রাজধানীর হাতিরঝিলকে মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস বন্ধে উচ্চ আদালত পরামর্শ দিলেও তা মানতে নারাজ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ নিয়ে তারা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছে।
২০১৬ সালের বিজয় দিবসে হাতিরঝিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল শুরু হয়। চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও জনপ্রিয় হওয়ায় এখন চলছে ১৫টি ট্যাক্সি। শৌখিন বিনোদনপিপাসুদের পেরিয়ে এটি এখন জরুরি পরিবহন সেবায় পরিণত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ওয়াটার ট্যাক্সি। চারটি স্পট থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার যাত্রী চলাচল করেন। এগুলো হচ্ছে এফডিসি মোড়, পুলিশ প্লাজা, গুদারাঘাট ও রামপুরা।
হাতিরঝিলকে ঘিরে ৩৬টি রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসেন হাজারও মানুষ।
ওয়াটার ট্যাক্সির সঙ্গে মাছের কী সম্পর্ক এমন প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা। তারা ওয়াটার ট্যাক্সির সেবা পেতে আগ্রহী।
সজিব দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার অফিস গুলশান-১ নম্বরে। বাসা এফডিসির পাশে। মহাখালী হয়ে গুলশান যেতে অনেক যানজট পোহাতে হয়। আর ওয়াটার ট্যাক্সিতে গুদারাঘাট নেমে দুই মিনিট হাঁটলেই আমার অফিস। এ কারণে ওয়াটার ট্যাক্সিতে সুবিধা হয় আমার।
‘হাতিরঝিল একটা পার্কের মতো। এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। তারা হাতিরঝিলের পানিতে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন। কিন্তু লেক মাছের অভয়ারণ্য করতে ওয়াটার ট্যাক্সি কেন বন্ধ করতে হবে বুঝলাম না। ওয়াটার ট্যাক্সির সঙ্গে মাছের কী সম্পর্ক? এখানের পচা পানিতে এমনিতেই মাছ নাই।’
আরেক যাত্রী মো. হেলাল বলেন, ‘আমার বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। অফিস বসুন্ধরা সিটিতে। অফিস থেকে বাসায় যেতে গাড়িতে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, সেই ভোগান্তি ওয়াটার ট্যাক্সিতে পোহাতে হয় না। আর ওয়াটার ট্যাক্সিতে অনেক শান্তিতে যাতায়াত করতে পারি। ওয়াটার ট্যাক্সি চললে মাছের কোনো ক্ষতি হয় বলে আমার মনে হচ্ছে না। যদি ময়লা আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলতে পারি, তাহলে মনে হয় না মাছের কোনো ক্ষতি হবে। গাড়ির চেয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিই বেস্ট।’
ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচলে যদি মাছের ক্ষতি হয় বা ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধে যদি ভালো কিছু হয় তবে হাইকোর্টের আদেশ মানতে রাজি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড পড়ুয়া ছাত্রী সুলতানা রাজিয়া।
তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণিতে এত জ্যাম থাকে, এই কারণে ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাওয়া-আসা করি। এক ঘণ্টার রাস্তা অনেক সময় আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। ওয়াটার ট্যাক্সিতে সময় বাঁচে। পাশাপাশি আরামদায়ক।
‘যদি ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধ করে জায়গাটা মাছের অভয়ারণ্য করা যায়, যদি ভালো কিছু হয়, সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আমাদের মানতে হবে। আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বলব, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য যদি ভালো কিছু হয় তাহলে অবশ্যই আমরা ওয়াটার ট্যাক্সি পরিহার করব।’
হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি ও চারটি রেস্টুরেন্ট রাজউকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছে করিম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘হাতিরঝিল হসপিটালিটিস’। ওয়াটার ট্যাক্সি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি এখনও রাজউক থেকে দেয়া হয়নি বলে জানান এটির মহাব্যবস্থাপক ড্যারিল ফ্রেসার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করিম গ্রুপ রাজউকের কাছ থেকে ওয়াটার ট্যাক্সি ও চারটি রেস্টুরেন্ট ইজারা নিয়েছে। রাজউক ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধের বিষয়ে অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানায় নাই। বুধবার আমাদের শুধু বলেছে, হাইকোর্টের আদেশ ও পরামর্শের বিষয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমাদের রেস্টুরেন্টে এসে বলে গেছেন বিষয়টা। রেস্টুরেন্ট থেকে আমাদের জানিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। কিছু জানতে হলে রাজউকে যোগাযোগ করেন।’
হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিপক্ষে রাজউক আপিল করবে। খুব শিগগিরই এই আপিল করা হবে। আপিল শুনানি শেষে যে রায় আসবে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
উচ্চ আদালতের পরামর্শে যা ছিল
গত বছরের ৩০ জুন হাতিরঝিল নিয়ে একটি রিটের শুনানি শেষে রায় প্রকাশ করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। ৫৫ পৃষ্ঠার রায়টি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন ও নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয় রায়ে।
এতে বলা হয়, পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া লেক মাছের অভয়ারণ্য করার জন্য ক্ষতিকর সব ধরনের যান্ত্রিক যান বা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয় রায়ে। পাশাপাশি প্রকল্পটি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করার পরামর্শ এসেছে রায়ে।
আরও পড়ুন:
বাজার খরচ পাঁচ টাকা। আর ওই সামান্য টাকায় মিলেছে ৯ ধরনের খাদ্য উপকরণ। আর এই বাজারের ক্রেতারা সবাই সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ।
শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগরীর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পাকা রাস্তায় বসেছিল এই বাজার। ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব) নামের একটি সংগঠন পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন করেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পুলিশের কনস্টেবল এস এম আকবর। সংগঠনটি পরিচালনাকারী অন্যরাও পুলিশের সদস্য। চাকরির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষও যুক্ত হয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তায় হাত বাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানে হাজারও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ক্রেতারা পেয়েছেন ৩ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি করে চিড়া, ছোলা, চিনি, মুড়ি, পেঁয়াজ এবং আধ কেজি করে খেজুর ও তেল। কার্যক্রম শুরুর দিনে প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে এসব উপকরণ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
কেএমপি কমিশনার এ সময়ে বলেন, ‘ওয়াব নামের সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পুলিশের চাকরি করার পাশাপাশি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এটা মানবিক পুলিশিং কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। এই সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ইতোপূর্বেও বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘সংকটাপন্ন রোগীকে বিনামূল্যে রক্তদান, গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়াসহ শিক্ষার খরচ বহন, দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান এবং প্রাকৃতিক প্রতিটি দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে থাকেন।’
ওয়াব-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সেবামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একটি মানুষ তার কর্ম দিয়েই কিন্তু প্রমাণিত হয়; সে কী চাকরি করে তা দিয়ে প্রমাণিত হয় না। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই পরমাত্মা তথা স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও একটি ইবাদত।’
সামাজিক সংগঠন ওয়াবের অ্যাডমিন সরদার মসনুর আলী বলেন, ‘রমজানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হবে। খুলনা থেকে এর উদ্বোধন হলো। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছেন না তারা পাঁচ টাকার বিনিময়ে এসব উপকরণ পাবেন। এছাড়া যাদের পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন, যাতে গ্রঈতা সামাজিকভাবে নিজেকে হেয় মনে না করেন।’
গড়াই নদীর ভাঙন থেকে নিজেদের ঘরবাড়ি, ফসলি খেতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রক্ষায় নিজ উদ্যোগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দোরাননগর গ্রামের বাসিন্দারা।
নদীভাঙনের আশঙ্কা মাথা নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যেতে হয় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছরে ভাঙনে এ গ্রামের গড়াই তীরবর্তী বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি খেত বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন রোধে শুক্রবার প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন দোরাননগর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী।
