শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দিতে সরকারের তৎপরতা শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
তবে মন্ত্রণালয় থেকে সম্ভাব্য নতুন উপাচার্যের কোনো তালিকা ইউজিসিতে পাঠানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বলা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথাতেও তেমন ইঙ্গিত ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। ইউজিসির একজন সদস্য নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আভাস পাওয়া গেছে। তাকে অপসারণ করা হবে নাকি পদত্যাগ করতে বলা হবে, সে বিষয়টি মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।’
এ ক্ষেত্রে ইউজিসির বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘শাবিপ্রবিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তিনজনের একটি তালিকা মঞ্জুরি কমিশনে আসার কথা। তবে এমন কোনো তালিকা আমরা এখনও পাইনি। উপাচার্য নিয়োগের যে তালিকা পাঠানো হয়, সেখানে ইউজিসি শুধু মতামত প্রদান করে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আসেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘উপাচার্যকে সরানো হবে কি না, সেটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিষয়। আমি সেটি নিয়ে কথা বলতে চাই না।’
শাবিপ্রবির উপাচার্যকে সরিয়ে দিতে পূর্বসূরিদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হতে পারে। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।’
উপাচার্যের বিদায়কে সম্মানজনক করতেই এ পথ বেছে নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, যেকোনো সময় আসতে পারে এমন ঘোষণা।
একজন উপাচার্যকে কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা যায়, তা জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামানের কাছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়োগপত্রেই বলা থাকে: আচার্য যেকোনো সময় চাইলে তাকে অপসারণ করতে পারেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, উপাচার্যদের বিদায়কে সম্মানজনক করা কিংবা একজন উপাচার্যকে অসম্মান করতে না চাইলে তখন পদত্যাগ করতে বলা হয়। তিনি পদত্যাগপত্র পাঠালে সেটি আচার্য গ্রহণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘তবে আচার্য চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো উপাচার্যকে রিমুভ করতে পারেন।’
কে হচ্ছেন নতুন উপাচার্য
শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে এমন আলোচনা বৃহস্পতিবার থেকে চাউর হয়েছে ক্যাম্পাসে। পরবর্তী উপাচার্য কে হতে পারেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। যদিও এ বিষয়ে শিক্ষকদের কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
অনশন ভাঙানোর সময় মুহম্মদ জাফর ইকবালও আশ্বাস দেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার মেনে নেবে। সরকারের উচ্চমহল থেকে তাকে এই আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানান জাফর ইকবাল।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে দুজনের নাম আলোচিতও হচ্ছে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস।
এ দুজনের মধ্য থেকে একজনকে পরবর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিয়োগ দেয়ার আগেও উপাচার্য হিসেবে এ দুজনের নাম আলোচিত হয়েছিল।
তবে এমন কিছু জানেন না জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ রকম কিছু আমি শুনিনি। বর্তমান উপাচার্যকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে কি না তাও আমার জানা নেই।’
উপাচার্যের দায়িত্ব দিলে গ্রহণ করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তুলসী দাস বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই।’
নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘একজন উপাচার্য দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি চলে যাবেন বলে কিছু আমি শুনিনি। নতুন উপাচার্যের ব্যাপারে কোনো আলোচনাও আমি শুনিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে বা তিনি পদত্যাগ করতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে। তাকে সম্মানজনকভাবে সরানোর পথ হয়তো খোঁজা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককেই উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়াটা ভালো। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সবকিছু জানা থাকলে তার পক্ষে পরিচালনা করাটা সহজ।’
ওই শিক্ষক বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে যে দুজন শিক্ষকের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা শিক্ষকদের আওয়ামীপন্থি একটি প্যানেলের নেতা। যদিও আনোয়ারুল হক ট্রেজারারের দায়িত্ব নেয়ার পর আর সরাসরি কোনো বলয়ের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে আগে এই প্যানেলে সক্রিয় ছিলেন। একটি বলয়ের নেতা হওয়ায় তাদের পক্ষে সর্বজনীন হয়ে ওঠা কতটা সম্ভব হবে এবং অন্য প্যানেলের শিক্ষকরাইবা কতটা মেনে নেবেন- এ নিয়ে সন্দেহ আছে।’
কে নতুন উপাচার্য হতে পারেন, এটি এখনকার আলোচ্য বিষয় নয় বলে উল্লেখ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা চাই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। তাকে আর এক দিনও আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। এই দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’
২০১৭ সালের আগস্টে প্রথম দফায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ জুন উপাচার্য পদে তাকে তিন বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
৫০ বছরে মাত্র একবারই উপাচার্য অপসারণ
উপাচার্য নিয়োগ বা অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হলেও অপসারণের নজির খুব একটা নেই। দেশের ৫০ বছরে ইতিহাসে একজন উপাচার্যকে অপসারণ করা হয়েছিল।
সেটাও তিন দশক আগের কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনকে ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ছাত্রশিবিরের আন্দোলনের মুখে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি।
তবে পদত্যাগের উদাহরণের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শাসনের গত ১৩ বছরে পাঁচজন উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। তাদের সবাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন।
২০০৮-এ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর পরই উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ওই সময়ের উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ।
২০১২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে খুন হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহমেদ। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলনে যুক্ত হন শিক্ষক-কর্মচারীরাও। সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ডাকেন।
উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক ভোট পেলেও তাকে আর নিয়োগ দেননি রাষ্ট্রপতি। সে সময় নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।
