× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
What is the resolution of the American parliament on genocide in 1971?
google_news print-icon

একাত্তরে গণহত্যা নিয়ে আমেরিকান পার্লামেন্টে তোলা প্রস্তাবে কী আছে?

একাত্তরে-গণহত্যা-নিয়ে-আমেরিকান-পার্লামেন্টে-তোলা-প্রস্তাবে-কী-আছে?
ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
আমেরিকান দুই আইনপ্রণেতার তোলা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ’বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিধন অব্যাহত রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাঙালি সেনা ও পুলিশ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র এবং পেশাজীবীদের বেছে বেছে নিপীড়ন ও হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘিষ্ঠ অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।’ 

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে।

প্রভাবশালী দুই আইনপ্রণেতা স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্না ১৪ অক্টোবর এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।

এই প্রস্তাবে কী রয়েছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা। স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্নার উত্থাপন করা প্রস্তাবের শিরোনাম- ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার স্বীকৃতি।

৮ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটি ভাষান্তর করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে, জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের। পাকিস্তান দেশটি দুটি আলাদা ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয়; পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলটি পূর্ব বাংলা নামেও পরিচিত।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর শীর্ষ পদে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিক্য ও আধিপত্য ছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা হয়।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নানা তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বাঙালিবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, বাঙালিরা এমন একটি নিচু জনগোষ্ঠী যারা অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড ও আচরণে দুষ্ট।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবি নিয়ে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নতুন সরকার গঠনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের আলোচনা ব্যর্থ হয়।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লাখ মানুষ হত্যায় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ইয়াহিয়া খান। তিনি বলেন, ‘তাদের ৩০ লাখকে মেরে ফেললে বাকিরা আমাদের পোষ্য হয়ে যাবে।’

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দি করে পাকিস্তান সরকার। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় নির্বিচারে হত্যা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সাংকেতিক নাম ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিধন অব্যাহত রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাঙালি সেনা ও পুলিশ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র এবং পেশাজীবীদের বেছে বেছে নিপীড়ন ও হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘিষ্ঠ অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, জাতিগত বাঙালি এবং হিন্দুদের ওপর চালানো নিপীড়ন বিংশ শতাব্দীতে হওয়া গণহত্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ, যারা নৃশংসতার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতায় নিহতদের সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে সংখ্যাটি ৩০ লাখ।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ২ লাখের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সামাজিক ট্যাবুর কারণে প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত কখনোই জানা যাবে না। মনে থাকবে না ভুক্তভোগীদের কথা।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতা এবং যুদ্ধের কারণে প্রায় ১ কোটি উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে যান। ৫০ শতাংশ বা তার চেয়েও মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দেখভাল করেছিল।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৩ জুন দ্য সানডে টাইমসে ‘গণহত্যা’ শিরোনামে এক কলামে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লেখেন, “এটা পরিষ্কার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব বাংলার গভর্নরশিপ গ্রহণ সময় থেকেই পরিকল্পনামাফিক ‘তালিকা’ করা শুরু হয়। এটা চলমান ছিল।

সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকায় যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন প্রাথমিকভাবে পরদিন সকাল পর্যন্ত একটি প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। ওই সময়ে সেনা ইউনিটগুলোর হাতে ছিল ওই তালিকা; যাতে হিন্দুদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মুসলমান, ছাত্র, আওয়ামী লীগার, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং শেখ মুজিবের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা রাজনীতিকদের নাম ছিল।”

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে ‘বেছে বেছে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সেনাদের সমর্থনে অবাঙালি মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে দরিদ্র জনগণের বাড়িঘরে হামলা এবং বাঙালি ও হিন্দুদের হত্যা করছে। ঢাকা ছাড়তে মরিয়া হিন্দু জনগোষ্ঠীসহ অন্যদের স্রোতে রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বাঙালি আমেরিকানদের বাড়িতে আশ্রয়প্রার্থনা করেছিলেন, যাদের অধিকাংশ দীর্ঘদিন ওই আশ্রয়েই ছিলেন।’

