রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত দেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে রেলপথ ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার। এই রেলপথে রয়েছে ২২২টি অবৈধ লেভেলক্রসিং।
বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় এসব ক্রসিংয়ে মারা গেছে অসংখ্য মানুষ। অবশ্য এসব দুর্ঘটনার দায় রেল কর্তৃপক্ষ সেরেছে একটি করে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে। রেলের নোটিশে বলা হয়, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় নিতে হবে নিজেকেই।
সবশেষ বুধবার নীলফামারীর দারোয়ানীতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চার যাত্রী নিহত হন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলিনগর হাজির মোড় এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় তিনজনের।
মাস দেড়েক আগেও নীলফামারীর সোনারায় ট্রেনে কাটা পড়ে একই পরিবারের তিন শিশুসহ প্রাণ হারান চারজন। এ ছাড়া ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অরক্ষিত ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় বর-কনেসহ ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলে ১ হাজার ১৯৯টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের।
রেল কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের দায় নিজেরা না নিয়ে চাপাচ্ছেন এলজিইডি, সওজ ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী জোনে খুলনা স্টেশন থেকে টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত বৈধ রেলগেট বা লেভেলক্রসিং রয়েছে ৮০৮টি। এসব গেট বা লেভেলক্রসিং স্পেশাল, এ, বি, সি এবং ডি গ্রেড লেভেল করা হয়েছে। গ্রেড অনুযায়ী লোকবল রয়েছে সেগুলোতে।
পাকশী জোনের ঈশ্বরদী বাইপাস-আজিমনগর থেকে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে ১২৩টি।
লালমনিরহাট জোনের (রংপুর বিভাগ) সান্তাহার-মহিমাগঞ্জ হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সুলতানপুর পর্যন্ত বৈধ লেভেলক্রসিং আছে ৪১৭টি। সান্তাহার-আদমদীঘি হয়ে নয়নীবুরুজ পর্যন্ত অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ৯৯টি।
এসব অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে এলজিইডির ১৮৪টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পাঁচটি, বাকিগুলো ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের অধীনে।
পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ৫৬৮টি লেভেলক্রসিং গেটের জন্য গেটম্যান ছিলেন ১৮৯ জন। তাদের মধ্যে এখন ১১৯ জন কর্মরত। বাকি ৭০ জনকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ৭০০ গেটকিপার অস্থায়ীভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছেন।
সে হিসাবে ৬৭৯টি লেভেলক্রসিং গেটে কোনো গেটকিপার নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের দুই পাশে চারটি পিলার দেয়া আছে। আর দুই পাশে দেয়া আছে দুটি নোটিশ বোর্ড। তাতে লেখা, ‘সাবধান, এই গেইটে কোনো গেটম্যান নেই, পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং কোনোরূপ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিজেই বাধ্য থাকিবেন।’
রংপুরের তাজহাট লেভেলক্রসিংয়ের কাছেই মুদি দোকান করেন মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খুব ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার হয়। কোন দিন করি তো মনে হয়, এই বুঝি ধাক্কা লাগিল। বুককা সাৎ করি ওঠে। গেট থাকলে এই সমস্যাটা হইলনে হয়।’
মাহিগঞ্জ বালাটারী গেটের পাশেই বাড়ি মর্জিনা বেগমের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামরা তো বড়, হামারগের সমস্যা নাই। কিন্তু টেন যকন আইসে, তকন তো ছৈলগুলে দৌড়াদৌড়ি করে। নাই গেট, নাই মানুষ। কাই কাক বাধা দেয়। কখন যে কী হয় কওয়া যায়।’
রংপুরের সাতমাথা রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ভুট্ট বলেন, ‘গেটও নাই, গেট ম্যানও নাই, টেনের হুইসেল শুনি মানুষ দাঁড়ায়। আবার যখন টেন চলি যায় তখন ফির যাওয়া-আইসে করে।’
বুধবার নীলফামারীতে ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অহিদুল ইসলামের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, ‘ওই গেট যদি থাকলি হয়, তাহলে কী এত বড় ক্ষতি হইল না হয়। হামরা মরলেই কী, বাঁচলেই কী, কাইও তো খোঁজ নিবের নয়।’
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট শঙ্কর গাঙ্গুলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যেসব লেভেলক্রসিং রয়েছে, সেগুলোতে লোকবল রয়েছে। তারা শিফট ভাগ করে কাজ করে। বৈধ কোনো লেভেলক্রসিংয়ে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (লালমনিরহাট) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যেসব গেট আছে, সেগুলোতে লোকবল আছে। রেলপথে অবৈধ গেট যেন বন্ধ করা হয় এবং নতুন করে কোনো গেট তৈরি না করা হয়, সে জন্য এলজিইডি, সওজ, জেলা পরিষদ, মেয়রকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
তার দাবি, তারা অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও অন্যরা নিষ্ক্রিয় থেকেছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা গাইবান্ধা জেলার এলজিইডির বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছি বিষয়টি নিয়ে।’
নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এসব গেট যদি তারা রাখতে চায়, তাহলে তাদের অর্থায়নে লোক নিয়োগ দিতে হবে, সেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এলজিইডি রংপুর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাইবান্ধার প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না জানা নেই। তবে লেভেলক্রসিং নিয়ে চিঠি দেয়া-নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে দুই ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগদান সম্পন্ন হলেও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। এ অবস্থায় দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসি নিয়োগের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে বটতলা প্রাঙ্গণে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেইন গেটে গিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। সেখানে তারা সমাবেশ করেন। প্রায় আধ ঘণ্টার সড়ক অবরোধে মহাসড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার পতনের দীর্ঘদিন পরও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে আজকের এই ব্লকেড কর্মসূচি। অতি দ্রুত একজন দক্ষ, যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করতে হবে। নইলে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
