পুঁজিবাজারের চলমান পতনের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের আক্ষেপ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অন্য দেশে ৯০ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ১০।
এ নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে না। তবে তা কি মোট বিনিয়োগকারীর তুলনায় আসলেই ১০ শতাংশ? পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মানতে নারাজ।
কারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে রয়েছে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ওরাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যেটা ক্যাপিটালাইজেশনের প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ হবে।
‘এ ছাড়া ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংকও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। ডিএসইর যত ডিলার আছে সবাই এই তালিকার মধ্যে পড়ে। আইসিবিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আরেকটা হলো করপোরেট বিনিয়োগকারী। তারা প্রাতিষ্ঠানিক না হলেও বাজারে তাদের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে।’
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পেনশন ফান্ড, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হতে পারে। কোনো গার্মেন্টস মালিক তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনলে সেটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আরেকটা আছে- বিএসইসির নিবন্ধিত এলিজিবল ইনভেস্টর, যারা বিডিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী।’
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কি কম
লালী বলেন, ‘আমি মনে করি না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ঘাটতি আছে দেশে। গত মঙ্গলবার ৩০০ কোটি টাকা এক্সট্রা আসল, সেটা কোত্থেকে আসল? ওই যে নিয়ে বসে ছিল টাকা।’
তিনি বলেন, ‘অন্যরা বলেন ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগ, আমি বলি এটা ৮০ শতাংশ। বিষয়টা হচ্ছে যে হাই নেটওয়ার্ক ইনডিভিজুয়ালস যারা আছেন, তারা মোটামুটি ৬ মাস থেকে এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা আছে, কিন্তু তারা সাইডে বসে আছেন। দুদিন থেকে ভলিউম বেড়েছে, কারণ তাদের অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে।’
মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই বা তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন এই কথাটি সত্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর যে কথা বলা হয়, সেটা হবে যদি বলেন ইন টার্মস অব ইনভেস্টরস নাম্বার। কিন্তু ইন টার্মস অফ ইনভেস্টমেন্ট যদি বলেন, তাহলে ৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ মাত্র ১০ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই, এই কথা বলা বা প্রচার করা বাজারের জন্যও খারাপ। এটা মানসিকভাবে বিনিয়োগকারীদের দুর্বল ও বিনিয়োগ বিমুখ করে তোলে। বাস্তবতা ভিন্ন কথা, কারণ বাজারের ৯০ শতাংশই বিনিয়োগই প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের।
শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো- যদি বিনিয়োগকারী না থাকে, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও নাই, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীও শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছে, তাহলে শেয়ারগুলো কি ডাস্টবিনে পড়ে আছে? যারা কিনেছে তারা কি বিনিয়োগকারী নয়?’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি বিনিয়োগকারী বেশি হারে কমে গেছে যেটার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যক্তি বিনিয়োগকারী হবে।’
ডিএসইর সাবেক সভাপতি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছেই বেশি শেয়ার আছে। স্পন্সরের কাছেই তো আছেই। স্পন্সররা কেউ ৩০, ৪০, ৫০, ৭০ শতাংশ হোল্ড করে। গ্রামীণফোন, স্কয়ার কত হোল্ড করে?
‘বাটা, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মতো কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিট দেখতে হবে। এসব কোম্পানির শেয়ার কারা হোল্ড করছে? ১০০টা কোম্পানির সব শেয়ার, বাজার মূলধন যা, দেখা যাবে ৫টা কোম্পানির বাজার মূলধন তার সমান। সে জন্য বড় কোম্পানিগুলো কারা হোল্ড করছে? যদি বলা হয়, তারা বিনিয়োগকারী নয়, তাহলে কিছু বলার নাই।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বিও আছে এক লাখ। তারা কোম্পানিগুলোর কত শতাংশ শেয়ার হোল্ড করে? ধরা যাক, একটা করে ৫০০ জন ৫০০টি শেয়ার হোল্ড করে, আর একটা বিও থেকেই করা হয় পাঁচ লাখ। একটা ব্যাংক হোল্ড করে মনে করুন ৫০০ কোটি, আবার এই ৫০০ কোটি হোল্ড করতে ২০ হাজার বিও লাগবে।’
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কি হাত গুটিয়ে বসে?
শাকিল রিজভী বলেন, ‘এই বাজারে সবাই লাভ করতে আসে। ক্যাপিটাল মার্কেট বা পুঁজিবাজার। সবাই আসে পুঁজি বানাতে। এখন কোনো শেয়ারের ভ্যালু ১০০ টাকা, এটাকে স্পেকুলেশন করে বানানো হয়েছে ৫০০ টাকা। এটার পেছনে খেলা হয়েছে, কারা করেছেন সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু এখন যে প্রাইসে আছে সেটা কেনার প্রাইস নয়, তাহলে একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কেন সেটা কিনবেন?
