পশ্চিমে তা উত্তর আমেরিকা হোক অথবা ইউরোপ, হ্যালোইন এক জনপ্রিয় উৎসব। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ দিনটায় পালিত হয় উৎসবটি, যা হয়তো পুবের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগের নানামুখী প্রসারের কারণে এখন আমরা সবাই জানি।
এই হ্যালোইন উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ বলা যেতে পারে মিষ্টিকুমড়া। হ্যালোইনের সঙ্গে এর যোগসূত্র কোথায়? এ নিয়ে কী ধরনের জনশ্রুতিই বা প্রচলিত আছে জেনে নেয়া যাক।
সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পশ্চিমের খামারগুলোয় শুরু হয় কুমড়া প্রদর্শনী। উত্তর আমেরিকার খামারিরা নিজেদের খামারে উৎপাদিত কুমড়া তো প্রদর্শন করেনই, সঙ্গে থাকে কে কত বড় ফলাতে পেরেছে, কার্ভিং বা নকশা কাটা, এটি দিয়ে তৈরি খাবারের প্রতিযোগিতাও। পুরো বিষয়টাই যুক্তরাষ্ট্রের খামারগুলোয় ‘পাম্পকিন প্যাচ’ নামে পরিচিত।
পাম্পকিন প্যাচের অন্যতম একটি কর্মকাণ্ড হলো কুমড়া তোলার প্রতিযোগিতা। সামান্য অর্থের বিনিময়ে এতে অংশ নেয়া যায়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের জন্য বিনে পয়সায়ও এ আয়োজন করে থাকে।
বলে রাখা ভালো, আমাদের দেশে মিষ্টিকুমড়া সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও, পশ্চিমে কিন্তু এটি ফল হিসেবে পরিচিত।
আমেরিকান শ্বেতাঙ্গদের বৃহদাংশের পূর্বপুরুষ এসেছে আয়ারল্যান্ড থেকে। তাই হ্যালোইন এবং মিষ্টিকুমড়ার সঙ্গে আইরশিদের একটি সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। সেখানে নাকি স্টিঞ্জি জ্যাক নামে এক মাতাল বাস করত। যে কিনা একবার শয়তানকে মদ্যপানের দাওয়াত দিয়ে বসে।
স্বয়ং শয়তানকে মদ্যপানের আমন্ত্রণ জানানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তাই জ্যাক ফন্দি আঁটে কীভাবে তাকে ধোঁকা দেয়া যায়। কিন্তু যথারীতি শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে মৃত্যু হয় তার।
স্বর্গদ্বারে প্রবেশের মুহূর্তে তাকে জানানো হয়, মদ্যপান ও কিপটেমির জন্য সে কোনোভাবেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। ওদিকে প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকা শয়তান তাকে নরকেও আশ্রয় দেয় না। বদলে জ্যাকের আত্মাকে একটি শালগমের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেরত পাঠানো হয় পৃথিবীতে। সেই শালগম আকারে সে যেকোনো অশুভকে প্রতিহত করে আসছে হাজার বছর ধরে-এমনটাই প্রচলিত রয়েছে।
কালের বিবর্তনে শালগমের ‘অল হ্যালোস ডে’ বা ‘হ্যালোইন’ উৎসবে ভূত তাড়াতে বিশেষ আকৃতিতে কুমড়াকে নকশা করে রেখে দেয়া হয় বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে। ওই বিশেষ নকশার কুমড়ার ভেতরে আলো জ্বালালে তা আবার ‘স্টিঞ্জি জ্যাক ল্যান্টার্ন’ নামেও পরিচিত হয়।
যদিও শরতের বিদায় ও শীতের আগমনী যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ‘ফল’ নামে পরিচিত, এই সময়টায় কুমড়া শুধু হ্যালোইনের জন্যই নয়। ‘থ্যাংকস গিভিং’ উৎসবেরও অন্যতম প্রধান উপাদান।
এ-সংক্রান্ত একটি মিথ বা শ্রুতি জানা গেল যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের ‘বগার্স অরচোর্ড’ গিয়ে। এক খামারি বললেন, যে বছর যত দ্রুত কুমড়ার রং গাঢ় কমলা হবে শীত নাকি ততই বেশি পড়বে।
ফার্মঘুরে জাতভেদে কুমড়াগুলোর নানা মজার নামও জানা গেলো। যেমন ‘হোয়াইট মিস্টিক পাম্পকিন’ অথবা ‘মিস্ট্রি অব অরেঞ্জ’। যার বাংলা করা যেতে পারে রহস্যময় সাদা কুমড়া বা কমলার রহস্য। খামারিরা নিজেদের ইচ্ছেমতোই নামকরণ করে থাকে।
এ মুহূর্তে পশ্চিমের বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা রঙের কুমড়ায় সেজে আছে। কুমড়ার নকশাগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে কোনটি হ্যালোইন আর কোনটি থ্যাংকস গিভিং-এর চিহ্ন বহন করছে।
৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হ্যালোইন দিবসটি ছুটির দিনও। অনেকের কাছেই আবহাওয়ার কারণে এই দিনটি বড়দিনের চেয়েও জনপ্রিয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ১৮১তম মহারাসলীলা এবং আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৮তম মহারাস উৎসব পালিত হয়েছে।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার ঊষালগ্নে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
মণিপুরী সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকের ঢল নামে।
