ঈদের ছুটিতে গ্যাসের ব্যবহার কমে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ লাইনে চাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়, এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের গ্যাস পাইপলাইন লিকেজের পর গন্ধ বের হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার রাতের ওই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই ব্যাখ্যা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, বেইলি রোডসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পরার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এতে বলা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে তিতাস গ্যাসের ১৪টি ইমার্জেন্সি টিম এ সব এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে যে সমস্ত ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশনের মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে, সে সব স্টেশন থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকাসহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ লাইনে চাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
এতে বলা হয়, বর্তমানে গ্যাসের সরবরাহ লাইনে চাপ স্বাভাবিক রয়েছে এবং গ্যাসের সরবরাহ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে নির্বিঘ্নে গ্যাস ও গ্যাসের চুলা ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এর আগে সোমবার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের গন্ধ বের হতে থথাকলে তা নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এই আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়। সংকট সমাধানে চুলা জ্বালানোসহ আগুন জ্বালানো বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয় কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে রাতে জানানো হয়, রাজধানীর প্রায় সব এলাকা থেকেই ফোন এসেছে এ সমস্যা নিয়ে। আতঙ্কিত লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিতে থাকে। ফায়ার সার্ভিস তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছে।
সোমবার গভীর রাতে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বলেন, ‘রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা থেকেই আমাদের কাছে পাইপ লিকেজের বিষয়ে ফোন এসেছে। কেউ যেন অকারণে লিকেজের আশপাশে আগুন না জ্বালায় সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে রাতে এক পোস্টে বলা হয়, ‘ঈদে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় (ওভার-ফ্লো) গন্ধ বাইরে আসছে। তিতাসের জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের গ্যাস পাইপলাইন লিকেজের পর গন্ধ বের হতে থাকার সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে মঙ্গলবার সকালে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ নিউজবাংলাকে জানান।
তিনি বলেন, ‘সারা ঢাকা শহরের গ্যাসের লাইন সকাল থেকে স্বাভাবিক। লিকেজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর গ্যাসের অভারফ্লো নাই।’
এ ছাড়া সকাল থেকে এ সংকট নিয়ে আর কোনো অভিযোগও ফায়ার সার্ভিসে আসেনি বলে জানান কেন্দ্রীয় ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর কোনো সমস্যা নাই। আমাদের কাছে আসা অভিযোগ আমরা তিতাসের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। তারা সেটা ঠিক করেছে। আমাদের কাছে আজকে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।’
আরও পড়ুন:
আইফোনের শখ ছিল এসএসসি পাস করে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর। পরিবারকে বিষয়টি জানালে তার শখ পূরণে অপরাগতা প্রকাশ করে সদস্যরা। তাই চুরির পথ বেছে নেন ওই যুবক।
রোবাবর মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে ওই কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকালে তার কাছ স্বর্ণ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, পরিবার আইফোন কেনার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চুরির পথ বেছে নেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে ইমনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আইফোন কেনার জন্য বাসা থেকে চুরি করেন ওই যুবক।’
ওসি জানান, ‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিরপুর মডেল থানার পূর্ব মনিপুরের একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় চুরি হয়। ঘরের তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ মোট চার লাখেরও বেশি টাকার মালামাল চুরি হয়। পরে পাশের একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তসহ দুজনকে শনাক্ত করা হয়। পরে রোবাবর মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে একটি স্বর্ণের ও একটি ডায়মন্ডের নাকফুল এবং চুরি করা স্বর্ণ বিক্রির ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
আরও পড়ুন:বিএনপির নেতারা দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘রাজনীতির গিনিপিগ’ বানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি কয়েকদিন থেকে বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া যতবার অসুস্থ হয়েছেন, বিএনপি বলেছে- উনাকে বিদেশ না নিলে উনি মারা যাবেন, কিন্তু ততবারই উনি হাসপাতাল থেকে ভালো হয়ে বাড়িতে ফেরত গেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে খালেদা জিয়াকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে করে বেগম জিয়াকে বিএনপি নেতারা গিনিপিগ বানিয়েছেন, রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছেন। আসলে বেগম জিয়া সুস্থ হোক সেটা তারা চান না। তারা চান, তিনি আরও অসুস্থ থাকুন, যাতে তারা রাজনীতিটা করতে পারে।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের আহবায়ক কামরুজ্জামান লেলিনের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং স্বজনহারা ব্যক্তিবর্গ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বোতভাবে কাজ করছে। বিদেশ নেয়াটা আদালতের এখতিয়ার। আদালতের আদেশ ছাড়া তিনি তো বিদেশ যেতে পারেন না। সুতরাং এ নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেশ জুড়ে ‘মায়ের কান্না’ কেঁদে চলছে। আমি প্রশ্ন রাখি যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের কর্ণকুহরে এই কান্না কেন পৌঁছে না? আপনাদের কাছে দেখা করার দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল, আপনারা এখনও পর্যন্ত দেখা করেন নাই। অর্থাৎ মানবাধিকার এখন কিছু কিছু রাষ্ট্রের একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সমস্ত দেশ উন্নয়ন-অগ্রগতি করে কিন্তু তাদেরকে ঠিক মতো ব্যবসা দেয় না, তাদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য মানবাধিকার এখন একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করা, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা দেশে-বিদেশে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়। সে জন্য নানা ছলছুঁতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার, তারপর বলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের দেশে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে। সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে।’
