অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না। এই ছিল লকডাউনে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনার একটি।
কিন্তু রাত ৯টা পর্যন্ত বাইরে সড়কে মানুষজন ও যানবাহনের উপস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই রাজধানীতে লকডাউন চলছে। সড়কে কোথাও কোথাও রাত ৯টাতেও মৃদু যানজট দেখা গেছে।
রাত ৮ টার পর রাজধানীর রামপুরা, মগবাজার, হাতিরঝিল, তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কের পাশে ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ থাকলেও গলির ভেতরের অধিকাংশ দোকান খোলা। দোকানগুলো কেন্দ্র করে রয়েছে মানুষের ভিড়।
কেউ টুকটাক কেনাকাটা করছে, কেউবা চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। রামপুরা হাজিপাড়া পেট্রোল পাম্পের বিপরীত পাশের গলির মুখেই চারজন তরুণকে গল্প করতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা ৬টার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া নিষেধ, কেন বের হয়েছেন? জানতে চাইলে রুমেল নামে একজন বলেন, ‘আমাদের বাসা এখানেই, একটু কাজে বের হয়েছি।’
তবে কী সেই কাজ জটলার কেউ জানাতে পারেননি। ‘এখনই চলে যাচ্ছি’ বলে গলির ভেতরের দিকে চলে যান তারা।
হাতিরঝিল সংলগ্ন মধ্য কুনিপাড়ার গলিপথ পুরোটাজুড়ে ছিল মানুষের ভিড়। দোকানও খোলা। এই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, এখানে কোনো লকডাউন নেই, সবাই বাইরে। তাই তারাও এখনও ঘরে যাননি।
মাসুম নামে একজন বলেন, ‘ঘরে গরম, বাতাস খাইতে বাইরইছি।’
হাতিরঝিলে ‘ফুড অন ট্র্যাক’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শাহিন বলেন, ‘আজকে কিছুটা রিস্ক নিলাম। কালকে থেকে সন্ধ্যায় বন্ধ করে দিব। আজকে কিছু খাবার রয়েছিল, আর কাস্টমারও আছে। কালকে থেকে আর খোলা রাখব না।’
হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুধু খাবার বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ফুড অন ট্রাক রেস্টুরেন্ট টেবিলে টেবিলর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেননি ম্যানেজার শাহিন।
সাত দিনের লকডাউনের প্রথমদিন রাজধানীর চিত্র দেখে অন্য যে কোনো একটি নিয়মিত দিন বলে মনে হয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের উপস্থিতি ছিল অনেক। বাস চলেনি, কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাস্তাঘাট ছিল সরগরম। কোথাও কোথাও যানজটও বেধে যেতে দেখা গেছে।
নানান কারণ দেখিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে মানুষ: কেউ বোনের সঙ্গে দেখা করতে, কেউ বন্ধুর বাসায় যেতে। আবার কেউ কেউ বের হয়েছেন লকডাউন কেমন হচ্ছে তা দেখতে।
রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শাহবাগ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এই লকডাউনে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও সরকারের এই নির্দেশনা মানছে না অনেকে।
সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিচালিত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সচেতনতা তৈরিতে মাস্ক বিতরণ বা আইন না মানায় জরিমানা, কোনো কিছুই মানুষকে বাইরে বের হওয়া আটকাতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সামনে থাকলে এক চিত্র। তারা চলে গেলে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
বিকেল তিনটায় জিগাইতলার পোস্ট অফিস গলিতে দেখা গেছে, জায়গায় জায়গায় জটলা করে গল্প করছে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকেরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি গাড়ি এই সড়ক দিয়ে আসতে দেখা যায়। গাড়ি দেখে সবাই সটকে পড়ে। গাড়ি চলে যাওয়ার পর আবার সবাই যে যার গ্রুপে যুক্ত হয়।
তরুণদের একজন সাজিদ। কেন বাইরে বের হয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই বাসায় ছিলাম। বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এখন একটু সময়ের জন্য এসেছি। আমরা মাস্ক পরে কথা বলছি। স্বাস্থ্যবিধি মানছি।’
তার সঙ্গে অন্যরা গায়ে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসঙ্গে সাজিদ বলেন, ‘সব তো আর মানা যায় না।’
মহাখালী ডিওএইচএস থেকে বনানী কামাল আতাতুর্ক সড়কে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করছে এসেছেন জামিল খান। তিনি বলেন, ‘আমি আর রেজা (জামিলের বন্ধু) দিনের বেশিরভাগ সময় একসঙ্গে কাটাই। সন্ধ্যার পর বের হওয়া যাবে না। তাই বিকেলে এসেছি। কিছু সময় কথা বলে চলে যাব।’
অহেতুক ঘোরাফেরা ঠেকাতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে র্যাব ও ঢাকা জেলা প্রসাশন।
শাহবাগ মোড়ে র্যাব-৩ এর সহায়তায় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। প্রায় একই সময়ে শাহবাগে চেকপোস্ট বসিয়ে নিজেদের তৎপরতা জোরদার করে ট্রাফিক পুলিশ।
অকারণে ঘোরাঘুরি, মাস্ক না পরা ও মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করার অপরাধে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ১২ জনকে ২৫০০ টাকা জরিমানা করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘লকডাউনে যারা বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, তাদের সচেতন করা হচ্ছে যাতে তারা বাইরে না আসে। জরিমানা করা র্যাবের উদ্দেশ্য নয়। ব্যাবের উদ্দেশ্য করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।’
শাহবাগ ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টে সোমবার দুপুরে একটি প্রাইভেটকার থামায় পুলিশ। চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি জানান, জিগাতলা থেকে যাত্রাবাড়ি বোনকে দেখতে যাচ্ছেন। চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বোনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ মোবাইলের বাটন টিপে বলেন, বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ। রাস্তায় বের হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ জানাতে না পারায় ওই ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের সূত্রাপুর, কদমতলী, উত্তরা, হাজারীবাগ, রামপুরা থানা এলাকায় মাস্ক বিতরণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পুলিশ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ।
বাস না চললেও সড়কে যানজট
লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল চলছে। সরকার অ্যাপস ভিত্তিক উবার-পাঠাও চলাচল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দিলেও বন্ধ হয়নি রাইড শেয়ারিং। নগরীর মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করেছেন মোটরসাইকেল চালকেরা। অবাধ চলাচল করেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে লেগুনাও চলাচল করে।
সোমবার সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর বেলা ১০টা নাগাদ সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা।
অনেকের ধারণা ছিল, লকডাউন বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। কিন্তু সকাল থেকে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছুটা নমনীয় থাকায় জরুরি কাজ না থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হয়েছে কিছু মানুষ।
গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় বিভিন্ন সিগন্যালে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। ডিএমপি শাহবাগ জোনের (ট্রাফিক) সহকারী কমিশনার মো. নূরুননবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে অকারণে চলাচলকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। দুপুরের পর ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মারা গেছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী সাজু হোসেন ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ নেশন-এর চেয়ারপারসন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রাজু আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে স্যার মারা যান। তার প্রথম নামাজে জানাজা রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বারিধারা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
প্রখ্যাত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সন্তান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তিনি ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তারপরে মিডল টেম্পল-এ আইন বিষয়ক পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে বার থেকে ব্যারিস্টার-ইন-ল ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
১৯৬৫ সালের ২৬ নভেম্বর আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মইনুল। এরপর ১৯৬৬ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি তৎকালীন হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
মইনুল হোসেন ১৯৭৩ সালে পিরোজপুর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে ২০০০-২০০১ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মইনুল হোসেন।
২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে এক টিভির টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াতের এজেন্ট বললে তিনি সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে উদ্দেশ করে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্য নারী সমাজের জন্য অবমাননাকর- এমন অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
রংপুরের এক মামলায় ওই বছরের ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরার এক বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন মাসের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।
চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪৬৭ জন নিহত ও ৬৭২ জন আহত হয়েছেন।
এর আগের মাস অক্টোবরে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২১ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে নভেম্বর মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
শনিবার বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ২০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮১ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, যা ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ সময়ে পাঁচটি নৌ দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে। ২২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ১৩৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১৯ জন। আর সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২১টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়ি জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
এ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। চলছে চরম নৈরাজ্য। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে বেড়েছে ১৩০ টাকা। দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে।
শনিবার পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। আগের দিন ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তারপরও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
জানা গেছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এ ঘটনার জেরে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছে। তারা এক কেজি পেঁয়াজে ১৩০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছে না। রিয়াজুদ্দিন বাজারেও ভোরে যে দাম ছিল, সকাল ৯টায় তা কেজিতে ৭০/৮০ টাকা বেড়ে গেছে।
কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় কিনছি।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই তাদের দেশেও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রন দেশটি রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভারত মাত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে এখনই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আড়ত বন্ধ। তারা বলছে যে আড়তে পেঁয়াজ নেই। অথচ প্রতিটি আড়তে পেঁয়াজ আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
যে গুটিকয় আড়ত বিক্রি করছে তা-ও চড়া দামে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। অথচ দুদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা মুনাফা করছেন আমদানিকারকরা।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। কোনো দোকানেই এর কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই।
বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা মামুন মিয়া বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা! দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো?’
