শিশুর জন্মের সময় মায়ের গর্ভের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী কর্ডটিকে কেটে ফেলার প্রক্রিয়ায় জন্ম হয় নাভির। গোটা পৃথিবীতে নাভিকে শরীরের স্বাভাবিক অংশ মনে করা হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে একে নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমায় দীর্ঘকাল ধরে নাভিকে যৌন উত্তেজক অঙ্গ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে নাভি নিয়ে এই বাড়তি আগ্রহের উৎস। নিউজবাংলার পাঠকের জন্য প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
সঙ্গিনীকে একটি খাবার টেবিলে শুয়ে পড়তে বলছেন নায়ক। সায় দিতেই ‘খুব ভালো মেয়ে’ বলে প্রশংসার বাক্য ঝরে নায়কের কণ্ঠে। এরপর কৌশলী হাতে শাড়ি সরিয়ে সঙ্গিনীর নাভি উন্মোচন। সঙ্গিনীর পেটের ওপর একসঙ্গে দুটি ডিম ভেঙে ছড়িয়ে দেন নায়ক।
একটি শটে দেখা যায় উত্তাপে ডিম ফুটছে। বিস্মিত নায়কের মুখের সামনে উড়তে দেখা যায় বাষ্প। পরক্ষণেই অনুমতির অপেক্ষায় সঙ্গিনীর দিকে ফিরে তাকান তিনি। ডিম রান্নার সময় নায়ক চামচ দিয়ে অমলেটটি উল্টেও দেন একপর্যায়ে। দুজনের কিছু গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাঝে প্রস্তুত হয় ‘ডিনার’।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া লাভ বার্ডস সিনেমার একটি দৃশ্য এভাবেই ডিম ভাজছিলেন সুপারস্টার প্রভু দেবা। যার নাভির ওপরে ভাজা হচ্ছিল তিনিও আরেক মহাতারকা নাগমা।
বলিউড বা বলিউডের বাইরে ভারতীয় সিনেমায় দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই নাভির যৌনতাপূর্ণ চিত্রায়ণ হয়েছে। হতে পারে এটি সংস্কৃতির অংশ বা ফেটিশ (বিশেষ কোনো বস্তুর প্রতি আকর্ষণ)।
নারীর জন্য তৈরি বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক নাভিকে উন্মুক্ত রাখে। দক্ষিণ ভারতীয় বহু চলচ্চিত্রে নাভিকে নারী দেহের সংবেদনশীল ও কামুক অংশ হিসেবে দেখানো হয়। নাভির ক্লোজ-আপ শট বা অভিনেত্রীর নাভিতে পুরুষ অভিনেতা মুখ বা হাত মন্থনের দৃশ্য যৌন দৃশ্যের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত।
চলচ্চিত্রের বাইরে গুগল ট্রেন্ডসে ‘নাভি’ বহুবার সার্চ করা একটি শব্দ। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নাভি শব্দটি নিয়ে গুগল করা শীর্ষস্থানীয় দেশ ভারত। ভারতীয়রা অনলাইনে এ-সম্পর্কিত যেসব ট্রেন্ড খুঁজছেন তার মধ্যে রয়েছে ‘শাড়িতে হট নাভি’, ‘কাজল নাভি’ ও ‘আনুশকা নাভি’। এই সার্চের মূল লক্ষ্য অভিনেতা কাজল আগরওয়াল ও আনুশকা শেঠি, যারা মূলত দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাজ করেন।
নাভি নিয়ে এমন আকর্ষণ কেন?