‘কেনার লোক ঠিকই আছে। রিজনেবল প্রাইসে আসুক। বলা হয়, বায়ার নাই, কিন্তু ঠিকই আছে কিন্তু রেট খারাপ। একটা ২০ লাখ টাকার গাড়ি কেউ কিনছে না। ১৫ বা ১৬ লাখ টাকায় দেন সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে। কিন্তু ২০ লাখ টাকার গাড়ি দাম হাঁকছে ৩০ লাখ টাকা ফ্লোর প্রাইস, কেনেন? কেউ কিনবে?’
আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘এখন প্রাতিষ্ঠানিকরা কিনছে না। কারণ, ডিসেম্বর ক্লোজিং, তাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট আছে। ধরা যাক, ইবিএল। তারা তো টাকা নিয়ে এসেছে ব্যাংক থেকে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট করে, পেমেন্ট করে নতুন করে শুরু করতে হবে। যার কারণে তাদেরও একটা সমস্যা আছে। অনেকেই গত মাসেই অ্যাডজাস্টমেন্টের হিসাব, টাকা পয়াস যা বের করার তা করে ফেলেছে। এখনও অনেকেই করবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।’
করণীয় কী
আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘বিনিয়োগকারী ঠিকই আছে, আসলে প্রয়োজন ডিএসইর রিফর্মেশন, মার্জিন রেগুলেশনে, গভর্ন্যান্স সিস্টেমে এবং সেটা কন্টিনিউয়াস হতে হবে। আমরা এখন ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে আছি। যখন ইমার্জিং মার্কেটে ট্রান্সফার হতে গেলে দুই থেকে তিনটি জিনিস খুব প্রয়োজন। সেটা হলো- ১. গভর্ন্যান্স সিস্টেম, ২. লিক্যুইডিটি অফ শেয়ারস অ্যান্ড মানি ই দ্য মার্কেট, ৩. পলিসি কনসিস্টেন্সি ও ৪. রিফর্মেশন।’
তিনি বলেন, ‘যখনই ইমার্জিং মার্কেটে যাব, তখন বাজারকে অন্যরূপে দেখতে পাব। এই রিফর্মসগুলো না হলে বাজারের উন্নয়ন আমরা যেভাবে দেখতে চাই। সেভাবে পাব না।’
‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের রিফর্ম যদি বলি, ডিএসই মনে হয় বিশ্বে একমাত্র এক্সচেঞ্জ যেখানে নামকাওয়াস্তে রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট আছে, তবে ১০ জন অ্যানালিস্ট রেখে যে একটা রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট গড়ে উঠবে, তারা রিসার্চ করে পলিসি মেকিং বোর্ডে দেবে, প্রতি ১০ বা ১৫ দিন পরে রিসার্চ পেপার বের করবে এবং মানুষ তা কিনে নেবে, এসব বিষয় নাই। যা খুবই দরকার’-যোগ করেন লালী।
তিনি আরও বলেন, ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টেমেন্ট আছে, কিন্তু তার কাজ কী? এই যে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট আসে লিস্টেড কোম্পানির, সেটা করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টমেন্ট দেখবে সেখানে হিডেন কিছু আছে কি না, যদি থাকে বিএসইসিকে জানাবে। বিএসইসি বলবে ব্যাখ্যা চাও, তারা ব্যাখ্যা চাইবে। এ জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। তারা সারা বছর যে রিপোর্ট আসে সেগুলো দেখবে, কোথাও ভুল আছে কি না। কারণ, কোনো পিএসআই আসলে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি যুক্ত হয়ে যান।
‘এখন কোনো কোম্পানির ইপিএস দেখাল ২ টাকা, সেটা আসলেই আছে কি না, নাকি তারা লুকিয়ে ভুয়া একটা হিসাব দিয়েছে। এই জিনিসটা যদি করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টমেন্ট যদি দিতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা আরও ইনফর্মড হবেন। এগুলো করতে হবে কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস দিয়ে। আমি জানি না ডিএসইতে কতজন সিএ আছে। সেজন্য এই ডিপার্টমেন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
ডিবিএর প্রাক্তন এই সভাপতি বলেন, ‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের ৯ বছর হয়েছে। আমি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই সময়ে ডিএসই কয়টা পলিসি সাজেশন দিয়েছে? বিএসইসি চেয়ারম্যান বললেন, একটাও না।
‘ডিএসই হলো মার্কেট এবং রেগুলেটরের মাঝখানে ব্রিজ। ডিএসই প্রাইমারি রেগুলেটর। সেকেন্ডারি রেগুলেটর বিএসইসি। এই ব্রিজের কাজ যদি ডিএসই করতে না পারে তাহলে ডিএসইকে তো এমডি নিয়োগ দিতে হবে। ডিএসইকে প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন করতে হবে। যতক্ষণ না করা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই আশা করা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ১৪ দফা দাবি দিল, বাজার ডাউন, ভালো করার জন্য তা মেনে নিতে হচ্ছে। কেন? কেন ডিএসই সেই কাজগুলো করতে পারছে না? কেন ডিএসই বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসতে পারছে না। বলছে না যে, আপনারা কেন টাকা নিয়ে বসে আছেন? এটা কি বিএসইসির কাজ? বিএসইসি বড় বিনিয়োগকারীরা সঙ্গে বসছে?
