‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন যে কারও ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি প্রয়োগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো।
‘জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিতে সহিংসতার আশ্রয় নেয়া, পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করতে বাধা দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
সাংবাদিকরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ইউএনবি-কে এসব কথা বলেছেন।
সামগ্রিক বিষয়টির ব্যাখ্যায় দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ‘কারও ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে কি না তা সে বিষয়টি নির্ভর করবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ঘটনার বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপঙ্খু পর্যালোচনার ওপর। কাজটি করবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।’
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় থাকা বাংলাদেশিদের নাম বা সংখ্যা তারা প্রকাশ করবে না।
দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার এর আগেও ইউএনবিকে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসাসংক্রান্ত তথ্যগুলো গোপনীয়।’
ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে ঘটনাগুলো খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করেছে। প্রমাণগুলো যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যকে সমর্থন করতে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘থ্রিসি’)-এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।
এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট শুক্রবার জানায়, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এটি।
‘এই তালিকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে।’
মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়।’
ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকবে তারাও এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
মিলার বলেন, এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে বাতিল হওয়া ৭৩১ জনের মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে মোট ৫৬১ জন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেছেন। এর মধ্যে অবশ্য কিছু প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনও রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনে আপিল পড়েনি ১৭০ প্রার্থীর।
ইসির বেঁধে দেয়ার পাঁচদিন সময়সীমার শেষ দিনে শনিবার ১৩০ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য আপিল করেছেন। ইসির অস্থায়ী ক্যাম্পে গত ৫ দিনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এসব আবেদন জমা পড়ে।
শনিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব জাহাংগীর আলম।
তিনি জানান, প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রথম দিন ৪২ জন, দ্বিতীয় দিন ১৪১ জন, তৃতীয় দিন ১৫৫ জন, চতুর্থ দিন ৯৩ জন এবং সবশেষ শনিবার ১৩০ জন আপিল করেছেন। পাঁচদিনে মোট ৫৬১ জন প্রার্থী ইসিতে আপিল করেছেন। তাদের মধ্যে বেশ কিছু বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে বাছাই শুরু হয়, শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়।
আর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের সময় ফুরিয়েছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘আমরা রওশন এরশাদকে সম্মান করি। তবে রওশনপন্থীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যে চ্যাপ্টার ক্লোজড, সেটা বারবার কেন সামনে আনেন?’
তিনি বলেন, ‘অনুরোধ করছি বিষয়টা আর আনবেন না। তাহলে আমি কোনো উত্তর দেবো না।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনি ইশতেহার প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ইশতেহারে আনুপাতিক হারে নির্বাচন, বেকার সমস্যা বিকেন্দ্রীকরণ, চিকিৎসাসেবার উন্নতি, শিশু অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।’
এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। এ প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে নয়, এ ধরনের আপস অন্যান্য দেশেও হয়। এ বিষয়ে স্থায়ী কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। নির্বাচন বা রাজনীতিতে চূড়ান্ত কোনো বিষয় নেই। যেকোনো সময়ে যেকোনো কথার কারণে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
‘আপনি ভারতে যান। বিজেপি অনেক বড় দল, তারপরও অনেক সিটে তারা নমিনেশন দেয়নি। হয় যাদের সঙ্গে জোট করেছে তাদের অথবা নীরবে অন্য কোনো দলের সঙ্গে আন-অফিশিয়ালি সমঝোতা করেছে; তাদের সুযোগ দিয়েছে। এটা ভারতে হয়, আমাদের দেশে হয়, পাকিস্তানে হয়- সব দেশেই হয়।’
নির্বাচনি প্রচার সম্পর্কে দলটির পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। মনোনয়নপত্র যেগুলো আপিলে গেছে, আগে সেগুলো আমরা দেখছি। এরপর আমরা ইশতেহার প্রকাশ করব।’
নির্বাচন কমিশনে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে তার প্রার্থিতার বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর করা আপিল প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, ‘মনোনয়ন ফরমে তথ্যের কথা লেখা আছে ফৌজদারি আইনে। কোন সিভিল মামলার তথ্য লিখতে হবে- এমন কোনো ঘর নেই। আসলে উনি আমার ইমেজ (ভাবমূর্তি) ক্ষুণ্ন করার জন্য এটা করেছেন। সিভিল মামলার তথ্য দেয়ার সুযোগ নির্বাচনি আচরণবিধিতে নেই।’
প্রসঙ্গত, ইসিতে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন ওই আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নৌকার প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ।
ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সহস্রাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ঝালকাঠি-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন আমু। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারহা গুল নিঝুম ওই মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতা-কর্মী নিয়ে ভোটের প্রচারণার অভিযোগে ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।
১০ ডিসেম্বর নির্ধারিত স্থানে সশরীরে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে এর লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শনিবার নির্বাচনি এলাকা-১৮১ এর নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাত জাহান নাসরিন এই তলব আদেশ দিয়েছেন।
শোকজের চিঠিতে জানানো হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, আপনি গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় আপনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এসব এলাকায় যান এবং স্থানীয় নির্বাচনি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তখন বিপুল জনসমাগম ঘটে এবং আপনি নৌকার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা চালান; যা নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য। ওই সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি অত্র কমিটির গোচরীভূত হয় এবং সংবাদের তথ্যসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক অত্র অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচনপূর্ব অনিয়মের সত্যতা পান। ওই মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি এলাকা-১৮১ এর বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের অসংখ্য পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিএনপির নির্বাচন বন্ধের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরও বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি। এখন তারা সন্ত্রাসী পথ বেছে নিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যত বাধা আসুক, যত ষড়যন্ত্রই হোক নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে পাহাড়ের মতো অনড় আওয়ামী লীগ। ভোটের পরেও চাপ আসতে পারে, এসব মোকবিলা করার মনোবল ও রাজনৈতিক শক্তি দলের রয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমাদের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
