মানুষের বদলে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ অহরহ আমরা শুনতে পাই। মাসের পর মাস যেভাবে কাউকে দেখছেন, হয়ত হঠাৎ করেই তিনি হয়ে যেতে পারেন ‘অচেনা’। আচরণ থেকে শুরু করে বদলে যায় অনেক কিছুই।
মানুষের এই হঠাৎ ‘বদল’ বিস্ময়কর হলেও বিজ্ঞান বলছে, বদলে যাওয়াটা কোনো সহজ কিছু নয়। এখনকার ‘অচেনা’ মানুষটি হয়ত তার নিজ স্বভাবেই আছেন, তাকে চেনার ভুলটি করেছিলেন আপনিই।
তবে কিছু ক্ষেত্রে মানুষ সত্যিই বদলায়। আর সেই বদলানোর কাজটি সফল করতে দরকার ব্যক্তির সচেতন চেষ্টা এবং বেশ কঠোর পরিশ্রম। এই কাজটি খুব কম মানুষই পারেন, ফলে বেশিরভাগ মানুষ জীবন কাটিয়ে দেন একমুখী বৈশিষ্ট্য নিয়ে। তাদের সেই সহজাত বৈশিষ্ট্যকে অনেক সময় আমরা চিনতে ভুল করি বলেই পরে ভাবি, ‘মানুষটি বদলে গেছে’।
মানুষ কি আসলেই বদলে যেতে পারে?
জীবনে পরিবর্তন ঘটানো সহজ বিষয় নয়। সাধারণ আচরণগুলোকে অনুসরণ করা যে কোনো মানুষের জন্য অনেক সহজ। তবে এর মানে এই নয়, পরিবর্তন একেবারেই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাবের ওপর বেশ কিছু বিষয়ের প্রভাব আছে, এগুলো হলো- জেনেটিকস, ব্যক্তিত্ব ও প্রেরণা।
এমন অসংখ্য গল্প আছে যেখানে মাদকাশক্তি দূর করে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, চিড় ধরা সম্পর্ককে অত্যন্ত সুখী সম্পর্কে পরিণত করেছেন কিংবা স্বার্থপর কেউ নিজের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে অন্যের মঙ্গলে উৎসর্গ করেছেন।
অন্তত ২০০টি গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনে সক্ষম হন। সুতরাং প্রশ্নটি আসলেই এটা নয় যে, মানুষ বদলাতে পারে কি না। আসল প্রশ্ন হলো, কেন কেউ বদলান, আর বাকিরা বদলান না।
প্রত্যেকেরই এমন ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে তারা উন্নতি করতে পারেন। তাই জীবনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনে হোক বা নিজের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভর করা হোক- পরিবর্তন আনা সম্ভব।
জৈবিকভাবে মানুষ কি বদলাতে পারে?
মনোবিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন সাইকোলজি টুডের মতে, মানুষ যা করে তার বেশিরভাগের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী। আমরা যেভাবে চিন্তা করি তার ওপর পরিবেশের প্রভাব রয়েছে, তবে এমন জৈবিক কারণও আছে যা প্রায় ৭০ শতাংশ পার্থক্যের জন্য দায়ী।
অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, পরিবেশের প্রভাবের চেয়ে জিনগত কারণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী, যারা জৈবিক প্রাধান্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তারা সেসব সামাজিক ধারা অনুসরণ করেন, যেগুলো তাদের জিনে গভীরভাবে প্রোথিত। এ জন্যই প্রবাদ রয়েছে, ‘একটি চিতা তার চামড়ার কালো ফোটা কখনও বদলাতে পারে না।’ এর অর্থ হল পরিবেশ কাউকে তার জৈবিক বৈশিষ্ট্যের বিপরীত কিছু ঘটাতে বাধ্য করতে পারে না।
সাইকোলজি টুডের নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে যে, ‘জৈবিকভাবে প্রভাবিত’ ব্যক্তিকে ‘জৈবিকভাবে নির্ধারিত’-এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। এর মানে হলো, সমাজে নেতিবাচক আচরণকে অপরিবর্তনীয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রোগ্রাম করা রয়েছে। তবু আশা করা যায়, সমাজ ও পরিবেশ নেতিবাচক আচরণকে পুনঃপ্রোগ্রাম করতে পারে এবং খারাপ অভ্যাস দূর করতে পারে।
ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ
গবেষকরা মানুষের ব্যক্তিত্বের পার্থক্যগুলোকে পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্যে ভাগ করেছেন। এগুলোকে প্রায়ই বড় পাঁচটি ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এগুলোর রয়েছে অভিজ্ঞতার জন্য উন্মুক্ততা, বহির্মুখীনতা, স্নায়বিকতা, বিবেক ও সম্মতি।