এলাকাবসী জানান, গত বর্ষা মৌসুমে তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত পাঁচ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার এ বিষয়ে আবেদন করেও কোনো ফল পাননি তারা। যে কারণে উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেরাই এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
দোরাননগর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী রথীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘প্রতি বছর গড়াই নদীর ভাঙনে আমাদের দোরাননগর গ্রামের রাস্তা, বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সমাজের বিত্তবান মানুষের আর্থিক সহায়তায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশ, কাঠ দিয়ে ৮টি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটির রুপান্তর ঘটিয়ে এবার নতুন করে ইট, বালু, রড দিয়ে তৈরি কংক্রিটের পিলার দিয়ে সেটিকে মজবুত করা হচ্ছে।’
এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে গোটা গ্রাম নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা ডা. পঙ্কজ কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা ভাঙনের মুখে পড়ছি। এতে বাড়িঘর রাস্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যে কারণে এবার ইট বালু, সিমেন্ট, লোহার রড দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নেই এটি করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্র জানলাম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভুজা বটতলা গ্রামের জিয়াউল হক এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। অতিসাধারণ মানুষটি সমাজ সেবায় অনন্য অবদানের জন্য পর্যাদাপূর্ণ এই পদক হাতে নিতে যাচ্ছেন।
গ্রামের এই সাদাসিধে মানুষটি শিক্ষার আলো ছড়াতে গড়ে তুলেছেন একটি পাঠাগার। ১৯৬৯ সালে নিজ বাড়িতেই গড়ে তোলেন জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার। শুধু পাঠাগারই নয়, নানা প্রয়োজনে মানুষের পাশে থাকছেন। সামাজিক কাজে তিন কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছেন এই সাদা মনের মানুষ।
জিয়াউল হক বলেন, ‘ভালো কিছু করলে যে ভালো কিছু পাওয়া যায় তার প্রমাণ পেলাম। আমাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সম্মান জানানো হবে এটা জানার পর থেকে মন থেকে আনন্দিত হয়েছি। এ বয়সে একুশে পদকের মতো এতো বড় সন্মান পেয়ে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি।’
বেচি দই কিনি বই
সাদাসিধে মানুষটি পেশায় দই বিক্রেতা। এক সময় সাইকেলে ঝুড়ি মাথায় নিয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে দই বিক্রি করতেন। ৯১ বছর বয়সে এসেও তার রুটি-রুজির অবলম্বন দই বিক্রি।
জিয়াউল হকের দইয়ের খ্যাতি জেলা জুড়েই। খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে দই বানানো। সেই সততার কারণেই ভোক্তাদের মনে জায়গা করে নেয় জিয়াউল হকের দই। অনেকেই তার দই কেনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত ছুটে যান।
দই বিক্রি করে সামান্য আয় থেকেই এলাকার হতদরিদ্র তরুণদের মূলত পাঠ্যবই কিনে দিতেন জিয়াউল হক। নিজে অভারের কারণে পড়ালেখা করতে না পারার আক্ষেপ তার বরাবরের। গ্রামের কারও পড়ালেখা যাতে অর্থের অভাবে বন্ধ না হয়ে যা, সেই ভাবনা থেকেই পাঠ্যবই কিনে দেয়া শুরু করেন জিয়াউল হক।
বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পাঠাগার গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা এলাকার বটতলা গ্রামে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে গড়ে ওঠে তার পাঠাগার। ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’ নামে সেই পাঠাগার দিন যত গড়িয়েছি ততই আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এ পাঠাগারে ২০ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে।
জিয়াউল হকের দেয়া বই পড়ে আজ তারা শিক্ষক
জিয়াউল হকের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ে শিক্ষক হয়েছেন ভোলাহাট উপজেলার পীরগাছি দারুস সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার মজিবুর রহমান (৫৯) ও মুসরীভূজা ইউসুফ আলী হাইস্কুল এন্ড কলেজের আজিজুল হক (৪৫)।
