ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ইউপি নির্বাচনের সহিংসতায় বীভৎসভাবে প্রাণ হারিয়েছে আট মাসের সুরাইয়া আক্তার আশা। ঘটনার পাঁচ দিনেও হয়নি কোনো হত্যা মামলা, নেই আটক। আশাকে মারল কে, কীসের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও ধোঁয়াশা।
গত ২৭ জুলাই বিকেলে বাচোর ইউনিয়নের ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশাকে কোলে নিয়ে তার মা মিনারা আক্তার ভোট দিতে যান। মিনারার ভাষ্য অনুযায়ী, ভোট দিয়ে ফেরার পথে তিনি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় কেন্দ্রে ফল ঘোষণা হলে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকরা সংঘর্ষ বাধায় পুলিশের সঙ্গে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
এই সংঘর্ষের সময় প্রাণ হারায় আট মাসের আশা। মাথার খুলি উড়ে যায় তার। ওই রাতে আশার মরদেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ, থানা ঘেরাওসহ পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
স্থানীয় জনগণ ও আশার মা-বার দাবি, শিশুটি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।
ঘটনার রাতেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন, যার প্রতিবেদন সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এর আগে হাসপাতালে আশার মা-বাবাকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক।
ঘটনার রাতেই আশার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। পরদিন ২৮ জুলাই দুপুরে মরদেহ হস্তান্তর হলে পরিবার জানাজা শেষে আশাকে দাফন করে।
দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক হাবিবুর রহমান একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের গুলিতে নয়, আশার মৃত্যু হয়েছে কোনো ভোঁতা অস্ত্রের কোপে।
ফরেনসিক চিকিৎসকের এ পর্যবেক্ষণকে মিথ্যা দাবি করেছেন মিনারা আক্তার এবং স্থানীয় লোকজন। মিনারার দাবি, তার কোলেই গুলিতে বীভৎসভাবে প্রাণ হারিয়েছে আশা।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ফরেনসিক চিকিৎসক হাবিবুর নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের বক্তব্য দেননি। প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।
৩০ জুলাই সারা দিন ঘটনাস্থল ঘুরে ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ওইদিন কী ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
নিহত শিশুর মা মিনারার বক্তব্যের বরাতে একাধিক সংবাদমাধ্যম ঘটনার একেক রকম বিবরণ দিয়েছেন। কোনোটিতে বলা হয়েছে, গুলি লাগার পর মিনারার কোল থেকে ছিটকে পড়ে আশা আবার কোথাও বলা হয়েছে, ঘটনার সময় সে তার মায়ের কোলে ছিল না।
৩০ জুলাই আবারও মিনারা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তার দাবি, পুলিশের গুলিতেই তার কোলে মারা গেছে আশা, যা তিনি নিজেই দেখেছেন।
মিনারা বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, বেল মার্কেটের সামনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি বাসার সামনের রাস্তার ধারে তিনি আশাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে আরও কয়েকজন নারী ছিলেন। তার পাশেই ছিলেন জাহানারা বেগম নামে এক পরিচিত নারী।
মিনারা বেগম জানান, তার চোখের সামনেই আশার মাথায় গুলি লেগে মাথার খুলি উড়ে যায়। আশার চিৎকারও শোনেন তিনি এবং আশার গোটা দেহ রক্তে ভিজে যায়। এ সময় তারও দু-হাত রক্তে ভিজে যায়। তিনি অচেতন হয়ে গেলে আশাকে কে বা কারা কোল থেকে নিয়ে যায়, তিনি কিছু বলতে পারেন না। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে জ্ঞান ফেরে।
হাসপাতালে তোলা কিছু ছবি এসেছে নিউজবাংলার কাছে। সেখানে মিনারার পোশাকে কোনো রক্তের দাগ দেখেনি কেউ।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সেই পোশাকই পরে ছিলেন।
মিনারা জানান, ঘটনার দিন ভোটকেন্দ্রে তিনি এই জামা ও ওড়না পরে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। এসে তিনি পোশাকটি ধুয়েছেন।
তবে আশা নিহতের ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি মিনারা। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলে আর কিছু হবে না। আমরা বিষয়টি মীমাংসা করেছি।’
কার সঙ্গে মীমাংসা করেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্নাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টা দেখছেন।’
সেদিন সংঘর্ষের ঘটনার সময় মিনারার পাশে থাকা জাহানারা বেগমের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘গুলি লাগতে আমি দেখিনি। সে সময় গুলির আওয়াজ শুনেছি। চারদিকে ধোঁয়া ছিল। আর আমার চোখসহ গোটা শরীর ঝালাপালা করছিল। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমি সামনে থাকা একটি খড়ের ঢিবিতে শুয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর উঠে দেখি আমার হাতের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত আর মগজের টুকরা লেগে আছে। আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে পাশের বাড়িতে যাই।’
নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়ে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় আইয়ুব আলী। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় মিনারা পুলিশের গাড়ির দিকে ছিলেন আর বিক্ষোভকারীরা সামনের দিকে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে মসজিদের সামনে রাস্তার ওপর দাঁড়ানো ছিল একটি পুলিশের পিকআপ, তার একটু সামনে পুলিশের একটি মাইক্রো দাঁড়ানো। গাড়ির একটু সামনে লাঠি হাতে দাঁড়ানো ছিল পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা।
‘পুলিশের দিকে গাড়ির একটু পাশেই আশাকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো ছিলেন তার মা। যখনই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়, আমি বাড়ির ভেতরে চলে যাই এবং বাড়ির সদস্যদের মাটিতে শুয়ে পড়তে বলি। কারণ পুলিশ গুলি করছিল। আমি বাড়ি থেকে গুলির আওয়াজ শুনেছি। গুলিতে শিশুটির মাথার খুলি উড়ে যেতে পারে এমন ধারণা করছি।’
মোবাইল ফোনে তোলা সেদিনের একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে নিউজবাংলার কাছে। ফুটেজে দেখা গেছে, আশার মাথার খুলি, রক্ত বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। একটি টিনের বেড়ার প্রায় আট ফুট ওপরে পোস্টারেও রক্ত লেগেছে। ভিডিওটি কার করা তা জানা যায়নি। তাতে অনেককেই ‘বোমা মারা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করতে শোনা গেছে।
ভিডিওতে একটি ধাতব খোসার মতো দেখা গেছে, স্থানীয়রা যেটিকে বোমাজাতীয় কিছু বলে দাবি করেছেন।
তারা জানান, এদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ গজ এলাকাজুড়ে পুলিশের টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় কিছু দেখা যায়নি। গুলির আওয়াজ শোনা গেছে কয়েকবার। ভোঁতা দা দিয়ে শিশুটির মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় কোপ দিলে তার মা মিনারা আক্তার অবশ্যই দেখতেন। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছে আশা।
পুলিশের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেছেন, সেদিন রাবার বুলেট ছাড়া কোনো ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
সন্তান হত্যায় মামলা কেন করছেন না জানতে চাইলে মিনারা জানান, তাদের ভরসা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না। তিনি যেমনটা বলবেন, তেমনটাই মেনে নেবেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন আশার মা।