লোকজন কীভাবে চিন্তা করে এবং আচরণ করে তার ব্যাখ্যা এসব বৈশিষ্ট্য থেকে পাওয়া যায়। সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষকরা হেক্সাকো নামের ষষ্ঠ ধাপের নতুন একটি মডেল তৈরি করেছেন। এটি মূল পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সততা ও নম্রতার বৈশিষ্ট্যকে যোগ করে।
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের ভূমিকা
পরিবর্তনটি যদি একটি বড় পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, যেমন এপিডি (অসামাজিক) বা এনপিডি (আত্মপ্রেম), সেক্ষেত্রে পরিবর্তন শুধু পেশাদার কারও তত্ত্বাবধানে সম্ভব। কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপিতে (সিবিটি) নেতিবাচক আচরণের পুনঃপ্রোগ্রামিং জড়িত। তবে শক্তিশালী চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ থাকার পরও এপিডি ও এনপিডির মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
এ পদ্ধতিগুলো সফল হলে আপনার ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসবে। সেক্ষেত্রে বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা অবাক হয়ে ভাবতে পারেন, মানুষ সত্যিই কীভাবে বদলে যায়।
বড় ধরনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে বাদ দিয়ে, কীভাবে ও কী কারণে মানুষ পরিবর্তন হয় তার গবেষণা আশাব্যঞ্জক। ১৬ সপ্তাহের মধ্যে ‘একটি নতুন ব্যক্তিত্ব তৈরি’ করা সম্ভব কিনা ও সেটি কতটুকু তা দেখার একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এর ফল মোটামুটি মানের হলেও, একটি জিনিস লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে, তাদের পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যারা তাদের ‘বাস্তব জীবনে’ বা ব্যক্তিত্বের কয়েকটি দিকে সত্যিকারের পরিবর্তন করতে চেয়েছিল।
মানসিক স্বাস্থ্য ডিজঅর্ডার ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এমন এক ব্যধি যেটাতে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। সাইকোলজি টুডের মতে, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা, যার মধ্যে গুরুতর মেজাজ ও মানসিক অস্থিরতা অন্তর্গত।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এই অসুস্থতাটিকে সাইকোসিস ও নিউরোসিসের সীমানায় বলে বর্ণনা করেন। উপসর্গগুলোতে হাত-পা কাটা ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার মতো নিজেকে আঘাত করার অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের তীব্রতার কারণে, মনে হতে পারে, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোনো আশা নেই। তবে ব্যধিটি প্রায়ই থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে সফলভাবে চিকিত্সা করা যেতে পারে।
মানুষ কীভাবে বদলাতে পারে?
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ সত্যিই বদলে যায়। বর্ডারলাইন ব্যক্তিত্ব গুরুতর মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।
খাওয়ার ডিজঅর্ডার হলো আরেকটি সমস্যা যা ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন ঘটায়। সাইকোলজি টুডে খাওয়ার ডিজঅর্ডারকে মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা হিসাবে বর্ণনা করেছে। যেটি অস্বাস্থ্যকর, বিশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
খাওয়ার ডিজঅর্ডার মানসিক অস্থিরতা নিয়ে আসে, কারণ এটি স্বাভাবিক পরিপাক চক্রকে বিপর্যস্ত করে। খাওয়ার ডিজঅর্ডারের চিকিত্সা করা চ্যালেঞ্জিং, তবে অনেক লোক থেরাপি ও সহায়ক গ্রুপে যোগ দেয়ার পর সফল হন।
পরিবর্তন করা কি নিরাপদ?
