‘মানুষের উপদ্রবে’ চোখে রীতিমতো অন্ধকার দেখছে কয়েক প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকা। যৌন মিলনের জন্য বের করতে হয়েছে নতুন উপায়। যৌনজীবনে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
তেলাপোকা নিধনে যুগের পর যুগ মিষ্টি স্বাদের কীটনাশক ব্যবহার করছে মানুষ। এ কারণে তেলাপোকার অনেক প্রজাতি মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মিষ্টি খাবারের প্রতি মুখ ঘুরিয়ে নেয়া তেলাপোকাদের যৌনজীবনেও ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
সাধারণত সঙ্গমে ইচ্ছুক পুরুষ তেলাপোকা সঙ্গিনীকে আকর্ষণের জন্য নিজের পশ্চাদ্দেশ এগিয়ে দেয়, ডানা মেলে ধরে এবং তারপর নিজের দেহনিঃসৃত খাবার গ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়।
এই খাবারটি তৈরি হয় পুরুষ তেলাপোকার টেরগাল গ্রন্থির শর্করা ও চর্বির মাধ্যমে, যার স্বাদ মিষ্টি। খাবার গ্রহণে মত্ত সঙ্গিনীকে পুরুষ তেলাপোকাটি একটি যৌনাঙ্গের মাধ্যমে শরীরের সঙ্গে আটকে রাখে, আর অন্য যৌনাঙ্গের মাধ্যমে শুক্রাণু প্রবেশ করায়।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সঙ্গমের সময়কাল ৯০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই আনন্দপূর্ণ মিলন গোলমেলে করে দিচ্ছে কীটনাশক। প্রাণ হারানোর মতো বিপদ এড়াতে অনেক প্রজাতির তেলাপোকার চিনিজাতীয় খাবারের প্রতি নিরাসক্তি জন্ম নিয়েছে। এতে বিপদ বেড়েছে পুরুষের। দেহনিঃসৃত মিষ্টি স্বাদের শর্করায় বেশিক্ষণ আর আকৃষ্ট হচ্ছে না সঙ্গিনীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ১৯৯৩ সালে জার্মান তেলাপোকার একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেন। এ ধরনের তেলাপোকার অস্তিত্ব একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বাকি সব মহাদেশেই কমবেশি আছে। তারা অবাক হয়ে দেখতে পান এসব তেলাপোকার গ্লুকোজজাতীয় মিষ্টি খাবারের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই বললেই চলে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব তেলাপোকার চিনিবিমুখতার কারণ মোটেই স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে নয়। বরং এরা বংশগতভাবে ধীরে ধীরে মিষ্টিজাতীয় কীটনাশকের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। মৃত্যুর ফাঁদ এড়াতে মিষ্টি খাবার এড়ানোয় সাফল্য অর্জন করেছে এরা।
নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ আয়াকো ওয়াদা-কাতসুমাতা বলছেন, ‘আমরা বিবর্তনের কথা চিন্তা করার সময় সাধারণত বন্য প্রাণীদের বিষয়টিতে বেশি জোর দিই। অথচ আমাদের রান্নাঘরে বসবাসকারী ছোট প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটছে।’
ড. ওয়াদা-কাতসুমাতা ও তার সহকর্মীরা তেলাপোকার এই রূপান্তর নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার ফল চলতি মাসে কমিউনিকেশনস বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের বিবর্তন স্ত্রী তেলাপোকাকে মিষ্টি স্বাদের বিষের টোপ এড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এই বৈশিষ্ট্য পুরুষ তেলাপোকার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ মিলনের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিবর্তিত তেলাপোকার লালা দ্রুত জটিল শর্করাকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম। সাধারণ মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি পুরুষ তেলাপোকার দেহনিঃসৃত চিনি বা গ্লুকোজে স্ত্রী তেলাপোকা কামড় বসানোমাত্র তার মুখ তেতো হয়ে যায়। ঘটনাটি এতটাই দ্রুত ঘটে যে পুরুষ তেলাপোকা তার দ্বিতীয় যৌনাঙ্গ ঠিকঠাক প্রবেশ করানোর আগেই চম্পট দেয় ‘বিরক্ত’ সঙ্গিনী।
স্ত্রী তেলাপোকার এভাবে দ্রুত সটকে পড়ায় মানুষের স্বস্তি পাওয়ার কিছু অবশ্য নেই। কারণ এর ফলে তেলাপোকার জন্মহারে তেমন কোনো হেরফের হয়নি।
ওয়াদা-কাতসুমাতা বলছেন, ‘ব্যাপারটি এতটা সরল নয়। কারণ, পুরুষ তেলাপোকা দীর্ঘ সঙ্গমের আনন্দ বঞ্চিত হলেও দ্রুততম সময়ে শুক্রাণু প্রবেশ করার বিকল্প উপায় ঠিকই বের করে নিয়েছে।‘
গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ তেলাপোকার তুলনায় মিষ্টিজাতীয় খাবারে আকর্ষণ হারানো প্রজাতির স্ত্রী তেলাপোকা আচরণগত দিক থেকে বেশি ছটফটে। এ কারণে এসব প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকা দেহনিঃসৃত খাবার উপহার দেয়ার পরপরই দ্রুত সঙ্গমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এই সঙ্গম চলে খুব সামান্য সময় ধরে।
