নারায়ণগঞ্জে আলোচিত কিশোর তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যার তদন্ত চলাকালেই এই হত্যায় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায় র্যাব। তার কথিত টর্চার সেলে হানা দিয়ে রক্তমাখা শার্ট উদ্ধারের ঘটনাটি টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচারও হয়।
তখন আত্মগোপনে আজমেরী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘোষণা দেয়, তাকে ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
সেই হত্যার পর প্রায় ৯ বছর ধরে প্রকাশ্যে নেই আজমেরী। কিন্তু দাপট কি কমেছে?
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় দৈনিকে ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে আজমেরীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেই পত্রিকা অফিসে একদল তরুণের হামলার পর শামীম ওসমানের ভাতিজার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
এই হামলা চালানোর পর নারায়ণগঞ্জজুড়ে আবার আলোচনা হচ্ছে, আজমেরী কি আবার তার ত্রাসের পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন?
যদি তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়াই যায়, তাহলে আজমেরীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন গ্রেপ্তার করছে না- এমন প্রশ্ন আবার বড় হচ্ছে।
রাজধানী লাগোয়া বন্দরনগরে আজমেরীর পরিবারের প্রভাব কমলেও এখনও সেটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তবে সদ্যসমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে-পরে ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে শামীম ওসমান অনুসারী নেতাদের সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ এই বার্তা দিয়েছে যে, ওসমান পরিবারের একাধিপত্য তারাও আর রাখতে চাইছে না। এর মধ্যে ‘সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা’য় এই হামলা হয়।
পত্রিকাটির সাংবাদিকরা অভিযোগ করছেন, হামলাকারীরা তাদের আজমেরীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য শাসাচ্ছিলেন। এ কারণেই এই হামলায় শামীম ওসমানের ভাতিজার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ জোরালো হয়েছে।
নাগরিক কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ধীমান সাহা জুয়েল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে তাদের নাকের ডগায় বসে আজমেরী ওসমান বাহিনী গণমাধ্যমের ওপর হামলা করার সাহস পায়। এর বাইরেও তারা নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনাদের মেরুদণ্ড সোজা রেখে এ শহরের সন্ত্রাসীদের ধরে বিচারের আওতায় আনুন।’
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পত্রিকা অফিসে হামলা করে সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করতে চায়। ঘটনার কয়েক দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু হামলার নেতৃত্বকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ আজমেরী বাহিনীকে থামানো না গেলে সামনে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ শহরে যারাই ত্বকী হত্যার বিচার চেয়েছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, যাদের বিরুদ্ধে লিখেছে, তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যার মামলার গ্রেপ্তার আসামি সুলতান শওকত ভ্রমরের আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যেহেতু আজমেরী ওসমানের নাম এসেছে, সেহেতু তাকে ও সহযোগীদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।’
পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা সবাই আজমেরীর অনুসারী। তবে মামলায় আজমেরীকে আসামি করা হয়নি।
সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক আজিজুল হক জানান, পত্রিকা অফিসে হামলা, ভাংচুর, সংবাদকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি ও দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে করা মামলাটি গত সোমবার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ কারণে মামলার তদন্ত ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি দেখবে জেলা গোয়েদা (ডিবি) পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি শাখা) জাহিদ পারভেজ নিউজবাংলাকে জানান, ‘হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা পলাতক রয়েছে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ত্বকী হত্যার ঘটনায় র্যাবের খসড়া অভিযোগপত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চাষাঢ়ায় প্রেসিডেন্ট রোডে সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা চালায় একদল যুবক।
অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে পত্রিকা অফিসে গিয়ে সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দিয়ে সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে ডিভাইস নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় ওই পত্রিকার সম্পাদক জাবেদ হোসেন জুয়েল সদর থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
সময়ের নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘সম্প্রতি ত্বকী হত্যা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি র্যাবের সেই প্রকাশিত খসড়া চার্জশিট নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। কপিটি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। সময় নারায়ণগঞ্জ পত্রিকায় সেটি হুবহু তুলে ধরা হয়। এ কারণে পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছে আজমেরী ওসমানের অনুসারী।
আজমেরী প্রকাশ্যেই
ত্বকী হত্যায় আজমেরীর সম্পৃক্ততার কথা র্যাব জানিয়েছিল প্রকাশ্যেই। সে সময় তিনি কয়েক বছর আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে এসেছেন।
২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেয়ার পর আজমেরী আবার এক বছরের জন্য উধাও হয়ে যান। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর হারুন বদলি হওয়ার পর তিনি আবার ফিরে আসেন।