বাড়িতে না থাকায় আশার বাবা মো. বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে রানীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না বলেন, ‘যেন এলাকার মানুষ বিশৃঙ্খলা না করে এবং তাদের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য শান্ত থাকতে বলেছি। আমি মামলার বিষয়ে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলব।’
অন্যদিকে ঘটনার পর থেকে গ্রামে দেখা যাচ্ছে না পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের বা তার সমর্থকদের। তাদের বাসায় গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সময় নিহত আশাকে নিয়ে রাস্তা অবরোধ করা ও পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে থানা ঘেরাও করা কথিত চাচা আবু বক্করের বাড়িতে গেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় এখনও কোনো হত্যা মামলা হয়নি। রানীশংকৈল থানার ওসি জাহিদ ইকবাল জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।
আশার মরদেহের সুরহতালে কী ছিল জানতে চাইলে ওসি জানান, প্রতিবেদন তিনি দেখেননি।
রানীশংকৈলের এসি ল্যান্ড ইন্দ্রজিৎ শাহার উপস্থিতিতে সুরতহাল হয়েছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শরীরের আর কোনো ক্ষত ছিল না। মাথার ডান সাইডের অংশ উপড়ে গেছে, মগজ পাওয়া যায়নি।’
তবে কী ধরনের আঘাতে এমন হয়েছে- এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলছিলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় জানমাল রক্ষায় পুলিশ চার রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। রাবার বুলেটে মাথার খুলি উড়ে যাওয়ার কথা নয়। ছোট ছোট ছিদ্র হওয়ার কথা। যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে, আমি মন্তব্য করতে চাই না।’
ঘটনার পরদিন তিনি বলেছেন, ‘সারা দিন সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট চলেছে। ভোটের ফল ঘোষণা শেষে কেন্দ্র ত্যাগ করার সময় পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের মোবাইল টিম ও সদর সার্কেলের ওপর হামলা করে।
‘কিছু সময় পর পরিস্থিতি আরও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আমাদের সদস্যদের ওপর তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে। এতে পরিবেশ আরও বেশি খারাপ হওয়ায় জানমাল রক্ষায় পুলিশ চার রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে।’
আশার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহাবুব রহমানও জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন হলেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এদিকে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিব উদ্দীন একটি মামলা করেছেন শনিবার।
আরও পড়ুন:মহাসড়কে চলন্ত বাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে সারা দেশে।
কুষ্টিয়া থেকে মঙ্গলবার রাতে ছেড়ে আসা বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর একদল ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে সব যাত্রীকে বেঁধে ফেলে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা ও গয়না লুট করার পাশাপাশি এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বাসটি ঈগল পরিবহনের ছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাসটি ঈগল এক্সপ্রেস নামের আরেকটি কোম্পানির। এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারেও বাসের নাম ঈগল এক্সপ্রেস লেখা।
ডাকাতির মুখে পড়া বাসটিতে রাস্তা থেকে তিনবার টিকিটবিহীন যাত্রী তোলা হয় বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। তিন দফায় তোলা এই ১২ জনই ডাকাত দলের সদস্য বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রাজা মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
রাজার বাড়ি কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামে। টাঙ্গাইল-ঢাকা সড়কে ঝটিকা বাসের চালক রাজা টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি এবং এর চালক মনিরুল, সুপারভাইজার রাব্বী ও সহকারী দুলাল পুলিশের হেফাজতে আছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ছেড়ে যায় বাসটি। সেটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ভেড়ামারা, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যায়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ডাংমড়কা বাজারে ঈগল এক্সপ্রেসের দুটি কাউন্টার রয়েছে। এর একটি পরিচালনা করেন রাকিবুল ইসলাম। জুতার দোকানের পাশাপাশি তিনি কমিশন ভিত্তিতে বাসের টিকিট বিক্রি করেন।
রাকিবুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসটি কুষ্টিয়া শহরে যায় না। এটি দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কাউন্টার থেকে যাত্রী নেয়। এ জন্য প্রাগপুর, তারাগুনিয়া, হোসেনাবাদ, আল্লারদরগা, ভেড়ামারাসহ বিভিন্ন এলাকায় টিকিট বিক্রির কাউন্টার আছে।’
রাকিবুলের দাবি, নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে বাসে যাত্রী তোলা নিষেধ। তারপরেও বাসের চালক ও সহকারী রাস্তা থেকে যাত্রী তুলে সেই ভাড়া নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। বাস কর্তৃপক্ষ কখনো প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের চাকরি চলে যায়।
রাকিবুল বলেন, ‘সাধারণত নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানায় যারা চাকরি করেন তারা এই বাসে যাতায়াত করেন। ঈগল এক্সপ্রেসের মালিক সোলায়মান হকের বাড়ি পাবনা।’
ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটিতে নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে এর মালিক সোলায়মান হককে প্রশ্ন করেছে নিউজবাংলা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নেয়া পুরোপুরি নিষেধ। তারা (চালক-সুপারভাইজার-সহকারী) কেন কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নিল, সেটা আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এই রুটে কাছিঘাটা পর্যন্ত শেষ কাউন্টার। এর পরে সিরাজগঞ্জ রোডে গাড়ি চেক হয়। ওরা চেকের পর যাত্রী তুলেছে।’
এ ঘটনার পর ‘খুব পেরেশানিতে’ আছেন বলে দাবি করেন সোলায়মান হক। বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে রাখার নিয়ম অনেক দিন ধরে বন্ধ আছে বলেও তিনি জানান।
আসল ঈগলের নামে চলছে আরও দুটি কোম্পানি
ঈগল পরিবহনের নাম যুক্ত করে আরও দুটি কোম্পানি দেশে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। অন্য দুটি কোম্পানি হলো ঈগল এক্সপ্রেস ও ঈগল ফুলঝুড়ি। এসব পরিবহনে ঈগল নামটি অনেক বড় করে থাকায় নামের ছোট অংশটি অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়।
ঈগল পরিবহনের ব্যবস্থাপক নাজির আহম্মেদ জিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে গাড়িতে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেটি ঈগল পরিবহনের নয়। ওটা আসলে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন।
‘আমাদেরটা ঈগল পরিবহন। তারা ঈগল পরিবহনের নাম ব্যবহার করেছে। আরেকটা আছে ঈগল পরিবহন ফুলঝুড়ি। সেটাও আমাদের নয়।’
তিনি জানান, আসল ঈগল পরিবহনের মালিক দুই ভাই। তাদের নাম পবিত্র কাপুরিয়া ও অশোক রঞ্জন কাপুরিয়া। তাদের বাড়ি যশোর।
আরও পড়ুন:নড়াইলের লোহাগড়া থানার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের বাড়িঘরে লুটপাট। এমন অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে আকাশ সাহা নামের এক কলেজছাত্রের ফেসবুক আইডি থেকে গত ১৪ জুলাই বিতর্কিত কমেন্ট করার অভিযোগ ওঠে। এর জের ধরে পরদিন বিকেলে হামলা চালানো হয় দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়।