কমলগঞ্জের উভয়স্থানে সোমবার দুপুরে রাখালনৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল রাসলীলা। জাতি, ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এখানকার রাসলীলা বড় উৎসবে রূপ নিয়েছিল। উৎসবে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী পর্যটক এসেছেন এখানে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার সকালে কমলগঞ্জে হাজির হয়েছিল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার হাজারো মানুষ।তাদের পদচারণে সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পল্লী। মঙ্গলবার ঊষালগ্নে এ উৎসব শেষ হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ৩টা জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সসের ২টি মন্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।
রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বসেছিল রকমারি আয়োাজনে বিশাল মেলা। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।
মাধবপুর মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডপ রাসোৎসব সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল মিলন মেলায় রূপ নেয়। রাসলীলায় মঞ্চস্থ মণিপুরী নৃত্য শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব শেষে মধ্যরাতে পৃথক তিনটি মণ্ডপে উৎসবের আরেকটি অংশ রাসলীলা শুরু হয়। কিশোরী মেয়েকে কৃষ্ণের প্রেয়সী সাজিয়ে নাচতে থাকে, এরপর অপর কিশোরকে শ্রীকৃষ্ণ সেজে বাঁশি হাতে নিয়ে নাচতে থাকে। এরপর রাধাকে নিয়ে একঝাঁক গোপীনিরা একত্রে নাচতে আসে মণ্ডপের ভেতর। মধ্যরাতে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। এভাবে সারা রাত নৃত্যের মাধ্যমে রাধা ও কৃষ্ণের মিলন ঘটানোর মাধ্যমে মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।’
মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ১৮১ তম বার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৩৮তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি যোগেশ্বর সিংহের সভাপতিত্বে ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) সৈয়দ হারুর অর রশীদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড.উর্মি বিনতে সালাম, পুলিশ সুপার মনজুর রহমান, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসিদ আলী, মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিনহা।
অপরদিকে রাসোৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আদমপুর মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে মৈতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের রাস উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মণিপুরী রাসোৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
মণিপুরী অধ্যূষিত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে আশ্বিন মাসের শেষ ভাগেই উৎসবের সাড়া পড়ে যায়। উপজেলার মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও মেতে ওঠে একদিনের এ আনন্দ উৎসবে।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসব। সোমবার সকালে স্নান ও পূজা-অর্চনার পরই এবারের মিলন মেলায় সমাপ্তি টানা হয়। এর আগে শনিবার শুরু হয় রাস পূজা।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। জলপথে এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এবারের রাস উৎসবে ২৫ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।
রাস পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘খুবই শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চনা ও পুণ্যস্নান করেছেন। তবে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের দাবি অনুযায়ী পূজার পাশাপাশি আগের মতো কবিগান, শাস্ত্রীয় গান ও ধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভাল হতো।’
রাস পূজায় অংশ নেয়া অর্ণব তালুকদার বলেন, ‘প্রথমবার রাসে এসেছি। খুবই ভাল লেগেছে। তবে একটু কবিগান ও শাস্ত্রীয় গানের ব্যবস্থা থাকলে আয়োজন পূর্ণাঙ্গ হতো।’
খুলনার রূপসা এলাকার কাকলী দেবনাথ বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রা ও থাকায় কিছুটা কষ্ট হলেও সার্বিক ব্যবস্থা ছিল খুব ভাল। আমাদের খুব ভাল লেগেছে। আবারও এই আয়োজনে আসার ইচ্ছে আছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, ‘রাস পূজা উপলক্ষে বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছিল। সবকিছু সঠিকভাবেই হয়েছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
প্রসঙ্গত, দুবলার চরের রাস উৎসব নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেন।
আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাস নৃত্যে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় আয়োজিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর দুবলার চরে বসে রাসমেলা।
গারো পাহাড়ের আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসব সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টির নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব। নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর প্রতিবছর উৎসব মুখর পরিবেশে হয়ে থাকে নৃ-গোষ্ঠীর এ উৎসব।
ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড় এলাকায় গারোরা ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করে থাকে প্রতিবছর। এবারও ২৬ নভেম্বর গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর ধর্ম পল্লীতে তারা সকলেই নেচে-গেয়ে মেতে উঠেন এ উৎসবে।
এ সম্প্রদায়ের লোকদের তথ্য মতে, এক সময় গারো পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। এ সম্প্রদায় বিশ্বাস, তাদের শস্য দেবতা এক সময় পাহাড়ি এলাকার গারোদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা এটা রোপন করো তাতে তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে।’ এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে। কিন্তু গারো পাহাড়ের অধিকাংশ গারো ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় এখন ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবে একত্রে করে পালন করা হয় এ উৎসব। এখন নতুন ফসল কেটে যিশু খৃস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন তারা। সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠির বা আদিবাসীরা মনে করে ইশ্বরের দয়ায় তারা ফসল উৎপাদন করে থাকে। তাই তারা প্রতি বছরের ন্যায় আয়োজন করে থাকে নবান্ন বা গারোদের ভাষায় ওয়ানগালা উৎসব।
প্রথমে সকাল ৯টার দিকে থক্কা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর ১০টার দিকে প্রার্থনা, ১২টার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দুপর ২টার দিকে বাড়ি বাড়ি কীর্তনের সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠে নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও শিশুরা। সর্বশেষ বেলা ৩টা থেকে প্রীতিভোজের আয়োজন হয়ে থাকে।
মরিয়মনগরের রওনু নকরেক বলেন, ‘আমরা এ দিনটি অনেক আনন্দের সঙ্গে কাটাই। আমাদের নতুন ফসল ঘরে তোলার আগে তার কিছু অংশ প্রভুর নামে উৎসর্গ করি। আবার যেন পরের বছর এ বছরের চেয়ে ভালো ফলন পাই।’
আরেক দ্রনিতা ধারিং বলেন, ‘আমরা আসলে নতুন ফসল প্রভুকে উৎসর্গ করার জন্যই এই উৎসব পালন করে থাকি। এটা আমাদের নবান্ন উৎসব। এ উৎসবকেই আমরা ওয়ানগালা বলে থাকি। আমরা সারাদিন নেচে-গেয়ে কাটাই। আমাদের আগের লোকেরা এই কালচার করে গেছে তাই আমরাও তা পালন করে থাকি।’
তামিম চাম্বু গং বলেন, ‘নতুন ফসল হওয়ার পর আমরা প্রভুকে আগে ফসল উৎসর্গ করে থাকি। তারপর আমরা খাই। আমরা বছরের একই সময় এইটা পালন কইরা থাকি। এখানে আগের যুগের আদিকৃস্টির ব্যবহার করি। নতুন ফসল উৎসর্গ করার মাধ্যমে খৃষ্ট রাজাকে সম্মান করা হয়। এ উৎসবে অনেক বন্ধু- বান্ধব একসঙ্গে হতে পারে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথিরা আসে।’
মরিয়মনগর ধর্মপল্লীতে ১৯৮৫ সাল থেকে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা শুরু হয়। এ বছরও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা। প্রতিবছরই করা হবে এ উৎসবের আয়োজন। ওয়ানগালায় প্রার্থনা পরিচালনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।
মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস বলেন, ‘আমরা তাকে রাজা হিসেবে মানি। শান্তি রাজ হিসেবে তিনি সারা পৃথিবীতে শান্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন। শান্তির বার্তা দিয়েছেন। ওয়ানগালা হলো আদিবাসীদের ধন্যবাদদের উৎসব। যা আমরা বাঙালিরা নবান্ন বলে পালন করি। তিনি এ সমস্ত শস্যের উৎস দান করে থাকেন। তাই আদিবাসীরা তার প্রতি খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতা জানান এ উৎসবের মাধ্যমে। সুপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।’
তিনি জানান, উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর ও গারো পাহাড়ে আদিবাসীদের মাঝে বইছে আনন্দ।