বাইপোলার ডিজঅর্ডার হলো এক ধরনের মানসিক ব্যাধি, যেখানে কারও ব্যক্তিত্ব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। সাইকোলজি টুডের মতে, কিছু লোক এখনও বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে ম্যানিক ডিপ্রেশন হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলোর মধ্যে হুটহাট মেজাজের পরিবর্তন রয়েছে, যা গুরুতর মানসিক অস্থিরতা ও হতাশার মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে। ম্যানিয়ায় আক্রান্তের সময় বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তি মানসিক অস্থিরতা অনুভব করেন। এর মধ্যে রয়েছে বিরক্তি, রাগ, বিষণ্নতা এবং কখনও কখনও অতিউচ্ছ্বাসের মিশ্রণ।
বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে থেরাপিস্টরা বাইপোলার ডিজঅর্ডার নির্ণয় করেন; বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য থেরাপি এবং/অথবা ওষুধ দেয়া হয়।
বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে বাইপোলার ওয়ান বা বাইপোলার টু হিসাবে ভাগ করা যেতে পারে। সাইকোলজি টুডে বাইপোলার ওয়ানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এমনভাবে ভাগ করেছে, যাদের অন্তত একটি ম্যানিক এপিসোড রয়েছে, যার কারণে হাসপাতালে নেয়ার দরকার হয়।
বাইপোলার ওয়ানে একটি বড় বিষণ্নতামূলক পর্ব থাকে, কিন্তু এটি স্থায়ী হয় না। যাদের বাইপোলার টু আছে তাদের হাইপোম্যানিয়ার সঙ্গে অন্তত দুই সপ্তাহ স্থায়ী বিষণ্নতার পর্ব থাকে। হাইপোম্যানিয়া হলো একটি হালকা বা মাঝারি ধরনের ম্যানিয়া, যার জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
আমরা কত দ্রুত বদলাতে পারি?
মনঃস্থিতি স্থায়ী হওয়ার সময় ও কত ঘন ঘন তা পরবর্তিত হয়- সেটা ব্যক্তিভেদে বদলায়। মেজাজের ওঠানামা ঘন ঘন ও বছরে অন্তত চারবার হলে একে র্যাপিড সাইক্লিং বলা হয়। চরম মানসিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে র্যাপিড সাইকেল সামলানো অত্যন্ত কঠিন।
মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাইপোলার ডিজঅর্ডার নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়। থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসাও সম্ভব। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের সঙ্গে তাদের পরিবারকেও এ রোগের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।
দীর্ঘমেয়াদি এ রোগীকে সামলানো কষ্টসাধ্য এবং মনে হতে পারে- আক্রান্ত ব্যক্তি আর বদলাবেন না। তবে, সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের রোগীও বদলাতে পারেন।
নিজেকে বদলাতে চাইতে হবে
শুধু কথায় নয়, পরিবর্তনের সচেতন আকাঙ্ক্ষা থাকা জরুরি। মানুষ লেগে থাকলে সত্যিই পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তবে অনেক সময় ধরে বদলাতে চাওয়ার পরেও একজনের আচরণ পরিবর্তিত না হলে তার বদলানোর সম্ভাবনা কম।
চিকিৎসকের সাহায্য নেয়ার পদক্ষেপ থেকে প্রমাণিত হয়, কারও কারও বদলে যাওয়ার ইচ্ছা সত্যিই আছে।
একজন পেশাদার থেরাপিস্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সাহায্য করেন। তার উদ্দেশ্য থাকে রোগীর চিন্তাভাবনার ধরনে পরিবর্তন ঘটানো। পাশাপাশি রোগীকে মানসিক চাপ মোকাবিলা করার উপায় শিখতে সহায়তা করা।
আরও পড়ুন:ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট গ্রেগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক বিজ্ঞান উৎসব। বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এই মেলা।
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গ্রেগরিয়ান সায়েন্স ক্লাব এই আয়োজন করেছে।
বিজ্ঞান মেলায় সেন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাই স্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার্স, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে।
মেলার ইভেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে অলিম্পিয়াড, সায়েন্স প্রজেক্ট ডিসপ্লে, বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়াল ম্যাগাজিন কম্পিটিশন ও প্রোজেক্ট আইডিয়া প্রেজেন্টেশন। প্রতিটি ইভেন্টের জন্য স্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জন্য কিডস গ্রুপ, পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য জুনিয়র গ্রুপ, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির জন্য ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপ, নবম-দশম শ্রেণির জন্য সিনিয়র গ্রুপ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য কলেজ গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ব্রাদার উজ্জ্বল প্লাসিড পেরেরা সি. এস. সি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. শাহজাহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোতোয়ালি থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারহানা শাহীন লিপি।