ভারতীয় চলচ্চিত্রে এখন প্রায়ই ‘আইটেম সং’ দেখা যায়। এসব গানে অভিনেত্রী স্বল্প পোশাকে প্রলুব্ধ করার ভঙ্গিতে নাচেন। আইটেম গান নারীকে ‘বস্তু’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে এটি নারীর যৌনতা ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ্য ঘোষণা, যদিও তার নির্মাতা পুরুষ। ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রায় সব আইটেম গানে অভিনেত্রীর কোমর ঝাঁকুনি ও দোলানোসহ প্রলোভন ভরা নাচের সঙ্গে তার নাভি দৃশ্যমান রাখা হয়। এর প্রচুর ক্লোজ-আপ থাকায় দর্শকের মনোযোগ আরও আকর্ষিত হয়।
শিশুর জন্মের পর যখন মায়ের গর্ভের সঙ্গে যুক্তকারী কর্ডটি কেটে ফেলা হয়, ওই কর্ডের গোড়াটি শেষ পর্যন্ত শুকিয়ে যায় ও বাইরের দিকে কিংবা ভেতরের দিকে কিছুটা উঁচু বা গভীর হয়ে নাভি পূর্ণতা পায়।
পর্ন ওয়েবসাইটে ‘ভারতীয় নাভি’ সার্চ করলে অভিনেত্রীদের ছোট ছোট ক্লিপ বা তাদের নাভি দেখা যায় এমন দৃশ্যগুলোতে নিয়ে যাবে৷ ‘ন্যাভাল কুইন’ শব্দটি তামান্না ভাটিয়া, ক্যাটরিনা কাইফ, কৃতি শ্যানন, সামান্থা রুথ প্রভু ও তেজস্বী প্রকাশসহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
মুম্বাইয়ের ৩৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী ভারুন টিনএজ বয়স থেকেই নাভির প্রতি আকৃষ্ট।
তিনি বলেন, ‘সিনেমা হোক বা বিজ্ঞাপন, নাভির দৃশ্য সব জায়গায় দেখতাম। কিছু ইরোটিক গানে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে নাভির দৃশ্য যুক্ত করা হতো। নাভি নারী দেহের এমন একটা অংশ ছিল, যার সঙ্গে বাস্তব জগতে আমার পরিচয় ঘটে। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় নাভির দৃশ্য আমি অনেক পরে দেখেছি। আমি ৯০-এর দশকে বলিউড ফিল্ম দেখে বড় হয়েছি, যেখানে নাভির দৃশ্য দেখানো হয়েছে।’
নাভির প্রতি এমন আকর্ষণকে ভারতীয় সিনেমার অনন্য বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক কিরুবাখার পুরুষোত্তম।
তিনি বলেন, ‘হলিউডে এমন কিছু পাবেন না। একই সঙ্গে যেসব ভারতীয় সিনেমায় নাভি প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলোতে চুমু খাওয়া বা যৌনতার দৃশ্যও নেই।’
শুরুতে উল্লেখ করা ডিম ভাজার দৃশ্যটি অবশ্য ১৯৯১ সালের হলিউড সিনেমা হট শটসের অনুকরণে নির্মিত। ওই সিনেমায় নায়ক চার্লি শিন নায়িকা ভ্যালেরিয়া গোলিনোর পেটের ওপর বেকন ভেজেছিলেন।
ভারতীয় সিনেমায় ঐতিহ্যগতভাবে যৌন দৃশ্য বা চুম্বন দৃশ্য দেখানো হয় না। এর কারণ এই অঞ্চলে আবেগের প্রকাশ্য প্রদর্শনকে ভালো চোখে দেখা হয় না। প্রকৃত ঘনিষ্ঠতা, মেক আউট বা যৌন মিলনের জায়গায় ফিল্মগুলো যৌনতার ইঙ্গিত দেয়ার জন্য দুটি ফুলের ক্লোজ-আপ বা যুগলকে লুকানোর ছাতা বা গাছ দেখিয়ে এসেছে।
পুরুষোত্তম বলেন, ‘আমার মতে সমাজ হিসেবে, প্রকৃত যৌনতার চেয়ে আমাদের কাছে যৌনতার ইঙ্গিত বেশি গ্রহণযোগ্য। কোনো পুরুষ নারীর নাভি স্পর্শ করলে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলেই সিনেমাটি বিতর্কের মুখে পড়তে পারে। এমনকি তা নিষিদ্ধও হয়ে যেতে পারে।’
২০০০ সালের তামিল সিনেমা ‘কুশি’তে এক নারী তার নাভির দিকে তাকিয়ে থাকা পুরুষের সঙ্গে মারামারি করেন। ভারতীয় সিনেমায় ‘ব্যক্তিগত অঙ্গ’ প্রদর্শনে বিধিনিষেধ থাকায় নাভিকে শরীরের একটি যৌন অংশ হিসেবে দেখানো হয় এবং এটি সহজেই দেখা যায়। এ অঞ্চলে নাভি শুধু শরীরের একটি আবেদনময় ও দৃষ্টিনন্দন অংশই নয়, কামোদ্দীপক অংশও।
পুরুষোত্তম ভারতীয় সিনেমায় ফুল, ছাতা এবং গাছ ব্যবহারের মতো ইঙ্গিতপূর্ণ যৌন ক্রিয়াকে জাপানি পর্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেখানে তাদের অশ্লীলতার আইন এড়ানোর জন্য যৌনাঙ্গ ঝাপসা করা হয়।
পুরুষোত্তম বলেন, ‘জাপানে হেনতাইয়ের মতো হার্ডকোর পর্ন রয়েছে। তারপরও সেখানে যৌনাঙ্গ ঝাপসা করে রাখা হয়। আমার মতে সাংস্কৃতিক দমন যৌন আকাঙ্ক্ষা ও ফ্যান্টাসিগুলোকে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রকাশ করে।’
