সাহায্য চাইতে বয়স্কদের অনেকেই সংকোচে ভোগেন। মনে হয়, এতে করে যেন নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে। অথবা মনে হতে পারে, কোনো কাজে সাহায্য চাওয়ার অর্থ কাজটি আপনি করতে পারছেন না।
বড়দের মতো শিশুরাও ভোগে এমন মানসিক দ্বন্দ্ব ও ভয়ে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা স্কুলে ঠিক এ কারণেই প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য চায় না।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত মনোবিজ্ঞানীরা মনে করতেন, অন্তত ৯ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুরা তাদের মর্যাদা নিয়ে খুব একটা সচেতন নয়। কাছের বন্ধুরা তাদের নিয়ে কী ভাবছে সে বিষয়ে খুব একটা পরোয়া নেই অল্প বয়সী শিশুদের। তবে নতুন গবেষণা বদলে দিয়েছে এই ধারণা।
দেখা গেছে, পাঁচ বছর বয়সী শিশুও তার বিষয়ে অন্যের চিন্তাভাবনাকে খুব গভীরভাবে গুরুত্ব দেয়। আর এ কারণে নিজেকে অন্যের চোখে বুদ্ধিমান প্রমাণের জন্য শিশুরা ছল-চাতুরির আশ্রয়ও নিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজি বিভাগের পিএইচডির ছাত্রী কেয়লা গুড ও ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর মনোবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক অ্যালেক্স শ গবেষণাটি করেছেন। এ বিষয়ে তারা একটি প্রতিবেদন লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকান-এ। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাত বছর বয়সী শিশুরাও অন্যদের কাছে সাহায্য চাওয়ার সঙ্গে নিজেদের ‘অক্ষমতার’ অনুভূতিকে বিবেচনায় নিতে শুরু করে।
গবেষকেরা বলছেন, নিজের মর্যাদা সম্পর্কে শিশুদের উদ্বেগ তাদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিটি শিশুই ক্লাসরুমে পড়াশোনায় সংগ্রাম করে। এ পরিস্থিতিতে সহপাঠীদের টিপ্পনীর ভয়ে তারা সাহায্য চাইতে ভয় পেলে শেখার ক্ষতি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে শিক্ষকদের আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে করে শিশুদের সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি সহজ করা যায়।
শিশুরা নিজেদের মর্যাদা সম্পর্কে কীভাবে চিন্তা করে তা জানতে গবেষকরা ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির একটি পুরোনো কৌশল প্রয়োগ করেছেন। তারা বলছেন, চারপাশের জগৎ সম্পর্কে শিশুদের যুক্তি বেশ পরিশীলিত হতে পারে, তবে মনের ভেতর কী ঘটছে সেটা তারা সব সময় ব্যাখ্যা করতে পারে না। গবেষণায় কেয়লা ও শ কিছু সাধারণ গল্প তৈরি করে সেগুলো নিয়ে শিশুদের ভাবনা জানতে কিছু প্রশ্ন করেছেন।
তারা চার থেকে ৯ বছর বয়সী ৫৭৬ শিশুকে গল্পের দুই শিশু চরিত্রের আচরণ অনুমান করতে বলেন। ওই দুই চরিত্রের একটি সত্যিকার অর্থেই বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা করছিল, আর আরেকটি চাচ্ছিল অন্যদের কাছে নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে।
গবেষকরা শিশুদের বলেন, ক্লাসে একটি পরীক্ষায় ওই দুই শিশু চরিত্রই খারাপ করেছে। এ ক্ষেত্রে গল্পের দুই শিশুর মধ্যে কে আগে ক্লাসরুমে শিক্ষকের কাছে সাহায্য চাইবে?
