× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
What happened to Zias body?
google_news print-icon

কী ঘটেছিল জিয়ার মৃত্যুর পর

কী-ঘটেছিল-জিয়ার-মৃত্যুর-পর
৯ মিনিটেই অপারেশন শেষ। ভোর সাড়ে ৪টার কিছু পরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ২৪ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মনজুরকে মেজর মোজাফফর হোসেন ফোন করে জানালেন, ‘দ্য প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড।’

১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোররাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে একদল সেনা কর্মকর্তা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সামরিক বাহনে চেপে বেরিয়ে আসেন। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। সেনাসদস্যদের গন্তব্য ৭ কিলোমিটার দূরে শহরের কেন্দ্রস্থল কাজীর দেউরিতে সরকারি কর্মকর্তাদের অতিথিশালা সার্কিট হাউস।

ব্রিটিশ আমলে গড়া বাংলো প্যাটার্নের নয়নাভিরাম তিন তলা এই ভবনে তখন অবস্থান করছিলেন তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আগের দিন তিনি এখানে এসেছেন রাজধানী থেকে, স্থানীয় বিএনপিতে চলতে থাকা কোন্দল মেটাতে।

জিয়া হত্যার পূর্বাপর নিয়ে প্রোবনিউজ-এর প্রধান সম্পাদক ইরতিজা নাসিম আলীর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ১৯৯৪ সালের মে মাসে মতিউর রহমান সম্পাদিত দৈনিক ভোরের কাগজ-এ ধারাবাহিকভাবে আট কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। এই রিপোর্টে জানা যায় যে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে ২৯ ও ৩০ মে তারিখের মধ্যবর্তী রাত সাড়ে ৩টায় তিনটি গাড়ি নিয়ে ১৬ জন সেনা কর্মকর্তা রওনা হন। প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন সার্কিট হাউসে ঘুমিয়ে।

গুলি করতে করতে তাদের একটি দল দোতলায় উঠে যায়। গোলাগুলির শব্দ শুনে বাইরে কী হচ্ছে দরজা ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করলেন জিয়া। তখন গর্জে ওঠে আততায়ীর হাতের অস্ত্র। ৯ মিনিটেই অপারেশন শেষ। ভোর সাড়ে ৪টার কিছু পরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ২৪ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মনজুরকে মেজর মোজাফফর হোসেন ফোন করে জানালেন, ‘দ্য প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড।’

বলা হয়, এক সামরিক অফিসার তার স্টেনগানের এক ম্যাগাজিন গুলি পুরোটাই জিয়ার ওপর চালিয়ে দেন।

মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে জিয়াউর রহমানের মুখের একপাশ উড়ে গিয়েছিল। একটি চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। পেছনের দেয়ালে লেগেছিল বীভৎসতার চিহ্ন। বারান্দায় পড়ে থাকা প্রেসিডেন্টের রাতের পোশাক সাদা ধবধবে পাজামা-পাঞ্জাবি লাল হয়েছিল রক্তে।

জিয়ার লাশ এতটাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে তাকে চিনতে পারা কঠিন ছিল। চট্টগ্রামের তখনকার পুলিশ সুপার সৈয়দ শফিউদ্দীন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দায়িত্বরত কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা হিসেবে শফিউদ্দীন আহমেদই প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বারান্দায় পড়ে থাকা প্রেসিডেন্টের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে সেখানেই স্ট্রোক করেন।

জিয়ার সঙ্গে ওইদিন সার্কিট হাউসে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আরও দুই সেনা কর্মকর্তা– লে. কর্নেল আহসান এবং ক্যাপ্টেন আশরাফুল হাফিজ খান। এরা ছিলেন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রেসিডেন্টস গার্ড রেজিমেন্টের সদস্য।

জিয়ার এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখক-সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, ‘জিয়া নিহত হয়েছিলেন তার প্রিয় সহকর্মী ও অনুগতদের হাতে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।’

অন্যদিকে জিয়ার এই মৃত্যু নিয়ে তার অন্যতম রাজনৈতিক সহযোগী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে উদ্ধৃত করে গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, যাদের ওপর জিয়া বেশি নির্ভর করেছিলেন, তারা যদি তাদের আনুগত্য বজায় রাখতেন, তাহলে জিয়ার এ রকম মর্মান্তিক পরিণতি হতো না। তার মতে, দুই পক্ষই (মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা) তার পতন চেয়েছে, এক পক্ষ কাজটা করেছে, লাভ গেছে অন্য পক্ষের ঘরে। দাবার চালে একদল জিতেছে, অন্য দলটি হেরেছে।

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থানের এক বিশৃঙ্খল পর্বের শেষ অধ্যায়, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। জিয়াউর রহমানের সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠার পেছনেও ভূমিকা ছিল একই রকম সামরিক অভ্যুত্থানের।

৩০ মে ভোররাত ৪টার দিকে জিয়াকে হত্যা করা হয়। সকালবেলা সেনানিবাস থেকে যে দুজন সামরিক কর্মকর্তা প্রথম সেখানে হাজির হন, তারা ছিলেন মেজর শওকত ও মেজর রেজাউল করিম। এদের মধ্যে মেজর শওকতের দায়িত্ব ছিল নিহত তিনজনের মরদেহ সংগ্রহ করে কবর দেয়া। আর মেজর রেজার দায়িত্ব ছিল প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যদের সংগ্রহ করে সার্কিট হাউস থেকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে আনা। তারা দুজনই সার্কিট হাউসের দোতলার বারান্দায় নিজ কক্ষের সামনে জিয়ার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দেখেছেন।

মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম ওইদিনের স্মতিচারণা করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দোতলায় উঠে সিঁড়িবারান্দায় দেখি ছোটখাটো একটা ডেডবডি ঢাকা। একজন পুলিশ দাঁড়ানো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে এটা কার ডেডবডি। সে বলল রাষ্ট্রপতির। তাকে মুখটা খুলতে বলার পর দেখলাম পরনে সাদা পাঞ্জাবি। তার একটা চোখ বের হয়ে ঝুলে আছে। পুরো মুখ ঝাঁঝরা। আমি তারপর তাকে বললাম ঠিক আছে ঢেকে রাখো। এর বেশি দেখার আর ইচ্ছা হয় নাই।

‘বারান্দায় আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি আরেকটা ডেডবডি। দেখি একটা হাত বের হয়ে আছে। মুখ খুলে দেখি এটা কর্নেল আহসান। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি একটা বড়সড় মরদেহ। যেটার শুধু পা বের হয়ে আছে। সেটা খুলে দেখি আমার বন্ধু ক্যাপ্টেন হাফিজ।’

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার গবেষণা তুলে ধরেছেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তিবাহিনী, জিয়া হত্যাকাণ্ড, মনজুর খুন’ বইয়ে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে যে তার মুখ ও কাঁধে ব্রাশফায়ার করা হয়েছে। তাছাড়া হাতে গুলির ক্ষত আছে। পায়ে গুলির ক্ষত আছে। মাথার খুলি একদিকে উড়ে গিয়েছিল ও মস্তিষ্ক বেরিয়ে গিয়েছিল। এগুলো রিপোর্টে লেখা আছে। রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন লে. কর্নেল তোফায়েল।’

মাটিচাপা মরদেহ

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর কর্নেল শওকত তা রাঙ্গুনিয়ায় এক পাহাড়ের পাদদেশে মাটিচাপা দিয়ে আসেন। আবার ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্ কয়েক দিন পর তা গর্ত খুঁড়ে তুলে এনে ঢাকা পাঠান। এই অংশটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। গবেষকরা এখানে খুব বেশি আলো ফেলতে পারেননি।

মেজর রেজাউল নিউজবাংলাকে বলেন, সার্কিট হাউস থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়া ও আরও দুই সেনা কর্মকর্তার মরদেহ সংগ্রহ করে তা সমাহিত করার দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর শওকতকে। এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন লে. কর্নেল মতিউর রহমান, যাকে জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পরপর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে।

মেজর (অব.) রেজাউল করিমের ভাষ্য মতে, “কর্নেল মতিউর রহমান দাঁড়িয়ে আছেন, তার হাতে চায়নিজ স্টেনগান। আমাকে দেখেই বললেন, ‘রেজা কাম হিয়ার।‘ যাওয়ার পর আমাকে বললেন, ‘তুমি কোথায় ছিলে? তোমাকে তো খুঁজেই পাওয়া যায় না।’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে ‘কী হয়েছে’। তখন তার কাছ থেকেই আমি প্রথম শুনলাম যে জিয়া মারা গেছেন। উনি বললেন, ‘এখন আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধাকে একসঙ্গে থাকতে হবে।’

“উনি আমাকে বললেন, ‘তুমি সার্কিট হাউজে যাও। তুমি মেজর শওকত ও আরও কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে যাও। প্রেসিডেন্টের ডেডবডি পাহাড়ের ভেতরে কোথাও কবর দিয়ে আসো।‘

“আমি তাকে বললাম, ‘স্যরি স্যার, আমাকে অন্য কাজ দেন।’ আমি মেজর শওকতকে দেখিয়ে দিলাম।

“উনি তখন শওকতকে ডেকে বললেন যে তার দল নিয়ে যেতে। আর আমাকে বললেন, ওখানে গার্ড রেজিমেন্টের যেসব সদস্য আছে তাদের নিয়ে আসতে।”

সার্কিট হাউসে গিয়ে প্রেসিডেন্টস গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যদের একত্র করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসেন মেজর রেজা। আর জিয়াউর রহমানসহ তিন সেনা কর্মকর্তার লাশ একটি সামরিক পিকআপ ভ্যানে তুলে দাফনের উদ্দেশে রওনা দেন মেজর শওকত।

মেজর (অব.) রেজা বলেন, ‘ওরা তিনটা ডেডবডি ওদের গাড়িতে ওঠাল। আর আমি আমার লোকগুলোকে অস্ত্র জমা রাখার পর আমার গাড়িতে ওঠালাম। মেজর শওকতের নেতৃত্বে ওরা চলে গেল কবর দিতে। আর আমি চলে গেলাম ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারে।’

মেজর শওকত মেজর মোজাফফরসহ আরও কয়েকজন সেনাসদস্যকে সঙ্গে করে জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ে চলে যান। নির্জন পাহাড়ের পাদদেশে একটি গর্ত করে সেখানে জিয়াউর রহমান, কর্নেল আহসান এবং ক্যাপ্টেন হাফিজের লাশ মাটিচাপা দিয়ে আসেন তারা। দুই দিন পর ১ জুন ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ্ চট্টগ্রামের সেই পাহাড় থেকে লাশ উদ্ধার করেন।