মেলায় প্রায় ২৫০-৩০০টি প্রজেক্ট প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি আয়োজক কমিটি প্রায় ৩৩৫টি পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছে। প্রজেক্টগুলো মূল্যায়ন করবেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক।
৯ই মার্চ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. শৌকত আকবর।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক গ্রেগরিয়ান ড. মো. শহিদুল ইসলাম এবং সিএসআরএম-এর পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করে সাড়া ফেলে দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এই সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেয়া হয় ‘পিপীলিকা’। তবে গত তিন বছর ধরে থমকে আছে এর কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ সংকটে সার্চ ইঞ্জিনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেবল সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ই নয়, একই অবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’-এরও। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও তা একপ্রকার নিস্ক্রিয়। দ্রুত ক্যানসার শনাক্তের সম্ভাবনাময় ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ ডিভাইসটিও অর্থ সংকটে আটকে গেছে। করোনা মহামারি এবং অর্থ ও জনবলের অভাবে এগোতে পারেনি বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’।
দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তেত্রিশ বছর আগে সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কিছু উদ্ভাবন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গত কয়েক বছর ধরেই নেই নতুন কোনো উদ্ভাবন। এমনকি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে আছে পুরনোগুলোও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তারা গবেষণা, উদ্ভাবনসহ সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে এখন কোনো উৎসাহ দেয়া হয় না।
পিপীলিকা
২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল ১১ জন ডেভেলপার মিলে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। পিপীলিকার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন মো. রুহুল আমীন সজীব।
শাবির আইআইসিটি বিভাগ জানায়, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ সংক্রান্ত কিছু সার্ভিস গ্রহণের বিনিময়ে সরকারের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম থেকে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ টাকা দেয়া হয়। শেষ কিস্তির (৯ম কিস্তি) ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৩ টাকা পিপীলিকাকে পরিশোধের আগেই সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই অর্থ সংকটে পিপীলিকা বন্ধ রয়েছে।
আগের মতো ৫-৬ জন পূর্ণকালীন আইটি/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করানোর জন্য মাসিক ৩-৪ লাখ টাকা অনুদান পেলে পিপীলিকার উন্নয়ন কাজ চলমান রাখা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে টিম লিডার মো. রুহুল আমীন সজীব বলেন, ‘আমি এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত নই।’
শাবির আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রজেক্টের ফান্ডিং আসত সরকারের কাছে থেকে। ২০২০ সাল থেকে আমাদের প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট সবকিছু সঠিক সময়ে পাঠালেও কোনো অর্থ পাইনি। সর্বশেষ আমাদের প্রায় ২২ লাখ টাকা আটকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া তো আমরা গবেষক ও কর্মচারীদের কাজ করাতে পারি না। আমরা যতটুকু সম্ভব দিয়েছি। তবুও তাদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের আর টাকা দেয়া হয়নি। আবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সাপোর্ট না পাওয়ায় কারণে বর্তমানে তা বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও এটুআইয়ের পিডিসহ সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের সব রিসোর্স আছে। সরকারের কাছে থেকে আবার সাপোর্ট পেলে আমরা তা সচল করতে পারব।’
এটুআই প্রোগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, “যতটুকু মনে পড়ে ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইঞ্জিনটা যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মানের হয়নি। এজন্য ফান্ডিং বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান পিডি ভালো বলতে পারবেন।’
বর্তমান পিডি (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমার জানা নাই। এটা আসলে কী অবস্থায় আছে, খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করব।’
