× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
How responsible is society about extramarital affairs?
google_news print-icon

‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের’ জেরে হত্যায় সমাজ কতটা দায়ী?

বিয়েবহির্ভূত-সম্পর্কের-জেরে-হত্যায়-সমাজ-কতটা-দায়ী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিয়েবহির্ভূত’ সম্পর্ককে অনৈতিকতার বেড়াজালে আটকে রাখার চেষ্টা খুব বেশি কাজে আসছে না। অলংকরণ: মামুন হোসাইন
সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমাজে মানবীয় সম্পর্কের নানাবিধ জটিল মেরুকরণে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ‘বিয়েবহির্ভূত’ সম্পর্ককে অনৈতিকতার বেড়াজালে আটকে রাখার কঠোর চেষ্টা আধুনিক সময়ে খুব বেশি কাজে আসছে না। বরং এ ধরনের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চেষ্টার বলি হচ্ছে মানুষ।

খাবারে বিষ মিশিয়ে নিজে সন্তানদের হত্যার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে লিমা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজ সন্তান ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাওয়ান লিমা। তাতে মৃত্যু ঘটে দুই শিশুর। এরপর নাপা সিরাপ খেয়ে তাদের মৃত্যু বলে প্রচার চালান লিমা।

লিমার বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে দুই শিশুকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। এর আগেও এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। এ ছাড়া, প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে রাস্তার পাশে নবজাতক কিংবা নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার অথবা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা।

সমাজবিশ্লেষক, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, সমাজে মানবীয় সম্পর্কের নানাবিধ জটিল মেরুকরণে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ‘বিয়েবহির্ভূত’ সম্পর্ককে অনৈতিকতার বেড়াজালে আটকে রাখার কঠোর চেষ্টা আধুনিক সময়ে খুব বেশি কাজে আসছে না। বরং এ ধরনের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চেষ্টার বলি হচ্ছে মানুষ। পারিবারিক জীবনে বাড়ছে প্রতারণামূলক সহাবস্থানের ঘটনা।

মানুষকে তার কথাগুলো মন খুলে বলার সাহস দেয়া উচিত বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করছেন, সততাকে সমাজ নিন্দার চোখে না দেখলে কমে আসবে ব্যক্তি মানুষের অপরাধপ্রবণতা। একই সঙ্গে নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে হন্তারক হয়ে ওঠার বিপক্ষে তাদের অবস্থান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে আমরা যে নামেই পরিচিত করি না কেন, সমাজে মানুষ যখন একত্রে বসবাস করা শুরু করেছে, সেই তখন থেকে এ ধরন বা এ রকম একটি ইচ্ছে মানুষের মনে ছিল এবং সেটি চলমান আছে।’

কোনো কোনো দেশ এমন সম্পর্ককে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার কথাও যদি চিন্তা করেন, এটাকে আমরা প্রকাশ্যরূপে মানতে পারি না। মানতে না পারার পেছনে কারণগুলো যদি বলি, ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা মূল্যবোধের জায়গা। আর দ্বিতীয়ত সামাজিক যে পরিমণ্ডলের মধ্যে আমরা থাকি, তা এ ধরনের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। কিন্তু এর চর্চা বন্ধ নেই।’

বিবাহিত নারী-পুরুষের অন্য কারও প্রতি আগ্রহী বা ভালো লাগা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই ভালো লাগাটাকে অনেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। আবার পরিস্থিতির কারণে সেই ভালো লাগা, ভালো লাগার গতি অতিক্রম করে আরও অনেক দূর গড়ায়। ফলে যখন তারা অঙ্গীকারে আবদ্ধ হন, সংসার করতে চান বা বিয়ে করতে চান, তখন দুই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

বিবাহিত নারী-পুরুষের সন্তান থাকলে ‘বেশি বিপদ ঘটে’ বলে মনে করেন তৌহিদুল। তিনি বলেন, ‘ওই বিবাহিত নারী বা পুরুষ দুইভাবে চিন্তা করেন। তিনি সন্তানকে নিজের কাছে রাখা অথবা বাবার বাড়ি বা অন্য কোথাও রেখে সন্তান প্রতিপালনের চেষ্টা করেন। যখন সেখানে কোনো সমর্থন পাবেন না বলে মনে করেন, তখন কোনো কোনো সময় আমরা দেখি আরেকটি সম্পর্ককে চলমান রাখার জন্য বাবা অথবা মা নিজের সন্তানকে হত্যা করেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি দ্বিতীয় মডেলের মধ্যে পড়েছে। এমন ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা কেন? কারণ সমাজ, রাষ্ট্র, আইন এ রকম কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না অথবা কোনো দিন পারবেও না যে নারী-পুরুষের বিয়ের পর আর কাউকে কোনো দিন ভালো লাগতে পারবে না বা ভালো লাগবে না।’

