রাজনীতির প্রাঙ্গণে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, সিলেট-১ আসনে যে দল জয়লাভ তারাই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর থেকেই ঘটে আসছে এমনটি। ফলে ‘সিলেট-১ যার, সরকার তার’- এটি আর কথার কথা থাকেনি। রীতিমত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর সিলেট থেকেই সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচার শুরুর রেওয়াজ এই কিংবদন্তিতে আরও রসদ জুগিয়েছে।
তাই সিলেট-১ আসনে জয়ের আলাদা লক্ষ্য থাকে সব দলের। এই আসনে হেভিওয়েট নেতাদের মনোনয়ন প্রদান করে সবগুলো দল। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এখানকার সংসদ সদস্যরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন। এবার তার ব্যতিক্রম না হওয়ারই কথা।
সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন। গত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে এই আসনে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ছিলেন মোমেনের অগ্রজ, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান আর আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীও সিলেট-১ এর সংসদ সদস্য ছিলেন।
এবার কারা হচ্ছেন সিলেট-১ আসনের প্রার্থী? এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। অনেকদিন ধরেই রাজনৈতিক মাঠে এমন আলোচনা থাকলেও বুধকার তফসিল ঘোষণার পর থেকে তা আরও জোরালো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবারও এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ড. একে আবদুল মোমেনের মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত। তবে ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের কথাও বলছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর ১/১১ এর পর দলে অবস্থান হারান। এরপর ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিতও হন মনসুর। তবে ২ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পাশে সুলতান মনসুরের উপস্থিতির পর থেকে সিলেটে তার প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আবুল মোমেন ছাড়া এ আসনে এখন পর্যন্ত আর কারো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নিজের মেয়াদকালের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বিলমোর্ড টানিয়েছেন মোমেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোথায় কে প্রার্থী হবেন তা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত করবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে বিজয়ী করে আনবো।’
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল মোমেন গত পাঁচ বছরে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার ব্যাপারে সিলেট আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাই আমরা আশা করছি এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসলে তাদের প্রার্থী কে হবেন এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। তবে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। আর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হন দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
বিএনপি নির্বাচনে এলে এবারও এই আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে সিলেট বিএনপিতে অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্তাদির। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে গত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হননি আরিফুল হক চৌধুরী। এই ‘ত্যাগের’ জন্য সিটি নির্বাচনের পরপরই তাকে কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য পদ থেকে পদন্নোতি দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা করা হয়। এছাড়া নগরে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে।
তবে বিএনপি এখন নির্বাচনের বিষয়ে ভাবছে জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘দেশে এখন নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। ফলে নির্বাচন সংক্রান্ত চিন্তা কোনোভাবনাই এখন আমাদের নেই। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়া আনা। সেজন্য এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই আন্দোলন করছি। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’
একই ধরণের মন্তব্য করেছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কে কোথায় প্রার্থী হবেন সেটা পরের আলোচনা। আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নির্বাচন নিয়ে আলাপ হবে।’
গত নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন বাসদের জেলা সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অন্তবর্তকালীন সরকার গঠন করতে হবে।’
এছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত ইসলামী এ আসনে আলাদা প্রার্থী দিতে পারে। এক্ষেত্রে নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন সিলেট মহানগরের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের প্রার্থী তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচনী বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আলোকে প্রার্থি অদলবদল হতে পারে।’
সিলেট মহানগর ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একে আবদুল মোমেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর তার নিকটতম বিএনপির আবদুল মুক্তাদির পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫১ ভোট। এর আগে ২০১৩ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আরও পড়ুন:দেশের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ সব সংস্কার শেষে নির্বাচন চান বলে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) এক জরিপে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সারা দেশে জরিপটি চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি।
এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। আর সবগুলো সংস্কার করার পরই নির্বাচন আয়োজন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে দেখা যায়, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোক চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