একুশে বাংলা কি-বোর্ড
কি-বোর্ড নিজেই বুঝে ফেলবে ব্যবহারকারী কী লিখতে চাইছেন- ২০১৮ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এমন কি-বোর্ড কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এর নাম দেয়া হয় ‘একুশে বাংলা কিবোর্ড’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের পাশাপাশি দ্রুত টাইপিং ও স্পর্শ করে লেখার ব্যবস্থা রয়েছে এ কি-বোর্ডে। ফলে টাইপ না জানলেও যে কেউ সহজেই বাংলা টাইপিং শিখতে পারে এর মাধ্যমে।
২০২০ সালে কি-বোর্ডটির উদ্ভাবক তৎকালীন শাবির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বিদেশে চলে গেলে সেটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে এই প্রজেক্টের কোনো আপডেট নেই। আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে আর কোনো কাজ করা হয়নি।’
ননলিনিয়ার অপটিকস
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবনেও রয়েছে শাবিপ্রবির সাফল্য। অল্প খরচে ও কম সময়ে ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে দাবি ছিল উদ্ভাবকদের।
হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেসময়কার অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসার শনাক্তকরণের এ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন, মনজ কান্তি বিশ্বাস ও এনামুল হক।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ফান্ডিংসহ অনেক সমস্যা আছে। মূলত ফান্ডিংয়ের জন্য আমরা আটকে গেছি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট শিগগিরিই চালু হবে। সম্ভবত পিডি নিয়োগ হয়ে গেছে। ওটা হলেই আমরাও ফান্ড পেয়ে যাব।
‘বর্তমানে আপগ্রেডের কাজ চলছে। ফান্ডিং পেলে আমরা ক্লিনিক্যালি ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে এটাকে সর্বসাধারণের ব্যবহাপযোগী করে তোলা। হেকাপের আওতায় কাজটি চলছিল, পরে হিট আসার কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রজেক্ট পেলে আমরা বাকি কাজ করে ফেলতে পারব।’
প্রকল্পটি একেবারে বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ আমাদের মতো করে চলছে।’
রোবট রিবো
২০১১ সাল থেকে শাবির তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব উদ্যোগে ১১ জনের একটি দল রোবট নিয়ে কাজ শুরু করে।
২০১৫ সালে বার্ষিক সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি রোবোসাস্টকে মানবসদৃশ রোবট তৈরির করতে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। দলটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবসদৃশ রোবট তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘রিবো’।
রোবটটি ২৪ ডিগ্রি কোণে স্বাধীনভাবে ঘুরতে, নাচতে, মুখের অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ, হ্যান্ডশেক, হাত উপর-নিচে তোলা, বাংলায় কথা বলা, এমনকি নিজের নামও বলতে পারত। বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত।
রোবটটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া শাবির সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।
দলের সদস্য মেহেদী হাসান রূপক বলেন, ‘আমরা ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছিলাম। সেখানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফান্ডিং করবেন। আমরা তখন উনাকে একটা আবেদনপত্রও দিয়েছিলাম। পরে করোনা ও জনবল সংকটে আর এগোতে পারিনি। এর মধ্যে আমাদেরও পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এই উদ্ভাবনগুলোর বর্তমান অবস্থার বিষয়ে আমি খোঁজখবর নেব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আমরা কথা বলব।’
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের শিশুরা কেমোথেরাপির চেয়ে স্বস্তি দেয় এমন এক ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।
লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হসপিটালে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ১১ বছর বয়সী শিশু আর্থারকে দিয়ে এই ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয় বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বুধবার জানানো হয়েছে।
আর্থারের পরিবার এ চিকিৎসাকে ‘আশার আলো’ আখ্যা দিয়ে দিয়ে বলেছে, এই ওষুধ তাকে বেশি অসুস্থতা বোধ না করিয়েই কাজ করেছে। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিবর্তে বাসাতেও এই চিকিৎসা দেয়া যায়। এতে শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় দিতে পারছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্লিনাটুমোমাব বা ব্লিনা নামের এ ওষুধ এখন শিশুদের পাশপাশি ক্যানসারে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসারও লাইসেন্স পেয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদে ব্যবহার করা যাচ্ছে ওষুধটি।
