চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রোজার সময় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মঘণ্টা কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকেরা। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাত জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন সংগঠন। হাইকোর্ট নিহতদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃশ্যত কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি এ নিয়ে।
গত বছর ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুলে ম্যাগাজিন পক্ষকাল-এর অফিস থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হন। এ নিয়ে প্রথমে থানায় ডায়েরি ও পরে মামলা করে তার পরিবার।
ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর থেকে নিজ দেশেই অনুপ্রবেশের দায়ে কাজলকে আটকের কথা জানায় বিজিবি। পরে নিখোঁজের আগের দিন এক সংসদ সদস্যের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাসহ অন্যান্য মামলায় প্রায় সাড়ে আট মাস কারাভোগের পর গত বছর ২৫ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান কাজল।
ওই বছর কোনো গুম বা নিখোঁজের ঘটনা নজরে আসেনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। এ নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি তাদের। অথচ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনায় কমিশনের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা।
এসব ঘটনায় জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো সব সময় সোচ্চার থাকলেও এ ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অনেকটাই নীরব।
এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও মানবাধিকার কমিশনের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার কর্মীসহ বিশেজ্ঞরা বলছেন, যে আশা ও আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে এক দশক আগে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে, তার প্রতিফলন কমিশনের কাজে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এতো দিনেও জনগণের ভরসা ও আস্থার জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি স্বাধীন এ সংস্থাটি। কমিশন বরাবরই রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার পালন হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য ঘোচাও, সাম্য বাড়াও, মানবাধিকারের সুরক্ষা দাও।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন অনুযায়ী, সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা তাদের সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ক্ষেত্রে এ কমিশন নিজ উদ্যোগে বা দরখাস্তের ভিত্তিতে সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাইতে পারবে। এ ব্যাপারে কমিশন কোনো সুপারিশ করলে তা বাস্তবায়ন করে ছয় মাসের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি
গত অক্টোবরে প্রকাশিত আইন ও শালিশ কেন্দ্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বছরের প্রথম নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘ক্রসফায়ারে’ ৪৮ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ৬৭ জন মারা যান। এর মধ্যে কয়েদি ২৫ জন এবং হাজতি ৪২ জন।
একই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৫৪ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সময় একজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটজন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের দ্বারা ১৪ জন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৩ জন এবং হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ১৩ সাংবাদিক আহত হন। এ ছাড়া ১০৬ সাংবাদিক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন অধিকাংশ বিষয়ে কমিশন অতি সতর্কতা দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে কমিশন জানে না তার ক্ষমতা কতটুকু। আবার যতটুকু ক্ষমতা আছে, তা-ও তারা প্রয়োগ করে না। কমিশন একটি সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ছোট কিছু ঘটনা ছাড়া তাদের সুপারিশের যথাযথ বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মানবাধিকার কমিশন বলছে, বিভিন্ন ঘাটনায় তারা তাৎক্ষণিত তৎপরতা দেখিয়েছে। এমনকি বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সরকারের কাছে সুপারিশ দিয়েছে।
জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের বিভিন্ন কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এবারের প্রতিপাদ্যও বৈষম্য ঘোচাও, সাম্য বাড়াও। কমিশনও সে নীতিতে বিশ্বাস করে, সেভাবেই কাজ করে। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেখানেই কমিশন ভূমিকা রাখে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে মানবাধিকারের প্রশ্নে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। তা ছাড়া আবরার হত্যার বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে মানবাধিকার নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা কেটেছে বলেও মনে করি।’
কমিশন বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কমিশনে ১ হাজার ৩৪৯টি অভিযোগ পড়েছে। এর মধ্যে কমিশন ৬৫ শতাংশ বা ৮৭২টির নিষ্পত্তি করেছে।
এর আগে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৩৭টি অভিযোগ পড়ে। এর মধ্যে ৫ হাজার ২৫৬টি নিষ্পত্তি হয়। তবে এ সব অভিযোগের বেশিরভাগই ব্যক্তি কেন্দ্রিক।
