× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Bag did not catch the porter wages why?
google_news print-icon

‘ব্যাগ ধরেইনি, কুলি মজুরি কেন?’

ব্যাগ-ধরেইনি-কুলি-মজুরি-কেন?
গাবতলী বাস টার্মিনালের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজির রসিদ। ছবি: নিউজবাংলা
মেহেরপুর থেকে আসা বাসযাত্রী সনু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি টাকা দেব না বললে আমার ব্যাগ আমাকেই নিতে দিচ্ছে না। এমনকি আমি যেসব সিএনজি অটোরিকশ ডাকছি সে প্রতিটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটা তো ওপেন চাঁদাবাজি ভাই। যে আমার ব্যাগ ধরেইনি, আমি কেন তাকে কুলি মজুরি দেব?’

‘বাসের বাঙ্কার থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশের ফুটপাতে রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই লোক কোথা থেকে এসে একটা রসিদ ধরিয়ে বলে ৪০ টাকা দেন। কাগজটা পড়ে দেখি এটা কুলি মজুরির রসিদ। অথচ আমি কোনো কুলি ডাকিনি এবং আমার ব্যাগ অন্য কেউ বহনও করেনি।’

রাজধানীর মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুর থেকে আসা বাসযাত্রী সনু বিশ্বাস।

এই প্রতিবেদক তার আগে দেখতে পান যে রাফি ট্রেডার্স লেখা অ্যাপ্রন পরিহিত এক যুবক বাস যাত্রী সনু বিশ্বাসের সঙ্গে কী একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন।

এগিয়ে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, ‘আমি এসেছি মেহেরপুর থেকে। আমার ব্যাগ ছিল বাসের বাঙ্কারে। তেমন ভারি ব্যাগ নয় যে কুলি ডাকতে হবে। আমি নিজে বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামিয়েছি। এখন একটা সিএনটি অটোরিকশা ডেকে বাসায় চলে যাব। এর মাঝে তারা কোনো কারণ ছাড়াই এসে টাকা দাবি করছে।

‘আমি টাকা দেব না বললে সে আমার ব্যাগ আমাকেই নিতে দিচ্ছে না। এমনকি আমি যাওয়ার জন্য যেসব সিএনজি অটোরিকশ ডাকছি সে প্রতিটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটা তো ওপেন চাঁদাবাজি ভাই। যে আমার ব্যাগ ধরেইনি, আমি কেন তাকে কুলি মজুরি দেব?’

এ বিষয়ে সোহেল নামে রাফি ট্রেডার্সের ওই কর্মীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এই এলাকা ইজারা নিয়েছি। এই এলাকার ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যাগ রাখলে আমাদের টাকা দিতে হবে।’

এই ঘটনা রোববার দুপুরের। এর ঘণ্টাখানেক আগে একই স্থানে এমন চাঁদাবাজির শিকার হন খন্দকার বশির উদ্দিন মিলন নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। সেখান থেকে পূর্বাশা পরিবহনের বাসে আমার পরিবার দুটি ব্যাগ পাঠিয়েছে। আমি সেই ব্যাগ নিতে এসেছি। বাস থেকে ব্যাগ নামিয়ে আমি সিএনজিতে উঠাতে গেলে এক লোক এসে হাতে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে দুই ব্যাগ বাবদ ৮০ টাকা দাবি করে বসে।

‘আমি কোনো কুলিকে ডাকিনি। এমনকি আমার ব্যাগ তুলতে কেউ সাহায্যও করেনি। অথচ এই রাফি ট্রের্ডাসের লোক আমার কাছ থেকে জোর করে ৮০ টাকা নিয়ে গেল। প্রথমে আমি টাকা দেব না বললে সে আশপাশ থেকে আরও ৩-৪ জনকে ডেকে আমাকে মারতে আসে। পরে নিরুপায় হয়ে তাদের টাকা দিয়ে দিলাম।’

আরেক ভুক্তভোগী ইসহাক আলী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘মেয়রের নামে চাঁদাবাজি! ঢাকা শহরে ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে মেয়রকে চাঁদা না দিয়ে শহরে ঢোকা যাবে না। আমি তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে গাড়ি ভাড়া করার যতবার চেষ্টা করেছি ততবার সেই গাড়ি তারা ভাঙতে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাগ প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে দুইটা ব্যাগে ৮০ টাকা দিয়ে মাজার রোড থেকে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’

রোববার ও আগের কয়েকদিন সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন আরও অনেক যাত্রীর কাছ অভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা এসব বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।

আবার কুলি মজুরির নামে এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানালেন টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মীরা। তারা বলেন, ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান রাফি ট্রেডার্সের কাছ আমরাও জিম্মি। আমাদেরও সব পরিষেবা বিল তাদের কাছেই জমা দিতে হয়।

ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কর্তৃপক্ষও কুলি মজুরির নামে রাফি ট্রেডার্সের এই চাঁদাবাজি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। জানে পুলিশ প্রশাসনও। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন:
চাঁদাবাজি মামলায় চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
অপহরণ-চাঁদাবাজি: সাঁথিয়া ছাত্রলীগ সেক্রেটারিসহ গ্রেপ্তার ৫
হাইওয়ে পুলিশের ‘চাঁদাবাজি’, চালকদের মহাসড়ক অবরোধ
সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে পিটুনি
বরিশালের অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Mamun died due to bleeding in the head in gang beating

দলবদ্ধ পিটুনিতে মাথায় রক্তক্ষরণে মামুনের মৃত্যু

দলবদ্ধ পিটুনিতে মাথায় রক্তক্ষরণে মামুনের মৃত্যু মো. মামুন। ফাইল ছবি
ডিএমপির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ জন মামুনকে হাসপাতালের বাইরে থেকে ধরে গেটের ভেতরে আনে। সব মিলিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটে। তারা প্রথমে মামুনকে ধরে এনে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এরপর ২ মিনিটের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে হত্যা করে।’

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে মো. মামুনকে দলবদ্ধভাবে টানা ২ মিনিট পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। ১০ থেকে ১৫ জন মিলে ১০ মিনিটের মতো তাকে টানাহেঁচড়া করে। এক পর্যায়ে টানা ২ মিনিট কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে হত্যা করা হয়। চিকিৎসকের বক্তব্য, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণই মৃত্যুর মূল কারণ।

রোববার দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালের ভেতরে মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাসুদ রানা অজ্ঞাতদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ জানায়, এই মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- আশরাফুল, বাদশা ও সুমন। তাদের মধ্যে আশরাফুলকে রোববার এবং বাকি দুজনকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই শিশু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

আশরাফুলকে সোমবার আদালতে পাঠিয়ে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

দলবদ্ধ পিটুনিতে মাথায় রক্তক্ষরণে মামুনের মৃত্যু
শিশু হাসপাতালের এই স্থানটিতেই পড়ে ছিল মামুনের মরদেহ। ছবি: নিউজবাংলা

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ১০টায় মামুনকে তার স্ত্রী রহিমা বেগম ও মা শাহানারা বেগম শানু শ্যামলীতে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। কিন্তু মাদকাসক্ত কেন্দ্র মামুনকে ভর্তি নেয়নি। পরে মামুন তার স্ত্রী ও মাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন এবং তিনি ওই এলাকায়ই থেকে যান। পরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ভেতরে সাইকেল চুরির চেষ্টাকালে মামুনকে দলবদ্ধভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

নিহতের পরিবারের দাবি, চোর সাব্যস্ত করে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত আনসার সদস্য এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক ও চালকের সহকারীরা মিলে মামুনকে হত্যা করেছেন।

মাসুদ রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আনসার সদস্য ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেসের চালক ও হেলপাররা চোর বলে ধাওয়া দিয়ে ধরে পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। এই ঘটনায় আনসার সদস্য হীরা ও মাহবুব জড়িত। তারা এখনও হাসপাতালে ডিউটি করছেন।

‘আমার ভাই কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিচারের জন্য দেশে আইন আছে। একজন মানুষকে এভাবে কেন ওরা পিটিয়ে মারবে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মামলার এজাহারে আনসার সদস্যদের নাম উল্লেখ করেননি কেন- এমন প্রশ্নে মাসুদ বলেন, ‘আমাকে থানা থেকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় যে এখানে স্বাক্ষর করেন। আমি কিছু না বুঝেই স্বাক্ষর করেছি। আমি তো এতো কিছু বুঝি না।’

তবে আনসার সদস্য হীরা ও মাহবুব এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) সুজন চক্রবর্তী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় মাহবুব ঘুমাচ্ছিলেন। তখন তার ডিউটি ছিল না। আর হীরা ছিলেন টহল ডিউটিতে। তারা কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না।’

আনসারের তদন্ত কমিটি

মামুনকে পিটিয়ে মারার ঘটনাস্থলের ছিলেন আনসার সদস্যরা। তারা মামুনকে কেন তাদের হেফাজতে নেননি? এটা তাদের দায়িত্বে অবহেলা কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর আনসারের উত্তর জোন কমান্ডার মো. আম্বার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

‘আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কীনা বা তারা কে কোথায় ছিলেন এটা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।’

সুরতহাল প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের তথ্যে গরমিল

মামুনের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক এস এম আল-মামুন। তিনি মামুনের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করার সময় উপস্থিত লোকজন ও মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে, অজ্ঞাতনামা লোকজন ভিকটিমকে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয়। যার ফলে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আমিও তাদের সঙ্গে একমত।’

দলবদ্ধ পিটুনিতে মাথায় রক্তক্ষরণে মামুনের মৃত্যু

সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মামুনের মাথায় কোনো ফোলা চিহ্ন নেই, মাথা স্বাভাবিক।

তবে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছেন, মামুনের মাথার পেছনের অংশ ফোলা ছিল। এছাড়া শরীরের বাকি অংশ অনেকটাই স্বাভাবিক।

সুরতহাল প্রতিবেদনে এই ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিদর্শক এস এম আল-মামুন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি সুরতহাল প্রতিবেদন কোথায় পেলেন? ভাই, থানায় আসেন; আপনার সঙ্গে কথা বলি।’

আপনি কি মামুনের মাথার পেছনে ফোলা দেখতে পাননি নাকি ইচ্ছে করে লিখেননি- এমন প্রশ্ন করার পর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু

মামুনের ময়নাতদন্ত করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক কে এম মঈন উদ্দিন।

মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মামুনের ময়নাতদন্ত করে দেখলাম তার মাথায় প্রচুর আঘাত। মাথায় আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাইনি। সম্ভবত হাত দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।

‘মামুনের মাথার পেছনের অংশ ফোলা ছিল। তবে মাথা থেতলানো বা ক্ষতচিহ্ন নেই। মামুনের সারা শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। হার্টও স্বাভাবিক ছিল।’