আর এসব সংকট দূর করতে পশ্চিমা দেশগুলো এমন সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে জানান তৌহিদ।

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিকে যদি মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো রাখা সম্ভব না হয়, এমন সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে যারা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদেরকে নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা দুই শিশুকে হারালাম।’

এ ধরনের বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করার জন্য যে বক্তব্যগুলো উঠে আসা উচিত, সমাজ বাস্তবতার কারণে তা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

আমাদের দেশে লুকিয়ে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো সম্পর্ক বেশি দিন গোপন থাকে না। সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে সেটা প্রকাশ পায়। আর তখন প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে ওই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা অনেকের থাকে না।’

পরিবারিক, সামাজিক বা কাঠামোগতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে অনেকে ‘বিশৃঙ্খলা’ বা ‘নিজের সন্তানকে হত্যা করে’ সমাধানের চেষ্টা করেন বলে জানান তৌহিদ।

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু এগুলো আদৌ কোনো সমাধান না। বরং সমাজ যদি কাঠামোগতভাবে প্রস্তুত থাকে, তাহলে একজন ব্যক্তি সহজ করে জানাতে পারবেন যে তিনি সেই সম্পর্কে থাকতে চান না, মানসিকভাবে থাকতে পারছেন না। তাহলে ডিভোর্স নেয়ার একটি বিষয় আছে।’

বিয়েবিচ্ছেদকেও সমাজ এখনও সহজভাবে দেখে না বলে জানান তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘কারণ, জীবনের প্রয়োজনে যেমন আমরা একত্রিত হই, আবার জীবনের প্রয়োজনেই দূরে সরে যাওয়া অথবা ভালো লাগা না লাগার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। মানুষকে যদি আমরা মূল্য দিই, মানুষকে ভালো রাখা এবং তার মনস্তত্ত্বকে যদি আমরা গুরুত্ব দিই, তাহলে তার বিষয়গুলোকে মেনে নেয়ার মতো করে সমাজের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সামাজিক সুশাসন নিয়ে যারা কাজ করেন এবং রাষ্ট্রের বা সরকারের উচিত এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।’

তিনি বলেন, ‘সমাজ, আইন বা বাস্তবতার দোহাই দিয়ে বেশি দিন কিন্তু চলা যাবে না, যদি ওই বিষয়গুলোর বৈশ্বিক চর্চা শুরু হয়। কালচারাল গ্লোবালাইজেশন বা সাংস্কৃতিক বৈশ্বায়ন কিন্তু একটা দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা ছড়িয়ে পড়ে। তাই সচেতনতা বাড়ানো হলেও এই চর্চাকে থামিয়ে রাখা যাবে না। ফলে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে সেভাবে সমাজকাঠামোকে প্রস্তুত করা, মানুষের মনস্তত্ত্ব এবং আচরণকেও সেইভাবে তৈরি করতে হবে। না হলে আরও বিপর্যয় বা হত্যার ঘটনা ঘটবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মানুষ হিসেবে সহমর্মিতা, ভালোবাসা, আদর, স্নেহ এই জায়গাগুলোকে ভুলে বিশ্বাসঘাতক হয়ে উঠছি। পরকীয়া করা, পরকীয়া দেখে ফেললে যেকোনো একটা ইনসিডেন্ট ঘটানো, অন্যায়কে কাছে টেনে নেয়া এবং সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর সেটি হলো মানুষকে মেরে ফেলা- এসব ঘটছে।’

এসব ঘটনাকে ‘অ্যালার্মিং’ হিসেবে দেখছেন তানিয়া হক। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা একটাও ঘটা উচিত নয়। কিন্তু সমাজে দিনের দিন পর আমরা এসব দেখতে পাচ্ছি। আর এটা খুব অ্যালার্মিং।’

মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহারকেও দায় দিচ্ছেন এই অধ্যাপক।

