আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে ক্রমশ সংঘাত বাড়ছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয়। গত ১০ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় জনে। তিন বছরে খুন হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি।
জাতিগত নিধন ও নিপীড়নের মুখে ভিটেমাটি হারিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশে এসেছিল ২০১৭ সালে।
তবে এখন আশ্রয় শিবিরগুলোয় অন্তর্কোন্দল আর খুনোখুনিতে ভীতি সঞ্চার হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের কপালেও।
উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার কাসেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী আকবর আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তোলা আর মাদক ইয়াবার অবৈধ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্যাম্পে সংঘাতে লিপ্ত দুটি অস্ত্রধারী গ্রুপ। এরা ক্যাম্পেরই বাসিন্দা।
টেকনাফ ও উখিয়ার ৩২টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে বিভিন্ন মার্কেট, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলে গ্রুপগুলো। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার আবাসস্থল ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে ১৫ হাজারের বেশি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, এসব সংঘাতের একদিকে রয়েছে মুন্না গ্রুপ, আরেক দিকে বেলাল-আসাদের নেতৃত্বাধীন ‘ইয়াবা ইয়াকিন’ গ্রুপ।
আকবর আহমদ জানান, প্রত্যেক দোকান থেকে মাসে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা তোলে এই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। বর্তমানে এই চাঁদা তোলার প্রায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মুন্না গ্রুপ। এ নিয়ে অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে শুরু হয়েছে মুন্নার বিরোধ।
তবে এ ঘটনাকে অন্যভাবে দেখছেন পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এর পেছনে মিয়ানমারের আরাকানে থাকা কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বহুজাতিক এবং স্থানীয় কিছু এনজিও সংগঠনের ইন্ধন আছে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ এবং এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা বানচালের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে মুন্না বাহিনী ও তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহিনীর নাম শোনা যায়। বর্তমানে এ সংঘর্ষ অনেক বেড়েছে। তারা ক্যাম্পকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে বলে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই খবর পাচ্ছি।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদও ক্যাম্পে ঘটতে থাকা চলমান ঘটনাকে কেবল আধিপত্য বিস্তারের লড়াই হিসেবে দেখতে নারাজ। তিনিও এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে এই দেশে এসেছি। এখানে ক্যাম্পগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এটা তো আমাদের দেশ নয়। যত দ্রুত আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারি, আমাদের ওপর অন্যায়ের বিচার পেতে পারি। সে জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের সহায়তা করা দরকার। কিন্তু তা না করে ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে আমাদের দেশে ফেরা পিছিয়েই কেবল দিচ্ছি না, স্থানীয় অধিবাসী এবং বাংলাদেশ প্রশাসনের মনেও আমাদের সম্পর্কে বাজে ধারণার জন্ম দিচ্ছি। এটা তো আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না।’
হাফেজ জালাল জানান, সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। তারা নানা পরিস্থিতি তৈরি করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
হঠাৎ করে এই সংঘাত বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উখিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শহিদুল ইসলাম বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কাছে মুরুব্বি হিসেবে ছিলেন মৌলভী বখতিয়ার বা বখতিয়ার মেম্বার। স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য ছিলেন তিনি।
পুরনো রোহিঙ্গাসহ ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গারাও তাকে মান্য করত। তিনি রোহিঙ্গাদের এক ধরনের অভিভাবক ছিলেন। ক্যাম্পে সংঘাত হলে বিচার-সালিশ করতেন। গত ২৪ জুলাই ভোরে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। এরপর থেকে রোহিঙ্গারা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এবং যে যার মতো করে চলতে থাকে। এতে সংঘর্ষের প্রবণতা বেড়েছে।
কুতুপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, ‘পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শরণার্থী শিবির বলে শুনেছি। এখানে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে মাত্র কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকায়। এর বাইরে আগে আসা রোহিঙ্গা আছে আরও চার লাখ। টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের জনসংখ্যা সাত লাখের মতো। ক্যাম্পে সংঘাত, গোলাগুলি, হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়রা দুশ্চিন্তায় আছে। কেননা আদতেই তারা (রোহিঙ্গারা) ফিরবে কিনা সেটাই বড় দুশ্চিন্তা। বর্তমানে মুন্না বাহিনীর কর্মকাণ্ড সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।’