কীভাবে সেই কবর শনাক্ত করা হয়েছিল, সেটা এক ধোঁয়াশা।

মেজর জেনারেল আবুল মনজুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছেন সাংবাদিক ও লেখক মশিউল আলম। ‘দ্বিতীয় মৃত্যু’ নামের সেই উপন্যাস লিখতে গিয়ে সেই সময়ের অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ও কুশীলবের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। ঘেঁটেছেন অনেক দলিল-দস্তাবেজ, সেই সময়ের পত্রপত্রিকা।

নিউজবাংলাকে মশিউল আলম বলেন, রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেখানেই তাকে কবর দেয়া হয়। কবর দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মেজর মোজাফফরের ওপর। কর্নেল মতিউর তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জিয়ার লাশ সার্কিট হাউস থেকে নিয়ে চট্টগ্রামের কোনো পাহাড়ের খাদে ফেলে দিয়ে আসতে।

কিন্তু পাহাড়ের কোনো খাদে ফেলে না দিয়ে মেজর মোজাফফর রাঙ্গুনিয়ায় এক গ্রামের কাছে সমতলে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সেখানে কবর দেন। পাথরঘাটা সেই গ্রামের নাম। গ্রামবাসীর সহায়তায়, তাদের কোদাল-খুন্তি দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একই গর্তে তিনজনের লাশ সমাহিত করে রেখে আসেন তারা। ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ ও ওসি কুদ্দুসের নেয়া সাক্ষাৎকারে মশিউল আলম এটুকু জেনেছেন।

এ বিষয়ে পরে বিএনপির প্রয়াত সিনিয়র নেতা ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ কথা বলেছিলেন বিবিসির সাংবাদিক কাদির কল্লোলের সঙ্গে। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় হান্নান শাহ ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদায় চট্টগ্রাম মিলিটারি একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন।

বিবিসিকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে হান্নান শাহ বলেন, জিয়ার মৃত্যুর দিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তার দায়িত্ব নিয়ে ৩০ মে দুপুরের দিকে রেডিও-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল, সেটা তার পরের দিন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।

৩০ মে অনেক সেনা কর্মকর্তার মতো হান্নান শাহকেও মিলিটারি একাডেমি থেকে ডেকে নিয়ে বিদ্রোহের পক্ষে সমর্থন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু হান্নান শাহ তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবার ৩১ মে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতার জন্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে অনুরোধ করা হয় হান্নান শাহকে।

প্রয়াত হান্নান শাহের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক-ঔপন্যাসিক মশিউল আলমও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, হান্নান শাহ তাকে বলেছিলেন, তিনি নিজে থেকেই জিয়ার লাশ খুঁজছিলেন। তখন লাশ খোঁজার মূল দায়িত্ব পড়েছিল তৎকালীন ফটিকছড়ি সার্কেলের সার্কেল ইন্সপেক্টর গোলাম কুদ্দুসের ওপর, পরবর্তী সময়ে যিনি ওসি কুদ্দুস নামে পরিচিতি পান। এই গোলাম কুদ্দুস পরে পলায়নরত মেজর জেনারেল মনজুরকেও আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হান্নান শাহ জানান, নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে তিনি নিজ থেকেই পয়লা জুন জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ খুঁজতে বের হয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সিপাহি, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি স্ট্রেচার।

হান্নান শাহ ওই সাক্ষাৎকারে জানান, তারা কাপ্তাই রাস্তার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। একটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নতুন কবরের সন্ধান করছিলেন তারা। তখন একজন গ্রামবাসী এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা কী খুঁজছেন।

ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ ওই গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সেখানে কোনো ব্যক্তিকে সম্প্রতি দাফন করেছে কি না?

তখন সেই গ্রামবাসী একটি ছোট পাহাড় দেখিয়ে জানান, কয়েক দিন আগে সৈন্যরা সেখানে একজনকে কবর দিয়েছে। তবে গ্রামবাসীর কোনো ধারণা নেই কাকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে।

গ্রামবাসীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী হান্নান শাহ সৈন্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন নতুন মাটিতে চাপা দেয়া একটি কবর।

সেখানে মাটি খুঁড়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আরও দুই সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ দেখতে পান তারা। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহ তুলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনা হয়। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তা ঢাকায় পাঠানো হয়।

গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহরের বাইরে পাহাড়ের ঢালে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তুলে আনা হয় অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর। সেটা ১ জুন তুলে চট্টগাম সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। তার লাশ আইডেন্টিফাই করেন তার পিএস লে.কর্নেল মাহফুজ। এরপর পোস্টমর্টেম ও সেলাই করার পর কফিনে ভরে সেটাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

‘ঢাকায় আনার পর বেগম জিয়াকে কফিনটা দেখানো হয়। ঢাকনা খোলা হয় নাই। সেটা জাতীয় সংসদের নর্থ প্লাজায় তাকে দাফন করা হয়। তার আগে মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ে যে জানাজা হয়েছিল, সেখানে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ আমরা দেখেছি।’

লেখক ও গবেষক আনোয়ার কবির বলেন, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর মেজর মোজাফফরের সঙ্গে তার একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি জিয়াউর রহমানের লাশ সম্পর্কে বলেছেন, লাশের একটি অংশ, বিশেষ করে মুখের অপশন প্রায় উড়ে গিয়েছিল। তা দেখে কোনটা কার লাশ বোঝা কঠিন ছিল।

