রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ করোনা মহামারির ভয়াবহতা মোকাবিলা করে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
বৃহস্পতিবার রাতে এক শুভেচ্ছাবার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। অতীতকে পেছনে ফেলে সময়ের চিরায়ত আবর্তনে এই নববর্ষ আমাদের মাঝে সমাগত।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।
‘প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হয়। তবে এবার করোনা মহামারির ফলে উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্লান। আমি দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
২০২১ সাল জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। খ্রিষ্টীয় নববর্ষে সবার জীবন অনাবিল আনন্দ ও সাফল্যে ভরে উঠুক।’
দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ও কী ধরনের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আজকের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আজকের মূল নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশে প্রচলিত ঝুঁকি ভাতার সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ ও ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া, পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হওয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা, ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং পুলিশের এসআই ও এএসআই পদবির কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও তিনি নিম্ন কর্মদক্ষতার ইউনিটগুলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন:দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ সময় দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন সেনাপ্রধান। এছাড়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কেও প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানান তিনি।
জবাবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও অবদানের প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী তাদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে—এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস।
সাক্ষাতকালে নিজের সাম্প্রতিক সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সফরের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করে সেনাপ্রধান বলেন, এই সফরটি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়ন ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদী।
এ ছাড়াও, বিভিন্ন বঞ্চিত সেনা কর্মকর্তাদের সুবিচার নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত উচ্চপদস্থ পর্ষদের মূল্যায়ন ও সুপারিশ, পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত জেসিও ও অন্যান্য পদবির সেনা সদস্যদের বিষয়ে চলমান উচ্চপদস্থ পর্ষদের অগ্রগতির বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তিনি।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সহিংসতায় মারাত্মকভাবে আহত আট হাজার জনকে সহায়তা দিতে একটি প্রকল্প চালু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বুধবার চালু হওয়া প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সহায়তা করবে বাংলাদেশ সরকার।
‘দ্য পাথওয়েজ টু হিলিং: এ সারভাইভার সেন্ট্রেড অ্যাপ্রোচ টু অ্যাড্রেস ভায়োলেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস’ প্রকল্পে ২০ লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে ইইউ। ২০২৬ সালের আগস্টের আগ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের শারীরিক, মানসিক উন্নতি ও সুস্থতার জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সামাজিক সংহতি জোরদার ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে এই অর্থ খরচ করা হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যতদিন এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে, ততদিন এটা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন, তাদেরকে সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করা হবে। আক্রান্তদের ঔষধজাত পণ্য, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া উপার্জন খাতেও বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
গত বছরের অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র, শ্রমিক, সাংবাদিক ও তাদের পরিবারসহ অন্যদের এই সহায়তা দেওয়া হবে। ইইউ দূতাবাস জানিয়েছে, ‘সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের সহায়তায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এটি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঈদ আসন্ন। শেকড়ের টানে ঘরে ফেরা শুরু করছে মানুষ। বরাবরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ট্রেন। যাত্রীসেবা, অনলাইন টিকিট, নিরাপত্তা ও সময় বাঁচানোসহ নানা দিক বিবেচনায় রেলপথকে বেছে নিচ্ছে যাত্রীরা। ঈদযাত্রা উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটতে অনলাইনে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছেন তারা। ৩৫ হাজার ৯১৩টি টিকিটের জন্য ১৭ মার্চ রেলওয়ে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ভিজিটর হিট করেছে প্রায় আড়াইকোটি বার। এখন পর্যন্ত কোন টিকিট অবিক্রিত নেই।
এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকার প্রধান দু’টি রেলওয়ে স্টেশন, গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সকল আন্তঃনগর স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে। এছাড়া, যাত্রীদের জন্য কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে মেডিকেল টিম থাকবে।
টিকিট কালোবাজারি, ছাদে ও বিনা টিকিটে ভ্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানান রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বেসরকারি ট্রেনের মালিকরা যেন অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কেউ লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে প্লাটফর্মে ঢুকে অন্য ট্রেনে যেন উঠতে না পারে সে সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদযাত্রার বিশেষ দিনের আগেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসছেন অনেক ঘরমুখো মানুষ। যারা চাকরি করছেন তাদের অনেকের পরিবারকে আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে। তারা স্টেশনের গেটগুলোতে সারিবদ্ধভাবে প্লাটর্ফমে প্রবেশ করছেন। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। বাহির পথেও যাত্রীরা নিরাপদে বের হচ্ছেন। টিকিটবিহীন যাত্রীদের জরিমানা করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ে বিভাগ থেকে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় রেলসেবাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দু’টি রেলওয়ে অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল ৮টায় ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর ২টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এই দু’সময়ে রেলওয়ে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে ব্যাপক ট্রাফিক হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ও অনলাইনে টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ.কম। তবে এবার ব্যাপক ট্রাফিকেও সার্ভার ডাউনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ট্রেনের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের সিইও সঞ্জীব দেবনাথ বাসসকে জানান, এবারের অনলাইন সেবা অনেক আরামদায়ক হয়েছে। টিকিট কাটতে কোন ধরনের সার্ভার জটিলতায় পড়তে হয়নি। এক সেকেন্ডের জন্যও সার্ভার বন্ধ হয়নি। একসাথে কতজন টিকিট কাটার চেষ্টা করছে তা গ্রাহক দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া গ্রাহকের নির্দিষ্ট স্টেশনে টিকিট শেষ হয়ে গেলে তাকে আগে ও পরের স্টেশনের সাজেসন দেওয়া হয়। যা যাত্রীদের জন্য অনেক আরামদায়ক হয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় ১৪ মার্চ থেকে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর দুটায় ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল আটটায় দশদিন পরের টিকেট বিক্রি করা হয়। এবারের ঈদে সারাদেশে চলাচলকারী ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের বাইরেও পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। এছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনগুলো তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল করবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান ৪৯০ জন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরে অতিরিক্ত ২০০জন আনসার সদস্য যুক্ত হবেন। বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধ করতে আমরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রবেশ ও বাহিরের জন্য আলাদা গেইট তৈরি করেছি। এতে করে বিনা টিকিটে কেউই ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ ঠেকানো গেলে বগিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করতে সক্ষম হবো।
কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবে রেলওয়ে পুলিশ। এ বিষয়ে রেলওয়ে ঢাকা পুলিশের পলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বাসকে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীদের আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবো। স্টেশনের প্রবেশপথে আমাদের পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যরা থাকবেন।
সাথে সাদা পোশাকে আমাদের সদস্যরা থাকবেন, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। একই সেবা ঢাকা বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনেও থাকবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন বাসসকে বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে স্টেশনে ইতোমধ্যে যাত্রীর আনাগোনা বেড়েছে। টিকিট করে প্লাটফর্মে ঢোকানো ও বের করা হচ্ছে। এবারের ঈদ যাত্রায় প্রত্যেক রুটে ট্রেনগুলো শিডিউল মেনে চলবে। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে রেলওয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করছে। নিরাপদ ভ্রমণকে অনিরাপদ করে তোলে ছাদে ওঠা যাত্রীরা। এবার যেন ছাদে ও বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে আমরা কঠোর হবো। বিশেষ করে কমলাপুর, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর স্টেশনে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সেটি বাস্তবায়ন করবেন।’
আরও পড়ুন:নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে রিটের ক্ষেত্রে স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কেএম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
ইসির ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে উচ্চ আদালত।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের (রেসপনডেন্ট) এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ শুধু রিটকারীর দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের করা রিটের শুনানি শেষে আজ এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবেদা গুলরুখ।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রবিবার হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।
রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
গত ১০ মার্চ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। ওই গণবিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (ক)-এর অধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক এবং ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালায় উল্লিখিত শর্ত পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ পূরণ করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (ক) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল ৯০ (খ) উল্লিখিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে কমিশনে দলের নাম নিবন্ধন করতে পারবে। ৯০ (খ) ধারায় জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় ছাড়াও নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত উল্লেখ রয়েছে। যেমন: কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠা, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি ইত্যাদি।
রিটকারী আইনজীবী রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় দলের কমিটি থাকতে হবে বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে। অথচ পার্বত্য তিন জেলায় ২০টি উপজেলা রয়েছে, যে কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আগ্রহী হলেও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে পারবে না।
‘স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময় ২০১১ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ওই শর্ত যুক্ত করা হয়। ৫ শতাংশ উপজেলায় এবং ১০ শতাংশ জেলা কমিটি থাকাসহ সর্বমোট ৫ হাজার সদস্য থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে পুরনো আইনে ওই গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে রাজনৈতিক দলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, এই গণবিজ্ঞপ্তি সেই চেতনার পরিপন্থি, এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়। আজ হাইকোর্ট রুলসহ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
১৫ মার্চ থেকে কমিশনের মেয়াদ আরও সাড়ে ৩ মাস বাড়িয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুমের ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করেছিল সরকার। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের দায়িত্বে ও প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমায় পরিবর্তন আনা হয়।
পাঁচ সদস্যের এ কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তদন্ত সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল কমিশনের। পরে সময় বাড়ানো হয়। বাড়ানো সেই সময় গত ১৪ মার্চ শেষ হয়।
তদন্ত কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা ও অনুরূপ যেকোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির ‘আয়নাঘর’ বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা ও কোনো পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল— তা নির্ধারণ করা এবং সেই উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামি খিলাফতকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলে, “আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসি গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন ও হত্যা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থি খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।’ তুলসি গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর।”
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলে বাংলাদেশ সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিবৃতিতে উল্লেখ করে, তুলসি গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সরকার দাবি করেছে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে এটি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে।
বাংলাদেশকে ভিত্তিহীনভাবে ইসলামি খিলাফতের সঙ্গে যুক্ত করার অর্থ হলো বাংলাদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে দেখা, যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামি খিলাফত’ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার আগে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখা এবং ক্ষতিকর গৎবাঁধা ধারণা ও ভীতি ছড়ানো বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার মতো কোনো কিছু বলা থেকে বিরত থাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য