ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে কি সমাধান?
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই ধরনের তিনটি বিয়ে এবং জামিন পাওয়ার শর্ত হিসেবে আদালত আরও একজনকে বিয়ে করতে বলার পর প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে কি ধর্ষণ সমস্যার সমাধান করা যাবে?
আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আদালত এই মামলাগুলোতে এভাবে হস্তক্ষেপ করে বিয়ে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিয়ে করার জন্য ধর্ষণ বেড়ে যেতে পারে, আবার শাস্তি না হলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
আদালতে এভাবে বিয়ে হলে স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা কতটা বজায় থাকবে, সংসারে ভালোবাসা আদৌ থাকবে কি না, এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনার পরামর্শ এসেছে।
কেউ কেউ এমনও বলেছেন, মামলা থেকে বাঁচতে বিয়ে করে পরে স্ত্রীকে অবহেলা করবেন আসামি। চলতে পারে মানসিক নির্যাতন। আর ধর্ষণের কারণে মেয়েটির মনে যে ট্রমা বা মানসিক চাপ তৈরি হবে, তা থেকে সে বের হবে কীভাবে, সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে না।
একজন নারী অধিকার কর্মী বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে বিয়ে হতে পারে। এতে এই বার্তা যাবে যে প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক গড়লে পার পাওয়া যাবে না।
গত ১৯ নভেম্বর নাটোরে একটি ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে আদালতে। বিয়ের পর আসামি জামিন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন।
একই দিন ফেনী কারাগারে বিয়ে হয় আরেক মামলার বাদী ও আসামির মধ্যে। আসামির বাবা বলেছেন, তার ছেলে মুক্ত হলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। মেয়েপক্ষ বলেছে, ছেলেকে মুক্ত করতে ব্যবস্থা নেবে তারা।
২৪ নভেম্বর বিয়ে হয় কুমিল্লা আদালতে। মেয়েটি একজন প্রবাসীর স্ত্রী। তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি স্বামীকে পাঠানোর অভিযোগ ছেলেটির বিরুদ্ধে। এ কারণে মেয়েটিকে তালাক দেন তার স্বামী। পরে হয় ধর্ষণ মামলা। আদালত ভেবেছে সমাধান বিয়েতে।
আদালত থেকে সম্প্রতি এই ধরনের প্রথম নির্দেশনা এসেছে আরও আগে। জামিন চেয়ে এক আসামির আবেদনের পর গত ২২ অক্টোবর হাই কোর্ট বলেছে, বিয়ে করে এলে বিবেচনা করা হবে জামিনের।
মামলাটি প্রায় সাড়ে আট বছর আগের। ‘ধর্ষণের’ কারণে জন্ম নেয়া শিশুর পিতৃ পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করেছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, এভাবে বিয়ে সমাধান হতে পারে না। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
বিয়েতে কী সমস্যা?- জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটার মাধ্যমে এক ধরনের উৎসাহ দেয়ার বিষয়টি চলে আসবে। মনে করেন, কোনো ছেলে একজন মেয়েকে পেতে চায়, তবে মেয়েটি তাকে চায় না। ছেলেটি ভাববে, ধর্ষণ করলেই তো হয়। পরে তো তার সঙ্গেই বিয়ে দেবে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে অপরাধ করেছে সে অপরাধী। অবশ্যই তার বিচার হতে হবে। অপরাধীর সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে দিয়ে কখনও এর সমাধান করা যায় না।’
এই আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিয়েকে সমাধান ভাবলেও পরের ঘটনাপ্রবাহ কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যে বিয়ে করল, তার মানসিক অবস্থাটা কেমন হবে পরে? সে যে ট্রমার মধ্যে থাকবে সেটা কীভাবে দূর হবে?’