যেভাবে হত্যা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ জন মামুনকে হাসপাতালের বাইরে থেকে ধরে গেটের ভেতরে আনে। সব মিলিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটে। তারা প্রথমে মামুনকে ধরে এনে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এরপর ২ মিনিটের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মামুনকে হত্যা করে।’

তবে ভিডিও ফুটেজে আসনার সদস্যদের মারতে দেখা যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।

মামলার সবশেষ অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’

পুলিশ নিজেই এজাহারের বক্তব্য লিখে দিয়ে তাতে স্বাক্ষর নিয়েছে এবং নিহতের ভাই কিছু না বুঝেই তাতে স্বাক্ষর করেছেন- বাদীর এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সব কিছু জেনেশুনেই মামুনের পরিবার মামলা করেছে। এখন তারা যদি এমন অভিযোগ করে থাকে সেটা তাদের বিষয়।’

আরও পড়ুন:
মামুন হত্যায় আনসার জড়িত থাকলে ব্যবস্থা: তেজগাঁও ডিসি
শিশু হাসপাতালে দলবদ্ধ পিটুনিতে যুবক নিহত

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Collection of silent money in government hospitals

সরকারি হাসপাতালে ‘নীরবে টাকা আদায়’

সরকারি হাসপাতালে ‘নীরবে টাকা আদায়’ নার্স, আয়া ও ওয়ার্ড বয়দের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও নীরবে টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেক রোগীর স্বজন। কোলাজ: নিউজবাংলা
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাকে ভর্তি করা বাবু নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ডাক্তার, নার্স আসছেন না। ডাক্তাররা ভালো ব্যবহার করলেও প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয় ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের কাছে। টাকা না দিলে তারা কোনো হেল্প করতে চায় না; আবার খারাপ ব্যবহার করে। মায়ের এমন অবস্থা যে, খুব দ্রুত চিকিৎসা দরকার। দুই ঘণ্টা ধরে ছোটাছুটি করছি। কেউ এগিয়ে আসছে না।’

রাজধানীর রায়ের বাজার থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন মো. বাবু। তার মায়ের পায়ুপথ দিয়ে ক্রমাগত রক্ত ঝরছিল।

মাকে একটু স্বস্তি দিতে কেবিনের জন্য কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ করেও তা মেলাতে পারেননি বাবু। তাকে নিয়ে অবস্থান করতে হয় বারান্দায়।

সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বাবু বলেন, ‘কোনো ডাক্তার, নার্স আসছেন না। ডাক্তাররা ভালো ব্যবহার করলেও প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয় ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের কাছে।

‘টাকা না দিলে তারা কোনো হেল্প করতে চায় না; আবার খারাপ ব্যবহার করে। মায়ের এমন অবস্থা যে, খুব দ্রুত চিকিৎসা দরকার। দুই ঘণ্টা ধরে ছোটাছুটি করছি। কেউ এগিয়ে আসছে না।’

একই অভিযোগ পুরান ঢাকা থেকে আসা মামুন চঞ্চলের। তিনি জ্বর ও হাত-পা ফোলা অবস্থায় থাকা মাকে ভর্তি করেন হাসপাতালটিতে।

মামুন চঞ্চল বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যালের মতো হাসপাতালে সারা দেশ থেকে রোগী আসে। অথচ এখানে নার্সদের, ওয়ার্ড বয় এবং আয়াদের ব্যবহার খারাপ। নার্সদের রোগীর সঙ্গে ব্যবহারের ওপর আলাদা ট্রেনিং দেয়া প্রয়োজন। কারণ রোগী এবং তার সঙ্গে থাকা সবার মানসিক অবস্থা এমনিতেই ভালো থাকে না।

‘আবার ক্যাথেটার লাগানো নিয়েও তাদের কাছে ভোগান্তি। একটা ক্যাথেটারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, যেটা হাসপাতাল থেকে দেয়ার কথা, কিন্তু দেয় না। সেখানে একজন আয়া ক্যাথেটার লাগিয়ে দিতে দাবি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।’

আরেকটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেবিন তো মেলেই না, বরং ওয়ার্ডে একটা বেডে চারজন পর্যন্ত রাখতে দেখেছি!’

এত ছোট বেডে চারজন কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা সম্ভব করছেন। আমি দেখেছি। রোগী আসছে। নার্স বা আয়া তাদের বেডে ফেলে চলে যাচ্ছেন।

‘এদিকে সপ্তাহে দুই দিন সরকারি ছুটিতে ডাক্তার পাই না। আবার একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটিতেও পাব না। গত ৫ দিনে এগুলোই দেখছি। এই ভোগান্তি বন্ধ হওয়া জরুরি।’

সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পুরোনো। সম্প্রতি অব্যবস্থাপনার নতুন কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে বিভিন্ন মাধ্যমে, যা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগী, স্বজন, ওয়ার্ড বয়, আয়া, নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

এক বেডে দুই রোগী

ঢাকা মেডিক্যালের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একটি বেডে দুজন করে রোগী। যেখানে একজনই ভালোভাবে থাকতে পারেন না, সেখানে গাদাগাদি করে দুজন।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ মাঝে মাঝেই শোনা যায়, কিন্তু আমাদের হাতে এটা না। হাসপাতাল প্রশাসন দেখে বিষয়গুলো।

‘আমাদের সামনে এ রকম কিছু চোখে পড়লে তখনই সতর্ক করে দিই। চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কোনো ত্রুটি রাখি না। অন্তত আমার জায়গা থেকে এটা বলতে পারি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাকালে মৃত্যু হয় শাপলা বড়ুয়ার মা নন্দিতা বড়ুয়ার, যিনি মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন।

হাসপাতালে মায়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে শাপলা বড়ুয়া অভিযোগ করেন, ‘আমার মা দেহদান করে গেছেন, কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে তার যে ভোগান্তি হয়েছে, অন্যান্য রোগীদের যে ভোগান্তি হয় সেগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে না। হাসপাতালে নীরব চাঁদাবাজি চলে। আমি মেডিক্যাল অব্যবস্থাপনা দেখে এসেছি।

‘ওয়ার্ড বয়কে টাকা না দিলে আমার মাকে ডায়াপার পরাবে না। অনেক দিন বেডে থাকায় মায়ের মাংস খুবলে পড়েছে। সেই দৃশ্য আমাদের দেখতে হয়েছে। টাকা ছাড়া কেউ পরিষ্কার করবে না। সরকারি হাসপাতালে আমি কেন টাকা দেব তাদের?’

তিনি বলেন, ‘সকালবেলাতেই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা তাদের দিতে হয়। আমার মা যেদিন মারা যান, আমাদের জানানো হয় তিনি নেই। আমরা জানিও না কখন মারা গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, “পাশে আরেকজন রোগী ছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, ‘আমাকে তো এখানে খাবার খেতে দেয় না।’ তখনই একজন নার্স দৌড়ে এসে ধমকে বলেন, ‘আপনিই তো খেতে চান না। আমরা দেই না বলছেন কেন?’ সঙ্গে সঙ্গেই ভদ্রলোক ভয় পেয়ে স্ত্রীকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই খেতে চাই না। তুমি কেন উনাদের বলো না কিছু।’ এভাবে ধমকাধমকি করা হয় রোগীদের। আমি প্রত্যেকটা রোগীকে কাঁদতে দেখেছি তাদের (নার্স) খারাপ ব্যবহারের জন্য। আমরা তো তাদের কাছে জিম্মি।”

বিএসএমএমইউর একটি ওয়ার্ডে থাকা এক রোগীর ভাতিজা শুভ বলেন, ‘আমরা ১৫ দিন ধরে কাকাকে নিয়ে আছি। কেউ খারাপ ব্যবহার না করলেও ডাক্তাররা একেক সময় একেক কথা বলছেন। কাকা উঁচু টেবিল থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন। শুরুতে হাত ভেঙে গেছে বলেছিলেন। অপারেশন করতে হবে।

‘পরীক্ষার পর আজ বললেন, কোমরের চোটের জন্য ফ্র‍্যাকচার আছে। হাতে অপারেশন লাগবে না; কোমরের জন্য অপারেশন করতে হবে। সে জন্য এক লাখ টাকা লাগবে। আমাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ বা সময় দেন না তারা। আগে বললে টাকাটা আগে ম্যানেজ করতে পারতাম।’

বিএসএমএমইউর অ্যাম্বুলেন্সের দায়িত্বে থাকা আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ রকম টাকা আদায় অহরহ হয়। আমাদের এখানে একটু কম, তবে আমার চোখের সামনে দেখেছি।

‘যারা টাকা নেয়, তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেন। কেউ স্বীকার করবে না।’

অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের ভাষ্য

হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে ওয়ার্ড বয়, আয়াদের টাকা আদায় এবং নার্সদের খারাপ ব্যবহার নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

ওয়ার্ড বয়, নার্স ও আয়াদের ব্যবহার নিয়ে রোগীদের অভিযোগের প্রশ্নে ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে সেটার জন্য ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়। আমরা সবসময় স্পিকারে এবং সরাসরি তাদের নির্দেশনা দিই রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যেন কোনো রকম অসাদাচরণ না ঘটে। আর টাকা না দিলে কাজ না করার অভিযোগ হলে আমাদের কাছে অভিযুক্তের নাম ও পদবিসহ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রমাণ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেব।

‘এর আগে অনেককেই বেতন বন্ধ করে এবং নানাভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সবাইকে গণহারে বললে কেউ শুনবে, কেউ শুনবে না।’

‘ক্যাথেটার হাসপাতালের দেয়ার কথা। সেটাও রোগীদের কিনতে হচ্ছে। আবার তা লাগিয়ে দিতেও টাকা দিতে হচ্ছে।’

উল্লিখিত বক্তব্যের জবাবে ঢামেকের পরিচালক সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাথেটারের অর্ডার দেয়ার নির্দেশ দেন, যা আগেও দেয়া ছিল।

অভিযোগের পর ক্যাথেটার বিনা মূল্যে দেয়ার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলেন পরিচালক। সেই সঙ্গে টাকা আদায়ের বিষয় খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।

বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক রেজাউর রহমান বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের নম্বর এবং অভিযোগের ভিডিও লাগবে। অডিও দিলেও হবে না। কারণ অডিও চেক করার টেকনোলজি আমার কাছে নেই।

‘প্রমাণ ছাড়া প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কাউকে শাস্তি দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণসহ থাকতে হবে।’

‘সাধারণ মানুষ তো ভিডিওতে সবাই কথা বলবেন না। আর তারা প্রশাসন পর্যন্ত যাওয়ার মানসিক অবস্থাতেও থাকেন না, রোগীকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন বলে। অনেকে সাহসও পান না। আর শাস্তি না দিয়ে মুখে বললেও তো তারা সচেতন হবেন।’