‘সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা দেখছি না। বরং যারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের ওপরই নিষেধাজ্ঞা আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ নেই।’
কাদের বলেন, ‘যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, তারা ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং জোট সরকারের নিপীড়নের কথা বলেন না।
‘মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচির নামে নাশকতার ছক কষছে বিএনপি। কর্মসূচির নামে যাতে তারা নাশকতা করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, জেলের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির চারজন সংগঠককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
‘মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন অনেকেই, কিন্তু ২১ আগস্টের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। আইভি রহমানসহ ২৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন, তারা এ নিয়ে কথা বলেন না।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি মকবুল, তবে সেবার তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মকবুল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন বিজয়ী।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মকবুল, তবে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে তার ডাকে সাড়া না দেয়ায় এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়েও পেয়েছেন মনোনয়নপত্রের বৈধতা।
আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, এ প্রার্থীর আয়ের কোনো উৎস নেই। তার মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, গাড়ি, এমনকি কৃষিজমিও নেই। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আছে নামমাত্র।
নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্যই মিলেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি ছাড়া মকবুল হোসেনের আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামায় মকবুল এবং তার স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোঠায়।
হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে মকবুল হোসেনের বার্ষিক কোনো আয় নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার ও তার স্ত্রীর জমাকৃত কোনো টাকা কিংবা বন্ড ও সঞ্চয়পত্র নেই।
বতর্মানে মকবুল ও স্ত্রীর নগদ টাকা রয়েছে যথাক্রমে তিন লাখ ও ৫০ হাজার। তার গৃহস্থালি সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
মকবুলের স্বর্ণ রয়েছে ৪০ ভরি। তার স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে ১০ ভরি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মকবুলের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। আয়ের খাত ছিল ব্যবসা। নগদ ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সে সময় তার ৪০ ভরি স্বর্ণ ছিল এবং গৃহস্থালি সামগ্রী ছিল ৫০ হাজার টাকার।
ওই বছর তার স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ছিল না কোনো স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, মকবুল হোসেনের বর্তমান স্থাবর সম্পদ বলতে যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি এবং যৌথ মালিকানার পাকা দোতলা বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। অবশ্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দুইবারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের এমন হলফনামা দেয়ার কথা শুনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সালাউদ্দিন বলেন, ‘এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে হলফনামা সমন্ধে জানতে পারছি। আগে এগুলো নিয়ে কারোর মাথাব্যথা ছিল না। এখন বুঝতে পারছি সংসদ সদস্য নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে নেতারা যত মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন।
‘এটা আসলে ঠিক না। যারা তথ্য চুরি করে হলফনামা দিতে পারে, তারা জনগণকে আর কীইবা দিতে পারে?’
আওয়ামী লীগের কর্মী বিপুল হোসেন বলেন, ‘সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের আয়ের উৎস নেই, এটা কেমন কথা! তাহলে উনি চলেন কীভাবে?
‘আর তার কোনো ব্যাংকে টাকা নেই, এটা ঠিক। টাকা যদি ছেলেদের অ্যাকাউন্টে থাকে, তাহলে তার অ্যাকাউন্টে থাকবে কীভাবে?’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশ উন্নয়নের আলোয় আলোকিত, তাই এখন কোনো অভাব নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের আয়োজনে বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজিত যুবসমাবেশ ও আনন্দর্যালি পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে কোনো কিছুর সংকট নেই। আগামী দিনেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে। তাই নিজেদের স্বার্থে এই সরকারের সঙ্গেই থাকতে হবে।
এম এ মান্নান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশ এখন উন্নয়নের আলোয় আলোকিত। দেশে এখন কোনো কিছুর অভাব নেই। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের এই অভাবনীয় উন্নয়ন দেখে মানুষ খুশি। আগে সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না, এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, বিদ্যুতের আলোয় সারা বাংলাদেশ হাসছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমি আপনাদের সন্তান। আমার কোনো চাহিদা নেই। আপনাদের সেবা করাই আমার কাজ। আমি শেখ হাসিনার সাথে কাজ করে বলছি, তিনি হাওরাঞ্চলের মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি চান হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন হোক৷ তাই হাওরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে আবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
যুব সমাবেশে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিতাংশু শেখর ধর সিতুর সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম শিপনের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রীর পুত্র সাদাত মান্নান অভি, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলন রানী তালুকদার, জয়কলস ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন প্রমুখ৷
এরআগে যুব সমাবেশ উপলক্ষে একটি আনন্দ র্যালি শান্তিগঞ্জ বাজার থেকে শুরু হয়ে স্লোগানে স্লোগানে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আলোচনা সভায় এসে মিলিত হয়৷
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামী রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে দলটির গুম-খুন হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবন্ধন করবে বিএনপি।
শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে।’
রিজভী বলেন, ‘ঢাকায় মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ওইদিন সকাল ১১টায়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেইসঙ্গে ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাসমূহে মানববন্ধনে সফল করার জন্যও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেদিন গুম ও খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সমন্বয়ে এ মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। দশম দফায় তারা অবরোধ ডাকার পর আগামী সপ্তাহে প্রথম ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। রোববার হরতাল-অবরোধ না দিয়ে শুধু মানববন্ধন করবে তারা।
মন্তব্য