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরব অবস্থানের বিরোধিতা করে ২০ জন আমেরিকান কূটনীতিকের সইসহ একটি বার্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠান কনসাল জেনারেল ব্লাড, যা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিতি পায়। কূটনৈতিক কনস্যুলেট জেনারেল ঢাকার কর্মীরা লেখেন, ‘আমরা হস্তক্ষেপ না করার উপায় বেছে নিয়েছি, নৈতিকভাবেও। এ কারণে আওয়ামী সংঘাত, যেখানে দুর্ভাগ্যবশত অত্যধিক শক্ত শব্দ গণহত্যা প্রযোজ্য, এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে সাধারণ আমেরিকানরা বিরক্তি প্রকাশ করেছে।’ এই আপত্তিতে ব্লাড একমত হয়ে বলেন, ‘আমি এই কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারছি। তারা পূর্ব পাকিস্তানের সেরা আমেরিকান কর্মকর্তা। আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা তাদের মাধ্যমে প্রতিধ্বনিত হয়। তাদের মতামতগুলো গ্রহণ করলেও, যতদিন আমি এই পদে প্রিন্সিপাল অফিসার আছি ততদিন তাদের বিবৃতিতে সই করা আমার পক্ষে উপযুক্ত মনে হয় না।’

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল কনসাল জেনারেল ব্লাড আরেকটি টেলিগ্রাম পাঠান যেটায় লেখা হয়, নগ্নভাবে ‘গণহত্যা’ চলছে। বাছাই করে হিন্দুদের বিশেষভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। শুরু থেকেই হিন্দু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া, ঢাকায় হিন্দু ছিটমহল এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে হিন্দুদের গুলি করার প্রত্যক্ষদর্শী আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সদস্যরা। অনেকে আবার পরবর্তী প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন, যা আজ সারা ঢাকায় দৃশ্যমান।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, শরণার্থী ও পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্যাগুলো তদন্ত করার জন্য সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যেখানে বলা হয়েছে “এর চেয়ে পরিষ্কার কোনো কিছুই নয় বা এর চেয়ে সহজে নথিভুক্ত করা সম্ভবও নয় যে, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পদ্ধতিগত আতঙ্কের এক অভিযান চালিয়েছিল যার ফল ছিল গণহত্যা। আমেরিকান সরকারের কাছে ফিল্ড রিপোর্ট, অগণিত প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের ভাষ্য, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট ও অতিরিক্ত তথ্য উপলব্ধ উপকমিটির নথিতে আতঙ্কের ক্রমাগত রাজত্ব যা পূর্ব বাংলাকে গ্রাস করে তার বর্ণনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের। তাদের জমি ও দোকান লুট করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় হলুদ ছোপ দিয়ে ‘এইচ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সবই ইসলামাবাদ থেকে সামরিক আইনের অধীনে সরকারিভাবে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭২ সালে “দ্য ইভেন্টস ইন ইস্ট পাকিস্তান” শিরোনামে প্রকাশিত একটি আইনি সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সচিবালয় বলেছে, ‘হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু বলে তাদের বাড়িঘর এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল।’

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৯৪ সালে যুদ্ধ কভার করার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সিডনি শ্যামবার্গ লিখেছেন, “পরবর্তী সময়ে আমি পাকিস্তানের কীর্তিকলাপ সরাসরি দেখার জন্য সড়কপথে দেশটি ভ্রমণ করি। শহরের পর শহরে আমি এমন সব জায়গা দেখেছি যেখানে মৃত্য কার্যকর করার জন্য এলাকা নির্দিষ্ট ছিল। যেখানে লোকজনকে বেয়নেট ও বুলেট দিয়ে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কয়েকটি শহরে প্রতিদিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাস পরেও (১৯৭২ সালের জানুয়ারি) মানুষের হাড়গোড় রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। রক্তের দাগযুক্ত পোশাক এবং মানুষের চুলের অংশগুলো মৃত্যুর এ উপত্যকায় হত্যাকাণ্ডের স্বাক্ষী হয়ে পড়েছিল। অল্পবয়সী শিশুরা মাথার খুলি নিয়ে ভীতিকর খেলায় মেতেছিল। অন্যান্য অনুস্মারকের মধ্যে পাকিস্তানি মুসলিম সেনাবাহিনীর বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া হিন্দুদের বাড়িতে হলুদ রঙের ‘এইচ’ আঁকা ছিল।”