তেলেগু সিনেমার পরিচালক কে রাঘবেন্দ্র রাও প্রায়ই তার সিনেমায় নাভিকেন্দ্রিক যৌনতার দৃশ্য রাখেন। যেমন, ১৯৯১ সালের সিনেমা ‘চিন্না গুনদার’-এ নায়ক ভিজয়কান্ত নায়িকার পেটের ওপর একটি লাটিম রেখেছিলেন।
তবে, কেবল ভারতীয়দেরই নাভিপ্রীতি আছে বিষয়টি তেমনও নয়। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি নাভিকে একটি কামোদ্দীপক স্থান হিসেবে দেখে। জাপানে একটি বার্ষিক নাভি উত্সব রয়েছে।
আমেরিকার সিনেমাগুলো ১৯৩৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত হেইস কোড অনুসরণ করেছে। এ কোডের বিধিনিষেধের মধ্যে একটি ছিল, নাভিকে সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। ১৯৫০ সালের সিনেমা সাম লাইক ইট হট-এ মেরিলিন মনরো এমন একটি পোশাক পরেছিলেন যাতে তার দেহের প্রায় পুরোটা দেখা গেলেও একটি ছোট কাপড়ে তার নাভি ঢাকা ছিল। ১৯৬০-এর দশকে কমিউনিটি গাইডলাইনের সঙ্গে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।
১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে দক্ষিণ ভারতে সফটকোর পর্ন সিনেমার উত্থান ঘটে। কাহিনি আইয়ার মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আরকের একটি ভিডিওতে বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতারা তখন একটি আন্দোলন শুরু করেন যা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ ও জার্মান আর্টহাউস সিনেমার মতো ছিল।
১৯৭৮ সালে আইভি শশীর সিনেমা ‘আভালুদে রাভাকাল’ ছিল এ-রেটিং পাওয়া প্রথম মালয়ালম সিনেমা। একইভাবে ভরথান পরিচালিত ‘রথিনিরভেদম’ এক কিশোরের সঙ্গে এক বয়স্ক নারীর প্রেমের মতো নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে। এ সময়ে মূলত দক্ষিণ ভারতে নির্মিত সফটকোর পর্ন ভারতজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিল্ক স্মিতা ও ডিস্কো শান্তির মতো অভিনেত্রীরা এ সময়ে খ্যাতনামা হয়ে ওঠেন। ভরথান ও শশীর সিনেমাগুলো সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছিল।
ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক সি এস ভেঙ্কিটেস্বরন তার বই ‘মালয়ালম সিনেমা: ন্যাচারালাইজিং জেন্ডার হাইরার্কিস’-এ লিখেছেন, ‘এই গল্পগুলো নারী দেহের যৌনতা প্রদর্শনের দারুণ এক সুযোগ দিয়েছে। সিমা (আভালুদে রাভুকালের নায়িকা) ও সুভার মতো অভিনেতারা কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন। তারা যে ধরনের যৌনতা প্রকাশ করছেন, যা এর আগে নৈতিক বা আদর্শতার কারণে বাতিল করা হয়নি। তাদের দেহকে ফ্রেমের সামনে ও বর্ণনার উভয় ক্ষেত্রেই সামনের দিকে রাখা হয়েছিল। নায়িকা নিজেকে এমনভাবে স্থাপন করায় ক্যাবারে বা খলনায়কের অশ্লীল আস্তানা তৈরির প্রয়োজন ছিল না।’
এসব মোটা কোমর ও বিশাল বক্ষা নারীর সঙ্গে আইয়ার তুলনা করেছেন প্রাচীন কুশনা সাম্রাজ্যের ইয়াক্সি (যক্ষী) মূর্তিগুলোর।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এ সংস্কৃতি আসলে প্রাচীন আবেদনের ফল। কুশান সাম্রাজ্যের ইয়াক্সিদের (যক্ষী) মতো নাভি উন্মুক্ত করা শাড়ি পরিহিত মোটা কোমর ও বিশাল বক্ষা নারীদের প্রতি কামশক্তির প্রতিফলন এটি।’
চেন্নাইয়ের ২৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী নরেন তামিল ও তেলেগু সিনেমা দেখে বেড়ে উঠেছেন। ম্যাগাজিন কিংবা সিনেমা সব জায়গায় তিনি নাভির প্রতি এ আকর্ষণ লক্ষ করেছেন।
ভারুণের মতো নরেনও অনেকগুলো নাভিসংক্রান্ত সাবরেডিটে (রেডিটের গ্রুপ) জড়িত। তিনি ভাইসকে বলেন, ‘আমার মতে নারী দেহে এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। আমি এও দেখেছি, কোনো সিনেমায় গ্ল্যামারাস দৃশ্যের প্রয়োজন না থাকলেও একটি আইটেম গান যুক্ত করা হয়, যেখানে অভিনেত্রীরা তাদের নাভি প্রদর্শন করেন।’