মেজর (অব.) রেজা বলেন, মেজর জেনারেল মনজুর ধরা পড়ার পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া বেশির ভাগ অফিসারই আটক ও নিহত হন। এরশাদের লোকজন জিয়াউর রহমানের লাশ ঢাকায় পাঠায় এবং যে কফিন ঢাকায় আসে, তা আর খোলা হয়নি বলে জানা যায়। তাই কফিনে কী ছিল বা ছিল না তা বলা কঠিন।

ঢাকায় জিয়ার মরদেহ আসার পর

সেই সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। তার বয়ানে: ‘৩০ মে ঢাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার এবং এতে জিয়াউর রহমানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। জিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।

‘সন্ধ্যায় ৩০টা বেবিট্যাক্সিতে 'তাহের মাইক' লাগিয়ে পরদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে জিয়ার জানাজা হবে—এটা প্রচারের ব্যবস্থা করলাম। ইচ্ছে করেই 'গায়েবানা' শব্দটা ব্যবহার করিনি। ভেবেছিলাম, মানুষ মনে করবে জিয়ার লাশ এসে গেছে এবং তারা বেশি সংখ্যায় জানাজায় হাজির হবে।

সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শামসুল হুদা চৌধুরী, শাহ আজিজ আর ডা. মতিন ছিলেন। তারা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ডেকে এনে হম্বিতম্বি করলেন- কার হুকুমে জানাজার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে? তারা বললেন, 'ক্যান্টনমেন্টগুলোর পরিস্থিতি আমরা জানি না, বিশেষ করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট জানাজায় যাবেন না।'

৩১ মে সকাল ৯টায় ঢাকা স্টেডিয়ামে জানাজা হলো। মোনাজাতের ঠিক আগের মুহূর্তে জাস্টিস সাত্তার এসে উপস্থিত হলেন। তখন এটা অফিশিয়াল জানাজা হয়ে গেল। জিয়ার লাশ ঢাকায় আসার পর মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা।’

রেডক্রসের আহ্বান

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর ১৯৮১ সালের ৩১ মে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত’। উপশিরোনামে লেখা হয়: ‘বিচারপতি সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান’। বিএনপি তখনও ক্ষমতায়, অথচ দলের প্রতিষ্ঠাতার মরদেহের কোনো সন্ধান নেই। এমন অবস্থায় ১ মে ইত্তেফাকে একটি সংবাদ ছাপা হয়, যেখানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কর্মকর্তারা বিদ্রোহী সেনাদলের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মনজুরের সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রপতির মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করেন, যদিও মনজুর তা অস্বীকার করেন।

ঢাকায় প্রকাশিত এক প্রেসনোটের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, হত্যাকাণ্ডে নিহত প্রেসিডেন্টের দাফনের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে লাশ ফেরত চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দেশজুড়ে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সাত্তার, প্রধানমন্ত্রী শাহ আব্দুল আজিজ, স্পিকারের অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজা হয়।

এর পরদিনই গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হয়, রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। খবরে বলা হয়, কর্নেল আহসান ও ক্যাপ্টেন হাফিজের মরদেহের সঙ্গে একই কবরে জিয়াউর রহমানের মরদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। জিয়ার মরদেহ ছিল অন্য দুইজনের মরদেহের মাঝে।

ইত্তেফাক সেই কবরের ছবিও ছাপে। এতে বলা হয়, রাঙ্গুনিয়া কলেজের কাছে ছিল এই কবর। ২৫ টাকা করে পারিশ্রমিক দিয়ে তালেব আলীসহ দুইজন স্থানীয় ব্যক্তিকে দিয়ে এই কবর খোঁড়ানো হয়। দোয়া পড়ানো হয় স্থানীয় মৌলভকে দিয়ে। পরে গর্ত খুঁড়ে এই লাশ তোলা হয়।

লাশ শনাক্তের পরের দিন ‘ঢাকায় জিয়ার মরদেহ’ শিরোনাম ছাপা হয় সংবাদপত্রগুলোতে।

ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়, ‘কফিনটি প্রেসিডেন্ট ভবনে লইয়া যাওয়ার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখানে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও দুই পুত্র কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন। কিন্তু কফিনের ঢাকনা খোলা হয় নাই।’

বিতর্ক যে কারণে

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ তড়িঘড়ি এক নির্জন পাহাড়ে সমাহিত করা, পরে সেখান থেকে সেটি উদ্ধার করে কফিনে ভরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া– এই বিষয়গুলো সবই হয়েছে অনানুষ্ঠানিকভাবে, খুব কম লোকই যুক্ত ছিল এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ফলে তখন থেকেই একটি সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে: যে মরদেহ তুলে আনা হয়েছে, সেটা যে জিয়াউর রহমানেরই, তার নিশ্চয়তা কী।

লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরো ঘটনাটিকেই রহস্যের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর লাশ নিয়ে যে বিতর্ক চলছে সেটা বড় রকমের বিতর্ক। সেটা কিন্তু তখনও ছিল। ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তার লাশ নিয়ে আসার পর সেটা কাউকে দেখানো হয়নি। কফিনের ভেতর তার লাশ ছিল কি ছিল না? জিয়া হত্যার পর দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু করা হয়েছিল।

জেনারেল মনজুরকেও দ্রুত হত্যা করা হয়। সেটার মূল কারণ ছিল জিয়ার হত্যাকে ধামাচাপা দেয়া। জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সেটার বড় কারণ হলো লাশগুলো এতটা বিকৃত হয়েছিল যে উপস্থিত কারও পক্ষে আইডেন্টিফাই করা সম্ভব ছিল না যে কোনটি জিয়াউর রহমানের লাশ বা আদৌ তার লাশ ছিল কি না।’