উল্লিখিত বক্তব্যের জবাবে রেজাউর রহমান বলেন, ‘এভাবে আপনাদের কাছে না বলে আমাদের কাছে আসলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। প্রশাসন তো সে জন্যই রয়েছে, কিন্তু দুই-একজনের কথায় এভাবে সবাইকে বলার চেয়ে অভিযোগ পেলে ব্যাপারটা জোরদার করা সম্ভব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সে রকম অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব, তবে সুনির্দিষ্ট নাম থাকলে সহজ হয় কাজটা।’

‘সাধারণ মানুষ তো হাসপাতাল প্রশাসন পর্যন্ত যেতে পারেন না অথবা ভয় পান। সে ক্ষেত্রে আপনারা মৌখিকভাবেও নির্দেশনা দিতে পারেন কি না?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, ‘সেটা অবশ্যই করা যায়। তাদেরকে বলা হয় সবসময়। আপনার নিয়ে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আবারও নির্দেশনা দেয়া হবে।’

বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট অনেককেই পাওয়া যায়নি ফোনে। কথা হয় অধিদপ্তরের মেডিক্যাল অফিসার (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. দেওয়ান মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ এর আগেও অনেকবার পাওয়া গিয়েছে, তবুও বন্ধ হচ্ছে না অনিয়ম।’

কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে তো সুনির্দিষ্টভাবে টাকা নেয়া বা খারাপ ব্যবহার করা যাবে না, সে রকম নির্দেশনা নেই, তবে অনিয়ম করা যাবে না, সেটা অবশ্যই বলা আছে।

‘আর এই অভিযোগগুলো অনিয়মের মধ্যেই পড়ে। আর এগুলো হসপিটালের ডিরেক্টর এবং প্রশাসনই দেখে থাকেন। তারাই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেন।’

এক বেডে দুই রোগী নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসনের ভাষ্য

কোনো ওয়ার্ডে এক বেডে দুই থেকে তিন রোগী রাখা হয়েছে। এ অভিযোগ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যালে ২ হাজার ৬০০ বেড আর কেবিন মাত্র ২০টা। এর চেয়ে বেশি রোগী আসলে তো আমার সিট দেয়া সম্ভব না। তারা তো অন্য কোথাও যায় না। অন্য হাসপাতালে কেবিন খালি থাকে।

‘তারা এখানেই এভাবে থেকে চিকিৎসা নিতে চাইলে আমার তো কিছু করার নেই, তবে সিট ৫ হাজার করার সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের কাছে। পেয়ে যাব প্রক্রিয়া শেষে।’

এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে কথা হয় নার্স, আয়া ও ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে। তাদের বেশির ভাগই বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঢাকা মেডিক্যালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রিতা রাণী বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগের কথা বলছেন, সেটা একেবারে হয় না, তা না। সবাই সমান না। অনেকেই খারাপ ব্যবহার করে। আমি নিজে তাদের বলি এভাবে রোগী বা অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার না করতে।’

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ইমারজেন্সিতে কাজ করেন আয়া মনি আক্তার। অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না। অনেকেই খারাপ ব্যবহার করে, কিন্তু আপনারা টাকা না দিলে আমাদের সংসার কীভাবে চলবে?’

‘আপনারা তো বেতন পান।’

উল্লেখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মনি বলেন, ‘আমাদের সংসার তো এই ছয় হাজার টাকায় চলে না। রোগীর কেউ খুশি হয়ে বকশিস দিলে সেই টাকা দিয়া তেল, সাবান কিনি। কারও থেইকা জোর কইরা নিই না।’

আরও পড়ুন:
তুরস্কের সহায়তায় চট্টগ্রামে নতুন হাসপাতাল গড়তে চান মেয়র
আড়াই বছরেও চালু হয়নি রংপুর শিশু হাসপাতাল
জন্ম নিবন্ধনে অনিয়ম, ফেনী পৌরসভার ২ কর্মচারী বরখাস্ত
ভালো রাস্তা সংস্কার, একই রাস্তায় দুই প্রকল্প
হাসপাতালে বিজয় দিবসের সজ্জায় কনডম-কাণ্ড তদন্তে কমিটি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Brothers prostitution card is rolling on the pavement of Dhaka

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড রাজধানীর শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনের ফুটওভার ব্রিজে পড়ে থাকা দালালদের কার্ড। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় হাজারও ভিজিটিং কার্ড। সেগুলোতে বড় করে লেখা থাকে ‘... ভাই’। সঙ্গে মোবাইল ফোন নম্বর। নিচে লেখা- ১০০% নিরাপদ আবাসিক হোটেল। আপাতদৃষ্টিতে এটি আবাসিক হোটেলের বিজ্ঞাপনের কার্ড মনে হলেও ফোন করলেই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। ফোনে আরেক প্রান্ত থেকে যিনি কথা বলেন তিনি যৌনকর্মীদের দালাল।

রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান রাস্তা, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজে পড়ে থাকে নানা রঙের অজস্র ভিজিটিং কার্ড। পথচলতি নগরবাসী অনেকে সেসব লক্ষ্য করেন, কেউবা দৃষ্টিই দেন না। তবে একটু লক্ষ্য করলেই চোখে পড়বে ব্যতিক্রমটা।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- নগরীর প্রায় সব এলাকায় এসব কার্ডের দেখা পাওয়া যায়। তবে জনসমাগম বেশি হয় এমন এলাকার ফুটপাতে এসব কার্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেগুলোতে বড় করে লেখা থাকে ‘... ভাই’। সঙ্গে থাকে মোবাইল ফোনের একটি নম্বর। নিচের দিকে লেখা থাকে- ১০০% নিরাপদ আবাসিক হোটেল।

আপাতদৃষ্টিতে যে কেউ ধরে নেবে যে এটি কোনো আবাসিক হোটেলের বিজ্ঞাপনের কার্ড। তবে এসব ভিজিটিং কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্যটা। ফোনে আরেক প্রান্ত থেকে যিনি কথা বলেন তিনি যৌনকর্মীদের একজন দালাল।

সরেজমিনে কারওয়ান বাজার, শ্যামলী, কলেজ গেট, মগবাজার, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মতিঝিল, কমলাপুরসহ নগরীর জনবহুল প্রায় সব এলাকার প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত ও ওভারব্রিজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন ভিজিটিং কার্ড পড়ে থাকতে দেখা গেছে। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, সবুজ রংয়ের এসব ভিজিটিং কার্ডে সিরাজ ভাই, সিদ্দিক ভাই, নিরব ভাই, ডালিম ভাই, ইমরান ভাই, তুষার ভাইসহ অসংখ্য ভাইয়ের নাম ও ফোন নম্বর লেখা থাকে।

কারওয়ানবাজার এলাকার ফুটপাত থেকে এমন কিছু কার্ড কুড়িয়ে হাতে নিয়ে তাতে পাওয়া গেল বাদশা ভাই, ডালিম ভাই, ইমন ভাইসহ আরও অনেক নাম।

পেট্রোবাংলার ভবনের সামনে চায়ের দোকানি ফয়সাল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিও ভাই অনেক দিন ধরেই ফুটপাতে এমন ভিজিটিং কার্ড পড়ে থাকতে দেখছি। আমারও আগ্রহ জাগে কার্ডগুলো কারা এখানে ফেলে রেখে যায় তা দেখতে। একদিন খেয়াল করলাম বোরকা পরা এক মেয়ে এমন বেশকিছু কার্ড আমার দোকানের পাশের ফুটপাতে ফেলে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। পেছন থেকে ডাক দিলে ওই মহিলা হাঁটার গতি বাড়িয়ে কেটে পড়লো।’

তিনি জানালেন, আগে ফুটপাতে এই কার্ড কম দেখা যেতো। এখন প্রায় প্রতিদনই যেন কার্ডের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো দিন ওরা দুই-তিনবার করে এসে এসব কার্ড ফেলে রেখে যায়। কিন্তু সারাক্ষণ তাকিয়ে না থাকলে ওদের চেনা বা ধরা মুশকিল।

কারওরান বাজার এলাকার ফুটপাত থেকে ‘ডালিম ভাই’ নামের একটি কার্ড হতে নিয়ে সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন দেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনার জন্য আমরা কী কী সেবা দিতে পারি স্যার? আমাদের এখানে সব ধরনের ফ্যাসালিটি আছে।’

কী ধরনের সুবিধা আছে- এমন প্রশ্নে ওই ব্যক্তি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘ঘণ্টায় নাকি নাইট করবেন? আমাদের এখানে সবই আছে ভাই। এটা আমাদের আবাসিক হোটেল। এখানে কোনো রিক্স (রিস্ক) নাই।’

ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঠিকানা দেওয়ার কোনো নিয়ম নাই। আপনি শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে এই নম্বরে ফোন দিলেই হবে। আমরা আপনাকে নিয়ে আসব। আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই ভাই। থানা পুলিশ থেকে স্থানীয় সবাইকে আমাদের ম্যানেজ করা।

‘আমাদের এখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো মেয়ে আছে। আপনাকে ১৪-১৫টা দেখাবো। এর মধ্যে আপনি আপনারটা বেছে নিবেন। আমাদের রেট ঘণ্টায় ১৫শ’ আছে, ২ হাজারও আছে। আর নাইট করলে সাড়ে ৩ হাজার আছে, আবার ৪ হাজার টাকারও মেয়ে আছে। আমরা এখানে ২৪ ঘণ্টাই সার্ভিস দেই।’

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড
শ্যামলী শিশুমেলার সামনে ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে আছে অজস্র কার্ড। ছবি: নিউজবাংলা

শ্যামলীর শিশুমেলার সামনের ফুটওভারব্রিজের ওপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এমন শত শত ভিজিটিং কার্ড। তবে কারা এই ভিজিটিং কার্ড ফেলে রেখে যায় সেটা বলতে পারেননি ওভারব্রিজের ওপর বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা।

এখানে মাস্ক বিক্রেতা মোস্তাফিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৭-৮টার দিকে যখন আমি এখানে দোকান বসাই তখন এই ব্রিজে ভিজিটিং কার্ডের জ্বালায় হাঁটা যায় না। কারা যেন সকালে শত শত কার্ড ছিটিয়ে রেখে যায়। আমিসহ এখানকার দোকানদাররা প্রতিদিন সকালে এসে প্রথমেই ঝাড়ু দিয়ে এই কার্ড পরিষ্কার করি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজ বলেন, ‘বিভিন্ন বয়সের মানুষ এগুলো ছিটিয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে তাদের বেশিরভাগই ২০-২৫ বছরের ছেলেপেলে। প্রথমে ওরা এখানে আসে, কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে যখন লোকজন কম থাকে তখন পকেট থেকে মুঠিভর্তি কার্ড নিয়ে পুরো ওভারব্রিজে ছিটিয়ে চলে যায়। দিনের বেলায়ও দুই-একবার ওরা এখানে কার্ড ফেলে যায়। মাঝে মাঝে বোরকা পরে মেয়েরাও এসে এই কার্ড ছিটিয়ে যায়।’

