সন্তানের শিক্ষার কথা তুলতেই হবিগঞ্জে সুরমা চা বাগানের শ্রমিক স্বপ্না সাঁওতাল কাঁদতে শুরু করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকালে মেয়েটা কলমের টাকা চাইছে। ২০ দিন ধইরা কাজে যাই না। টাকা কই পাইতাম? দুইটা থাপ্পড় দিয়া কাজে চইলা আইছি। এখন কষ্টে বুকটা ফাইটা যাইতেছে। মা হয়ে একটা কলম না দিয়ে থাপ্পড় মারছি।’
চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনার চিত্রই যেন ফুটে উঠল স্বপ্নার বক্তব্যে। এই জীবন তাকে কোনো স্বপ্ন দেখায় না, কেবলই কাঁদায়।
চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরির বাইরে বাড়তি সুবিধার নামে মালিকপক্ষ যা বলে থাকে, তার মধ্যে পোষ্যদের শিক্ষার পেছনে যে ব্যয় দেখানো হয়, তা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষার পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক।
দিনে একেকজন শিশুর পেছনে শিক্ষা ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় টাকা, এই হিসাবে মাসে ৪৫ টাকা, যা মূলত দুটি খাতা কিনতেই খরচ হয়ে যাওয়ার কথা।
চা শ্রমিকরা দিনে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা ১৯ দিন আন্দোলন করে ১৭০ টাকা মজুরি অর্জন করেছে।
যখন তারা ১২০ টাকা মজুরি পেত, তখন মালিকপক্ষ দাবি করে আসছিল, রেশন, আবাসন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা খাতে খরচ মিলিয়ে ৪০১ টাকা ব্যয় করা হয় একেকজন শ্রমিকের পেছনে।
এখন দাবি করা হচ্ছে মজুরি ৫০ টাকা বাড়ায় শ্রমিকের পেছনে ব্যয় বেড়ে হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
আইন অনুযায়ী এসব সুবিধা কখনও মজুরির অংশ হতে পারে না। আবার নিউজবাংলা খোঁজ নিয়ে দেখেছে, আবাসন বলতে যে ঘর দেয়া হয়, তাতে মাসে ২৩০০ টাকা মজুরি দেখানো হলেও তাতে নেই আবাসনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। এসব ঘরের ভাড়া সাত থেকে আট শ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।
রেশন বলতে যে সুবিধার কথা বলা হয়, তাও পর্যাপ্ত নয়। কেবল চাল বা আটা দেয়া হয়। কোনো কোনো বাগানে টানা ৫ বছর আটা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আবার যাদেরকে ধানের জমি ইজারা দেয়া হয়, তাদের রেশন দেয়া হয় না। অনিয়মিত শ্রমিকরাও এই রেশন পায় না।
এবার শিক্ষার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল দৈনিক দেড় টাকা বরাদ্দের কথা। সেটিও আবার সরাসরি দেয়া হয় না।
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী চা বাগানে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেই বাগান কর্তৃপক্ষকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে বাগানগুলোতে সরকারি স্কুল নেই, সেই বাগানের কর্তৃপক্ষ একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করে দিলেও সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
সরকারি বইগুলো শিক্ষার্থীরা বিনা পয়সায় পেলেও দেয়া হয় না উপবৃত্তি, পোশাক বা খাতা। ব্যবস্থা নেই দুপুরের টিফিনেরও।
অধিকাংশ স্কুলেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করেন একজনমাত্র শিক্ষক।
শ্রমিকদের দাবি, লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক সংকট আর প্রতিবন্ধকতার কারণে লেখাপড়া করাতে পারছেন না। বেশির ভাগই প্রাথমিকেই ঝরে পড়ে। অর্ধেক মাধ্যমিক পর্যন্ত যায়। সেখানেও ঝরে পড়ে অর্ধেকের বেশি।
আরও পড়ুন: এই ঘর দিয়ে মাসে দেখানো হয় ২৩০০ টাকা মজুরি!