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, এই প্রক্রিয়াগুলো অস্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছিল বলেই এখনও সেগুলো রহস্যাবৃত বলে মনে করার অবকাশ আছে। কারণ কোনো কিছুরই দালিলিক প্রমাণ রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, যেভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এবং যেভাবে তা সরকার, সিভিল প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেই সময় থেকেই মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। এই বিতর্ক এখন ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি যোগ করেন, জিয়াউর রহমানের মরদেহ উদ্ধার ও ঢাকায় দাফনের আগে-পরে কোনো স্বজন বা সহকর্মী তা দেখেননি বা শনাক্তও করেননি। যে একজন মাত্র ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করেছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমানের পিএ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহফুজ। তাকে সরিয়ে দেয়া হয় এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, যেহেতু কেউ এটা দেখেননি, তাই এখন কেউই বলতে পারছেন না, সত্যি সত্যিই সেখানে মরদেহ ছিল কি ছিল না!

গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ অবশ্য মনে করেন, জিয়ার মরদেহ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকার কারণ নেই। কেননা মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ডেডবডিকে চিহ্নিত করেছেন তার পিএস। লে. কর্নেল মাহফুজ। তাকে পরে ফাঁসি দেয়া হয়। মাহফুজের ভাষ্য অনুযায়ী জিয়া ও আরও দুটো মৃতদেহকে ৩০ মে বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছে কবর দেয়া হয়। ১ জুন মাহফুজ জিয়ার মৃতদেহ তুলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে ১ জুন সকাল ১০টায় তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সেটার বিস্তারিত প্রতিবেদনও আছে।

সবকিছু শেষ করে কফিনে মুড়ে বেলা ১টায় ব্রিগেডিয়ার আজিজুল ইসলাম, লে. কর্নেল মাহফুজ ও লে. কর্নেল মাহবুবুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে যার স্বাক্ষর আছে তার নাম লে. কর্নেল কে জেড তোফায়েল আহমেদ, প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ।’

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, আইন মোতাবেক মরদেহ ময়নাতদন্তের দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। তার আগে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট করবে। এরপর পুলিশ পোস্টমর্টেমের আবেদন করবে। এ জন্য পুলিশের নির্দিষ্ট একটা ফরম আছে। সেটা তারা ফিলাপ করে পোস্টমর্টেমের আবেদন করবে। সিভিল সার্জনেরও ময়নাতদন্তের একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট আছে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সামরিক হাসপাতালে ময়নাতদন্তে এগুলোর কোনোটাই অনুসরণ করা হয়নি। একটি সাদা কাগজে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট লেখা হয়েছে। মরদেহ হস্তান্তরের সময় কফিনের মুখ খোলা হয়নি, স্বজনদের কাউকে মরদেহ দেখতে দেয়া হয়নি। ফলে কফিনে মরদেহ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেন, এমন কাউকেই পাওয়া যায় না।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছায় নিহত রাষ্ট্রপতির কফিন।

এখনকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিল তখনকার সংসদ ভবন। বিমানবন্দর থেকে কফিন সেখানে এনে রাখা হয়। ঢাকায় কফিন পৌঁছানোর পর থেকে সমাহিত করা পর্যন্ত মোহাম্মদ আলী শিকদার তার লোকবল নিয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি তখন ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন। একেবারে তরুণ অফিসার। তিনি জানান, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বহু মানুষ লাশ দেখতে এসেছিলেন। কেউ কেউ ফুল নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারা প্রেসিডেন্টের মুখ দেখতে পারেননি। কারণ কফিনের ঢাকনা খোলা হয়নি।

মোহাম্মদ আলী শিকদার জানান, তাদের ওপর থেকে নির্দেশ ছিল, কফিনের ঢাকনা খোলা যাবে না। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী তারা সেই নির্দেশ পালন করেছেন। কাউকে কফিনের মুখ খুলতে দেননি। পরদিন ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আরও লোক আসেন। এরপর কফিন সমাহিত করা হয়।

হত্যা আর প্রহসনের বিচারের রাজনীতি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক অভিলাস আর রক্তপাতের বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যার উত্থান হয়েছিল, একই রকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তবে অনেকে এটাকে শুধুই এক বিশৃঙ্খলা হিসেবে দেখেন না। তারা বলেন, সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তান প্রত্যাগত অংশের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ এইসব ঘটনা। এবং প্রতিটি ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সেনা সদস্যদের কোণঠাসা বা নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর যেভাবে বিচারকাজ চলেছে, তাতে সেটি আরও স্পষ্ট হয়।

লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ক্যুয়ের নামে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। যার অধিকাংশের শিকার হন মুক্তিযোদ্ধারা। এখন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানফেরত সদস্যরা জড়িত ছিলেন। যেটা বলা হয় যে তখন সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে জেনারেল এরশাদের সঙ্গে পাকিস্তান প্রত্যাগতরাই ছিলেন।’

জিয়াউর রহমান এবং বিশেষ করে মনজুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম, যেটির নাম: দ্বিতীয় খুনের কাহিনি। উপন্যাসের রসদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটেছেন তিনি, কথা বলেছেন এইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নানাজনের সঙ্গে।