আরও পড়ুন:নাচে গানে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ১২৪তম বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান খাসিয়া ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem) অনুষ্ঠিত হয়।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগরী পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আমনত্রীত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীন খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ উৎসব পালিত হতো। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াংয়ের সভাপতিত্বে ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্মীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, বাংলাদেশ মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহ প্রমুখ।
বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান করেন। পাশাপাশি তাদের জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষ এবং জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন। উৎসব উপলক্ষে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন এ সময়।
সেং কুটস্নেম উৎসবের দিনব্যাপী সবাই মিলে মাছ শিকার, ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দ করে নিজেদের সামাজিক সম্পর্কে সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
কই বসে এ মেলা
সেং কুটস্নেম উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাগুরছড়া পুঞ্জির মাঠে বসে ঐতিহ্যগত মেলা। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তীর, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়। খাসিয়া তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি, বাংলাদেশে খাসিয়াদের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা ও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ষ বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৪তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৫তম বর্ষকে বরণ করে নিলেন খাসিয়া জনগোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষ বরণ।
আলাপকালে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্মী জানান, সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির সৌরভ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব পালিত হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর দু’পাড়ে হাজারো নর-নারীর ভিড়। নদীতে ভাসছে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজ। বাঁশ, বেত, কাঠ আর রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি সব জাহাজ।
নদীতে ভাসমান এসব জাহাজে চলছে বাঁধভাঙা আনন্দ। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবারা দল বেঁধে নানা বাদ্য বাজিয়ে জাহাজে নাচছে, গাইছে। আবার কোনো কোনো জাহাজে চলছে বুদ্ধ কীর্তন- ‘বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের নাম সবাই বলো রে’; ‘বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে।’
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দুদিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন ছিল রোববার। এদিন বিকেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফকিরা বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীতে ‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’ স্লোগানে ঐতিহাসিক জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইনপাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট আটটি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে। সাত-আটটি নৌকার উপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্প জাহাজ।
আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীর কারণে এসব কল্প জাহাজ মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। প্রতিটি জাহাজেই আছে একাধিক মাইক। ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে জাহাজে শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবারা নেচে-গেয়ে আনন্দ করছে। জাহাজ নিয়ে ভেসে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন-নাচসহ নানা আনন্দ আয়োজন।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পণ বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৭১ সালে সবকিছু ভুলে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি। সেই ঐতিহ্যে আঘাত করছে দুষ্কৃতকারীরা। সেই প্রেক্ষাপটে এই জাহাজ ভাসা উৎসবে সবধর্মের মানুষের উপস্থিতি বলে দেয়- সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের কালো দাত ভেঙে দেয়ার শপথ নেবে সব ধর্মের মানুষ।’