বেগমপাড়া বাগানের শ্রমিক মণি সাধু বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো খাবারই দিতে পারি না, লেখাপড়া কীভাবে করাব? বাগান থেকে একটা বই, খাতা কলম দেয়া হয় না। এত কম মজুরিতে কীভাবে লেখাপড়া করাব? ছেলেরা এখানে সেখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালায়। কিন্তু মেয়েরা কীভাবে রুজি করবে? তাই তারা হাইস্কুলে যায় না।’
সুরমা বাগানের অর্চনা বাউড়ি বলেন, ‘হাইস্কুলে গেলে অনেক টাকা লাগে। স্কুলের ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, বই-খাতা কিনতে অনেক সময় আমাদের সন্তানদের টাকা দিতে পারি না। তাহলে তারা কীভাবে লেখাপড়া করবে। আমাদেরও তো ইচ্ছে করে সন্তানদের লেখাপাড়া করাইতে। কিন্তু টাকার অভাবে পারি না। যাদের টাকা আছে, তারা শুধু লেখাপাড়া করাইতে পারে।’
‘মালিকদের উদ্যোগ লোক দেখানো’
চা বাগানের শিশুদের শিক্ষা সহায়তা প্রদানে কাজ করে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- একডো।
বাগানের শিক্ষার চিত্র প্রসঙ্গে সংস্থাটি নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চা বাগানের শিক্ষা কার্যক্রম মূলত লোক দেখানো। মালিকপক্ষ চুক্তি আর শ্রম আইনের শর্ত পূরণের জন্য নামমাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু রাখে। সেখানকার স্কুলগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
‘বেশির ভাগ স্কুলই এক কক্ষের। একটি কক্ষেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নেয়া হয়। তাও একজনমাত্র শিক্ষক দিয়ে। শিক্ষকের জন্যও আলাদা কোনো কক্ষ নেই এসব বিদ্যালয়ে।’
তিনি বলেন, ‘এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনও থাকে সামান্য। তাই ভালো মানের কোনো শিক্ষক বাগানের স্কুলে কাজ করেন না। ফলে সেখানকার শিক্ষার মানও খুব খারাপ। বাগানের স্কুল থেকে পাস করে আসা শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাইরের উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়ই টিকতে পারে না।’
চা শ্রমিকদের নিয়ে পিএইচডি করা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে মালিকদের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। স্কুলের নামে একটি ছাপড়া ঘর আর একজন শিক্ষক ছাড়া আর কিছুই নেই বেশির ভাগ বাগানে। শহর আর মহাসড়কের পাশের বাগানগুলো ছাড়া বাকিগুলোতে সরকারি বিদ্যালয়ও নেই।’
তিনি বলেন, ‘চা বাগান মালিকরাই তাদের হিসাবে দেখিয়েছেন, শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য দিনে ১.৫০ টাকা ব্যয় করেন তারা। এই যুগে দেড় টাকা দিয়ে কী শিক্ষা মিলবে?’
দায় সরকারেরও
লক্ষ্মীকান্ত এই অবস্থার জন্য সরকারকেও দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও ১৬৭ চা বাগানের মধ্যে মাত্র ১৫ থেকে ১৭ টিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাকি বাগানগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’
সরকার পরিচালিত সিলেটের লাক্কাতুরা বাগানে একটি এনজিও পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতা করেন জেনি পাল। তিনি জানান, পড়ালেখার ব্যাপারে শিশুদের আগ্রহ রয়েছে। তবে বাবা-মায়েরা শিক্ষার খরচ বহন করতে পারে না। ফলে পঞ্চম শ্রেণির পরেই ঝরে পরে বেশির ভাগ শিশু।
তিনি বলেন, ‘বাগানের প্রাথমিকের পর আর পড়ার সুযোগ নেই। বাইরের বিদ্যালয়গুলোতে পড়ার মতো টাকা তাদের নেই। তাই পঞ্চম শ্রেণির পর বেশির ভাগ শিশুই আর স্কুলে যায় না।’
পাঁচ বছর ধরে চা বাগানের শিশুদের নিয়ে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঊষা। এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নিগার সাদিয়া জানান, ‘অপুষ্টির কারণে চা বাগানের শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি অনেক কম। তারা কিছু মনে রাখতেও পারে না। এখানকার কোনো শিশুই তিন বেলা ভালো খেতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বাবা-মা কাজে থাকায় দুপুরে চা শ্রমিকদের ঘরে রান্নাবান্না হয় না। ফলে চা বাগানের প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য মিড ডে মিল চালু করা প্রয়োজন। অথচ মিড ডে মিল দূরে থাকা শিক্ষা উপকরণগুলোই পায় না তারা।’
বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের চম্পা নাইডু বলেন, ‘বাগানে শিক্ষা বলতে একটি ভাঙা স্কুলঘর। এক বা দুইজন শিক্ষক। যারা আবার যোগত্যসম্পন্ন নন। এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর শিক্ষার আর কোনো সুযোগ নেই। অনেক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নেই।’
কালাগুল চা বাগানের শ্রমিক রতন কৈরির ছেলে ওই বাগানের বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। রতন বলেন, ‘ছেলেটার পড়ালেখায় আগ্রহ আছে। আমিও তারে পড়াতে চাই। কিন্তু স্কুল থেকে তো বইখাতা কিছু দেয় না। এগুলো আমি কিনে দিতে পারি না। আর পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর তো নতুন স্কুলে ভর্তি ফি ও বেতন দিতে হবে। এগুলো কোথায় পাব?’
বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকা প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব জমি থাকা আবশ্যিক। কিন্তু বাগানের জমি তো ইজারা নেয়া। তাই বাগানগুলোতে সরকারি বিদ্যালয় করা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চা বাগানের জন্য এই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ফলে বাগানের অনেক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। আরও কিছু করার প্রক্রিয়ায় আছে।’
তিনি দাবি করেন, বাগানের ভেতরে সরকারি বিদ্যালয় না থাকলেও বাগানের আশপাশ এলাকায় দুই শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
তবু বদলাচ্ছে দিন
তবে ইদানীং কষ্ট করে হলেও সন্তানদের পড়ানোর দিকে ঝোঁক কিছুটা বেড়েছে। যে কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধার-দেনা করেও পাঠানো হচ্ছে সন্তানদের। তবে সেখানেও নানা বাধা।
হবিগঞ্জের বেগমখান বাগানের পরেশ বাগতি বলেন, ‘আমাদের বাগানের অনেক ছেলে কলেজে পড়ে। প্রতি বছর বাগান থেকে ১৮ থেকে ২০ জন ছেলে এসএসসি পাস করছে। কিন্তু কলেজ পর্যায়ে পড়তে গিয়ে অনেকেই ঝরে পড়ে। মেয়েরা কলেজ পর্যায়ে নেই বললেই চলে।’
কেউ কেউ অবশ্য কলেজ পেরিয়ে আরও দূরে যাচ্ছে, যাদের হাত ধরেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখছে শ্রমিকরা।
একই জেলার চাঁন্দপুর বাগান, বেগমখান, চন্ডিছড়া ও লস্করপুর চা বাগানের শিক্ষার্থীরা ৬ কিলোমিটার দূরে চুনারুঘাট কলেজ, দেওয়ন্দি বাগানের শিক্ষার্থীরা ৮ কিলোমিটার দূরের শায়েস্তাগঞ্জ কলেজ, আমু ও নালুয়া বাগানের শিক্ষার্থীরা ৭ কিলোমিটার দূরের আমরোড কলেজ এবং সুরমা, জগদীলপুর, নোয়াপড়া, তেলিয়াপাড়া বাগানের শিক্ষার্থীদের অন্তত ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের মাধবপুর কলেজে গিয়ে পড়তে হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ। তবে এর সিংহভাগই ছেলে। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করছে ২০ শতাংশ।
‘শ্রমিকরা এখন আগের চেয়ে সচেতন। তারা না খেয়ে হলেও সন্তানদের লেখাপড়া করাতে চান। যে কারণে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। এমনকি বিভিন্ন ভার্সিটিতে অন্তত ২০০ চা শ্রমিক সন্তান লেখাপড়া করছেন। আমি তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ছাত্র-যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বীরেন ভৌমিক বলেন, ‘বাগান থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া কিছু দেয়া হয় না। তাও সেই বিদ্যালয়গুলোতে একজনের বেশি শিক্ষক নেই। আধুনিক যুগে এসেও কি আমাদের সন্তানরা কেবল নাম-দস্তখতই শিখবে?
‘আমরা শিক্ষিত যুবকরা চা বাগানে শিক্ষার হার বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি মেয়েদেরকেও যেন কাজে না দিয়ে লেখাপড়া করানো হয় সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য