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ‘বাংলাদেশ গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকী স্মরণে ঘোষণাপত্রে’ বলেছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী দখলদারত্বের ৯ মাসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালি সংস্কৃতি ও পরিচয়বাহক কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাদের প্রতিনিধিদের নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা করেছে।’

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্যারিসে স্বাক্ষরিত গণহত্যার অপরাধের প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশন এ ঘোষণা দেয় যে, গণহত্যার অর্থ হলো, সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে, একটি জাতি, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠী ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত নিম্নোক্ত যেকোনো কাজ; ক) গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা; (খ) গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা; (গ) ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শারীরিক ধ্বংস ঘটাতে গণনা করা জীবনের গোষ্ঠীগত অবস্থার উপর আঘাত করা; (ঘ) গোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা; (ঙ) গোষ্ঠীর শিশুদের জোর করে অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।

এবং নিম্নলিখিত কাজগুলো শাস্তিযোগ্য হবে: (ক) গণহত্যা; (খ) গণহত্যার ষড়যন্ত্র; (গ) গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও জনসাধারণকে প্ররোচনাদান; (ঘ) গণহত্যা করার চেষ্টা; (ঙ) গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা।

এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ও লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছে; এবং

যেহেতু ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রয়োজনে, নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও আগামীতে নৃশংসতা রোধের স্বার্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার ইতিহাস স্মরণ ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সেহেতু এটি সমাধানকল্পে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস:

১। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানায়।

২। বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

৩। এ ধরনের নৃশংসতায় অগণিত মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে ও তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।

৪। স্বীকার করে যে, নিজেদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য সমগ্র জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায় দায়ী নয়৷

৫। ১৯৭১ সালে জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানায়।

৬। ব্যাপক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারকে এ ধরনের গণহত্যায় তার ভূমিকা স্বীকার করে নিতে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধী যারা এখনও জীবিত আছেন তাদের বিচারের আহ্বান জানায়; এবং

৭। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য এবং জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এ অঞ্চলে বসবাসকারী সব মানুষের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

আরও পড়ুন:
একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব
২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস স্বীকৃতি পেতে কাজ চলছে
জাতিসংঘে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবিতে কর্মসূচি

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Changa Sylhets tourism sector on the occasion of Eid

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত
সিলেটে আগামী কয়েক দিন পর্যটনে চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।

আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।

জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।

জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।

সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।

সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।

‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।

‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।

‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।

‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
তীব্র লোডশেডিং, পানির সংকটে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী
সিলেটে গ্রামের চেয়ে বেশি লোডশেডিং শহরে
সিলেট টেস্টে শোচনীয় হার বাংলাদেশের
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬
উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ‘ইনফেকশাস-ডিজিজ’ বিষয়ে প্রথম স্থান সিকৃবির

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Crowds to watch the Eid festival of farmers and farmers in Kurigram

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড় কোলাজ: নিউজবাংলা
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে  ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।

কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।

খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’

ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Akalima is excited to get a wheelchair on the day of Eid

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা ছবি: নিউজবাংলা
জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আকলিমার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে হুইলচেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরী আকলিমা আক্তারের মুখে হাসি ফুটেছে। আর্থিক টানাটানির পরিবারে এতদিন আদরের মেয়ের হুইলচেয়ারের আবদার রক্ষা করতে পারেননি মা-বাবা। অবশেষে ‘প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সহযোগিতায় হুইলচেয়ার পেয়ে ঈদের দিন শুধু মেয়ে নয়, মা-বাবার মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

জানা গেছে, ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাঢ়িয়াচালা গ্রামের গৃহকর্মী রাবেয়া ও আসলাম দম্পতির একমাত্র মেয়ে আকলিমা। জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের কোলে বেড়ে উঠলেও বয়স বাড়ায় কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। বাকি সময় তাকে শুয়ে-বসেই দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে তাকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারটির।

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এতদিন আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এই চেয়ারটি আগে পেলে আমার চলাচলে অনেক সুবিধা হতো। আজ ঈদের দিন চেয়ারটি পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি হাঁটতে না পারলেও চেয়ারটি ব্যবহার করে আমার সহপাঠীদের সঙ্গে অন্তত ঘুরতে পারব এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব।’