তারা জানান, জিয়াউল হকের কাছ থেকে পাঠ্যবইসহ সার্বিক সহযোগিতা না পেলে তারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন না। এ জন্য তাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। জিয়াউল হক একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার খবরে তারা খুবই আনন্দিত।
শুধু এ দুজনই নন, আরও অনেকেই পড়ালেখা করেছেন জিয়াউল হকের পাঠাগারের বই নিয়ে।
জিয়াউল হক বলেন, ‘১৯৬০ সালে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণের কাজ শুরু করি। এখনও তা চলমান।’
মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন সাড়ে তিন কোটি টাকা
পেশায় দই বিক্রেতা, সাদাসিধে জিয়াউল হক সামাজিক নানা কল্যাণ কাজে এ পর্যন্ত খরচ করেছেন সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অসহায় মানুষের ঘর নির্মাণ, টিউবওয়েল স্থাপন, মসজিদ, কবরস্থানের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণসহ নানা খাতে তিনি ব্যায় করেছেন এই টাকা। জিয়াউল হকের সততার কারণে অনেকেই তার কাছে অনুদান পাঠিয়েছেন। সেসব সহযোগিতা গ্রহণ করে তিনি জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করেছেন।
জিয়াউল হক বলেন, ‘স্কুল-কলেজে বই বিতরণ, অসহায় মানুষের ঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে যে সহযইগতা করেছি তার মধ্যে দেড় কোটি টাকাই দিয়েছেন আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বাকিটা দই বিক্রি করেই করা।’
পদকের অর্থে বানাবেন পাঠাগারের ঘর
জিয়াউল হকের নিজ বাড়ির একটি ঘরেই কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার পাঠাগারের। বিকেল বেলা অনেক শিক্ষার্থী বই পড়ার জন্য আসেন। কিন্তু তাদের বসার স্থান সংকুলান হয় না। পাঠাগারের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা অনেক দিন থেকেই করছেন তিনি। কিন্তু পেরে উঠছিলেন না। তাই পদক থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই পাঠাগারের পরিসর বাড়ানোর চিন্তা গুণী এই মানুষটির।
পদকের অর্থ দিয়ে কী করবেন- এমন প্রশ্নে তাই জানালেন, ‘পাঠাগারে জায়গার সংকুলান হয় না। আরও একটি ঘর করতে পারলে ভালো হয়। এ অর্থ দিয়ে পাঠাগারের আরও একটি ঘর বানাব।’
ব্যক্তি-জীবন
মরহুম তৈয়ব আলী ও শরীফুন নেসা দম্পতির ছেলে জিয়াউল হকের জন্ম ১৯৩৮ সালে। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী সারাবান তহুরার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা হককে নিয়ে বটতলা গ্রামে বসবাস করছেন।
আনন্দের বন্যা চাঁপাইনবাবগঞ্জে
একুশের পদকের জন্য সাদামনের মানুষ মনোনীত হওয়ায় আনন্দের বন্য বয়ে যাচ্ছে উপজেলা ভোলাহাটসহ গোটা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকেই তার ছবি পোস্ট দিয়ে জানাচ্ছেন অভিনন্দন। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই ফুল দিয়ে যাচ্ছেন জিয়াউল হকের বাড়িতে।
বুধবার তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস। জেলা স্কাউট সম্পাদক গোলাম রশিদের অভিব্যক্তি, সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন পাওয়ায় জেলাবাসী গর্বিত ও আনন্দিত। তার এ সম্মানপ্রাপ্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামটাও উজ্জ্বল হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যোগ্য একজন মানুষকেই একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তিনি দই বেচে বই কিনে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে এবং গরিব ছাত্রদের মাঝে বই বিলি করে সাদা মনের মানুষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সমাজসেবায়ও অনন্য অবদান রেখেছেন এই গুণী। তার এই প্রাপ্তিতে জেলাবাসী গর্বিত।’
আরও পড়ুন:দেশের ই-লার্নিং ইতিহাসে অ্যালামনাইদের নিয়ে বড় মিলনমেলা হয়ে গেলো রাজধানী ঢাকায়। ‘একসাথে সমৃদ্ধি’ (Thrive Together) থিমের ওপর ভিত্তি করে শনিবার রাজধানীর ফরটিস ডাউনটাউন রিসোর্টে এলামনাই আপলিফট প্রোগ্রাম আয়োজন করে কোচ কাঞ্চন।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোচ কাঞ্চন একাডেমির পাঁচ শতাধিক অ্যালামনাই অংশ নেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা, করপোরেট লিডার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবী।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে সকালে ব্রেইন সায়েন্সের ওপর স্পেশাল সেশন নেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক হ্যাপিনেস কোচ ও ব্রেইন ট্রেইনার কোচ কাঞ্চন।
দ্বিতীয় অংশে দুইবারের রকমারি বেস্টসেলার লেখক কোচ কাঞ্চনের পঞ্চম বই ‘ক্যাশ মেশিন’-এর উদ্বোধন হয়।
সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে একাডেমির বিভিন্ন পর্যায়ের ১০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ ও পাঁচজনকে ‘এমপ্লয়ী অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়।
মিলনমেলায় বক্তব্যে কোচ কাঞ্চন বলেন, ‘আমি অনেক লস করে ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে আজকের সফল অবস্থানে এসেছি। আমি চাই না আমার মতো আপনারাও এতো কষ্ট করেন। তাই তো আমার সব লার্নিং আপনাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত শেয়ার করছি। এই মিলনমেলা বাংলাদেশের ই-লার্নিং ইতিহাসে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করলো। ইতিহাসের এই পথ বেয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর। এই আয়োজন ই-লার্নিং সম্পর্কে মানুষের আস্থা বাড়াবে।’
২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী কোচ কাঞ্চন একাডেমির বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেস। কোচ কাঞ্চনের বই পড়েছেন ৫০ হাজারের বেশি পাঠক।
কোচ কাঞ্চন একাডেমির এই মেগা মিলনমেলা ছিল পারস্পরিক সু-সম্পর্ক তৈরি ও হাতে হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ।
লোকগীতির বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ জানুয়ারি সোমবার নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে শুরু হচ্ছে ‘হাশেম লোক উৎসব-২০২৪’।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে হাশেম লোক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বিকেল ৪টায়। নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দু’দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন।
মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন জানান, এবারের উৎসবে শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২৪ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম। এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ ভূমিকার জন্য হাশেম লোক উৎসব-২০২৪ সম্মাননা দেয়া হবে দু’জনকে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে মোহাম্মদ হাশেম পদক ও সম্মাননা দেয়া হবে।
এর আগে বিকেল ৪টায় একই মঞ্চে ‘লোকগীতির জাদুকর মোহাম্মদ হাশেম’ শিরোনামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন নোয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু।
এদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে শুরু হবে সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান। রাত ১০টায় কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ প্রদান করা হবে।
হাশেম লোক উৎসব-২০২৪ উপলক্ষে ‘লোকগীতির জাদুকর মোহাম্মদ হাশেম’ শিরোনামে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।
নোয়াখালীর প্রধান সংগীত খ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়াল ডিস্ট্রিক ভাই/ হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’সহ হাজারও গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মোহাম্মদ হাশেমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি। তার জন্মস্থান নোয়াখালী সদরের চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে।
মোহাম্মদ হাশেম ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান সংগঠক হিসেবে তার পেশাজীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সংগীত কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতার পর তিনি ২০০৫ সালে নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর নেন।
২০০৫ সালে অমর একুশে বইমেলায় উৎস প্রকাশন বের করে মোহাম্মদ হাশেমের গানের প্রথম সংকলন ‘নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। এরপর ২০১৫ সালে মোহাম্মদ হাশেমের রচিত বাছাই করা আড়াই শ’ গান নিয়ে উৎস প্রকাশন বের করে ‘নির্বাচিত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’।
মোহাম্মদ হাশেম ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মাইজদী শহরের বড় দিঘির উত্তর পাড়ে কোর্ট মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের লেখা গান চর্চা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন। জেলা শহরে চার বছর ধরে মোহাম্মদ হাশেমের জন্মদিন উদযাপনে হাশেম উৎসব আয়োজন করে আসছে এই ফাউন্ডেশন। ২০২২ সাল থেকে প্রবর্তন হয় মোহাম্মদ হাশেম পদক।