বিভিন্ন ক্যাম্পের একাধিক মাঝির (কমিউনিটি নেতা) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্না বাহিনীর প্রধান মাস্টার মুন্না মিয়ানমারের মংডু জেলার উত্তর নাগপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের সঙ্গে তিনি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। মিয়ানমারে থাকতেই তিনি বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের কারবারে জড়িত ছিলেন।
মুন্না বাহিনীর সঙ্গে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বেলাল-আসাদ–মাহাদ-সেলিম-আলম বাহিনীর। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও তারা আরাকানে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা মনে করে।
নিয়মিত সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে ভীতি দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার থাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর তৎপরতা কম দেখা গেলেও রাতের বেলায় তাদের সশস্ত্র মহড়া চলে বলে জানান রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, এত অল্প জায়গায় এত বিপুলসংখ্যক ভিনদেশি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি সংস্থার কারসাজিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে এমনিতেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা।
রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নিউজবাংলাকে জানান, ক্যাম্পের প্রতিপক্ষ বাহিনীগুলোর মধ্যে চলা সংঘর্ষ এখন নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ-র্যাব টহল দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ খলিলুর রহমান খান বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন শান্ত। রাতের বেলায় কিছুটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যে সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে চাচাত ভাই নুর আলমের সঙ্গে নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে ১০ বছরের উম্মে সালমা। তার ভাই, মা, বাবা ও বোনের মধ্যে কেউ বেঁচে আছে কি না, তা সে জানে না।
সে শুধু এতটুকু জানে, আরকান আর্মি তার পরিবারের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
শিশুটির ভাষ্য, তার বাবাকেও গ্রামের অন্য পুরুষদের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। আর যখন ঘরে আগুন দেয়া হয়, তখন তার মা ঘরেই ছিলেন। উম্মে সালমা বাইরে উঠানে ছিল। ওই সময় ড্রোন এসে তার বাম হাতে লাগে।
চাচাত ভাই উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গা নিয়ে যায় উম্মে সালমাকে।
‘পালিয়ে আসার সময় গ্রামের পথে পথে ফাঁকা স্থানে শুধু রক্তের দাগ দেখেছি’, বলে রোহিঙ্গা শিশুটি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর সুয়েজা এলাকায় উম্মে সালমার বাড়ি। কখন তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছিল, তা সে বলতে পারে না।
উম্মে সালমা জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বরের আগে এক শুক্রবার আগুন দেয়া হয় তাদের বাড়িতে। এটাই মনে আছে তার।
বর্তমানে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুটি।
আরেক রোহিঙ্গা শিশু রহিমা, যার বয়স ৯ বছর। তার পাঁচ বছর বয়সী এক বোন আছে, যার নাম সাদিয়া। চাচা নুরুল করিমের সঙ্গে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এ পরিবারে দুই সহোদর ও চাচা ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।
শিশুটি বলে, ‘বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে আরাকান আর্মি। পুড়িয়ে দিয়েছে সব। বাবা-মা মারা গেছে।
‘আমার পায়ে আগুন লাগছে। আর মৃত্যুর ভয় নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’
আরেক শিশু সাত বছরের উম্মে কায়দা বলে, ‘বাবাকে নিয়ে চলে এসেছি। মা ড্রোন হামলায় মারা গেছেন।’
সে জানায়, তারা দুজন গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন।
উম্মে কায়দাদের বাড়ি মংডুর নলবাইন্যা এলাকায়। তার বাবা আছে, তবে পরিবারের অন্য কেউ বেঁচে আছে কি না, সে জানে না। বর্তমানে সে তার মামাতো বোন রাজিয়ার সঙ্গে আছে।
উম্মে কায়দা নিউজবাংলাকে বলে, ‘আরাকান আর্মি বাড়িতে আগুন দেয়ার পর সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’
মংডুতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ড্রোন হামলায় ১১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নূর শাহেরা গুরুতর আহত হয়। সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস তথা এমএসএফ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়, কিন্তু এখনও তার আঘাত থেকে সেরে উঠতে পারেনি।
নূর শাহেরার ভাষ্য, অনেক রোহিঙ্গা সম্প্রতি গুলি ও ড্রোন হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
উম্মে সালমা, রহিমা, উম্মে কায়দা কিংবা নূর শাহেরাই নয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আহত অনেক শিশু রয়েছে। এসব শিশু বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আছে।
জীবিতদের মধ্যে আয়াশ নামে ৩৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা ছিলেন, যিনি তার মেয়েসহ আহত হন।
ভয়াল সেই দৃশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ও খালাকে আমার সামনে আরকান আর্মি গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আমি নদীর তীরে মারা যাওয়ার ভান করছিলাম।
‘আমার স্ত্রী, আমাদের ছোট ছেলেকে নিয়ে আলী পাড়ায় বেঁচে গেলেও তার পুরো পরিবার গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।’
কথা হয় ১২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা বালক মুহাম্মদ ত্বকির সঙ্গে। সে গত ২০ আগস্ট সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসার সময় নদীর তীরে আরাকান আর্মির ছোড়া ভারী মর্টার শেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়।