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না। আমাদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়ে, ঘেরাও করে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাই। আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নেন নাই। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চান তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নাই। সুতরাং আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং যারা মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে দেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে, তারা দয়া করে আমাদেরকে গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলে, ১৯৭৭, ৭৮, ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যার শিকার নিরপরাধ সেনা সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র আর্তনাদ, ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজনদের কান্না তাদের কানে কেন পৌঁছে না?’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আবার সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি আবার অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এভাবে উঠে, বসে, দৌড়ে, কিম্বা হামাগুড়ি দিয়ে, ক’দিন হাঁটা কর্মসূচি, ক’দিন বসা কর্মসূচি, ক’দিন দাঁড়ানো কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে যে সম্পৃক্ত করা যায় নাই, সেটি তারা বুঝতে পেরেছে। তাই এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এবং বিশ্ববেনিয়ারা যাতে ফায়দা লুটতে পারে সেজন্য তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে।
‘তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই- আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে, রাজপথে থাকবে, কাউকে আর ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
আরও পড়ুন:ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার সকালে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
দণ্ড স্থগিত রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো যাবে না বলে রোববার সচিবালয়ে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর এক দিন পর সচিবালয়ের কাছাকাছি প্রেস ক্লাবে দুদু বলেন, ‘এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে। এটা যদি প্রধানমন্ত্রী মনে রাখেন, তাহলে তার জন্য ভালো, আমাদের জন্য ভালো, দেশের জন্য ভালো, তার দলের জন্যও ভালো।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এটা প্রধানমন্ত্রী জানেন। খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী, তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি তার জীবনের কোনো নির্বাচনে হারেননি। পরিবার থেকে তার সুচিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
‘এটাই প্রথম আবেদন না, এর আগেও করা হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা করবে সরকার, কিন্তু আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অব আমেরিকার সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নাকচ করেছেন।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করতে পারতেন। তিনি যেভাবে না করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি কোথায় যেন আতঙ্কিত, তিনি যেন হতাশ। তিনি বুঝতে পেরেছেন আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। সেই বিবেচনায় তিনি একটি আপসমুখী পদক্ষেপ নিতে পারতেন।
‘কারণ আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এটা একজন অন্ধ যেমন জানে, তেমনি বিবেকহীন মানুষও জানে। আগামী দিনে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবে খালেদা জিয়া।’
আরও পড়ুন:আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সন্ত্রাসীরা যাতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি করতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান।
রাজধানীর মিন্টো রোডে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে মিট দ্য প্রেসে তিনি এ কথা জানান।
কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিএমপি কমিশনার।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়ে থাকে। আসছে নির্বাচনে যাতে কেউ বা কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি করতে না পারে। ডিএমপির পুলিশ সদস্যদের যথেষ্ট সাহস ও শক্তি রয়েছে। এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।’
রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন ডিএমপি সবকিছুই করবে বলে জানান তিনি।
কিছুদিন আগে তেজগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এমন পরিস্থিতিতে নতুন কমিশনার হিসেবে হাবিবুর রহমান কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন যে জামিন একটি বিচারিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় একজন অপরাধী আদালত থেকে বিচার পেতে পারে, কিন্তু পুলিশের তখনই কিছু করার থাকে, যখন কোনো ব্যক্তি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বা অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে বা অপরাধ সংঘটন করে থাকে।
‘সে ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, একজন অপরাধী সে ছোট হোক বা বড় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর আমরা। যারা জামিনে বেরিয়ে আসছে তাদেরকেও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখার জন্য পুলিশের সব ইউনিটে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
সাইবার অপরাধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ছাপিয়ে আজ আমাদের নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সাইবার ক্রাইম। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে; বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে।’