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো খারাপ কাজের জন্য ফেলে রাখে ভাই। এইসব যৌনকর্মীর দালালদের নম্বর। আবার কিছু কিছু যৌনকর্মী নিজেও এই ভিজিটিং কার্ডে থাকা নম্বর ব্যবহার করে।’

ওভারব্রিজের নিচে আগারগাঁওয়ের রাস্তায় বাদাম বিক্রি করেন আব্দুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে এই কার্ড কম দেখা যেতো। কিন্তু এখন আপনি যেখানেই তাকাবেন এই কার্ড দেখতে পাবেন। গতকাল দেখি বোরকা পরা এক মহিলা এই ফুটপাতে আর ওভারব্রিজে কার্ড ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি ডাক দিলে দ্রুত সে দৌড়ে চলে যায়।’

‘এ ধরনের হোটেল ঢাকা শহর জুড়েই আছে। এই এলাকায়ই ৭টি হোটেল আছে যেগুলোতে দেহব্যবসা চলে। এর মধ্যে গাবতলী এলাকায় আছে ৫টি- নিউ আগমন হোটেল, হোটেল যমুনা, নিউ বলাকা হোটেল, রজনীগন্ধা হোটেল ও স্বাগতম হোটেল। আর টেকনিক্যাল এলাকায় আছে ধানসিঁড়ি হোটেল ও বানাম সিটি হোটেল।

শ্যামলী ওভারব্রিজের ওপর থেকে তুষার ভাই লেখা একটি কার্ডের নম্বরধারীর কথা হয় নিউজবাংলার সঙ্গে। ফোন করা মাত্র ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘তুষার ভাই বলছি। আপনার জন্য আমরা কী সেবা দিতে পারি?’

এটা কী ধরনের আবাসিক হোটেল জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘শটে আছে, ঘণ্টায় আছে, নাইট আছে। আপনি কিভাবে নিবেন? আমাদের এখানে শটে ৫৫০ টাকা, ঘণ্টায় ১৮ শ থেকে ২৫ শ টাকা। আর নাইট ৩ হাজার আছে, ৪ হাজার আছে। আমাদের এখানে ভালো ঘরের পড়াশুনা করা মেয়েরা আছে। আপনার পছন্দ হবে।’

আপনার ভিজিটিং কার্ডটা আমি শ্যামলী থেকে পেয়েছি। কিন্তু এখানে হোটেলের কোনো ঠিকানা নেই। এমন প্রশ্নের জবাবে ফোনের ওপাশ থেকে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি শ্যামলী থেকে একটা বাসে উঠে গাবতলী বাস টার্মিনালের এক নম্বর গেটের বিপরীত পাশে এসে এই নম্বরে কল দিয়েন। আমি আপনাকে নিয়ে আসব।’

এই তুষার ভাইয়ের কথার সূত্র ধরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পর্বত সিনেমা হলের পাশে দেখা মেলে এ ধরনের ভিজিটিং কার্ড হাতে এক ব্যক্তিকে। তিনি ফুটপাত ধরে হাঁটা সাধারণ মানুষের হাতে গুঁজে দিচ্ছিলেন একটি করে ভিজিটিং কার্ড।

প্রথমে কাস্টমার ও পরে এক পর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘ভাই, এই কার্ডে আমার যে নাম আছে সেটা নকল। এই নাম মিডিয়ায় দিলে আমার লাইনের (ব্যবসায়িক) লোক চিনে ফেলবে। আর আসল নাম দিলে আমার পরিবার চিনে ফেলবে। এগুলো পেটের দায়ে করছি। আগে কাপড়ের দোকানে কাজ করতাম। চাকরি চলে গেলে এই কাজে জড়িয়ে পড়ি।’

‘আমি ভিজিটিং কার্ড রাস্তায় ছিটাই না। রাস্তায় ছিটালে পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমি মানুষের হাতে হাতে কার্ড দিই। এই কার্ড দিলে হোটেল মালিক আমাকে দিনে ৭০০ টাকা দেয়। এছাড়া আমার কার্ডের নম্বর থেকে আসা কাস্টমার কাজ শেষে আমাকে বকশিস দেয়। সব মিলে মাসে আমার ৩০-৩৫ হাজার থাকে।

‘আমাদের হোটেল মালিক সব কিছু ম্যানেজ করে চলেন। তাই কোনো ঝামেলা হয় না। মাসিক টাকা দিয়ে থানা-পুলিশ, নেতা-গুতা সব হাতে রাখেন তিনি।’

দেহব্যবসায়ীর এই দালাল আরও বলেন, ‘এ ধরনের হোটেল ঢাকা শহর জুড়েই আছে। এই এলাকায়ই ৭টি হোটেল আছে যেগুলোতে দেহব্যবসা চলে। এর মধ্যে গাবতলী এলাকায় আছে ৫টি- নিউ আগমন হোটেল, হোটেল যমুনা, নিউ বলাকা হোটেল, রজনীগন্ধা হোটেল ও স্বাগতম হোটেল। আর টেকনিক্যাল এলাকায় আছে ধানসিঁড়ি হোটেল ও বানাম সিটি হোটেল।

‘এছাড়া অনেকে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে দেহব্যবসা চালায়। আর মিরপুর, মগবাজার, পল্টন, যাত্রাবাড়ীসহ পুরো ঢাকা শহরে এ ধরনের হোটেল বা বাসাবাড়ি আছে শত শত। সংখ্যাটি হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

গাবতলীর এসব হোটেল মালিক কোনো বোর্ডার না থাকলেও কেবল দেহব্যবসা করে মাসে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে বলে দাবি করেন এই দালাল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা হোটেলেরই ২০-২৫টি নিজস্ব মেয়ে থাকে। এরা সারাদিনই হোটেলেই থাকে। এছাড়া প্রতিটি হোটেলেরই নিজস্ব কিছু দালাল থাকে। তারা কিছু মেয়ে সরবরাহ করে।

‘দালাল এমনকি মেয়েরাও কাস্টমার এনে দেয়। আর প্রতিটি হোটেলেই আমার মতো ৬-৭ জন লোক থাকে যারা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু কাস্টমার এনে দেয়।

‘তাছাড়া কাস্টমারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলে তাদের হোম সার্ভিসও দেই। মানে তাদের (কাস্টমার) দেয়া ঠিকানায় মেয়ে পাঠিয়ে দিই। আমাদের এই এলাকা দারুস সালাম থানার আন্ডারে। আমাদের হোটেল মালিক সব কিছু ম্যানেজ করে চলেন। তাই কোনো ঝামেলা হয় না। মাসিক টাকা দিয়ে থানা-পুলিশ, নেতা-গুতা সব হাতে রাখেন তিনি।’

গাবতলী এলাকা মিরপুরের দারুস সালাম থানাভুক্ত এলাকা। থানার ওসি শেখ আমিনুল বাসার এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন এসেছি। তাই এ ধরনের আবাসিক হোটেল বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। তবে আমি মাঝে মাঝেই গাবতলী এলাকার বিভিন্ন হোটেলে ফোর্স পাঠাই। আমাদের পুলিশ সদস্যরা খারাপ কিছু পেলে আমাকে জানানোর কথা। তবে তারা এখনও তেমন কিছু পায়নি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের ভিজিটিং কার্ড ফেলে অনৈতিক ব্যবসার বিষয়টি আমি এখনও পুরোপুরি অবগত নই। মনে হচ্ছে এই অনৈতিক ব্যবসার এটি নতুন কোনো ফাঁদ। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। ঘটনা সত্য হলে আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাব।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Life is uncertain in the journey of happiness and dreams

সুখ-স্বপ্নের যে যাত্রায় জীবনই অনিশ্চিত

সুখ-স্বপ্নের যে যাত্রায় জীবনই অনিশ্চিত অবৈধ পথে ইউরোপে মানবপাচারের রোড। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-দুবাই-ইরান হয়ে তুরস্কে যাওয়ার পথে শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে নাঈমের। সেসব ঘটনা ও নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে অবৈধ উপায়ে ইউরোপ যাত্রায় ব্যবহৃত দুবাই-ইরান-তুরস্ক রুটের ভয়াবহ চিত্র।

‘ইউরোপে কোনোভাবে পা রাখতে পারলেই হলো। কিছুদিন চেষ্টা করলেই থাকা ও কাজের অনুমতিপত্র মিলে যাবে। কাগজ পেয়ে গেলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।’

উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা মানবপাচার চক্রের এসব কথার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। যাত্রাপথে শিকার হতে হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতনের। দিতে হচ্ছে মুক্তিপণ। সবশেষ জেলও খাটতে হচ্ছে।

লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন একটি পথ বেছে নিচ্ছে মানব পাচারকারীরা।

বাংলাদেশ থেকে দুবাই, ইরান হয়ে তুরস্ক যাচ্ছে শত শত মানুষ। আর যাওয়ার পথে নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি সঙ্গে থাকা সর্বস্ব হারাচ্ছেন বিদেশগামীরা। নির্যাতনের মুখে মুক্তিপণ হিসেবে দেশ থেকে স্বজনদের পাঠাতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

গড়ে ৮-১০ লাখ টাকা খুইয়ে তুরস্কে পৌঁছার পর কেউ কেউ অবৈধ পথে প্রবেশ করছেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে। আবার অনেকে ইউরোপীয় দেশগুলোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জেল খেটে শূন্য হাতে ফিরছেন বাংলাদেশে।

মানব পাচারকারী চক্রে ফাঁদে পড়া অসংখ্য তরুণ-যুবকের একজন হারিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা নাঈম (ছদ্মনাম)। দেশ ত্যাগের প্রায় এক বছরে সবকিছু হারিয়ে তুরস্ক থেকে শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন তিনি। ২০২২ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় দেশে ফেরা সম্ভব হয়েছে তার।

গত এক বছরে নাঈমের মতো আড়াই হাজার অবৈধ অভিবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সিআইডির বিশেষায়িত একটি টিমের সংগ্রহ করা তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। এক থেকে ৫-৭ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকার পর তাদের দেশে ফেরার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

বাংলাদেশ-দুবাই-ইরান হয়ে তুরস্কে যাওয়ার পথে শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে নাঈমের। সেসব ঘটনা ও নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে অবৈধ উপায়ে ইউরোপ যাত্রায় ব্যবহৃত দুবাই-ইরান-তুরস্ক রুটের ঝুঁকির চিত্র।

ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট

অভিবাসন বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার জন্য ১৮টি রুট ব্যবহার করছে মানব পাচারকারীরা। তারা ভুক্তভোগী নাঈমকে তুরস্কে পাঠিয়েছিল দুবাই-ইরান রুট ব্যবহার করে।

স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রা কীভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন নাঈম। তিনি জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে আলী হোসেন নামে এক ইউরোপ প্রবাসীর সন্ধান পান তিনি। তার সঙ্গে যোগাযোগ ও আলাপচারিতা শেষে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান নাঈম।

