আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশে স্থায়ী হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয় নেয়া ‘মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক’ বা রোহিঙ্গারা। স্থায়ী হচ্ছে রোহিঙ্গাসংকটও।
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘সাময়িক আশ্রয় গ্রহণকারী’ হিসেবে উল্লেখ করলেও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা স্পষ্টত দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের হিসাব কষছে।
মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের স্রোত বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরবর্তী বেশ কয়েক দিনে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্নভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রবেশ করে বলে ইএনএইচসিআরের এক হিসাবে বলা হয়। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ দফায় আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা এর দ্বিগুণ হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৭ সালেই বাংলাদেশে আসে ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আসা আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বালুখালী ও টেকনাফের উনচিপ্রং ও শাপলাপুর ক্যাম্পে রয়েছে। কিছু রোহিঙ্গাকে সরকার নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে।
আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি করে বাংলাদেশ। কিন্তু গত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। দেশটি টালবাহানা করে প্রত্যাবাসন শুরুতে দেরি করছে।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন এখন আরও সুদূরপরাহত বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল।
এমন বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের নাগরিক অধিকার দেয়ার যে প্রস্তাব করেছে বিশ্বব্যাংকসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা, তা এসব আশ্রিতদের স্থায়ী জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনার শামিল বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব মূলত বাংলাদেশেই রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার স্বপ্ন দেখছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেয়ার কথা তুলেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে জমি ক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, ভ্রমণ স্বাধীনতা দেয়ার দাবি করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ওপর চাপ দেয়ার নৈতিক অধিকার রাখে না। তবুও বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব একটা বড় ধরনের সংকেত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনই হতাশ হতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গার চেয়েও এখন বড় সমস্যা করোনাভাইরাস মহামারি। বর্তমানে মিয়ানমারে এই মহামারি আরও বেড়ে গেছে। মহামারি কমে গেলে…একদিন না একদিন সমাধান হবেই। এর সমাধান না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আসিয়ান ফোরামে তো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরাতে যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তিতেই বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন চায়। যতক্ষণ তা না হয়, ততক্ষণ তো অপেক্ষা করতেই হবে।’
ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘যেহেতু অং সান সু চি এখন ক্ষমতায় নেই, মিয়ানমার সরকারও দুর্বল তার ঘরের ভেতরেই। সু চির দল কিন্তু রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
‘তারা বলেছে, ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের অধিকার দেবে। সময় লাগছে হয়তো, তবে এই ডেভেলপমেন্টগুলো বলে দিচ্ছে, একসময় সমাধান হবে। মহামারি গেলে নজর দেয়া যেতে পারে মিয়ানমারের ওপর।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, কেবল কূটনৈতিক চাপ দিয়ে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ফেরাতে রাজি করানো যাবে না। অন্য বিকল্পগুলোও বিবেচনা করতে হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ তো যুদ্ধে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের কূটনীতির মূল নীতিও সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে রেখে দেয়ার বাস্তবতা নেই। তাদের ফেরত যেতেই হবে। তা ছাড়া মিয়ানমার কিন্তু কখনো বলেনি তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে না, তবে দেশটির বর্তমান অবস্থা রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
‘সেখানে সামরিক শাসন চলছে এবং গৃহযুদ্ধের মতো একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে করোনা মহামারিও তাদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে। কারণ এর দোহাই দিয়ে তারা বহির্বিশ্বের চাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছে। আমাদের এখন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের বোঝা আজীবন বহন করা সম্ভব নয় বলে গত ৬ আগস্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সম্মেলনে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়। তারপরও শুধু মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এ জন্য ৬ হাজার ৮০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি নষ্ট করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। এ অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনের জন্য রোহিঙ্গাসংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা জরুরি।’
মিয়ানমার সর্বশেষ যা বলেছিল
রোহিঙ্গা ফেরাতে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানী নেপিডোতে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তির আগে সে সময়ের বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বৈঠক করেন অং সান সু চির সঙ্গে। ৪৫ মিনিটের বৈঠক শেষে নিজ নিজ দেশের পক্ষে এ চুক্তিতে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও সু চির কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সুয়ে।
চুক্তিতে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।
গত ৭ আগস্ট আসিয়ান ফোরামের ভার্চুয়াল বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান মং লুইন দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমসা সমাধানের কথা বলেন।
