করোনা মহামারির কারণে দুই বছর স্থগিত থাকার পর রাজধানীতে ফের শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আগামী ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
এবারই প্রথম ঢাকা লিট ফেস্টে যোগ দিতে দর্শকদের কাটতে হবে টিকিট। আর এটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক আয়োজনে দর্শকের জন্য টিকিটের সমালোচনা করছেন অনেকে।
তবে উৎসবের আয়োজকরা বলছেন, বিপুল ব্যয়ের উৎসবটির জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি করপোরেট স্পনসরশিপনির্ভরতা কমিয়ে একটি টেকসই আয়োজনের লক্ষ্যে দর্শকদের জন্য এবার টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ঢাকার সহায়তায় ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথম এই সাহিত্য উৎসব আয়োজিত হয়। তখন এর নাম ছিল হে লিটেরারি ফেস্টিভ্যাল, তবে ২০১৫ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ রাখা হয়। এই উৎসবের তিন পরিচালক হলেন কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আয়োজনটি স্থগিত ছিল। এবার দশমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে উৎসব।
প্রতিবার এই উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এ বছর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ছাড়া সবার জন্য তিন ক্যাটাগরিতে টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছেন আয়োজকরা।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন ২০০ টাকা, নিয়মিত দর্শকদের ৫০০ টাকা এবং ভিআইপি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার টাকার টিকিট রাখা হয়েছে। তবে চার দিনের প্যাকেজে টিকিট কাটলে খরচ কিছুটা কমবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চার দিনে দিতে হবে ৫০০ টাকা, নিয়মিত দর্শকদের ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ভিআইপি ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার টাকার টিকিট কাটতে হবে।
বাংলা একাডেমির মতো ভেন্যুতে টিকিটের বিনিময়ে সাহিত্য উৎসব আয়োজনের সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনেকে। টিকিটের বিভিন্ন ক্যাটাগরি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে আয়োজকরা বলছেন, ভেন্যু হিসেবে বাংলা একাডেমি ব্যবহারের জন্য তাদের বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হচ্ছে। প্রতিবার সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলেও এবার তা মেলেনি।
আয়োজকদের দাবি, লিট ফেস্টের ভেন্যু, দেশ-বিদেশের অতিথিদের যাওয়া-আসা, পারিশ্রমিক, আনুষঙ্গিক খরচসহ কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ জন্য দর্শকদের টিকিটের ব্যবস্থা রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
উৎসব আয়োজনের ভেন্যু ব্যবহার করতে দেয়ার বিনিময়ে ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান নিউজবাংলাকে জানান, এই উৎসব শুরু থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ভেন্যু ভাড়া দেয়া ছাড়া উৎসবের সঙ্গে একাডেমির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ এইচ এম লোকমান বলেন, ‘তাদের এই আয়োজনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা শুধু ভেন্যুটা ভাড়া দিয়েছি, এবারও তাই হয়েছে। তারা (ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজকেরা) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে ভেন্যুটি ফ্রি পাওয়া যায় বা কনসিডার করা হয়। একই সঙ্গে অনুদানের বিষয়ও ছিল। তবে মন্ত্রণালয় তাদের জানিয়েছে বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। ভাড়া নেয়া বা না নেয়ার বিষয়টিও একাডেমির নির্বাহী পরিষদেরই সিদ্ধান্ত।
‘তবে বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ ভেন্যু ভাড়া না নেয়া বা কমানোর সিদ্ধান্ত দেয়নি।’
বিগত বছরগুলোর ভেন্যু ভাড়া কত ছিল, সেটি জানাতে না পারলেও এ এইচ এম লোকমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ২১ লাখ টাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ তাদের দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের অগ্রিম ১০ লাখ টাকার চেকও দিয়েছেন।’
বাংলা একাডেমির সচিব বলেন, ‘অনুদানের বিষয়ে আমরা জেনেছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, সেটা ওই অবস্থাতেই আছে।’
উৎসব আয়োজনে এবার সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে দাবি করছেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালকের একজন কাজী আনিস আহমেদ।
তিনি মঙ্গলবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সঠিক পরিমাণ বলাটা কঠিন, শুধু এটুকু বলি কয়েক কোটি টাকার আয়োজন।’
খরচের খাতগুলো ব্যাখ্যা করে আনিস আহমেদ বলেন, ‘শুধু ভেন্যু ভাড়া বাবদই আমাদের ২১ লাখ টাকা লাগছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বিদেশ থেকে লেখকদের আনতে। যারা আসেন তাদের জন্য আমাদের কোটি খানিক টাকা খরচ হয়ে যায়। এর বাইরেও অনেক রকম আয়োজন আছে, সব মিলিয়ে কিন্তু কয়েক কোটি টাকার উৎসব।’
কোনোবারই এই উৎসব থেকে আয়োজকরা খরচের পুরো টাকা তুলতে পারেনি জানিয়ে কাজী আনিস বলেন, ‘আমরা তিন পরিচালক কিন্তু বছরের পর বছর ব্যক্তিগতভাবে এখানে ডোনেট করেছি। গত তিন-চারবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে একটা অনুদান পেতাম, এবার সেটা পাইনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকচুয়ালি একটা (টিকিট) প্রয়োজন ছিল।