হামলাকারীরা গ্রামের গোবিন্দ সাহা ও দিলীপ সাহার বাড়ি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা অশোক সাহার দোকানসহ ১০টির বেশি বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করে। গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুনও দেয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি সাহাপাড়া মন্দিরের প্রতিমা, চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুর করেন।
গ্রামের রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শীবনাথ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে একদল ব্যক্তি এসে আকাশ সাহার বিচার দাবি করেছিল। তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে সব মিটমাট করে দেন। আকাশ সাহার বাবাকে থানায় নেয়া হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।
‘তবে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি দল মিছিল নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। তাদের হাতে রেঞ্জ, লোহার রড জাতীয় বস্তু ছিল। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার জন্য টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে এরপর তারা গ্রামের অভ্যন্তরের বাড়িঘর লুট করতে শুরু করে।’
আরও পড়ুন: ‘একাত্তরেও এখানে নিরাপদ ছিলাম, এখন নেই’
ওই সন্ধ্যায় একদল হামলাকারী ঢুকেছিল মালা রানী সাহার বাড়িতে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন তরুণ বয়সের ছেলে আমাদের বাড়িতে ঢোকে। আমি ও আমার ভাইয়ের মেয়ে বাড়ির পাকা ঘরটিতে আশ্রই নিই। সব লাইট বন্ধ করে খাটের তলায় গিয়ে লুকিয়ে থাকি।
‘তারা এসে ওই ঘরের দরজার তালাতে লোহার রড় দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ওরা বলছিল ঘরে যা আছে বের করে দে, তাহলে কিছু বলব না।’
মালা রাণী বলেন, ‘আমরা ভয়ে কোনো কথা বলিনি। দুইজনে থর থর করে কাঁপছিলাম, আর ভগবানকে ডাকছিলাম। তারা যদি কোনো ভাবে দরজার তালা ভেঙে ফেলে, তাহলে আমাদের কী হবে?’
‘এক পর্যায়ে তারা আমার আরেকটি ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে। সেই ঘরের আলমারিতে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও চার ভরি স্বর্ণের অলংকার লুট করে নিয়ে যায়।’
হামলাকারীরা ঘরের ভেতরে সব মালামাল তছনছ করে জানিয়ে মালা রানী বলেন, ‘আমার দুটি ছেলে ঢাকার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। তাদের কাছে পাঠাতে ওই টাকাগুলো ধার করে এনে রেখেছিলাম। এখন তাদের দেয়ার মতো কিছু নেই।’
হামলাকারীরা স্থানীয় দিঘলিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার সাহার বাড়িতেও লুটপাট চালায়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে তারা ৬৫ হাজার টাকা ও কিছু স্বর্ণের অলংকার লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়া টিভি, ফ্রিজ ও ঘরের ভেতরে থাকা একটি প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।’
দিলীপ কুমার সাহার প্রতিবেশী নিরাঞ্জন সাহা বলেন, ‘হামলাকারীরা আসার পর আমি একমাত্র সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। তারা এসে আমার বাড়ির জানালাতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে বলে এক লাখ টাকা দে। টাকা দিলে তোদের বাড়ি ভাংচুর করব না।
‘আমরা ভয়ে কেউ কথা বলিনি। তখন ভাঙা জানালা দিয়ে দেখতে পাই হামলাকারীরা দিলীপ সাহার বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকছে। ওরা বলছিল, টাকা ও স্বর্ণ ছাড়া আর কিছু নেয়ার দরকার নেই।’
হামলার সময় গ্রামের গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তার মা দীপালী সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে এক দল ব্যক্তি এসে বাড়ির সব লুট করে নেয়। পরে দল এসে দেখতে পায় ঘরের দরজা ভাঙা, তেমন কিছু নেই। তখন তারা বলে, এদের বাড়িতে আগুন ধরাতে হবে।
দিপালী বলেন, ‘ওরা চলে গেলে দেখতে পাই, ঘরের চালে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তখন আমি ও আমার ছেলে কাঁদতে শুরু করি। পাশের কিছু মানুষ এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।’
ওই দিন সন্ধ্যায় হামলাকারীরা গোপাল সাহাকে মারধরও করে। তিনি বলেন, ‘তারা এসে আমাকে বলে পাঁচ লাখ টাকা দে। টাকা না দিলে তোদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেব। এক পর্যায়ে তারা আমাকে মারধর শুরু করে। এতে আমার মাথা ফেটে যায়।’
গ্রামের রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শীবনাথ সাহা বলেন, ‘সবকিছু মিটমাটের পরেও সন্ধ্যায় হামলা হয়েছে। আকাশ সাহা ও তার বাবাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেছিল প্রশাসন। এর পরেও সন্ধ্যায় হামলাকারীরা সম্ভবত লুটপাট করতেই এসেছিল।’
হামলা ও লুটের ঘটনায় মামলা
সাহাপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটের ঘটনায় লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক মাকফুর রহমান ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা এলাকায় কয়েকটা মন্দিরে ইট পাটকেল ছুড়ে মন্দিরের বাইরে রাখা ১০ থেকে ১৫ টি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাংচুর করে।
একই সঙ্গে তারা দিলীপ সাহার বাড়িতে ঢুকে ফ্রিজ, টিভি ভাংচুর করে ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতিসহ নগদ ২০ হাজার এবং ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।
এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা গোবিন্দ সাহার বাড়িতে ঢুকে দুটি ঘরের একটিতে আগুন দেয়। এতে এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শিব শংকরের বাড়ির আসবাব ভাংচুর করে ১০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়।
অশোক সাহার দোকানে হামলা ও অনুপম সাহার দোকান ভাংচুর লুটপাটের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। এছাড়া হামলা ও ভাংচুর হয়েছে গৌতম সাহার মিষ্টি দোকান ও সমীর পালের খাবারের দোকানে।
লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আকাশ সাহাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে প্রশাসন আশ্বস্ত করলে সবাই চলে যায়। পরে কিছু জনগন উত্তেজিত হয়ে বাজারসহ সাহাপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় অতর্কিত হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিনের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তে করে জনরোষ সৃষ্টিকারী ও হামলা-লুটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
‘ইতোমধ্যে আমরা পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছি। তারা হলেন, সাইদ শেখ, রাসেল মৃধা, কবির গাজী, রেজাউল শেখ ও মাসুম বিল্লাহ। তারা লোহাগড়া থানার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।’
গ্রেপ্তার পাঁচজনকে সোমবার তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মিজানুর রহমান বলেন, ‘রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যাবে।’
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হেনা মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেআইনি ভাবে বাড়িঘর, দোকান ও ধর্মীয় উপাসনালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি, ভীতি প্রদর্শন ও ক্ষতিসাধন যারা করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের দুর্গাপূজা মণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধারের পর গত বছর ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মুখোমুখি হয় দেশ। অনুসন্ধানে পরে বেরিয়ে আসে ইকবাল হোসেন নামে এক যুবক গভীর রাতে কোরআন শরিফটি ওই মণ্ডপে রাখেন।
