ক্ষতিপূরণ দাবিতে টানা ৩২ দিন প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে আছেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন্স গার্মেন্টসে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ পরিবারের ৪৫ জন, যারা ২০১২ সালের সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।
সোমবার নিউজবাংলাকে তারা জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবে যারা এসেছেন তারা সবাই এখনো গুরুতর অসুস্থ। কারও মেরুদণ্ডে সমস্যা, কারো শরীরে অন্য সমস্যা। কারো কারো পোড়া স্থানে রয়ে গেছে যন্ত্রণা। তারা কেউই আর নতুন করে কোথাও কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
তাদের অভিযোগ, আট বছর ধরে তারা শুধু ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার আশ্বাস পেয়ে আসছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন্স লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ১১৪ শ্রমিক পুড়ে মারা যান; গুরুতর আহত হন অনেকেই।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কথা হয় নাসিমা আক্তার নামে একজনের সঙ্গে, যিনি তাজরীন গার্মেন্টসের চার তলায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
নাসিমা জানান, ওই ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে, দুই হাতের হাড়েও চিড় ধরেছে। চাইলেও এখন আর স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
নাসিমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালিক চক্রান্ত করে আগুন লাগায় দেয়- তা আপনি জানেন, সারাবিশ্বও জানে। গেটে তালা মেরে দেয়া হয়। আমি আগুনের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে কারখানাটির চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ি।
‘১১৪ জন শ্রমিক মারা যায়, ৫৩ জন নিখোঁজ হয়, মানে শনাক্ত করা যায়নি। তারা আসলে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। তাদের কবর জুরাইন কবরস্থানে। আমরা ৩০০ শ্রমিক আহত হই।’
নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আহতদের মধ্যে যাদের বাড়িঘর আছে, যারা চলার মতো, তারা চলে গেছে। যারা একটু কাজ করতে পারছেন, তারাও করছেন। কিন্তু আমরা যারা একেবারেই পঙ্গু তারা সারাজীবন কোনো কাজকর্ম করতে পারব না।
‘আমরা এক মাস দুই দিন এখানে পড়ে আছি। মালিকপক্ষ, বিজিএমইএসহ সবাই আমাদের বলছিল ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, পুনর্বাসন করা হবে। ওই আশায় আমরা এত বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষ, সরকারপক্ষ, বিজিএমইএ কেউ কিছু করে নাই।’
তিনি জানান, ঘটনার চার বছর পর কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মাধ্যমে। কাউকে এক লাখ, কাউকে দুই লাখ, কাউকে আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল তখন।
নাসিমা আক্তার আড়াই লাখ টাকা পেয়েছিলেন জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার চিকিৎসা করতেই খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এখন আপনারাই বলেন- ওই আড়াই লাখ টাকা দিয়ে আমার কী হবে। এতে কী হয়? আমার জীবনের দাম কি আড়াই লাখ টাকা?’
নাসিমা আক্তাররা জানান, ক্ষতিপূরণ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। এই ৩২ দিনে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সুস্থ হলেই আবার প্রেস ক্লাবে আসছেন।
শুধু ২৫ পরিবার এখানে কেন?
