নড়াইলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ নামে একটি সংগঠন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
একজন শিক্ষককে অপদস্থ করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতাদের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা গরিমা আছে। আমরা স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের আমাদের সমান স্ট্যাটাসের মনে করি না। কিন্তু খুব বেশিদিন নেই, আপনার গলায়ও জুতার মালা পরানো হবে। কাজেই আসুন, আমরা রুখে দাঁড়াই।’
সমাবেশের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘নড়াইলে এই ঘটনায় যদি আমার ভেতরে বেদনা কাজ না করে, তাহলে আমি শিক্ষক নই। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশন তাদের কাজটা আসলে কী? এভাবে কি শিক্ষকরা একের পর এক অপমানিত হতেই থাকবেন? শিক্ষক লাঞ্ছনা এখন শিক্ষক হত্যায় উপনীত হয়েছে।’
এই অধ্যাপক ক্ষেদের সঙ্গে বলেন, ‘আসুন, আমরা উদযাপন করি। শিক্ষকের প্রতি এই নিপীড়ন এবং হত্যাযজ্ঞকে আমরা উৎসবে পরিণত করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকরা এই দেশে আর বেশিদিন থাকতে পারবেন না। দশ বা বিশ বছর পর তাদের সংখ্যা এমনিতে কমে যাবে। কিন্তু এই কোমলমতি শিক্ষার্থী, যারা তাদের শিক্ষকদের মারছে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিচ্ছে, তাদের হাতেই কিন্তু বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তখন সেটা কোন দেশ হবে, সেটা কি আমরা ভাবব? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সকল বডির কাছে আবেদন জানাই, শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং দেশকে রক্ষা করুন।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরীফুজ্জামান শরিফ বলেন, ‘এই ঘটনার জন্য আমি নড়াইলের ডিসি এবং এসপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এই ঘটনা ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক কোনো ইস্যু নয়। এটি রাজনৈতিক ইস্যু। এই ইস্যুগুলো যত বেশি হয়, একটা অংশের ভোটের পারসেন্টেজ বাড়ে। বর্তমানে সরকারের গদিতে যারা বসে আছেন, তাদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়েই এই ঘটনাগুলো ঘটছে।’
শরিফ বলেন, ‘আমরা একসময় বলতাম, এই ঘটনাগুলোর জন্য সরকার দায়ী নয়। কিন্তু আমি এখন মনে করি, প্রতিটি ঘটনার জন্য সরকার দায়ী। সরকারের ইন্ধন এবং রাজনৈতিক ইক্যুয়েশনে প্রতিটি ঘটনা ঘটে। শাসক দলের কনসার্ন ছাড়া একটা ঘটনাও ঘটে না।
‘এখন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এর পেছনে রাজনৈতিক ইক্যুয়েশন আছে। সামনে নির্বাচন। সীমানার এপার এবং ওপারে এই ঘটনাগুলোর ইমপ্যাক্ট আছে। সুতরাং নড়াইলের ঘটনায় শেষ, এটি আমি বিশ্বাস করি না।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘এই ঘটনায় শিক্ষকরা চুপ। কারণ তারা এখন দাসত্ব করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে জয় বাংলা না বলে জিন্দাবাদ বলা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কারবালার কাণ্ড ঘটে গেল। অথচ এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে ফেডারেশন একটা কথাও বলল না। কারণ শিক্ষকদের বিরাট অংশ শিক্ষকতার চেয়ে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ এর মাধ্যমে হল প্রভোস্ট, হাউস টিউটরসহ পদ পাওয়াসহ তার ইহজাগতিক অনেক সুবিধা আসবে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে সাবেক এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার জন্য যারা বসে আছেন, তাদের জিজ্ঞেস করা দরকার এসব ঘটনায় আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী? পাহাড় ধসলে, ভারতে বৃষ্টি হলে আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু সারা বাংলাদেশে টার্গেট করে স্কুল-কলেজের হিন্দু শিক্ষকদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, এই বিষয়ে আপনারা নীরব কেন? আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধারাবাহিকভাবেই এসব ঘটে আসছে। যে পুলিশ রক্ষা করবে, তার সামনে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কারণ যিনি পুলিশের পোশাক পরে আছেন, তার ভেতরেও ধর্মান্ধতা। গান, চারুকলা, কবিতা, শিল্পসাহিত্য সব হারিয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্ত সময়েও যদি আমাদের বোধদয় না হয়, তাহলে পরাজয়ের জায়গা আরও সম্প্রসারিত হবে।’
নিপীড়নবিরোধী শাহবাগের সংগঠক রবিন আহসান বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশকে ডেকেছেন নিজের নিরাপত্তার জন্য, কিন্তু সেই পুলিশের সামনে তাকে হেনস্তা, অপমানের শিকার হতে হয়েছে। সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হতভাগ্য বাংলাদেশ আমি ৪৯ বছরে দেখিনি।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘একাত্তরের মধ্য দিয়ে আমরা যে বাংলাদেশটা পেয়েছি, এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। বাংলাস্তান হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের মতোই এটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গিয়েছে। মনে হয়েছে, এ মালা আমাকে পরানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন কোনো বিবৃতি দেয়নি। এতে বোঝা যায়, তারা এটি পাশ কাটাতে চায়। তারা দলান্ধ, তারা দলের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না, অ্যাকশন নিতে পারবেন না। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে নড়াইলের ডিসি, এসপি এবং অফিসার ইনচার্জ, থানা এবং যে সমস্ত পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন, তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির দাবি জানাই।’
যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক কাজল কুমার দাস, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রনজিত দেব, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়জুল্লাহ, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাবিব আদনান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিদ রঞ্জন দে প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক।
উপজেলা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে, আগামী ৮ মে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।’
মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটজনেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’
নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেকেই এখনও নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।’
ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
আসন্ন জুলাইয়ের আগেই পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে নগরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা জানান।
মেয়র তাপস বলেন, পান্থকুঞ্জ উদ্যান এই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান। এটা উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মেগা প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কারণে ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়ে এদিক দিয়ে নওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এই পার্কের উন্নয়ন কাজটা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছি, দেন-দরবার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে তারা সুনির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করবে। বাকি জায়গা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় আমরাই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে এটার অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ঢাকাবাসীকে একটি নান্দনিক উদ্যান উপহার দিতে চাই। যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে উদ্যানের বড় একটা অংশ তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি তা ঢাকাবাসীর জন্য অচিরেই উন্মুক্ত করে দিতে পারব। পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে।
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, গত বছর কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিশেষ করে নিউমার্কেটের সামনে ও শান্তিনগরে। যেসব কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমরা সেগুলো পরিষ্কার করেছি। আশা করি এবার আর জলাবদ্ধ থাকবে না। নিউমার্কেট এলাকার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে পিলখানা ভেতর দিয়ে আগে যে পানি প্রবাহ প্রবাহের নর্দমা ছিল সেগুলো ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য গত বছর সেখানে বড় ধরনের জলবদ্ধতা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সম্মতি পেয়েছি। আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের বড় নর্দমা করছি। এটা করতে পারলে ওই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে সূচি অনুযায়ী বক্স কালভার্ট, খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে থাকি। কারণ যাতে করে বর্ষার সময় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া ঢাকা শহরে আমরা ব্যাপকভাবে নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রেখেছি।
পরে মেয়র সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংলগ্ন সায়েদাবাদ সুপার মার্কেট, গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পাঠাগার ও ওয়ারীর তাজউদ্দীন স্মৃতি পাঠাগার পরিদর্শন করেন।
মন্তব্য