‘তবে টিকিট ধার্য করার কারণ শুধু এই আর্থিক প্রয়োজনটা নয়, এটাই আসলে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালের রীতি। বড় বড় সব ফেস্টিভ্যালে গেলে এটা দেখবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা মনে করি যে আমাদের এত পাঠক আছেন, এত দর্শক আছেন, যারা এত বছর ধরে ঢাকা লিট ফেস্টে এসেছেন; তারা অনুষ্ঠান পছন্দ করেন, সাহিত্য ভালোবাসেন। তারা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের জন্য আমাদের এত চেষ্টা, এত তোড়জোড়।’
বিগত সময়ের আয়োজনে করপোরেট স্পনসরশিপ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেকে বলেছেন এখানে করপোরেট স্পনসরশিপ এত কেন? করপোরেট স্পনসরশিপের নির্ভরতা কমাতে চাইলে এবং অনুষ্ঠানটাকে টেকসই করতে চাইলে, যে দর্শক-শ্রোতা-পাঠকের জন্য এই অনুষ্ঠান তাদেরই এক ধরনের স্টেকহোল্ডিং ক্রিয়েট করতে গেলে এটাই (টিকিট রাখা) হচ্ছে সবচেয়ে চমৎকার উপায়।
‘এটার মধ্যে দিয়ে তারা কিন্তু আসলে সাহিত্যকে এবং সাহিত্যিক-লেখক-চিন্তকদের একটা সম্মান দেখাবেন। তাদের কিন্তু আমাদের অনেক পারিশ্রমিক দিতে হয়। সেখানে দর্শক এখন সরাসরি পার্টিসিপেট করতে পারছেন। এ রকম একটা সার্বিক বিবেচনা থেকে আমাদের এই ব্যবস্থা।’
ঢাকা লিট ফেস্ট (ডিএলএফ) একটি অলাভজনক ট্রাস্ট বলেও জানান কাজী আনিস আহমেদ।
এবার সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার একটি ব্যয় সংকোচনের মধ্যে আছে। এ কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। তারপরও বিবেচনায় আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তো সেই সাপোর্টটা আমাদের কাছে নেই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সদয়, কিন্তু টাকা তো ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে আসতে হবে।’
ডিএলএফের ওয়েবসাইটে ঢাকা লিট ফেস্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঢাকা ও বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার নিয়ে ২০১১ সালে এই উৎসবের সূচনা হয়।
‘উৎসবটি মূলত সাহিত্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলেও ইতিহাস, রাজনীতি ও সমাজকেন্দ্রিক ফিকশন এবং সাহিত্যিক নন-ফিকশন; কবিতা ও অনুবাদ; বিজ্ঞান ও গণিত; দর্শন এবং ধর্ম-সংক্রান্ত সংস্কৃতি এবং ধারণাগুলোকে বিস্তৃত পরিসরে অঙ্গীভূত করে ও বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার জন্ম দেয়।
‘ডিএলএফ শুধু আমাদের শ্রোতাদের বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায় না বরং জোরাল বিতর্ক ও নতুন অভিব্যক্তির মাধ্যমে সেই বিশ্বকেও সমৃদ্ধ করতে চায়।’
কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত মানবদেহ। এসব কোষের কিছু কিছু অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে দেহের অন্য স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে যে রোগ হয়, সেটিই ক্যানসার হিসেবে পরিচিত। এ রোগের শুরু হতে পারে দেহের প্রায় সব প্রান্তে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় বড় কারণ ক্যানসার, যে রোগে ২০১৮ সালে ৯৬ লাখের মতো প্রাণহানি হয়। অর্থাৎ সে বছর প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু হয় ক্যানসারে।
এ ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দেশে পালন হয় ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস’। গত বছরের মতো এবারও দিবসটির প্রতিপাদ্য ধরা হয় ‘ক্লোজ দ্য গ্যাপ’, যার সম্প্রসারিত অর্থ হলো ক্যানসার চিকিৎসায় ত্রুটি রাখা যাবে না।
এ দিবস শুরুর আলোচনা হয় ফ্রান্সের প্যারিসে ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত বিশ্ব ক্যানসার সম্মেলনে। সেদিনই প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদ নিউজবাংলাকে বলেন, “এবারের প্রতিপাদ্য যে বিষয়গুলোকে নিয়ে করা হয়েছে সেগুলো হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা, চিকিৎসা শুরুর পর কোনো ত্রুটি না রাখা এবং ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবার জন্য একই ধরনের ব্যবস্থাপনা রাখা। সমষ্টিগতভাবে এগুলোর মূল ভাব হলো ‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’।”
ক্যানসারকে মরণব্যাধি বলা হয়। সেটি কতটুকু সত্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে সব রোগই মরণব্যাধি যদি না সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ক্যানসারের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব।
‘শুধু ব্রেইন ক্যানসারের একটি বৈশিষ্ট্য আছে যেটি হলে রোগী দুই বছরের বেশি বাঁচে না। সেটার নাম গ্লিওব্লাস্টোমা। তা ছাড়া অন্য সব সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাইফস্টাইলের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক খুব। যেমন: ধূমপানে ফুসফুস ক্যানসার, কিডনি, শ্বাসনালির ক্যানসার হতে পারে। আবার স্থুলতার জন্য ব্রেস্ট ক্যানসার হয়ে থাকে।
‘বাংলাদেশে সে রকম সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও গ্লোবোক্যান বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেই অনুযায়ী ২০২০ সালে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ১ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ জন মারা যান।
‘২০২২ সালের আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ১০ শতাংশের জন্য দায়ী ক্যানসার। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি ১৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।’
ক্যানসারের কারণ
বিভিন্ন কারণে ক্যানসার হতে পারে।
১. জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
