× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

আন্তর্জাতিক
What is the achievement of Operation Sindur?
google_news print-icon

অপারেশন সিঁদুরে কী অর্জন হলো ভারতের?

অপারেশন-সিঁদুরে-কী-অর্জন-হলো-ভারতের?

গত বুধবার পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের গভীরে প্রবেশ করে এক বিশাল হামলা চালায় ভারত। মূলত পেহেলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াও ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। ভারতের সরকার জানিয়েছে, এই অভিযান ছিল সম্পূর্ণ সফল। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির চোখে কেমন ছিল এই অভিযান? কী অর্জন এসেছে অপারেশন সিঁদুরের নিখুঁত সন্ত্রাসবিরোধী হামলার মাধ্যমে- সেটাই তুলে ধরেছে এনডিটিভি।

নয়টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস

অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। এই ঘাঁটিগুলো ছিল জঙ্গিসংগঠন- লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের। এই ঘাঁটিগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও কার্যকরী কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীর হামলা

পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীরে আঘাত হানার সদিচ্ছা প্রদর্শন করে ভারত যুদ্ধনীতির ধরন বদলে দিয়েছে। জঙ্গি এবং জঙ্গি-পৃষ্ঠপোষকরা আলাদা নয় বরং উভয়কে লক্ষ্য করে একটি নতুন নীতির সূচনা করেছে ভারত।

হামলাগুলো শুধু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নয়, পাকিস্তানের ভেতরে শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এমনকি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়, যা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ভারত এমন সংবেদনশীল জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছে; যেমন- বাহাওয়ালপুর যেখানে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও কখনো ড্রোন পাঠানোর সাহস দেখায়নি।

ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তান থেকে এলে সীমান্ত রেখা বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ভূগোল কোনো বাধা নয়। এই হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভারতীয় হামলার আওতাভুক্ত।

রেডলাইন

অপারেশন সিঁদুর এমন এক রেডলাইন তৈরি করেছে, যা পাকিস্তান আর উপেক্ষা করতে পারবে না। তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্ত্রাসের ব্যবহার করলে এর প্রতিক্রিয়া হবে লক্ষ্যভেদী ও দৃশ্যমান।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নতুন ধারা

প্রথমবারের মতো ভারত স্পষ্টভাবে জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে পার্থক্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং উভয়ের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি সেই দীর্ঘদিনের ধারণাকেও নস্যাৎ করেছে যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবশালী কিছু দুষ্কৃতকারী উপাদান অনায়াসে সন্ত্রাস চালাতে পারে।

পাকিস্তানের দুর্বল বিমান প্রতিরক্ষা

ভারতীয় বাহিনী সফলভাবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে পরিচালিত দ্রুত ও নিখুঁত হামলা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ করে। ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মিশন সম্পন্ন করে, যা প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে।

ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রদর্শন

ভারত আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষার রূপান্তরিত রূপ তুলে ধরেছে। নিজস্ব আকাশসীমা সুরক্ষায় একটি শক্তিশালী ও স্তরযুক্ত কাঠামো তৈরি করেছে। ভারত সফলভাবে পাকিস্তানের ব্যবহৃত চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ভেদ করেছে। প্রতিরক্ষা মানে শুধু কেনাকাটা নয়, বরং তার কার্যকর সংযোজন- এটাই প্রমাণ করেছে।

এ ছাড়া ভারতের আকাশতীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত শত পাকিস্তানি ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে এবং এখন এটি বৈশ্বিক রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে।

উত্তেজনা ছাড়াই সুনির্দিষ্ট হামলা

জঙ্গি অবকাঠামো ছাড়া প্রাথমিকভাবে কোনো সামরিক বা বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বড় মাত্রায় উত্তেজনা সৃষ্টি না করেই ভারত তার শূন্য-সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিবাদীদের নির্মূল

ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত একাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এক রাতেই বহু জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর ক্ষতি

৯ ও ১০ মে রাতের অভিযানে ভারত এমন দেশ হয়ে উঠেছে, যারা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের বিমান ঘাঁটিগুলোতে ক্ষতিসাধন করেছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ১১টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে নুর খান, রফিকি, মুরিদ, সুক্কুর, শিয়ালকোট, পাসরুর, চুনিয়ান, সারগোধা, স্কারু, ভোলারি এবং জ্যাকবাবাদ।

হামলায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ২০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ভারতের হামলায় ভোলারি ঘাঁটিতে পাকিস্তানের স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফ ও চারজন বিমানসেনাসহ ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।

