বাসের মধ্যে ‘সরকারবিরোধী মন্তব্য’ করার জের ধরে দুই পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে এক নারীর তীব্র বিতণ্ডার ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
ফেসবুক লাইভে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, সরকারের সমালোচনা তিনি সহ্য করবেন না। যারা এটা করছেন তাদের সবাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে। বাসের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক বলেও দাবি করেন তিনি।
ভিডিওর একপর্যায়ে বাসের আরও কয়েকজন যাত্রীকে ওই নারীর ওপর ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায়।
পরে বাসের যাত্রাবিরতিতে ‘সরকারের সমালোচনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত বাসযাত্রী আরেকটি ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনার রেশ শেষ পর্যন্ত পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। পুলিশ বাস থামিয়ে সবার বক্তব্য নিয়েছে এবং ওই নারী ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
সেই রাতে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকামুখী বাসে প্রকৃতপক্ষ কী ঘটেছিল, তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে উত্তেজিত যে নারীকে দেখা গেছে, তার পরিচয়ও খোঁজা হয়েছে।
এতে বেরিয়ে এসেছে আলোচিত ওই নারীর নাম ফাতেমা তুজ জোহরা রিপা। বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। রিপা রামগঞ্জ মডেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রিপা বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাতেই থাকেন। গত ২১ জানুয়ারি রাতে রামগঞ্জ থেকে ঢাকা ফেরার সময় ঘটে আলোচিত ওই ঘটনা।
এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাতে লাঠিসহ রিপার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সে সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের হামলায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরুসহ ২৫ জন আহত হন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রিপা অংশ নেন সেই হামলায়।
এ ছাড়া ২০১৯ সালের এপ্রিলে রামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপির সঙ্গে সভামঞ্চে ওঠা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেমে যেতে বলা হয়। রিপা নামতে রাজি না হলেও পরে তাকে বাধ্য করা হয়। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাকাটি করে ভাইরাল হয়েছিলেন রিপা।
বারবার বিভিন্ন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়া রিপা কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। গত ২১ জানুয়ারি বাসে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। রিপার দাবি, পুলিশ আসার পর তিনি ক্ষমা চাননি, উল্টো অভিযুক্ত যাত্রী ভুল স্বীকার করেছেন।
নিউজবাংলা কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাসে উত্তেজিত হওয়ার কারণ তুলে ধরেন এই তরুণী। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস চলার সময় আমার পাশের সিটের যাত্রী ফোনে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি সরকারকে নিয়ে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে, আমি যেহেতু ছাত্রলীগ করি আমার খারাপ লাগবেই।
‘তিনি (পাশের যাত্রী) ফোনটা রাখার পরে আরও বাজে ভাষায় কথা বললেন। শেখ হাসিনা আপাকে নিয়ে আরও নোংরা ভাষায় কথা বলেছেন। তখন আমি আমার রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমি প্রতিবাদ করেছি, ফোনে লাইভ দিয়েছি।’
রিপা বলেন, ‘সরকারের বদনাম যেখানে হয়, সব সময় আমি প্রতিবাদ করি। আমি নতুন প্রতিবাদ করিনি, আগেও করেছি, এখনও করছি, ভবিষ্যতেও করব। সরকারকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার স্বাধীনতা মানুষের আছে কিন্তু কাউকে নিয়ে খুবই নোংরা ভাষায় কথা কেউ বলতে পারে না। সে জন্যই আমি প্রতিবাদটা করেছি।’
পাশের সারির আসনে বসা যাত্রী ফোনে কথা বলার সময় কীভাবে শুনলেন- এমন প্রশ্নে রিপার জবাব, ‘এটা তো পাবলিক প্লেস, এখানে তো ফোনের কথা শোনা যাবেই, পাশের সিট যেহেতু আমি তো শুনবই।’
ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করছেন। তবে রিপার দাবি, এতে তার বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি।
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় ভাইরাল হলে সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবেই। আর বিরোধী দল তো সেটা নিয়ে সমালোচনা করবেই। জামায়াত-শিবির-বিএনপি এরা তো সমালোচনা করবেই।