২. ধূমপানের কারণে বিভিন্ন ধরনের ধরনের ক্যানসার হতে পারে। এর মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার অন্যতম।
৩. তেজস্ক্রিয়তা ত্বকের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: চেরনোবিল ও জাপানের নাগাসাকির পারমাণবিক বিস্ফোরণের অনেক বছর পরও সেখানে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
৪. কিডনি, পিত্তথলির পাথর ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে।
৫. জরায়ুর সার্ভিক্স বা বোনের দীর্ঘ সংক্রমণ থেকে জরায়ু ও বোনের ক্যানসার হতে পারে।
৬. রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট। যেমন: এনিলিন ডাই মূত্রথলির ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
৭. খাদ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন পাকস্থলির ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে চুলের কলব ত্বকের ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে।
উপসর্গ
একেক ধরনের ক্যানসারের একেক উপসর্গ থাকে, তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে।
১. দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো অংশের ছোট একটি টিউমারের হঠাৎ পরিবর্তন।
২. শরীরে কোনো চাকা হঠাৎ বড় হচ্ছে দেখলে সতর্ক হতে হবে। সেটি ক্যানসার কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।
৩. কাশি ভালো হতে না চাইলে এবং ৪ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. হঠাৎ করে খাবারে অরুচি।
৫. মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ।
৬. শরীরে ব্যথা ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।
৭. মলত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন।
৮. নারীদের মেনোপোজের পর নতুন করে রক্তক্ষরণ।
প্রতিরোধ
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদ বলেন, ‘অনেক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য নয়, তবুও নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যেমন: তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে সতর্কতা গ্রহণ (যার মধ্যে রয়েছে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরা)। নিয়মিতভাবে সুপারিশকৃত ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং এইচপিভির টিকা গ্রহণ।’
চিকিৎসা
মাহফুজুল আহমেদ রিয়াদের ভাষ্য, যেকোনো ধরনের টিউমার হলেই সেটি অপসারণ করতে হবে। টিউমারটি মৃদু এবং সম্পূর্ণভাবে ফেলে দেয়া হলে ভয় নেই। এ ক্ষেত্রে সেটি আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বায়োপসিতে ক্যানসার ধরা পড়লে সার্জারি সর্বোত্তম চিকিৎসা। সেই সঙ্গে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপির মতো অন্যান্য সহায়ক চিকিৎসারও দরকার পড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর বালুচরে যেদিকে চোখ যায় শুধুই পেঁয়াজের আবাদ। দাম বেশি পাওয়ার আশায় এবার কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগবালাই কম থাকায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চরাঞ্চলবাসী।
কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের সঙ্কট এবং দাম বেশি হওয়ায় এসব চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অন্যান্য বছরের মতো গম ও তামাক চাষ না করে এবার অধিকাংশ কৃষক পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপা খড়িবাড়ী, খগা খড়িবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চর ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন। এসব চর এলাকার কৃষকরা বন্যায় রোপা আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পেঁয়াজ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।
কৃষক নুর ইসলাম, হুকুম আলী, জুলহাস, আজাহার ও আবুল হোসেন জানান, তারা প্রত্যেকেই ৩/৪ বিঘা করে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ১৫শ’ টাকার বীজ কিনে রোপণ করে শতক প্রতি এক থেকে দেড় মণ করে পেঁয়াজ ফলনের স্বপ্ন তাদের।
হুকুম আলী বলেন, সব মিলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই ক্ষেতে। ৭০ শতক জমিতে ৭০ থেকে ৯০ মণ পেঁয়াজ পেলে বাজার অনুযায়ী মণ প্রতি ৫ থেকে ৬ শ’ টাকা দরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।
জুলহাস বলেন, ‘খরচ ও পরিশ্রম কম হয়ে ভালো ফলন হওয়ায় চরের অধিকাংশ কৃষকই এখন পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকছে। সহজ সেচ ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে চরে পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। তাতে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতিও পূরণ হবে।’
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘তিস্তায় জেগে ওঠা চরে এখন বিভিন্ন ধরনের ফসল হচ্ছে। তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা-পরবর্তী ফসল হিসেবে এবার ৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘মসলা জাতীয় এই ফসলে কৃষকরা সময় সময় লাভবান হন। চরের কৃষকদের ভালো ফলনের জন্য আমরা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক পরামর্শসহ বীজ থেকে শুরু করে অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:সিলেট সিটি করপোরেশনের এ পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৫ জুন মৃত্যু হয় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এ সভাপতির। এমন বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনে তার বিকল্প কে হচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা দলটির ভেতরে।
