বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর নামকরণ করার দাবি তুললেছে গাইবান্ধাবাসী।
রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে গানাসাস মার্কেটের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি তোলা হয়।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হরিপুর-চিলমারী সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি শরিতুল্যাহ মাস্টারের ৩০ বছরের স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি এককভাবে এই সেতুর জন্য আন্দোলন শুরু করেন, জনগণকে সংগঠিত করে 'তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি' গঠন করেন এবং সরকারের কাছে বারবার তুলে ধরেন সেতুর প্রয়োজনীয়তা।
বক্তারা দাবি করেন, এই সেতু বাস্তবায়নে শরিতুল্যাহ মাস্টার ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তার নিরলস প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে এই বৃহৎ প্রকল্প আলোর মুখ দেখে। তাই তার স্মৃতি অম্লান রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে তার দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করতে সেতুটির নাম 'শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু' রাখা হোক।
এ সময় বক্তৃতা দেন কমিটির আহ্বায়ক শামীম মন্ডল, সদস্য সচিব শাহীন মিয়া, শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জিল্লু হাকিম, ডা. ফুয়াদ ইসলাম ও শিক্ষার্থী রত্ম প্রমুখ। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মিত হয়েছে সৌদি সরকারের অর্থায়নে, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি বাস্তবায়নে সরাসরি তদারক করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)। দেশের ইতিহাসে এটিই এলজিইডির সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
সেতুটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু। বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার ও মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে পুরো সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী অঞ্চল।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সেতুটি চালু হলে শুধু দুই উপজেলার মানুষ নয়, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতায় কয়েকবার সময় পরিবর্তনের পর অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে তিস্তা নদীর বুকে দৃঢ় এই সংযোগ। এরআগে গেল বছরের ৩০ নভেম্বর একই সেতু পরিদর্শনে আসেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। সে সময়ে তিনি চলতি বছরের মার্চে সেতুটি উদ্ধোধনের কথা জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ জুলাই সেতু পরিদর্শন আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। পরিদর্শন শেষে তিনি চলতি মাসেই সেতু উদ্বোধনের কথা জানান।
সব ঠিক থাকলে আগামী ২ আগস্ট সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। দেশে এর আগে আর কখনো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়নি এলজিইডি। সে হিসেবে এটি চালু হলে যেমন দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে দুই জেলার লাখো মানুষের। সেই সঙ্গে ব্যতক্রমী এক মাইলফলকে পা রাখবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং মাত্র তিন বছর আগেও সাধারণ মানুষের কাছে অচেনা একজন ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর উদ্যোক্তাদের একজন।
৬২ বছর বয়সি এই মিতভাষী প্রযুক্তিবিদের কথা শুনতে এখন স্টেডিয়ামভর্তি ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কারণ তার প্রতিষ্ঠানের তৈরি চিপগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)’র সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, এনভিডিয়ার তৈরি গ্রাফিক্স কার্ড ইউনিট বা জিপিইউ হলো জেনারেটিভ এআই’এর চালিকাশক্তি, যা চ্যাটজিপিটির মতো প্রযুক্তিকে পরিচালনা করে।
বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অপরিসীম চাহিদার কারণে এনভিডিয়ার প্রতিটি জিপিইউ আজ হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পেরিয়ে গেছে, যা এই মাইলফলকে পৌঁছানো প্রথম প্রতিষ্ঠান।
এই উত্থানের হাত ধরে জেনসেন হুয়াংয়ের ব্যক্তিগত সম্পদ এখন ১৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এনভিডিয়ার প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। তিনি ত্রিশ বছর আগে সিলিকন ভ্যালিতে এক ডিনার আয়োজনের মাধ্যমে দুই বন্ধুকে নিয়ে এটি শুরু করেছিলেন।
