নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই বলছেন, এই দুর্নীতির জবাবদিহি এড়াতেই সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালকে পরিকল্পিত ‘হিজাব বিতর্কে’ জড়ানো হয়েছে।
ধরণী কান্ত বর্মণের প্রধান শিক্ষকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১০ মে। নিয়ম অনুযায়ী, এরপর আমোদিনী পালের এই পদে আসার কথা। অভিযোগ উঠেছে, ধরণী কান্ত বর্মণ তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক রবিউল ইসলামকে পরবর্তী প্রধান শিক্ষক করতে চান। এ জন্য আমোদিনী পালকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে মারধরের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে গত বুধবার আমোদিনী পালসহ দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, বারবার সতর্ক করার পরও স্কুল ইউনিফর্ম না পরার কারণে তাদের ‘শাসন’ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁর স্কুলে ‘হিজাব বিতর্কের’ পেছনে কী?
আমোদিনী পালকে ‘ফাঁসানোর’ কারণ কী হতে পারে সে বিষয়েও অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনীকে ফাঁসাতেই পরিকল্পনা করে হিজাবের ইস্যু তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনায় বর্তমান প্রধান শিক্ষকসহ তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক রবিউল ইসলাম ও অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের দায়ী করছেন তারা।
বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক ও কর্মচারী নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলে নিয়োগ বিনিময়ে প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নিয়োগের সময় নেয়া অর্থ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত। তার বিদায়ের সময় এই অর্থের হিসাব যাতে না দিতে হয় সে জন্যই আমোদিনী পালকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় অর্ধশত বছরের পুরোনো। ২০১০ সালের শুরুর দিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগ দেন ধরণী কান্ত বর্মণ। এরপর গত ১২ বছরে তার অধীনে ৬ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন।
এসব নিয়োগে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে খোদ নিয়োগপ্রাপ্তরাই নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
কয়েকজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগামী ১০ মে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হবেন আমোদিনী পাল। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে যাতে ধরণী কান্ত বর্মণের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চাইতে না পারেন সে জন্য সহকারী আরেক শিক্ষক রবিউল ইসলামকে নিয়ে হিজাব বিতর্ক তৈরি করা হয়।
এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। এরপর নিজের অনুগতদের দিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি করেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত। আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে কথিত হিজাব অবমাননার অভিযোগ ওঠে গত বুধবার। এর এক দিন পরেই অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই কমিটির তালিকা জমা দিতে বুধবার রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে গিয়েছিলেন ধরণী কান্ত।
এলাকায় বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান সুমনকে অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আর সদস্য হিসেবে আছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এবং শিক্ষক রবিউল ইসলামের চাচাতো ভাই রমজান আলী।
এই অ্যাডহক কমিটি আমোদিনী পালের পরিবর্তে রবিউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ২০১১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। সে সময় আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো নেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এই টাকার একটি অংশ স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে, বাকি টাকা স্কুলের ফান্ডে জমা হবে। তবে পরে স্কুলের কোনো উন্নয়নও হয়নি, ফান্ডেও টাকা নেই।’
রতন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আমিসহ ১০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা হলেন বিদুৎ কুমার, আকরাম হোসেন, সুনীতা রাণী মণ্ডল, আমোদিনী পাল, আশরাফুল ইসলাম। স্কুলের অফিস সহকারী আহসান হাবিব, আয়া আমিনা খাতুন, দপ্তরি জুয়েল হোসেন এবং ঝাড়ুদার আবু মুসাকেও নিয়োগ দেয়া হয়।