এ দিকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকলেও সরকার অনেক ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ‘উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানবাধিকারের দুটি দিক: একটি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, আরেকটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে ততটা হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আইনের শাসন যতটা দৃঢ় হওয়ার কথা ছিল, মজবুত হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানবাধিকারের প্রশ্নে অনেক কাজ করার রয়েছে। তবে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠান বা মানবাধকার কামিশনকে। কিন্তু এ কমিশন যে গতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে, তা ধরে রাখতে পেরেছে বলে প্রতীয়মান হয় না। অনেকটাই মৃয়মান হয়ে গেছে। তার যে সম্ভাবনা ছিল, তার সুর হারিয়ে ফেলেছে, মাথা নত করে ফেলেছে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কমিশনকে আমলাদের একটা পুনর্বাসন স্থল করে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টেরও একটা রায় আছে। তাই স্বাধীনচেতা কিছু মানুষ যদি এর পরিচালনার ভারে না থাকে, তা হলে এ কমিশন থেকে বেশি কিছু হবে না।
‘কমিশনের কাজ তো মানবাধিকার রক্ষা করে সরকারকে সাহায্য করা। রাষ্ট্রের যেসব সংস্থা বা ব্যক্তি ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তাদের বিরুদ্ধে নিরীহ জনগণের পাশে দাঁড়ানোই মানবাধিকার কমিশনের কাজ।’
আরও পড়ুন:সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েদের একটু আলাদা করে বেশি বয়স দেয়া হয়েছে। মেয়েদের আমরা এই কারণে দিয়েছি যে, মেয়েদের ছেলেদের মতো ওই বয়সে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না।
‘ফ্যামিলি অবগিগেশন্স থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চাকাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনও।’
কমিটি অবসরের বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেনি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক এবং সাম্প্রতিক গণহত্যায় উস্কানি ও মদদদাতাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আন্দোলনের সময় আহতদের হাতে রোববার অনুদানের চেক তুলে দেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে কোনো মামলা হলে সেগুলো তদন্ত করার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করবে।
নাহিদ জানান, শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানে আহত এবং যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
আহতদের বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, যারা গণহত্যায় উস্কানি ও সমর্থন দিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
‘যদি কোনো সাংবাদিক বা তাদের পরিবার মনে করেন যে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তাহলে আমরা তাদের উৎসাহিত করব তারা যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
আন্দোলনে হতাহতদের বিষয়ে বর্তমানে একটি আইনি দল কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করা নিশ্চিত করব। অভ্যুত্থানের সময় যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তারা আমাদের জাতির বীর এবং আমরা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই।’
‘শহীদ ও আহতদের যেন আমরা দল-মত বা রাজনৈতিক ব্যানারের ভিত্তিতে ভাগ না করি। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তাদের আত্মত্যাগকে কাজে লাগানো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।’
ঢাকা মেডিক্যালে আসার আগে যারা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের খরচও বহন করা হবে বলে নিশ্চিত করেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় ফাউন্ডেশনের সচিব মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে আহতদের অনুদানের একটি হিসাব সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র: বাসস
সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান কুশলাদি বিনিময়ের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা এ সময় সেনাপ্রধানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মোহাম্মদ সজিব ভুঁইয়া এবং তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে তারা আহত প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় তারা আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
রোববার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৫০২-৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও অর্থ সহায়তা প্রদান শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোগীদের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও শহীদদের পরিবারকে এ পর্যন্ত এক কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩০ জনকে এক লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর আগে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩৩ জনকে ৩৩ লাখ টাকা এবং পঙ্গু হাসপাতালে ৫৯ জনকে ৫৯ লাক টাকা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে ২১ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া শেষ টেস্ট খেলতে দেশে ফিরবেন তিনি।
তবে গত আগস্টে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে সাকিবের সম্পৃক্ততার জন্য তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