দেখা গেছে, চার বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে উভয় চরিত্রকেই সমানভাবে বেছে নেয়ার উত্তর এসেছে। এর মানে তারা ‘বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা’ বা ‘বুদ্ধিমান দেখানোর চেষ্টা’র মধ্যে কোনোটিকেই এগিয়ে-পিছিয়ে রাখেনি।
তবে সাত বা আট বছর বয়সী শিশুদের ধারণা, গল্পের যে শিশুটি নিজেকে অন্যদের সামনে বুদ্ধিমান দেখাতে চাইছে তার সাহায্য চাওয়ার সম্ভাবনা কম। এর ভিত্তিতে গবেষকেরা বলছেন, সাত বা আট বছর বয়সে পৌঁছানো শিশুরা ‘মর্যাদাবোধকে’ গুরুত্ব দিতে শিখেছে।
প্রশ্নের জবাব দেয়ার সময় এ বয়সী শিশুরা চিন্তা করছিল, সহপাঠীদের সামনে গল্পের শিশুর আচরণ কেমন হওয়া উচিত! গবেষণায় অংশ নেয়া এই শিশুদের ধারণা ছিল, গল্পের যে শিশুটি নিজেকে বুদ্ধিমান দেখাতে চাইছে সে সাহায্য হয়তো চাইবে, তবে সেটা ঘটবে সবার আড়ালে (হতে পারে এটা কম্পিউটারের মাধ্যমে)।
গবেষকেরা অন্যান্য পরিস্থিতি তুলে ধরেও শিশুদের প্রশ্ন করেছেন। তারা দেখেছেন, শিশুরা ‘ব্যর্থতা স্বীকার করা’ বা ‘সফলতাকে কম করে দেখানোর’ মতো আরও কয়েকটি আচরণ চিহ্নিত করতে সক্ষম। আর এসব আচরণ সহপাঠীদের সামনে ‘কম বুদ্ধিমান’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করে। এ জন্য আচরণগুলো সম্পর্কে তারা বিশেষ সচেতনতা বজায় রাখে।
কেয়লা ও শয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মর্যাদা নষ্ট হবে ভেবে যেসব শিশু সমস্যায় ভোগে, তারা সাহায্য চাওয়া এড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে মারাত্মক বাধা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে কীভাবে শিশুদের সাহায্য করা সম্ভব- তাও অনুসন্ধান করেছেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা পাওয়া গেছে।
অনেকেই শিশুদের সাহায্য চাওয়ার শিক্ষামূলক দিকটির ওপর জোর দেন। তবে দুই গবেষক বলছেন, এর ফলেও শিশুরা নিজেদের ‘অযোগ্য’ ভাবতে পারে। এর পরিবর্তে শিশুদের মর্যাদাবোধ অক্ষুণ্ন রেখে সমাধানের তাগিদ দেয়া হয়েছে গবেষণায়।
এতে বলা হয়েছে, সাহায্য চাওয়ার ‘সামাজিক ঝুঁকি’ কমানো উচিত বড়দের। যেমন, সহপাঠীরা যখন গ্রুপের কাজ সামলাতে ব্যস্ত, তখন শিক্ষকরা একান্তে কথোপকথনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেকে সহজলভ্য করে তুলতে পারেন। শিক্ষকদের এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যাতে করে অন্যের সামনে প্রশ্ন করাকে স্বাভাবিক, ইতিবাচক আচরণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ভাবতে পারে।
এ ছাড়া শিক্ষকরা এমন কার্যক্রম তৈরি করতে পারেন যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী একটি ভিন্ন বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ’ হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে শিশুদের সবগুলো বিষয় আয়ত্ত করতে একে অপরের কাছে অবশ্যই সাহায্য চাইতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শিশুদের সাবলীল করতে পরিবারেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। শিশুর একটি প্রশ্ন নিয়ে পুরো পরিবার একসঙ্গে আলোচনাকে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেখানো যেতে পারে, সাহায্য চাওয়া কেবল সাহায্যপ্রার্থীকেই নয় বরং একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া অন্যদেরও উপকার করে। প্রাপ্তবয়স্করা সহায়তা চাওয়ার জন্য বাচ্চাদের প্রশংসাও করতে পারেন।
ভয় কাটাতে হবে শিশুদের
প্রশ্ন করতে শিশুদের ভয় পাওয়া নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে রাজধানীর সানিডেল স্কুলের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নাজিয়া হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকে বাচ্চাদের ভেতরে এ ধরনের ভয়গুলো কাজ করে। জন্মের পরে আট থেকে নয় মাস পর্যন্ত শিশুদের স্ট্রেঞ্জার ফোবিয়া কাজ করে, যেখানে তারা অপরিচিত কোনো চেহারা দেখলেই ভয় পায় ও পছন্দ করে না। ১০ মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত তাদের মধ্যে কাজ করে সেপারেশন অ্যাংক্সাইটি। এ সময়ে তারা যার কাছে বড় হয়েছে, মা-বাবা বা বিশেষ করে যাদের সঙ্গে অ্যাটাচমেন্টটা বেশি; তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে এ ভয়টা কাজ করে। এ জিনিসগুলো সঠিকভাবে সামাল দেয়া না গেলে ও সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না হলে ভয়টি থেকে যায়।’
তিনি বলেন, “সামাজিকভাবে বাচ্চাদের ভয়টা তৈরি হয়, যখন তারা কোনো কিছু জানতে চেয়ে বা কিছু জিজ্ঞেস করে সেটার বিপরীতে ধমক শোনে। অথবা তাদের বলা হয় যে ‘এখন বাইরে যাওয়া যাবে না, বাইরে গেলে ভয়ের কিছু আছে বা মারবে।’ সেটা শুনে ওরা চুপ করে যায় এবং নিজে থেকে খাপ খাইয়ে নেয়। এরপর যখন আপনি ওদের বাইরে নিয়ে যেতে চান বা কারও সঙ্গে মিশতে বলেন তখন তারা আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।”
শিশুদের সাবলীল করার পরামর্শ দিয়ে নাজিয়া হোসেন বলেন, ‘কোনো কিছুতে যদি শিশুরা ভয় পায়, সেটা তাদের সামনে তুলে ধরা ঠিক না। যেমন, ভয়ের গল্প করা, ঝগড়াঝাঁটি করা। বিশেষ করে বাচ্চাদের সামনে মা-বাবার সম্পর্কটা ঠিক রাখতে হবে। এটা বড় ব্যাপার।