যৌথ-সেনা সমন্বয়

ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বিতভাবে হামলা চালিয়েছে, যা ভারতের ক্রমবর্ধমান যৌথ যুদ্ধক্ষমতার প্রমাণ।

বিশ্বকে পাঠানো বার্তা

ভারত বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, জনগণকে রক্ষা করতে অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। সন্ত্রাসবাদকে শাস্তি দেওয়া হবে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ ও তাদের পরিকল্পনাকারীদের জন্য আর কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। যদি পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে ভারত কেবল তা প্রতিহত করতেই সক্ষম নয়, প্রয়োজনে জবাবি হামলায় আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।

বিশ্বব্যাপী সমর্থন

আগে যখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু সংঘাতমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতো, অধিকাংশ দেশ ভারতকে সংযমের আহ্বান জানাত। কিন্তু এবার বহু বিশ্বনেতা ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে।

কাশ্মীর নিয়ে বিবর্তিত বর্ণনা

প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কেবল সন্ত্রাসবাদের আলোকে দেখা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যু থেকে এটি পুরোপুরি আলাদা করা হয়েছে।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক
Türkiye is preparing for potential war

সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক

সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির’ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক। এছাড়া তুরস্ক ইরানের সঙ্গে সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে দেশটি। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এরই মধ্যে তুরস্ক-ইরান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইরান থেকে তুরস্কে শরণার্থীদের ‘অস্বাভাবিক’ প্রবাহ দেখা যায়নি।

রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ক স্থানীয়ভাবে বহুস্তর বিশিষ্ট উৎপাদিত রাডার ও অস্ত্রব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্য দিয়ে সমন্বিত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করছে দেশটি; যেন সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রস্তুতি উচ্চ স্তরে রাখা।

সূত্র আরও জানায়, গত শুক্রবার ইরানে যখন ইসরায়েল আক্রমণ শুরু করে, তখন তুরস্কের ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল’ বিমানগুলো আকাশে টহল দিয়েছিল। কারণ, যদি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, সঙ্গে সঙ্গে যেন জবাব দেওয়া যায়।

ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর তুরস্ক এখন পর্যন্ত সরাসরি জড়ায়নি। তবে আঙ্কারা আগেই জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো যুদ্ধ তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে সীমান্ত নজরদারি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।

চলমান উত্তেজনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Israels army and detective establishment was the target of the attack

ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য

ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য

ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের সরোকা ইসরায়েলের দাবি, ইরান ইসরায়েলের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের এমন দাবির জবাব দিয়েছে ইরান। গতকাল বৃহস্পতিবার তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তা ও মিডিয়া সূত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে ইরান এ দাবি করেছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলের বিয়েরশেবায় অবস্থিত সরোকা মেডিকেল সেন্টারে আঘাত হেনেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি গাজায় অভিযানের সময় আহত ইসরায়েলি সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ইরানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাসপাতালটি হামলার লক্ষ্য ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি ইসরায়েলের দুটি প্রধান সামরিক স্থাপনার মাঝে অবস্থিত। এগুলো হলো আইডিএফের প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার। এ দুটি স্থাপনায় গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত। এই স্থাপনাগুলো ইসরায়েলের সাইবার অপারেশন, ডিজিটাল কমান্ড সিস্টেম এবং সামরিক গোয়েন্দা অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

ইরানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাছাকাছি বিস্ফোরণের শকওয়েভ থেকে হাসপাতালটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। ইরানের দাবি, সামরিক কমান্ড নেটওয়ার্কের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরাতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে বেসামরিক অবকাঠামোর সঙ্গে মিথ্যাভাবে যুক্ত করে মানসিক যুদ্ধে চালনায় লিপ্ত রয়েছে ইসরায়েল।

ইরানি সূত্রগুলো বলেছে, এই মিথ্যা বর্ণনা একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণার অংশ, যার লক্ষ্য ইসরায়েলের সামরিক ইমেজ পরিশুদ্ধ করা এবং এর গোয়েন্দা অবকাঠামোর ওপর আঘাতের মাত্রা গোপন করা।

ইসরায়েলের হাসপাতালে ইরানের হামলায় আহত ৬৫

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ‘কয়েক ডজন’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার মধ্যে কয়েকটি সাধারণ নাগরিকদের বসতিতেও পড়েছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের আরেক পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রত্যুত্তরে এবার ইসরায়েলের দিকেও ধেয়ে এল একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের আরাক পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লাগাতার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান। ইসরায়েলের দক্ষিণে বেরশেবা শহরের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল ‘সোরোকা’-য় হামলা চালিয়েছে ইরান। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, হামলা হয়েছে তেলআবিবের স্টক এক্সচেঞ্চের বহুতল ভবনেও।