জেন্ডার বিশ্লেষক তানিয়া হক বলেন, ‘মানুষের মন ধরাছোঁয়ার বাইরে একটা জায়গায়। পরকীয়া ভালো নাকি খারাপ, সেটা আলাদা বিশ্লেষণ। বিয়ের পর সন্তান জন্ম নেয়া মানে একটা দায়িত্ব তৈরি হয়। আমি বলছি না যে রেসপনসিবিলিটির জন্য নিজের মনকে কষ্ট দিতে হবে। কিন্তু যদি বলেন সন্তানের কথা, সেখানে বাবা-মার দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।’

নির্যাতন সয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে এই অধ্যাপক বলেন, ‘নিজের লোভের জায়গাটা নিজের সংবরণ করতে হবে। কারণ সন্তান কোনো দোষ করেনি। হয়তো বলা যায়, স্বামীকে ভালো লাগছে না, তার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু তার জন্য তো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা যায় না।’

বিয়েকে একটা ‘মৌলিক জায়গা’ অভিহিত করে তানিয়া হক বলেন, ‘বিয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু বোঝাপড়া করে করা উচিত। এখানে আমার মনে হয় কিছু জ্যামিতিক সিস্টেম তৈরি করা উচিত। যাচাই-বাছাই করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে কেউ জড়িয়ে গেলেও সংকট সমাধানে সমঝোতাকে সমাধান হিসেবে দেখছেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকবেন না, ওই ছেলের সঙ্গে থাকতে চান। সেখানে সমঝোতার একটা জায়গা বের করা দরকার। আমরা সমঝোতায় যেতে চাই না। সমঝোতাকে আমরা ভয় পাই, কনফ্লিক্টকে আমরা আমন্ত্রণ জানাই। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আমাদের সোসাইটিতে এ ধরনের ঘটনা।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাকে সামনে এনে তানিয়া হকের দাবি, ‘সত্যকে ভয় পাওয়ার একটা প্রবণতা’ সমাজে আছে।

তিনি বলেন, ‘ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবে বলে সে (লিমা) হয়তো তার স্বামীকে বলতে ভয় পেয়েছে। কিন্তু দুটো সন্তানকে মেরে ফেলতে এক ফোঁটা ভয় পায়নি। কিন্তু সে সত্যকে ভয় পেয়ে ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ করে ফেলল।’

তানিয়া হকের মতে, ‘আমাদের পলিসি তৈরি হয়, কিন্তু পলিসির ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস হয় না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হওয়া দরকার। সেটাও হয় না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার বিশ্লেষণ করে ‘আমরাই পারি'-এর নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকে আমরা মহান করে ফেলি। আমরা মনে করি, সন্তানের যত্নআত্তি থেকে শুরু করে সব করবে মা। কিন্তু মা যে একজন মানুষ, তারও যে মানসিক টানাপড়েন হতে পারে, সন্তান লালনপালন যে বিরক্তিকর হতে পারে, এটা আমরা জানি না, আমরা মানি না।’

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘মায়েদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো রাখার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। যেটা থাকলে ভালো হতো। ভালো রাখার কোনো চেষ্টা নেই। আমরা ধরে নিই, এটা অবধারিত।’

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক সামাজিক নৈতিকতা দিয়ে বন্ধ করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন না জিনাত আরা হক। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার আমরা যত নামই দিই না কেন, শ্লীল, অশ্লীল, খারাপ, ভালো; ভালোবাসা আসলে কাগজে মেপে হয় না। এটা মনের বিষয়। শিকল দিয়েও বাঁধা যায় না। শিকল দিয়ে বাঁধা যায় না বলেই আমরা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করি, রুলস তৈরি করি, ভ্যালুজ তৈরি করি। এগুলো করার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।’

সমাজের প্রচলিত ধারণাগুলোও মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও মনে করেন তিনি।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসবে- এটা তো বইয়ের নিয়ম। বইয়ের নিয়ম মনে নাও খাটতে পারে। স্বামীর স্ত্রীকে বা স্ত্রীর স্বামীকে ভালো নাও লাগতে পারে, অন্য কাউকেও ভালো লাগতে পারে। এইগুলো স্বাভাবিক, সহজাত বিষয়। এগুলো ন্যাচারাল। কারণ, আমরা মানুষ, আমাদের শরীরের অনেক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে। মানসিক টানাপড়েন থাকবেই।’