“বাচ্চাদের বিভিন্ন সময়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে সবার সঙ্গে মেশার ব্যাপারটা বোঝাতে হবে। যেমন কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে, ‘উনি তোমার এই হয়’, ‘ওনার সঙ্গে আমার এ সম্পর্ক’, ‘সালাম দাও’ বা ‘তুমি তার সঙ্গে কথা বলো’ এমনটা বলা যেতে পারে। এটা বলে চলে যাওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে থাকতে হবে, যাতে শিশুরা বোঝে- আমি এ মানুষটার সঙ্গে নিরাপদ কারণ আমার মা-বাবা নিরাপদ।”
স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শিশুরা থাকে। স্কুলে শিক্ষকরাই বাচ্চাদের বাবা-মা। শিক্ষকদের শুরুতে সেটাই জিজ্ঞেস করা উচিত যেটা শিশুরা পারে। যেমন, একটা ছড়া যেটা ওই শিশু পারে সেটাই জিজ্ঞেস করা উচিত। আর তখন শিক্ষক যদি সঙ্গে থাকেন বা একসঙ্গে আবৃত্তি করেন, তাহলে পরে শিশুটির মধ্যে না পারার ভয়টা আর কাজ করবে না।’
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘ম্যাগচার্জ’।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এফ-ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক আয়োজনে নতুন নোট ৪০ সিরিজ উদ্বোধন করে করে ব্র্যান্ডটি। সেই আয়োজনেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং ফিচারের যাত্রা শুরুর কথা জানায় ইনফিনিক্স।
ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।
ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নোট ৪০ সিরিজের সঙ্গে আছে ইনফিনিক্সের ম্যাগকিট। এ কিটে ফোনের ব্যাককাভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ম্যাগকেস। এর সঙ্গে আরও আছে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্যাড ম্যাগপ্যাড এবং ম্যাগনেটিক পাওয়ার ব্যাংক ম্যাগপাওয়ার।
ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৪০ সিরিজের নোট ৪০, নোট ৪০ প্রো, নোট ৪০ প্রো ফাইভজি এবং অত্যাধুনিক নোট ৪০ প্রো+ ফাইভজি স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ম্যাগচার্জ ফিচারটি।
এবারের সিরিজটিতে দেয়া হয়েছে ইনফিনিক্সের অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ ২.০ প্রযুক্তি, ১০০ ওয়াট পর্যন্ত মাল্টি-স্পিড ফাস্টচার্জ এবং ২০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জিং মোড ব্যবহার করতে একটি কাস্টম চিপ দেয়া হয়েছে এ সিরিজের ফোনগুলোতে।
উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য নোট ৪০ সিরিজে আছে ১২০ হার্টজের প্রাণবন্ত থ্রিডি-কার্ভড অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রধান ক্যামেরা হিসেবে সিরিজটিতে আছে ওআইএস সাপোর্টসহ শক্তিশালী ১০৮ মেগাপিক্সেলের সুপার-জুম ক্যামেরা সিস্টেম। এ ছাড়াও ফোনের পেছনের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকটিভ হ্যালো লাইটিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তি।
ইনফিনিক্সের নতুন এ স্মার্টফোন সিরিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট ডিরেক্টর উইকি নিইয়ে বলেন, ‘ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ বাজারে আনার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চার্জিংয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দেবে এই সিরিজ। ‘এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব চিপ চিতা এক্স১-এর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে অলরাউন্ড ফাস্টচার্জ। এখন এতে আছে মাল্টি-স্পিড চার্জিং এবং এক্সট্রিম টেম্পারেচার চার্জিংয়ের মতো ফিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী ম্যাগচার্জ অ্যাক্সেসরি কিট ফোন ব্যবহারকারীদের দেবে নিরবচ্ছিন্ন চার্জিং ইকোসিস্টেম। এসব অগ্রগতির ফলে ব্যবহারকারীরা সারা দিন যেকোনো পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় পাওয়ারড-আপ থাকতে পারবেন।’
গত বছর অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ প্রযুক্তিসহ নোট ৩০ সিরিজ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে ইনফিনিক্স। সিরিজটিতে আছে ৬৮ ওয়াটের ওয়্যারড চার্জিং এবং ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাদার বোর্ডে সরাসরি চার্জ নেয়ার জন্য এতে আছে বাইপাস চার্জিং এবং আইফোন সেভার হিসেবে পরিচিত ওয়্যারলেস রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি।
চার্জিং, লুক ও পারফরম্যান্সে অভূতপূর্ব আপডেট নিয়ে এখন বাংলাদেশের বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে নোট ৪০ সিরিজ। নতুন এ নোট সিরিজের জন্য শুরু হয়ে গেছে প্রি-বুকিংও।
আরও পড়ুন:প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী পাল্টাচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজ, শিক্ষা কিংবা বিনোদনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ল্যাপটপের ব্যবহার। আধুনিক জীবনের সব রকমের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এসব ডিভাইস।