আকলিমার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো সম্পদ নেই। মানুষের খেত-খামারে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে একটি হুইল চেয়ারের অভাবে সারা দিন মেয়েটাকে শুয়ে থাকতে হতো। হাত দিয়ে ভর করে চলতে চলতে পা ও আঙুল বিকল হয়ে গেছে। এখন চেয়ার পেয়ে পরিবারের সবারই ভালো লাগছে।’

প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক মো. জাফর আলী বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আকলিমা আক্তার নামের একটি মেয়ে ছোট থেকেই এভাবে চার হাত-পায়ে অনেক কষ্টে চলাচল করছে। হাঁটুর ওপর ভর করে চলতে চলতে পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে।

‘এদিকে তার দুই হাতের অনেকটাই অবশ। আকলিমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। যার কারণে, আমাদের এই উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগটা আমরা ঈদের দিনে বাস্তবায়ন করেছি যাতে এই আনন্দের দিনে আনন্দের পরিমাণটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’

এ বিষয়ে প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের অপর সমন্বয়ক ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আকলিমার মুখে হাসি ফোটানোর এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটি আজকের দিনের বড় একটি পাওয়া। আমরা প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের সংগঠনের এরকম মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন:
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, জরিমানা
প্রতিবন্ধী শিশুকে ঢামেকে ফেলে গেল স্বজন
কীভাবে পড়াশোনা করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
শ্রুতিলেখকের কলমে স্বপ্ন যাদের

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Weather may be bearable on Eid day

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন আবহাওয়াবিদ। ছবি: অপূর্ব দত্ত/নিউজবাংলা
আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

ঈদুল ফিতরের দিন বৃহস্পতিবার দেশের আবহাওয়া সহনশীল পর্যায়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন আবহাওয়াবিদ।

তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ অব্যাহত থাকা নিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘পাবনা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’

ঈদের দিনের তাপমাত্রা নিয়ে তরিকুল নেওয়াজ বলেন, ‘এপ্রিল মাস হচ্ছে বছরের উষ্ণতম মাস, স্বভাবতই একটু গরম থাকে, তবে কালকে ঈদের দিন আমরা আশার করছি যেটা, হালকা মেঘ থাকবে।

‘সেই সাথে একটু সহনশীল পর্যায়ে আবহাওয়াটা থাকবে। এত বেশি গরম থাকবে না হয়তো।’

আরও পড়ুন:
দিনে গরম বাড়বে
বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি, আরও ঘামবে মানুষ
কোথাও কোথাও হতে পারে শিলা বৃষ্টি
ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে পাঁচ বিভাগে
দেশজুড়ে বাড়তে পারে দিন ও রাতের তাপমাত্রা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
There is no joy of Eid in the families of the hostage crew due to anxiety
জলদস্যুদের কবলে এমভি আবদুল্লাহ

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

রাত পোহালেই ঈদ। অথচ গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ক্যাপ্টেনসহ ২৩ ক্রুর পরিবারে কারও মুখে হাসি নেই; তাদের ঘরে নেই ঈদের আমেজ। চোখে মুখে দুর্ভাবনা, চিন্তার ভাঁজ কপালে।

চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। কবে জিম্মিদশা থেকে তারা মুক্তি পাবেন, সেই দিকেই চেয়ে আছেন নাবিকদের পরিবার-স্বজনরা।

জিম্মি নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের ঘরে কাপড় চোপড়সহ ঈদের কোনো কেনাকাটা হয়নি। রোজা রেখে দিন কাটছে তাদের।

ঈদের আগে যদি নাবিকরা মুক্তি পান তাহলে এর চাইতে বড় খুশির খবর তাদের কাছে আর কিছু নেই। তারা মুক্তি না পেলে এবারের ঈদ স্বজনদের কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে না।

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলেন, ‘জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই। এ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছি না।’

আতিকের জন্য পরিবার ও স্বজন সবার মন খারাপ। তারা বলছেন, আমরা এখনও কেউ ঈদের কেনাকাটা করিনি। কারো মন-মানসিকতা ভালো নেই।