ফলে কারও প্রতি কারও ভালো লাগাকে অন্যায় বলে মনে করেন না তিনি। বলেন, ‘আমরা এটাকে অন্যায়, পাপ বলে কিছু ট্যাবু দিয়ে দিই। এ কারণে শেষ পর্যন্ত একটা মানুষকে হন্তারক হয়ে উঠতে হয়, হত্যা করতে হয় মানুষকে। মানুষ যদি ভালোবাসতে পারে, হন্তারক হতে পারে না।’

সামাজিক ট্যাবুর কারণে ব্যক্তি মানুষ চাপে পড়ে থাকেন বলে মনে করেন এই অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘চাপে পড়ে থাকেন বলেই হিতাহিত জ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে যদি আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারতাম, এটা অন্যায় হিসেবে না দেখতাম, তাহলে তিনি নিজের কথা বলতে পারতেন, লুকোছাপার দরকার ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে সমাজ তৈরি করতে চাই, সেটা করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করি। ফলে সমাজ তো দায়ী, অবশ্যই দায়ী। আমরা মনে করি যেসব নিয়ম-কানুন বানিয়েছি, সেভাবে সমাজ চলবে। এটা করতে গিয়ে আমাদের সবাইকে এক ধরনের শিকলে বেঁধে দেয়া হয়। শিকলে আমরা কেউ থাকতে চাই না।’

জিনাত আরা হক মনে করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই নারী যদি হত্যাকারী হয়েও থাকেন, তিনি হত্যাকারী হতেন না, যদি তার ভালোবাসায় বিধিনিষেধ আরোপ না থাকত।

তার মতে, ‘এখন সমাজ বদলাচ্ছে। বুঝতে হবে, মানুষের মনকে উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিলে এসব হত্যার ঘটনা ঘটবে না।’

মাতৃত্বকে মহান করে না দেখে নারীদের ওপর থেকে সেই বোঝা কমানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘নারীদের মাতৃত্বের বোঝা যেটা, সেখান থেকে রিল্যাক্স করে দিতে হবে। মাকে এত চাপ দেয়া যাবে না। তার জন্য স্পেস তৈরি করতে হবে। মা হওয়া মানে তার শখ, আহ্লাদ সব শেষ হয়ে যাওয়া না। এই ভাবনাগুলো অনেক বেশি আলোচনা করতে হবে, মানুষকে ট্রেইনআপ করতে হবে। মগজে ঢোকাতে হবে।’

আরও পড়ুন:
বউকে ‘শিক্ষা দিতে’ শ্যালক-শ্যালিকাকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা
ভাইকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা: ডিবি
সীমান্তে ‘সংঘবদ্ধ পিটুনিতে’ বাংলাদেশি নিহত
ভোটে হেরে বিদ্যুতের তারে প্রার্থী
মিতু হত্যা: ২ সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেল পিবিআই

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Case of inciting job student to commit suicide Assistant proctors bail denied

জবি ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা: সহকারী প্রক্টরের জামিন নাকচ

জবি ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা: সহকারী প্রক্টরের জামিন নাকচ জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী অবন্তিকাকে ১৫ মার্চ রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার আসামি সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন বাতিল করেছে আদালত।

দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী জামিন আবেদন বাতিল করেন।

অবন্তিকার আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে কারাগারে পাঠায় আদালত।

এদিকে অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানের দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাকে কুমিল্লার জুডিসিয়াল ম্যা‌জিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে আম্মানকে কুমিল্লা জেল হাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী অবন্তিকাকে ১৫ মার্চ রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা নামের ওই ছাত্রী জবির আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী।

কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মো. জুবায়ের বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার (অবন্তিকা) গলায় একটি দাগ দেখতে পাই। তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’

মৃত্যুর আগে জবির এ ছাত্রী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও জাবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।

অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

জবির এ ছাত্রী কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা এলাকার প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।

কুমিল্লায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বেলা তিনটার দিকে অবন্তিকার প্রথম জানাজা ও বেলা পৌনে চারটার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন:
অবন্তিকার মৃত্যুতে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল
অবন্তিকার আত্মহত্যা: কাগজপত্র হাতে পেল তদন্ত কমিটি
অবন্তিকার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে: জবি উপাচার্য
জবি ছাত্রীর মৃত্যুতে সহপাঠী ও প্রক্টরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ
জবি ছাত্রীর মৃত্যু: সহপাঠী ও প্রক্টরের নামে কুমিল্লায় মামলা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Womens participation has increased in the workplace but not in decision making

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়’

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। ফাইল ছবি
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।

‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’

‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’

‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’

এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।

‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।

‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’

সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।

‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’

নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’

তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।

‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’

আরও পড়ুন:
‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Garo children received books in their mother tongue

মাতৃভাষায় বই পেল গারো শিশুরা

মাতৃভাষায় বই পেল গারো শিশুরা মাতৃভাষায় বই পেয়ে খুশি গারো শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।

দেশের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।

এতদিন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, আচিক ও সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ হলেও প্রথমবারের মতো এবার গারো শিক্ষার্থীদের জন্য আচিক ভাষায় পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পেয়ে আনন্দিত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার গারো শিশুরা।

বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত আচিক ভাষার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মধ্যনগরে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙালভিটা মিশন প্রাইমারি স্কুল, কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাইটাকোনা মিশন প্রাইমারি স্কুল ও ইছামারী মিশন প্রাইমারি স্কুল- এই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত গারো শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮৪ জন গারো শিক্ষার্থীর মধ্যে আচিক ভাষার পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে।

মাতৃভাষায় বই পেল গারো শিশুরা

কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তূর্ণা মানকিন বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আচিক ভাষায় প্রণীত বই বিতরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মনে নতুন আলোর সঞ্চার হলো। আমরা আমাদের অর্থাৎ গারো আদিবাসীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি।’

এতে আচিক ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ধারণা লাভ করতে পারবে বলে জানান তিনি।

বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়ূস দাজেল বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গারো। দেরিতে হলেও এই প্রথম শিশুদের হাতে মাতৃভাষায় সরকারি পাঠ্যবই তুলে দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।’

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গারোদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর গারো শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে সরকারি পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার নিজ খরচে জেলা শহর থেকে এসব বই এনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছি।’

আরও পড়ুন:
পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে সংশোধন হবে
মৌলভীবাজারে মণিপুরী গারো ও খাসিয়াদের উৎসব, চলছে প্রস্তুতি
পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি দেখভালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটি
পাঠ্যবইয়ে হুবহু অনুবাদের দায় স্বীকার জাফর ইকবাল ও হাসিনা খানের
পাঠ্য বইয়ে একের পর এক ভুল

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Stay at the engineers house to get wifes rights

স্ত্রীর অধিকার পেতে প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান

স্ত্রীর অধিকার পেতে প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান স্ত্রীর অধিকার দাবিতে কোটালীপাড়ায় এক প্রকৌশলীর বাড়িতে এক নারীর অবস্থান। ছবি: নিউজবাংলা
ওই নারী বলেন, ‘২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকি। এ খবর দুই পরিবারে জানাজানি হলে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুনরায় সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু সে এখন কোনো যোগাযোগ রাখছে না। এজন্য স্ত্রীর অধিকার পেতে এখানে এসেছি।’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদ মোল্লা নামে এক প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন এক নারী। স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে এখানেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

অভিযুক্ত আহাদ মোল্লা কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে। তিনি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের প্রকৌশলী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

বুধবার সন্ধ্যা থেকে ওই নারী প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বাড়ির উঠোনে একটি গাছের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।

ওই নারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকি। এ খবর দুই পরিবারে জানাজানি হলে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুনরায় সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়।

‘কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ করে আহাদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সে কোনো যোগাযোগ করছে না। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদের বাড়িতে এসে উঠেছি। সে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব।’

এদিকে ওই নারী বাড়িতে এসে ওঠার খবর পেয়ে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান।

প্রতিবেশী নেয়ামুল ফকির ও খলিল শেখ বলেন, ‘আহাদ মোল্লার সঙ্গে ওই নারীর সামাজিকভাবে যে বিয়ে হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। বিয়ের পর আহাদ মোল্লা তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করত। এখন তাদের মাঝে কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আহাদ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। আর আহাদ মোল্লা ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The gender identity of the unborn child cannot be revealed

‘মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না’

‘মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না’
হাইকোর্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না।

মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।

এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।

রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
They have a wife and children but they are transgender

স্ত্রী-সন্তান আছে, তবু ওরা ট্রান্সজেন্ডার

স্ত্রী-সন্তান আছে, তবু ওরা ট্রান্সজেন্ডার ট্রান্সজেন্ডার বেশে চাঁদাবাজির দায়ে মিরপুরে আটক ৮ যুবক। ছবি: নিউজবাংলা
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও হিজড়া সেজে চাঁদাবাজির ঘটনায় ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাপ্পু হিজড়া নামের একজন ওদেরকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে এই চাঁদাবাজিতে নিযুক্ত করেছিল।

