দেখেননি।
নাসা জানিয়েছে, সূর্যের বর্হিপৃষ্ঠ ঘিরে এই অতি উজ্জ্বল ‘ঘূর্ণিঝড়’ ঘুরছে। যদিও এ নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন:কর্মশালার বিষয়ের বাইরে গিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর চটেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
সচিবালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের করণীয়বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটে।
ওই কর্মশালার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ২৮ মিনিট কথা বলেন ইয়াফেস ওসমান। এরপর অনুমতি নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘বলো ভাই, তোমাদের তো আবার সময়ের দাম আছে। তো এতগুলো কথা বললাম, এগুলো কি একটাও কাজের কথা হয় নাই? আচ্ছা বলো।’
এরপর ওই সাংবাদিক বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল সরবরাহে কত দেরি হতে পারে?’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই ব্যাপারে এখন কিছু বলব না। এত কথার মধ্যে তোমরা চলে গেলে রূপপুরে।’
ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আজকের ওয়ার্কশপের সঙ্গে এই প্রশ্ন সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
পরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝি না, তোমরা প্রফেশনাল না? আর ইউ প্রফেশনাল? লেট মি দিস অ্যান্সার? ইউ আর প্রফেশনাল, লাইক মি আর্কিটেকচার। তোমরা তো প্রফেশনাল। তোমাদের রেগুলার প্রফেশনাল স্টাডির কোনো ব্যবস্থা আছে? নাই।’
ওই সময় কয়েকজন সাংবাদিক মন্ত্রীকে জানান, সাংবাদিকদের জন্যও সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ঘোড়ার ডিম আছে তোমাদের। আমাদের একটা ইনস্টিটিউট আছে। ওখান থেকে যদি সার্টিফিকেট না পাও, ইউ ক্যান নট প্রাকটিস। কারণ হলো, ওটার (ইনস্টিটিউট) শুরুটা হয় আমার হাত দিয়ে। ওইগুলো করো আগে। বিকজ বাংলাদেশকে আমরা ওই জায়গায় নিতে চাই।’
এরপর একজন সাংবাদিক বলেন, ‘সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা করা যাবে না সেই বাধ্যবাধকতা নেই।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘ওইটাই তো প্রবেলম। তোমার যদি একটা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে, কালকে বলে দিলা তুমি সাংবাদিক। তুমি তো প্রফেশনালিজমের কিছু বোঝোই না। একটা প্রফেশন মাস্ট নো দ্যাট সাবজেক্ট। তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। একটা কথা বলে দিলা যেকোনো জায়গা থেকে চলে আসলে। তার মানে তোমাদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই।
‘তোমার প্রফেশনালি যদি জ্ঞান-গরিমা থাকে, নেচারালি তখন তুমি একভাবে বলবা, আর যদি না থাকে আরেকভাবে বলবা। তারপরও তুমি বলছো আমরা আসতে পারি যেকোনো জায়গা থেকে? এনিওয়ে ভাই, আমি তোমার এই কথায় যেতে চাই না। একদিন আইসো, তোমাদের বসদের সাথে কথা হয় তো, ওদের সাথেই কথা বলব। তোমাদের সাথে বলে আর লাভ নাই।’
সাংবাদিকরাও এসব বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা এই সাবজেক্ট বাদ দিয়ে দাও। আমি ওই জন্য বলছি তোমরা এই সাবজেক্টের ওপর ধরো না কেন? এটা বাদ দিয়ে তুমি চলে গেলে অন্য জায়গায়। এটা নিয়ে আর কোনো কথাই হবে না।
‘তুমি এখানে আসছো কী জন্য? তুমি রূপপুরের ব্যাপারে কথা বলতে আসছো? এখান থেকে তোমার প্রশ্ন বের করতে হবে, উত্তর নিতে হবে। সেটা হলে তুমি প্রোপার জিনিসটা করলা।’
ওই সময় একজন সাংবাদিক মন্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা যারা সাংবাদিকতা করি তাদের সাবজেক্টের বাইরেও প্রশ্ন করতে হয়। আপনাকে আমরা পাই না, গত ৮-৯ মাসে আপনার প্রোগ্রামে আসিনি, এই প্রথম আসলাম। তাও আবার জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেছেন। ১১টার প্রোগ্রাম, ১১টা ১০ মিনিটে আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে চলে এসেছি।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে জনগণের জানার আগ্রহ আছে। জনসাধারণের ভিউ থেকে আমাদেরও অনেক কিছু জানতে হয়।’
তখন মন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে ধমকের সুরে বলেন, ‘আমি একটা কথা পরিষ্কার বলে যাই। ইউ লিসেন টু মি। আপনারা যদি না আসতে চান, চলে যান। গেট গোয়িং।’
এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ইউ শুড গো। আমি বললাম প্রশ্নটা ওটার ওপর না করে এটার ওপরে করেন। এটা বলতে পারব না আমি?’