সম্প্রতি তার প্রভাবের প্রমাণ মিলেছে যখন তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চীনের ওপর থেকে নির্দিষ্ট জিপিইউ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি করান। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন এআই আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি সনেনফেল্ড বলেন, ট্রাম্পকে তিনি বোঝাতে পেরেছেন যে, বিশ্ব যখন মার্কিন প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবে, তখন সেটি দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। দারুণভাবেই এটি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব মূল প্রোটোকল হিসেবে মার্কিন প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবে এবং এটি অবশ্যই এই দেশের স্বার্থেই। এটি চীনা সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করবে না।
প্রাথমিক জীবন :
১৯৬৩ সালে তাইপেতে জন্ম গ্রহণকারী জেনসেন হুয়াং (প্রকৃত নাম জেন-হসুন) আমেরিকান সাফল্যের গল্পের মূর্ত প্রতীক। নয় বছর বয়সে তাকে তার ভাইয়ের সঙ্গে ছোট শহর কেন্টাকির একটি বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়েছিল।
হুয়াংয়ের চাচা তার তাইওয়ানিজ বাবা-মায়ের কাছে এই স্কুলটিকে একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে তাকে এখানে ভার্তি করার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু এটি ছিল মূলত সমস্যাগ্রস্ত যুবকদের জন্য একটি স্কুল ছিল।
সেখানে তিনি স্থানীয় তামাক চাষিদের সন্তানদের সঙ্গে পাবলিক স্কুলে পড়তেন। দুর্বল ইংরেজি জানার কারণে তিনি ব্যুলিংয়ের শিকার হন এবং দুই বছর ধরে টয়লেট পরিষ্কার করতে বাধ্য হন। তবে সেই কঠিন সময়ই তার জীবনকে বদলে দেয়।
মার্কিন সম্প্রচারক এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কঠোর পরিশ্রম করতাম। আমরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতাম আর বাকি ছেলেগুলোও ছিল রুক্ষ ও নির্দয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি সেই সময়টাকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।’
চামড়ার জ্যাকেট ও ট্যাটু:
পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে ফিরে আসেন হুয়াং। মাত্র ২০ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে এএমডি এবং এলএসআই লজিকে চিপ ডিজাইনের কাজ শুরু করেন।
তবে হুয়াং এতে তৃপ্ত ছিলেন না। তিনি আরও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন।
তিনি ১৯৯৩ সালে এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন এই লক্ষ্যে যে, এটি দিয়ে এমন সব সমস্যার সমাধান করা যা, সাধারণ কম্পিউটার সমাধান করতে পারত না। তিনি ৩ডি গ্রাফিক্স সামলাতে সক্ষম শক্তিশালী সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করেন।
১৯৯৯ সালে এনভিডিয়া তৈরি করে প্রথম ডিপিইউ, যেটি ভিডিও গেম, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড কম্পিউটিং ও এখন জেনারেটিভ এআই-এর ভিত্তি।
সব সময় কালো টি-শার্ট ও চামড়ার জ্যাকেট পরে থাকেন হুয়াং। তার হাতে এনভিডিয়া লোগোর একটি ট্যাটুও আছে। স্পোর্টস কারের প্রতিও তার আগ্রহ আছে।
এটি তার স্থির আত্মবিশ্বাস যে, নিরপেক্ষ রাজনৈতিক অবস্থান ও আত্মপ্রচারের অভাব তাকে এলন মাস্ক ও মার্ক জুকারবার্গের মতো ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করেছে।
তিনি কখনো ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেননি।
ইয়েল অধ্যাপক সনেনফেল্ড বলেন, হুয়াং নিজের আভাকে এড়িয়ে যান এবং নিজের চেয়ে প্রযুক্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেন। বিশ্বাস করেন হুয়াং আজকের সকল প্রযুক্তি টাইটানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত।
এনভিডিয়ার একজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী তাকে এএফপির কাছে ‘সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার সাথে তিনি কখনও দেখা করেননি।
স্ট্রিট ফুড ও জনপ্রিয়তা:
নিজ জন্মভূমি তাইওয়ানে গেলে হুয়াং যেন মেগাস্টার। ভক্তরা তার অটোগ্রাফ ও সেলফির জন্য ভিড় করেন। সাংবাদিকেরা অনুসরণ করেন তার প্রিয় বার্বারশপ থেকে শুরু করে রাতের বাজার পর্যন্ত।
উইটোলজি মার্কেট ট্রেন্ড এর ওয়েইন লিন বলেন, তার ব্যক্তিত্বের আকর্ষণই এই উন্মাদনার জন্ম দিয়েছে। এত বড় মানুষ হয়েও তাইওয়ানে এলেই তিনি স্ট্রিট ফুড খেতে ভুলে যান না। তিনি অসাধারণ বন্ধুসুলভ।
এনভিডিয়া একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান, যা হুয়াংয়ের চারপাশে কোনো নাটকীয়তা না রাখার চেষ্টা করে।