‘বিএসইসির কাজ কি সেটা? বিএসইসির কাজ হলো রেগুলেট করা। ডিএসইর থেকে প্রস্তাব যাবে। বিএসইসি যেটা মানার মানবে, যেটা অ্যাড করার দরকার করবে, আর যেটা মাইনাস করার সেটা করবে।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে দরপতনের হিড়িকের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থায় (এএসএম) রাখা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) থেকে বৃহস্পতিবার পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার এ খবর জানায় এনডিটিভি।
নজরদারিতে থাকা প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনোমিক জোন এবং আম্বুজা সিমেন্টস।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে লেনদেনে প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরে ধস নামে।
ওই প্রতিবেদনকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে আদানি গ্রুপ বলেছে, তাদের কোম্পানিগুলো সব আইন মেনে চলছে।
বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তিতে কোনো কোম্পানিকে এএসএমের আওতায় রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির আয়ের ওপর গ্রাহকদের অংশীদারত্ব, প্রাইস-আর্নিং রেশিও ইত্যাদি।
এনএসই ও বিএসই জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের তিনটি কোম্পানি নির্ধারিত মানদণ্ডে পড়ায় এগুলোকে এএসএমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও আদানি গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার ২৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতনও অব্যাহত রয়েছে।
সব মিলিয়ে ছয় দিনে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোর ৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি রুপি উধাও হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফেরার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)। তবে এবার জানা গেল লোপাট করা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (ইউএফএস) লিমিটেডসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আইসিবি। ১১ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) খতিয়ে দেখছে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইউনিভার্সেল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে আইসিবির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।’
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ চিহ্নিত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা উদ্ধার করতে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস, ইউএফএসের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমগীর ফারুখ চৌধুরী, কোম্পানির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, পরিচালক ইসরাত আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, মোসাম্মত উম্মে ইসলাম সোহানা, সৈয়দা শেহরীন হোসেন, তারিক মাসুদ খান, সৈয়দা মেহরীন হুসেইনসহ অজ্ঞাতনামাসহ অনেকে।
এর আগে চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমান প্রতিষ্ঠানটির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে।
এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে বিএসইসিকে অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৪ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ২ জানুয়ারি এমডির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চায় হাইকোর্ট। পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও আইসিবিকে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়।
৩ জানুয়ারি ইউএফএস ও এর এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায়।
এ তালিকায় নাম আছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড, ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, তারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন, মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানা, ইশরাত আলমগীর, সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের।
অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে- ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
এদিকে বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের স্বার্থে ইউএফএস ও তাদের সব ফান্ডের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় চারটি ফান্ড ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ও ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ডের নিরীক্ষা করে আসছে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষক মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অনুসন্ধানের জন্য তদন্তের শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, তদন্ত কমিটির সঙ্গে নিরীক্ষক অপেশাদার আচরণ করেছে। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ২০-এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজার, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, ইস্যুকারী এবং সম্পদ ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে যে, নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে ইউএফএসের অধীনে থাকা কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, নিরীক্ষককে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষক হতে অনুমতি দেবে না কমিশন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে।
এ ছাড়া কোম্পানিটির ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চায় কমিশন, যা ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়ে, সেগুলো হলো-ইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের আগের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা।
সে সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।
ফান্ড দুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ড দুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো দেশের ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে ঋণ দিয়ে থাকে তার ওপর প্রভিশন ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ টানতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এর কতটা ইতিবাচক প্রভাব প্রভাব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিয়ে থাকে। সেখানে আগে অশ্রেণিবদ্ধ ঋণে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার নিয়ম ছিল। এখন থেকে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।
