সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে (১৯৭৫-৮১) দেশে ২৬টির মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল বলে বিভিন্ন ভাষ্যে জানা যায়। কেউ কেউ বলেন সংখ্যাটি ২১।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর। এই অভ্যুত্থানটি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য জানা যায়। বাকিগুলো ধোঁয়াশার আড়ালে।
১৯৭৭ সালের অক্টোবরের অভ্যুত্থানে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন শতাধিক সেনা অফিসার। অনেকে নিহত হয়েছিলেন অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে। আবার বিচারের নামে মেরে ফেলা হয় কয়েক শ সেনাকে। সব মিলিয়ে মোট সংখ্যাটি আড়াই হাজারের মতো হতে পারে।
তাদের মধ্যে ১৩০০ জনের বেশি সেনাকে ফাঁসি ও ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। বাকিদের মৃত্যুর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। সেই সময় থেকে আজও তারা পরিবারের কাছে নিখোঁজ।
জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক বাহিনীতে অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা ও মৃতের সংখ্যা মেলানো খুবই কঠিন। এ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
প্রায় ৪৫ বছরের মাথায় এসে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়ার আমলে নিহতদের তালিকা করার নির্দেশ দেন।
তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ রকম একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কতটা কঠিন? এটি আদৌ কি সম্ভব?
সেই সময়ের বেশির ভাগ প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত নেই। আবার অনেক দালিলিক প্রমাণ নষ্ট করারও অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে।
নথি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে
এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসান পিন্টু। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা খুব কঠিন কাজ। তবে অসম্ভব নয়। হয়তো এখনও ব্যক্তিগতভাবে কিছু দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যাবে। কিছু ঘটনার সাক্ষী ও স্বজন এখনও বেঁচে আছেন। দ্রুত কাজ শুরু করলে হয়তো এখনও সত্যের খুব কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। তবে দেরি করলে বা আরও ১০ বছর পর করলে কিছুই মিলবে না।’
জায়েদুল আহসান বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ওই পাঁচ বছরে কমপক্ষে ১৯টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। তবে নিহতের সংখ্যা কারও কাছে এককভাবে নাই। হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে আছে।’
জায়েদুল আহসান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠন করা দরকার। যে কমিশন ওই সময়কালের হত্যা, হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার হত্যা, বিনা বিচারে হত্যা এবং বিচারের নামে প্রহসনের ট্রাইব্যুনালে হত্যা বা ফাঁসি– এসব কিছুর তথ্য সংগ্রহ করবে। তথ্য সংগ্রহের উপায় হলো দলিল-দস্তাবেজ বা মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণ।
তিনি বলেন, ‘দলিল-দস্তাবেজ দুই সামরিক সরকারের আমলেই (জিয়া ও এরশাদ) নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এখনও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও কারও কাছে থাকতে পারে। সেগুলো আহ্বান করা ও সেই সময়ের মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এই তথ্যানুন্ধানী কমিটিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন করতে হবে, যাতে তথ্য চেয়ে তারা যে কাউকে তলব করতে বা সমন জারি করতে পারে। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও হন, তবু কমিশনে এসে তথ্য দিতে বাধ্য থাকেন।’
জায়েদুল আহসানের মতে, এই কমিশন দুভাবে গঠিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি বা সাবেক প্রধান বিচারপতি হতে পারেন এটির প্রধান। তার সঙ্গে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও গবেষক থাকতে পারেন। আবার সংসদীয় কমিটিও হতে পারে। সেটা সংসদ ঠিক করবে। সেখানে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী থাকতে পারেন। সেটা সর্বদলীয় হতে পারে। আবার দুটি কমিটি একসঙ্গেও হতে পারে। তারা আলাদাভাবে কাজ করে একসঙ্গে বসতে পারে।
তবে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, সরকার চাইলে এ রকম একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কঠিন হবে না।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার তালিকা করতে চাইলে এটা করা কোনো ঘটনাই না। এটা খুবই সহজ। কারণ এর প্রতিটি ঘটনারই রেকর্ড আছে। সরকার চাইলে সব তথ্যই সরকার পাবে। কারণ ওই সময়ের অনেকেই তো এখনও বেঁচে আছেন। আপনার-আমার কাছে হয়তো কঠিন। আমরা অ্যাকসেস পাব না। যাদের ফাঁসি দিয়েছে, তাদের রেকর্ড তো জেলখানাতেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘আন-রেকর্ডেড বা নিখোঁজ বলে তো কিছু নেই। সবই তো রেকর্ডেড। যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে, কারও লাশই পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। ফলে পরিবারের কাছে সবাই নিখোঁজ। এমনিতে তো কেউ নিখোঁজ হয়নি।