আহত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিপুলসংখ্যক আহত রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা শিশু ছিল। কারও হাতে আঘাত, কারও পায়ে আঘাত। চিকিৎসা শেষে তারা বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।
‘তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারছি, অনেকেই ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন। তারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। শিশু আইন অনুযায়ী, ৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের কাউন্ট করা হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি তুলে ধরে আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ‘মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর লড়াই দেখিয়ে রোহিঙ্গা নির্মূল করা হচ্ছে। সে কারণে নিরস্ত্র, নিরীহ রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
‘তাদের দুই বাহিনীর নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শিশু আহত হয়ে এপারে চলে আসছে বাধ্য হচ্ছে। তারা অবুঝ শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করছে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আওয়াজ তুলতে হবে।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা ইয়ুথ কোয়ালিশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের চেয়েও ভয়ংকর এ যুদ্ধ। রোহিঙ্গা এলাকায় আরাকান আর্মি ঘাঁটি করে যুদ্ধ করছে, যাতে করে রোহিঙ্গারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
‘এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তাদের সঙ্গে মৃত্যুর বিভীষিকার দৃশ্য দেখে ২০ জনের ওপরে আহত রোহিঙ্গা শিশু উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু–দ্দৌজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আহত আছে।
‘তাদের এনজিও সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’
কত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:ভারত সীমান্তবর্তী ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে ওঠা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, দেশসেরা হওয়া চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য সরকারকে যে জমি রেজিস্ট্রি দেয়া হয়েছিল, সেখানে ২০০০ সালে স্কুল নির্মাণ করা হয়েছিল। স্কুলটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ২০১১ সালে পাঠদানের অনুমোদন দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অফিসের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়। ২০১৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধ মদদে ক্ষমতার জোরে স্কুলটি সরিয়ে নিজ জমিতে স্থাপন করে রাতারাতি প্রধান শিক্ষক হন এরফান আলী।
তাদের অভিযোগ, এরফান স্কুলে যোগদানের পরের দিনই সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান তার স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন ও দুই বোন রেহেনা খাতুন এবং মিতালি পারভিন।
গ্রামের এক যুবকের অভিযোগ, ২০১৪ সালে স্কুলটি আগের জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসে নিজের জমিতে স্থাপন করেন এরফান। সে সময় তাকে (যুবক) শিক্ষকতার চাকরির কথা বলে সাত লাখ টাকা নেন এরফান আলী৷
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালে এরফান আলী যখন স্কুল আগের জায়গা থেকে খুলে নিয়ে তার নিজ জমিতে নিয়ে আসেন, তখন আমাকে তাদের সঙ্গে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব দেন এবং আমার থেকে সাত লাখ টাকা নেন। তারপরও চাকরি দেননি। এখনও পুরো টাকা ফেরত দেননি তিনি।’
চাকরিপ্রত্যাশী ওই যুবক বলেন, ‘২০১৪ সালের আগে এরফান আলী কোনো শিক্ষকতা করেননি। তিনি যে ২০০৮ সালে তার চাকরিতে যোগদান দেখাচ্ছেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ২০১৪ সালের আগে তার কোনো স্কুল ছিল না।’
সম্প্রতি সংবাদকর্মীদের কাছে উল্লিখিত অভিযোগগুলো তুলে ধরে তদন্ত দাবি করেন স্কুলের তৎকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষকের চাকরিপ্রত্যাশী একাধিক যুবক এবং স্কুলের তৎকালীন সভাপতি খলিলুর রহমান।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, তৎকালীন সরকার কর্তৃক প্রত্যেক ওয়ার্ডে দুইটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার ঘোষণা আসে। সেই বাস্তবতায় গ্রামের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে ২০০০-২০০১ সালের দিকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসী।
এর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হলে কীভাবে স্কুল চালু করতে হবে, সে নিয়ম জানিয়ে চিঠি দেয়া হয় আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সব নিয়মকানুন মেনে স্কুলের জন্য ৩৩ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন গ্রামের দুই ব্যক্তি আবদুর রহমান ও কদম আলী।
তারা আরও জানান, দান করা জমিতে টিনের বেড়া দিয়ে স্থাপন করা হয় চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের লোকজন এক সভা আহ্বান করে গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে।
চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘সে সময়কালে আমাকে সভাপতি করে একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই বছরে একটি দৈনিক পত্রিকায় একজন প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আলতাফুর রহমানসহ আরও তিনজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।’