গেল বছর মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২৩ পেয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রশিল্পী গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকার। ২০২২ সালে একই পদক পান বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান এবং বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল।
এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের জুরিবোর্ড মনোনীত ১৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:বগুড়ার সেই রিকশাচালকের এমএ পাস করা স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম তার হাতে কালেক্টর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।
জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের ফেরদৌস যখন বিয়ে করেন তখন তার স্ত্রী সিমানুর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে দেয়া কথা ফেরদৌস রেখেছিলেন। রিকশায় স্ত্রীকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তিনি নিজে রিকশা চালিয়ে সংসারের বোঝা টেনেছেন। রিকশা চালিয়ে সিমানুরের লেখাপাড়ার খরচ জুগিয়েছেন।
স্ত্রী এমএ পাস করার পর এবার তার জন্য চাকরি খুঁজতে শুরু করেন ফেরদৌস। এই দম্পতির সংগ্রামী জীবনকথা নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলে তা তা নজরে আসে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার। বগুড়ার জেলা প্রশাসককে খোঁজখবর নিতে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বার্তা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার জেলা প্রশাসক প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সোমবার ব্যবস্থা নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আসার পর ভাগ্য বদলে যায় প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারটির। রিকশাচালক ফেরদৌস মন্ডলের স্ত্রী এখন বগুড়ার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক।
চাকরির সঙ্গে মিলেছে সিমানুরের স্বামী রিকশাচালক ফরদৌস মন্ডলের রিকশাা কেনার ঋণ পরিশোধের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বাড়ি সংস্কারের টিন ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রিকশাচালকের উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী যেন শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিতে পৌঁছাতে পারেন সে জন্য একটি ল্যাপটপ।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এসবই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়। সোমবার সিমানুরের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হয়েছে।’
নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে সিমানুর স্কুলে গিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। চাকরি পেয়ে তার উৎসাহ আরও বেড়েছে। চাকরির পাশাপাশি তিনি এখন বিসিএস-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে চান। তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার কৃতজ্ঞতার কথা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানান।
‘বিশ্ব গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ক আলোচনার মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু করলো ‘গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার-জিএমপি)’ নামের একটি সংগঠন।
বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বেশকিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের পক্ষে কথা বললেও অপর একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধকে সহজভাবে নেয়নি। বিশেষ করে আমাদের সে সময়ে ঘটে যাওয়া গণহত্যাটিও আড়াল হয়েছে নানাভাবে।’
শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম এখন অনেক শক্তিশালী। আমরাই আমাদের ইতিহাসের সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। মানুষকে জানাতে পারি সেসব ঘটনার বীভৎসতা। একাত্তরে গণহত্যার সঠিক ইতিহাস গণমাধ্যমে প্রকাশ করে বিশ্ব দরবারে এর স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাফল্য কামনা করে এই সংগঠনে যুক্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক হারুন হাবীব মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘দেরিতে হলেও এমন একটি উদ্যোগের বড় বেশি প্রয়োজন ছিলো। অবশেষে গণমাধ্যমকর্মীরা তা শুরু করেছেন।’
অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সভাপতি একাত্তর টিভির সাংবাদিক মহিম মিজান বলেন, ‘বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসের অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের অবদান। গণমাধ্যমকর্মীদের এই অবদান তুলে ধরতেই এ আয়োজন।’
মন্তব্য