আগুনের সময় আহত হয়েছিলেন ৩০০ জন শ্রমিক। প্রেস ক্লাবে ৪৫ জনের অবস্থান কেন- জানতে চাইলে শ্রমিকেরা জানান, তাদের মধ্যে যারা আসেননি, তাদের অনেকেই এখন স্বচ্ছল।
শ্রমিক মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা এখানে আছি খুবই দরিদ্র এবং অসহায়। আট বছর ধরে আমরা কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছি। এখানে যারা এসেছে তাদের সবাই গুরুতর অসুস্থ। ৩২ দিন ধরে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আছি, কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ-খবরও নিল না।’
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।
জুলাই মাসের প্রথম ৬ দিনে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৫.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সোমবার (০৭ জুলাই) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ।
এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের (অর্থবছর ২০২৩-২৪) প্রাপ্ত ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে জুন মাসের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সম্প্রসারণের হার ৫৩.১ রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) আজ যৌথভাবে চলতি বছরের জুন মাসের বাংলাদেশ পিএমআই রিপোর্ট প্রকাশ করে।
পিএমআই হলো একটি অগ্রণী উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য ধারণা দিতে সহায়তা করে। যাতে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকরা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এমসিসিআই ও পিইবির যৌথ প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা এবং সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)-এর কারিগরি সহায়তায় এ পিএমআই তৈরি করা হয়েছে।
জুন মাসে বাংলাদেশের সামগ্রিক পিএমআই সূচক মে মাসের তুলনায় ৫.৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩.১।
সর্বশেষ পিএমআই রিডিং-এ দেখা যায়, নির্মাণ খাত প্রথমবারের মতো সংকোচনের দিকে গেছে এবং কৃষি, উৎপাদন এবং সেবা খাতগুলোও ধীরগতির সম্প্রসারণ হার দেখিয়েছে।
কৃষি খাত টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে রয়েছে, তবে এই সম্প্রসারণের গতি কমেছে। এই খাতে প্রথমবারের মতো চাকরির সূচকে সংকোচন দেখা গেছে, তবে নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং অর্ডার ব্যাকলগের সূচকে দ্রুত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। এমসিসিআই’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদন খাত টানা ১০ মাস সম্প্রসারণের মধ্যে থাকলেও সম্প্রসারণের গতি হ্রাস পেয়েছে।
এই খাতে ইনপুট ক্রয়, প্রস্তুত পণ্য, আমদানি এবং চাকরির সূচকে সংকোচন দেখা গেছে। নতুন অর্ডার, নতুন রপ্তানি, কারখানা উৎপাদন, ইনপুট মূল্য এবং সরবরাহকারীদের ডেলিভারির সূচকগুলো ধীর সম্প্রসারণ দেখিয়েছে। তবে অর্ডার ব্যাকলগ সূচক টানা ১০ মাসের সংকোচনের পর আবার সম্প্রসারণে ফিরেছে।
নির্মাণ খাত ৬ মাসের সম্প্রসারণের পর আবার সংকোচনে ফিরে গেছে। নতুন ব্যবসা, নির্মাণ কার্যক্রম, কর্মসংস্থান এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকগুলো সংকোচনের দিক দেখিয়েছে। ইনপুট খরচ সূচকে ধীরগতির সম্প্রসারণ দেখা গেছে।
সেবা খাত টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে আছে, কিন্তু সম্প্রসারণের গতি কমেছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকগুলোতে সংকোচন দেখা গেছে, তবে কর্মসংস্থান এবং ইনপুট খরচ সূচকগুলোতে দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে।
ভবিষ্যৎ ব্যবসা সূচক-এর ক্ষেত্রে, উৎপাদন এবং নির্মাণ খাতে ধীর সম্প্রসারণ, কিন্তু কৃষি ও সেবা খাতে দ্রুত সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা গেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘সর্বশেষ পিএমআই রিডিং দেখাচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে রয়েছে। তবে জুন মাসে সম্প্রসারণের গতি কিছুটা কমে এসেছে এবং নির্মাণ খাত গত ৮ মাসে প্রথমবারের মতো সংকোচনের মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ ঈদ ছুটি, বর্ষা মৌসুমের সূচনা এবং বাজেটে প্রত্যাশিত অথবা বাস্তবায়িত কর পরিবর্তনগুলো জুন মাসে অর্থনৈতিক গতিশীলতায় প্রভাব ফেলেছে।’
টানা উত্থান-পতনের অস্থিরতায় ধস নেমেছিল দেশের পুঁজিবাজারে। বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে প্রায় টানা দুই মাস পর ঢাকার বাজারে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকেরও উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।
সবশেষ, ৭ মে ঢাকার বাজারে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হলেও এ কয়দিনে লেনদেন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে বহুবার। অবশেষে টানা পাঁচ দিন ৪০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়ে শেষ কার্যদিবসে তা বেড়ে ৫০৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস নেতিবাচক হলেও বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
সূচক বাড়লেও দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ১৫৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৮১ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২১৭ কোম্পানির মধ্যে ৯৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১০৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ২১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ৩৩ কোম্পানির ১৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে রূপালি ব্যাংক এবং ৯ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২০৫ কোম্পানির মধ্যে ১১৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৫৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ২১ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৫ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে মালেক স্পিনিং মিলস এবং ৯ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক।
মন্তব্য