ফলে যত বেশি কাজ, তাপও উৎপন্ন হচ্ছে সেই হারে। এই তাপ কমাতে সাধারণত পোর্টেবল কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এভাবে বাহ্যিক তাপ কমানো গেলেও ল্যাপটপের ভেতরে আটকে পড়া তাপ নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়।
তবে ল্যাপটপেই যদি একটি শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম থাকে, তাহলে বাহ্যিক কুলিং ফ্যানের আর প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর ইনবুক সিরিজের এক্স২ ল্যাপটপ বাজারে আনে ইনফিনিক্স। এই ল্যাপটপের ভেতরে আছে আইস স্টর্ম ১.০ নামক কুলিং প্রযুক্তি। এটি ল্যাপটপে একটি আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্যে করে। আইস স্টর্ম কুলিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি-গ্রেডের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। গেমিংসহ অন্যান্য কাজ কিংবা বিনোদনের সময় যা নিঃশব্দে পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।
ইনফিনিক্সের এই প্রযুক্তিটি ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে। ল্যাপটপ কিংবা এর ব্যবহারকারী, উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কার্যকর কুলিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এবং এর মাধ্যমে কী কী সমস্যার সমাধান হয়?
পারফরম্যান্স
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে প্রথম সমস্যা হয় এর পারফরম্যান্সে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় এবং ল্যাগ সৃষ্টি হয়। একে থার্মাল থ্রটলিং বলে। কার্যকর কুলিং সিস্টেম দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে এনে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত পারফরম্যান্সের লেভেল বজায় রাখতে পারে। ফলে মাল্টিটাস্কিং করা সহজ হয়, সফটওয়্যারগুলো দ্রুত কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও ভালো হয়।
স্থায়িত্ব ও জীবনকাল
ল্যাপটপের সিপিউ ও জিপিউ’র মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশ তাপ সংবেদনশীল। সময়ের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসব উপাদানের ক্ষতি হয়। এতে ডিভাইসের নির্ভরযোগ্যতা কমে যায় এবং জীবনকালও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। এক্ষেত্রে একটি ভালো কুলিং সিস্টেম দক্ষতার সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অকালে হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এমন সক্রিয় ব্যবস্থা ল্যাপটপের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের আর্থিক লোকসানও কমিয়ে আনে।
পরিবেশবান্ধব
তাপমাত্রা বেশি হলে ফ্যানকে আরও বেশি কাজ করতে হয়, ফলে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকরভাবে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে উন্নত কুলিং সিস্টেম। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, বিদ্যুৎ বিল কমে আসে এবং পরিবেশের সুরক্ষা হয়।
স্বস্তি এবং স্বাস্থ্য
ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা খুবই অস্বস্তিকর। বিশেষভাবে, যখন কোলের উপর রেখে ব্যবহার করতে হয় তা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, ফ্যান অতিরিক্ত শব্দ করলে তা ব্যবহারকারীর মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়। ল্যাপটপ ঠান্ডা রেখে নিঃশব্দে কার্যক্রম বজায় রাখার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে আইস স্টর্ম ১.০-এর মতো অত্যাধুনিক কুলিং সিস্টেমগুলো।
তাই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম শুধু ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও জীবনকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ব্যবহারকারীর স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যও এটি জরুরি।
ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।
আরও পড়ুন:হঠাৎ করেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারীদের জীবনে। আচমকা বিভ্রাটে পড়ে ভীত হয়ে পড়েন অনেকে।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।
এমন অবস্থায় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, তা নিয়ে সূত্রের বরাতে তথ্য দিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন।
প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিভ্রাটে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেটা। সবমিলিয়ে ৩ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অকেজো হয়ে পড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়।
পরে অবশ্য এক্সে এসে মার্ক জাকারবার্গ জানান, সার্ভার ডাউন। সেই কারণেই কাজ করছে না মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম। তবে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এর পরই মাস্ককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ইলন মাস্কও অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে এক্স হ্যান্ডেলে আচমকা এত ভিড় কেন?