‘সরকারের পক্ষে কোনো কিছুই কঠিন না। শেখ মুজিবের ওপর অল পুলিশ রেকর্ডস সিন্স নাইনটিন ফোরটি এইট বাইর করছে না? প্রধানমন্ত্রী চাইলে অল রেকর্ডস তিনি পাবেন। তিনি নিজেই ডিফেন্স মিনিস্টার। তিনি তথ্য চাইলে ডিজিএআই, এনএসআই, পুলিশ, জেল সবাই সব রেকর্ড তাকে দেবে। আমরা সিভিল হিসেবে হয়তো এসব পাব না। কিন্তু তিনি তা পাবেন। কারণ সব আছে।’
লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে চলা হত্যা, গণহত্যা, গণফাঁসি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠনের জন্য অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম এই কমিশন গঠনের দাবি ওঠে জাতীয় সংসদে। এরপর নানা সময়ে আমার বই ধরে সংসদে বিভিন্ন সংসদ সদস্য দাবি তুলেছেন। কিন্তু কমিশন গঠন হয় না, তথ্যের সন্ধানও হয় না। প্রাণ হারানো সেনার তালিকাও হয় না।’
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির একটি উপকমিটি গঠন হয়েছিল সামরিক বাহিনীতে এসব অভ্যুথানের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে। তবে কর্নেল শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন এ কমিটি খুব বেশি তথ্য জোগাড় করতে পারেনি।
কত মানুষকে হত্যা করা হয় সশস্ত্র বাহিনীতে
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের অভ্যুত্থান নিয়ে জায়েদুল আহসানের লেখা বই রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি । জায়েদুল আহসান ওই ঘটনায় সামরিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের আংশিক তালিকা উদঘাটন করেছিলেন ঢাকা, বগুড়া ও কুমিল্লা কারাগারের নথি ঘেঁটে।
বইতে তিনি লিখেছেন: ‘১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের কথিত বিচারে সেনা ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। ঐ ঘটনায় পূর্বাপর মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে বিচারের আওতার বাইরেও অনেককে মরতে হয়েছে।
‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী দুই মাস ১ হাজার ১শ থেকে ১ হাজার ৪শ সৈনিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কিংবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছিল। ঐ সময় শুধু ঢাকা ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈনিকদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ঢাকায় ১২১ জন আর কুমিল্লায় ৭২ জনের ফাঁসি হয়। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ শতাধিক সৈনিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।’
অক্টোবরের ওই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনি ম্যাসকারেনহাস আ লিগ্যাসি অব ব্লাড গ্রন্থে বলেছেন, ‘এ সময় পরবর্তী দুই মাসে বাংলাদেশের সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী ১১৪৩ জন সৈনিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। বাংলাদেশে সে সময়ে প্রায় সকল কারাগারে গণফাঁসি দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশের প্রায় সকল প্রগতিশীল সংগঠনই তখন এর প্রতিবাদ করেছিল। অভিযোগ উঠেছিল, প্রহসন ও কোনো আইনকানুনের পরোয়া না করে নামকাওয়াস্তে বিচার ও ফাঁসির ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছিল।’
সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা (১৯৭৫-৮১) নামক বইয়ের লেখক সাংবাদিক ও গবেষক আনোয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই বিষয়টি নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা বা সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন প্রকাশনা ও নথিপত্র ঘেঁটে আমার মনে হয়েছে, এই সংখ্যা নেহাত কম নয়।
‘আনুমানিক আড়াই হাজার হবেই। তবে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীতে ঘটে যাওয়া এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে ঘিরে।’
১৯৮৭ সালে বিমানবাহিনী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ইতিহাস বইতে এই অভ্যুত্থানের দিনকে ‘কালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বইটিতে এই বিদ্রোহের কারণে সরকার নির্দেশিত বিশেষ সামরিক আদালতে বিচার ও পরে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় মোট ৫৬১ জন বিমান সেনা হারানোর ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ১৯৭৭ সালে ৩ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ ‘100 Reported killed in Dacca Coup Attempt’ শিরোনামে অভ্যুত্থান-সম্পর্কিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
১৯৭৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্ট-এ ‘Bangladesh Executions: A Discrepancy' শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো একটি গোপন তারবার্তায় ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানান, তার পাওয়া তথ্য অনুসারে ২১৭ জন মিলিটারি সদস্যকে ক্যু প্রচেষ্টার পরবর্তীকালে হত্যা করা হয়।