আরও পড়ুন:ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে রাজাপুর উপজেলায় মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মিলন মাহমুদ বাচ্চু ২১ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে এবং কাঠালিয়া উপজেলায় দোয়াত কলম প্রতীকের এমাদুল হক মনির ২০ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সরকারের গেজেট এবং শপথ অনুষ্ঠানের পরেই এই দুই মসনদে বসবেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ ছাড়া কাঠালিয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াজী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা আক্তার বিন্দু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে রাজাপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাপ্পি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসরিন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনা শেষে রোববার রাতে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাজাপুরেরর মিলন মাহমুদ বাচ্চু এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর কাঁঠালিয়ায় এমাদুল হক মনির এবার টানা দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও ছিলেন। তারা সেখানকার সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমরের লোক। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বিএনপির অনুসারীরা (ওমর সেনা) শাহজাহান ওরমরকে তাদের দলের লোক মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ১১০ বছর বয়সী এরফান ফকির। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগা এ ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমন অবস্থায় রোববার দুই ভাতিজার কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে গিয়ে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের ভোট।
গরমের মধ্যে আংগারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট দেন এরফান। যে স্কুলটিতে তিনি ভোট দিয়েছেন, সেটি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন এ ব্যক্তি। স্কুলের পাশের মসজিদ নির্মাণকাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরফান ফকির বলেন, ‘জীবনে কোনো ভোটই মিস করি নাই। তাই শতকষ্টের মধ্যেও এবার আসছি ভোট দিতে। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি না জানি না।’
এ বয়সে ভোট দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এরফান।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানে ভোট দিতে এলাম।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দীপংকর চন্দ্র শীল বলেন, ‘সকাল থেকে আমার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি যে, উনার মতো (এরফান ফকির) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিকে আমি নিজে বুথে নিয়ে তার ভোটটা প্রয়োগ করাতে পেরেছি।
‘যেহেতু তার হাত এবং পাঁ কাপতেছিল, সেহেতু তিনি যেখানে সিল মারতে বলেছেন, আমি সেখানেই সিল মেরে উনাকে দেখিয়েছি। ১১০ বছর বয়সী উনার মতো একজন ভোটার আমার কেন্দ্রে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছে। তাতে আমি ধন্য হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
উপজেলাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯টি উপজেলায় ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোটের এলাকায় টহলে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালী জেলার সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি; ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮ জন ভোটার এক হাজার ১৮১ কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে দেশের উপজেলাগুলোয় ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুন তা শেষ হবে, তবে কয়েকটি উপজেলায় মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছর।
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (রাজাপুর ও কাঠালিয়া) ভোটগ্রহণ হবে রোববার। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ২৯ মে এই দুই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা লেগেই আছে।
সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজাপুরের পুটিয়াখালিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগেও কাঠালিয়া এবং রাজাপুর উপজেলায় প্রার্থীদের সমর্থকরা কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আমির হোসেন আমু এমপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতাও রয়েছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঝালকাঠির দুটি উপজেলায় (নলছিটি ও সদর) ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই নির্বাচনের আগেও ঝালকাঠি সদরে এমপি আমু সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এতোটাই কম ছিল যা চোখে পড়ার মতো।
সেই ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই রাজাপুরে ভোটের আগ মুহূর্তে এ ধরনের হামলার পর কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন নারীসহ বেশির ভাগ ভোটাররা। ঝালকাঠি সদরের মতো একই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায়ও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজাপুরের ভোটারদের পক্ষে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কেন্দ্রে যেতে আমাদের অনীহা।’
সাধারণ ভোটার শাহেদ আলি, পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চালান নিজের সংসার।
তিনি বলেন, ‘মারামারি হইলে যদি মোরা আহত হই, হেলে মোগো ডাক্তার খরচ কেউ দেবে না। তাই ভোট দিতেও যামুনা।’
শাহেদ আলির মতো সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়েছেন এখানকার ভোটাররা, তবে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল পিপিএম বলেন, ‘আগামী ৯ জুন রাজাপুর ও কাঠালিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য শান্তিময় পরিবেশ ভোটারদেরকে উপহার দেয়া হবে। ভোটের আগের দিন থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে দুই উপজেলায়।’
আরও পড়ুন:বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ভোট গণনা চলছে।
সিইসি বলেন, ‘৬০ উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ৯ জনকে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এছাড়া ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভৈরব উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভালো কাজ হয়েছে।’
ভোট নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, এটা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) বিচার বিশ্লেষণ করবো না।
উপজেলায নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের ৬০টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এ দিন ভোরে মারা যান উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের রামপুর চতিলা গ্রামে আলমগীর হোসেন ও আবুল কাশেম। সকাল ১০টায় চতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পর্যায়ক্রমে তাদের জানাজা নামাজ হয়।
স্কুলটিতে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সকাল ৮টা থেকে ভোট চলছিল। এমতাবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার খানেক মানুষ অংশ নেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুশফিকুর রহমান সেলিম এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তারা অনেকটা অলস সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় জানাজা নামাজে গ্রামের হাজার খানেক মানুষকে স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন। কারণ তারা অধিকাংশই ছিলেন ওই কেন্দ্রের ভোটার।
ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৮ জন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচনি অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য