তার দাবি, সে সময় নিয়মিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শন করে যান। সে সময় শিক্ষক হিসেবে ছিলেন আলতাফুর রহমান, নাসরিন আক্তার, নুর নাহার ও জসিম উদ্দীন।
তৎকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘গ্রামের কিছুসংখ্যক শিশুকে নিয়ে ওই স্কুলে পাঠদান করানো হতো। যেহেতু ২০১১ সালের আগে পাঠদানের অনুমোদন পায়নি স্কুলটি, তাই সেসব শিশুকে পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হতো।
‘প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল। পাঠদানের সরকারি অনুমতি নেই, শিক্ষকদের বেতন ভাতা নেই। একটা সময় খুব স্বাভাবিক কারণেই স্কুলটির কার্যক্রম ঢিলেঢালা চলতে থাকে। এ ছাড়াও অভিভাবকগণের অনিচ্ছার কারণে ছাত্র-ছাত্রীও কমতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে বিদেশে চলে যায়। অন্য শিক্ষকদেরও জীবিকার জন্য অন্যখানে যেতে হয়, তবে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের স্বপ্ন নিয়ে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম।
‘২০১৩ সালে যখন বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়, তখন আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম, কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আমাদের লাগানো গাছের ফল এখন ক্ষমতার জোরে ভোগ করছে অন্যজন।’
তার অভিযোগ, ‘এরফান যেহেতু আমার মামাতো ভাই হয়, ২০১৪ সালে সে আমার বাসায় আসে এবং বলে আমার চাকরি বহাল থাকবে যদি আমি সাত লাখ টাকা দিই। সেদিনই সে দুই লাখ টাকা নেয়।
‘পরবর্তী সময়ে দেখি সে চাকরি দিতে টালবাহানা করে। এখনও পুরো টাকা ফেরত দেয়নি।’
এই শিক্ষকের স্বামী সাবেক সেনা সদস্য রবিউল আওয়াল বলেন, ‘২০০২ সালে যখন আমার বিয়ে হয়, তখন আমার স্ত্রী শিক্ষকতা করতেন। আর আমার আত্মীয় এরফান আলী ছিলেন চায়ের দোকানদার।
‘২০১৪ সালে তিনি আমাকে জানান, আগের স্কুলের সবকিছু নাকি বাদ হয়ে গেছে। তাই নিজ জমিতে তিনি একটা বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে এসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের আগে এরফান আলী কোথাও কোনোদিন শিক্ষকতা করেননি। অথচ আমি এখন তার যোগদানের কাগজে দেখছি। তিনি নাকি ২০০৮ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন।
‘তিনি যোগদানের পরের দিন তার স্ত্রী ও দুই বোনও সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। এটা আপাতদৃষ্টিতে প্রতারণা আর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কী হতে পারে?’
আওয়াল বলেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম নিশ্চয়ই হয়েছে। ২০০৮ সালে কোন ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দিলেন, যেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এরফানের জমিতে কোন বিদ্যালয় ছিলে না।
‘আমরা তদন্ত চাই। এরফানের কর্মরত বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র এবং শিক্ষকদের নিয়োগ ও শিক্ষাগত সনদসহ সকল কাগজপত্র যাচাই করা হোক।’
কী আছে নথিতে
২০১১ সালের ৮ মে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের এক কাগজ এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। সে কাগজে সিংহাড়ী মৌজার ১৯৯০ ও ১৯৯১ দাগে ৩৩ শতক জমিতে নির্মিত চরভিটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০১১ সালে যেসব দাগ উল্লেখ করে চরভিটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছিল রংপুর বিভাগের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, সে জমিতে কোনো স্কুল নেই। সেখানে ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছে এটিই সেই জমি, যার মালিক এখনও সরকারই।
নিউজবাংলার হাতে আসা নথির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসে এরফান আলী যে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন, সেখানে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে কি না।
এ বিষয়ে নিউজবাংলার কথা হয় গ্রামের বর্ষীয়ান একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে, যার নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তাদের একজন জানান, চা বিক্রেতা এরফান আলীর শিক্ষকতা করার ইচ্ছা থাকলেও যোগ্যতা ছিল না৷ গ্রামে ২০০০-২০০১ সালের দিকে স্কুল হওয়াতে তিনি নকল শিক্ষাগত সনদসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেন।
তারা আরও জানান, কোনোভাবে পেরে না ওঠায় নিজে থেকে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেন এবং গ্রামবাসী অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামছাড়া করার পাঁয়তারা করেন।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, ২০১৩ সালে দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হলে শিক্ষক হওয়ার লোভ মাথাচাড়া দেয় এরফান আলীর। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে সরকার অনুমোদিত জমিতে অস্থায়ী স্কুল ঘর খুলে দিনে-দুপুরে গায়েব করে দেন। পরবর্তী সময়ে নিজের জমিতে স্কুলটি স্থাপন করেন এবং প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়ে যান।
এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও আদালতে একটি মামলা করেন স্কুলের তৎকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলতাফুর রহমান।
কী বলছেন এরফান
এ বিষয়ে জানতে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর দেয়া নির্ধারিত দিনে তার স্কুলে কাগজপত্র যাচাই করতে গেলে তিনি সেগুলো দিতে রাজি হননি।
সে সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর দাবি, তিনি কোনো স্কুল সরাননি।
তার ভাষ্য, ২০০১ সাল থেকে অদ্যাবধি নিজের স্থাপিত চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করে আসছেন।