এরপর শুরু হয় মানব পাচারকারী চক্রের তৎপরতা। আব্দুল হান্নান নামে একজনের সঙ্গে নাঈমকে পরিচয় করিয়ে দেন আলী হোসেন। এই হান্নানের সঙ্গে নাঈমের যোগাযোগ হয় হোয়াটসঅ্যাপে। আলী নাঈমকে জানান, ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল তার ফ্লাইটের তারিখ। এরপর নাঈমকে রাজধানীর উত্তরায় হাজী ক্যাম্প এলাকায় সালাম নামে এক ব্যক্তি পাসপোর্ট, টিকিট বুঝিয়ে দেন।

নাঈম বলেন, ‘আমিসহ চারজন ছিলাম। আমাদের গ্রুপ ভিসায় দুবাই পাঠানো হয়। দুবাইয়ের শারজায় যাওয়ার পর আব্দুল হান্নানের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমাদের রিসিভ করে একটি গাড়িতে করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ান।

‘এই ফাঁকে তিনি কৌশলে আমার কাছে থাকা ৬শ’ ডলার ও পাসপোর্ট নিয়ে নেন। ডলার নেয়ার পর তিনি আরও টাকা চান। আলীর সঙ্গে কথা বলার পর আমার ভাই দেশের একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৭ হাজার ২শ’ টাকা পাঠায়। ওখানে ৬-৭ দিন থাকার পর হান্নান কয়েকজনকে নিয়ে এসে আমাদেরকে গাড়িতে করে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যান।’

ট্রলার-স্পিডবোটে পারস্য উপসাগর পাড়ি

গাড়িতে করে নেয়ার পর হান্নান চার বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে নাঈমসহ অন্যদের গাড়িতে করে সমুদ্র বন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সমুদ্র বন্দরে গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদেরকে জোর করে একটি মাছ ধরার ট্রলারে উঠানো হয়। ওই ট্রলারে তারা একসঙ্গে ৫৩ জন বাংলাদেশি ছিলেন। যাওয়ার পথে তাদের ট্রলার নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ৪টি স্পিডবোটে ভাগ করে সবাইকে তুলে ইরানের সীমান্তে নিয়ে যায় পাচারকারীরা।

ইরানের বন্দর আব্বাসে নেমে আসে আমানুষিক নির্যাতন

স্পিডবোটে বন্দর আব্বাসে পৌঁছার পর সেখান থেকে ৫-৬টি মাইক্রোবাসে করে সবাইকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে দুটি রুমে আটকে রাখে চক্রটি। এরপর পালাক্রমে ৫-৬ জন মিলে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। বেধড়ক মারধর করে চাওয়া হয় মুক্তিপণ।

নাঈম বলেন, ‘ওদের কথামতো মুক্তিপণ দিতে না চাওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে আলী হোসেন ও হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা একটি একাউন্ট নম্বর দিলে সেখানে আমার ভাই ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা দেয়ার পর ইরানিরা আরও টাকা চায়। আলী ও হান্নানকে অনুরোধ করে নিজের অপারগতা প্রকাশ করলে ইরানিরা তিন দিন পর আমাদেরকে গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।’

দুর্গম মরুযাত্রা

বন্দর আব্বাস থেকে গাড়িতে করে ৫৩জনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। মরুভূমিতে সারাদিন আটকে রাখার পর রাতে শুরু হয় সিরাজ শহরের উদ্দেশে যাত্রা।

নাঈম বলেন, ‘মরুভূমিতে সারাদিন আটকে রাখার পর আফগান, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নারী-পুরুষ মিলে ১০০ জনের মতো লোককে ৬টি গাড়িতে একটি স্থানে নেয়া হয়। গাড়ি থেকে নেমে ৬ ঘণ্টা হেটে ও দৌড়ে আমাদেরকে মেইন রোডে নিয়ে তোলে পাচারকারীরা। আরও ৩-৪ ঘণ্টা পর দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদেরকে গাড়িতে করে ইরানের সিরাজ শহরে নেয়া হয়।

সিরাজ শহরে নাঈমসহ অন্যদের রিসিভ করে আলীর ছেলে সাব্বির। নাঈম জানান, সিরাজ শহরে এশিয়ান, আফ্রিকান অনেককে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে দুই-একদিন এখানে রেখে নিয়ে যাওয়া হয় ইরানের রাজধানী শহর তেহরানে।

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি

তেহরানে নাঈমসহ তিনজনকে আলাদা আলাদা রুমে রাখা হয়। পরদিন হান্নানের পরিচিত এক বাংলাদেশি মিজাদুলের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় নাঈমকে। নির্যাতন আর দুর্গম যাত্রার ধকলে সেখানে যাওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

নাঈম বলেন, ‘আলী হোসেনকে টাকা দেয়ার পর আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সহ্য করতে না পেরে মিজাদুলকে বলি আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। কিন্তু মিজাদুল জানিয়ে দেন- সেজন্য দেড় লাখ টাকা লাগবে। আর তেহরান থেকে তা সম্ভব নয়। প্রথমে তুরস্কে পাঠিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

তুরস্কে পৌঁছে পুলিশের হাতে ধরা

মিজাদুলের কথায় রাজি হলে একটি গাড়িতে করে নাঈমসহ চারজনকে তুরস্কে পাঠানো হয়। রাতের আঁধারে তারা তুরস্কে প্রবেশ করেন। সেখানে তাদেরকে একটি ‘সেফ হোমে’ রাখা হয়। সেখানে দেড় লাখ টাকা দেয়ার পর তাকে দালালদের মাধ্যমে পাঠানো হয় তুরস্কের তাৎবান শহরে।

নাঈমের ভাষ্য, ‘১৮ মে মিজাদুলকে দেড় লাখ টাকা দেয়ার পর গাড়িতে করে আমাদেরকে একটি নদীর পাড়ে নামিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে জাহাজে ৪ ঘণ্টা যাওয়ার পর দুটি পাহাড়ের মাঝে আমাদের নামিয়ে দেয় দালাল। সারারাত হাঁটার পর তাৎবান শহরে পৌঁছাই। একটি রুমে রাখা হয় ৩ ঘণ্টা। পরে মিজাদুল একটি প্রাইভেট কার পাঠায়। কারে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নামিয়ে দিয়ে বলা হয় আমাদেরকে নিতে বাস আসবে। কিন্তু বাস আর আসেনি। চার ঘণ্টা পর মিজাদুল একটি ট্যাক্সি পাঠায়। ট্যাক্সিতে করে তাৎবান শহরে পৌঁছাই।

‘দুদিন পর মিজাদুল ও আলী হোসেন একটি গাড়ি পাঠান। তাতে উঠিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় তুরস্কের আদানা শহরে। সেখান থেকে ইস্তাম্বুল যাওয়ার পথে চেকপোস্টে পুলিশ আমাদের আটক করে। ১১ দিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পাই।’

বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি ও আইওএম-এর সহায়তায় দেশে ফেরা

তুরস্কের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিরর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন নাঈম। কিন্তু বাদ সাধে তার সঙ্গে কোনো কাগজ না থাকা। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করে আউট পাস ম্যানেজ করে দেশে ফিরতে আরও ছয় মাস লেগে যায় তার।

২০২২ সালের ২৮ মার্চ দেশে ফেরেন নাঈম। দেশে ফেরার পর আলী ও তার চক্রের কাছ থেকে টাকা উদ্ধাারের চেষ্টা করেন তিনি। উপায় না পেয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। আসামি করা হয় চক্রের প্রধান আলী হোসেন, দুবাইয়ে বসবাসকারী আব্দুল হান্নান, ইরানে থাকা মিজাদুল, আলী হোসেনের স্ত্রী রাশিয়া বেগম, শাহাদাৎ হোসেন ও সাব্বিরসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে।

পাচার চক্রের চারজন গ্রেপ্তার

মামলাটির তদন্ত শুরুর পর পাচার চক্রে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ।

তারা হলেন- মাহামুদুল হাছান, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, সালামত উল্লাহ ও রাশিয়া বেগম। মাহামুদুল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের এয়ার কন্ডিশন সার্ভিসে এবং জাহাঙ্গীর সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত বলে জানিয়েছে সিআইডি। সালামত উল্লাহ দালাল এবং রাশিয়া বেগম ইউরোপে বসবাসকারী এই চক্রের প্রধান আলীর স্ত্রী।

অধরা বিদেশে থাকা গডফাদাররা

দেশে জড়িত চারজন গ্রেপ্তার হলেও চক্রের হোতাসহ দেশের বাইরে যারা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর দেশের বাইরে থাকা জড়িতদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের প্রবণতার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য ১৮টা রুট আছে। সবচেয়ে প্রচলিত রুট হচ্ছে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি বা গ্রিসে যাওয়া।

‘গত ১৩-১৪ বছরে ৬৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপে ঢুকেছে। তাদের অর্ধেকের বেশি ঢুকেছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে। দুবাই থেকে ইরান, তুরস্ক বা গ্রিস হয়ে ইউরোপে প্রবেশও এখন কমন একটি রুট। অনেক বছর ধরেই এই রুটে অবৈধভাবে লোকজন যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বর মাসে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিনিধিসহ অন্য কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তারা জানান, অনেক বাংলাদেশি এভাবে তুরস্কে গিয়ে আটক হচ্ছেন। যারা অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে চাচ্ছেন, তাদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। তারা সচেতন না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব নয়।’

শরিফুল হাসান বলেন, ‘ভিজিট ভিসা কাজের নিশ্চয়তা দেয় না। তারপরও এসব জেনে-বুঝেই ভিজিট ভিসায় দুবাই গিয়ে অনিয়মিত পন্থায় অনেকে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।

‘বাংলাদেশের ৮-১০টি মানুষের মধ্যে অবৈধভাবে ইউরোপ যাত্রার প্রবণতা প্রবল। এর মধ্যে শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ একটি জোন। সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার আরেক জোন। আরেকটা জোন হলো ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো- নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও নোয়াখালী।’

আরও পড়ুন:
ভারতে পাচারের জন্য চুরি করা হয় শিশুটিকে
সৌদি পাঠানোর কথা বলে ‘ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ৪
মালয়েশিয়ার কথা বলে সেন্টমার্টিনে ‘পাচার’, গ্রেপ্তার ৫
মানব পাচার মামলায় নদীর জামিন দেয়নি হাইকোর্ট
লিবিয়ায় জিম্মি মাদারীপুরের ৯ যুবক