নরেনের একজন সঙ্গিনী আছেন, যার সঙ্গে তিনি নাভি নিয়ে খেলা উপভোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্পর্শ করা, হাত বোলানো, আঙুল দেয়া বা শুধু তাকিয়ে থাকা।
তিনি বলেন, ‘ডেটিং শুরুর আগে আমরা বন্ধু ছিলাম। তাই তার কাছে এটি প্রকাশ করা সহজ ছিল। নাভির প্রতি আমার আকর্ষণ সম্পর্কে আমি সব সময়ই সৎ। আমার সঙ্গিনী আমাকে এটা উপভোগ করতে দেয়।’
সিনেমার প্রভাবে মানুষের কি ভিন্ন ধরনের আকর্ষণ জন্মাতে পারে? ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যময় যৌনতাবিষয়ক মনোবিদ পম্পি ব্যানার্জির মতে, সিনেমার প্রভাবকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারদিকে যে ধরনের ছবি রয়েছে সেগুলো আমাদের যৌনতার ওপর প্রভাব ফেলে। সিনেমা আমাদের আকাঙ্ক্ষার ধারণাকে আরও পূর্ণ করে তোলে। ভারতীয় সিনেমায় যৌন দৃশ্য কম থাকে বলে নাভিকে যোনিসংক্রান্ত যৌনতার একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই সঙ্গে নাভি নিয়ে খেলা যৌনকর্মের একটি বিকল্প হয়ে ওঠে।’
ব্যানার্জি নাভির সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও তুলে ধরেন। প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ কামসূত্রে নাভিকে কামপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কামসূত্রে নাভির উল্লেখ আছে। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে, তখনকার মানুষও নাভি নিয়ে খেলতে পছন্দ করতেন।’
কামসূত্রে কীভাবে নাভিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় ও কীভাবে এর যত্ন নিতে হয় বা অলংকার দিয়ে সাজাতে হয় সে বর্ণনাও আছে।
ব্যানার্জি বলেন, ‘ভারতীয় অনেক গহনাই কোমরের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে। নাভি প্রেম আসলে আমরা বংশানুক্রমিকভাবে পেয়েছি।’
যৌনতা ও উত্তেজনাকে পরিষ্কারভাবে দেখানো কোনো দৃশ্য ভারতীয় সেন্সর বোর্ডে এ-রেটিং পায়। এ কারণে নির্মাতারা স্বল্পবসনা অভিনেত্রীর নাভির কিছু উত্তেজক দৃশ্য সিনেমায় ঢুকিয়ে দেন। এতে করে এ-র বদলে সিনেমাটি ইউ/এ রেটিং পায়। এর অর্থ হলো, সিনেমাটি সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।
তবে, অনলাইনে ভারতীয় অভিনেত্রীদের নাভি নিয়ে এতটা হইচই হবে সেটা নিশ্চিতভাবেই চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভাবেননি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অভিনেতা কারিশমা কাপুরের নাভির ভক্তদের নিয়ে খোলা একটি ফেসবুক গ্রুপে ২০ হাজারের বেশি সদস্য আছে। মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে খোলা গ্রুপে আছে ৪২ হাজারের বেশি। রেডিটের সাবরেডিত ও গ্রুপে নাভিপ্রেমীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। একজন রেডিট ব্যবহারকারী স্বীকার করেছেন, তিনি শুধু নাভিসংক্রান্ত যৌন উত্তেজক পোস্ট দেন। কারণ এতে সাড়া বেশি আসে ও ফলোয়ার বাড়ে।
শুধু সিনেমাতেই নাভিকে যৌনতাপূর্ণ দেখানো হয় তা নয়। রিয়েলিটি টিভি সিরিজ শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়ায় এক কোম্পানি তাদের ‘বেলি বাটন শার্পার’ নিয়ে এসেছিল। তাদের এ পণ্য নাভিকে আরও গভীর ও বৃত্তাকার করে তুলবে এমনটাই ছিল দাবি। তবে এ পণ্যটি শার্ক ট্যাঙ্কের বিচারকদের মাঝে হাস্যরস সৃষ্টি করে এবং তারা একে বাতিল করে দেন।
ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেতা তাপসী পান্নুর দাবি, তেলেগু সিনেমার গানের শুটিংয়ের সময় তার পেটে একবার নারকেল ছুড়ে মারা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘অন্যদের দিকে ফুল বা ফল ছুড়ে মারা হয়। আমার সময় নারকেল ছুড়ে মারা হলো! আমি একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি জানি না পেটে নারকেল লাগার মধ্যে উত্তেজক কোন বিষয়টা আছে।’