আতিক উল্লাহর ভাই আসিফ খান জানান, তাদের কারও মনে শান্তি নেই। ভাই ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের এ উৎকণ্ঠা শেষ হওয়ার নয়।

চট্টগ্রাম শহরে থাকেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা, স্ত্রী আর ছোট ভাই।

তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জিম্মি জাহাজ এভি আব্দুল্লাহর ২৩ ক্রু। কোলাজ: নিউজবাংলা

জিম্মি জাহাজের নাবিক সামশুদ্দিন শিমুলের সাত বছর বয়সী মেয়ে আয়ুবা তাসনিম সাঈদা তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে ঈদে আব্বু বাড়ি আসবে কি না। শিমুল সোমালি দস্যুদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবেন, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও সাঈদাকে তার মা সান্তনা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার আব্বু ঈদের পরে আসবে।’

নাবিক তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২৮ দিন ধরে ছোট ভাই জিম্মি অবস্থায় রয়েছে, সেখানে কীভাবে আমরা ভাল থাকি? মা-বাবাসহ পরিবারের কারও মন ভালো নেই।’

নাবিক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের আনন্দটা এবার আসে নাই। স্বজনদের জন্য আমরা এতটাই দুশ্চিন্তায় আছি যে ঈদের কোনো প্রস্তুতি বা শপিং কিছুই হয়নি। আমার কিংবা আমার শিশুপুত্রের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।’

জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের ক্রুদের মুক্তির বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঈদের পরে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা বেশি। তাদের (দস্যুদের) যোগাযোগ চলছে। আমরা সবসময় ক্রুদের পরিবারের সঙ্গে আছি। ঈদের সময়ও আমরা তাদের পাশে থাকব।’

এ বিষয়ে বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ ও এর ক্রু দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির তাদেরকে মুক্ত করতে পারব। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ক্রুদের) পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। প্রথমত, যারা অপহরণ করেছে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করা হয়েছে।

‘তারা ভালো আছেন, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। এমনকি ভিডিও কলে কথাও বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল, সেটি এই মুহূর্তে নেই। আশা করছি তাদেরকে শিগগির মুক্ত করতে পারব।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

অপরদিকে, বন্দি ক্রুদের চলতি মাসেই সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের (ক্রুদের) পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়, অনেক বড় ঘটনা। কাজেই দিন-তারিখ দিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আমরা তাদের সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, ঈদের আগে নাবিকদের যেন দেশে আনতে পারি, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। সেখানে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম জানান, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে।

ক্রুদের পরিবারে ঈদের আনন্দ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘তাদের তো এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল না। মানসিক অশান্তি থেকে তাদের যতদ্রুত সম্ভব মুক্তি দেয়া যায়, সরকার সে চেষ্টা করছে।

‘তবে তাদের পরিবারে আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। সরকার তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। জিম্মিদশা থেকে তাদের মুক্ত করার সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

জাহাজে জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে। সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বাসিন্দা। ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা। ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।

এছাড়া ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়; মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়; মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারাখন্দ এবং মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

আরও পড়ুন:
ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Why is the price of meat high in Meherpur on the eve of Eid?

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার মেহেরপুরের বামন্দী কসাইখানায় মাংস কাটায় ব্যস্ত কসাই। ছবি: নিউজবাংলা
মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে মেহেরপুরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাংস ব্যবসায়ীরা মহিষ, গরু ও ছাগল জবাই করতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ছাগলের মাংস বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজিতে। আর মহিষের মাংস বিক্রি হতে দেখা যায় ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা কেজি দরে।

মাংস কিনতে আসা মন্টু মিয়া বলেন, ‘ঈদের দিন মাংসের দোকানে অনেক ভিড় থাকে। তাই আমরা এক দিন আগেই মাংস কিনে রাখি, তবে মাংসের দাম অন্য সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। তারপরও কিনতে হবে, ঈদ বলে কথা।’

দিনমজুর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আগামীকাল ঈদের দিন। পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। এ বছর ছেলে-মেয়েদের পোশাক কিনতে গিয়ে সব টাকা শেষ হইয়ি গিছে। আজ সেমাই সুজির সাথে মাংস কিনলেই চলবে।

‘বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা করে, কিন্তু মাংসের যে দাম! বাধ্য হয়ে অল্প করে গরুর মাংস কিনব। তা ছাড়া ব্রয়লার মুরগি কিনব।’