ঘটনার কয়েক দিন পর ইকবালকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ রাখায় সরাসরি জড়িত ইকবাল হোসেন এখন কারাগারে। তবে কোরআন রাখার ঘটনায় করা মামলায় আদালতে ৯ মাসেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।
এ মামলায় ইকবাল ছাড়া অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। মামলাটির ধারা নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।
দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত বছরের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
মণ্ডপে কোরআন রাখা এবং কুমিল্লা শহরজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২টি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে মাত্র দুটির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ইকবালেরটিসহ বাকি ১০টি মামলা রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
মণ্ডপে ইকবালের কোরআন রাখার মামলাটির তদন্ত করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হাকিম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ১৪ অক্টোবর মামলাটি সিআইডিতে আসে। এরপর শুরু হয় তদন্ত। এ মামলার প্রধান আসামি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার ইকবাল হোসেন ।
‘এ ছাড়া সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আছেন মণ্ডপে কোরআন দেখে ৯৯৯ খবর দেয়া নগরীর মৌলভীপাড়ার ইকরাম হোসেন ওরফে রেজাউল হক, দারোগাবাড়ীর মাজারের সহকারী খাদেম নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান ফয়সাল, তার সঙ্গী মো. হুমায়ূন কবির ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন আহমেদ বাবু।’
এ মামলায় ইকবাল হোসেন ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে আছেন বলে জানান আবদুল হাকিম।
এত দিনেও অভিযোগপত্র না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। তবে যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে তা ছিল পেনাল কোডের ২৯৫ ধারায়। এই ধারাটি জামিনযোগ্য। এ জন্য আমরা বিজ্ঞ আদালত ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা ২-এর কাছে মামলার ধারা পরিবর্তনের আবেদন করেছি।’
দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন বা অপবিত্র করা’র মতো অপরাধের ব্যাখ্যা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হাকিম জানান, তারা মামলার ধারা পরিবর্তন করে ২৯৫ (ক) করার আবেদন করেছেন। এই ধারার মামলা ‘জামিন অযোগ্য’ বলেও জানান তিনি।
দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে ওই শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কর্মকাণ্ড’-এর ব্যাখ্যা ও শাস্তির কথা রয়েছে। তবে ২৯৫ এর মতো এই ধারাতেও অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
ইকবালসহ এ মামলার পাঁচ আসামির সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। এখন শুধু মামলার ধারা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। সেটার অনুমতি পেলেই আমরা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়ে দেব।’
ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত শেষ করতে দেরি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আবদুল হাকিম জানান, সিআইডির তদন্ত করা মোট ছয়টি মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে পিবিআই-এর তদন্ত করা চারটি মামলার মধ্যে একটিতে একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি মামলা এখনও তদন্তাধীন। বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান।
এ ছাড়া দুটি মামলার তদন্ত করছে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, তাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
কুমিল্লার আদালত পরিদর্শক মো. মুজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিনের ঘটনায় মোট ১২টি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় মোট ৯৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। যাদের মধ্যে ইকবালসহ ৫৩ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৫০ জনকে।’
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে কতজন এখন কারাগারে বা জামিনে আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি আদালত পরিদর্শক মুজিবুর রহমান। তবে ইকবাল ছাড়া কেবল একজন এখন কারাগারে আছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে একটি সূত্র। কারাগারে থাকা ওই ব্যক্তি হলেন ফয়েজ আহমেদ।
পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ১৩ অক্টোবর সকালে ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ। পরে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের দীর্ঘদিনেও বিচারের মুখোমুখি করতে না পারার ঘটনায় হতাশ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি চন্দন রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণেই প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনায় দায়ীদের বিচার হলে দেশের অন্যত্র এখন একই ধরনের কাজ করার সাহস কেউ করত না। যতদিন এসব ঘটনার বিচার না হবে ততদিন এমন ঘটনা আরও ঘটবে।’
চন্দন রায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা বাঙালি হিসেবে একত্রিত হয়েছিলাম বলেই জয়ী হতে পেরেছি। স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ আজ স্বাধীন দেশেই আমরা হিন্দুরা বারবার হামলার শিকার হচ্ছি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বেসরকারি সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২২ সেশনে এমবিবিএস ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করা দুই শিক্ষার্থীকে অনৈতিকভাবে ভর্তির সুযোগ করে দিতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এ ভর্তি কেলেঙ্কারি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সমালোচনার মুখে মেধাতালিকা বদলে ফেলেছে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে করেছে তারা আরেক কারসাজি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে মিলেছে অনিয়মের ভয়ঙ্কর চিত্র।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছরের এমবিবিএস পরীক্ষার ন্যূনতম পাস মার্ক ৪০ হলেও সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দুই শিক্ষার্থীর একজন পেয়েছেন ১১ দশমিক ৭৫, অপরজন ১৮ দশমিক ২৫ নম্বর। দুজনেই ‘অকৃতকার্য’ হয়েছেন। অথচ সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে যোগ্যদের তালিকায় আছে দুজনেরই রোল নম্বর। ভর্তিযোগ্য প্রথম ৪৩ জনের তালিকায় দুই শিক্ষার্থীকে জায়গা দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা হয় গত ১ এপ্রিল। মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেন। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭৯ হাজার ৩৩৯ জন। পাসের হার ৫৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। সারা দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজে মোট আসনসংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। বেসরকারি ৭২টি মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে মোট আসন ১০ হাজার ৮২৯টি।
হিসাব অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা ৭৯ হাজার ৩৩৯ জনের মধ্য থেকে মেধাতালিকার শীর্ষ ১১ হাজার শিক্ষার্থী ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পাবেন। ফেল করা অথবা মেধাতালিকার শেষে থাকা শিক্ষার্থীদের সুযোগ নেই ভর্তির।
ধারাবাহিকভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পরে গত ৭ জুলাই দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো তাদের আসনসংখ্যা অনুযায়ী ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। এদিন ৭০টি আসনের বিপরীতে ৪৩ জন ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ। তাদের বাকি আসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ।
শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ১৪ থেকে ১৭ জুলাই সময় নির্ধারণ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে ভর্তিচ্ছু কয়েকজন শিক্ষার্থী ও দেশের স্বনামধন্য একাধিক চিকিৎসক নিউজবাংলার কাছে অভিযোগ করে জানান, ভর্তিতে দুর্নীতি করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি যে মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, অন্তত এমন দুজন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর আছে যারা পরীক্ষায় পাসই করেননি।
অভিযোগের সত্যতা জানতে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। মেডিক্যাল কলেজটি যে তালিকা ক্যাম্পাসের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়েছিল সেটির একটি ছবি সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ৪৩ জনের রোল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ১৪ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি হতে বলা হয়েছে।
ওই তালিকায় থাকা সন্দেহভাজন দুই শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ৯৯০৮৩৯২ ও ১৯১৪৮৪৭। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল যে সরকারি ওয়েবসাইটে আছে সেখানে এই দুই রোল নম্বরের তথ্য যাচাই করে পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর তথ্য। দেখা যায়, দুই শিক্ষার্থীর কেউই ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেননি।
তালিকায় থাকা ৯৯০৮৩৯২ রোল নম্বরের শিক্ষার্থীর নাম হুমাইরা বিনতে কবির রূপা। ১০০-তে তার প্রাপ্ত নম্বর ১১ দশমিক ৭৫। ফলাফল স্ট্যাটাসে উল্লেখ আছে ‘অনুত্তীর্ণ’। ১৯১৪৮৪৭ রোল নম্বরটি শিক্ষার্থী আফসানা মীমের। তার প্রাপ্ত নম্বর ১৮ দশমিক ২৫, ফলাফল স্ট্যাটাস ‘অনুত্তীর্ণ’।
কলেজ কর্তৃপক্ষের লুকোচুরি
দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস না করেও কীভাবে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তা জানতে নিউজবাংলার প্রতিবেদক মঙ্গলবার দুপুরে যান গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ ভবনে। সেখানে প্রথমেই নোটিশ বোর্ডের তালিকা যাচাই করতে গেলে দেখা যায় বোর্ডটি এখন ফাঁকা।
দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহাবউদ্দিন মেডিক্যালের দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে নোটিশ বোর্ড থেকে ওই তালিকাটি সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।
কলেজে ঈদের ছুটি থাকলেও মঙ্গলবার ব্যস্ততা দেখা যায় প্রশাসনিক ব্লকে। দফায় দফায় বৈঠকে ব্যস্ত কলেজ পরিচালনা পর্ষদ।
অন্যরা ব্যস্ত থাকায় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন কলেজটির হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মহিউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২২ সেশনে আসনসংখ্যা ৭০। নিয়ম অনুযায়ী ৫ শতাংশ অর্থাৎ চারটি আসন দরিদ্র মেধাবী কোটার, আর ২৮টি বিদেশি শিক্ষার্থীর কোটা। সে জন্য ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে মেধাতালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।’
তালিকাটি দেখতে চাইলে মহিউদ্দীন প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি রুমের বাইরে চলে যান৷ ফিরে তিনি জানান, গত ৭ তারিখ থেকে তালিকাটি নোটিশ বোর্ডে ঝোলানো আছে।
এরপর নোটিশ বোর্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ আগেও যে নোটিশ বোর্ড ফাঁকা ছিল সেখানে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ঝুলছে ঝকঝকে নতুন একটি মেধাতালিকা। সেটি যাচাই করে দেখা গেল, নিউজবাংলার কাছে থাকা আগের তালিকার সঙ্গে এই তালিকার কয়েকটি পার্থক্য আছে।
মেধাতালিকায় অন্যসব রোল নম্বর থাকলেও নতুন তালিকায় অনুত্তীর্ণ দুই শিক্ষার্থীর রোল নম্বর নেই। পাশাপাশি যোগ হয়েছে অন্য একজন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর রোল নম্বর।
আগের তালিকায় মোট ৪৩ জন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর উল্লেখ ছিল। এবারের তালিকায় পাওয়া যায় ৪২ জন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর।
তালিকা সংশোধন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দীন বলেন, ‘তালিকা সংশোধন করা হয়নি। এই তালিকা গত ৭ তারিখে যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, এখনও একইভাবে তা ঝুলছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘৪৩ জনের তালিকায় ৪২ জন কেন, সেটা আমি বলতে পারছি না। স্যাররা মিটিংয়ে আছেন, একটা ছোট্ট সমস্যা আছে, সেটা সমাধান করার জন্য। মিটিং শেষ হলে আমি তালিকার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য জানাতে পারব।’
অনুত্তীর্ণ দুই শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এই বিষয় নিয়েই স্যাররা মিটিং করছেন। আমাদের রেজাল্ট শিটটা এডিট করে, টেম্পারিং করা হয়েছে। কলেজের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এ কাজ। স্যাররা এখন মিটিংয়ে যাচাই করে দেখছেন আমাদের পক্ষ থেকে কোলো ভুল ছিল কি না। এ জন্য তালিকাটা নোটিশ বোর্ড থেকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, যাচাই-বাছাই শেষে আবার তা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।’
মেডিক্যাল কলেজের ভর্তির তালিকা এডিট করে সুনাম ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে বলে দাবি করা হলেও কেন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি হিসাবরক্ষণ বিভাগের এই কর্মকর্তা।
দুটি তালিকাতেই সই ছিল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মো. রুহুল আমিনের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের তালিকায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর রোল নম্বর নেই। আমাদের তালিকার ৪৩ জনই উত্তীর্ণ এবং মেধাতালিকায় তাদের অবস্থান আছে।’
তালিকার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘৪৩ জনের একটি তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছে, এখানে কোনো ধরনের সংশোধন করা হয়নি।’ তালিকায় ৪২ জনের রোল নম্বর আছে জানালে তিনি বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়, আমি খবর নিয়ে দেখব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে থাকা মেডিক্যাল অনুষদের ডিন ডা. শাহরীয়ার নবী শাকিল। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টা আমাদের কানে আসার পর আমরা সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এর কারণ জানতে চেয়েছি। তারা জানিয়েছেন, এটা একটা ভুল হয়েছে। তাদের যাচাই কমিটি ঠিকমতো আবেদন ফরমগুলো যাচাই করেনি। তবে এটা ইতোমধ্যেই সংশোধন করা হয়েছে।’
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ দেয়া নিছক ভুল নয়। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনা এর আগেও একাধিকবার ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এখানে অনিয়মের ঘটনা ঘটে। কলেজে দরিদ্র মেধাবী কোটায় যে চারজন শিক্ষার্থী নেয়ার সুযোগ আছে, তা পরিচালকরা নিজেরা ভাগ করে নেন। এই চার আসনে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে একেক জন শিক্ষার্থীর ভর্তির ব্যবস্থা হয়।