আরেক অভিনেতা ইলিয়ানা ডিক্রুজ ভারতের ডিএনএ পত্রিকাকে তার পেটে চীনামাটির তৈরি ঝিনুক ছুড়ে মারার ঘটনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম তেলেগু সিনেমায় একটা দৃশ্য ছিল যেখানে একটা চীনামাটির তৈরি ঝিনুক স্লো-মোশনে আমার পেটের ওপর ফেলা হবে। ঝিনুকটা বেশ বড় ও ভারী ছিল। ওই দৃশ্যধারণের পর আমার পেটের পেশিগুলো ব্যথা করছিল। আমার বয়স ছিল ১৮ বছর, আর আমি তখন মোটেই বুঝতে পারছিলাম না বিষয়টিকে কেন সেক্সি হিসেবে ধরা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
স্থূল হওয়ার কারণে নিউজিল্যান্ডের একটি ফ্লাইট থেকে দুই নারী যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এয়ার নিউজিল্যান্ডের এমন আচরণে মর্মাহত এবং অপমানিতবোধ করছেন তারা।
গত শুক্রবার দেশটির নেপিয়ার থেকে অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ওঠা ফ্লাইটে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মূখীন হন এঞ্জেলা হার্ডিং ও তার বন্ধু।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান নিউজের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটিতে ওঠার পর হঠাৎ বাঁ হাতে ব্যথা অনুভব করেন এঞ্জেলা। এরপর একজন নারী ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টকে ডেকে হাতের কব্জিটি নীচে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন তিনি।
তা না করলে তিনি সিটে ঠিক করে বসতে পারছিলেন না। এদিকে তারা না বসা পর্যন্ত পাইলটও বিমান ওড়াতে পারছিলেন না।
এমন সময় বিমানের স্পিকারে ঘোষণা শোনার পর বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। ঘোষণায় বলা হয়, সমস্ত যাত্রীদের সুবিধার্থে এঞ্জেল হার্ডিং ও তার বন্ধুকে বিমান থেকে নেমে যেতে হবে।
পরে ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট এসে জানান, তাদের স্থূলতার কারণে দুজনের দুটি করে মোট চারটি আসন বুক করা উচিত ছিল।
এঞ্জেলের দাবি, এর আগে আকাশপথে ভ্রমণকালে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। এমনকি তিনি বা তার বন্ধু কারোরই দুটি আসনের টিকিট কেনার সামর্থ্য নেই বলে অ্যাটেন্ড্যান্টকে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমার চেহারার কারণে, আকারের কারণে তারা আমাকে নামিয়ে দিল। খোলসা করে না বললেও আসলে এটাই ছিল তাদের অসুবিধার কারণ।’
এ ঘটনার পর অবশ্য ওই যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এয়ার নিউজিল্যান্ড।
এক বিবৃতিতে এয়ার নিউজিল্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক অ্যালিশা আর্মস্ট্রং বলেছেন, ‘ওই দুই যাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা দুঃখিত। সকল গ্রাহকের সম্মান রক্ষা এবং তাদের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় আচরণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকির বিচার এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে মীম একটি আবেদন জমা দেন। আবেদনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের তিনি বিচার চেয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কথাও আবেদনপত্রে তুলে ধরেছেন তিনি।
আবেদনে মিম তার একাডেমিক জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্যের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করে তিনি এখনও বিচার পাননি। তার বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। ওই শিক্ষকের সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে স্নাতক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন।
সহপাঠীদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তারা মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন।