তবে ওই সাবেক কর্মকর্তা বলেন, হুয়াং একজন ‘দ্বৈত ব্যক্তিত্বের’ অধিকারী। তিনি যেমন কর্মীদের জন্য দায়িত্বশীল, তেমনি ভুলের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের চরমভাবে তিরস্কার করতেও পিছপা নন।
সহজ জয় দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
আজ তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই নিয়ে চতুর্থবার পাকিস্তানকে হারাল টাইগাররা।
এর আগে ২০১৫ সালে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে ৭ উইকেটে এবং ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে মিরপুরের ভেন্যুতে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
এছাড়াও ২০২৩ সালে হাংজুতে ১৯তম এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারের লজ্জা দিয়েছিল বাংলাদেশ।
এ ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ বোলারদের তোপে ১১০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম পাকিস্তানকে অলআউট করে টাইগাররা। জবাবে ২৭ বল বাকী রেখে জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিটন দাসের দল।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। টি-টোয়েন্টিতে টানা নয় ম্যাচ পর টস জিতলেন লিটন।
লিটনকে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন বাংলাদেশের বোলাররা। পাওয়ার প্লেতে ৪১ রানের বিনিময়ে পাকিস্তানের ৪ উইকেট শিকার করেন টাইগারদের তিন পেসার ও এক স্পিনার।
ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে স্পিনার মাহেদির বলে শর্ট ফাইন লেগে পাকিস্তান ওপেনার ফখর জামানের সহজ ক্যাচ ফেলেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
ক্যাচ ফেললেও দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ৬ রান করা সাইম আইয়ুবকে শিকার করেন তিনি। পরের ওভারে উইকেটের দেখা পান স্পিনার মাহেদি হাসান। ডিপ মিড উইকেটে শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মোহাম্মদ হারিস। ৪ রান করেন তিনি।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটান পেসার তানজিম হাসান। স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটনকে ক্যাচ দেন ৯ বলে ৩ রান করা পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আঘা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারেও বাংলাদেশকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। রানের খাতা খোলার আগেই ডিপ থার্ডম্যানে রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন হাসান নাওয়াজ।
বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে পাকিস্তান। অষ্টম ওভারে নিজেদের ভুলে চাপ আরও বাড়ে পাকিস্তানের। ফখরের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে ৩ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ৪৬ রানে ৫ উইকেট পতনের পর বড় জুটির চেষ্টা করেন ফখর ও খুশদিল শাহ।
জুটিতে সর্বোচ্চ ২৪ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন ফখর ও খুশদিল। এবার লিটনের দক্ষতায় খুশদিলের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন ফখর। দু’বার জীবন পেয়ে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন ফখর।
৭০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ১শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেটি হতে দেননি খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদি। সপ্তম উইকেটে ২৯ বলে ৩৩ রান যোগ করেন দলের রান তিন অংকে নেন তারা। এরমধ্যে রিশাদ ও তানজিমের দুই ওভারে ৪টি ছক্কায় ২৭ রান যোগ করেন খুশদিল ও আফ্রিদি।
১৭তম ওভারে দলীয় ১০৩ রানে খুশদিলকে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন মুস্তাফিজ। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ১৭ রান করেন খুশদিল।
সপ্তম ব্যাটার হিসেবে খুশদিল ফেরার পর ৭ রানে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে ৩ বল বাকী থাকতে ১১০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন রান পাকিস্তানের।
তাসকিনের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরমধ্যে একটি রান আউট ছিল।
তাসকিন ২২ রানে ৩টি, মুস্তাফিজ ৬ রানে ২টি এবং মাহেদি-তানজিম ১টি করে উইকেট নেন।
১১১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে অভিষিক্ত পেসার সালমান মির্জার বলে ওপেনার তানজিদ হাসান এবং তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটন দাস আউট হন। দু’জনই ১ রান করে করেন।