‘টাকার বিনিময়ে ভর্তিতে ফেল-পাস বিবেচনা করা হয় না। বিদেশি কোটা নিয়েও চলে রমরমা ব্যবসা। ২৮ জনের কোটায় বড় একটি অংশ ফাঁকা থাকে। তখন সেই সিটগুলো পরিচালকসহ কলেজের ঊর্ধ্বতনরা ভাগ করে নেন। সেসব সিটে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় ভর্তি চলে। মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে যারা ভর্তি হতে আসেন, তাদের অধিকাংশই ফেল করা।’
তালিকা সংশোধনের বিষয়েও তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে নিউজবাংলা। ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী কলেজের নোটিশ বোর্ড থেকে তাদের মুঠোফোনে প্রথম তালিকার ছবি তুলে তা সংরক্ষণ করেছিলেন।
তারা জানান, দুই শিক্ষার্থীর একজনের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কলেজ কর্তৃপক্ষ আগের তালিকা নামিয়ে ফেলে। তালিকার ৪৩ জন থেকে দুই শিক্ষার্থীর রোল নম্বর সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি উত্তীর্ণ একজন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর যোগ করে দেয়। ফলে ৪৩ জনের তালিকা রূপ নেয় ৪২ জনে।
যশোরে যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনিকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করছেন স্বজনরা। ধোনির সঙ্গে তার পূর্ববিরোধ ছিল।
স্বজনদের অভিযোগ, পূর্ববিরোধের কারণে ধোনিকে লোক দিয়ে খুন করিয়েছেন শামীম আহমেদ মানুয়া নামে সেই বিএনপি নেতা। তিনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক। তার সঙ্গে ধোনির বিরোধের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
কাদের দিয়ে খুন করানো হয়েছে, সেই নামও জানিয়েছেন স্বজনরা। পুলিশও একজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। স্বজনরা যাদের নাম বলেছেন, তাদের একজন সেই ব্যক্তি।
ঘটনার পর থেকে মানুয়া ও তার ঘনিষ্ঠ যুবকরা পলাতক।
মানুয়া তার মেয়েকে এক যুবলীগ নেতার কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই নেতাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই খুনের মামলার আসামি ছিলেন ধোনি। গত মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এই হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তিনজনকে খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। তারা কাছ থেকে দেখেছেন পুরো ঘটনাটি। ধোনিকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু যুবদল নেতাকে কোপানো থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
খুন চার থেকে পাঁচ মিনিটে, বর্ণনা তিন প্রত্যক্ষদর্শীর
এ সময় ঘটনাস্থলে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ক্লিনার আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে পিন্টু বিশ্বাস। পুরো ঘটনাটি তিনি দেখেছেন।
নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি সবার আগে ধোনিকে বাঁচাতে যান। কিন্তু পারেননি। তিনি এখন মর্মাহত।
তার বর্ণনা বলছে, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে ৪ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে। আর এই হত্যায় অংশ নেয় ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী তিন যুবক।
নিউজবাংলাকে পিন্টু জানান, মঙ্গলবার ১১টার একটু পর বাসার সামনে শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে ইউসুফের চা দোকান থেকে চা পান করেন ধোনি। পরে স্থানীয় শান্তি কমিটির অফিসে বসেছিলেন তিনি।
বেলা ১১টা ২০ বা ১১টা ২২ মিনিটের দিকে আনসার ক্যাম্পের দিক থেকে একটি রিকশায় করে ২০-২২ বছর বয়সী তিন যুবক এসে সেই অফিসের সামনে দাঁড়ায়।
সেই তিনজনের মধ্যে একজন অফিসের ভেতর থেকে ধোনিকে তার জামার কলার ধরে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর সড়কের মধ্যে তার ডান পায়ে রামদা দিয়ে কোপ দেন।
আহত ধোনিকে টানতে টানতে তার সামনে বৌরানী ফার্মেসির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি পড়ে যান। সেখানে দুই যুবক তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একজন ছুরিকাঘাত করতে থাকেন।
পিন্টু জানান, এই হত্যায় তিন যুবক থাকলেও গেঞ্জি ও টি-শার্ট পরা একজন পাহারা দিচ্ছিলেন।
তাদের সবার হাতে বড় হাঁসুয়া, একটি বড় রামদা ও দুজনের হাতে দুটি চাকু ছিল।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমার চোখের সামনে লোকটা মারা গেল। খুব ভালো মানুষ ছিল। বাঁচাতে পারলাম না।’
আপনি সেখানে কী করছিলেন- এমন প্রশ্নে পিন্টু বলেন, ‘চা খেয়ে আমিও দোকানে বসেছিলাম। তার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমি দৌড়ে যাই ধোনির কাছে। কাছে যেতেই ওই তিনজন পালিয়ে যায়।’
যেই পথ দিয়ে ওরা আসে, সেই পথ আনসার ক্যাম্পের দিকে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে পালিয়ে যায় তারা।
তিন যুবক যখন পালাচ্ছিল, তখন ধোনিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় স-মিল শ্রমিক শাহজাহান শেখ ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিক ফয়সাল হোসেন।
এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা যখন ধোনিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, তখন তিন যুবকের মধ্যে একজন বড় রামদা উঠিয়ে বলেন, ‘এগিয়ে আসলে তোদেরও লাশ ফেলে দিয়ে যাব। এখান থেকে চলে যা।’
এরপর হাঁটতে হাঁটতে ওই তিন যুবক চলে গেলে ধনির কাছে যান এই দুই জন।
ধনি তখন লুঙ্গি পরা। রক্তে তার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় স্বজনও স্থানীয়রা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধোনির স্ত্রী শারমিন আক্তার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘রান্না করছিলাম। তখন রাস্তায় চিৎকারের আওয়াজ শুনে বের হই। বের হয়েই দেখি তাকে কয়েকজন যুবক কুপিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাউকে চিনতে পারিনি।’
হত্যা মামলা ধোনির বিরুদ্ধেও
ধনি বিরুদ্ধেও হত্যা, সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা রয়েছে। যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দিনি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেজপাড়া ব্রাদার্স ক্লাবের সামনে হত্যার শিকার হন ইয়াসিন আরাফাত। এই মামলায় মাসখানেক আগে ধনি জেল থেকে বের হন।
মানুয়া নামে বিএনপির যে নেতার সঙ্গে ধনির বিরোধ ছিল, তিনি ইয়াসিন আরাফাতের শ্বশুর।
স্বজনের অভিযোগ মানুয়ার বিরুদ্ধে
ধোনির শ্যালক তপু রহমান এই হত্যায় মানুয়াকে সন্দেহ করছেন। তিনি হত্যায় অংশ নেয়া তিন যুবকের নামও বলেছেন। স্থানীয় যুবক রায়হান, রহিম, আকাশ বলে দাবি তার।
তপু বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম আহমেদ মানুয়া ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মানুয়াকে ধরতে পারলেই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে।’
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘শামীম আহমেদ মানুয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তার সঙ্গে ধোনির বিরোধ ছিল। তবে এটি হত্যার সঠিক কী কারণ সেটা বলতে পারছি না। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের পুলিশ শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবে এটাই প্রত্যাশা করি।’
হত্যার পর থেকে মানুয়া ও তার পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে তার বাড়িতে যেয়ে প্রধান ফটক বন্ধ পাওয়া যায়।
নজরুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী জানান, মানুয়া এবং তাদের কোনো স্বজন বাড়িতে নাই। এমনকি কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না।