মশিউল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সৈনিক ও অফিসারদের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল যে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারদের বেশি সুযোগ- সুবিধা দিচ্ছেন। এর মধ্যে এরশাদও ছিলেন। এটা নিয়ে একটা ক্ষোভ ছিল। তাদের মূল দাবিটাই ছিল যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের প্রাধান্য দিতে হবে। যারা পাকিস্তানফেরত তাদের এত সুযোগ-সুবিধা দেয়া যাবে না।’

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সব দিক আজও উন্মোচিত হয়নি। অনেকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে বিচারের নামে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া হয় এবং এটির সঙ্গে যুক্ত নন এমন অনেককে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, সেটি সন্দেহ উদ্রেককারী।

হত্যা আর অভ্যুত্থানের এই অধ্যায় বাংলাদেশ অনেক পেছনে ফেলে এসেছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে ইতিহাসের অন্ধকার অংশগুলো উন্মোচিত না হলে, অনেক কিছুরই জট খুলবে না।

আরও পড়ুন:
যে গ্রামে অপরাধ কম, কালেভদ্রে পুলিশ  
রহস্যে ঘেরা মানুষশূন্য মঙ্গলপুর গ্রাম
ষাটের দশকের সেই হেলিকপ্টার সার্ভিস ও ভুলে যাওয়া দুর্ঘটনা
যে রহস্যের কিনারা নেই

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Al Amin has cheated various businesses by killing customers money
সিরাজগঞ্জে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় অর্থ জালিয়াতি

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা জনতা ব্যাংক তামাই শাখার সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপক আল-আমিন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজার আল-আমিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর সেসব টাকায় আল-আমিন ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।

ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।

এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।

আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।

মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।

অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।

বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’

একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।

একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”

মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’

মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।

ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।

দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Customers of Janata Bank Tamai branch also have money
ক্যাশভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাবে গরমিল

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’ আটকের পর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় ব্যাংক ম্যানেজার আল আমিনসহ তিনজন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের মর্জিমাফিক কার্যক্রম চালিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আল আমিন। একে একে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য। অনেক গ্রাহকের হিসাবের টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- তাহলে কি হিসাবে গরমিলের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাই শেষ কথা নয়?

ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।

এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।

বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?

শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।

শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।

তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।

বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।

এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’

এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’

তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।

আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।

পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Matikhekora chose the darkness of the night by changing tactics

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা দিনের আলোতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের ঝক্কি এড়াতে রানীনগরে রাতের আধাঁরে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়।

নওগাঁর রাণীনগরে কোনোভাবেই থামছে না কৃষি জমির মাটি লোপাট। দিনের আলোতে প্রশাসনের হানা দেয়ার ভয় থাকার কারণে কৌশল পাল্টেছে মাটিখেকোরা। দিনের আলো ফুরাতেই শুরু হচ্ছে মাটি কাটার মহোৎসব।

একটি মেশিনের জায়গায় বর্তমানে একই স্থানে একাধিক মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে সরকারি খাস জমির মাটি। এতে কৃষিজমি হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পাকা সড়ক।

পরিবেশ ও মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দিন ও রাতের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়ে দেখা যায়, মিরাট ইউনিয়নের ২ নম্বর স্লুইস গেট সংলগ্ন স্থানে আতাইকুলা মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্থানে সরকারি খাস জমির সঙ্গে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বছরে ১৬ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বন্ধক নিয়ে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

মাসখানেক আগে ‘অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা’- এমন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাক্টরচালককে কারাদণ্ড দেন। পরে সেখানে গিয়ে সরকারি খাস জমির একটি সাইনবোর্ড এবং সরকারি জমি পরিমাপ করে লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করে আসেন উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা
সরকারি জমি-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড থাকলেও তার পাশ থেকেই চলছে মাটি কাটার উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ঘটনার কয়েকদিন পর উপজেলার কুজাইল এলাকার সর্বরামপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জনৈক রাজনৈতিক নেতাকে ‘ম্যানেজ করে’, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে কৌশল পাল্টে রাতে মাটি কাটা শুরু করেছে। তার পর থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ফলে রাতের আঁধারে দেদারছে সরকারি খাস জমিসহ কৃষি জমি গর্ত করে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বড় বড় ড্রাম ট্রাকের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও প্রধান পাকা সড়কগুলো। শুধু তা-ই নয়, ট্রাক থেকে সড়কে মাটি পড়ার কারণে তা যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাছাড়া গাড়ির নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধির মাধ্যমে চাবি ফিরিয়ে দেয়।

তাদের দাবি, এতো ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে কিছু খাস জমি হয়ত আছে। তবে জমির মালিকরা আমার সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি মাটির বিনিময়ে তাদের জমি খনন করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি খনন করা হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে জমির মালিকরা জানেন। অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না, তা তারা বলতে পারবেন।’

তবে রাতে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রশাসন হানা দেয়, তাই রাতে মাটি কাটা হচ্ছে।’

মিরাট ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওই জমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে একটি মামলা চলছিল। পরে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

তবে মাটিখেকোরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই হয়ত রাতে মাটি কাটছে বলে ধারণা তার।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

রানীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বলেন, ‘পুলিশ শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করে। কে কোথায় মাটি কাটছে, সেই বিষয়টি দেখবে উপজেলা প্রশাসন কিংবা ভূমি অফিস।

‘পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ইউএনও উম্মে তাবাসসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে মাটিকাটা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যদি তিনি মাটি কাটা বন্ধ না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
46 bridges in one kilometer canal