‘আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। কখনও কোনো সরকার এত উন্নয়ন করেনি। এত উন্নয়ন ভোগ করে, এত সুবিধা ভোগ করে সরকারের বদনাম করা বা সরকারকে নিয়ে নোংরা ভাষায় মন্তব্য করা ঠিক না।’
ফেসবুক লাইভে বাসের যাত্রীদের জামায়াত-শিবির-বিএনপির সমর্থক আখ্যায়িত করার কারণ জানতে চাইলে রিপা বলেন, ‘আমি সবাইকে জামায়াত-শিবির বলিনি, যারা আমার সঙ্গে বাসের মধ্যে ঝগড়া করেছিল তাদেরকে বলেছি।’
‘আমার পাশের সিটে যে লোকটা নেত্রীর বদনাম করছিল, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কেন সরকারের বদনাম করছেন, নোংরা ভাষায় কেন কথা বলছেন? এ সময় তার পিছনের সিটে একজন হুজুর ছিলেন, তিনি লাফিয়ে উঠে আমাকে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করছিলেন। আমি তাকে বললাম আমি তো আপনার সঙ্গে কথা বলছি না, যিনি সরকারের বদনাম করেছেন ওনার সঙ্গে কথা বলছি। এতে আপনার সমস্যা কী, কিন্তু উনি খারাপ ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছিলেন পেছন থেকে।’
বাসের আরও কয়েক যাত্রী বিতণ্ডায় যোগ দিয়েছিলেন দাবি করে রিপা বলেন, ‘আরেকটা ছেলে ছিল, সেও আমাকে গালমন্দ করছিল। আমার মনেই হয়েছিল ওনারা বিএনপি। ওনারাও বললেন আমরাও ছাত্রলীগ করতাম একসময়, আমরাও আওয়ামী লীগ করতাম, আসলে কিন্তু ভুল। কোনো ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ সমর্থক জননেত্রী শেখ হাসিনার বদনাম করতে পারেন না, নোংরা ভাষায় গালি সাপোর্ট করতে পারেন না।’
ভিডিওতে প্রাণ হারানোর শঙ্কা জানানোর কারণ জানতে চাইলে রিপা বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল তারা তিনজন পুরুষ। তারা পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে আমার ওপর হামলা করবেন এবং ওনারা বলেছিলেন যে বাসের লাইটটা বন্ধ করে দেন। তখন আমার খারাপ লেগেছিল। আমি একজন নারী, বাসের ভেতরে এত পুরুষের মধ্যে লাইটটা বন্ধ করে দেয়া কি ঠিক হবে!
‘পরবর্তীতে ওনারা বাসের হেলপারকে বলেছিলেন ওনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে যান এবং লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে যান। এটাও বলেছিলেন এটাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেন এবং ওনারা আমাকে ধাক্কা দিতেও এসেছিলেন। ওনারা আমার সঙ্গে খুবই নোংরা ভাষায় গালমন্দ করেছিলেন। তখনই আমার মনে হয়েছিল আমার ওপর একটা হামলা হতে পারে।’
নিজের ভূমিকার পক্ষে যুক্তি দিয়ে রিপা বলেন, ‘আপনারা জানেন বিভিন্ন মানুষ বিশেষ করে শিবির-বিএনপি-জামায়াত এরা সরকারের বদনাম করে। তাদের অভ্যাসই হলো বদনাম করা, তাই আমরা প্রতিবাদ করলে এই বদনামগুলো করতে পারবে না। আমি প্রতিবাদ করেছি, কাল আবার আরেকজন প্রতিবাদ করবেন। এভাবে প্রতিবাদ করলে তারা আর বদনাম করতে পারবে না। আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত।’
লাইভ শেষ করার পরের ঘটনা জানিয়ে রিপা বলেন, ‘যখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম তারা আমার হাত থেকে ফোনটা টেনে নিয়ে যাবে এবং আমাকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা আছে, তখন লাইভটা কেটে দিয়েছি। এরপর আমি ট্রিপল নাইনে কল করেছি।
‘লাইভটা দেখার পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সোহেল রানা শান্ত ভাইও ট্রিপল নাইনে কল করেছেন এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে ফোন দিয়েছিলেন আমার নিরাপত্তার স্বার্থে।’
৯৯৯-এ কল করার পর লালমাই হাইওয়ে পুলিশ বাসটি থামায় বলে জানান রিপা।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ রাস্তার পাশে তেলের পাম্পে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে ওই যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাকেও করেছিল। আমি কে বা কোথা থেকে এসেছি- জানতে চেয়েছে। এটা ওনারা জানতে চাইতেই পারেন। যারা ছিল সবাইকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। একপর্যায়ে ওনারা (বাসের কয়েক যাত্রী) ক্ষমা চেয়েছেন।’
রিপা বলেন, ‘পরে পুলিশ বলল, আপনি ভিডিওটা ডিলিট করে দেন। যেহেতু ওনারা ক্ষমা চেয়েছেন, আপনিও ক্ষমা করে দেন। আমি তখন ভাবলাম, ক্ষমা করে দেই, ভুল তো মানুষেরই হয়। ওনারা বলেছেন, পরবর্তীতে এই ভুল হবে না, তারা সরকারের বদনাম করবেন না।’