খুনি পূর্ব পরিচিত, একজন চিহ্নিত: পুলিশ
স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যা হয়েছে বলে নিশ্চিত পুলিশ। কর্মকর্তাদের ধারণা, খুনিরা ধোনির পরিচিতই।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক রূপন কুমার সরকার বলেন, ‘জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ধনি হত্যায় প্রাথমিক তদন্তে রায়হান নামে একজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলে হত্যার জট খুলবে বলে ধারণা বাহিনীটির।
এই রায়হান বিএনপি নেতা মানুয়ার ভাগনে।
এলাকায় আতঙ্ক
এই হত্যার পর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে মানুষের উপস্থিতি আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আতঙ্কে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে এখনও রক্তের দাগ। সেখানে অস্থায়ী বেধিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃবৃন্দদের ফুলের শ্রদ্ধা জানানো ফুল পড়ে রয়েছে।
এদিন বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর বেজপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করা হয় ধোনিকে।
আরও পড়ুন:জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় সামনে এসেছে হেনোলাক্স কোম্পানির নাম।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এই নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নুরুল আমিনকে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক বলা হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেড় যুগ আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নুরুল আমিন বর্তমানে আমিন পোল্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। এর আগে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেছেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে।
ফেসবুকে নিজেকে ডা. এন আমিন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাবসায়িক জীবন শুরু করার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তিনি আগের পেশা থেকে সরে এলেও নামের আগে ডা. ব্যবহার করছেন।
ফেসবুকে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে সেগুলোর কার্যক্রম নেই। ঠিকানা হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরানা পল্টনের ‘হেনোলাক্স সেন্টার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি ঠিকানা রয়েছে।
নিউজবাংলা কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, সেখানে নুরুল আমিনের একটি কারখানা থাকলেও প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। কারখানাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি সেমাই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। প্রসাধনীর পরিবর্তে সেই কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে সেমাই।
কদমতলীতে নুরুল আমিনের আরেকটি ভবন রয়েছে। সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে আবাসিক ভবন হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এই ভবনের নিচতলায় কিছু দোকানও রয়েছে। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেশ কয়েক বছর ধরে নুরুল আমিনের কোনো প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।
কদমতলীর কারখানায় ভৌতিক পরিবেশ
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একসময়ের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে এখনও এক নামে হেনোলাক্স কারখানাকে চেনেন স্থানীয়রা। লোকমুখে কদমতলীর একটি অংশ হেনোলাক্স নামেই পরিচিত।
কদমতলীর মোহম্মদবাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথিত হেনোলাক্স কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর মূল কারখানা, এর পাশের আরও ১০ কাঠা জমিতে একতলা ভবন রয়েছে।
৯৮৭ মোহম্মদবাগ, কদমতলী- এই ঠিকানার মূল কারখানা ভবনটি তিনতলা। আলো নেভানো এবং ভেতর থেকে বন্ধ কারখানাটিতে ভূতুড়ে পরিবেশ দেখা গেছে। ভেতরে ছিলেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গেট খোলার অনুরোধ করলেও তিনি ঢুকতে দেননি।
ওই নিরাপত্তাকর্মী নিজের নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানার ভেতরে কেউ নেই। এটি এখন বন্ধ।’
কারখানা কবে বন্ধ হয়েছে এবং সেখানে কী উৎপাদন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সেমাই তৈরি করা হয়, তবে দুই-তিন দিন ধরে কারখানা বন্ধ।’
পাশের দোকানি আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই কারখানা দেখে আসছি। আগে এটা কদমতলীর মেরাজবাগে ছিল, পরে মোহম্মদবাগে আনছে। একসময় তো এই কারখানায় দিন-রাত কাজ চলত। ক্রিম-তেল এগুলা বানাইত। সারা এলাকায় কত সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যাইত।
‘কারখানার শ্রমিকও ছিল অনেক। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কারখানার শ্রমিক আর কাজকর্ম কমতে থাকে। এখন তো দেখি এইখানে সেমাই বানায়া ভ্যানে কইরা নিয়া যায়।’
আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা শেষে আবারও কারখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে মিন্টু নামের এক কাভার্ড ভ্যানচালকের দেখা পাওয়া যায়। তিনি হেনোলাক্স গ্রুপের একমাত্র কাভার্ড ভ্যানের চালক।
কারখানা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসায় লসের কারণে নুরুল আমিন সাহেব এই কারখানার এক অংশ এখন সেমাই কারখানাকে ভাড়া দিয়েছেন। অন্য অংশে অনেক বছর ধরে হেনোলাক্সের মেশিন ও যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে।’
মিন্টু বলেন, ‘আরও ১০ থেকে ১২ বছর আগেও কসমেটিকসের নিয়মিত প্রোডাকশন হতো এখানে। কিন্তু লসের পর একে একে হেনোলাক্স, আমিন ফুড ও আমিন হারবালের সব প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক দিন বন্ধই পড়েছিল কারখানাটি। গত দুই বছর ধরে একটি সেমাই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
‘তবে ব্যবসা মন্দার কারণে গত কয়েক দিন ধরে এখানে সেমাই উৎপাদনও বন্ধ। সেমাই কারখানার মালিক-শ্রমিক কেউ দুই দিন ধরে এখানে আসছেন না।’
নুরুল আমিনের সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে জানান মিন্টু।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য স্যার বেশ কিছুদিন ধরে এখানে আসেন না। কারখানা বন্ধ থাকলেও স্যার আগে কয়েক দিন পরপরই আসতেন। এখন মাঝেমধ্যে ম্যাডাম (নুরুল আমিনের স্ত্রী ফাতেমা আমিন) আসেন, গাড়ি নিয়ে আসেন একটু ঘুরে দেখে আবার চলে যান।’
গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় করা মামলায় নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
কদমতলীর ‘হেনোলাক্স ভবন’ দেয়া হয়েছে ভাড়া
ফেসবুকে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে কদমতলীর মেরাজনগরের একটি ঠিকানা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সেটি ‘হেনোলাক্স বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।
মোহম্মদবাগের কারখানা থেকে অটোরিকশায় মেরাজনগর বাজারে পৌঁছান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই এলাকার অন্য নাম ‘হেনোলাক্স মোড়’। স্থানীয়রা জানান, বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’ নামের ভবনটির কারণেই লোকমুখে এলাকাটির এমন নামকরণ।
এই ভবনের ঠিকানা: ১০৭৬, মেরাজনগর, কদমতলী। এলাকাবাসী জানান, এই ভবনেই হেনোলাক্সের প্রথম কারখানা ছিল, পরে সেটি মোহম্মদবাগে স্থানান্তর করা হয়। এখানকার কারখানা থেকেই নুরুল আমিনের উত্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮০ সালের পরে নুরুল আমিন সাহেব এই জায়গা কিনে কারখানা বানান। তখন উনি সারা দিন এখানে থাকত। অনেক শ্রমিক ছিল। হেনোলাক্স দিয়ে উনি খুব অল্প সময়ে নাম করে ফেলেন।