স্কুলশিক্ষক শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের সাতজনের পরিবার। তার মধ্যে দুজনের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ। তাই ছাগলের মাংসও কেনা লাগবে। বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা করে।

‘মাংস বিক্রেতারা জানে ঈদের ছুটি হওয়ায় ভোক্তা-অধিকার কিংবা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সম্ভাবনা কম। তাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাংস বিক্রেতা মনিরুল বলেন, ‘আমরা ঈদ উপলক্ষে যতগুলো গাছান (জ্যান্ত) গরু কিনেছি, সব ৭২০ টাকা করে কেনা পড়েছে। তাহলে আমাদের পরিশ্রমের দামসহ হিসাব করে বিক্রি করলে ৮০০ টাকা করে বেচা উচিত, কিন্তু তা তো আর পারছি না।’

আরেক মাংস ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগ থেকে শুরু করে ঈদের দিন পর্যন্ত আমার চারটা মহিষ ও ১০টা গরু লাগবে বিক্রির জন্য। সে হিসেবে আমরা এক সপ্তাহ আগ থেকে গরু, মহিষ কেনা শুরু করেছি। হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাছান গরু আমাদের ৭২০ টাকা করে কেজি পড়তা পড়ছে।

‘তাই আমরা ৫০ টাকা লাভ হিসেবে মাংস বিক্রি করছি। আমরা ৫০ টাকা বেশি দামে মাংস বেচলেই নিউজ হয়। অথচ আমরা যে ৮০ টাকা করে বেশি দামে গরু কিনলাম, তা আর নিউজ হয় না।

বামন্দী পশুহাট ইজারাদার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সপ্তাহে দুই দিন পশু হাট বসে। সোম ও শুক্রবার। গত দুই হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি, তবে গত দুই হাট ছাগল ও গরু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। কারণ ঢাকাসহ বাইরের অনেক বেপারি হাটে আসায় গরুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
মরা গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে শরণখোলায় আটক ২
গাংনীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে ৫০০ টাকায় গরুর গোশত
মেহেরপুরে মৌমাছির আক্রমণে অন্তত ২৫ জন আহত
মেহেরপুরে মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার 

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Children got new clothes by making Eid cards

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা নতুন জামা পেয়ে খুশি ছোট্ট শিশুরা। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মাঝে ঈদ কার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মন রঙের পাঠশালা’। পরে বিজয়ী ৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার ও আয়োজনে অংশগ্রহণ করা সকল শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে ঈদ কার্ড বানিয়ে ঈদের নতুন পোশাক পেয়েছে অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থীরা।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মাঝে ঈদ কার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মন রঙের পাঠশালা’। পরে বিজয়ী ৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার ও আয়োজনে অংশগ্রহণ করা সকল শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী।

মন রঙের পাঠশালার এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিশুদের অভিভাবকরাও।

বুধবার দুপুরে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে কোমলমতি শিশুদের হাতে পুরস্কারস্বরূপ ঈদের পোশাক তুলে দেয়া হয়।

ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

জানা গেছে, মন রঙের পাঠশালার উদ্যোগে ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় ৭৫টি শিশু অংশগ্রহণ করে। সংগঠনটি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নিয়ে জেলার তিনটি উপজেলা ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীতে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে আসছে সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের আগে তারা শিশুদের মাঝে রঙপেন্সিল দিয়ে ঈদ কার্ড বানানোর আয়োজন করে।

ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিশু শিক্ষার্থী মো. ইকবাল অনিক বলে, ‘ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পুরস্কার পাবো, কখনও ভাবি নাই। সত্যি আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এ নতুন জামা পরে কাল ঈদ করব।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী বলেন, ‘ত্রাণ নয়, বরং ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মানসিকতা তৈরি হোক নিজে কিছু করার, ইকোনোমিক্যাল ও স্বাবলম্বী হবার। এবার তাই আমরা ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। তারপর তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমরা তুলে ধরি এবং ঈদ কার্ডের ছবিগুলো থেকেই এলো তাদের ঈদের উপহার নতুন পোশাক।’

আরও পড়ুন:
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার

মন্তব্য

p
উপরে