চলতি বছরের মাঝমাঝিতে সিলেট সিটি নির্বাচন হওয়ার কথা। আওয়ামী লীগের অন্তত অর্ধডজন নেতা এ নির্বাচনের মেয়র পদে দলীয় মনোয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন, তবে হঠাৎ করেই আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন প্রবাসী এক নেতা।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে যুক্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই সিলেটে কামরানের বিকল্প হচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে। দলের হাইকমান্ড থেকে তাকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়া হয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান অনুসারীরা। এমন ‘সংকেত’ পেয়ে সম্প্রতি দেশেও এসেছেন আনোয়ারুজ্জামান। যদিও এই প্রচারের সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন অন্য মনোয়নপ্রত্যাশীরা।
কে এই আনোয়ারুজ্জামান
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। দেশে থাকার সময় থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। সেই ঘনিষ্টতার সূত্রে প্রবাসে অবস্থান করেও সিলেটের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আড়ালে থেকেও অন্যতম কুশীলব হয়ে ওঠেন তিনি।
গত দুটি সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেন প্রবাসী এই নেতা। যদিও দল মনোনয়ন দেয়নি তাকে।
গুঞ্জন রয়েছে, তার আপত্তির কারণেই এই আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত থাকতে হয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। দলের দুই প্রভাবশালী নেতার বিভক্তির কারণে দুইবারই এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
মেয়র পদে যেভাবে আলোচনায় আনোয়ারুজ্জামান
এতদিন সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালালেও চলতি মাসে হঠাৎ করেই সিলেট সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে উঠে আসে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেটের প্রবীণ নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা হককে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই সাক্ষাতেই সিলেট সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে আসে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারুজ্জামানের নাম বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে জানান জেবুন্নেসা হক। এরপর থেকেই মেয়র পদে আলোচনায় ওঠে আসে আনোয়ারুজ্জামানের নাম। এখন নগর ছেঁয়ে গেছে তার ছবি সংবলিত পোস্টার-ফেস্টুনে।
এ বিষয়ে সৈয়দা জেবুন্নেছা হকের সঙ্গে সম্প্রতি মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেবুন্নেছা হকের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে আনোরুজ্জামানের কথা বিবেচনা করার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমনটি জেবুন্নেছা হক আমাকেও বলেছেন। আরও অনেককেই এ কথা বলেছেন তিনি।’
নাদেল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও কিছু শীর্ষ নেতার কাছ থেকেও এ ব্যাপারে আমি ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি।’
এদিকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনা শুরুর পর ২২ জানুয়ারি দেশে আসেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। তাকে সংবর্ধনা জানাতে ওই দিন বিমানবন্দরে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে তাকে নগরে নিয়ে আসেন নেতা-কর্মীরা।
এরপর ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আনোয়ারুজ্জামান। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
মহানগর আওয়ামী লীগে ক্ষোভ
মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারুজ্জামানকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়া হয়েছে, এমন খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ বিরাজ করছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। বিশেষত মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। যদিও দলীয় প্রধানের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি, তবে এই আলোচনা শুরুর পর থেকেই উল্লসিত আনোয়ারুজ্জামান অনুসারীরা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট সিটিতে আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে অর্ধডজন নেতা তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু।
কামরানের মৃত্যুর পর থেকেই মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। শেষ সময় এসে প্রবাসী এক নেতার নাম আলোচনার শীর্ষে উঠে আসায় হতাশ তাদের সবাই।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেন, ‘যারা দেশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতি করছেন, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে রয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে প্রবাসে বিলাসী জীবন কাটানো কাউকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়াটা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’
ওই নেতা আরও বলেন, ‘সিলেট নগরবাসীর জন্য আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কোনো অবদান নাই। গত ভয়াবহ বন্যায়ও তাকে পাশে পায়নি নগরবাসী। তিনি নগরের বাসিন্দাও নন।’
মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামানকে দলীয় প্রধানের বিবেচনায় রাখার প্রচার সত্য নাও হতে পারে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এত সহজ না। এমন প্রচারণা মিথ্যে হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভার আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।’