বছর না গড়াতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আবারও উত্তাল হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সে সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় সব পন্থির শিক্ষক মিলে গড়ে তোলেন আন্দোলনে। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।
২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলে গালি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়েন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ১১ এপ্রিল ছুটিতে যান তিনি। ২৭ মে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছুটিতেই ছিলেন।
২০১৯ সালেই আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার ঘটনায় উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি।
শাবিতে আন্দোলনের শুরু যেভাবে
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ সে সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত আহত হন।
সে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন নামেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপাচার্যই পুলিশ ডেকে তাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এ কারণে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চান। বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
দাবি আদায়ে সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত কাওয়ালি অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র আন্দোলনের তিনজন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান।
রোববার বিকেলে মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীতে দু’দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও আয়োজকরা জানান, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে কাওয়ালি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রোববার বেলা ২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠান শুরুও হয়। হঠাৎ জুবায়ের আহমেদ নাফিজ, মুন্না কাজীসহ বেশকিছু লোক অনুষ্ঠানস্থলে এসে আয়োজকদের ওপর হামলা করে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নেয়ামত উল্লাহ ও আশিকুল তামিম আশিক আহত হন। সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। বিষয়টি সমাধানের জন্যে দুপক্ষের লোকজন নিয়ে বসেও কোনো ফল আসেনি। পরে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে ইখতিয়ার আহমাদ সাবিদ নামে আরেকজন আয়োজককে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। পরে আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আয়োজকদের একজন আব্দুর রহিম বলেন, ‘যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের নিয়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু কয়েকজন নিজেদের ছাত্র আন্দোলনের কর্মী দাবি করে অনুষ্ঠানে আমাদের ওপর হামলা করে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছে। আমরা এদের বিচার দাবি করছি।’
তবে হামলাকারী জুবায়ের আহমেদ নাফিজ দাবি করেছেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। তাকে না জানিয়ে কাওয়ইল গানের আয়োজন করায় বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি এইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ‘অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে আসার পর আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহতরা অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নেয়া হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।’
রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে এবং রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে মেধাবীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশের বাইরের মেধাবী লোকজন এসে চাকরি করছে। আর আমাদের দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে এবং যোগত্যা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
সারজিস আলম আরো বলেন, একটা সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচর মুক্ত করেছি। আমরা যখন রাষ্ট্রকে গঠন করতে যাব, তখন আমাদের মানসম্মত মেধা দরকার। আর সে মেধার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দেশ গঠন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা সম্পন্ন মানুষ লাগবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তবে দেশে আবার কোনো রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকব।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লা সালেহিন নয়ন, সামিয়া মাসুদ মুমু, মবাশ্বিরু জামান হাসান মৃধা, মেহেরাব হোসেন সিফাত, মুহাম্মদ হৃদয় হোসেন, আদিনা খান. খোন্দকার রায়হা, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র ও কাজী জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য কমন বাথরুম রয়েছে ২৮টি। এর ২৭টিই পুরনো এবং জীর্ণ দশা। কেবল একটি বাথরুমের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সম্পূর্ণ টাইলস করা এবং বেসিন ও কমোডসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাথরুমটিতে। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন করে এসব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অত্যাধুনিক ফিটিংস দিয়ে সাজানো বাথরুমটি ব্যবহার করতেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কমিটি গঠনের পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এই হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকা শুরু করেন। তারা দুজন হলের ২৩৪ নম্বর বাথরুমটি ব্যবহার করতেন।
নেতাদের তুষ্ট করতে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ। তিনি বাথরুমটি আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি আবেদনপত্র পাঠান। এই আবেদনপত্রের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আবেদনপত্রটিতে বলা হয়েছে, ‘...জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত বাথরুমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যবহার করে থাকেন।’
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘হল প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাথরুমটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। এ কাজে আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করে। যেখানে অন্য বাথরুমগুলোর অবস্থা খারাপ সেই পরিস্থিতিতে দুজন বিশেষ ছাত্রনেতার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে বিশেষ সুযোগ দেয়া অন্যায় এবং বৈষম্য। কারণ এই টাকাগুলো কারও ব্যক্তিগত না; বরং শিক্ষার্থীদের ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মুন্না বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হতো, যারা ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ছাত্রলীগের রাজত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