আরও পড়ুন:৫০ হাজার বছর পর রাতের আকাশে দেখা যাবে সবুজ ধূমকেতু। বুধবার এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে। বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চল থেকে রাতে ধূমকেতুটি দেখা যাওয়ার কথা রয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ ধুমকেতুটির নাম দিয়েছেন ‘সি/২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)’। জানুয়ারির শুরুতে সূর্যকে প্রদক্ষিণের পর পৃথিবীর আকাশে ধুমকেতুটি দেখতে পায় বিজ্ঞানীরা। এর আগে গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার জুইকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি টেলিস্কোপে ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ হাজার বছর আগে শেষবার ধূমকেতুটি দেখা গিয়েছিল। বুধবার পৃথিবী থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ মাইল দূরে হবে এর অবস্থান।
সবুজাভ ধূমকেতুটির রাসায়নিক গঠনকে প্রতিফলিত করে। সূর্যালোক এবং কার্বন অণুর মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার ফলে এটি সবুজ দেখায়।
ধূমকেতু দেখতে চাইলে সেরা সময় বুধবার রাত। শহুরে বাতি থেকে দূরে, তুলনামূলক আঁধার কোনো এলাকায় গিয়ে দেখার চেষ্টা করতে পারেন। এ জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় দূরবীনে চোখ রাখলে।
সম্প্রতি পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির (৮ বিলিয়ন) মাইলফলক ছাড়িয়েছে। গত বছর ১৫ নভেম্বর ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এই খবরটি বিশ্ববাসীকে জানান দিলেও পৃথিবীতে মানবজাতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানা নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিক মানুষের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই গ্রহ থেকে চিরবিদায় নিয়েছে মোট ১০ হাজার ৮০০ কোটি (১০৮ বিলিয়ন) মানুষ।
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট কত মানুষ জন্মেছে সেই বিষয়টির ব্যাখ্যা কিছুটা নির্ভর করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর, তবে অনেকটা অনুমানের ওপর।
সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়ছে প্রায় সাত কোটি। আর চিরনিদ্রায় শায়িত হন আরও প্রায় সাত কোটি।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বে জন্ম নিয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি ৪০ লাখ শিশু। গত বছর মৃত্যু হয়েছে ৬ কোটি ৯২ লাখ মানুষের। জনসংখ্যা বেড়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ।
১৯৮০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যায় যুক্ত হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষ।
গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিক মানুষ হোমো সেপিয়েন্সের যাত্রা শুরু প্রায় দুই লাখ বছর আগে। খ্রিষ্টপূর্ব ১,৯০,০০০ সালে আফ্রিকায় যাত্রা শুরু মানবজাতির।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটে জনসংখ্যাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরোর (পিআরবি) গবেষণায় দেখা গেছে, দুজন থেকে যাত্রা শুরু হয়ে প্রথম ৫০ হাজার বছর শেষে মানবজাতির সংখ্যা স্পর্শ করে ২০ লাখ।
৪২ হাজার বছরের ব্যবধানে ৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বে জনসংখ্যা ৫০ লাখের (৫ মিলিয়ন) মাইলফলক স্পর্শ করে।
বলা হয় প্রায় দুই হাজার বছর আগে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের সময় পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৩০ কোটি।
পৃথিবীতে জন্ম নেয়া মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৮ বিলিয়ন এখন জীবিত রয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) মানুষ।
পিআরবি প্রথমবারের মতো ১৯৯৫ সালে ঐতিহাসিক সময় থেকে পৃথিবীতে জন্ম নেয়া আধুনিক মানুষের সংখ্যা প্রকাশ করে। এরপর প্রতি বছর গবেষণা সংস্থাটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রকাশ করে যাচ্ছে।
প্রায় ২ লাখ বছরের ব্যবধানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১৮০০ সালে ১০০ কোটির (এক বিলিয়ন) মাইলফলক স্পর্শ করলেও মাত্র ৩০০ বছরের মধ্যে আট গুণ বেড়ে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন)।
এই আধুনিক বিশ্বে জীবিত মানুষের তালিকা থাকলেও মৃত মানুষের হিসাব সামষ্টিকভাবে কোথাও সংরক্ষণ করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর পর হিসাব ও তালিকার (পপুলেশন সেনসাস) বাইরে চলে যায় মানুষ।
সমাজ পরিবর্তন ও বিনির্মাণে বিশিষ্ট মানুষ, বিজ্ঞানি, চিকিৎসক, সমাজ পরিবর্তক, ধর্মীয় গুরুর বিশেষ অবদান থাকলেও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তারাও জনসংখ্যার হিসাব থেকে ছিটকে পড়েন। তবে মানবজাতির বিবর্তন ও অগ্রযাত্রায় বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যাওয়া এসব মানুষের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন:সৌর জগতের বাইরে গত বছর প্রায় আড়াই শ নতুন গ্রহের (এক্সোপ্ল্যানেট) খোঁজ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। সংস্থাটির পাঠানো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এসব নতুন গ্রহের খোঁজ দিয়েছে।
এ নিয়ে এক টুইটে নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘চলতি বছরের শুরুতে সৌর জগতের বাইরে গ্রহের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারটি, তবে বছর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩৫টিতে। এর মধ্যে চার শতাংশ গ্রহ পৃথিবী ও মঙ্গলের মতো। নতুন বছর কি নিয়ে আসবে? আরও গ্রহ!’
নাসা জানিয়েছে, এসব এক্সোপ্ল্যানেটে পৃথিবীর মতো ছোট রুক্ষ পাথুরে পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। অনেক এক্সোপ্ল্যানেটের আয়তন আমাদের পৃথিবীর তুলনায় কয়েক গুণ বড় হয়। তাদের আবার বলা হয় ‘সুপার আর্থ’।
সবশেষ আবিষ্কার হওয়া এক্সোপ্ল্যানেটের নাম এইচডি ১০৯৮৩৩ বি। এটির আকার নেপচুনের মতো। এছাড়া আরও দুটি এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলোর বেশিরভাগ অংশে পানি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই সব গ্রহে সরাসরি পানি শনাক্ত হয়নি। তবে এসবের আকার এবং ভর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রহগুলো পাথরের চেয়ে হালকা ও হাইড্রোজেনের চেয়ে ভারী উপকরণের সমন্বয়ে গঠিত। আর এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহগুলোর বেশির ভাগ অংশেই পানি রয়েছে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের এক্সোপ্ল্যানেট অনুসন্ধানে নতুন মাত্রা এনেছে। মহাকাশে পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপটি গত বছরের জুলাই থেকে ছবি পাঠানো শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য