নর্থ ক্যারোলিনার কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষণাপত্রের লেখক কোবি শ্যাল বলেছেন, ‘মিষ্টি খাবারে অনাগ্রহী স্ত্রী তেলাপোকাকে উপহারের খাবার খাওয়াতে পুরুষ তেলাপোকা সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড সময় ব্যয় করতে পারে। এ সময়ের মধ্যেই পুরুষ তেলাপোকাকে সঙ্গম শুরু করতে হয়। অন্য প্রজাতিতে এই সময়কাল অনেক দীর্ঘ।‘
ফলে দেখা যাচ্ছে মিষ্টি কীটনাশক বেশ কিছু প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকার যৌনজীবনকে বিষিয়ে তুললেও এতে প্রজনন হারে কোনো ভাটা পড়েনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মিষ্টি খাবারের প্রতি তেলাপোকার অনাগ্রহ উল্টোদিকে প্রচলিত কীটনাশকের কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য কীটনাশকে কার্যকর নতুন উপাদান যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন:ভালোবাসার টানে এক হয়ে গেল দুই দেশের কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব। সূদুর ইউরোপ থেকে ৫ বছরের প্রণয়কে বিয়েতে রূপ দিতে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সাইপ্রাসের এক তরুণী। সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবশেষে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সাভারের যুবক শামীম আহমেদের সঙ্গে। এরই মধ্যে শ্বশুড়বাড়ি, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের মন জয় করে নিয়েছেন ভিনদেশী এই নারী। পরদেশী বউ পেয়ে দারুণ খুশি শামীমের পরিবারও।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট আয়নাল মার্কেট এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শামীমের স্ত্রীকে ঘিরে চলছে উৎসব। আত্মীয়স্বজন আর পাড়াপ্রতিবেশীরা ছুটে আসছেন ভিনদেশী বউকে একবার দেখতে। সাইপ্রাসের নাগরিক আন্থি তেলেবান্থুও সবাইকে আপন করে নিয়েছেন।
গত ২৭ নভেম্বর আশুলিয়ায় শামীমের বাড়িতে আসেন আন্থি তেলেবান্থু। ৩০ নভেম্বর ঢাকা জজকোর্টে বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিয়ে করেন আন্থি ও শামীম।
আন্থির সঙ্গে পরিচয় ও প্রণয়ের বিষয়ে শামীম আহমেদ বলেন, ‘স্টুন্ডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে আমি সাইপ্রাস চলে যাই। সেখানকার সিডিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি নেই। একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আন্থির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। একসময় আমরা দুইজনকে পছন্দ করা শুরু করি। পরে তা প্রণয়ে রূপ নেয়।
‘সাইপ্রাসের লিমাসোল শহরে আন্থির বাসায় আমার যাওয়া-আসা শুরু হয়। ওর পরিবারের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে আমি দেশে ফিরে আসি। তারপরও আমাদের দুজনের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ ছিল। সে আমার পরিবারের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা বলত।’
তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই সে বাংলাদেশে আমার বাড়িতে আসার জন্য উদগ্রীব ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর সে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশে চলে আসে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমরা দুজন গতকাল ঢাকা জজকোর্টে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে আন্থি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। আট-দশটা বাঙালি বউদের মতোই সবার সঙ্গে মিশতেছে। তার বাঙালি বউ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে মাতিয়ে রাখছে সে।’
নিউজবাংলাকে নববধূ আন্থি তেলেবান্থু বলেন, ‘আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি। তারপর বন্ধু হয়েছি এবং আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবেই জানি। সে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। এসব থেকেই আস্তে আস্তে আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার পরিবার শামীমকে অনেক পছন্দ করে। তারাও আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ।’