এরপর পাকিস্তান বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। অষ্টম ওভারে দলের রান ৫০এ নেন তারা।
১২ ওভার শেষে ৮০ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের ঐ স্কোরেই ১৩তম ওভারে পেসার আব্বাস আফ্রিদির বলে বোল্ড হন হৃদয়। ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৬ রান করেন হৃদয়। পারভেজের সাথে ৬২ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন হৃদয়।
হৃদয় ফেরার পর চতুর্থ উইকেটে ১৮ বলে ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন পারভেজ ও জাকের আলি। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন পারভেজ। ৩৯ বল খেলে ৩ চার ও ৫ ছক্কা মারেন পারভেজ। ৩টি বাউন্ডারিতে অনবদ্য ১৫ রান করেন জাকের। সালমান ২ উইকেট নেন।
আগামী ২২ জুলাই মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে দু’দল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেল ওহাব সাইদানী রোববার ২০ জুলাই সকালে ঝালকাঠির বিখ্যাত ভাসমান হাট ও পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করেছেন।
রাষ্ট্রদূত ভিমরুলি ও আটঘর কুড়িয়ানা এলাকায় পেয়ারা উৎপাদনের বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষ করেন এবং স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলেন।
তিনি এখানকার নৌকা তৈরিতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, 'প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী ভাসমান হাট দেখে আমি মুগ্ধ। আলজেরিয়ায় পেয়ারা উৎপাদন হয় না। এখান থেকে পেয়ারা রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি আলজেরিয়ার সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ভিমরুলি ও আটঘর কুড়িয়ানা একটি সম্ভাবনাময় কৃষি অঞ্চল। এখানকার ভাসমান হাট ও পেয়ারা চাষাবাদ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এটি বাংলাদেশের এক অনন্য সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উদাহরণ।
রাষ্ট্রদূতের সফরে ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশে আলজেরিয়া অ্যাম্বাসেডরের সেক্রেটারি এ কে এম সাইদাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আলজেরিয়া রাষ্ট্রদূ পেয়ারা রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য এসেছেন। তারা সম্মত হলে আমরা পেয়ারা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করবো।
উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে গড়ে ওঠা ভাসমান পেয়ারা হাট এখন দেশের কৃষিভিত্তিক পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
নীলফামারীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মো. সেলিম মিয়া (২৭) নামের এক ভিসা প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানার বেলতলী বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার সেলিম মিয়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই কাছারিপাড়া গ্রামের মৃত ফকির উদ্দিনের ছেলে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ‘ সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ও রাহাজানিসহ নানা সামাজিক অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারী সেনাবাহিনী ক্যাম্পের ৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির মেজর সালমানের নেতৃত্বে চৌকস একটি দল যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। এতে সেলিম মিয়া বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পুলিশের একাধিক অভিযানের পরও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।'
বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে এই প্রথম বস্তাতে আদা চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। এই উপজেলায় কৃষিতে বৈচিত্র আনার প্রয়াসে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বস্তায় আদা চাষ। মাটি ও জমির সীমাবদ্ধতা, বন্যা বা লোনা পানির ঝুঁকি, এবং কৃষি জমির উচ্চমূল্যের কারণে অনেক কৃষক যখন বিপাকে পড়ছেন, তখন বস্তায় আদা চাষ তাদের জন্য হয়ে উঠছে এক সম্ভাবনাময় বিকল্প।