‘বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ শায়খুল কখনোই ছাত্রদের জন্য কিছু করেননি। উল্টো বিভিন্ন সময় ছাত্রদেরকে বিপদে ফেলেছেন তিনি। এমন বাথরুম-সেবা ছাড়াও তিনি সবসময় ছাত্রলীগকে নানামুখী সেবা দিয়ে গেছেন। এমন একজন ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, ‘ওরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিল। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক শায়খুল হল প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গণবিয়ের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পাত্রকে অবশ্যই এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হতে হবে। আর উপস্থিত রাখতে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর হল প্রাঙ্গণে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হবে। আয়োজকরা বলছেন, সমাজে বিয়ের বিষয়টিকে সহজ করতে তাদের এই আয়োজন। সেদিন যারা সব শর্ত পূরণ করে বিয়ে করতে চাইবেন তাদের সেদিনের খরচ বহন করবেন হলের অন্য শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে ধুম পড়ে গেছে পাত্রপাত্রী খোঁজার। তবে এখানেও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের অন্যতম একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘হঠাৎ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে নিরুৎসাহিত করছি আমরা। বিয়ে জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই আবেগের বশে কেউ প্ররোচিত হবেন না, আশা করছি। তবে কাউকে নিষেধও করছি না আমরা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই গণবিবাহের মূল টার্গেট, ক্যাম্পাসে প্রেমিক যুগলদের সম্পর্কটাকে হালাল এবং সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করা।’
যোগাযোগ করা হলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ, যেন সমাজে বিয়ে বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করা হয়। ছেলের চাকরি থাকতেই হবে- এরকম বাধ্যবাধ্যকতা যেন বন্ধ করা হয়।’
এই আয়োজনের পরিকল্পনা কীভাবে এসেছে জানতে চাইলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের সবাই একটা ট্রমাটাইজ পরিস্থিতি অতিবাহিত করছি। তাই আগামী ২০ তারিখ আমরা একটা ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে আমাদের হলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
‘পরে মাথায় এলো আমাদের হলের অনেক ভাই প্রেম করেন। বিয়ে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে রাখায় অনেকে বিয়ে করতে পারছেন না। তাই গণবিয়ের সিদ্ধান্তটা নেই। তবে পাত্রকে অবশ্যই আমাদের হলের হতে হবে। পাত্রী যে কেউ হতে পারেন। আর অবশ্যই এই বিয়ে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি এবং উপস্থিতিতে।’
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রথমে আমি আমাদের হলের গ্রুপে পোস্ট দেই। ভালো সাড়া পাওয়ার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে পোস্ট দিয়েছি।’
এখন পর্যন্ত কতজন যুগল আগ্রহ দেখিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য হলের অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আমাদের হলের দুই ভাইয়ের বিয়ে কনফার্ম। ওনারা পারিবারিকভাবে বিয়েটা করবেন আর ঘরোয়াভাবে এটির আয়োজন আমরা হলে করব।’
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনের পর হাফসাতুল জান্নাত চৈতী নামের এক শিক্ষার্থী সব পাত্রীকে হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়া এবং সাজিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে বলে দিতে চাই যে আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান; যদি মনে করেন যে কিছু হবে না তাহলে তা হবে ভুল ধারণা। আর যারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন তারা ভাইবেন না যে এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করার পর আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসাব।’
টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে বৃহস্পতিবার বিকেলে গণঅভ্যুত্থান প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করবেন; তবে যোগ্য হয়ে আসবেন, যাতে করে কেউ আপনাদের কটু কথা না বলে। এমন লোক আসবেন যারা সঠিক কথা বলবেন। যারা সাধারণ মানুষের কথা বলবেন তারাই রাজনীতি করবেন।
‘একটি বিষয় মনে রাখবেন, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের পর থেকে সব চাঁদাবাজি, সব সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম আইনি, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান, মিতু আক্তার, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, এলমা খন্দকার এ্যানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাকিবুল হাসান।
তারা বলেন, ‘প্রশাসনে আওয়ামী লীগের যেসব প্রভুর বসে আছেন তারা হারুনের দিকে তাকান; তাহলেই বুঝতে পারবেন। সাবধান হয়ে যান।
ছাত্ররা যখন মাঠে নামে খালি হাতে ফেরে না। ১৯৫২ সালে তারা ফেরেনি। ১৯৯০ সালেও শাসক গদি থেকে নেমেছিলে। এবারও ছাত্র-জনতা মাঠে নামার পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেমে গেছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘আগামীতে যদি কেউ ফ্যাসিস্ট সরকার হতে চায় তাহলে ছাত্র-জনতা কঠিনভাবে তা মোকাবিলা করবে। আমরা মাঠ থেকে সরে যাইনি। আমরা ট্রাফিকের কাজ করেছি, ক্লিনের কাজ করেছি, বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পূর্ণকালীন দুজন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগ পাওয়া দুজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ শাখার উপ-সচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ, ১৯৭৩ এর সংশোধিত আইন, ১৯৯৮-এর ৪ (১) (বি) ধারা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তাদের এই নিয়োগের মেয়াদ হবে চার বছর। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দায়িত্ব থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক।
একই দিনে বুয়েটে উপ-উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ দেও হয়। এতে সই করেছেন উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম।
উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ১১(১) এবং (২) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামানকে বুয়েটের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তাকে নিয়োগের শর্তে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। আগামী চার বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
তাছাড়া উপাচার্য পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা পাবেন। বিধি অনুযায়ী তিনি অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
প্রথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০১-এর ৩ নং অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ১২ (এ) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে বুয়েটের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তিনি আগামী চার বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য