ভাইরাল হতে এমন লাইভের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রিপা বলেন, ‘যারা বলছেন, আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য এমন ভিডিও করেছি তারা ভুল বলছেন। আমি ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবির-ছাত্রদল ঠেকানোর জন্য লাঠি হাতে নিয়েছিলাম। তখনও ভাইরাল হয়েছি। তবে আমার ভাইরাল হওয়ার কোনো শখ নেই। আমি প্রতিবাদ করি, প্রতিবাদী মেয়ে। আগেও প্রতিবাদ করতাম।’
২০১৯ সালের ঘটনা নিয়ে রিপা বলেন, ‘ডাকসুতে ভিপি নুরুর সঙ্গে ছাত্রদল-শিবিরের কিছু ছেলে ছিল। ওনারা ওখানে ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার বলে স্লোগান দিচ্ছিল। আসলে ৭৫-এর হাতিয়ার বললে আমাদের কষ্ট হয়, আমাদের খারাপ লাগে। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, ছাত্রলীগ করি আমাদের খারাপ লাগবেই।
‘এ সময় দুই পক্ষই স্লোগান দিচ্ছিল। ওনারা আমাদের ওপর প্রথম হামলা করেন। তারাই আগে লাঠি হাতে নিয়েছিলেন, পরে আমিও লাঠি হাতে নিয়েছিলাম। আমি লাঠি হাতে নিয়েছিলাম ছাত্রদলকে ঠেকাব বলে। ওখানে আমি একা মেয়ে ছিলাম, তাই নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি লাঠি হাতে নিয়েছিলাম।’
বাসে ভাইরাল ভিডিওর পাশাপাশি ‘আহত রিপার’ একটি ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে। সেই ছবি দিয়ে অনেকের দাবি, সেদিন বাসে হামলার শিকার হন রিপা।
তবে রিপা জানান ছবিটি কয়েক মাস আগের। তিনি বলেন, ‘এটা ২০২১ সালের অক্টোবরের ২১ তারিখের ছবি। আমি খাগড়াছড়িতে গিয়েছিলাম। তখন এক ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যায়। সেই ঘটনার ছবি দিয়ে এখন গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
(লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকামুখী বাসে রিপার সহযাত্রীর পরিচয় ও তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে সোমবার পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। ওই যাত্রীর বক্তব্য পাওয়া গেলে পরবর্তীতে এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে। পাঠকের কাছে তার পরিচয় ও অবস্থানের তথ্য থাকলে জানানোর অনুরোধ করছে নিউজবাংলা কর্তৃপক্ষ।)
টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা নদীতে ডুবে সোহাগ (১২) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিন শনিবার বিকেলে তিস্তা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
প্রাণ হারানো সোহাগ রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশের ভাষ্য, সোহাগ তার ফুফাতো বোনকে নিয়ে টিকটক বানাতে নদীতে গোসল করতে নামে। ওই সময় তার সঙ্গে আরও দুই বন্ধু ছিল। টিকটকের ভিডিও ধারণের সময় সোহাগ পানিতে গোসল করছিল। অন্যরা গোসল করে তীরে ওঠে।
দুই বন্ধু নদীর পাড়ে গিয়ে সোহাগকে খুঁজে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা পর তিস্তা নদী থেকে সোহাগের মরদেহ উদ্ধার করে।
রাজারহাট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তিস্তা নদী থেকে সোহাগ নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা। গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফেসবুকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া নিউজ ট্যাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছোট ও স্থানীয় প্রকাশনার শিরোনামগুলোও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছে।
মেটা বলছে, ব্যবহারকারীরা সংবাদ নিবন্ধের লিংক দেখতে সক্ষম হবেন। সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের লেখা ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক পোস্ট ও প্রচার করতে পারবে, যেমন অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ফেসবুকে করতে পারে।
ভুল তথ্য কীভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি রাজনৈতিক মেরুকরণে অবদান রাখে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পর মেটা তার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংবাদ ও রাজনৈতিক উপাদান কমানোর চেষ্টার পর এই পরিবর্তন আসছে।
মেটার মুখপাত্র ড্যানি লিভার বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন গ্রাহকের ফলো করা অ্যাকাউন্টের পোস্টে প্রভাব ফেলবে না। এটি সিস্টেমের সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং ব্যবহারকারীরা যদি আরও চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
‘ঘোষণাটি এমন সময় আসছে, যখন ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো পরিচালনা করি তার উপর ভিত্তি করে।’
মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউজ ট্যাবে এই পরিবর্তন তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক এবং ভুল তথ্যের পর্যালোচনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েই গেছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা চলছে।
কর্নেল ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি গবেষক সারাহ ক্রেপস বলেছেন, ‘ফেসবুক নিজেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করে না, এটি চালান প্রযুক্তিবিদরা। তারপর হঠাৎ তারা এ বিষয়ে মূল্যায়ন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনীতিতে নিমজ্জিত দেখতে পান। ফলে তারা নিজেরাই শিরোনাম হয়ে ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বছর অনেকগুলো বড় নির্বাচন আসছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ফেসবুক রাজনীতি থেকে আরও এক ধাপ দূরে সরে যাচ্ছে। অসাবধানতাবশত নিজেরাই যাতে রাজনৈতিক শিরোনাম হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’
পয়েন্টারের মিডিয়া বিশ্লেষক রিক অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘নিউজ ট্যাবের বিলুপ্তি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য আশ্চর্যজনক নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফেসবুক ট্র্যাফিক হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলোকে দর্শকদের আকৃষ্ট করার অনুসন্ধান ও নিউজলেটারের মতো অন্যান্য উপায়গুলোতে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে।’
অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘আমি বলব আপনি যদি খেয়াল করতেন, তাহলে আপনি দেখতে পেতেন যে, এটি আসছে। তবে এটি সংবাদ ব্যবসার জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।’
মেটা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ফিডে যা দেখেন, তার চেয়ে তিন শতাংশেরও কম সংবাদ তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক সংবাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছর ৮০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক অন্তত মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পান। ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম অন্যান্য মাধ্যমকে সেখানে ছাড়িয়ে গেছে।
পিউ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে তিনজন বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ফেসবুক থেকে খবর পান এবং ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম থেকে খবর পান। এ দুই মাধ্যমেরই মালিকানা মেটার।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনুসরণ করেন না, এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ট করা রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ‘সক্রিয়ভাবে’ সুপারিশ করা বন্ধ করার জন্য অ্যাপটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ফিল্টার বন্ধ করার অপশন সবসময় ইউজার সেটিংসে থাকলেও মেটা যে এই পরিবর্তন করেছে তা অনেকেই জানতেন না।
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
এদিকে রাত সাড়ে নয়টার পর থেকে হঠাৎ ফেসবুকে ঢুকতে না পেরে দেশের অনেক নাগরিক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের আশ্বস্ত করে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এসপি মো. নাজমুল ইসলাম।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের কার্যক্রম বর্তমানে কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, সমস্যার সমাধানে তারা কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ফেসবুকের কারিগরি সমস্যা। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। এতে ফেসবুক অ্যাকাউন্টধারী বা ফেসবুক অ্যাপের কোনো ত্রুটি নেই। পাসওয়ার্ড বা আর্থিক কোনো বিষয়েও সংশ্লিষ্টতা নেই।
‘আপনার ফেসবুক হ্যাক হয়নি, তাই কেউ আতঙ্কিত হবেন না। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
বিস্তারিত আসছে…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা কেউ ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। এমনকি ফেসবুকে সক্রিয় থাকা আইডিগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর থেকে এ সমস্যার কথা জানাতে থাকেন ব্যবহারকারীরা।
