বাজারে বাড়ছে উত্তাপ। রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নানান পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত কোনো কিছুই কাজে আসছে না।
এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্তের মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন বাজারে গিয়ে। বলছেন, আয় না বাড়লেও কয়েক গুণ খরচ বেড়েছে।
রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, ডাল, পোলাওয়ের চাল ও মাংসের। রোজার ১৫ দিন বাকি থাকতেই এসব পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে।
পণ্যের দাম ক্রেতাদের কাছে সহনীয় রাখতে কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক পণ্যের সরবরাহ চ্যানেল নিরবচ্ছিন্ন করার ওপর জোর দেন। সে সঙ্গে বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, অতি মুনাফা প্রবণতা দমনে কঠোর তদারকির কথা বলেন তিনি।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যতালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গত দুই বছরে মোটা দানার মসুর ডাল ৬৩, চিনি ৩২, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫৫, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।
ভোজ্য তেল সয়াবিন
গত মাসের প্রথম দিকে ভোজ্য তেল সয়াবিনের লিটারে ১২ টাকা নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে ব্যবসায়ীরা। সে প্রস্তাবে সরকার না কলে দিলে বাজারে তৈরি হয় কৃত্রিম সংকট। তখন থেকেই হু হু করে সারা দেশে বাড়তে থাকে তেলের দাম।
গেল ৬ ফেব্রুয়ারি ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৬৮ এবং খোলা সয়াবিনের দাম বেঁধে দেয়া হয় ১৪০ টাকা। আর পাম অয়েল প্রতি লিটার ১৩৩ টাকা।
অথচ ক্রেতাদের অভিযোগ, তারা কোনো তেলই ২০০ টাকা লিটারের কমে কিনতে পারছেন না। এমনকি খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কাছেও পাইকারি বিক্রেতারা দাম নিচ্ছেন বেশি।
এ জন্য ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে তেলের দামের অজুহাত দিচ্ছেন। গত বছর বিশ্ববাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ২৩৫ ডলার। এখন সেটি ১ হাজার ৯৩০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যেহেতু ভোজ্য তেলে প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর, তাই বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গেই দেশে দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, দেশে প্রতিবছর ভোজ্য তেলের চাহিদা গড়ে ২০ লাখ টন। সে হিসাবে মাসে চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। আর রমজানে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টন।
সরিষার তেল
সয়াবিনের পাশাপাশি হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে সরিষার তেলের। বাজারে রাঁধুনী ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার সরিষার তেল ২৯৫ টাকা, প্রাণের ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমার ফোরামের বাজারদর গবেষণার তথ্য বলছে, এক মাস আগেও রাঁধুনীর সরিষার তেলের দাম ছিল ২৮০ টাকা। সেই হিসাবে বছর ব্যবধানে তাদের তেলের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ।
স্বাদ ব্র্যান্ডের সরিষার তেল এখন ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা লিটার, দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।
সরিষার তেলের বার্ষিক চাহিদা কত তার অবশ্য সঠিক কোনো হিসাব নেই। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে বছরে সরিষার তেল উৎপাদন হয় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন, বিপরীতে চাহিদা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, সয়াবিন তেলের ওপর সরকারের বেশি গুরুত্বারোপের কারণে সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়েনি।
তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলে শুল্ক ছাড়সহ শিল্প স্থাপনে নানা সুবিধা দিলেও সরিষা উৎপাদনকারীরা তেমন সুবিধা পায়নি। অনেক উদ্যোক্তাই এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুনরা অবশ্য ব্যবসায়ে নামছে।’
খেজুর
রোজার আগেই বেড়েছে খেজুরের দাম। কয়েক দিন খুচরাপর্যায়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কিছুটা নিম্নমানের খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। অপেক্ষাকৃত ভালো মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। কিছুদিন আগে এই খেজুরের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আড়তে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে আমরা যে খেজুর ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, তা এখন ২৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।’
ডাল
গত তিন-চার মাসে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, আমদানি করা মসুর ডালের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং দেশি মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুগ ডালের কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ এবং অ্যাঙ্কর ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মসুর, খেসারি, মাষকলাই, মটর, মুগ, ছোলাসহ ডালজাতীয় ফসলের মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ২১০ টন। এই উৎপাদন আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার টন কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার টন।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৮৭ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে সব ধরনের ডালের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। দেশে গড়ে উৎপাদন ৯-১০ লাখ টন। আর বাকি প্রায় ১৭ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়।