মন্তব্য

বাংলাদেশ
2 lakh Bangladeshis in Dubai aim for Europe on visit visa

দুবাইয়ে ২ লাখ বাংলাদেশি, লক্ষ্য ইউরোপ

দুবাইয়ে ২ লাখ বাংলাদেশি, লক্ষ্য ইউরোপ
অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে পদে পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছে তরুণ-যুবকরা। দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন, দেশে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়, পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে বিদেশবিভূঁইয়ের রাস্তায় ছেড়ে দেয়া, আটক করে জেল বন্দি জীবন কাটানো, সবশেষে সর্বস্ব খুইয়ে দেশে ফেরত আসার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি দুবাইয়ে ঢুকেছে। করোনার আগে ও পরে এসব বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় সেখানে পৌঁছেছে। আর দুবাইকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে তারা অবৈধভাবে পাড়ি দিচ্ছে ইতালি, স্পেন, গ্রিস, ফ্রান্স, তুরস্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

বাস্তবতা হলো, এই মানুষগুলোর অধিকাংশই বিপদসংকুল এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন, দেশে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়, পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে বিদেশবিভূঁইয়ের রাস্তায় ছেড়ে দেয়া, আটক করে জেল বন্দি জীবন কাটানো, সবশেষে সর্বস্ব খুইয়ে দেশে ফেরত আসার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

তবু থেমে নেই উন্নত-সচ্ছল জীবনের আশায় অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমানোর এই চেষ্টা। বেপরোয়া মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে প্রতিনিয়ত পা রাখছে অসংখ্য তরুণ-যুবক।

বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে দুবাই হয়ে ইউরোপ যাওয়ার আগে মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, ইরান ও আলবেনিয়ার মতো দেশগুলোতে ঢুকছে তারা। আর ভয়ঙ্কর ঝুঁকির এই যাত্রাপথে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট, টাকাপয়সা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। শিকার হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতনের। অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে জিম্মি করে দেশে স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ।

ভয়ঙ্কর এসব ফাঁদ থেকে কোনোমতে মুক্তি মিললেও তাদের দেশে ফেরার পথ আর সেভাবে খোলা থাকে না। সব হারিয়ে ফেরার কোনো উপায় না দেখে আবার পা পাড়াচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছাচ্ছে গ্রিস, স্পেন, ইতালি ও তুরস্কের মতো দেশে।

অভিবাসন বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করার জন্য ১৮টির মতো পথ ব্যবহার হয়। দুর্গম মরুভূমি ও গভীর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে প্রতিবছর বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে অনেককে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখের বেশি মানুষ ভিজিট ভিসায় দুবাই গেছে। তাদের লক্ষ্য দালালদের মাধ্যমে ইউরোপের কোনো একটি দেশে পৌঁছানো। তবে এদের মধ্যে ঠিক কতজন ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছে বা পারছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বাহিনীটির কাছে।

ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিডের আগে-পরে আমাদের দেশ থেকে প্রায় দুই লাখ লোক ভিজিট ভিসায় দুবাই গেছে। তাদের একটা বড় অংশই সেখানে কাজ পায়নি। সে সময়ই আমরা শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম- এই যে লোকজন দুবাইয়ে যাচ্ছে, তারা পরবর্তীতে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করবে।’

তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ২২ হাজারের বেশি মানুষ আটক হয়েছে। দুবাইয়ে ভিজিট ভিসায় যারা গেছে তারা এখন ইরান, গ্রিস, তুরস্ক হয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে করে শুধু তারা নিজেরাই যে বিপদে পড়ছে তা নয়, আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’

উন্নত-সচ্ছল জীবনের আশায় অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমানো প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি গত এক বছরে দেশে ফিরেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির মানবপাচার প্রতিরোধ টিমের তথ্য অনুযায়ী, মানব পাচারের শিকারদের একটা বড় অংশই দুবাই হয়ে অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।

সম্প্রতি মানবপাচার মামলায় একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ। চক্রটি ইউরোপে পাঠানোর নাম করে ভিজিট ভিসায় এক ভুক্তভোগীকে দুবাইয়ে পাঠায়। সেখানে তার পাসপোর্টসহ সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পাঠায় ইরানে। সেখান থেকে পাঠানো হয় তুরস্কে।

তুরস্কে যাওয়ার পর সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল খাটার পর আইওএম এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।

ভুক্তভোগীকে ভিজিট ভিসায় দুবাই এবং পরবর্তীতে ইরান ও তুরস্কে পাঠানো মানব পাচারকারী চক্রটির সঙ্গে সিভিল অ্যাভিয়েশনের একজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- মাহামুদুল হাছান, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, সালামত উল্লাহ ও রাশিয়া বেগম।

তাদের মধ্যে মাহামুদুল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের এয়ার কন্ডিশন সার্ভিসে এবং জাহাঙ্গীর সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত বলে জানিয়েছে সিআইডি।

তুরস্ক ফেরত এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘পাচারকারীরা জানিয়েছিল যে বিমানে করে আমাকে তুরস্কে পৌঁছানো হবে। সে জন্য প্রথমে যেতে হবে দুবাইয়ে। সেখান থেকে তুরস্কের ভিসা দেয়া হবে। কিন্তু তাদের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। পুরোটাই ছিল ফাঁদ।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে দুবাই পাঠানো হয় ভিজিট ভিসায়। দুবাইতে যাওয়ার পরই আমার সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা, পাসপোর্টসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যায় দালালেরা। কাগজ ছাড়া আমার কোথাও যাওয়ারও উপায় ছিল না।

‘তুরস্ক পাঠাবে বলে দুবাইতে আমার কাছ থেকে নেয়া হয় এক লাখ টাকা। তারা ট্রলার ও স্পিডবোটে করে আমাকে ইরানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে ওরা আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়ে দেশে আমার পরিবার থেকে দফায় দফায় ওরা ৮ লাখ টাকা আদায় করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অনেক টাকার বিনিময়ে আমি ইরান থেকে কোনো কাগজপত্র ছাড়া তুরস্কে পৌঁছাই। সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটি। এরপর বাংলাদেশ থেকে আউটপাস নিয়ে তুরস্কে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি ও আইএম-এর সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।

‘সব হারিয়ে আমি ও আমার পরিবার এখন সর্বস্বান্ত, বিপর্যস্ত। আমি চাই না এমন ফাঁদে পড়ে কেউ অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করুক।’

মানবপাচার ঠেকাতে সিআইডির টিম কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৯ সালে ৭২টি মানবপাচার মামলার তদন্তভার পেয়েছি আমরা। এর মধ্যে ৬৭টির তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

‘২০২০ সালে আমাদের কাছে এসেছে ৬৩টি মামলা আর প্রতিবেদন দিয়েছি ৫১টির। ২০২১ সালে তদন্তভার পেয়েছি ৫১টি মামলার, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি ৬০টির। আর ২০২২ সালে তদন্তভার পেয়েছি ৩০টির এবং তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৪৫টি মামলার।’

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লিবিয়া, মরক্কো, ইরান, তুরস্ক ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে মানবপাচার হচ্ছে। দুবাইকে বিশেষ করে ট্রানজিট শহর হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।

‘মানুষ উন্নত জীবন ও উপার্জনের জন্য ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে যেতে প্রলুব্ধ হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা ভিজিট ভিসার মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:
ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর পালিয়ে এসে তরুণীর মামলা
মানবপাচার মামলা: ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ১২ এপ্রিল
নৃত্যশিল্পী ইভানের জামিন
মানব পাচার: ইভানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পেছাল
ইউরোপের কথা বলে শ্রীলংকার জঙ্গলে

মন্তব্য

বাংলাদেশ
All local Dhaka city transport

‘পুরোই লোকাল’ ঢাকা নগর পরিবহন

‘পুরোই লোকাল’ ঢাকা নগর পরিবহন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় এখন লোকাল বাসকেও যেন টেক্কা দিচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহন। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকা নগর পরিবহনে এ পর্যন্ত তিনটি রুট চালু হয়েছে। কোনোটিতেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস নেই। কোনো কোনো রুটে টিকিট কাউন্টারও তুলে দেয়া হয়েছে। রুট ছেড়ে বাস চলছে বাণিজ্য মেলায়। যততত্র যাত্রী উঠা-নামা, ভাড়া নিয়ে টিকিট না দেয়া, বাসগুলোতে ধুলো-ময়লা, বাসের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা- এমন নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সব রুটে।

আসাদগেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, কাকরাইল…। ভাই আসেন। ওঠেন। কই যাবেন? রাস্তায় অপেক্ষমাণ যাত্রীর উত্তর- ধানমন্ডি। হেলপার বলছেন- না ভাই, এটা ফার্মগেট রুটের বাস।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লোকাল বাসের কর্মীদের এমন হাঁক-ডাক বরাবরের চিত্র। যাত্রীরা রাস্তার যেকোনো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে হাত তুললেই থেমে যাবে বাস। যাত্রীর ভিড়ে পা ফেলার জায়গা না থাকলেও হেলপারের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। চিঁড়েচ্যাপ্টা করে হলেও যাত্রী তুলতে থাকেন। নারী-পুরুষ নির্বিচারে যাত্রীরাও প্রয়োজনের তাগিদে ঠ্যালা-ধাক্কা দিয়ে একটু জায়গা করে নেন।

যাত্রীদের এমন হয়রানি আর ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতেই রাজধানীতে চালু করা হয়েছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। শুরুতে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলেও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় এখন লোকাল বাসকেও যেন টেক্কা দিচ্ছে এই বিশেষ পরিবহনের বাসগুলো। রাস্তায় আর ১০টা লোকাল বাসের মতোই যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। নামার ক্ষেত্রেও যাত্রীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে যেখানে ইচ্ছা বাস থামিয়ে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।

রাজধানীবাসীকে লক্কড়-ঝক্কড় পরিবহনের হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চালু হয় ঢাকা নগর পরিবহনের ২১ নম্বর রুট। পরিকল্পনা রয়েছে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ রাজধানীকে একটা কোম্পানির আওতায় আনার।

যাত্রীরাও আশায় বুক বাঁধেন- যাক, নগরে ভালো একটা পরিবহন সেবা মিলবে। তবে দিন যত যাচ্ছে, ততই নিরাশ হতে হচ্ছে তাদেরকে।

শুধু ২২ নম্বর রুট নয়, বাকি দুই রুটেরও বেহাল দশা। শুরুতে ২১ নম্বর রুটের সমস্যাগুলোকে পাইলট প্রজেক্ট বলে অযুহাত দেখাতেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাকি দুই রুট চালু হওয়ার পর সমস্যার সমাধান মিলবে- এমন আশ্বাসও দেন তারা। কিন্তু সমাধান তো দূরের কথা, দিনকে দিন সমস্যা আরও বেড়েছে। আর পুরো বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও চোখে পড়ার মতো।

ঢাকা নগর পরিবহনের ২২, ২৩ ও ২৬ নম্বর রুট চালু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে সময় পিছিয়ে ২২ ও ২৬ নম্বর রুট উদ্বোধন করা হয় ২৩ অক্টোবর। ২৩ নম্বর রুটটি এখনও চালুই হয়নি।