এর আগে চলতি বছরের প্রথম দিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সে সময়ের সু চি সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কাইয়া টিনকে চিঠি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ওই চিঠির জবাবে ২০ জানুয়ারি কাইয়া টিন চিঠি দেন মোমেনকে। এতে তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
কাইয়া টিন লেখেন, বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পারস্পরিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যেকোনো দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের সমাধান করতে চায়।
মিয়ানমারের মন্ত্রী পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭২ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
১৯ জানুয়ারি চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ফেরাতে যত উদ্যোগ
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ফেরাতে নেপিডোতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সইয়ের পরও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরানো সম্ভব হয়নি কেবল মিয়ানমারের অনিচ্ছা ও অসহযোগিতার কারণে। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের প্রতিদিন ৩০০ করে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা ছিল।
প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য বাংলাদেশ সরকার বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার যথাযথ দায়িত্ব না নেয়াকে দায়ী করেছেন সেই সময়ের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ফেরাতে আমাদের একটা চুক্তির দরকার ছিল এবং তা হয়েও ছিল। কিন্তু তারপর যেন সবার দায় শেষ হয়ে গেল।
‘বাস্তবায়নের দৃষ্টিকোণ ছিল খুবই লঘু এবং হতাশার। এ ক্ষেত্রে সে সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ রোল প্লে করে নাই। আবার জাতিসংঘ ও তার সব সংস্থা ও সদস্যরা কার্যকর ভূমিকা নেয় নাই। দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করেও কাউকে প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে নেয়া যায়নি।’
৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছরের ১২ জানুয়ারি সর্বশেষ ২ লাখ ৩৭ হাজার নামের তালিকা হস্তান্তর করেছে ঢাকা।
এর আগে দেয়া হয় ৫ লাখ ৯৩ জনের তালিকা। মিয়ানমার দৃশ্যত এসব তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে।
তিন বছরে তারা মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার বিষয়ে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৪ হাজারের কোনো তথ্য তাদের জাতীয় তথ্যভান্ডারে নেই বলে দাবি করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ফেরাতে চীন-রাশিয়ার উদ্যোগ
রোহিঙ্গা ফেরাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছাড়াও একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন। ২০১৭ সালে সেনাচৌকিতে হামলার কথা বলে মিয়ানমারের রাখাইনে যে নজিরবিহীন হামলা করে সে দেশের সেনাবাহিনী, তার বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার হলেও এ ঘটনাকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বর্ণনা করে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়া। তাদের ভেটোতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনা সব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাসখন্দে আমার সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ল্যাভরভের বৈঠক হয়েছে। তাদের কাছে আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি। আমি তো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবও করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ফেরাতে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছে; আরও বলবে।
‘অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, দ্রুত সময়ে তিন দেশের ফিজিক্যাল মিটিংয়ের (সশরীরে উপস্থিত হয়ে বৈঠক) উদ্যোগ নিচ্ছি। সমস্যা হয়েছে ১ ফ্রেব্রুয়ারি সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর থেকে তাদের (মিয়ানমার) সঙ্গে আলোচনার লাইন কেটে গেছে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলের স্থায়ী শান্তির জন্য জরুরি বলেও স্বীকার করেছে চীন।’
আরও পড়ুন:সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। জাহাজটি ২২ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আল হামরিয়া বন্দরে নোঙর করার কথা ছিল। তবে গতি বাড়িয়ে এগিয়ে চলা জাহাজটি একদিন আগেই ২১ এপ্রিল রোববার সংশ্লিষ্ট বন্দরে পৌঁছবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আমিরাতের বন্দরে পৌঁছার পর ২৩ নাবিকের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাদের
মধ্যে দুজন বিমানে দেশে ফিরবেন। বাকিরা জাহাজেই দেশে ফেরার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। যে দুজন বিমানে ফিরতে চান তারা হলেন জেনারেল স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। বাকি ২১ জন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন।
জাহাজে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন জেনারেল স্টুয়ার্ড নূর উদ্দিন। কিন্তু এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া এবং জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তিনি দেশে স্বজনের কাছে ফিরতে চাচ্ছেন।
স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে ফোনে একথা জানিয়েছেন নূর উদ্দিন। ফারদিন নূর নামে তাদের আড়াই বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুস্থ থাকলে অনেক কিছু করা যাবে। কিন্তু মানসিকভাবে তিনি যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে তো বিকল্প ভাবতে হবে আমাদের।’
অভিন্ন ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলামও। তিনি তার মা ফেরদৌস আক্তারকে ফোন করে দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
ফেরদৌস আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে এখন প্রতিদিনই কথা হয়। আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে ওরা। আমাদেরও দুশ্চিন্তা কমেছে। তবে টেনশন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। ছেলে বলছে, তার মানসিক অবস্থা ভালো নেই; দ্রুত দেশে ফিরতে চায়।