অধ্যাপক মিজান বলেন, ‘বাংলাদেশে সবকিছু আজগুবি নিয়মে চলে। এখানে বিজ্ঞান বা সমাজতত্ত্ব কোনো কিছুই খাটে না। যা হয়, সব ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে। কোনো একজন মনে করেছেন, এই ধরনের সমাধান দিলে হয়ত ঠিক হবে। কিন্তু এইগুলো যে আইনের চোখে ঠিক না এতটুকু বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। এরাই এখন হর্তাকর্তা হয়ে দেশ চালাচ্ছেন।’
ধর্ষণ বরাবরই বাংলাদেশে এক আলোচিত বিষয়। নানা সময় এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। তারপরও পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে এক হাজার ৩৪৯ জন নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। যার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ২৭৭টি।
প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৩০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)।
‘আমরাই পারি’ নামে আরেকটি সংগঠন জানাচ্ছে, এই সময়ে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন আরও ২০০ নারী, যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ১৬১ জন।
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।
নানা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে মানুষ। সম্প্রতি নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের এমন একটি ঘটনায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে টানা বিক্ষোভ হয়েছে। সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনেও নিয়েছে।
আন্দোলনের পর ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুততর হয়েছে। বুধবার শরীয়তপুরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন জনের ফাঁসির আদেশ এসেছে। বেশ কয়েকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে গত এক মাসে।
বিচারের জট যখন কাটছে, তখন আবার আসামির সঙ্গে বিয়ের প্রবণতা কেন- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আসকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা (বিয়ে) তো আদালতের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। এখানে আমাদের আর কী বলার আছে? তেবে এটার অবশ্যই একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ২০১৪ সালে বাল্য বিয়ের আইন নিয়ে কাজ করি, তখনও কয়েকজন বলেছিলেন ধর্ষণ হয়ে গেলে বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিত। এখন কিন্তু আমরা সেটার প্রভাব দেখছি সমাজে। মেয়েদেরকে ইচ্ছা করেই উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এটা করলে তো বিয়ে দেবেই। আর এখন যদি এটা আদালতের মাধ্যমে হয়ে থাকে তবে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার।’
কী ধরনের আশঙ্কা করছেন শিফা হাফিজ?
তিনি বলেন, ‘একটা মেয়েকে আপনি সেই রেপিস্টের সঙ্গেই রেখে দিলেন। তার মানসিক অবস্থা কেমন হবে? সে কি কখনও যথাযাথ সম্মান পাবে? স্বামীকে ভালোবাসতে পারবে? এতে সংসারে সুখ আসবে?’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুন্নেসা কাজ করেন নারী অধিকার নিয়ে। তিনি মনে করেন, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এই ধরনের বিয়ে হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রেমের সম্পর্ক থেকে শারীরিক সম্পর্কের পর বিয়ে না করার যে মামলা হয়, সেসব ক্ষেত্রে আদালত উদাহরণ তৈরি করে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ সাবধান হতে পারবে। সবক্ষেত্রে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা নয়। যে করবে, তখন সে ভাববে, আমি যদি এটা লুকিয়ে বা জোর করে থাকি, তাহলে পরবর্তীতে এমন কিছু হতে পারে। হয়ত রাষ্ট্র এটা করেছে যাতে এই অপরাধ প্রবণতা কমে যায়, আর মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে।’
আরও পড়ুন:দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে।
সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৪ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান নিয়ে বলা হয়, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এতে বলা হয়, এটি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে বাতাসের গতিবেগ নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বন্দরে সতর্ক সংকেত নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ রাখতে রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি রোববার এক পরিপত্রে এ নির্দেশ দেয়।
পরিপত্রে রিটার্নিং অফিসারদের ছয়টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা সকলের নিকট সমুজ্জ্বল ও সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে:
(১) বিশেষ কোনো মহলের কোনো প্রকার প্রভাব বা হস্তক্ষেপ নির্বাচনের নিরপেক্ষতা যাতে ক্ষুণ্ণ না করতে পারে, তা আইন, বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার আলোকে নিশ্চিত করতে হবে।
(২) নির্বাচনের ন্যায় একটি সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এমন কোনো কাজ করবেন না, যারা দ্বারা তাদেরকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় জনগণের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় এবং তারা যে পক্ষপাতদুষ্ট এমন ধারণা যাতে সৃষ্টি না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধানকল্পে প্রতিটি কাজে আইন ও বিধির যথার্থ প্রয়োগ ও অনুসরণ করতে হবে।
(৩) জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে এলাকার জনগণের যৌথসভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) ভোটদানের জন্য ভোটারগণ যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে আসিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্য নিশ্চয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহ কর্তৃক নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৫) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং যেকোনো প্রকার অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সদা সতর্ক থাকিবার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করতে হবে
(৬) ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোটকেন্দ্রের অবস্থান সম্পর্কে নির্বাচনের পূর্বে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রোববার এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে বলেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণভবনে এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করেন।’