‘প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নেয়া হয়েছে। ৪ কর্মচারীর কাছ থেকেও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ ঢুকেছে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের পকেটে। এ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আমোদিনী পাল প্রধান শিক্ষক হলে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। আর আমরা চলতি মাসেই আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছি। তিনি (প্রধান শিক্ষক) কোনো হিসাব দিতে পারেননি।’
তার দাবি, আমোদিনী পালকে সরাতে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত ও রবিউল ইসলাম হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছেন। এ কাজে সহায়তা করেছে অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন তরফদারের ডিও লেটার জাল করে অ্যাডহক মানেজিং কমিটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষক রতন।
সহকারী শিক্ষক সুনীতা রাণী মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বুধবার রাজশাহীতে গিয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অ্যাডহক কমিটির তালিকা জমা দেবেন- সেটা আমরা আগেই জানতাম।
‘পরের দিন তিনি হুট করেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেন আমোদিনী পাল ম্যামকে। স্থানীয় কিছু মানুষকে তিনিই উত্তেজিত করেছেন। স্কুলের আয়-ব্যয় ও নিয়োগের টাকার কোনো সঠিক হিসাব তিনি এখনও বুঝিয়ে দেননি। আমোদিনী পাল ম্যাম প্রধান শিক্ষক হলে তার (ধরণী কান্ত) নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাবে। তাই তিনি এসব করেছেন।’
সহকারী শিক্ষক আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা বা যোগ্যতায় টিকে গেলেও অনেক কর্মক্ষেত্রে যারা উপর পদে থাকেন তাদের খুশি করতে হয়। শুধু আমি কেন, অনেকেই হয়তো এমন খুশি করেই চাকরি করে যাচ্ছেন।’
সহকারী শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার ও আশরাফুল ইসলামও স্বীকার করেন তাদের কাছ থেকেও নিয়োগের সময় টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তবে এখন আর বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলতে চান না।
স্কুলের অফিস সহকারী আহসান হাবিব, আয়া আমিনা খাতুন, দপ্তরি জুয়েল হোসেন এবং ঝাড়ুদার আবু মুসার কাছ থেকেও টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্যার, আমরা নিচু পদে কাজ করি। আমরা যদি কিছু বলি তবে পরে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে পারি।’
যাকে নিয়ে স্কুলের হিজাব বিতর্ক সেই সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়িতে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, তার চোখেমুখে আতঙ্ক ও ভয়ের ছাপ।
আমোদিনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পুলিশ, সংবাদকর্মী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, শিক্ষা বিভাগের স্যারেরা এসে অনেক প্রশ্ন জানতে চেয়েছেন। আমি সব মিলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (ধরণী কান্ত) পছন্দের কোনো এক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে আমি কোনোভাবেই প্রধান শিক্ষক না হতে পারি সে জন্যই আমার বিরুদ্ধে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি (ধরণী বর্মণ)। সে নিয়োগে অনেক টাকা গ্রহণ করেছেন। স্কুলে বিভিন্ন সময় আসা বরাদ্দ, স্কুলের ফান্ডের হিসাব কোনোটাই সঠিকভাবে দিতে পারবেন না। আর কখনও তিনি হিসাবই দেননি।
‘অবসরে যাওয়ার আগে তো সবকিছুর হিসাব দিয়ে যেতে হবে, সেটাই তো নিয়ম। সেগুলোর হিসাব যাতে না দিতে হয়, আর আমি যদি প্রধান শিক্ষক হয়ে যাই তাহলে তো তাদের সব অর্থ লোপাট ধরা পড়ে যাবে। তাই তিনি অতি কাছের কিছু লোককে দিয়ে এমন জঘন্য বিতর্কের সৃষ্টি করলেন।’
আমোদিনী পাল বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনও ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছে। যারা অন্যায় করে এত টাকা লোপাট করল তাদের বিচার হচ্ছে না। মাঝখান থেকে সবার কাছে আমাকে এত হেয় করা হলো।’
অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্টরা
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধেও। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
রবিউল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত গুড রিলেশন থাকতেই পারে, তার মানে এই নয় স্কুলের নিয়োগবাণিজ্য বা টাকা লোপাট করেছি। আমার বিরুদ্ধে কাউকে ফাঁসানো বা অর্থ লোপাটের অভিযোগ মিথ্যা।’
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটিতে চাচাতো ভাই রমজান আলীর জায়গা পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন রবিউল।