২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাচ্চু নামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আজমেরীর বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলা হয়।
তখন পুলিশ আজমেরীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তাকে না পাওয়ার কথা জানায়।
আজমেরী তার বাড়ি আল্লামা ইকবাল রোড (কলেজ রোড) থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরেন। সঙ্গে থাকে বেশ কিছু মোটরসাইকেল। গাড়িটি সড়কে চলার সময় বিকট শব্দে গান বাজানো হয়। তখন দূর থেকেই স্থানীয়রা বুঝতে পারে, আজমেরীর বহর যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজমেরী কোনো পাড়া-মহল্লায় গেলে আগেই সেখানে অবস্থান করেন তার সহযোগীরা। তিনি গাড়ি থেকে নামার পর অন্যরা মাথা নিচু রাখেন। এটা অনেকটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো।
ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, নগরীর গার্মেন্টসের ঝুট সেক্টরে আজমেরী ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আজমেরীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বর্তমানে নাছির শহরে বেশ পরিচিত। তিনিই পত্রিকা অফিসে হামলা মামলার প্রধান আসামি।
আগে নাছিরের অবস্থানে ছিলেন তরিকুল ইসলাম লিমন নামে একজন। গত বছর একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়, তবে তাকে আগের মতো দেখা যায় না।
ত্বকী হত্যায় সম্পৃক্ততার তথ্য
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী শহরের শায়েস্তাখান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। দুদিন পর শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলার পর গত আট বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন রিফাত বিন ওসমান, সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও তায়েবউদ্দিন আহমেদ জ্যাকি। এরা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন ও অনুসারী ছিলেন।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
হত্যার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যায় অংশ নেন।
একটি খসড়া অভিযোগপত্র তৈরি করার কথাও জানান সেই র্যাব কর্মকর্তা। তবে গত আট বছরে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। গ্রেপ্তারও হয়নি আজমেরী।
যদি আজমেরীর সম্পৃক্ততা থাকবে, তাহলে কেন তাকে গ্রেপ্তার হয়নি এমন প্রশ্নে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মোহাম্মদ পাশার কাছ থেকে জবাব পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘চার্জশিট দেয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় আমরা বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে তদন্ত করছি, যাতে ঘটনার আগের ও পরের কারণগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা যায়। ঘটনার সঙ্গে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
কবে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হবে- এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমানের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।
আজমেরীকে আইনের আওতায় না আনায় তিনি ও তার সহযোগীরা এখন আবার পেশিশক্তি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম। তিনি বলেন, ‘নগরীর পাড়া-মহল্লার রংবাজ, মাদক ও চাঁদাবাজি মামলার আসামিসহ যাদের নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তারা আজমেরীর সঙ্গে যোগ দেয়। তারা নানাভাবে ভয় দেখায় স্থানীয়দের। ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয়া হয়।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় আলোচনায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। মৃদু, মাঝারি, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা দেখছে জেলাবাসী। মাঝে তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমের এই জেলা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে জেলায় আবারও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে এই জেলা।
আগের দিন বুধবারও এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার এসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
জেলা জুড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দিনের অধিকাংশ সময় মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।
গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগবালাই। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে ধান, কলা, আম, লিচুসহ মৌসুমী ফসল।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক হান্নান আলী বলেন, ‘এই তাপে মাটে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ি যাচ্চি। আর রোদির তাতে মাটে দাঁড়ানু যাচ্চি না। ধানের ক্ষেতে বেশি সেচ লাগচি। তাও আবার দিনের বেলায় পাম্পে পানি উটচি না। রাতি দিতি হচ্চি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে। সহসা বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
রাজশাহীর বাগমারায় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাস ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার হরিফলার মোড়ের একটি বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার ও এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রাজু হোসেন (২৫) পেশায় চা দোকানি। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লার আবদুর রাজ্জাক শাহের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অসুস্থ অবস্থায় তরুণীকে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৪ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনে ভুক্তভোগী তরুণীকে তাহেরপুরে নিয়ে আসেন রাজু। পরে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন রাজু। সেখানে আটকে রেখে এক মাস ধরে রাজু ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি থানায় খবর দিলে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকা থেকে রাজুকে আটক করে পুলিশ। রাতেই তরুণী বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আটক তরুণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
মন্তব্য