ওই বক্তব্যের পর মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে স্কুলের বৈধ কাগজপত্র চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদককে কোনো কাগজপত্র দেননি।
পরে কাগজপত্র তিন দিনের মধ্যে দেয়ার অনুরোধ করে মেসেজ পাঠালেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্কুলে দানকৃত একটি জমির কাগজ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যাতে এরফান আলীর স্বাক্ষর আছে। সেখানে ২০১৫ সালে ২০১৪, ২০২২ ও ২০৫৪ তিন দাগে ২৪ শতক জমি তিনি স্কুলের নামে দান করেছেন। যদিও এরফান আলী এ কাগজের সত্য-মিথ্যা নিয়ে কিছু বলেননি এবং এ কাগজ তাকে পাঠালেও কোনো জবাব দেননি।
স্থানীয়দের দাবি, এরফান আলী স্বাক্ষরিত কাগজে এ তিন দাগে উল্লেখিত জমিতে স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবন, অফিস কক্ষ ও একটি পুকুর রয়েছে।
তাদের একজনের প্রশ্ন, ‘চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হলে ২০১৫ সালে এরফান আলীর দানকৃত জমিতে নির্মিত স্কুলটি কিভাবে জাতীয়করণ হয়? ব্যক্তিগত জমিতে নির্মিত স্কুল কি জাতীয়করণের আওতায় আসতে পারে? যদি তা না হয়, এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।’
কাগজে-কলমে দেখা যাচ্ছে ২০০৮ সালে ২৭ ডিসেম্বর এরফান আলী চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেছেন এবং এই বছরের পহেলা ডিসেম্বরে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। যদিও তার শিক্ষাগত সনদপত্র নিয়ে সন্দেহ আছে এলাকাবাসীর।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, ২০০৮ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলে এবং সে বছরে চাকরিতে যোগদান করলে ২০০১ সাল থেকে কোথায় শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
তৎকালীন চরভিটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফুর রহমান বলেন, ‘যখন স্কুলঘরটি ভাঙা হয়, তখন আমরা এরফান আলীর ভয়ে ছিলাম। সে সবসময় আমাদের হুমকি ও মামলার ভয় দেখাত, তবে শেষমেশ আমি সাহস করে এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
‘স্কুল জাতীয়করণ হবার আগে আমরা যত নথিপত্র তৎকালীন রাজশাহী বোর্ডে প্রেরণ করেছিলাম, তার নথি কীভাবে যেন গায়েব হয়ে গেছে। আমরা বর্তমান চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারের নিয়ম মেনে হয়েছে কি না তার সত্যতা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জানতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েছি। যদি এরফান আলী প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সাথে প্রতারণা করে থাকে, তাহলে আমরা তার বরখাস্তের দাবি জানাই।’
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষর জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁওয়ের সদস্য সচিব মাহবুব আলম রুবেল বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অনেক অপরাধ ও বেইনসাফ বৈধতা পেয়েছে। চরভিটা সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়েছে কি না, অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।
‘অনিয়ম হয়ে থাকলে এর পেছনে কারা কারা জড়িত, তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না।’
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারজ্জামান চৌধুরী। খোঁজ মিলছে না তিন প্যানেল মেয়রসহ আওয়ামীপন্থি অন্য কাউন্সিলরদেরও।
এমন পরিস্থিতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সিসিকের কর্মকাণ্ডে; ব্যাহত হচ্ছে সেবা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ ছেড়েও চলে যান তিনি।
ওই দিনই নগর ভবন ও মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা, তবে তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। এরপর থেকে খোঁজ মিলছে না মেয়রের। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকে বিশেষত এক দিনে ছয়জন নিহত হওয়ার পর থেকে অফিস করছেন না মেয়র। ১ আগস্ট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শোক র্যালিতে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই ব্যক্তিগত অফিস ও নগর ভবনে আসছেন না প্যানেল মেয়র মখলেসুর রহমান কামরান, তৌফিক বকস লিপনসহ বেশির ভাগ কাউন্সিলর।
সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে অন্তত ৩০ জন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের। ৫ আগস্টের পর তাদের অনেকের বাসাবাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। সিসিকের প্রতিদিনকার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
মায়ের মৃত্যু সনদ নিতে সোমবার নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাটের অফিসে গিয়েছিলেন অনিল দাশ, কিন্তু কাউন্সিলরকে না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে নগর ভবন ও কাউন্সিলর অফিসে ঘুরছি, কিন্তু মেয়র, কাউন্সিলর কাউকেই পাচ্ছি না। কবে তারা আসবেন, এ তথ্যও কেউ জানাতে পারছে না। ফলে খুব সমস্যায় আছি।’
অনিলের মতো আরও অনেককে জনপ্রতিনিধিদের না পেয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ও বাসাবাড়ির নকশা অনুমোদনসহ বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
সব সংকট কাটিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সিসিক সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুরের আতঙ্কে চার দিন নগরের বর্জ্য অপসারণও বন্ধ ছিল। এতে নগরজুড়ে আবর্জনার স্তূপ জমে। পরে সবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী উদ্যোগ নিয়ে বর্জ্য অপসারণ শুরু করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম দুই- এক দিন কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। মেয়র মহোদয় অফিস না করলেও ফোনে আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘কোনো নাগরিক কাউন্সিলরদের অফিসে গিয়ে সেবা বঞ্চিত হলে নগর ভবনে আসলে আমরা তা করে দিচ্ছি।’
ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, বর্জ্য অপসারণেও সিসিক কর্মীরা কাজ করছেন।
গত বছরের ২১ জুন সিসিকের পঞ্চম নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওই বছরের নভেম্বরে তিনি মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিএনপিহীন ওই নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগেই কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে যে পুলিশ বাহিনী, তারা কেন মাঠে নেই, এমন প্রশ্ন এখন অনেক মানুষের মুখে মুখে। পুলিশ না থাকার সুযোগে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে ঢাকা ও বাইরের জেলাগুলোতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন দেশব্যাপী আন্দোলনের সময় একের পর এক গুলি ও মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ছিলেন পুলিশের অনেক সদস্য। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনাটি। সেই ভিডিও ঝড় তোলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের একটা পর্যায় নাগাদ পুলিশ উল্লেখযোগ্য সহিংসতায় জড়ায়নি, তবে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ অনেকের অভিযোগ, সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বিভিন্ন জায়গায় গুলি করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের দিন ৫ অক্টোবরও ঘটে ভয়াবহ ঘটনা। ওই দিন দেশের অন্তত ১০০টি থানায় হামলা-ভাঙচুর হয়। সেদিনও আত্মরক্ষার্থে পুলিশের কিছু সদস্য গুলি ছোড়েন। তাতে কয়েকটি থানায় ব্যাপক রক্তপাত হয়।
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব, যাত্রাবাড়ী থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় প্রাণহানি হয় সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের।
এমন বাস্তবতায় প্রাণহানি ও হামলার শঙ্কায় বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য গা ঢাকা দিতে বাধ্য হন, তবে চাকরির নিয়ম অনুযায়ী এভাবে থাকার সুযোগ নেই তাদের।
এদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের উচ্চ পদে হয়েছে ব্যাপক রদবদল। নতুন করে আইজিপি করা হয়েছে মো. ময়নুল ইসলামকে। তিনি বুধবার নির্দেশনা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের। এর পরও পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।
কর্মস্থল যোগদান না করার অন্যতম কারণ জানতে পেরেছে নিউজবাংলা। সংবাদমাধ্যমটির কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার চেয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
পুলিশের ওই কর্মীদের ১১ দফা দাবির তালিকা এসেছে নিউজবাংলার কাছে। এসব দাবিতে পুলিশ সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, ওপরের নির্দেশনা মেনেই তাদের জনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ‘অধস্তন পুলিশ সংস্কার প্ল্যাটফর্ম’ নামে করা ১১ দফা তৈরি করে পুলিশের সব স্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, তবে সেই দাবিগুলো কারা কোথা থেকে দিয়েছে, তেমন কিছু উল্লেখ নেই। কোনো পুলিশ সদস্যের নামও উল্লেখ নেই সেখানে।
ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব দাবি পুলিশের সব অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর। সেখানে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর যে হামলা-নির্যাতন করা হয়েছে তা ছাত্ররা করেনি।
১১ দফা দাবির প্রথমটিতে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
যেসব পুলিশ নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ, আজীবন রেশন-পেনশন দেয়ার কথা রয়েছে দ্বিতীয় দাবিতে।
এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগ পিএসসির অধীনে এবং কনস্টেবল নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে হতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের জন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ছুটি ও ওভারটাইম নিশ্চিত করার দাবিও করা হয়েছে।
৯ নম্বর দাবিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পুলিশকে যেন কোন রাজনৈতিক সরকার তাদের কর্মী হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, তেমন ব্যবস্থা তৈরি করা। সে জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করার দাবিও রয়েছে। আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি থানা ও ব্যারাকগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তোলার দাবি করা হয়েছে শেষ দুটি দফায়।
কর্মস্থলে যোগদান না করার বিষয়ে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর খোঁজ মিলছে না।
বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদেরও অনেকেই লাপাত্তা।
গত সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে যান আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
ওই দিন বিক্ষুব্ধ লোকজন আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন। বাদ যায়নি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছিল।
রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের অনেকেই দলের নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা তাদের খোঁজ পাননি। এমনকি তাদের প্রায় সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই-একজন কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়া তারা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মঙ্গলবার বিদেশে পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর আগে সহিংসতার মধ্যে অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়েছেন। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হন আরও অনেকে।
দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দেশ ছাড়েন। তারা রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। এর মধ্যে রোববার রাতেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজ জেলা গাজীপুরে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
আলোচিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবন সোমবার ভাঙচুর হলেও তিনি ঠিক কোথায় ছিলেন, জানা যায়নি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জানতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বেশি সরব আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, তবে নওফেল সোমবার রাতে ঢাকাতেই ছিলেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।
ওই সূত্রের দাবি, ঢাকাতেই আছেন দলটির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা।
গোয়েন্দা তথ্য ও ইমিগ্রেশন পুলিশের তথ্য অনুসারে, বিপুলসংখ্যক ভিআইপি গত এক সপ্তাহে দেশ ছাড়েন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানা কর্মসূচিতে দেশ যখন উত্তাল, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে, ঠিক সে সময়ে গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে দেশ ছাড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান।
গত ১৬ জুলাই লন্ডন যান মিরপুরের এমপি ইলিয়াস মোল্লা। পরে তিনি ২৬ জুলাই দেশে ফিরে আসেন। একই দিন পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সংযুক্ত আরব আমিরাত যান।
সরকার পতনের পরপরই গা ঢাকা দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিক্ষুব্ধ জনতা তার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
ওই দিন চট্টগ্রাম-৩ আসনের (সন্দ্বীপ) সাবকে এমপি মাহফুজুর রহমান সপরিবারে দেশ ছাড়তে ঢাকায় ছুটে আসেন। বিকেল পাঁচটায় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে হাজির হন, কিন্তু বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণার খবরে তিনি ফিরে আসনে। পরে গুলশানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এরপর এ নেতা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি ১৬ জুলাই যান মালয়েশিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন পরিবারের চার সদস্য।
ওই দিন আরও দুই এমপি বিদেশ যান, যাদের মধ্যে আছেন ময়মনসিংহ-৮ আসনের এমপি মাহমুদ হাসান সুমন। তিনি পরিবারের চার সদস্য নিয়ে গেছেন সিঙ্গাপুরে।
অপরজন হলেন কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, যিনি গেছেন চীন।
১৭ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ঢাকায় ফেরেন চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি মাহবুব উর রহমান। ওই সময় ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজল ভারত সফরে ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন ১৭ জুলাই।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব আমিরাতে যান ২৭ জুলাই। সিলেট-১ আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আগে থেকেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে এখনও আছেন।
ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন থাইল্যান্ড, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পারভীন জামান গত ২৬ জুলাই থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান।
ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন গত ২৩ জুলাই ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন। ময়মনসিংহ-৩ আসনের এমপি নিলুফার আঞ্জুম লন্ডন থেকে গত ২৫ জুলাই দেশে ফেরেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ২৫ জুলাই কানাডা যান। এটি তার সরকারি সফর বলে খবর পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু ২৮ জুলাই কানাডার টরন্টো থেকে ঢাকায় ফেরেন। চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান ১৮ জুলাই সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে যান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এমপি ফয়েজুর রহমান ২৭ জুলাই স্ত্রীসহ পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে হংকং থেকে দেশে ফেরেন। কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুর যান ২৮ জুলাই।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের রসুলপুর ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামের ফরিদ হোসেনের বাগানে থোকায় থোকায় পাকা লটকন। বাগান নিয়ে খুশি ফরিদ।
কয়েক বছর ধরে অর্থ আয় করছেন এ কৃষক। তার বাগান দেখে লটকন চাষে আগ্রহী হয়েছেন গ্রামের অনেকেই।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। লাভজনক হওয়ায় এ মাটিতে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ঘাটাইলের অনেক কৃষক।
জাঙ্গালিয়া গ্রামে লটকন বাগান দেখতে আসা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে লটকনের। অন্য ফলের তুলনায় লটকন চাষে খরচও অনেক কম। এমন একটি বাগান করার চিন্তা করছি।’