‘আমাদের মনে হয় মিলিটারি কোর্ট স্থাপনের আগেই সম্ভবত এদের ৩০-৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল’- বলেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আলফ্রেড ই বার্গেনসেন।
টেনেহিঁচড়ে গণফাঁসি ও দাফন
জায়েদুল আহসান তার বইতে লিখেছেন, ‘৭৭-এর ২ অক্টোবর অভ্যুত্থান দমনের পর থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যকে কোনো কিছু না জানিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় আটক করা হয়। এদের প্রায় সবাইকে পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে ঠাঁই না পাওয়াদের রাখা হয় সেনানিবাসের ভেতরে বিভিন্ন নির্যাতন সেলে।
‘তাদের হাত-পা-চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলত অকথ্য নির্যাতন। সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ছোট একটি কক্ষে ৫০-৬০ জনকে একই সঙ্গে রাখা হতো। অপরদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের ৭ অক্টোবর থেকে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য শুরু হয়। বন্দিদের এই বিচার চলে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেয়ার জন্য প্রতিদিন কারাগার থেকে বাসভর্তি করে সশস্ত্র প্রহরায় তাদের সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া এবং ফিরিয়ে আনা হতো।
‘সামরিক আদালতের রায় প্রতিদিন রাত ৯টার মধ্যে বন্দি সামরিক ব্যক্তিদের জানানো হতো। যাদের ফাঁসির আদেশ হতো তাদের সঙ্গে সঙ্গে কনডেমড সেলে পাঠানো হতো। রায় জানানোর রাতেই কিংবা পরের রাতে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হতো।
'৭৭-এর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কারাগারগুলোতে যখন সন্ধ্যা নেমে আসত, তখন প্রতিটি কক্ষ থেকে ভেসে আসত গগনবিদারী কান্নার রোল। সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ এতই তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দিচ্ছিল যে, একই নামের একজনকে ফেলে অন্যজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিচ্ছিল। পশুপাখির মতো, জোর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গলায় রশি বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। প্রাণ যাওয়ার আগেই হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলা হতো। কারাগারের ড্রেনগুলো সৈনিকদের রক্তে ভরপুর হয়ে যেত।’
অভ্যুত্থানের ফাঁদ?
১৯৭৭ সালের অক্টোবরের এই অভ্যুত্থান সম্পর্কে জেনারেল মীর শওকত আলীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসান। এই অভ্যুত্থান সামরিক গোয়েন্দাদের দিয়ে জিয়ার পাতানো ফাঁদ কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শওকত জানান, ঘটনাটা তার কাছেও রহস্যময় ছিল।
জেনারেল মীর শওকত জানান, জেনারেল জিয়াউর রহমান অক্টোবরের বিদ্রোহের আগাম খবর পেয়েছিলেন মিসরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের কাছ থেকে। ১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সফরে জেনারেল জিয়া মিসর যান। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী দিবসে তার প্রধান অতিথি থাকার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী দিবসে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জিয়াসহ সব সিনিয়র অফিসারকে হত্যা করা হবে বলে আনোয়ার সাদাত তার নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন।
মীর শওকত জানান, অভ্যুত্থান দমনে রেডিও স্টেশন, বিমানবন্দর, জিয়ার বাসভবনের আশপাশ এবং ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন গেটে সৈনিকদের প্রাণহানি ঘটেছে। তার ধারণা, এই সংখ্যা এক শর বেশি না। পরবর্তী সময়ে বিচারের মাধ্যমে ১১০০ জনের মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন, তবে নিশ্চিত নন বলে জানান।
১৯৭৮ সালের ৫ মার্চ লন্ডনের দ্য সানডে টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ সেনাসদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই রক্তগঙ্গা কেবল আংশিকভাবে উন্মোচিত হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে... বিমানবাহিনীর সাবেক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য সানডে টাইমসকে বলেছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর বগুড়ায়, আর ২ অক্টোবর ঢাকায় অভ্যুত্থানের পর সামরিক ট্রাইব্যুনালে ৮০০-এর অধিক সেনাসদস্যকে দণ্ডিত করা হয়েছে। সামরিক আদালতের সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাঙ্গারু কোর্টের পার্থক্য খুব বেশি নয়। ঢাকায় প্রায় ৬০০ সেনাসদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ফায়ারিং স্কোয়াডে অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে।’
১৯৭৮ সালের ২৫ মার্চ মুম্বাইয়ের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যদিও অ্যামনেস্টি শুধু এটুকুই বলতে প্রস্তুত যে কমপক্ষে ১৩০ জন এবং সম্ভবত কয়েক শর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তবে ঢাকার কিছু ওয়াকিবহাল সূত্রের মতে এ সংখ্যা ৭০০ পর্যন্ত হতে পারে।’
অভ্যুত্থানের সংখ্যা কত?