সবশেষ আশা-ভরসা নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান মিম। পাশাপাশি প্রশাসনের জবাবদিহির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি আবেদন জানান। তাকে ফেল করানোর বিষয়গুলো বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তার জীবন পুনরুদ্ধারের আরজি জানান।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ওই সময়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের দায়িত্বে থাকলেও তার কাছ থেকে তিনি বিচার পাননি।
এদিকে ভুক্তভোগী মীম তার আবেদনের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সে হল থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি। তাকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। আবার অনেক সময় ফোন ঢুকলেও সে ধরে না।’
উপাচার্য যা বললেন
এ বিষয়ে চানতে চাইলে উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি আসার আগের ঘটনার দায়ভার আমি নেব না। তবে আমি এখন সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হব। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয় উত্থাপন হবে। সবার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভাগের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় কেন সে ৩ পেল এ বিষয়টি দেখার জন্য ওনার সঙ্গে মিটিংয়ে বসব। আর তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের এই অভিযোগ সামনে এনেছেন মিম।
এছাড়াও অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানিসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানে অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিম। এ অবস্থায় তিনি সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান।
ফারজানা মীমের অভিযোগে যা রয়েছে
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাজী ফারজানা মীম।
তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেৱয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।
‘আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’
‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না’ উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি নই, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং হেনস্তা করছেন। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম সোমবার একটি অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। অভিযোগকারী মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা জবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসি অনেক কথা বলেছেন। এ অভিযোগের অনেক বিষয়ের অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর যে সমস্যা সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারব না। তাকে কেন বার বার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা বা হুমকি দেয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।’
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক যা বললেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এখন অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভূতিকে পুঁজি করে মীম গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। মীম এসব বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি আর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, মিম অভিযোগ করার পর তদন্ত কমিটি আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তখন তিনি উচ্চ আদালতে যান।
অপর অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। মীম ঠিকমতো ক্লাসই করত না। ক্লাসে তার ৬০ ভাগ উপস্থিতিও ছিলো না। সেখানে আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল শক্তি তারা নিজেরাই।
নারীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজন নারী রয়েছেন। বর্তমানে নয়জন নারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করছেন একজন নারী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা অর্ধেক নয়, বরং অর্ধেকেরও বেশি। ভোটার তালিকা দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু কিছু অশুভ শক্তি নারীদের পিছিয়ে দিতে চায়।’