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিৎময় বড়ুয়া বলেন, রামু যে অসাম্প্রদায়িক একটি এলাকা তা প্রমাণ করে এই উৎসবে আসা সব ধর্মের মানুষের সরব উপস্থিতি। এই মেলবন্ধন ধরে রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিএনপির হরতাল কিছুই না। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ এটিকে প্রতিহত করেছে। আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে আছি। ছাত্রলীগের হাজারো নেতাকর্মী জাহাজ ভাসা উৎসব পাহারা দিচ্ছে।’
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, ‘এই জাহাজ ভাসা উৎসবকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এতে করে এটি সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।’
রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান বলেন, ‘উৎসব ঘিরে বাঁকখালী নদীর দুপাড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী সদস্যও মোতায়েন রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান, রামুর শ্রীকুল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ. ছেকাচারা মহাথের, উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেলসহ অনেকে।
প্রসঙ্গত, রামু ছাড়াও কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, চৌফলদন্ডি ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবে বিজয়া দশমীর দিনে ভক্তরা নেচে-গেয়ে, ঢাকঢোল ও কাঁসর বাজিয়ে বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে। একইসঙ্গে শুরু হয় সামনের বছরে দেবী দুর্গার আগমনের জন্য ভক্ত-পুণ্যার্থীদের অপেক্ষা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবের শেষ দিনে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় প্রতিমা বিসর্জন।
দেবীদুর্গাকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আবেগ ও মন খারাপের মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কেননা দশমী মানেই এক বছরের জন্য তাদের দেবী দুর্গার বিদায়।
দশমীর দিন সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৩টায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
রাজধানীতে প্রথমে প্রতিমা বিসর্জন দেয় ধানমন্ডির সর্বজনীন পূজা কমিটি। তারপর ওয়ারীর শঙ্খনিধি মন্দির। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দুর্গাকে বিদায় জানাতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাট ওয়াইজঘাটে ভিড় করেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। বিশেষত নারী পুণ্যার্থীরা মেতে ওঠেন আবির খেলায়। তারা একে অপরকে রাঙিয়ে দেন রং-সিঁদুরে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২৪৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের বিভিন্ন ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর ২৪৬টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেয়া হয়।
আগের দিন সোমবার ছিল শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী। দেবী দুর্গাকে বিদায়ের আয়োজনে উৎসবে মেতে ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ।
মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা দিনটিকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে। তাদের প্রার্থনায় ছিল সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা। যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে থাকবে শান্তি। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা ও বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় ছিল প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস।
একইসঙ্গে ভক্ত-পুণ্যার্থীদের মাঝে ছিল বিদায়ের সুর। কেননা দশমীর দিনে বিদায় জানাতে হচ্ছে দেবীকে।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে চলছে প্রতিমা বিসর্জন। শহরের বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় পদ্মা নদীতে। এ উপলক্ষে নগরীর মুন্নুজান স্কুল ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিসর্জন উপলক্ষে রাজশাহী নগরীজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা।
দুপুরে নগরীর মুন্নুজান স্কুল ঘাট পরিদর্শন শেষে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, পূজা উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু চলছে। বিসর্জন যাতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে বিসর্জনকে ঘিরে নগরীতে যাতে যানজট পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এবার রাজশাহীতে ৪৬৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে শহরে মণ্ডপ ছিলো ১০০টি।
মন্তব্য