ঢাকা নগর পরিবহনের চলমান তিনটি রুট নিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। তাতে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা কেবলই হতাশার। সর্বত্রই হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

রুট-২১

বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২১ নম্বর রুটে (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-প্রেস ক্লাব-মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর) পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে বাস সেবা শুরু হয়।

বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাস দিয়ে এই রুট চালু হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই মাসের মধ্যে এতে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল ১০০টি বাস। তবে এই দীর্ঘ ১৩ মাসে এই রুট ৫০টি বাসেরও মুখ দেখেনি।

শুরু থেকেই এই রুটে চলাচল করা বিআরটিসি বাসে চালকের কোনো সহকারী নেই। এটা যাত্রীদের জন্য বাড়তি বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা নগর পরিবহনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২১ নম্বর রুটে বাস চলে ২৫ থেকে ৩৫টি। এর মধ্যে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের বাস ৮টি। বাকিগুলো বিআরটিসির ডবল ডেকার।’

ট্রান্সসিলভার ২০টি বাস চলার কথা থাকলেও কেন তা হয়নি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বনিবনা হয় না। তারা বাস দিতে চায় না।’

যাত্রীদের আরেকটি বড় অভিযোগ, এই রুটে চলাচল করা বাসগুলো দেরি করে আসে। বাসের ভেতরের অবস্থা নোংরা।

তাদের একজন মো. সুমন বলেন, ‘২১ নম্বর রুটের বাসগুলো মোড়ে মোড়ে থামিয়ে যাত্রী তোলে। আর বাড়তি এই টাকাটা যায় ড্রাইভারের পকেটে। ট্রান্সসিলভার বাসেও একই অবস্থা। লোকাল বাস আর নগর পরিবহনের বাসের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। দিন যত যাচ্ছে সেবার মান ততো খারাপ হচ্ছে।’

লোকালের নামান্তর ২২ নম্বর রুট

ঢাকা নগর পরিবহনের ২২ নম্বর রুটে চলে হানিফ পরিবহনের বাস। এই রুটে তাদের ৫০টি বাস চলার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল ৩০টি বাস দিয়ে। তা না বেড়ে উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে ২০টিতে। শুরুতে টিকিট কাউন্টার থাকলেও পরে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাস কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।

প্রতিদিন এই রুটে চলাচল করা অন্তত ১০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তাদের একজন মো. শাহীন বলেন, ‘শুরু থেকেই ২২ নম্বর রুটে চলাচল করা হানিফ পরিবহনের বাসগুলো শুরু থেকেই রাস্তার যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলে। অন্য দুই রুটের কাউন্টার থাকলেও এই রুটের কাউন্টার উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা এখন লোকাল বাসের মতো যাত্রী নিচ্ছে। অনেক কন্ড্রাক্টর টিকিটও দিচ্ছে না।

‘দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়। আর বাস কম থাকায় যাত্রীর ভিড়ে গাদাগাদি করে চলতে হয়। রাজধানীর আর ১০টা পরিবহনের মতোই অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় চলছে এই রুটের বাসগুলো।’

‘পুরোই লোকাল’ ঢাকা নগর পরিবহন
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় চলছে ২২ রুটের বাসগুলো।ছবি: নিউজবাংলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক টিকিট বিক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকিট পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাস এখন চলছে কন্ট্রাক্টে। এছাড়া এই রুটে চলাচল করা বাস বিভিন্ন সময় কোনো প্রোগ্রামে অন্যত্র রিজার্ভেও ভাড়া দেয়া হয়। বাস কন্ট্রাক্টে চলার কারণে যে যেমনে পারে ওঠে-নামে, ভাড়া নিচ্ছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ২২ নম্বর রুটের ইনচার্জ মো. আরমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম সমস্যা হচ্ছে আমাদের গাড়ি বসে থাকে। ড্রাইভারসহ অন্যান্য স্টাফ পাই না। আমাদের লোকসান হচ্ছিল। কাউন্টারের লোকদের টাকা দিতে পারছিলাম না। তাই কাউন্টার উঠিয়ে দিয়েছি।’

বাসে যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়, তারপরও কিভাবে লোকসান হয়- এমন প্রশ্নে আরমান বলেন, ‘ঘাটারচর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভিড় থাকে। তার পর আর যাত্রী তেমন একটা থাকে না।’

গাড়ির ভেতরে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রাখার কারণে অনেক সময় কন্ডাক্টর অনিয়ম করছেন। ফলে টাকাটা কোম্পানি পায় না। এমন তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওদের খরচ লাগে তো! এটা আপনার বুঝতে হবে। আপনি মানবিক দৃষ্টিতে চিন্তা করেন, ওদেরও একটা খরচ আছে।

‘ওরা দুই-এক টাকা সরাবে, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। সবাইকে টিকিট দিলে তো টাকাটা জায়গামতো চলে যাবে। ওদের বেতন দেয়া হয় রাতে। সারাদিন ওরা খাবে কি?’

৫০টি বাস চলার কথা ছিল। তা থেকে এখন চলছে ২০টি। এর কারণ জানতে চাইলে আরমান বলেন, ‘সেটা আমি বলতে পারব না। ৩০টা চলত, এখন চলে ২০টা। ড্রাইভারের সংকটে আমরা বাস চালাতে পারছি না।’

২৬ নম্বর রুটের বাস চলে বাণিজ্য মেলায়

২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির ৫০টি ডবল ডেকার বাস দেয়ার কথা ছিল এই রুটে। তবে এখন পর্যন্ত বাস চলেছে সর্বোচ্চ ২৫টি।

এদিকে বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার পর এখন ১৭ থেকে ১৮টি বাস চলছে। বাকি বাসগুলো বাণিজ্য মেলা রুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাস কমে যাওয়ায় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এই রুটের বাসে চালকের কোনো সহকারী নেই। যত্রতত্র বাস থামিয়ে তোলা হয় টিকিট ছাড়া যাত্রী।

এই রুটে নিয়মিত চলাচল করা মো. মহসিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা লাগে। বাসের পরিবেশ নোংরা। সিটগুলোতে ধুলা পড়ে থাকে। চালক মোড়ে মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলে। মানা করলেও শোনে না।

‘বসিলা থেকে শুরু হয় টিকিট ছাড়া যাত্রী তোলা। সারা পথেই চালক সামনের দরজা খোলা রেখে যাত্রী তোলেন। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা নামার সময় চালকের হাতে টাকা দিয়ে যান।’

এই রুটের এক চালককে যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার সময় অনিয়ম করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন উত্তর দেননি। বলেন, ‘মাফ করে দেন, আর হবে না।’

পরে তার নাম জিজ্ঞাসা করলেও একই কথা বলেন, ‘মাফ করে দেন।’

তিনি কিছুই জানেন না

নগর পরিবহনে কম বাস চলার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব সাবিহা রহমানের কাছে। মোবাইল ফোনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২১ নম্বর রুটে ৩০টি বিআরটিসির বাস ও ২০টি ট্রান্সসিলভার বাস চলার কথা। তবে তাদের কিছু অসুবিধা আছে, যে কারনে ৫০টি বাস দেখছেন না আপনারা।’

কখনোই ৫০টি বাস চলেনি- এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

২২ নম্বর রুটে বর্তমানে ২০টি বাস চলে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে সাবিহা রহমান বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। আমার একটি পরিদর্শন টিম আছে। তারা আমায় জানিয়েছে যে, বাস রাস্তার মাঝে থামে। ড্রাইভারও টাকা আদায় করছে। কিন্তু বাস কম চলার বিষয় আমার নলেজে নেই। আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

‘পুরোই লোকাল’ ঢাকা নগর পরিবহন
লোকাল বাসের মতো দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা

টিকিট কাউন্টার উঠিয়ে বাসের ভেতরে টিকিট কাটা হচ্ছে। এছাড়া লোকাল বাসের মতো যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও নামানো হচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। জনগণেরও দায়িত্ব আছে। জনগণও যেখানে সেখানে নামতে চায়। আমি আজ জানলাম। এটা আমার জানার বাইরে ছিল। বিষয়টি খোঁজ নেব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিদর্শন টিম আমাকে রিপোর্ট দিয়েছে। ওরা তো আর সব সময় বসে থাকে না।’

২৬ নম্বর রুটের বাস বাণিজ্য মেলার যাত্রী টানছে তা-ও জানেন না এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘আগামী ৭ তারিখ মিটিং আছে। তখন এটা আলোচনা করব। আর আমি এখনই বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে ফোন করব।’

বিআরটিসির বক্তব্য

নিউজবাংলার পক্ষ থেকে এর আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বিআরটিসির বাস কম চলা ও চালকদের দুর্নীতির বিষয়ে জানানো হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজেই আজ থেকে নগর পরিবহনের তদারকি করব। আশা করছি আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাস চালকের সহকারীও দেয়া হবে।’

তার ওই আশ্বাসের পর কয়েক মাস কেটে গেছে। কিন্তু সমস্যা কমেনি, বরং বেড়েছে।

মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানানোর পর তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২১ নম্বর রুটে আমার ৩০টি গাড়ি চলে। আপনার কোনো কথা থাকলে আমার অফিসে এসে বলুন। আমার ২০০ রুটে বাস চলে; আমি কি সব রুটের খবর রাখি?’

বাণিজ্য মেলায় নগর পরিবহনের বাস চলছে জানালে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মেলায় চলবে কেন? বাণিজ্য মেলার যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেয়া সরকারের এজেন্ডা এবং আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সিনিয়র ডিরেক্টর, জিএমরা রাস্তায় তদারকি করছেন। আর কী করতাম বলেন? আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

‘পুরোই লোকাল’ ঢাকা নগর পরিবহন
বিআরটিসির ড্রাইভার যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

বিআরটিসির চালকেরা মোড়ে মোড়ে বাস থামিয়ে টিকিট ছাড়া যাত্রী তুলছেন। এ তথ্য জানানোর পর বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি দেখার জন্য আমাদের সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তাদের কমিটি করে পাঠাচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট সামারাইজ করে আমরা বুঝতে পারব কোথায় কোথায় আমাদের গ্যাপ আছে। আপনার তথ্য পজিটিভলি আমলে নিচ্ছি।’

‘এখানে হরিলুট চলছে’

ঢাকা নগর পরিবহনের কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি নগর পরিবহন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, টিকিটের টাকাটাই শুধু কোম্পানি পায়। এর বাইরে টিকিটবিহীন যাত্রী তুলে অনেক বড় অংকের টাকা চালক এবং সহযোগী ভাগাভাগি করে নিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে আমি বিআরটিসির চেয়ারম্যানকেও এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি।

‘এমনকি আমি যে গাড়িগুলোতে ভ্রমণ করেছি, তার পাঁচটা ভিডিও চেয়ারম্যানকে আমার মোবাইল থেকে করে পাঠিয়েছি। তিনি আমাকে বলেন- ভিডিও দেখে কিছু বুঝতেছেন না। এখানে একটা হরিলুট চলছে। প্রকল্পটি ধ্বংস করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে।’

মোজাম্মেল বলেন, ‘নগর পরিবহনের পরিণতি হবে- তারা বলবে যে আমরা চেষ্টা করেছি। এই নগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে না। আর এমনটা বলে কোনো একদিন তারা এই প্রকল্প বন্ধ করে দেবে।

‘যাত্রীদের কাছ থেকে এখনও যে পরিমাণ টাকা কালেকশন হয় তাতে লোকসান হওয়ার কথা না। যেখানে মালিক সমিতির একটা ভয়ঙ্কর ঐক্য গড়ে উঠেছে সেখানে নগর পরিবহন টেকা দায়।’

আরও পড়ুন:
নাইকো মামলা: খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ১৭ জানুয়ারি
৬ মাস ধরে পার্কে ঝড়ে ভাঙা গাছ
ঋণ নিতে ‘বাড়তি খরচ দিতে হয় তাকে’
সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ: ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে
গরিবের ভাতার ৫০০ টাকা ‘চেয়ারম্যানের পকেটে’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Actresss cigarette fire explosion in the shooting house?