শিশু আর্থারের পরিবার বলছে, তা জন্য ব্লিনাটুমোমাব বা ব্লিনা একমাত্র আসল বিকল্প ছিল। এক পর্যায়ে কেমোথেরাপি যখন ব্যর্থ হয় এবং সে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে তখন তার জন্য ওই ওষুধ খুব কার্যকর স্বস্তির কারণ হয়।
যুক্তরাজ্য জুড়ে প্রায় ২০টি কেন্দ্র বি-সেল অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (বি-এএলএল) আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় এটি অফ-লেবেল ব্যবহার করছে। ওষুধটি একটি ইমিউনোথেরাপি যা ক্যান্সার কোষ খুঁজে বের করে, যাতে শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম তাদের চিনতে পারে এবং ধ্বংস করতে পারে।
ব্লিনা একটি পাতলা প্লাস্টিকের টিউবের মাধ্যমে পরিচালিত তরলের একটি ব্যাগে থাকে যার মাধ্যমে রোগীর বাহুতে অনেক মাস ধরে শিরায় প্রবাহিত থাকে। একটি ব্যাটারি চালিত পাম্প নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত ওষুধটি রক্তে প্রবেশ করে, একটি ব্যাগ অনেক দিন স্থায়ী হতে পারে।
বিবিসি বলছে, ব্লিনার কিট একটি ছোট ব্যাকপ্যাকে বহন করা যেতে পারে। কেমোথেরাপির বিপরীতে এখন এই ওষুধ বেশি স্বস্তির কারণ হয়েছে আর্থারের মতো অনেক রোগীর জন্য।
আরও পড়ুন:বিশ্বে বিগত এক লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে ২০২৩ সালের উষ্ণতম বর্ষ হওয়া ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’ বলে বুধবার জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিজ্ঞানীরা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে প্রকাশিত ডেটা অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর স্মরণকালের সবচেয়ে উষ্ণ অক্টোবর হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা উল্লিখিত তথ্য জানিয়েছেন।
ইইউর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) জানায়, অক্টোবরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যায় গত মাসে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবর স্মরণকালের উষ্ণতম অক্টোবর ছিল বলে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
সিথ্রিএসের উপপরিচালক সামান্থা বুরগেস এ বছরের অক্টোবরের তাপমাত্রা ‘অতি চরমভাবাপন্ন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গত মাসে তাপমাত্রা দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হওয়ার মধ্য দিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন, চলতি বছরে এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়নের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে।
সিথ্রিএস জানায়, চলতি বছরের অক্টোবরে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর তাপমাত্রা ছিল ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল নাগাদ একই মাসের তাপমাত্রার চেয়ে এক দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ইইউর সার্ভিসটি জানায়, তাপমাত্রার রেকর্ডভাঙা অক্টোবরের অর্থ হলো ২০২৩ সাল যে স্মরণকালের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে, তা ‘দৃশ্যত নিশ্চিত’।
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন গবেষক।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার এ তিন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, কোয়ান্টম ডটস নিয়ে আবিষ্কার ও সংশ্লেষণের জন্য ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে মোঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুইস ব্রুস ও অ্যালেক্সেই একিমভকে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়, একিমভ ও ব্রুস স্বতন্ত্রভাবে কোয়ান্টম ডটস সৃষ্টিতে সক্ষম হন। আর বাওয়েন্ডি রাসায়নিক উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আনেন।
কোয়ান্টাম ডটস বা কিউডিস সেমিকন্ডাক্টর ন্যানোক্রিস্টাল হিসেবেও পরিচিত। এগুলো সেমিকন্ডাক্টর কণা, যেগুলো আকারে কয়েক ন্যানোমিটার। ন্যানোটেকনোলজি ও বস্তুবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই কিউডিস।
রসায়নে এবারের নোবেল পুরস্কারজয়ী মোঙ্গি জি. বাওয়েন্ডির জন্ম ১৯৬১ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) কাজ করছেন।
যৌথভাবে রসায়নের আরেক নোবেলজয়ী লুইস ই. ব্রুসের জন্ম ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইর ক্লিভল্যান্ডে। তিনি নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত।
উল্লিখিত দুজনের সঙ্গে এবার রসায়নে নোবেল পাওয়া আরেক ব্যক্তি অ্যালেক্সেই আই. একিমভের জন্ম ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। তিনি নিউ ইয়র্কভিত্তিক ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকরপোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