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মী। গত সংসদ ও সিটি নির্বাচন সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে আমি নিরলসভাবে কাজ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই শহরেই বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। তাই সিলেট নগরের মানুষ আমার আপনজন।’
প্রধানমন্ত্রী সবুজ সংকেত দিয়েছেন জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘গত বহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সিটি নির্বাচনের জন্য তিনি আমাকে কাজ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। দলের অনেক নেতাই মনোনয়ন চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে দলীয় প্রধান ও মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে কে প্রার্থী হবেন, এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মুগুজি গ্রামে ৬ কোটি টাকার বিষমুক্ত শসা বিক্রির আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। গত বছর এই গ্রামে সাড়ে চার কোটি টাকার শসা বিক্রি হয়। এবার কীটনাশকমুক্ত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চাষ করায় বেড়েছে শসার চাহিদা। কৃষকদের আশা তারা বেশি দাম পাবেন। আগামী দিন পনেরর মধ্যে এই গ্রামের শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্য প্রাচ্যের দেশ দুবাইতে যাবে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
মুগুজি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের ৩৫ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেখানে সবুজ আর সবুজ। কোথাও শসার হলুদ ফুল মাথা উঁকি দিয়ে আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। কোথাও বাতাসে দুলছে কচি শসা। পোকা দমনে ব্যবহার করা হয় পাতা-লতার রস।
মুগুজি গ্রামে বিষমুক্ত শসা ও সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক সমাবেশ ও মাঠ পরিদর্শন করেন কৃষি কর্মকর্তারা।
স্থানীয় কৃষক আমীর হোসেন বলেন, শসা চাষে ১০ গন্ডায় (২০ শতাংশ) এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হবে। বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করায় ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
মনির হোসেন, সাহাব উদ্দিন ও সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৬ গন্ডায় (১২ শতাংশ) খরচ হয়েছে ৭০ হাজার বিক্রি হবে দেড় লাখ টাকা। সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আয়ও বাড়বে। বিষমুক্ত শসার উৎপাদনে কৃষি অফিস উদ্বুদ্ধ করেছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’
মুগুজি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই এলাকার ৩৫ হেক্টর জমিতে শসা উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে ৯০০ মণ শসা হবে ৷ অন্তত ৩১ হাজার ৫০০ মণ শসা উৎপাদন হবে। গড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হলে ৬ কোটি টাকার বেশি শসা বিক্রি হবে।’
কুমিল্লা জেলার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এইখানে নিরাপদ শসা উৎপাদনে উদ্যোগ নিয়েছি। এখানের শসা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর সঙ্গে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।’
কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, ‘নিরাপদ সবজি চাষ বিষয়টি এখানে কৃষকরা প্রশংসনীয়ভাবে আত্মস্ত করেছেন। আমরা এই অগ্রগতি ধরে রাখবো। এটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।’
পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম দেশের ২০টি ইউনিয়নে এই বিষমুক্ত শসা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তার একটি বরুড়ার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন। কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য তাদের কিছু শর্ত থাকে। আমরা তা পূরণের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা আসা শুরু করেছেন।’
আরও পড়ুন:‘বাসের বাঙ্কার থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশের ফুটপাতে রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই লোক কোথা থেকে এসে একটা রসিদ ধরিয়ে বলে ৪০ টাকা দেন। কাগজটা পড়ে দেখি এটা কুলি মজুরির রসিদ। অথচ আমি কোনো কুলি ডাকিনি এবং আমার ব্যাগ অন্য কেউ বহনও করেনি।’
রাজধানীর মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুর থেকে আসা বাসযাত্রী সনু বিশ্বাস।
এই প্রতিবেদক তার আগে দেখতে পান যে রাফি ট্রেডার্স লেখা অ্যাপ্রন পরিহিত এক যুবক বাস যাত্রী সনু বিশ্বাসের সঙ্গে কী একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন।
এগিয়ে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, ‘আমি এসেছি মেহেরপুর থেকে। আমার ব্যাগ ছিল বাসের বাঙ্কারে। তেমন ভারি ব্যাগ নয় যে কুলি ডাকতে হবে। আমি নিজে বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামিয়েছি। এখন একটা সিএনটি অটোরিকশা ডেকে বাসায় চলে যাব। এর মাঝে তারা কোনো কারণ ছাড়াই এসে টাকা দাবি করছে।
‘আমি টাকা দেব না বললে সে আমার ব্যাগ আমাকেই নিতে দিচ্ছে না। এমনকি আমি যাওয়ার জন্য যেসব সিএনজি অটোরিকশ ডাকছি সে প্রতিটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এটা তো ওপেন চাঁদাবাজি ভাই। যে আমার ব্যাগ ধরেইনি, আমি কেন তাকে কুলি মজুরি দেব?’