‘তখন তো এই এলাকায় বাড়িঘর তেমন হয়নি। আশপাশে ডোবা আর জঙ্গল ছিল। এখানে মানুষ খুব একটা যাতায়াত করত না। আমিন সাহেব এই কারখানা করার পর এখানে সারা দিন শ্রমিকের আনাগোনা থাকত। ওদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষও এখানে যাতায়াত শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ শুরু থেকে হেনোলাক্সের কারখানা দিয়েই এই এলাকাকে চেনে। এরপর আমিন সাহেব এই এলাকায় প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি কিনেছিলেন। এখন শুধু এই বাড়ি আর মোহম্মদবাগের কারখানাটার কথাই জানি। বাকি সম্পদ আছে কি না আমার জানা নাই।’
দেখা গেছে, পাঁচ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে চারতলা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’। এর নিচতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ওপরের তিনতলা আবাসিক ফ্ল্যাট আকারে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নিচতলায় একপাশে বাজার, অন্যপাশে সেলুন, মুদি দোকান রয়েছে। আর ওপরের তিনতলায় দুটি করে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
প্রতিটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন নুরুল আমিন। আর নিচের বাজার ও দোকান থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়।
একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আঞ্জুমান আরা নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বাড়ির মালিক হিসেবে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর নাম জানেন, তবে কখনও দেখেননি। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতি মাসে ভাড়া তুলে নিয়ে যান এবং বাড়ির দেখাশোনা করেন।
হেনোলাক্সের কথিত প্রধান কার্যালয়ও জনশূন্য
ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ৩/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ উল্লেখ করেছেন নুরুল আমিন।
সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির নাম ‘স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার’। এর তৃতীয় তলায় কথিত হেনোলাক্সের প্রধান কার্যালয়। আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ঠিকানা হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কক্ষটির বাইরের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের ঠিকানার ফোন নম্বরে কল করা হলেও কেউ ধরেননি।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে হেনোলাক্সের এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে কেউ আসেননি। এর আগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নিয়মিত অফিসে আসতেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের অফিসে আসতে দেখা গেছে।’
কাদের জানান, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক নুরুল আমিন। তবে স্কাই ভিউ ডেভেলপার কোম্পানি এর ওপর ১১ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের ৩৬টি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের ১৮টির মালিক নুরুল আমিন, বাকি অর্ধেক পেয়েছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান।
কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক রতন কুমারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পেরেছে নিউজবাংলা। তিনি মঙ্গলবার দাবি করেন, পাঁচ দিনের ছুটিতে তিনি গাজীপুর আছেন এবং অফিস বন্ধ থাকার কোনো তথ্য তিনি জানেন না। নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও সোমবার থেকে যোগাযোগ নেই রতনের।
গাজী আনিসের আত্মহত্যার বিষয়টি অবশ্য জানেন রতন কুমার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিউজে দেখেছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি, আমি আনিস নামের ভদ্রলোককে কখনও আমাদের অফিসে দেখিনি৷ ওনার নাকি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এমনটা হলে তার তো অফিসে আসার কথা এবং পুলিশেরও আসার কথা।
‘আমি এমন কিছু কখনও দেখিনি এবং আমাদের স্যার-ম্যাডামও এ বিষয়ে কখনও কোনো কিছু বলেননি। বিষয়টি জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।’
রতন কুমার বলেন, ‘হেনোলাক্স ১৯৮৪ সালে প্রথমে ত্বক ফর্সা করা ও মুখের দাগ দূর করার কয়েকটি ক্রিম নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করে। এরপর এর জনপ্রিয়তার কারণে হেনোলাক্সের মোড়কে নকল ক্রিমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা করেও নকল ক্রিমের বাজার বন্ধ করতে না পেরে ২০০৪ সালে এই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হেনোলাক্স কর্তৃপক্ষ।
‘এরপর নুরুল আমিন হেনোলাক্স ফুড নামে লাইসেন্স নিয়ে রেডি টিসহ দুই-একটি খাদ্যপণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। নুরুল আমিন ২০১২ সালে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের লাইসেন্স নিয়ে এর অধীনে বেশ কিছু প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তবে ২০১৯ সালের পর এই ব্যবসাতেও ধস নামে।’
রতন কুমার বলেন, ‘আমিন হারবালের উৎপাদনও বন্ধ, কোনো অর্ডার পাওয়া গেলে কেবল সেগুলো তৈরি করে সরবরাহ করা হয়।’
তিনি জানান, ব্যাবসায়িক মন্দার কারণে কদমতলীর কারখানাটি অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন নুরুল আমিন। এখন পুরানা পল্টনের ফ্ল্যাট ও কারখানা ভাড়া ছাড়া হেনোলাক্স গ্রুপের আর কোনো দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই।
রতন কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা আছি, তারা পল্টনের অফিসে বসি। আমি মূলত পুরানা পল্টনের ভবনটির ও কারখানার ভাড়া তুলি। আর মো. তসলিম উদ্দীন নামে আমিন হারবালের একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন। তিনি দৌড়াদৌড়ি করে হারবালের কিছু অর্ডার নিয়ে আসেন, এভাবেই চলছে।’
আমিন হারবাল লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন। তিনি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমিন হারবালের প্রসাধনীর প্রচার ও বিপণনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সোমবারের পর থেকে তাকেও অফিসে দেখা যায়নি। তসলিমের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নুরুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাদিম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের সবাই তাকে হেনোলাক্সের কর্ণধার হিসেবে চেনেন।’
ঢাকায় হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পরই নুরুল আমিনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে উল্লেখ করে নাদিম সরকার বলেন, ‘নুরুল আমিন সাহেব আমাদের এলাকায় সহজ-সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবার অতটা সচ্ছল ছিল না। শুনেছি আগে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তবে ঢাকায় গিয়ে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।
‘বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কামান। ঢাকাসহ নরসিংদীতে অনেক জায়গাজমি কেনেন। তবে আবার এই হেনোলাক্স লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বলে আমরা শুনেছি। হেনোলাক্স ছাড়া তার আর কোনো ব্যবসা আছে বলে আমার জানা নেই।’
নুরুল আমিনের শ্বশুরবাড়িও একই এলাকায় জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনার কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শুধু ঈদের সময় বছরে দুই-একবার গ্রামে আসেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য