চিনি
কয়েক মাস স্থির থাকার পর আবার বেড়েছে চিনির দাম। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭৫-৭৬ টাকায়, ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এবং টিসিবির হিসাবে বছরে দেশে চিনির চাহিদা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। মোট চাহিদার এক থেকে দেড় লাখ টন চিনির জোগান আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি কারখানা থেকে। তা ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবির মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি করে। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ চিনির জোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি চিনির জোগান আসে বেসরকারি কারখানা থেকে।
ছোলা
রমজানকে সামনে রেখে গত এক-দু মাসেই ছোলার দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, কয়েক দিন আগেও এটি ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, দেশে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন ছোলার প্রয়োজন হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছোলা উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬৭৬ টন। আর সারা বছর যে পরিমাণ ছোলার প্রয়োজন হয়, তার অর্ধেকই লাগে রমজানে।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রোজার মাসে দেশে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন।
ছোলার অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। রোজায় বাড়তি চাহিদার কারণে মাঝেমধ্যে মিয়ানমার থেকেও অল্প পরিমাণ আমদানি করা হয়।
নতুন উচ্চতায় মূল্যস্ফীতি
এক কথায়, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে দামের একক। অর্থাৎ কোনো পণ্যের প্রকৃত যে দাম, তার চেয়ে বেশি দামে কেনার নামই মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতির এই সূচক উসকে যাওয়ায় বাড়ছে নাভিশ্বাস।
সরকারের মূল্যস্ফীতির হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি গবেষণা তথ্যের ফারাক অনেক। সরকারের দাবি, দেশে এখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ থেকে ৬ শতাংশ।
অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা সানেম বলছে, এই হার এখন ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
সানেমের জরিপ বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শহরের মানুষ তাদের আয়ের ৬১ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্থ খাদ্যপণ্যে ব্যয় করে। আর গ্রামাঞ্চলে থাকা মানুষের মূল্যস্ফীতির হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।
শহরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তারা খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করে আয়ের ৬০ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের আয়ের ৬১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্যপণ্য কিনতে।
রিকশা ও ভ্যানচালক শ্রেণির মানুষ খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করে আয়ের ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ, ছোট ব্যবসায়ীরা ৬১ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থ খরচ করেন।
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক এক শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকটি তাদের এপ্রিলের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
এডিওতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে এডিবি বলেছে, ২০২৪ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক এক শতাংশ পর্যন্ত। ২০২৫ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়ে হতে পারে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ।
বাংলাদেশে কোনো বছরের জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন পর্যন্ত ১২ মাসকে এক অর্থবছর ধরা হয়। সে হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ জুন।
এডিওতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সস্তা তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা দেশে তৈরি সুতা ও বস্ত্র ব্যবহার করছেন।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ভোগ বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভর্তুকি কম দেয়া এবং কৃচ্ছ্রতার ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত রাখায় সরকারি পর্যায়ে ভোগও সামান্য বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মূলস্ফীতির এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
মঙ্গলবার সবশেষ আর্থিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশে। তুলনামূলকভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহরে উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। শহর এলাকায় মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চে শহর এলাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে দেশ। আর এর বড় বিরূপ প্রভাব পড়ছে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পলিসি সুদের হার বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কৌশল বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে।
তবে ড. মনসুর উল্লেখ করেছেন, বিলম্ব এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপগুলো এখনও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাব দেখাতে পারেনি।
ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারের পেছনে একটি অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা এবং নিয়মিত পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে প্রাথমিকভাবে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য