এ বিষয়ে সোহেল নামে রাফি ট্রেডার্সের ওই কর্মীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এই এলাকা ইজারা নিয়েছি। এই এলাকার ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যাগ রাখলে আমাদের টাকা দিতে হবে।’
এই ঘটনা রোববার দুপুরের। এর ঘণ্টাখানেক আগে একই স্থানে এমন চাঁদাবাজির শিকার হন খন্দকার বশির উদ্দিন মিলন নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। সেখান থেকে পূর্বাশা পরিবহনের বাসে আমার পরিবার দুটি ব্যাগ পাঠিয়েছে। আমি সেই ব্যাগ নিতে এসেছি। বাস থেকে ব্যাগ নামিয়ে আমি সিএনজিতে উঠাতে গেলে এক লোক এসে হাতে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে দুই ব্যাগ বাবদ ৮০ টাকা দাবি করে বসে।
‘আমি কোনো কুলিকে ডাকিনি। এমনকি আমার ব্যাগ তুলতে কেউ সাহায্যও করেনি। অথচ এই রাফি ট্রের্ডাসের লোক আমার কাছ থেকে জোর করে ৮০ টাকা নিয়ে গেল। প্রথমে আমি টাকা দেব না বললে সে আশপাশ থেকে আরও ৩-৪ জনকে ডেকে আমাকে মারতে আসে। পরে নিরুপায় হয়ে তাদের টাকা দিয়ে দিলাম।’
আরেক ভুক্তভোগী ইসহাক আলী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘মেয়রের নামে চাঁদাবাজি! ঢাকা শহরে ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে মেয়রকে চাঁদা না দিয়ে শহরে ঢোকা যাবে না। আমি তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে গাড়ি ভাড়া করার যতবার চেষ্টা করেছি ততবার সেই গাড়ি তারা ভাঙতে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাগ প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে দুইটা ব্যাগে ৮০ টাকা দিয়ে মাজার রোড থেকে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’
রোববার ও আগের কয়েকদিন সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন আরও অনেক যাত্রীর কাছ অভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা এসব বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।
আবার কুলি মজুরির নামে এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানালেন টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মীরা। তারা বলেন, ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান রাফি ট্রেডার্সের কাছ আমরাও জিম্মি। আমাদেরও সব পরিষেবা বিল তাদের কাছেই জমা দিতে হয়।
ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কর্তৃপক্ষও কুলি মজুরির নামে রাফি ট্রেডার্সের এই চাঁদাবাজি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। জানে পুলিশ প্রশাসনও। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ট্রেন ও বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রীর ব্যাগ-বোচকা নিয়ে কুলি-মজুরদের টানাটানি নতুন কিছু নয়। গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে দেয়ার বিনিময়ে জবরদস্তি অতিরিক্ত টাকা আদায়ও গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাই বলে বাস থেকে নিজের ব্যাগটা নামিয়ে রাস্তায় রাখলেই চাঁদা দিতে হবে!
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রকাশ্যে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে এমন চাঁদাবাজি চলছে। গাবতলী টার্মিনাল হয়ে বাসে কোনো গন্তব্যে যেতে বা আসতে হাতে ব্যাগ থাকলেই চাঁদা না দিয়ে নিস্তার নেই।
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলী হয়ে দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের কাছ থেকে কুলি মজুরির নামে এই চাঁদাবাজি করে এই বাস টার্মিনালের ইজারাদার রাফি ট্রেডার্স।
বাড়তি ভাড়া আদায়, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, সময়ক্ষেপণ, পরিবহনকর্মীদের আপত্তিকর আচরণে এমনিতেই দিশেহারা বাসযাত্রীরা। এবার তাতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে এই চাঁদাবাজি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গাবতলী এলাকায় বাসে উঠা-নামার পর যাত্রীদের ব্যাগ না ধরেই তাদের কাছ থেকে জোরজবস্তি ব্যাগ প্রতি ৪০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে রাফি ট্রেডার্সের কর্মীরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে রাফি ট্রেডার্সের কর্মীদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তা হাতাহাতিতেও গড়াচ্ছে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় নিউজবাংলার সরেজমিন অনুসন্ধানে এই চাঁদাবাজির সত্যতা মিলেছে। ইজারাদার রাফি ট্রেডার্সের এক কর্মকর্তা প্রথমে এমন চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে এর সত্যতা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
তবে বাস্তবতা হলো, এই চাঁদাবাজদের কাছে পুলিশও যেন অসহায়। ওদের সঙ্গে পেরে না উঠে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।
রোববার দুপুরে মিরপুর মাজার রোড এলাকায় পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে গিয়ে চোখে পড়ল এক যাত্রীর সঙ্গে ইজারাদার রাফি ট্রেডার্সের অ্যাপ্রন পরা এক কর্মী তর্ক করছেন।
জানা গেল, সনু বিশ্বাস নামে ওই যাত্রী মেহেরপুর থেকে এসেছেন। তার কাছ থেকে জোর করে কুলি মজুরি বাবদ ৪০ টাকা আদায় করাকে কেন্দ্র করে এই বিতণ্ডা।
সনু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বাসের বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামানোর সঙ্গে সঙ্গে এই লোক কোথা থেকে এসে একটা রসিদ ধরিয়ে বলে, ৪০ টাকা দেন। পরে কাগজটা পড়ে দেখি এটা কুলি মজুরির রসিদ। অথচ আমি কোনো কুলি ডাকিনি এবং আমার ব্যাগ অন্য কেউ বহনও করেনি।’
এ বিষয়ে সোহেল নামে রাফি ট্রেডার্সের ওই কর্মীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা এই এলাকা ইজারা নিয়েছি। এই এলাকার ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যাগ রাখলে আমাদের টাকা দিতে হবে। আর আপনি ঝামেলা করতাছেন ক্যান? আপনি এইখান থ্যইক্যা যান।’