চাক্তাই আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। সেখানেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ায় এখানে দাম বাড়ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ানো বা কমানোর ব্যাপারে আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বিক্রি করতে বলেন সেই দামেই আড়তদাররা বিক্রি করেন।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
গত কিছুদিন ধরেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা দর সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ দরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরে সরকার পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সহস্রাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ঝালকাঠি-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন আমু। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারহা গুল নিঝুম ওই মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতা-কর্মী নিয়ে ভোটের প্রচারণার অভিযোগে ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।
১০ ডিসেম্বর নির্ধারিত স্থানে সশরীরে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে এর লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শনিবার নির্বাচনি এলাকা-১৮১ এর নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাত জাহান নাসরিন এই তলব আদেশ দিয়েছেন।
শোকজের চিঠিতে জানানো হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, আপনি গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় আপনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এসব এলাকায় যান এবং স্থানীয় নির্বাচনি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তখন বিপুল জনসমাগম ঘটে এবং আপনি নৌকার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা চালান; যা নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য। ওই সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি অত্র কমিটির গোচরীভূত হয় এবং সংবাদের তথ্যসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক অত্র অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচনপূর্ব অনিয়মের সত্যতা পান। ওই মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি এলাকা-১৮১ এর বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের অসংখ্য পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম এবং মৃত্যু দিনে পাঁচ গুনি নারীকে তার নামে প্রবর্তিত পদক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩ দেয়া হয়।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ পদক দেন প্রধানমন্ত্রী। পদক প্রাপ্তরা হলেন নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, (মরণোত্তর), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসক হালিদা হানুম আখতার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেত্রকোনার কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), পল্লি উন্নয়নে ঠাকুরগাঁওয়ের রনিতা বালা এবং নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পাঁচ বিশিষ্ট নারী ও তাদের স্বজনদের হাতে পদক তুলে দেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ইসলাম ধর্মের কথা বলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই। রাজনীতি থেকে খেলাধুলা সবক্ষেত্রে নারীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। সাংবাদিকতা থেকে শিল্পকলা সবখানেই নারীরা সফল। প্রশাসন, বিচারালয়, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় কাজ করছেন তারা।’
পাকিস্তান আমলের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আইন ছিল জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে জাতির পিতা এ আইনগুলো পরিবর্তন করেন। তারপর থেকে আমাদের দেশের মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিতে পারছে, কিন্তু আমি সরকারের এসে দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারক নেই।
‘তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বলেছি, উচ্চ আদালতে কোনো জজ নিয়োগ দেয়া হলে তাতে যদি কোনো নারী জজের নাম না থাকে, আমি কখনও ওই ফাইল সই করব না, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না। সেই থেকে যাত্রা শুরু।’
ওই সময় একটি আফসোসের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘একটা আফসোস রয়ে গেছে আমার। খুব ইচ্ছা ছিল একজন নারীকে আমি প্রধান বিচারপতি করে যাব, কিন্তু আমাদের সমাজে এত বেশি কনজারভেটিভ, এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সে জন্য করতে পারিনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।’
তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার সময় মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকত। লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না, তবে তার স্বামী সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছেন, তার ভাই তাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা, আরবি, ইংরেজি, শিক্ষা যেগুলো গ্রহণ করা, সেগুলো তার স্বামীর কাছ থেকে শিখেছেন। স্বামীর কাছে আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন।
‘স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি (বেগম রোকেয়া) তার ভাইয়ের কাছ থেকেও একটি অনুপ্রেরণা পান। তার স্বামীর নামে একটি স্কুল তৈরি করেন। স্কুল তৈরির পরও তাকে অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়। কারণ, স্বামীর নামে যে স্কুল করেছিলেন, সেখানে ছাত্রী পড়ানো যেত না। তিনি নিজের বাড়ির বাইরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এটা করতে গিয়ে অনেক পরিবারের বাধা এবং অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। তিনি দমে যাননি কখনও। তার সাহসী ভূমিকা সবসময় আমরা স্মরণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল; বিজয় অর্জন করেছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অনেক অবদান আছে।
‘তারা যেমন ট্রেনিংয়ে গেছে, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নানা নির্যাতনের শিকার হন। অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই নারী স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। আমরা বলতে পারি, এরই মধ্যে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছি।’
মায়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক দেন। পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণের একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, প্রত্যেককে চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
আরও পড়ুন:সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, ভারতের উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত শীত বাড়ে। সে ক্ষেত্রে রাতে শীত কিছুটা বাড়তে পারে।
ঢাকায় বাতাসের গতি ও দিক নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার।
ঢাকায় শনিবার সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে সূর্য অস্ত যাবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, রোববার ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য