আরও পড়ুন:ঘরের কাজে নারীদের সহায়তার জন্য পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বামী ও স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করলে সময় বেঁচে যায়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঘরে-বাইরে নারীদের কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মেয়েরা কিন্তু অফিস-আদালত বা যেখানেই কাজ করে, কাজ করার পরে কিন্তু তার আরেকটা কাজ থাকে ঘরে এসে সংসার সামলানো। সেটা আবার হিসাবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসাবে ধরা হয়, তখন দেখা যাবে যে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অনেক অনেক বেশি শ্রম দিচ্ছে তারা। এটাও তো শ্রম।
“ধরেন একজন পুরুষ অফিসার, নারী অফিসার; স্বামী, স্ত্রী। দুইজন একই সাথে ঘরে ফিরল। আমরা কী দেখব যে, যিনি পুরুষ, তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন বা ইজি চেয়ারেই বসে পড়লেন বা সোফায় বসে পড়লেন। বলে, ‘এক কাপ চা দাও তো।’ আর যিনি মেয়ে অফিসার, তিনি ঘরে যেয়েই আগে পাকের ঘরে ঢুকলেন। চা বানানো, বাচ্চাদের খাওয়ানো, বাচ্চাদের গোসল করানো, বাচ্চাদের দেখা—সবকিছু ব্যবস্থা করা। এই ক্ষেত্রে যদি সবাই একটু একসাথে কাজ করে। কেউ চা বানাল, কেউ বাচ্চাদের দেখল, তাহলে পরে সময়ও বাঁচে।”
ঘরের কাজে নারীদের সহায়তা করতে পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের রান্নাও করতে হবে। কারণ এখন তো আসলে আমরা এই যে ভাতা দেয়ার জন্য এখন কাজের লোক তো কম পাওয়া যায়। কাজেই সে দিক থেকে মনে করি, দুজনে মিলে কাজ করলে পরে দ্রুত কাজগুলো শেষ হলো।
‘তারপরে একটু একসাথে বসে গল্প করা যাবে। টেলিভিশন দেখা যায়। সেটা করতে পারে। তো আমাদের পুরুষরা যদি একটু ওই দিকে নজর দেয়, তাহলে জীবনটা কিন্তু আরও সুন্দর হবে।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (একসময়ের টুইটার) শুক্রবার সকালে এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘আজ নারী দিবসে আমাদের (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সারা দেশে লাখ লাখ পরিবারের আর্থিক বোঝাকে কমাবে, বিশেষ করে আমাদের নারী শক্তিকে উপকৃত করবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘রান্নার গ্যাসকে আরও সাশ্রয়ী করে আমরা বিভিন্ন পরিবারের কল্যাণের জন্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের জীবনযাপন সহজ করতে আমাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি করা হয়েছে।’
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ রুপি।
নারী দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর ‘উজ্জ্বলা ইয়োজানা’ প্রকল্পের আওতায় এলপিজি সিলিন্ডারপ্রতি দরিদ্র নারীদের ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যা শুরু হচ্ছে আগামী ১ এপ্রিল।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবরে ১২টি রিফিল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি ২০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ রুপিতে উন্নীত করে। সিলিন্ডারপ্রতি ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ ছিল চলতি অর্থবছরের শেষ দিন ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক্সে অপর এক পোস্টে নাগরিকদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি লিখেন, ‘আমরা আমাদের নারী শক্তির শক্তিমত্তা, সাহস ও সহনশীলতাকে স্যালুট জানাই এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের প্রশংসা করি।
‘আমাদের সরকার শিক্ষা, শিল্পোদ্যোগ, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য