তারা বলেন, সেশনজট দূর করার জন্য সবচেয়ে জরুরি একজন মানসম্মত, জ্ঞানী ও একাডেমিশিয়ান ভিসি নিয়োগ। অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখা হবে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হোসেন বখত চত্বর এলাকায় ময়নার পয়েন্ট গলিতে অবস্থিত ডংকা শাহর মাজার ভেঙে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।
শুক্রবার ফজরের নামাজের পর কিছু মুসল্লি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাজারে হামলা চালান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশ প্রশাসনের পাহারায় মাজারের আশপাশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয় মাজারটি।
এলাকার মুসল্লিরা অভিযোগ করে বলেন, ‘এই মাজারে গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এগুলো কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। এ কারণে মাজার ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’
এ বিষয়ে ডংকা শাহ মাজারের খাদেম আছদ আলী বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় মাজারে তালা দিয়ে বাসায় যাই। আজ সকাল ৮টার দিকে খবর পাই যে এলাকার শ্যামলের নেতৃত্বে কিছু লোক মাজার ভাঙছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে মাজারটা রক্ষা করেছে।
তিনি বলেন, ‘মাজারে থাকা দানবাক্সটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। দানবাক্সে ১৫ হাজার টাকার মতো জমা ছিল। সেই টাকাগুলো নেই। মাজারের সামনের সিঁড়ি ভেঙেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘ডংকা শাহর মাজার ভাঙচুর হয়নি। এলাকার মানুষ মাজারের কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে দানবাক্সের টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তারা অভিযোগেও বলেনি।’
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জুম্ম ছাত্র জনতা।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে তাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় তারা পাহাড় থেকে সেনাশাসন সরানো, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে এক পাহাড়ি ছাত্র বলেন, ‘আমরা মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মার যোগ্য উত্তরসূরি। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার রক্ত কোনো আপোষ মানে না। সেই রক্তের শপথ নিয়ে আমরা বলতে চাই, জুম্ম জনগণের ওপর যত মানবাধিকার লংঘন হয়েছে তার সবগুলোর বিচার আমরা নিয়ে ছাড়ব।’
প্রায় দুই ঘন্টা সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ মোড়ের দিকে যান এবং প্রায় বিশ মিনিটের মতো মোড়টি অবরোধ করে রাখেন।
একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ এই ছাত্র জনতা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বুধবার এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) খাগড়াছড়ি ও আজ (শুক্রবার) রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ প্রদান করে ওই বার্তায় বলা হয়, আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
বার্তায় বলা হয়, এ লক্ষ্যে সরকার খুব শিগগির একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আগামীকাল শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পরিদর্শন করবে। প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থাকবেন।
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে পাহাড়ি ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপায় এসে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানে হামলা চালান। খবর পেয়ে বাঙালিরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ওই সময় আহত হন উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ টহল টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর (বশেমুরবিপ্রবিপি) ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধূমপানসহ সব ধরনের মাদক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের চতুর্থ সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই সভা হয়।
সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি ছাড়াও সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সব ধরনের মাদক বহন, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট সদস্যগণ একমত হয়েছেন।’
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ছাড়া সিন্ডিকেটের চতুর্থ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগের পাঠ্যসূচি অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
এর আগে সিন্ডিকেট সভার শুরুতে চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে যেসব ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। এ ছাড়াও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
গতকাল বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া বশেমুরবিপ্রবিপির চতুর্থ সিন্ডিকেট সভা চলে প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১০ সদস্যের মধ্যে ৯ জন অংশ নেন।
আরও পড়ুন:আগের দিনে সহিংসতায় প্রাণহানির পর শুক্রবার খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘যেহেতু সাম্প্রতিক ১৯.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে খাগড়াছড়ি সদর থানা এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তৎপ্রেক্ষিতে অফিসার ইনচার্জ, খাগড়াছড়ি সদর থানা হতে প্রাপ্ত অধিযাজনপত্রে উক্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে উল্লেখ থাকায়, সূত্র: অফিসার ইনচার্জ, খাগড়াছড়ি সদর মডেল খানা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা-এর স্মারক নম্বর ৪০৫৬, তারিখ: ২০.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।
‘যেহেতু উল্লিখিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কতিপয় ব্যক্তি একত্রে মিলিত হয়ে উক্ত স্থানে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়, সেহেতু আমি সুজন চন্দ্র রায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অত্র উপজেলার পৌরসভা (সদর) এলাকায় অদ্য ২০.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ১৪.০০ ঘটিকা হতে রাত ২১.০০ ঘটিকা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলাম।’
আদেশে আরও বলা হয়, ‘এ আদেশ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।’
মন্তব্য