‘জাহাজে করে দেশে ফিরতে আরও সাত-আট দিন দেরি হবে। তাই দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে। তবে কবে কোথায় আসবে, তা এখনও জানে না সে। এটা জাহাজের মালিক পক্ষ ঠিক করবে।’
এমভি আব্দুল্লাহর মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ জানিয়েছে, জাহাজটি দুবাইয়ে ২২ এপ্রিল নোঙ্গর করার কথা ছিল। কিন্তু গতি বাড়ার কারণে একদিন আগে ২১ এপ্রিল দুবাই পৌঁছবে। সেখানে পণ্য খালাস কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই নাবিকদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুজন নাবিক দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরতে চান। বাকি ২১ জন জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। ওই দুজন কখন কীভাবে দেশে ফিরবেন, সেটা আমরা জাহাজ নোঙর করার পর ঠিক করব। যিনি যেভাবে আসতে চান, তাকে সেভাবেই দেশে ফিরিয়ে আনব আমরা।’
কেএসআরএমের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, জাহাজটি ২২ এপ্রিল দুবাইয়ে নোঙর ফেলার কথা থাকলেও তা এখন একদিন এগিয়ে যাচ্ছে। ২১ এপ্রিল এটি নোঙর করবে সেখানে।’
জাহাজটি ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় জলদস্যুমুক্ত হয়। এরপর আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন নাবিকরা। শুক্রবার বিকেল ৫টায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬৮৭ নটিক্যাল মাইল এবং দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থকে ৯৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। এটি নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত। এজন্য দুশ্চিন্তাও কিছুটা কমেছে নাবিকদের। ফুরফুরে মেজাজে থাকার কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে করণীয় কী কী, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার।
এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা তার ভাষায় তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্কতা
সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে এবং এটি আরও কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করতে পারে। এ সময় কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য এই তাপদাহের সময় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া লাগবে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়া লাগবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সময় এটি একটানা দীর্ঘসময় ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া লাগবে এবং এগুলো যারা পরিচালনা করেন, শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একটানা কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে তাদেরকেও বিরতি দিতে হবে। তাহলে কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার শঙ্কা হ্রাস পাবে এবং সীমিত থাকবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত রাখা
সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, এখনই চেক করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। একটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে অথবা একটি মাল্টিপ্লাগ থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নেয়া যাবে না। এই জাতীয় সংযোগ থেকে কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারে সতর্কতা
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যখন ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অফ করে রাখতে হবে।
রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এ ছাড়া আমরা আবাসিক ভবনে যারা রান্নার কাজ করি, রান্না রেখে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে অবশ্যই চুলা পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গ্রামেগঞ্জে রান্না করছি যেখানে ছাই যেন উত্তপ্ত না থাকে, ছাইও নিশ্চিন্তভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে।
ধূমপান পরিহার
আবাসিক ভবন ও কারখানায় কোনোভাবেই কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। অপরিহার্য ক্ষেত্রে বাইরে যারা ধূমপান করবেন, বিড়ি-সিগারেটের শেষ অংশ সতর্কভাবে, সচেতনভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গাড়িতে চলাচলের সময় ধূমপান করে যেখানে সেখানে কিন্তু সিগারেটের অংশ ফেলা যাবে না।
বারবিকিউ পার্টি না করা
বাড়ির ছাদে, বারান্দায় অথবা আশপাশে দাহ্য বস্তু আছে, এমন খোলা জায়গায় এ সময় বারবিকিউ পার্টি করবেন না। কারণ একটি স্ফূলিঙ্গ উড়ে গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিকে পুরোপুরি না বলুন।
গাড়িতে অবস্থান ও পার্কিংয়ে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশন থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহের সময় অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাড়িতে অবস্থান করবেন না। সবাই সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ফিলিং স্টেশনের মালিক এবং যারা কর্মরত আছেন, তাদের এ ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করবেন না। গাড়ি ছায়ার মধ্যে পার্কিং করবেন বা যেখানে ছায়া আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করবেন।
আগুন নিয়ে খেলা পরিহার
এ সময় বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না এবং আপনার হাতের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংরক্ষণ করুন। সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন এবং এগুলোর সামনে কোনো ব্যারিয়ার তৈরি করবেন না।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পেতে
আপনার সতর্কতা এবং আপনার প্রতিবেশীকে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে কিন্তু নিরাপদ থাকা সম্ভব। এ ছাড়া আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইলে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন। যেকোনো সময় ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত রেসপন্স করার জন্য ১৬১৬৩ হটলাইন অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটতম ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বরে দ্রুত কল করুন এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
মন্তব্য