এর আগে তথ্যমন্ত্রী ও কপ২৮ উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এ পুরস্কার জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের পক্ষে তার সোচ্চার নেতৃত্বের স্বীকৃতি।
গত ১ ডিসেম্বর দুবাইতে কপ২৮-এর ফাঁকে উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল চলাকালে আইওএম ও জাতিসংঘ সিস্টেম সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি এ পুরস্কার প্রদান করে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস ও আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলটির সহ-আয়োজক ছিলেন।
ইউএনজিএ৭৮ ক্লাইমেট মোবিলিটি সামিট চলাকালে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ুজনিত অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুতির দিকে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পুরস্কারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জলবায়ু গতিশীলতা ও উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বতসোয়ানা, সুরিনাম ও পালাউ এ পুরস্কার পেয়েছে।
কপ২৭ চলাকালে ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার হিসেবে আফ্রিকার পাঁচ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে পুরস্কার দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে করা রিট শুনানির জন্য আইনজীবীকে আরও প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছে হাইকোর্ট।
এ রিটের বিষয়ে রোববার প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ শুনানি করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
শুনানি শুরু হলে আদালত রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দকে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করে। সেসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব না পাওয়ায় সোমবার তাকে আরও প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছে আদালত।
বর্তমানে সংসদ বহাল অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয় রিট আবেদনে। এর আগে গত মঙ্গলবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এ আইনজীবী।
নোটিশে বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে উল্লেখ করে বলা হয়, দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর ট্যাক্স রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। আবার নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর।
এমন বাস্তবতায় ট্যাক্স রিটার্নের নথি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা কীভাবে সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন করা হয় নোটিশে।
এতে উল্লেখ করা হয়, হরতাল-অবরোধের ফলে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত নন।
নোটিশে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ফের তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরোক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে হাবিবুর রহমান ছুটু নামের বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন।
উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত হাবিবুর রহমান ছুটু বোদা উপজেলার নুরপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বড়শশী সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে গরু পাচার করতে গেলে বিএসএফ ছুটুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওই সময় একটি গুলি তার বাম পায়ের ঊরুতে লাগলে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে থানা পুলিশের সহায়তায় রোববার সকালে প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয় বিজিবি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় গুলিতে যুবক আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলমান।
দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রোববার আবহাওয়ার ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান নিয়ে বলা হয়, “দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (রোববার) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।”
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে বাতাসের গতিবেগ নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’
বন্দরে সতর্ক সংকেত নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
‘উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিক্ষাক্রমে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে তা সংশোধন করা হবে জানিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, এ নিয়ে যেকোনো ধরনের অপপ্রচার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রোববার এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
এনসিটিবির সচিব নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাক প্রাথমিক হতে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মানসম্পন্ন শিক্ষা উন্নয়ন ও প্রসারে এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা লক্ষ করছি স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করা হচ্ছে।
‘নবীর ছবি আঁকতে বলা হয়েছে লিখে মিথ্যাচার করছে। হিন্দি গানের সাথে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা, যা সর্বৈব মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে, এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন শিক্ষাক্রমে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলা হয়, ‘আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে বিপন্ন করার প্রচেষ্টা যারা করছেন, তাদের এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
‘শিক্ষাক্রমের কোনো ত্রটিবিচ্যুতি থাকলে তা আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই তা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন করব, কিন্তু অপপ্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমতাবস্থায় সর্বসাধারণকে মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এনসিটিবি অনুরোধ জানাচ্ছে এবং এরূপ মিথ্যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড, শেয়ার বা কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য