হেফাজত ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর মত্যুকে অবহেলাজনিত হত্যা উল্লেখ করে তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের প্রতিবেদনকে ‘ডাহা মিথ্যা বলেছেন’ সংগঠনের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার মধ্যে শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নেতৃত্বে আসা বাবুনগরীকেও পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আসামি করা হয়েছে।
বাবুনগরীকে শফী সংগঠন থেকে বহিষ্কার করলেও, পরে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন তার সমর্থকদের চাপের কারণে।
গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পরদিন শফী একটি হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার আগে দুই দিন বাবুনগরীপন্থিরা হামলা চালিয়েছিল। শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের আদেশে সই করতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
শফীর অনুসারীরা বলছেন, হেফাজতের প্রয়াত আমিরের চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে, তার অক্সিজেন সিলিন্ডারের নল টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, মাদ্রাসায় অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে, হাসপাতালে নিতেও দেরি করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় শফীর শ্যালক মাঈনুদ্দীন গত ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলার আবেদন করেন।
বিচারক সেই আবেদন গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়।
এই প্রতিবেদনে বাবুনগরীসহ মোট ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
তবে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নরহত্যাজনিত অপরাধ।’
আরও পড়ুন: আল্লামা শফীর মৃত্যু হত্যা: তদন্তে ‘প্রমাণ’
এই প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠান বাবুনগরী।
এতে তিনি বলেন, আল্লামা শফীর মৃত্যু নিয়ে পিবিআই যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবতাবিবর্জিত। আমরা মনে করি এ প্রতিবেদন একটি চিহ্নিত চক্রের শেখানো বুলি। আমরা আমাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পেশ করব। এ মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে যাদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
তাকে আসামি করার প্রসঙ্গ টেনে আগে থেকে ১৭ মামলা আসামি বাবুনগরী বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না এরপরও নতুন করে আমাকেসহ আরো বারোজনকে হয়রানিমূলক অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এই মামলা ডাহা মিথ্যে ও হয়রানিমূলক। এর কোনো বাস্তবতা নেই।’
১০৪ বছর বয়সী শাহ আহমদ শফী গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার দুই দিন আগে তার হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়।
মাদ্রাসা প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়া, তার ছেলে আনাস মাদানীকে চাকরিচ্যুত করাসহ হেফাজতের একাংশের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। তখন শফীর খাস কামরায় হামলা হয়, ব্যাপক ভাঙচুর চলে।
শফীর খাদেম হোজাইফা আহমদের এবং তার নাতি মাওলানা আরশাদের পুস্তিকা ‘হাটহাজারীতে জীবনের শেষ তিন দিন’ এ হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামা শুরু থেকে হেফাজত আমিরের মৃত্যুর বিষয়টি বিবৃত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘রাত দেড়টায় আল্লামা শফীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলেন দেরি হয়ে গেছে। অক্সিজেন না থাকার কারণে হুজুরের যে ক্ষতি হয়েছে, তা তাদের পক্ষে চিকিৎসা দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টায় ডাক্তাররা বোর্ড মিটিংয়ে বসেন। তারা নাতি আরশাদকে জানান, তাদের চেষ্টা ব্যর্থ।’
বাবুনগরী তার বিবৃতিতে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছাড়পত্র ও ঢাকা আজগর আলী হসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটসহ নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের আলোকে দেশবিদেশের সকলের নিকট প্রমাণিত হয়েছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর মৃত্যু আল্লাহ তায়া’লার হুকুমে স্বাভাবিক ছিল।
‘তিনি অনেকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোগ বেড়ে যাওয়ায় একাধিকবার তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্বশেষ আল্লাহ ইচ্ছায় তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।’
বাবুনগরী বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী এর মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র মাওলানা ইউসুফ ব্যাখ্যামূলক বিবৃতির মাধ্যমে বাস্তব সত্য মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছেন। তার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এরপরও আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের নামে মামলা দায়ের হওয়ায় বুঝা যায় এই মামলা কতটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন।’
যা হয়েছিল হাটহাজারী মাদ্রাসায়
হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামা বিবৃত করে ‘হাটহাজারীতে জীবনের শেষ তিন দিন’ পুস্তিকায় লেখা হয়, সেদিন শফীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, আল্লামা শফীকে ওষুধ খেতে দেয়া হয়নি, তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে, হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেয়া হয়নি, পরে অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
আর ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি হয়ে গেছে। পরদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুস্তিকায় আল্লামা শফীকে ‘শহীদ শাইখুল ইসলাম’ বলা হয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে শফীপুত্র আনাস মাদানীকে বহিষ্কার, হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও অব্যাহতি দেয়া তিন শিক্ষককে ফিরিয়ে আনাসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে আনাস মাদানীর কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
পুস্তিকা অনুযায়ী, আন্দোলনকারীদের পাঁচ জন সে সময় শফীর কার্যালয়ে যান এবং আনাসকে বহিষ্কারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
শফী বারবার বলছিলেন, ‘অভিযোগ লিখিত আকারে উপস্থাপন করো, আমি দস্তখত করব। কিন্তু বাবারা তোমরা এইভাবে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করো না।’
পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়, কয়েকজন তখন তুই-তুকারি করে খাদেমদের গালিগালাজ করতে থাকে। আল্লামা শফীকে উদ্দেশ্য করেও অশালীন বাক্য ব্যবহার করে।
মাগরিবের নামাজের পর শফীর কক্ষের গ্লাস, ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়।
পরে প্যাডে আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ লিখে তাতে সই দিতে শফীর নাতি দেওবন্দপড়ুয়া আসাদের গলায় গ্লাসের টুকরো ধরে বলা হয়, ‘এখন এটা দিয়ে টান মেরে ওর গলা কেটে ফেলব, জলদি দস্তখত কর এখানে।’
তখন আল্লামা শফীর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।
এতেও কাজ না হওয়ায় আল্লামা শফীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলমকে রড দিয়ে আঘাত করা হয়, চড়-ঘুষি মারা হয়।
দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন।
এরপর ছড়ানো হয় গুজব। পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে ছাত্রদের জড়ো করা হয়। বলা হয়, ‘শফী সাহেব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য মিটিং ডেকেছেন। তিনি গতকালকের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।’
মাওলানা আরশাদ জানান, আন্দোলনকারীরা শফীর কার্যালয়ে এসে শিক্ষকদের বের করে দেন। সেখানকার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে শুরু হয় ভাঙচুর, লুটতরাজ। আহমদ শফীর সব টেবিলের গ্লাস, এসি, গ্লাসে বাঁধাই করা কাবা শরিফের গিলাফ একাধিক সম্মাননা পদক, কার্যালয়ের দরজা জানলাও ভাঙচুর করা হয়।
কার্যালয়ের বাইরে কামরার দুই দিকের গ্লাসের দরজা, নামফলক, বারান্দায় থাকা গ্লাসের সীমানা, প্রায় ১০টি জানালার গ্লাস, ৩০টির মতো ফুলের টব, বারান্দার সোফা, টেবিল, ফ্যানসহ ছোটবড় আরও অনেক আসবাবপত্রও ভাঙা হয়।
আহমদ শফীর সামনে তার খাদেমদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে হেফাজত আমিরের অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
খাদেম ও নাতিরা তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে গেলে তাদের বাধা দেয়া হয়।
সে সময় এসি বন্ধ এবং অক্সিজেন খুলে ফেলায় শফীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। নাতি ও খাদেমরা অনেক আকুতি-মিনতির পর বিদ্যুৎ সংযোগ ও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে তারা রাজি হয়।
সন্ধ্যা সাতটার পর শুরা কমিটির বৈঠকে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী।
বারবার অনুরোধ করার পরও শুরা সদস্যরা বৈঠক চালিয়ে যান। আধা ঘণ্টা পর শফীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।তিনি বমি করেন। মুখ দিয়ে অনবরত ফেনা বের হচ্ছিল।
তখন নাতি আরশাদ ও খাদেম শফিউল আলম হামলাকারীদের পায়ে ধরেন হাসপাতালে নিতে। তারা প্রথমে বলে, চিকিৎসা করালে মাদ্রাসাতেই ব্যবস্থা করবে।
দুই নাতি ও খাদেম তখন বলেন, শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।
পুস্তিকায় বলা হয়, ‘অ্যাম্বুলেন্সে করে আল্লামা শফীকে হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ করলে হামলাকারীরা বলে, তাদের আমিরের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এখান থেকে বের করার কোনো অনুমতি নেই।
কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা বলে, আমিরের নির্দেশ এসেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে শফী সুস্থ আছেন বলে মিডিয়ায় ভিডিও প্রচার করতে হবে।
‘অ্যাম্বুলেন্স আসার পর আন্দোলনকারীদের একজন এসে বলে, হুজুরের সঙ্গে শুধুমাত্র একজন যেতে পারবে। তখন নাতি ও খাদেম শফিউল বলে, হজরতের সার্বিক দেখভাল একজন দ্বারা সম্ভব নয়। কমপক্ষে তিন জনকে যেতে দিন। আন্দোলনকারীরা বলে, আমরা আমাদের আমিরের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।’
পরে সেই আমিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শফীর সঙ্গে দুই জনকে যেতে দেন হামলাকারীরা। পরে অবশ্য তিন জনকেই যেতে দেয়া হয়।
এই আমির কে, সেই বিষয়টি এখনও জানেন না মাওলানা আরশাদ।
পুস্তিকায় বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্সটি মাদরাসার শাহী গেট দিয়ে ঢুকতে বাধা দিয়ে কবরস্থানের গেট সংলগ্ন বাইতুল আতিক মসজিদের সামনে রেখে দেয়া হয়। ফলে আল্লামা শফীকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠাতে আরও দেরি হয়।
স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়ার সময় শফীর মুখে অক্সিজেন লাগানো ছিল। সেটি টান দিয়ে বারবার খুলে ফেলা হচ্ছিল। একপর্যায়ে ছিড়ে ফেলা হয়। পরে অক্সিজেন ছাড়াই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
অ্যাম্বুলেন্স ছাড়ার সময় শফীর খাদেম হোজাইফাকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে নামিয়ে দেযা হয়। তখন নাতি আরশাদ একাকী রওনা হন। তখন হামলাকারীরা নতুন দাবি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে।
তারা বলতে থাকে, স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এসে সই দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে আন্দোলনকারীদের কোনো ক্ষতি হবে না। তা না হলে অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয়া হবে না।
পুস্তিকায় বলা হয়, ‘এভাবে আরও ৪৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হয়। তখনই অক্সিজেন না পাওয়ায় হুজুর একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সেখানে দায়িত্ব পালনরত ওসি সাহেবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মিটিং হয়। মিটিংয়ের আলোচনা অজানা। মিটিং শেষ হলে হজরতের অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিতে মসজিদের মাইকে কয়েকবার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশি পাহারায় অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে।’
পরদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল থেকে আল্লামা শফীকে ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে আনা হলে সেখানেই মারা যান হেফাজতের আমির।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।
এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।
‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’
দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।
একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।
তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।
‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য