অভিনেত্রীর সিগারেটের আগুনে শুটিং হাউজে বিস্ফোরণ?

অভিনেত্রীর সিগারেটের আগুনে শুটিং হাউজে বিস্ফোরণ? অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। ফাইল ছবি
অভিনেত্রী আঁখির স্বামী রাহাত কবির টেলিফোনে নিউজবাংলাকে জানান, আঁখি তাকে জানিয়েছেন যে চুল আয়রন করার জন্য সকেটে হেয়ার স্ট্রেইটনার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে বৈদ্যুত্যিক গোলযোগের আলামত মেলেনি। সেখানে হেয়ার স্ট্রেইটনারও পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর পল্লবীতে শনিবার দুপুরে একটি শুটিং হাউজে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি দগ্ধ হন। এতে অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর অভিনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শুটিং হাউজের ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুত্যিক সংযোগের শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে, বাথরুমে জমে থাকা কোনো ধরনের গ্যাসের সংস্পর্শে সিগারেটের আগুন থেকে এই বিষ্ফোরণ। ঘটনাস্থলে কোনো বৈদ্যুত্যিক শর্ট সার্কিটের আলামত পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন, একাধিক ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং নানা আলামত বিশ্লেষণ করে নিউজবাংলাও। তাতে পুলিশের ধারণার যথার্থতার প্রমাণ মিলেছে।

মিরপুরের পল্লবী এলাকার শুটিং হাউজটির তৃতীয় তলার ভাড়া করা ফ্লোরে চলছিল একটি টেলিফিল্মের শুটিং। প্রথম দিনের শুটিংয়ের এক ফাঁকে বেলা পৌনে ২টার দিকে অভিনেত্রী শারমিন আখিঁ মেকআপ রুমে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দে বিষ্ফোরণ হয়। দগ্ধ অবস্থায় মেকআপ রুম থেকে আর্তনাদ করতে করতে বেরিয়ে আসেন অভিনেত্রী। ঘটনার আকষ্মিকতায় উপস্থিত হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। দ্রুতই অভিনেত্রীকে হাসপাতালে পাঠান তার হাউজ মালিক ও সহকর্মীরা।

কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাউজ ও শুটিং-সংশ্লিষ্ট কেউই।

অভিনেত্রীর সিগারেটের আগুনে শুটিং হাউজে বিস্ফোরণ?
বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাথরুমের দরোজা ভেঙে বাইরের দিকে এসে পড়ে। ছবি: নিউজবাংলা

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে অভিনেত্রী শারমিন আঁখি মেকআপ রুমে মেকআপ নেয়া শেষ করেন। তখন তার পোশাক পাল্টানোর কথা ছিল বলে সঙ্গে থাকা মেকআপ আর্টিস্ট রুম থেকে বেরিয়ে যান। ফলে ওই সময় অভিনেত্রী ছাড়া মেকআপ রুমে আর কেউ ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের শব্দ হয় এবং দগ্ধ অবস্থায় মেকআপ রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন আঁখি।

রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, তৃতীয় তলার মেকআপ রুমের সঙ্গে একটি বাথরুম ও পোশাক পাল্টানোর জন্য পৃথক আরেকটি কক্ষ রয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাথরুমের দরজা ভেঙে মেকআপ রুমের ভেতরে এসে পড়ে। আর বাথরুমের এক্সজস্ট ফ্যান ভেঙে ভবনের বাইরে গিয়ে পড়ে।

এতে স্পষ্ট যে বিস্ফোরণের কেন্দ্র ছিল বাথরুম। তবে অক্ষত ছিল বাথরুমের আয়না, বেসিন। ওই বাথরুমে কোনো বৈদুত্যিক সকেট লাগানো নেই, যার সাহায্যে কোনো বৈদ্যুত্যিক সরঞ্জাম চালানো সম্ভব। অন্যদিকে অক্ষত আছে বাথরুমের একমাত্র বৈদ্যুত্যিক বাতিটিও। পুরনো ভবন হওয়ায় বাথরুমের দেয়ালের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে মোজাইক। তাছাড়া ওই বাথরুম বা মেকআপ রুমের আশপাশে কোনো রান্নাঘর বা গ্যাসের সংযোগও নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুটিং-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে জানান, বিস্ফোরণের সময় ভবনে কোনো বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়নি। বরং ঘটনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ছুটে গিয়ে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে টেলিফোনে কথা হয় হাউজ মালিক ইরফান হাইউমের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, তিন মাস আগে ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়ে শুটিং হাউজ নির্মাণ করেন। এই টেলিফিল্ম শুটিয়ের প্রথম দিনেই এমন ঘটনা ঘটলেও আরও আগে থেকেই নিয়মিত শুটিংয়ের কাজ চলছে তার হাউজে। কখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি।

কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ধারণাই নেই। আমি এখনও শকের মধ্যেই আছি। ঘটনার সময় আমি পাশের রুমেই ছিলাম। হঠাৎ মেকআপ রুমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। ছুটে গিয়ে দেখি অভিনেত্রী চিৎকার করে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে আসছেন। আমরা তাকে বাথরুমে নিয়ে গায়ে পানি ঢেলে গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠাই।

‘ভবনে যেন আগুন না লাগে সেজন্য মেইন সুইচ বন্ধ করে দিই। ফোন করে পুলিশকে জানাই। এখন কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তা আমার জানা নেই। পুলিশ তদন্ত করছে, তারাই বের করবে কী ঘটেছিল।’

অভিনেত্রীর সিগারেটের আগুনে শুটিং হাউজে বিস্ফোরণ?

বাঁ থেকে- শুটিং হাউজে বিস্ফোরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাথরুম, মেঝেতে পড়ে থাকা গ্যাস লাইটার ও পোড়া সিগারেটের অংশবিশেষ। ছবি: নিউজবাংলা

বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লবী থানা পুলিশ। সে সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ এখন নিউজবাংলার হাতে। তাতে দেখা যায়, বাথরুমের মেঝেতে একটি অক্ষত লাইটার ও সিগারেটের টুকরো পড়ে আছে। বেসিনের ওপর রাখা আছে একটি সিগারেটের প্যাকেট। এতে বুঝা যায় ঘটনার আগে কেউ বাথরুমে সিগারেট জ্বালিয়েছিলেন। আর সে সময় মেকআপ রুম ভেতর থেকে বন্ধ করে অভিনেত্রী পোশাক পাল্টান। পুলিশের ধারণা অভিনেত্রী নিজেই সিগারেট জ্বালিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে অভিনেত্রীর স্বামী রাহাত কবির টেলিফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমিও ওই ফ্লোরে ছিলাম। ঘটনার সময় আমি পাশের রুমে ছিলাম। আমার স্ত্রী আমাকে জানায় সে পোশাক পরিবর্তনের আগে চুল আয়রন করার জন্য সকেটে হেয়ার স্ট্রেইটনার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে এই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে আমার স্ত্রী বাথরুমে নাকি মেকআপ রুমে স্ট্রেইটনার কানেক্ট করেছিলেন, তা তার ঠিক মনে নেই।

‘তবে সে এটুকু নিশ্চিত করে বলেছে যে, স্ট্রেইটনার কানেক্ট করার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাতি স্পার্ক করে। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। আমার ধারণা শুটিং হাউজটি যেহেতু নতুন রং করা, তাই রংয়ের গ্যাস জমা ছিল। সেখানে স্ট্রেইটনারের কানেকশন দেয়ার পরই স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ স্ত্রী ধূমপায়ী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার স্ত্রী ধূমপায়ী। কিন্তু তার বাথরুমে বসে ধূমপান করার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে বাথরুমে যে ব্র্যান্ডের সিগারেট মিলেছে সে ওই ব্র্যান্ডের সিগারেট খায় না।’

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে কোনো বৈদ্যুত্যিক গোলযোগের আলামত পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অভিনেত্রী যে হেয়ার স্ট্রেইটনারের কথা বলছেন সেটিও ঘটনাস্থলে মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে হাউজ মালিক ফোন করে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। এ বিষয়ে অভিনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করা হলেও আমরা অভিনেত্রী ও তার স্বামীর বক্তব্য নিয়েছি। তাদের বিবরণ অনুযায়ী বিস্ফোরণের স্থানটিতে শর্ট সার্কিটের আলামত মেলেনি।

‘আমরা যা পেয়েছি তা হল, বাথরুমে কোনো গ্যাস জমে ছিল। পরে সেখানে কেউ সিগারেট ধরাতে লাইটার জ্বালালে এই বিস্ফোরণ ঘটে।’

বাথরুমে গ্যাস কোথা থেকে জমা হল এবং কে সিগারেট ধরিয়েছিল তা জানতে চাইলে পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘এটি তদন্ত শেষ না হলে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’

থানা-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, অভিনেত্রী আঁখি সম্ভবত বাথরুম ব্যবহারের আগে সেখানে কোনো সুগন্ধি স্প্রে করেছিলেন। পরে হাই কমোডে বসেই সিগারেট ধরাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আর সে কারণে অভিনেত্রীর দুই উরু, দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ও মুখমণ্ডলের কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে।

তাছাড়া বাথরুমে অন্য কোনো গ্যাস জমা থাকার বিষয়টি পুলিশের ধারণায় থাকলেও এর সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলে মনে করছে ওই সূত্র। তাদের যুক্তি, এদিন সকাল থেকে অনেকেই সেই বাথরুম ব্যবহার করেছেন এবং এগজস্ট ফ্যান থাকায় লম্বা সময় ওই বাথরুমে গ্যাস জমা থাকা সম্ভবও নয়।

আরও পড়ুন:
শুটিং স্পটে দগ্ধ অভিনেত্রী আঁখি

মন্তব্য

p
উপরে