এ বিষয়ে রমজান আলীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও সফল হয়নি নিউজবাংলা। অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুদুল হাসান অবশ্য আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করেছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্যও নাকচ করেছেন তিনি।
মামুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নই। এলাকায় সেবামূলক কাজ করি বলেই হয়তো আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। এগুলোর মাঝে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি করায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার জাল করার অভিযোগও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ধরণী কান্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এমপি সাহেবের ডিও লেটার ভায়োলেট করিনি। নিয়ম মেনেই অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও রাজশাহী শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। তারা সেটা গ্রহণও করেছে।
‘আর রমজান আলী অভিভাবক সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি শিক্ষক রবিউল ইসলামের ভাই হতে পারেন, এতে সমস্যার কী আছে! কমিটির মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর অ্যাডহক কমিটি করতে একটু সময় লেগেছে। তবে কাজটি যাতে সঠিকভাবে হয় সে জন্যই সময় লেগেছে।’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘হিজাব বিতর্কে আমাকে জড়ানো ঠিক নয়, কারণ আমি সেদিন ছিলাম রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে। আমার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টিও সঠিক নয়, আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্য করিনি। কোনো টাকা-পয়সা নিজের পকেটে নেইনি।’
দুদকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অভিযোগ দিয়েছিল সত্য। গত বছরের শেষের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে তদন্ত করে গেছে, তবে প্রতিবেদন এখনও দেয়নি। দিলে আমি নির্দোষ হব।’
স্কুলের উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ফান্ডে কিছু অর্থ তো আছেই। স্কুলের দেয়াল রং করেছি, কিছু চেয়ারসহ আসবাবপত্র কিনেছে। যেটুকু পেরেছি কাজ করেছি। আগামীতে হয়তো আরও কাজ করতাম।’
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাডহক কমিটির তালিকা মূলত প্রধান শিক্ষক করে আমাদের কাছে পাঠান। তারপর আমরা সুপারিশ করে বিভাগীয় শিক্ষাবোর্ডে পাঠাই। এখন সেই তালিকায় কারও সুপারিশ জাল হয়েছে কি না বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে কি না, সেটি আমাদের জানা নেই। কমিটি হওয়ার পর বা জমা দেয়ার সময়ে স্থানীয় কেউ অভিযোগ করেননি। এখন সার্বিক বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
সুপারিশ জাল করার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন তরফদারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্কুলে হিজাব বিতর্কের তদন্ত নিয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা আমরা পাইনি। একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে বলে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির আরও ১৩ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তারা বৃহস্পতিবার টেকনাফের নাফ নদীতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি জানান, পরবর্তীতে কোস্টগার্ড উক্ত বিজিপি সদস্যদেরকে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে বিজিপির মোট ২৭৪ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ জন রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপির এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ জনে।
ছয় বছর বয়সী লামিয়া শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায়।
এর আগে ১২ তারিখ ভোর চারটার দিকে ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে দগ্ধ হন একই পরিবারের ছয়জন। পরে তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভর্তি করানো হয়।
ওই দিন দগ্ধ হয়েছিলেন মেহেরুন্নেসা (৬৫), সূর্যবানু (৩০), লিজা আক্তার (১৮), লামিয়া (৭), সুজন (৮), মোহাম্মদ লিটন (৫২)।
দগ্ধদের বাড়ির কেয়ারটেকার মো. সিফাত জানিয়েছিলেন, মশার কয়েল জ্বালাতে গেলে ঘরের মধ্যে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হন।
ঘটনার পরদিন শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মারা যান দগ্ধ ৬৫ বছর বয়সী মেহেরুন্নেছা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত সোয়া সাতটার দিকে মারা যান লিটনের স্ত্রী সূর্যবানু। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মারা যান লিটন।