আপনার বস কে- এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সুজন নামে একজনকে দেখিয়ে দেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলে ওঠেন, ‘এসব রিপোর্ট করে আপনি আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। ওই যে নাবিল বাস কাউন্টারের পাশে একটা চায়ের দোকান আছে। আপনার যা জানার সেটা আপনি ওই চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন।’
এরপর ওই চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের। তিনি নিজেকে শাহীন নামে পরিচয় দেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় আমাদের অফিস আছে। আপনি সেখানে গিয়ে কথা বলেন।’ গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় রাফি ট্রেডার্সের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সনু বিশ্বাসের মতো আরও বেশ কয়েকজন বাস যাত্রী কুলি মজুরির নামে এভাবে গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
তাদের একজন খন্দকার বশির উদ্দিন মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, পূর্বাশা পরিবহনের বাস থেকে ব্যাগ নামিয়ে সিএনজিতে উঠাতে গেলে এক লোক এসে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে দুই ব্যাগ বাবদ ৮০ টাকা দাবি করে। অথচ আমি কোনো কুলিকে ডাকিনি। আমার ব্যাগ তুলতে কেউ সাহায্যও করেনি। অথচ এই রাফি ট্রের্ডাসের লোক আমার কাছ থেকে জোর করে ৮০ টাকা নিয়ে গেল।
ইসহাক আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘মেয়রের নামে চাঁদাবাজি! শেষ পর্যন্ত ব্যাগ প্রতি ৪০ টাকা হিসাবে দুইটা ব্যাগে ৮০ টাকা দিয়ে মাজার রোড থেকে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’
প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি
গাবতলী বাস টার্মিনালে এক কাউন্টারের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা মাফিয়া কায়দায় এই বাস টার্মিনাল চালায়। কেউ এদের কিছু বলে না। বাস টার্মিনালসহ পর্বত সিনেমা হল থেকে মাজার রোড পর্যন্ত পুরা এলাকা এই রাফি ট্রেডার্সের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। এই এলাকায় কোনো যাত্রী ফুটপাত অথবা ফুটপাতের পাশে রাস্তায় কোনো ব্যাগ রাখলেই ওদেরকে টাকা দিতে হয়।
‘আমরা আমাদের কাউন্টারের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পরিচ্ছন্ন বিলসহ এ বাবদ সে বাবাদ সব টাকাই এদের হাতে দিই। অথচ এরা এই বাস টার্মিনাল পরিষ্কার কী করে সেটা আপনারাই দেখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই টার্মিনালসহ সামনের রাস্তায় এদের একশ’র বেশি কর্মী থাকে সব সময়। এর মধ্যে রাফি ট্রের্ডাসের নাম লেখা ড্রেস পরে থাকে ৩০-৪০ জন। বাকিরা সাধারণ মানুষের মতো থাকে। এই ড্রেস পরা কর্মীরা যাত্রীদের কুলি মজুরি রসিদ ধরিয়ে দিয়ে চাঁদাবাজি করে। এরা যাত্রীদের ছোট ব্যাগে ৪০ টাকা আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর ব্যাগ প্রতি নেয় ১২০ টাকা।
‘এরা লক্ষ্য রাখে যে যাত্রীদের ব্যাগে বিমানবন্দরের কোনো ট্যাগ লাগানো আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সেই যাত্রীর আর রক্ষা নেই। ব্যাগ প্রতি ১২০ টাকা আদায় করে ছাড়ে। কোনো যাত্রী টাকা দিতে না চাইলে সাধারণ মানুষের বেশে থাকা ওদের বাকি সদস্যরা গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা বাধিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলে বসে।
‘অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। কিছু বললে তো আমরাই এখানে থাকতে পারব না।
আরেক কাউন্টারের এক কর্মীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনিও পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘রাফি ট্রেডার্সের ড্রেস পরা কর্মীরা নামে কুলি হলেও এদের কাউকে দিয়ে আপনি কোনো মালামাল উঠাতে পারবেন না। এই ৩০-৪০ জনের একেক জন ১০ হাজার টাকার উপরে চাঁদাবাজির করে আয় করে।
‘সব মিলিয়ে দিনে তারা ৩-৪ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে। এদের কাউকেই রাফি ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে বেতন দেয়া হয় না। এরা চাঁদাবাজির কমিশন পায়। তাছাড়া এই টাকা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে উপর মহলেও যায় বলে শুনেছি। তাই তারাও সব কিছু দেখে না দেখার ভান করে।’
রাফি ট্রেডার্সের এই চাঁদাবাজি নিয়ে মাজার রোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট রাফিউল ইসলাম রাফির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘এই রাফি ট্রেডার্স ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসি) কাছ থেকে পুরো গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ইজারা নিয়েছে। আমরাও যাত্রীদের ব্যাগ বহন না করে জোর করে টাকা নেয়ার অভিযোগ পাই। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সব জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীরা এভাবে একের পর এক হয়রানির শিকার হলেও কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করে না। তাই আমরা কিছু করতে পারি না। এরা টাকা দাবি করলে সাধারণ মানুষ ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়ে চলে যায়। আমাদেরও কিছু জানায় না।’
সাধারণ মানুষ মামলা না করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে আপনারা কেন এই চাঁদাবাজি বন্ধ করছেন না?- এমন প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
গাবতলী বাস টার্মিনালের প্রধান কর্তৃপক্ষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক (গাবতলী বাস টার্মিনাল) মোহাম্মাদ জাহিদ হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যাত্রীদের কাছ থেকে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য চাঁদাবাজির অভিযোগ পাই। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন দেখি স্যারেরা কী সিদ্ধান্ত নেন।’
ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে রাফি ট্রেডার্সকে ইজারা দেয়ার সময় বেশকিছু শর্ত দেয়া হয়। তার মধ্যে ২২ নম্বর শর্ত- কোনো যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলির সাহায্য না চাইলে কোনো কুলি ওই মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। ওরা এই শর্ত ভঙ্গ করেছে।’
ডিএনসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাফি ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আমরাও এই অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও আমরা তাদের সতর্ক করেছি। এখন আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
‘এখনও যদি তারা এই কাজ করে তাহলে সিরিয়াসলি তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ধরনের কুলি মজুরির রসিদ দিয়ে চাঁদাবাজি করার কোনো সুযোগ নেই।’
ইজারাদার রাফি ট্রেডার্স যা বলছে
রাফি ট্রের্ডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লিয়াকত হোসেন সবুজ নামে এক ব্যক্তি। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে রাফি ট্রেডার্সের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম শ্রাবণ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন চাঁদাবাজি হাওয়ার তো কথা না। আমাদের এখানকার কর্মীরা কোনো যাত্রীর মালামাল বহন করা নিয়ে জোরজবরদস্তি করে না। এরকম করার নিয়মও এখানে নেই। যাদের কুলির প্রয়োজন হয় শুধু তাদের কাছ থেকেই আমাদের কর্মীরা টাকা নেয়।’
যাত্রীদের অভিযোগ, উত্তর সিটি করপোরেশনের চিঠিসহ নিউজবাংলার কাছে এই চাঁদাবাজি চলার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ আছে জানালে শ্রাবণ বলেন, ‘আসলে কি, এরকম দুই/একটা ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। ওরা লেবার মানুষ তো। অনেক কিছুই হয়তো ওরা করে ফেলে। এর আগেও আমরা ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সব সময়ই ওদের মনিটরিংয়ে রাখি। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি, যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে বুধবার। এর চারদিন আগে হঠাৎ নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ। ঘটনা তদন্তে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আবু আসিফের স্ত্রী ও বাসার কেয়ারটেকারের মধ্যকার একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন প্রশ্ন-তাহলে কি ভোটের আগে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছেন?
ওই ফোনালাপে উঠে এসেছে আসিফ নিখোঁজ হওয়ার আগের ঘটনা। স্বেচ্ছায় আত্মগোপনের জন্য জিনিসপত্র গুছিয়ে দেয়া ও সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ রাখার কৌশলের বিষয়ও রয়েছে ওই টেলি কথোপকথনে।
শুক্রবার রাত থেকে আসিফের খোঁজ মিলছে না। তার পরিবার মৌখিকভাবে জানায়, আসিফ নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তার পরিবার।
কল রেকর্ডের কথোপকথনে আসিফের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন কেয়ারটেকারকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ইউসুফ (কেয়ারটেকার), স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা-মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে যে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন অন করবি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে আসিফের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহরীনের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় মেহেরুননিছা মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে আসিফকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনটি তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন সেটিও জানি না।
‘প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ এসে অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করছে। বাড়ির সামনেও কিছু পুলিশ আসা-যাওয়া করছে। এতে আমি অনেকটাই আতঙ্কিত!’
আসিফের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা না হলেও তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওনার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে আসিফ সাহেবের পরিবার থেকে এখনও কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।’
সামাজিক যোগাাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অফিসে স্ত্রী ও কেয়ারটেকারের মধ্যে কথোপকথনটি পুলিশের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা অডিও রেকর্ডটি শুনেছি। প্রাথমিকভাবে অডিওতে নারী কণ্ঠ আসিফ সাহেবের স্ত্রীর বলেই মনে হচ্ছে। তবে যাচাই না করে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
‘ওনাকে কেউ অপহরণ করেছে না নিজে আত্মগোপনে গেছেন তা আমরা তদন্ত করছি। আগে ওনাকে খুঁজে পাওয়াটা জরুরি।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন অফিসারকে নিয়ে গঠিত কমিটিকে দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি রাশেদা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট আসুক। তারপর কী হয় দেখা যাবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন অফিসারকে বলেছি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে। ঘটনাটা আসলে কী, এর সত্যতা কতটুকু। রিপোর্ট পাওয়ার পর সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।’
তিনি জানান, ‘কমিশন ওখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে- যেভাবে যেখান থেকে পারো ওনাকে উদ্ধার করো। ওনাকে তারা উদ্ধার করতে পারবে না এটা আমরা বিশ্বাস করি না। নির্বাচনের আগেই যদি (উদ্ধার) হয় তাহলে ভালো হয়। কমিশন নিজে গিয়ে তো তাকে ধরে আনতে পারবে না।’
আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। সম্প্রতি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও এই আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হন আসিফ। তার প্রতীক মোটরগাড়ি।
গত ১১ ডিসেম্বর উকিল আব্দুস সাত্তার বিএনপির অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে আসনটি শূন্য হয়। পরে আসনটিতে উপনির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। ভোটে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। এই আসনে ভোট হবে বুধবার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য