শামীমের চাচা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিদেশী মেয়ে হলেও ওর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে যখনই সে আমার সামনে এসেছে ঘোমটা পরে এসেছে, বাঙ্গালি মেয়েদের মতো। সে আমাদের মতোই শাকসবজি, তরকারি খাচ্ছে। আমার পূত্রবধূকে নিয়ে কোনো সমস্যা পরিবারে নাই।’
আরও পড়ুন:বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুর পর ওই সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে মরদেহ দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ান ৫ মেয়ে। ৩১ ঘণ্টা এমনভাবে বাড়ির উঠানে মরদেহ পড়ে থাকার পরে প্রশাসনে খবর দেন প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ এসে মেয়েদের আশ্বস্ত করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে লাশের দফন হয়।
মৃত ওই হতভাগ্যের নাম সাকাত গাজী। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সাকাত গাজী কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ছেলে মামুন গাজী তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে থাকাকালে মামুন বাবার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। বুধবার ভোর ৪টার দিকে খুমেক হাসপাতালে মারা যান সাকাত গাজী।
তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে সটকে পড়েন মামুন। সকাল ৮টার দিকে মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে আসে। পরে স্থানীয়রা মরদেহ দাফন করার ব্যবস্থা করতে গেলে মামুনের পাঁচ বোন তাতে বাঁধা দেন। এরপর থেকে থানা পুলিশ ওই বাড়িতে না যাওয়া পর্যন্ত মরদেহ ওই বাড়ির ওঠানেই পড়ে ছিল।
মৃত সাকাত গাজীর মেয়ে লাবনী আক্তার জানান, তার ভাই বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে না জানিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। এ কারণে সম্পত্তির ন্যায্য ভাগের ফয়সালা পেতে তারা মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, ‘সাকাত গাজীকে বুধবার বাদ জোহর জানাজা পড়ানোর কথা ছিল। তবে তার ৫ মেয়ের বাধায় আমরা ওইদিন কিছুই করতে পারিনি।’
এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেই ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরে মেয়েদের আশ্বস্ত করে দুপুরের দিকে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছি।’
ছেলের সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মামুন যে তারা বাবার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে এটার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। কারণ মরদেহের বুড়ো আঙ্গুলে টিপসই দেয়ার ছাপ রয়েছে।’
সাকাত গাজীর নামে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে মাত্র ৫ টাকায় এক ব্যাগ ভর্তি সবজির বাজার চালু করেছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুই শ’ টাকার সবজি মাত্র ৫ টাকায় পেয়ে খুশি প্রায় দেড় শতাধিক প্রান্তিক পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চত্বরে এ বাজার চালু করে সংগঠনটি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, ফাইট আনটিল লাইটের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের, ইউপি সদস্য রাশিদা, ফুল-এর ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম, গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয়রা।
সংগঠনটি প্রায় দেড় শতাধিক পঙ্গু, ভিক্ষুক ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ৫ টাকার বিনিময়ে ব্যাগভর্তি বাজার তুলে দেয়। প্যাকেজ হিসেবে প্রতিটি ব্যাগে রয়েছে একটি ডিম, এক কেজি করে ফুলকপি, শিম, লালশাক, বেগুন, মুলা, ধনে পাতা ইত্যাদি।
ঘোগাদহ চৈতার খামার গ্রামের প্রতিবন্ধী রহিমা বেগম বলেন, ‘সারাদিন ভিক্ষা করে দুই শ’ টাকা জোটে না। সেখানে মাত্র ৫ টাকায় প্রায় দুই শ’ টাকার সবজি ও একটি ডিম পেলাম। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আজ খুবই ভালো লাগছে। এ বাজার গরীব মানুষের জন্য আশীর্বাদের মতো।’
ভ্যানচালক মমিনুল বলেন, ‘সারাদিনে যা আয় হয় তা দিয়ে নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো অবস্থা। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে করে চাল কিনলে তরকারি কেনা দায়। সেখানে মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে ব্যাগ ভর্তি তরকারির বাজার হবে- কল্পনা মনে হচ্ছে।’
ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বাজার থেকে ৫ টাকা দিয়ে একজন মানুষ ডিমসহ ৫/৬ প্রকার সবজি কিনতে পারবেন। নির্দিষ্ট দিনে দেড় থেকে দুই শ’ মানুষ এখান থেকে সবজি কিনতে পারবেন।
‘আজকে প্রথমবারের মতো এই বাজার শুরু করলাম। সামনে আমাদের জেলার প্রতিটি উপজেলায় এই বাজার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’
১৬ বছর সংসার করার পর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘটনায় পুলকিত স্বামী। এতই খুশি তিনি যে ২০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করে নিজেকে ‘পবিত্র’ করার কথা জানিয়েছেন।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যে উড়িয়া গ্রামে সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে এমন ঘটনা ঘটে।
দুধ দিয়ে গোসল করা ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল হান্নান মিয়া। ৪০ বছর বয়সী হান্নান ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার আগে প্রায় ৫ বছর প্রবাসে ছিলেন তিনি।
দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ১৬ বছর আগে একই এলাকার আয়শা বেগমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন আব্দুল হান্নান। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে দাম্পত্যকলহ চলেই আসছিল। সেই কলহের জেরে সম্প্রতি স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যান এবং আদালতের মাধ্যমে হান্নান মিয়ার সঙ্গে আইনগত বিচ্ছেদ ঘটান। এতেই শুকরিয়া আদায় করে ২০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করেন হান্নান।
১৬ বছরের সংসার জীবনে তাদের ১৫ ও ১২ বছরের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে আদালত চলাকালে বিচারকের দিকে জুতা ছুড়ে মেরেছেন এক বিএনপি সমর্থক। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান বিচারক। পরপর ছুড়ে মারা দুটি জুতাই বিচারকের মাথার উপর দিয়ে দেয়ালে গিয়ে লাগে।
ঘটনার সময় আদালতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সবাই।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইবুনালে মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম মনির খাঁ প্রকাশ মাইকেল। ৩১ বছর বয়সী মনির বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি মামলার আসামি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে তাকে বিএনপির সক্রিয় সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) জাকির হোসেন বলেন, ‘দুপুরে জাজ সাহেব আসার পরপরই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছিলেন। তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আইননুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
ঘটনার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। জাজ সাহেব এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে সে জুতা ছুড়ে মারে৷ তবে উনি বসে যাওয়ায় জুতা মাথার উপর দিয়ে চলে যায়৷ এক সেকেন্ড এদিক-সেদিক হলে ওনার গায়ে লাগত।’
তিনি বলেন, ‘আকস্মিক এই ঘটনায় আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে যাই। সে খুব বাজেভাবে গালাগাল করছিল। তাই আদালতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া সাক্ষী না আসায় আমরা পুলিশকে তাকে নিয়ে যেতে বলেছি।’
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৩ জুন বিকেল পৌনে চারটায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি লাইভ ভিডিও করে মনির৷ সেখানে বঙ্গবন্ধু, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো নিয়ে কটুক্তি করে। এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ জানুয়ারি নাসিরনগর থানার উপ-পরিদর্শক তপু সাহা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় পরদিন তাকে গ্রেপ্তার করে নাসিরনগর থানা পুলিশ।
নগদ অর্থ বা গহনা নয়, সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বিয়ের দেনমোহর হিসেবে পরিবেশের বন্ধু গাছকে বেছে নিয়ে উদাহরণ তৈরি করলেন নাটোরের এক কনে।