সরেজমিনে জাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক ফরিদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার বাগানে অন্য ফলের সঙ্গে অল্প কিছু লটকনের গাছ লাগিয়েছিলেন। মূলত শখ করেই ১০টি লটকন গাছ দিয়ে ছোট পরিসরে বাগান করেছিলেন তিনি। বাজারে লটকনের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় আর্থিকভাবে সফলতা পাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, এ বছর লাখ টাকার বেশি মূল্যের লটকন বিক্রি করতে পারবেন। এতে তার কোনো খরচ নেই। পাইকার বাগানে এসে লটকন কিনে নিয়ে যান। বিক্রির কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
গুণগত মানভেদে লটকন মণপ্রতি দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, ‘লটকন উৎপাদনের জন্য ঘাটাইলের পাহাড়ি মাটি খুবই উপযোগী। লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম।
‘স্বাস্থ্যসম্মত ফলটি উৎপাদনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাবের। বিয়ের কিছুদিন পর দেশ ছেড়ে চলে যান তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্ত্রী তানিয়া ইসলাম।
কথা ছিল, তুরাবকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করবেন তানিয়া, কিন্তু তা আর হলো না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে গত ১৯ জুলাই সিলেটে মিছিলে সংঘর্ষে প্রাণ হারান এটিএম তুরাব। তিনি দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পরিবারের অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তুরাব।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় তুরাবের মৃত মুখও তার প্রবাসী স্ত্রী দেখতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ জানান, গত ১৩ মে বিয়ে করেন তুরাব। বিয়ের এক মাসের মাথায় তার স্ত্রী তানিয়া ইসলাম লন্ডন চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সেখানে তানিয়া মুষড়ে পড়েছেন।
আবুল আহসান জানান, তুরাবের মৃত্যুর খবর শুনে পরদিনই তানিয়া দেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় আসতে পারেননি। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় শেষবারের মতো স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি তিনি।
তুরাবের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতেই তার দাফন হয়।
এ সাংবাদিকের পরিবার নগরের যতরপুর এলাকায় থাকেন। ওই বাসাতেই থাকেন তুরাবের মা মমতাজ বেগম।
ছেলেকে এভাবে হারিয়ে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি তিনি। বারবার বিলাপ করছেন ও মুর্ছা যাচ্ছেন এ নারী।
বাসায় কেউ গেলেই তিনি প্রশ্ন করছেন, ‘পুলিশ কেন আমার ছেলেকে মারল?’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকা থেকে মিছিল বের করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। আচমকাই সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় মিছিলকারীদের।
পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে। ওই দিন আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তুরাব। আচমকা সংঘর্ষ শুরু হলে তৎক্ষণাৎ নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারেননি তিনি।
সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত সহকর্মীরা দেখেন তুরাব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।
পরে সেখান থেকে তাকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ইবনে সিনা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থান তুরাবের মৃত্যু হয়।
পরের দিন ২০ জুলাই ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তুরাবের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম জানান, নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
এদিকে তুরাব নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ করেন তার ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ। এ অভিযোগে তুরাবের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করা হয়।
অজ্ঞাতনামা আট থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে তুরাবের ভাই অভিযোগ দিলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করেছে, তবে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি।
যা ছিল লিখিত অভিযোগে
কোতোয়ালি থানায় করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯ জুলাই বেলা একটা ৫৫ মিনিটে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকার কোর্ট পয়েন্টে অবস্থান করছিলেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। একপর্যায়ে বিএনপি মিছিল শুরু করলে তুরাব মিছিলের পেছনে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে অবস্থান নেন। মিছিলটি নগরের পুরান লেন গলির মুখে পৌঁছালে সশস্ত্র পুলিশ বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়।
ওই সময় হঠাৎ লাগাতার গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। এর একপর্যায়ে তুরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন অন্য সহকর্মী ও পথচারীরা তাকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এবং তুরাবের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ছয়টা ৪৪ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
এমন বাস্তবতায় পুলিশ বলছে, তুরাব কার গুলিতে নিহত হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
বাহিনীটির ভাষ্য, বন্দরবাজার এলাকায় সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলা ও তুরাব নিহতের ঘটনায় ২০ জুলাই সিলেটের কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলমান আছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
‘এ জন্য পরিবারের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একসঙ্গে তদন্ত করবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য