সম্প্রতি একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারী জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের সময় সাকিবের কর্মকাণ্ডের জন্য তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রাফিতি প্রদর্শন করেছে। মিরপুরের ক্রিকেট স্টেডিয়াম এলাকায় সাকিবের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেয়াল লিখনও করেছেন তারা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, আন্দোলনের সময় দেড় হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তারা বলছেন, আমরা চাই না সাকিব আবার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ান। কারণ, তার সঙ্গে ফ্যাসিবাদী সরকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এদিকে সাকিবের দেশে ফিরে আসা কিংবা টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণে কোনো বাধা দেখছেন না ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। রোববার গণমাধ্যেমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন অভিমত জানান।
সাকিবের উল্লেখ করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে কোনো বাধা দেখছি না। ক্রিকেট দলসহ প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা সেটা নিশ্চিত করব।’
মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাকিব ও বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জার্সি পোড়ানোর বিষয়ে আসিফ মাহমুদ এই ক্ষোভকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই দুই ক্রিকেটার শেখ হাসিনা সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন।
সাকিব ফ্যাসিবাদী সরকারের সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমরা অনেক বড় আন্দোলনের পর এখানে এসেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তবে এখনও কিছু আবেগ জড়িত রয়েছে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে সাকিব আন্দোলনের সময় নিশ্চুপ থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নিজ শহর মাগুরার অগ্রগতির জন্য আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং কেবল অল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য ছিলাম।’
আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে এবং সাকিবসহ তার দল আওয়ামী লীগের আরও অনেকের বিরুদ্ধে বেশকিছু হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সাকিব জড়িত না থাকলে মামলার ফাইল থেকে তার নাম বাদ দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ হয় গেছে। তা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে মৎস্য বিভাগ।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার একশ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই একশ’ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সব রকমের ইলিশ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এই জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে নদীতে অভিযান চলছে।
‘নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার মধ্য রাত থেকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে তর্কের মধ্যে ঘি ঢেলেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার রাতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ফেসবুকে লেখেন, “আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি কয়েক দিন পর শোনা যায় যে, আসল ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়।”
সম্প্রতি সরকারের পতনের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কে তা নিয়ে নানা পক্ষ থেকে কৃতিত্বের দাবি উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বমঞ্চে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে ‘ব্রেইন বাহাইন্ড দ্য হোল রেভ্যুলুশন’ তথা গোটা বিপ্লবের নেপথ্যের ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। মূলত এর পর থেকেই ‘মাস্টারমাইন্ড’ শব্দটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু শনিবার দাবি করেন, “এই আন্দোলনের একমাত্র ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছেন তারেক রহমান। কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যা করা দরকার, সবই করেছেন তিনি।”
ফেসবুক পোস্টে সোহেল তাজ লিখেছেন, “আজকে পত্রিকায় পড়লাম বিএনপির নেতা শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ তারেক রহমান। আবার জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সাহেব বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার, কোনো দলের নয়। আবার কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে মাহফুজ।”
তিনি আরও লেখেন, “আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি কয়েকদিন পর শোনা যায় যে আসল ‘মাস্টারমাইন্ড’ হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়।”
সোহেল তাজ স্মরণ করিয়ে দেন, ‘আমাদের সবার নিশ্চই মনে আছে, বেচারা প্রিন্স চার্লসের কত বছরই না অপেক্ষা করতে হয়েছিল রাজা হওয়ার জন্য।’
তার পোস্টে আবদুর রহিম খাঁন বাবু নামের একজন কমেন্ট করে লেখেন, ‘পচানোর একটা ডিপ্লোমেটিক সিস্টেম থাকে, কিন্তু আপনি সজীব ওয়াজেদ জয়কে পচাতে এসে আপনি নিজেই চরম হীনমন্যতায় ভুগছেন তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিলেন।’
তার মতো অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সোহেল তাজের এ পোস্টের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য