রসায়নে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১৪ জন এ শাস্ত্রে নোবেল পান।
এ শাস্ত্রে ২৫ বার নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে দুজন করে ব্যক্তিকে। এ শাস্ত্রে দুবার নোবেল পুরস্কার পান ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার ও ব্যারি শার্পলেস।
সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ৩৫ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পান ফ্রেডেরিক জোলিয়ট, যিনি ১৯৩৫ সালে এ পুরস্কার পান। সবচেয়ে বেশি ৯৭ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জন বি. গুডএনাফ। পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বজ্যেষ্ঠ নোবেলজয়ীও তিনি।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।
এবার নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরস্কারটি সোমবার সুইডেনের স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার। বুধবার রসায়নের পর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার।
আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছেছেন দুই রুশ ও এক আমেরিকান নভোচারী।
রুশ-আমেরিকা সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যেই উভয় দেশের নভোচারীরা যৌথভাবে মহাকাশ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রোসকসমস মহাকাশচারী ওলেগ কোনোনেনকো ও নিকোলাই চুবসহ নাসার নভোচারী লোরাল ও’হারা কাজাখস্তানের বাইনোকুর কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ এমএস-২৪ মহাকাশযানে ওঠেন।
মহাকাশযানটি তিন ঘণ্টা পর আইএসএসে পৌঁছায়। সেখানে তিন রাশিয়ান, দুই আমেরিকান, এক জাপানী নভোচারী ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার এক প্রতিনিধির সাঙ্গে যোগ দেন।
রাশিয়ার প্রায় ৫০ বছর পর চালানো চন্দ্রাভিযান গত মাসে ব্যর্থ হওয়ার পর মহাকাশ স্টেশনে গেল নভোচারীরা।
আইএসএস আমেরিকা ও রাশিয়ার সহযোগিতার একটি ব্যতিক্রমী ভেন্যু। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।
নভোচারীরা এমএস-২৩ মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন বলে জানায় রসকসমস। সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:মহাশূন্যে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল-১। চন্দ্রাভিযানের ঠিক পর পরই সৌর অভিযানে নেমেছে দেশটি।
ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ‘এল-১’-এর পথে রওনা দেয়ার সময় পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে পৃথিবী ও চাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে পাঠিয়েছে ওই সৌরযান।
বৃহস্পতিবার ইসরো এ ছবি প্রকাশ করেছে বলে এনডিটিভর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। টুইটারে ছবিগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছে ইসরো।
পোস্টে লেখা হয়েছে, আদিত্য এল-১ অভিযান: প্রত্যক্ষদর্শী! আদিত্য এল-১ সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ এল-১ পয়েন্টের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পথে সেলফি তুলল, ছবি তুলল পৃথিবী এবং চাঁদেরও।
৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতে ভারতীয় সৌরযানের তোলা সেলফি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে সৌরযান আদিত্য-এর ভিইএলসি এবং সুইট দৃশ্যমান।
এর পর ভারতীয় সৌরযানে বসানো ক্যামেরার তোলা পৃথিবী এবং চাঁদের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঘন কালো আকাশে আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীর একদিক। তার ডানদিকে চোখে পড়ছে একটি চলমান বিন্দু। সেটি চাঁদ বলে জানিয়েছে ইসরো। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে আদিত্য এল-১ সৌরযানের উৎক্ষেপণ হয়। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর চারদিকে দুবার চক্কর কেটেছে সেটি।
সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছানোর আগে, আরও দুবার গতি বাড়িয়ে চক্কর কাটবে এই যান। ১২৫ দিন পর ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১-এ পৌঁছনোর কথা ভারতের সৌরযানের।
মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্বিঘ্নে নজরদরি চালানো যায়।
সূর্যের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য, গণিত বিশারদ জোসেফ লুইস ল্যাগ্রেঞ্জ এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ আবিষ্কার করেন।
ইসরো জানিয়েছে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল-১ থেকে কোনো রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ঠিক কী ঘটছে, মহাকাশের সার্বিক আবহাওয়ায় তার কী প্রভাব পড়ছে, তৎক্ষণাৎই সব তথ্য হাতে পাওয়া সম্ভব।
মন্তব্য