জায়েদুল আহসান তার বইতে বলেছেন, ‘বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকা, বই-প্রবন্ধ ও নানা গবেষকের লেখায় ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের বিদ্রোহ, ৭ নভেম্বরে পাল্টা বিদ্রোহ, ’৮১ সালের ৩০ মে জিয়া হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কমবেশি জানতে পেরেছি, যেন একটির পিঠে আরেকটি। শুধু জেনারেল জিয়ার আমলে ছোট-বড় ২১টি অভ্যুত্থান ঘটেছে বলে গবেষক ও বিশ্লেষকদের লেখায় তথ্য পেলেও বিশদ কিছুই জানতে পারিনি।’
জায়েদুল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরো পাঁচ বছরে হত্যাকাণ্ড, বিচার বা ক্যাঙ্গারু ট্রায়ালে জীবন হারানোদের তালিকা কারও কাছে নেই।’
আরও পড়ুন:গণমাধ্যমে বর্তমানে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবগুলো শিগগিরই কার্যকর করা হবে বলে শনিবার জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছ থেকে প্রাপ্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রতিবেদন হস্তান্তরকালে প্রধান উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে পোস্টে বলা হয়, ‘সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেলতে চাই। সে জন্য আমি চাইব সংস্কার কমিশন আশু করণীয় বা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায় এমন সুপারিশগুলো দ্রুত আলাদাভাবে আমাদের কাছে পেশ করুক।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এ কাজকে অমূল্য হিসেবে অভিহিত করে এ প্রতিবেদন যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য মানুষ পড়তে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো একটি নির্দিষ্ট স্যাটেলাইট ব্যবহারে বাধ্য বলে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখা যায় না। কমিশনের পক্ষ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এবং আগ্রহী বিদেশিরা দেখতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদরদপ্তর পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সরকারি ছুটির দিন শনিবার সকালে এ পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বাহিনী দুটির কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং অধস্তন ফোর্সদের বাসস্থান, খাবার ও আনুষঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং এ সম্পর্কে যত্নবান হওয়ার জন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি বাহিনী দুটির সদস্যদের জনসেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। ওই সময় বাহিনী দুটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পুলিশের টহল কার্যক্রম আকস্মিক পরিদর্শন করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ওই দিন ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও মোড়ে স্থাপিত পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত চেকপোস্ট বা তল্লাশি চৌকির কার্যক্রম ও কয়েকটি থানা ঘুরে দেখেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উপদেষ্টা তার বারিধারার ডিওএইচএসের বাসা থেকে বের হয়ে বনানী মোড়, বিজয় সরণি (নভো থিয়েটার), মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউ মার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে নিউ মার্কেট থানা থেকে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানা ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শন শেষে গুলশান থানা থেকে ইউনাইটেড হাসপাতাল হয়ে বারিধারার বাসায় ফিরে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পথে তিনি আশপাশের কিছু অলিগলিও ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা থানা ও চেকপোস্টে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
রাজধানীসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও নির্দেশনা দেন তিনি।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
ভোটের তারিখের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই অসংখ্য স্বপ্ন ঝরে পড়ে শুধু সময়মতো বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে। তবে বর্তমানে ঘরে বসেই কোনো প্রকার ভ্রমণ ও বাড়তি খরচ ছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রবাসীরা নিতে পারবেন এই বহির্গমন ছাড়পত্র।
২০২৩ সাল থেকে এমন সেবাই দিয়ে আসছে বিশ্বের একমাত্র ওয়ান স্টপ অভিবাসন সেবা প্রদানকারী অ্যাপ ‘আমি প্রবাসী’। চলুন জেনে নিই, কীভাবে বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্রের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন ঘরে বসেই।
ক্লিয়ারেন্সের আবেদন করার জন্য প্রথমে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন ও প্রাক বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) কোর্স সম্পন্ন করতে হবে আগ্রহী প্রার্থীকে। এরপর তিনি ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ থেকে সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর রিক্রুটিং এজেন্সির (RA) মাধ্যমে আবেদন করলে তারা নিজস্ব পোর্টাল থেকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে।
বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হলে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, প্রাক বহির্গমন সার্টিফিকেট বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্ট, ভিসা, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে করা চুক্তিপত্র, নারীদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট দেশে গমনের ক্ষেত্রে স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতিপত্র (স্ট্যাম্প পেপারে), ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র, ওয়ান স্টপ ফরম (শুধু ওয়ান স্টপ সেবা গ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য), মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট, নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কিছু নথিপত্র এবং চাকরির চুক্তিপত্র (শুধু রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য প্রযোজ্য) জমা দিতে হবে।
ঘরে বসে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে প্রথমেই প্রার্থীদের আবেদন ফি বাবদ ৫০ টাকা দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ইন্টারভিউর জন্য বিএমইটি অফিসে উপস্থিত হতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর এটি বিএমইটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পর্যায়ক্রমে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
ওয়ান স্টপ সেবা গ্রহণকারী বা নিজ উদ্যোগে আবেদন করা প্রার্থীদের আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে সরকারি ফি ও আবেদন চার্জ পরিশোধ করতে হয় তাদের। পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যক্তি কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সি উভয়েই বিএমইটি স্মার্ট বহির্গমন ছাড়পত্র কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন।
আরও পড়ুন:এখন থেকে ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে টনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, ‘এখন থেকে অস্ট্রেলিয়া ঢাকায় অবস্থিত তাদের হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রসেস করবে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্য জানান।
‘এ সময় তিনি উপদেষ্টা পরিষদকে জানান যে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্কের বাংলাদেশ সফরের সময় তার কাছে এই অনুরোধ করেছিলেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা নয়াদিল্লি থেকে প্রসেস করত।’
এবারের ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আগেই টানা পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিল এক দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এক দিন ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
আগামী ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর হতে পারে। সম্ভাব্য এ তারিখ ধরে আগেই পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সে হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। কিন্তু নির্ধারিত ছুটি শুরুর আগের দিন ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। একই সঙ্গে একই দিন পবিত্র শবে কদরেরও ছুটি। ফলে বাস্তবে ছুটি শুরু হচ্ছে ২৮ মার্চ থেকে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এখন ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এ ছুটি শুরুর দুই দিন আগে আছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি। পরের দিন বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ এক দিন অফিস খোলা থাকবে। ফলে ছুটির সুযোগ আরও বেশি থাকছে।
এদিকে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, এবারের ঈদে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তিন দিন ছুটি থাকবে। তবে রোজা যদি ৩০টি হয়, তাহলে এক দিন বেশি চার দিন ছুটি হবে।
আরও পড়ুন:বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন তারেক রহমানের তৎকালীন এপিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, কাজী সালিমুল হক কামাল, আহমেদ আকবর সোবহান, সাফিয়াত সোবহান, সাদাত সোবহান ও আবু সুফিয়ান।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতের বিচারক বৃহস্পতিবার মো. আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ও আমিনুল গনি টিটু বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদক। পরে ওই বছর ১৪ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাব্বির হত্যা মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও শাহ আলমের মধ্যে বাবরের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শাহ আলমের কাছে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর। ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারেক ও বাবরের সঙ্গে শাহ আলমের চুক্তি হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চুক্তি অনুসারে শাহ আলমের কাছ থেকে বাবর ২১ কোটি টাকা নেন। এ টাকার মধ্যে বাবরের নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ২০০৬ সালের ২০ আগস্ট হাওয়া ভবনে ১ কোটি টাকা তারেকের ব্যক্তিগত সহকারী অপুকে বুঝিয়ে দেন। বাবর ৫ কোটি টাকা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে নগদ গ্রহণ করে কাজী সালিমুল হক কামালের কাছে জমা রাখেন। বাকি ১৫ কোটি টাকা বাবরের নির্দেশে আবু সুফিয়ান প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সালিমুল হক কামালকে ২০টি চেকের মাধ্যমে দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য