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু ব্যক্তিগত উদ্যোগে একের পর এক সেতু নির্মিত হয়ে চলেছে খালটির ওপর। ছবি: নিউজবাংলা
সোনাইমুড়ি পৌরসভা মেয়র নুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার জনগণ খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করছে এটা সত্য। তবে এতে আমার কিছুই করার নেই।’

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় চলছে খাল দখলের মহোৎসব। খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট ও বসতবাড়ি। এছাড়া সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খালের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে ৪৪টি সেতু। বর্তমানে খালে বাঁধ দিয়ে নতুন করে কংক্রিটের পিলার নির্মাণ করে আরও ২টি সেতু বাড়ানোর তৎপরতা চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, সোনাইমুড়ী জোড় পোল থেকে ছাতার পাইয়া সড়কের পাশে ঘেঁষে বয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খাল। খালটির দৈর্ঘ্য ৪.৩৫০ কিলোমিটার।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গত শীত মৌসুমে প্রথমবারের মতো খালটি খননের কথা থাকলেও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ খাল।

একইসঙ্গে খালের মুখে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন সেতু তৈরি করে কার্যত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পানির প্রবাহ। ফলে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে ৪৩ হাজার ৯০০টি কৃষক পরিবার রয়েছে। সেচ-নির্ভর বোরো ধান চাষের আবাদি জমি রয়েছে ১০ হাজার ১০ হেক্টর। কিন্তু চলতি বছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সেগুলোতে পানি দেয়ার জন্য শক্তিশালী সেচ যন্ত্র রয়েছে ২ হাজার ২৬২টি।

দীর্ঘ সময় ধরে এ খালটি খনন না করায় শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায় খালটি। ফলে পানির অভাবে খালের দুপাশের কৃষিজমিতে বোরো ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। যেটুকু পানি প্রবাহিত হতো সেটাও দখলের কারণে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
সেতুর প্রকোপে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী জোড়া পোল থেকে শুরু হওয়া খালের ওপরে প্রায় ১০০টি দোকান তুলে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটের পর থেকে বাকি ১ কিলোমিটার খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৪৪টি সেতু। এর মধ্যে ইট-পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছে ২৫টি সেতু, যেগুলোর কারণে খালের পানি চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। অথচ এই ২৫ সেতুর মধ্যে জনসাধারণের চলাচলে ব্যবহার হয় মাত্র ৫টি, বাকি ২০টি সেতু ব্যবহার হয় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।

এগুলো ছাড়াও খালটির ওপর কাঠ, বাঁশ ও পিলার দিয়ে ১৮টি এবং ইস্পাত দিয়ে নির্মিত হয়েছে ৩টি সেতু।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের ওপর সেতু নির্মাণ করছেন পেয়ারা বেগম নামের এক নারী। তিনি নিজেকে সোনাইমুড়ী পৌর সভার ওয়ার্ড কাউন্সিল হাফেজ দুলালের বোন হিসেবে পরিচয় দেন। খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের প্রতিবাদ করলে তিনি ‘মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন’ বলে থাকেন।

এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তারা হাফেজ দুলালের সঙ্গে এসে নাকি এ জায়গাটিও পরিদর্শন করে অনুমতি দিয়ে গেছেন। এমনকি ওইসব কর্মকর্তাকে চা-পানের খরচও দিয়েছেন ওই নারী।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়রের অনুমোদনের লিখিত কোনো কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হন পেয়ারা বেগম।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
খালটির ওপর নতুন করে দুটি ব্রিজের কাজ চলমান। ছবি: নিউজবাংলা

পেয়ারা বেগমের নির্মাণাধীন সেতুর অদূরেই একই এলাকার ওমর ফারুক তার বাড়ির সামনের খালের ওপরে সেতু ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরকারি অনুমোদন রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। মেয়রের নাতি শামীম সেতু নির্মাণের কাজ তত্ত্বাবধায়ন করছেন।

তিনিও অনুমোদনের লিখিত কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।

এছাড়া ওই এলাকার বাসিন্দা তারেক, তোফাজ্জল মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রহমানসহ ২৫ জন ব্যক্তি খালের ওপর ব্যক্তি উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই খাল স্বাধীনতার পরে কখনও খনন হয়নি। আর দখলের কারণে দিনে-দিনে সেটি আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে কৃষি জমিতে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। খালটির পানি প্রবাহের পথরোধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমিতে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে সময় আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকে।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু

সোনাইমুড়ী পৌর তহসিলদার আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, খালের ওপর অনুমতি না নিয়েই সেতু নির্মাণের বিষয়টি তিনি জানতেন না। পরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

নোয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, সোনাইমুড়ী বাজার হয়ে ৫০০ মিটার খাল খননের আওতায় আসেনি। অবৈধ স্থাপনার কারণে সেখানে খননকাজ চালানো সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগ পেয়ে খালের ওপর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে বর্তমানে দুটি সেতুর কাজ নির্মাণাধীন আর বাকিগুলো আগেই নির্মিত হয়েছিল।’

সোনাইমুড়ি পৌরসভা মেয়র নুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার জনগণ খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করছে এটা সত্য। তবে এতে আমার কিছুই করার নেই।’

আরও পড়ুন:
সরকারি খালে পারিবারিক সেতু

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Petrol diesel price in India has been reduced by Rs

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত ভারতের একটি পেট্রল পাম্পে গাড়িতে ভরা হচ্ছে জ্বালানি তেল। ছবি: এনডিটিভি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের সমন্বয়কৃত এ মূল্য কার্যকর হয় শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে।