নাটোর শহরের দিঘাপতিয়ায় ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের পাশেই শুক্রবার এ ব্যতিক্রমী দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিয়েবাড়ির হৈ-হুল্লোড়ের মাঝেই বর ও কনে মিলে গাছের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যা করছেন। এমন ব্যতিক্রমী ও পরিবেশবান্ধব দেনমোহরের কারণে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
দেনমোহর হিসাবে আপাতত বর কুমিল্লার নাবিন আদনান অংকনের কাছ থেকে ৫টি ফলদ ও বনজ গাছ নিয়েছেন কনে নাটোরের সুকৃতি আদিত্য।
সুকৃতি আদিত্য বলেন, ‘বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য নয়; বরং দুজন মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার।
‘সেখান থেকে আমার মনে হলো যে যদি এমন কিছু করা যায় যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে আবার আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে আমার মনে হয়েছে, গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে; যেটার মাধ্যমে পরিবেশটাও সুস্থ থাকলো, আমরাও খুশি থাকলাম পরিবেশের সুস্থতা দেখে।’
বর নাবিন আদনান বলেন, ‘দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। দেনমোহর হিসেবে গাছের বিষয়টি মূলত প্রতীকী। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। উদাহরণ হিসেবেই আমরা এ বিষয়টি চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।’
কনে সুকৃতির বাবা-মায়ের গাছ এবং পরিবেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নেন গাছ বলে জানান কনের পিতা এম. আসলাম লিটন।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সিন্ধান্ত নিয়েছিল যে, বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। বাবা হিসাবে আমি তার সিন্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সমাজকে সে একটা বার্তা দিতে চায় যে বিয়েতে মোহরানাটা আসল নয়। আসল হচ্ছে দুটি মানুষের বন্ধন।
‘দুটি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এ বন্ধনটাই আসল। কোন অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবন্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই বিষয়টি সুকৃতি অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে আমি গর্বিত।’
এ ঘটনায় বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশি অবাক হয়ে গেলেও সকলেই প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নব-দম্পতিকে। জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে অবাক তারা।
স্থানীয় গুলজান বেগম বলেন, ‘জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখিনি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক।’
সৈয়দ মাসুম রেজা নামে এক সাংস্কৃতিকর্মী বলেন, ‘দেনমোহরে সব সময় কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা চেনতা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।
কনে সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বর নাবিন আদনান একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন।
বছর ছয়েক আগে তারা পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দুই পারিবারের সম্মতি নিয়েই সুকৃতি-নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে তিন দিন ধরে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ দিন বয়সী একটি হাতির বাচ্চা।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, সোমবার উপজেলার সরল ইউনিয়নের পাহাড়ি জঙ্গল পাইরাং এলাকায় হাতি শাবকটি পাহাড়ের পাদদেশের নরম কাদামাটিতে আটকা পড়ে। এ সময় শাবকটির শরীরে তীব্র জ্বর ছিল।
খবর পেয়ে বাঁশখালী জলদী অভয়ারণ্যের রেঞ্জের কর্মকর্তারা খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে হাতি শাবকটিকে পাহাড়ি এলাকায় রেখে আসেন। তবে বাচ্চাটি মাকে না পেয়ে পরদিন আবারও লোকালয়ে নেমে আসে। একেবারে লোকালয়ে চলে আসায় হাতির বাচ্চাটিকে দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘তিনদিন ধরে হাতি শাবকটি ঘোরাঘুরি করছে। বনবিভাগের আমরা শাবকটিকে পাহাড়ি এলাকায় মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও এটি যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বাচ্চাটির জ্বর কমে আসায় আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্বে চিকিৎসা সেবাও দিয়েছি। এটি স্বাভাবিকভাবে ফিরে না গেলে আমরা বিকল্প কিছু চিন্তা করব।’
মন্তব্য