ডিএমপির জনবল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনবল রয়েছে ৩৪ হাজার। সেটি যদি রাজধানীর দুই কোটি ২৪ লক্ষ জনগণের জন্য ভাগ করি তাহলে আমাদের জনবল খুব কম।’
ঢাকাতে যেকোনো উপায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান নবনিযুক্ত এ কমিশনার।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অনুমতি ছাড়া কোনো সভা-সমাবেশ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সোমবার আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে তিনি এ কথা জানান।
বিএনপি বলেছে তারা ঢাকায় অনুমতি ছাড়াই সভা সমাবেশ করবে। যদি অনুমতি না নেয় তাহলে ডিএমপি কী ধরনের ভূমিকা নেবে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আজকেও বিরোধী দলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। আমরা যেভাবে অনুমতি দিয়েছি, সেই অনুমতি মেনে নিয়েই তারা কাজ করছে।
‘কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায়, ডিএমপির অধ্যাদেশে যেই নিয়মকানুন রয়েছে, সেই নিয়মকানুন ভঙ্গ যদি করতে চায় এবং করে, নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বিএনপি এর আগে অবরোধ করেছে। সামনে যদি আবারও অবরোধে যায় তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘আমরা বলেছি ডিএমপির অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
পুলিশের সাময়িক বরখাস্তকৃত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদকেন্দ্রিক ঘটনায় যার যতটুকু অপরাধ ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
রাজধানীর মিন্টো রোডে সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হাবিবুর রহমান কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মিট দ্য প্রেস আয়োজন করে ডিএমপি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাহিনীর যে নিয়মকানুন আছে, সেই নিয়মকানুনের মধ্যে চলে এবং চলবে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’
তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, ‘যতটুকু অপরাধ করবে ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে।’ তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও একই কথা বলতে চাই, যতটুকু অপরাধ করবে ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে।”
রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার যে ডিপার্টমেন্ট আছে সেটিও সরকারি বিধি-বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। আমি মনে করি জড়িত দুজন সরকারি ডিপার্টমেন্ট ও দুজনই ক্যাডার কর্মকর্তা। সেখানে দুজনের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। যার যার দায়িত্ব সেই সেই পালন করবে আমি মনে করি।’
সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া, মামলা ছাড়া ধরে এনে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ডিএমপির কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে কী উদ্যোগ নেবেন জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অপরাধী পুলিশ হোক আর পুলিশের বাবা হোক, সে অপরাধী। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রেক্ষাপট
এডিসি হারুন গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে নারী পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদার সঙ্গে শাহবাগ মোড়ের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে যান। ওই সময় সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান।
ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেখানে যোগ দেন এ দুই ছাত্রলীগ নেতাও। একপর্যায়ে এডিসি হারুন পুলিশ এনে তাদের শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরে ওই দুইজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এডিসি হারুনের নেতৃত্বে মারধর করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদকে।
ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে ডিএমপি। এডিসি হারুনকে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত,তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদা পুরো ঘটনার দায় দিয়েছেন তার স্বামী মামুনকে। তিনি বলেছেন, তার স্বামীই প্রথমে হামলা চালান।
আরও পড়ুন:গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় বাধাদানকারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে পুলিশ মোটেও চিন্তিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন নবনিযুক্ত কমিশনার।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে পুলিশে আতঙ্ক রয়েছে বলে কিছু সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এমন বাস্তবতায় ডিএমপি কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভিসা নীতি নিয়ে পুলিশের মধ্যে কোনো অস্থিরতা আছে কি না।
জবাবে ডিএমপির প্রধান বলেন, ‘একটি দেশের ভিসা নীতি কী হবে, সেটা নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই।’
কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান হাবিবুর রহমান। তার প্রতি আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান ধন্যবাদ।
ডিএমপির দায়িত্বের বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘ঢাকার দুই কোটি ২৪ লাখ লোকের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। ঢাকা সবচেয়ে বড় মেগা শহর। এই শহরের নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও যোগ্যতার সাথে এই শহরের সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম থেকে ঢাকা বদলে গেছে। অপরাধের নতুন সংস্করণ হিসেবে সাইবার ক্রাইম বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকার এখনকার চিত্র ভিন্ন। যানজটের নগরী ঢাকার রাস্তার পরিমাণ অনেক কম।
‘কাজেই যানজট বড় সমস্যা। এ ছাড়া মাদক, সাইবার ক্রাইম ও নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ন্ত্রণ রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’
ডিএমপির সক্ষমতা নিয়ে কমিশনার বলেন, ‘ডিএমপি অত্যন্ত দক্ষ। এমনকি বিদেশের সাথে তুলনা করলেও আমরা আমাদের পুলিশিংয়ে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছি। এই মেগা শহরকে নিরাপদ শহর গড়ে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এ জন্য বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং ঠিক রেখে বেটার ঢাকা গড়ে তোলার চেষ্টা করব। যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশ প্রস্তুত থাকবে।’
বিভিন্ন অপরাধে পুলিশের জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ হোক, পুলিশের বাবা হোক, অপরাধী অপরাধীই। তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, নেব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য