শারীরিক বৈশিষ্ট্যে ওরা আর দশটা মানুষের মতোই। আছে স্ত্রী-সন্তান। তারপরও নিজেদেরকে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দিয়ে ওরা চাঁদাবাজি করে আসছিল। অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে।

শনিবার রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে এই প্রতারক চাঁদাবাজ চক্রের আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হোসেন ওরফে শিলা হিজড়া, হৃদয় ওরফে পিয়া হিজড়া, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইয়াহিয়া, নয়ন, বেলাল ও মিজানুর রহমান।

মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া সেজে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। আর পাপ্পু হিজড়া নামের একজন ওদের গুরুমাতা হিসেবে কাজ করে।

‘পাপ্পু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এদেরকে ঢাকায় এনে হিজড়া সাজিয়ে চাঁদাবাজিতে যুক্ত করে। বিনিময়ে প্রতিজনকে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা করে দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কারও বাড়ি লক্ষ্মীপুর, কারও সিরাজগঞ্জ আবার কারও বাড়ি পাবনা। কাউকে আবার আনা হয়েছে ময়মনসিংহ থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৮জনের মধ্যে কয়েকজন বিবাহিত এবং তাদের স্ত্রী-সন্তান আছে।’ ট্রান্সজেন্ডার সেজে একদল চাঁদাবাজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকনিক্যাল মোড়ে তাওহীদ আলী নামের এক মোটরসাইকেল আরোহীর গতিরোধ করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ধস্তাধস্তি করে তার কাছ থেকে ২০০ টাকা কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:
বিয়েবাড়িতে তাণ্ডব, ৪ ট্রান্সজেন্ডার গ্রেপ্তার
ধর্ষণের পর হত্যায় ট্রান্সজেন্ডার নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
ট্রান্সজেন্ডার অঙ্কিতায় ঢাবির নতুন ইতিহাস
সংসদে সংরক্ষিত আসন চান ট্রান্সজেন্ডাররা
ট্রান্সজেন্ডারদের সেলাই মেশিন দিল পাথওয়ে

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Gender based violence causes deep psychological wounds Law Minister

লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে: আইনমন্ত্রী

লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে: আইনমন্ত্রী রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স বেঞ্চ বুক লঞ্চ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: নিউজবাংলা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবার, সম্প্রদায় এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে প্রভাবিত করে। এ সহিংসতা কেবল শারীরিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে।’

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স বেঞ্চ বুক লঞ্চ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখানে দেয়া বক্তব্যে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা একটি বদ্ধমূল সমস্যা এবং এর প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির ‘প্রোমোটিং পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যাকটিভিটি’।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবার, সম্প্রদায় এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে প্রভাবিত করে। এ সহিংসতা কেবল শারীরিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে, পারিবারিক কাঠামোকে ব্যাহত করে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়।’

আইনমন্ত্রী জানান, বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা এবং প্রশমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদালত এ ধরণের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যাতে তারা প্রতিকার পায় এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক মামলার জটিল বিষয়গুলোর সহজ সমাধানে বিচার বিভাগীয় বেঞ্চ বুক দুটি বিচারকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব স্তরের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক পরিসরে আইনি, প্রশাসনিক এবং নীতিগত সংস্কার করেছে।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে সু-দৃষ্টি দিয়েই তার সরকার ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছে। ২০১২ সালে পর্নোগ্রাফি (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করেছে। এই আইনগুলো সহিংসতা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’

নারী ও শিশুরা মানব পাচারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এ ঘৃণ্য অপরাধ দমনে কৌশলগতভাবে সাতটি বিভাগীয় সদরে সাতটি মানবপাচার বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী ১০১টি বিশেষায়িত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দূরদর্শী পদক্ষেপগুলো নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না: আইনমন্ত্রী
দেশে উন্নয়নের চাকা ঘুরছে এবং ঘুরবেই: আইনমন্ত্রী
সংবিধান নিয়ে বিএনপি ও জাপা বহু ফুটবল খেলেছে: আইনমন্ত্রী
প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন: আইনমন্ত্রী
খালেদার মুক্তিতে রাজনীতি নিয়ে শর্ত নেই: আইনমন্ত্রী

মন্তব্য

p
উপরে