বিআরপিডি’র পরিচালক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘দেশের আর্থিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে থেকেও এমনটা দাবি ছিল। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আমরা একটু আকর্ষণীয় করতে চেয়েছি। আমরা দেখলাম যে বিবেচনা করার মতো সুযোগ আছে। এর ফলে ব্যাংকের যে খুব একটা লোকসান হবে তা কিন্তু না। বরং এর ফলে দেশের পুঁজিবাজার যদি চাঙ্গা হয় তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আর একটু আকর্ষণীয় করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর ফলে যে খুব বেশি ইমপ্যাক্ট হবে তা আমি মনে করি না।’
দ্য এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘ব্যাংক কোথায় কত বিনিয়োগ করবে তা নির্ভর করছে তাদের পরিকল্পনার ওপর। এই পদক্ষেপে যে বড় কোনো পরিবর্তন হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এখন আগের তুলনায় প্রভিশন কম করতে হবে। আগে ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিলে এর ওপর ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে তাকে ২ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হতো। এখন ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে ১ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে ঋণ ১০০ কোটি টাকাই দিচ্ছে। শুধু ব্যাংক প্রভিশন কম রাখবে।’
আরও পড়ুন:টানা পতনের পর দুই কর্মদিবসে উত্থান তো বটেই, শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন বৃদ্ধিতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে পুঁজিবাজারে। দরপতনের সংখ্যা কমে দর বৃদ্ধির কাছাকাছি চলে এসেছে। ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র একটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বৃহস্পতিবার। এদিন হাতবদল হয়েছে ৬৮৭ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১০৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৮০ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
২০২০ সালে করোনা মহামারির পর গত ডিসেম্বরে লেনদেন নেমে আসে ২ শ’ থেকে ৩ শ’ কোটির ঘরে। ৪ জানুয়ারি বাজার-সংশ্লিষ্টদের ডেকে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বাজার ভালো করতে সব পক্ষকে নামতে বলার পর লেনদেন বাড়তে থাকে। ১৮ জানুয়ারি হাজার কোটি ছুঁই ছুঁই লেনদেন হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় বাজার ছোটে উল্টো পথে। পরের ১১ কর্মদিবসের ৯ দিনই লেনদেন হয় ৫ শ’ থেকে ৬ শ’ কোটির ঘরে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি। ওইদিন হাতবদল হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার টাকা।
আগের দিন সূচক ও লেনদেন বাড়লেও দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছিল ৩ গুণের বেশি। বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন বেশি ছিল ১২টি। তবে অপরিবর্তিত দরে লেনদেনের সংখ্যা বেশি ছিল, যার সবই ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে।
লেনদেন হয়নি ৫৬টি কোম্পানির। এর মধ্যে একটির লেনদেন বন্ধ ছিল রেকর্ড ডেট সংক্রান্ত কারণে। লেনদেন হওয়া ৩৩৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির। বিপরীতে দরপতন হয়েছে ৯১টির। এ ছাড়া আগের দিনের চেয়ে ১টি বেড়ে অপরিবর্তিত দরে বা ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ১৬৫টির।
সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে যতটুকু সূচক পড়েছিল, দুই দিনে তার কাছাকাছি ফিরে এসেছে। রবি, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ২৯ পয়েন্ট সূচক পতনের পর দুই দিনে বাড়ল ২৭ পয়েন্ট। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ১৭ পয়েন্ট বেড়ে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৯৪ পয়েন্টে, যা ২৬ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের চেয়ে সূচক এখনও ২ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস থেকে কোম্পানিগুলো বের হয়ে আসছে। তাছাড়া বাজারের সব কটি ইনডিকেটরই ভালো যাচ্ছে। আশা করছি, বাজার আরও ভালো হবে।’
আরও পড়ুন:মঙ্গলবার পতনের মধ্য দিয়ে টানা তিন দিন মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। দরপতন হলেও বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে এদিন ৫৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৩২৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬১টির। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিচ সূচক সিএএসপিআই ১৯ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইতে ৫০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। রোববার ডিএসইতে ৪৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।
৩৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭০টির।
আরেক বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৭ পয়েন্ট কমেছে। ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৩২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের পতনে শেষ হয়েছে লেনদেন। কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণও। তবে এদিন দেশের অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়ে লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে রোববার ৪৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কম। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৫০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক শূন্য দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩১ পয়েন্ট।
ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ১৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৫টির।
লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ফান্ডের ইনজেকশন নেই। সেক্টরাল মুভমেন্টও হচ্ছে না। ফলে মার্কেট একই জায়গায় আবর্তিত হচ্ছে।’
অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৫ পয়েন্ট বেড়ে প্রধান সূচক সিএএসপিআই অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। হাতবদল হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার। হাতবদল হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৫৯টির ও অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ৬২টির।
মন্তব্য