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেন, ‘পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি কমিয়ে দেশের শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী মোদি আবার প্রমাণ করলেন, কোটি কোটি ভারতীয়র পরিবারের কল্যাণ ও সুবিধা দেখাই সবসময় তার লক্ষ্য।’

মন্ত্রী বলেন, ১৪ মার্চ ভারতে পেট্রলের লিটারপ্রতি গড় দাম ছিল ৯৪ রুপি, যেখানে ইতালিতে ১৬৮ দশমিক ০১ রুপি, ফ্রান্সে ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি এবং জার্মানিতে ছিল ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেছিলেন, অশোধিত তেলের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা থাকায় জ্বালানির দাম কমছে না নিকট ভবিষ্যতে।

ভারতে জ্বালানি তেলের হ্রাসকৃত মূল্যে নগরভেদে তারতম্য থাকবে। দেশটির পেট্রলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়বে ৮৭ দশমিক ৬২ রুপি, যা আগে ছিল ৮৯ দশমিক ৬২ রুপি।

অন্যদিকে ভারতের রাজধানী শহরে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম পড়বে ৯৪ দশমিক ৭২ রুপি, যা আগে ছিল ৯৬ দশমিক ৭২ রুপি।

আরও পড়ুন:
মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা প্রত্যাহার শুরু
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করল মোদি সরকার
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৫৫ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে দুই-এক দিনের মধ্যে
সয়াবিনের লিটার ১৬৩ টাকার বেশি হলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রতিমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Police cars tested for fitness on highways are unfit

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন ফিটনেসবিহীন এই গাড়িতে চড়েই মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় নামে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে হাইওয়ে পুলিশ চেক করছে গাড়ির ফিটনেস। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে নিয়মিত টহলে যাচ্ছে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরবের শেষ প্রান্তে নরসিংদী জেলার মাহমুদাবাদ এলাকায় একটি লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে টহল দিচ্ছেন ভৈরব হাইওয়ে থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য।

গাড়িটির রং নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দুটি হেডলাইট থাকলেও ডান-বাঁমে মোড় নির্দেশক বাতি নেই। ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। কয়েক জায়গায় তার দিয়ে বাঁধা। কিছু অংশে ঝালাই দেয়া। সামনের দুই দরজা নড়বড়ে, লক ভাঙা। চলছেও খুব ধীরগতিতে।

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

পুলিশের ওই গাড়ির চালক তাজুল ইসলাম জানান, গাড়িটি অনেক পুরনো। মাঝেমধ্যেই পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়। এভাবেই প্রতিদিন মহাসড়কে টহল দিতে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি নিয়ে বের হতে হয় তাদের।

টহলে থাকা ভৈরব হাইওয়ে থানার এসআই আবু জাফর শামসুদ্দিন বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে প্রতিদিন ডিউটিতে যেতে হয়। থানায় আরও দুটি গাড়ি আছে। তবে সে দুটিরও একই অবস্থা।’

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মো. সাজু মিঞা বলেন, ‘শুধু আমাদের থানার গাড়ির অবস্থা খারাপ তা নয়। দেশের অধিকাংশ হাইওয়ে থানার গাড়িরই বেহাল অবস্থা। ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই চলতে হচ্ছে।

‘তবে দুটি গাড়ির বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি আমাদের থানায় খুব দ্রুতই নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

এ বিষয়ে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Organized rape of schoolgirl OC took the side of the guilty?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি? সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত পারভেজ হোসেন (বাঁয়ে) ও বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান। কোলাজ: নিউজবাংলা
ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ঘটনার ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় মাস পেরুলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অভিযুক্তরা। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলেও তা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি।

পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয় থাকা বাগাতিপাড়ার দশম শ্রেণীর স্কুলশিক্ষার্থীকে কৌশলে ডেকে নেয় পাশ্বকর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন নামের এক যুবক। পথিমধ্যে নির্জন রাস্তায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই অপেক্ষমান পারভেজ ও তার পাঁচ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, রতন ও কৃষ্ণ মিলে ভুক্তভোগীকে মুখ চেপে ধরে পাশের পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়াসহ ঘটনাটি জানাজানি হলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করতে গেলে ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস-মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে বারবার মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগীর পরিবার। এভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন।

মামলা না নিয়ে আপস-মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি শফিউল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘থানায় গিয়ে আমার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলেন- এটা কোনো বিষয়ই না। মামলা নেয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।

‘ওসির এমন কথায় চিন্তায় পড়ে যাই। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে পারল না। শেষমেষ কোর্টে গিয়ে মামলা করি।’

ভুক্তভোগীর দুলাভাই বলেন, ‘মামলা করতে থানায় গেলে মামলা না নিয়ে বরং ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।’

জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘ফোন করে ওসি আমাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে ধর্ষণের বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো বাদী-বিবাদী দুপক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সামাধান করতে পারিনি। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বারবার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ।’

এ সময় চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস-মিমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেয়াসহ পুলিশের কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, বুধবার আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:
স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বাকে ‘ধর্ষণ’: ৫ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
খুবির ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন 
যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত জাবি শিক্ষক জনি বরখাস্ত
চোখে ঠোটে সুপার গ্লু লাগিয়ে গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের মূল আসামি’ গ্রেপ্তার

মন্তব্য

p
উপরে