বতর্মানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রাণ হারানো লিটন ও সূর্য বানুর দুই সন্তান লিজা (১৮), ও সুজন (৮)।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মিরপুরের ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়জন বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছিল। আজ সকালের দিকে লামিয়া নামে এক শিশু মারা যায়। তার শরীরে ৫৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।’
তিনি জানান, বর্তমানে চিকিৎসাধীন দুইজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে তালাবদ্ধ একটি ফার্নিচারের গোডাউনে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন তিনজন।
আশুলিয়ার কুরগাঁও আমতলা এলাকার মো. শামসুদ্দি্নের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ তিনজনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা হলেন গোডাউনের ম্যানেজার মো. সুমন (৩০) ও প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া বৃদ্ধা মাজেদা বেগম (৫৫)। দগ্ধ আরেকজন ফার্নিচার কিনতে আসা ক্রেতা, যার বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সায়েম মাসুম বলেন, ‘(বৃহস্পতিবার) বিকেলে আমরা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ওখানে গিয়ে দেখি, ততক্ষণে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। মূলত একটি আবাসিক ভবনে একটি ফার্নিচারের গোডাউন ভাড়া দিয়েছিল মালিক। বিকেলে ওই গোডাউন খুলে একজন ক্রেতাকে ফার্নিচার দেখাতে নিয়ে যান দোকানের ম্যানেজার সুমন।
‘এ সময় কোনোভাবে আগুনের স্পর্শে গোডাউনের মধ্যে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। তখন গোডাউনে থাকা দুইজনকে দেখতে গিয়ে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া এক বৃদ্ধা দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।’
বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে ফার্নিচারের গুদামটি বন্ধ থাকায় ভেতরে গ্যাস জমেছিল। ওই কক্ষে তিতাসের আবাসিক সংযোগসহ রান্নার চুলাও ছিল। সম্ভবত ওই গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে জমা গ্যাসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় বুধবার দুপুরে সিমেন্টবাহী ট্রাকের চাপায় ১৪ জন নিহত হন। ওই সময় সড়কের পাশে বসে ভিক্ষা করছিলেন ৪৫ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনিও।
শহিদুলের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী হেনারা বেগম স্বামী হারানোর শোকে কাতর। দুই বছর বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার মাইয়ারে এতিম কইরা আমার স্বামী মইরা গ্যাছে। ওষুধের দোকানে টাকা পাইবে, আমি হেই টাকা কেমনে দিমু। আমি কী খামু, কেমনে মনুরে খাওয়ামু।’
কিছুক্ষণ পরেই আবার ভুলে যাচ্ছেন স্বামীর মৃত্যুর কথা।
শহীদুলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুটি পা অচল থাকায় কোনো কাজ করতে পারতেন না শহিদুল। ৮ বছর বয়স থেকে ঝালকাঠির গাবখান ফেরিঘাটে ভিক্ষা করা শুরু করেন তিনি। বছর দশেক আগে ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেছারাবাদ গ্রামের শ্রমিক আশ্রাফ আলির মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে হেনারাকে বিয়ে করে শহিদুল সংসার জীবন শুরু করেন।
শহীদুলের ভাইয়েরা জানান, সরকার থেকে পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ভিক্ষা করে যে টাকা আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকম চলতো শহিদুলের। তিন ভাইয়ের মধ্যে শহিদুল বড়। বাকি দুই ছোট ভাই সাইদুল খান এবং সাদ্দাম খান পৃথক সংসার করেন। তারা দুজনেই গাবখান সেতুর টোল প্লাজার কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
গাবখান সেতুর টোল প্লাজার পাশে বসে অন্যদিনের মতো বুধবার ভিক্ষা করছিলেন শহিদুল। দুপুর পৌনে দুইটায় নিয়তির কাছে হেরে যান তিনি। সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক চাপা দেয় শহিদুলকে। আহত অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঘণ্টাখানেক পর তার মৃত্যু হয়।
ছোট ভাই সাদ্দাম বলেন, ‘আমি বুধবার টোলের ডিউটি শেষ করে দুপুরে বাড়ি এসে গোসলে যাই। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড় দিয়ে টোলের সামনে গিয়ে দেখি, আমার ভাই ট্র্রাকের নিচে চাপা পড়ে আছে। স্থানীয়রা তাকে ট্রাকের নিচ থেকে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিমে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা চিকিৎসার চালায়। কিছুক্ষণ পরেই ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যায়।’