চরফ্যাশন মূলত নদীবেষ্টিত। এখানে মৌসুমি বন্যা ও জোয়ারের পানিতে অনেক সময় ফসলের ক্ষতি হয়। তবে বস্তায় চাষ পদ্ধতিতে মাটি সহজে সরানো যায়, উঁচু জায়গায় রাখা যায়, বন্যার পানি থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। কৃষকরা পুরোনো চালের বস্তা, প্লাস্টিকের বস্তা, এমনকি পরিত্যক্ত বালুর বস্তাও ব্যবহার করছেন। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিক খরচ কম। একটি বস্তা, কিছু জৈব সার, বেলে দোআঁশ মাটি ও বীজ আদা এগুলোই মূল উপকরণ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, আসলামপুর, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, আব্দুল্লাহপুর, চর মাদ্রাজ ও চরফ্যাশন পৌরসভা সহ আরো কিছু এলাকার কৃষকরা বস্তাতে আদা চাষাবাদ করছে। চলতি বছরে বস্তাতে আদা চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮০০হেক্টর জমি। তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষাবাদ হচ্ছে।
চরফ্যাশনের আসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. বারেক বলেন, ‘আমরা আগে বর্ষায় জমিতে কিছু করতে পারতাম না। এখন বারো মাস বস্তাতে আদা চাষ করতে পারবো। তবে এই প্রথম চরফ্যাশনে বস্তাতে আদা চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে আদা চাষে উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমি ৩০০ বস্তা আদা চাষ করছি। খুব সহজে সার পানি দেই, আর কোনো কষ্ট নেই।’
পৌরসভা ৭নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা ইউসুফ বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোসহ দেশের কয়েকটি জেলায় আদা চাষ করা হয়। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই প্রথম চরফ্যাশনে বস্তাতে আদা চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাড়ির উঠান বা রাস্তার পাশে পতিত জমিতেও আদা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি এই বছরে প্রাথমিকভাবে ২০০ বস্তায় আদা চাষাবাদ করছি। একটি বস্তাতে ২টি করে আদা রোপন করেছি। বৈশাখ থেকে আদা চাষ শুরু হয়েছে। ২টি আদা রোপনের ফলে ১০/১২ মাস পর একটি বস্তাতে প্রায় ৩ কেজি আদা উৎপাদন হবে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, বস্তায় আদা চাষে রোগবালাইও তুলনামূলক কম হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে আলাদা বস্তা সরিয়ে আলাদা করা যায়। রোগ ছড়ানোর ভয় কম থাকে। এতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারও কমে যায়, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভালো। বিশেষ করে যুবসমাজ ও নারী উদ্যোক্তারা স্বল্প পুঁজি ও জায়গায় এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেদের উঠোন বা বারান্দায়ই বস্তা রেখে চাষ করছেন। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভালো ফলনের জন্য বস্তার মাটি ও জৈব সার ভালোভাবে মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে হয়, কিন্তু অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। বস্তার নিচে ছিদ্র রাখতে হয় যাতে পানি বের হয়ে যায়।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, তারা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আদা একটি মুনাফাযোগ্য মসলা ফসল। বাজারে চাহিদা সারা বছর থাকে। বস্তায় উৎপাদিত আদা আকারে মাঝারি হলেও গুণে ভালো। দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেকে বীজ উৎপাদনের জন্যও বস্তায় আদা চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘এখানে অনেক জমি বর্ষায় ডুবে যায়। বস্তায় আদা চাষ এ অঞ্চলের জন্য বড় সম্ভাবনা। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। তারা যদি শিখে নেয়, এভাবে শুধু আদা নয়, হলুদ, আলু, মিষ্টি আলু, কচু – অনেক কিছু চাষ করা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, 'চরফ্যাশনের কৃষির স্বরূপ বদলাচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ শুধু জমি সাশ্রয়ী বা বন্যা-সহনশীল পদ্ধতি নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করছে। কৃষকদের আয় বাড়াতে ও স্বনির্ভর হতে এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।'
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি তারা এবিষয়ে কোন প্রকার গাফিলতি করেননি/করছে না।
রবিবার (২০ জুলাই) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (রুটিন উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সংগঠন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, প্রেস ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-সহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইবি প্রশাসন সম্মতি জানিয়ে বলেন, তদন্ত কমিটিতে দুইজন শিক্ষার্থীকে অবজারভার হিসেবে রাখা হবে এবং সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসিটিভি ও লাইটিং এর আওতায় আনার কাজ চলমান রয়েছে এবং খুব দ্রুত শেষ হবে। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত যেন হয় সে বিষয়ে ইবি প্রশাসন সব সময় তৎপর থাকবে।
সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এতো দিন বিগত প্রশাসনের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতা-সহ নানা মাধ্যমে জিজ্ঞেসা করা হয়- ‘প্রশাসন এতো এতো টাকা কী করে?’ আমরা জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি। দুঃখের বিষয় হলো- হল প্রশাসন থেকে জানানো হয় না তাদের কী প্রয়োজন। প্রশাসনের কোথাও আর্থিক দৈন্যতা নেই। দৈন্যতা আছে ইউজারের, জিনিসগুলো প্রপারলি ইউজ করলে আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
উপ-উপাচার্য (রুটিন ভিসি) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, ৫ আগস্টের পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সীমিত আকারে বাজেট দেয়। কিন্তু বিশেষ দিবসসমূহে আমাদের আলাদা বাজেট রাখতে হয়। যেহেতু আমাদের বাজেট কম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয়। তবুও আমরা গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছি।
ড. এয়াকুব আরো বলেন, আমাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা- ঘটনা প্রবাহের তথ্য উদঘাটন করা। তবে কাউকে বিচার করা, ফাঁসি দেওয়া ও বহিষ্কার করা এটা আমাদের ক্ষমতা নেই। এটা সম্পূর্ণ পুলিশবাদী কেস। আমরা সর্বোচ্চ পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
তিনি সাজিদের ব্যাপারে বলেন, আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। তবে শিক্ষার্থীরা যেটা বলছেন- প্রক্টর আসতে দেরি হয়েছে এবং প্রশাসনের কেউ ছিল না। সাজিদ মারা যাবে বা তার লাশ ভেসে উঠবে এইটা তো আমরা জানতাম না। যদি কোনো ইঙ্গিত পাইতাম তাইলে যাইতাম না। কাকতালীয় ভাবে ঘটনাটা ঘটেছে। সাজিদের লাশ যে ভেসে উঠবে এমন কোনো লক্ষণও তো আগের রাতে দেখি নাই। আমি তো রাত আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘুরছি। রাতে কই কোনো লক্ষণ দেখিনাই তো? একটা মানুষ কে যখন মারে বা মরে ক্যাম্পাসে একটা ভাব থাকে গুমগুমে ভাব, সেরকম কিছু দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সাজিদকে হারিয়েছি, এটার সাথে কোনো কিছু আছে কি-না আমরা বিহিত করতে নামছি এবং খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছি। যদি কোনো ভাবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয়, তা যদি ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও হই, তাহলে আমি আমার শাস্তি চাইবো। ধৈর্য্য ধারণ করুন, আমরা শক্তভাবে এইটা হাতে নিয়েছি। কারণ সাজিদের বিচারটা যদি না হয় তাহলে প্রত্যেক ছাত্ররা কিন্তু হলে থাকতে ভয়ভীতি ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাবে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সংঘর্ষে নিহতদের লাশ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তরের বিষয়টি ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে জানিয়েছে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২০ জুলাই) হাসপাতালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গত ১৬ জুলাই, গোপালগঞ্জ জেলায় অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।’
বিবৃতি অনুযায়ী, প্রকৃত ঘটনা হলো— সংঘর্ষ চলাকালে প্রথম মৃতদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রোগীর স্বজনদের লাশ ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে লাশ নেওয়ার কথা বললে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে জোর করে লাশ নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাকি মৃতদেহগুলোর স্বজনরাও ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয়নি। তারা হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করে জোর করে মৃতদেহ নিয়ে যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন পরিস্থিতি ও চারদিকে সংঘর্ষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় বোধ করেন। এছাড়া, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মচারীরা সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসাকাজে নিয়োজিত থাকায় এবং হাসপাতালের বাইরে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’
তবে, পরবর্তীতে এই ঘটনা পুলিশকে মোবাইল ফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। এই বিবৃতির মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও আশাপ্রকাশ করা হয়।
মন্তব্য