পাল্টা জবাব দিয়েছেন এক্সের মালিক মাস্কও। তিনি লেখেন, এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মেসেজ লেখা যাচ্ছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। কারণ আমাদের সার্ভার খুব ভালো চলছে।
আরও পড়ুন:এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
বিস্তারিত আসছে…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা কেউ ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। এমনকি ফেসবুকে সক্রিয় থাকা আইডিগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর থেকে এ সমস্যার কথা জানাতে থাকেন ব্যবহারকারীরা।
প্রযুক্তি ওয়েবসাইট ডাউন ডিটেক্টরও ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যার কথা নিশ্চিত করেছে। এক্সের ট্রেন্ডিং ফিডেও ফেসবুক সার্ভার ডাউনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি মেটার আওতাধীন ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ব্যবহারকারীরা জানান, হঠাৎ করেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে যায়। পরে তারা লগ ইন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুরো বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কেউ ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না। এই দুটি মাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস উভয়ই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেটা কিংবা ফেসবুক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ঘুরছিল ২০২৩ সাল থেকেই। এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহক-তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন একটি ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি চক্র। এসব তথ্যের বিক্রি বাড়াতে সম্প্রতি দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেলেও পরে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও ভুয়া তথ্যের এই জমজমাট ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামি-দামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা গ্রাহককে ধোঁকা দেয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল। একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এটাকে ভূঁইফোড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করছেন। বেশকিছু ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নাম এমন কিছু তথ্য আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য যারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করছে এবং প্রলোভনে পড়ে যারা কিনছে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উভয়েরই জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
‘কাজেই যারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে এলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো এমন তথ্য কিনে কখনোই টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগ থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেক গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মতারিখের উল্লেখ থাকছে। কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবিও করা হচ্ছে।
দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্টাগ্রাম লিমিটেড যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার দিচ্ছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, ‘মূলত প্রলোভনে পড়েই অনেকে এমন তথ্য কিনে থাকেন। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ এনালাইসিসে দেখা যায়- যারা তথ্য চুরি করেছে, তারা তথ্য বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্যও সংরক্ষণ করে রাখে।
‘যেহেতু ক্রয়কারীর তথ্য ওরা সংরক্ষণ করছে, ফলে ভবিষ্যতে গ্রাহক হ্যাকিং, ব্ল্যাক মেইলসহ নানা জটিলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা বলতেও পারবেন না কেন এবং কী কারণে তিনি অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।’
তবে গ্রাহকদের তথ্য এভাবে অবাধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর দাবি করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নাস্থা তৈরি হওয়া বা অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রচারণা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিতেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানা অপপ্রচারের শিকার হই। এবারকার বিষয়ও আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা এটি অবহিত করেছি।’
বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি লাগে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে তথ্য ঘুরছে বলে বলা হচ্ছে এসব তথ্য সত্য হলেও এ দিয়ে কিছুই করা যাবে না বলেও মনে করিয়ে দেন ওই প্রযুক্তিবিদ।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবরে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদেরকে বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। ফলে সত্য-মিথ্যা নানা কথা বলে সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ ব্যবসা করে থাকতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।
মন্তব্য