প্রযুক্তি ওয়েবসাইট ডাউন ডিটেক্টরও ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যার কথা নিশ্চিত করেছে। এক্সের ট্রেন্ডিং ফিডেও ফেসবুক সার্ভার ডাউনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি মেটার আওতাধীন ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ব্যবহারকারীরা জানান, হঠাৎ করেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে যায়। পরে তারা লগ ইন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুরো বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কেউ ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না। এই দুটি মাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস উভয়ই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেটা কিংবা ফেসবুক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ঘুরছিল ২০২৩ সাল থেকেই। এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহক-তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন একটি ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি চক্র। এসব তথ্যের বিক্রি বাড়াতে সম্প্রতি দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেলেও পরে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও ভুয়া তথ্যের এই জমজমাট ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামি-দামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা গ্রাহককে ধোঁকা দেয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল। একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এটাকে ভূঁইফোড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করছেন। বেশকিছু ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নাম এমন কিছু তথ্য আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য যারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করছে এবং প্রলোভনে পড়ে যারা কিনছে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উভয়েরই জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
‘কাজেই যারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে এলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো এমন তথ্য কিনে কখনোই টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগ থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেক গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মতারিখের উল্লেখ থাকছে। কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবিও করা হচ্ছে।
দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্টাগ্রাম লিমিটেড যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার দিচ্ছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, ‘মূলত প্রলোভনে পড়েই অনেকে এমন তথ্য কিনে থাকেন। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ এনালাইসিসে দেখা যায়- যারা তথ্য চুরি করেছে, তারা তথ্য বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্যও সংরক্ষণ করে রাখে।
‘যেহেতু ক্রয়কারীর তথ্য ওরা সংরক্ষণ করছে, ফলে ভবিষ্যতে গ্রাহক হ্যাকিং, ব্ল্যাক মেইলসহ নানা জটিলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা বলতেও পারবেন না কেন এবং কী কারণে তিনি অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।’
তবে গ্রাহকদের তথ্য এভাবে অবাধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর দাবি করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নাস্থা তৈরি হওয়া বা অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রচারণা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিতেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানা অপপ্রচারের শিকার হই। এবারকার বিষয়ও আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা এটি অবহিত করেছি।’
বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি লাগে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে তথ্য ঘুরছে বলে বলা হচ্ছে এসব তথ্য সত্য হলেও এ দিয়ে কিছুই করা যাবে না বলেও মনে করিয়ে দেন ওই প্রযুক্তিবিদ।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবরে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদেরকে বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। ফলে সত্য-মিথ্যা নানা কথা বলে সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ ব্যবসা করে থাকতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।
মন্তব্য