আরও পড়ুন:স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে, তবে এ বৃষ্টিতে শহরটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা আরব আমিরাতের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত বন্যায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার খবর পাইনি।’
ইসরাইলে ইরানের হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়ার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ বাধলে তো সবারই ক্ষতি। তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে, তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’
সমাবর্তন উৎসবে সভাপতির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানবিক মানুষ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বান জানান।
এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বরেণ্য ইতিহাসবিদ, লেখক এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মেসবাহ উদ্দিন আহমদ এবং ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আলমগীর।
এ ছাড়াও সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রধান উপদেষ্টা এমপি শফিউল আলম চৌধুরী এবং ট্রাস্টের চেয়ারপারসন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শামীম আহমদ। সমাবর্তন উৎসব শুরু হয় মহান জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর নিতাই চন্দ্র চন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সংগ্রামে সন্ধিৎসু ও দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে মানসম্মত ধীমান শিক্ষার্থী সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনসহ নানান নিরীক্ষাধর্মী কর্মযজ্ঞে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে এ মহাযজ্ঞে কৃতিত্বের ছাপ রাখবে।’
সমাবর্তনে ফল ২০০৯ থেকে স্প্রিং ২০২১ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগের মোট ৬ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট সনদ অর্জন করেন। এ ছাড়াও চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান, ডিন এবং স্পেশাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে এ অনুষ্ঠানে পদক প্রদান করা হয়।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে পারিবারিক গাছ থেকে পাড়া নারকেল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে নারীসহ আটজন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে সেলিম মিয়া নামে গুরুতর আহত একজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সেলিম মিয়ার ভাই মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুই দফা সংঘর্ষে আটজন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে নিজেদের পারিবারিক গাছ থেকে নারকেল পাড়েন সেলিম। সেই নারকেল অপর তিন ভাই মজনু মিয়া, ফজলুর রহমান ও আজিজুল হকের বাসায় ভাগ করে দেন, তবে ভাগ কম বেশি হওয়ায় কারণে ভাতিজারা সেলিমের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে সেলিমকে তারা মারধর করে সামান্য আহত করেন।
এ ঘটনায় ওই রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরদিন সকালে সেলিম দোকানে গেলে তার হাতে ও পিঠে ক্ষুরের আঘাতে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আহত সেলিমের পক্ষের লোকজন জানায়, অপর তিন ভাই ও ভাতিজারা মিলে সেলিম ও তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ও শ্যালিকার ওপর হামলা চালান।
এদিকে সেলিমের বড় ভাই ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে নারকেল নিয়ে ভাতিজারা সেলিমকে কিছুটা হেনস্তা করে। আমরা রাতে বিষয়টা সমাধান করব ভেবেছি, কিন্তু রাতে বড়কাশিয়া থেকে সেলিমের আত্মীয়রা এসে বাড়িতে ঢুকে নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষুর ও রামদা দিয়ে কোপানো শুরু করে। এতে আমাদের পক্ষের চারজন গুরুতর আহত হয়। ক্ষুরের আঘাতে রাজিমুলের পেট বের হয়ে গেছে। হাত কেটেছে একজনের।
‘নিজেদের লোকজনের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আমাদের ঘরের ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে মারধর করতে গেলে তারা ঘরের দরজা লাগিয়ে ফেলে। সেলিম ছাড়া অন্যদের মারধরের ঘটনা সাজানো। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকেও মামলার আবেদন করা হচ্ছে।’
এদিকে রাতের ঘটনায় সেলিম মিয়া বাদী হয়ে মজনু মিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পরে সকালে মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় মজনু মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য