এছাড়াও, দেশের ঠিক মধ্যভাগে জনবসতি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, সকালে ইরান বেরশেবার সোরোকা হাসপাতাল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। হামলা হয়েছে লোকালয় লক্ষ্য করেও। ওদের কড়া জবাব দেব। তেহরানকে এর মূল্য চোকাতেই হবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ‘কয়েক ডজন’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার মধ্যে কয়েকটি সাধারণ নাগরিকদের বসতি এলাকাতেও পড়েছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সকাল থেকেই তেলআবিবে আছড়ে পড়তে শুরু করে ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। সোরোকার হাসপাতালে হামলারও বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে বিস্ফোরণের পর গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে হাসপাতাল থেকে। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছে।

যদিও ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএনআরএর দাবি, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলি সেনার কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ সি৪আই) সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে ইরানি বাহিনী। গাভ-ইয়ামে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দাদের একটি দফতরেও হামলা হয়েছে। তবে যে হাসপাতালে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে সামান্যই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত সামরিক ও গোয়েন্দা দপ্তর লক্ষ্য করে হামলা চালানো।

খামেনিকে নির্মূল করাই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য

ইরানের হামলার মূল লক্ষ্য জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি জানিয়েছে, এ যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে নির্মূল করা। গতকাল বৃহস্পতিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে সরাসরি হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি বলেন, (খামেনি)র মতো একজন ব্যক্তি সবসময় তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করে এসেছেন। যে ব্যক্তি আমাদের ওপর হামলা করতে প্রস্তুত, তাকে বেঁচে থাকতে দেওয়া উচিত নয়।

কাটজ বলেন, এই ব্যক্তিকে থামানো, তাকে নির্মূল করার বিষয়টি এই প্রচারণার অংশ। আমরা এখন তার ভূমিকা বুঝতে পেরেছি, কারণ আগে তিনি ইসরায়েলের ধ্বংসের কথা বলতেন। এর আগে গত শুক্রবার ইরানে হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি ইংরেজি ভিডিওতে ইরানি জনগণের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন এই সামরিক অভিযান ‘আপনাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করবে।’

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনির কথা উল্লেখ করে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমরা তাকে (হত্যা!) করতে যাচ্ছি না, অন্তত এখন নয়… আমাদের ধৈর্য ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Disappointed Malala anger over the United States

যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ‘হতাশ’ মালালা, ক্ষোভ প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ‘হতাশ’ মালালা, ক্ষোভ প্রকাশ

পাকিস্তানের নোবেলবিজয়ী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে বিপুল প্রভাব ও ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা মানব জীবন রক্ষা, শান্তি আনার কিংবা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করেনি — এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস উইমেন ইন বিজনেস সামিটে’ তিনি এসব কথা বলেন।

গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরও জোরাল ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে মালালা বলেন, আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র গাজায় সংঘটিত গণহত্যা বন্ধে, যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

গাজা ইস্যুতে দীর্ঘদিন চুপ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মালালা বলেন, এ অভিযোগগুলো তথ্যভিত্তিক নয়। জনসমক্ষে থাকা ব্যক্তিদের সবসময়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য যাচাই না করে অভিযোগ তোলেন।

তিনি জানান, আমি ২০১৪ সাল থেকে গাজা বিষয়ে কথা বলে আসছি। আমি বিভিন্ন সময় এই সংকট নিয়ে সোচ্চার হয়েছি, মানবিক সহায়তায় কাজ করেছি।

মালালা জানান, তিনি ২০১৪, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে গাজার শিশুদের জন্য স্কুল নির্মাণে অনুদান দিয়েছেন এবং বর্তমানে শিশুদের সহায়তা করা অনেক সংগঠনকে জরুরি অনুদান দিয়েছেন।

তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি নির্যাতন নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মালালা বলেন, আফগান নারীরা যে দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা অমানবিক। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই, তারা যেন নারীদের অধিকারে আরও সোচ্চার হয় এবং তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায়।

সামিটে বক্তব্যের শেষভাগে মালালা বলেন, আমরা সবাই একই কণ্ঠস্বর — মানবাধিকারের, শান্তির এবং ন্যায়ের পক্ষে। আমরা সবাই একই লক্ষ্যের জন্য লড়ছি।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Israel in defense missile crisis
ইসরায়েলে ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইরানের

প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে ইসরায়েল

প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে ইসরায়েল
* ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প * আত্মসমর্পণ করবে না ইরান, চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না: খামেনি * তেহরানের কাছে মোসাদের গোপন ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি * ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

ইসরায়েল বর্তমানে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ‘অ্যারো ইন্টারসেপ্টর’-এর সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার সক্ষমতা এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে।

পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ওয়াশিংটন বেশ কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলের এই সক্ষমতা সংকট সম্পর্কে অবগত। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষাপ্রণালী মোতায়েন করছে।

তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের গোলাবারুদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।

এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ‘তাদের শক্তিশালী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢাল ভেঙে দেশটির আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে।’

গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল হঠাৎ ইরানে হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এ ছাড়া নারী–শিশুসহ বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইরান আত্মরক্ষার্থে বড় পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড।

তেহরান, হাইফা ও অন্যান্য শহরে থাকা সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়।

সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে- ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।

আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল: ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’

অন্যদিকে গত কয়েক ঘণ্টায় দেশটির বিমানবাহিনীর ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ— ‘সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র’ এবং দেশটির ‘বেশ কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ দিনে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩২৬ জন নাগরিক।

এদিকে গতকাল বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তেহরান থেকে এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তেহরানের পূর্বাঞ্চলে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

তেহরানের কাছে মোসাদের গোপন ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তেহরানের উপকণ্ঠে একটি তিন তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পরিচালিত একটি গোপন ড্রোন ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানার খোঁজ পেয়েছে।

ইরানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভির এক খবরে এমনটা দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত রোববার ইরানি পুলিশ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে ড্রোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, যেমন পাখা ও কাঠামোর অংশ আর ধাতব সরঞ্জাম রয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ ড্রোন তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাড়ির ভেতরেই ড্রোন তৈরি হচ্ছিল। সেখানে যন্ত্রাংশ তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রোন কারখানার সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের আগের একটি স্বীকারোক্তি মিলে যায়।

পশ্চিমা গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, মোসাদ কর্মকর্তারা আট মাস ধরে ইরানে ড্রোন পাচার করছিলেন, যাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোয় হামলা চালানো যায়।

ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি তা বলতে পারি না।’ পরে আবার তিনি বলেন, ‘আমি করতেও পারি, না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই’। গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসির

ট্রাম্প বলেন, ইরানের আলোচকরা হোয়াইট হাউসে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এটা কঠিন। আমি নিশ্চিত নই যে সংঘাত কতটা দীর্ঘ হবে, কারণ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘দুটি খুব সাধারণ শব্দ- নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। ট্রাম্পের দাবি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য খারাপ।

এর আগে ট্রাম্প তেহরানের কাছ থেকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ দাবি করেছেন। এই মন্তব্যের ফলে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও জোর দিয়ে বলা হয়েছে এই অভিযানে তাদের কোনও হাত নেই।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গত মঙ্গলবার পশ্চিম ইরানে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে কমপক্ষে দুটি হামলা চালিয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যের কয়েকদিন পর, ট্রাম্প ইসরায়েলকে শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার পথ পরিবর্তন করেছেন বলে মনে হচ্ছে।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য কমে আসছে, তবে ‘আপাতত’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। তিনি ইরানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। খামেনি ইরানের কোথায় আছেন সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য আছে বলেও জানান ট্রাম্প। প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, খামেনি ‘আপাতত’ নিরাপদ আছেন।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আরো বলেছেন, ‘আমরা চাই না, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কিংবা আমেরিকার সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক।

আত্মসমর্পণ করবে না ইরান: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে ইরান। দেশটি দৃঢ় থাকবে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও। তিনি আরও বলেন, ইরান কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।

গতকাল বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত দেওয়া ভাষণে খামেনি এ কথা বলেন। দেশটির সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।

খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করে বলেন, যারা ইরান ও এর ইতিহাস জানে তারা জানে, ইরানিরা হুমকির ভাষার প্রতি ভালো সাড়া দেয় না। আর আমেরিকানদের জানা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপ্রতিরোধ্য পরিণতি বয়ে আনবে।

ট্রাম্পকে সতর্ক করে তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলায় অংশ নেয়, তাহলে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে।

ইসরায়েলকে সহায়তা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে’ সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে মারিয়া জাখারোভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের কিনারায় রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোয় ইসরায়েলের প্রতিদিনকার হামলার কারণে বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয়’ থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে।’

এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এমনকি অন্য কোনোভাবেও যেন সহায়তা না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়েছে মস্কো।

রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, গতকাল বুধবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া বা এমনকি এই ধরনের ‘অনুমানমূলক বিকল্প’ বিবেচনা করার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন।

তিনি বলেছেন, ‘এটি এমন একটি পদক্ষেপ হবে, যা পুরো পরিস্থিতিকে আমূল অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

তেল আবিব ও জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা

ইসরায়েলের জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস গতকাল বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিন বন্ধ থাকবে। একই সময় দেশটির রাজধানী তেল আবিবে দূতাবাসের কনস্যুলার কার্যক্রমও স্থগিত থাকবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সব মার্কিন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসস্থানের ভেতরে এবং কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেবেন।

তবে ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার জন্য মার্কিন নাগরিকদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে দূতাবাস আরও জানায়, ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের তেল আবিবের আশেপাশের এলাকাগুলো খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ড।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
3 Bangladeshis from Libya have been brought back to the country

লিবিয়া থেকে ১৫৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে ১৫৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়ার তাজোরা ডিটেনশন সেন্টারে আটক কাগজপত্রবিহীন ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গত মঙ্গলবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইট (ইউজে ০২২২) তাদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি যৌথভাবে সমন্বয় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে/ অবৈধভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন এবং মানবপাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

ঢাকায় বিমানবন্দরে সরকার এবং আইেএমের প্রতিনিধি দল ফেরত আসা ব্যক্তিদের স্বাগত জানান। প্রত্যেককে ৬ হাজার টাকা, খাদ্যসামগ্রী, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আশ্রয় প্রদান করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তারা এই ধরনের বিপজ্জনক যাত্রা থেকে বিরত থাকার জন্য অভিবাসী ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

লিবিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
India Trump will not accept third party brokerage in the Kashmir issue

কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের দালালি মানবে না ভারত, ট্রাম্পকে মোদি

কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের দালালি মানবে না ভারত, ট্রাম্পকে মোদি

গত মে মাসে চার দিনের সংঘাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার ‘কাশ্মীর সমস্যা’ সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের দালালি কখনোই মানবে না। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিক্রম মিশ্রি জানান, গত মঙ্গলবার মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান আবারও ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। তবে ভারতের এমন বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, মোদি ট্রাম্পকে ‘পরিষ্কারভাবে’ জানিয়েছেন, সংঘাত চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি বা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা নিয়ে কোনো পর্যায়েই কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর ভারত ও পাকিস্তান সংঘাত বন্ধ করেছে। তার দাবি, তিনি বাণিজ্য চুক্তিকে চাপ হিসেবে ব্যবহার করে তাদের রাজি করিয়েছেন। তবে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন মধ্যস্থতার দাবিকে সমর্থন করলেও ভারত তা অস্বীকার করেছে।

মিশ্রি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা সরাসরি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চ্যানেলের মাধ্যমে হয়েছিল।

এর আগে গত মাসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি তাদের (ভারত ও পাকিস্তান) বলেছিলাম, আসো, আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা করব। যুদ্ধ বন্ধ করো। যুদ্ধ বন্ধ করো। যদি তোমরা যুদ্ধ বন্ধ করো, আমরা ব্যবসা করব। যদি না করো, আমরা তোমাদের সঙ্গে কোনো ব্যবসা করব না।’

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। উভয় দেশই পুরো অঞ্চলের দাবি করে, তবে আংশিকভাবে এটি শাসন করে। ভারত কাশ্মীরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনাও বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। ফলে কয়েক দশক ধরে একাধিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হলেও কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি প্রতিবেশী দুই দেশ।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন মধ্যস্থতা ছিল না, ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদিভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন মধ্যস্থতা ছিল না, ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদি।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কাশ্মীর ইস্যু। ওই হামলায় ২৫ পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এর পর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।

পেহেলগাম হামলার জেরে ৬-৭ মে রাতে অপারেশন সিঁদুর নামে একটি অভিযান পরিচালনা করে ভারত। ৭ মে রাতে ভারতের হামলার জবাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান। ভারতের দাবি, এই অভিযানে তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধ্যুষিত আজাদ কাশ্মীরের ভেতরে ৯টি সন্ত্রাসী আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যার মধ্যে লস্কর-ই-তাইয়েবার সদর দপ্তরও ছিল।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান চার দিনের সংঘাত যখন ভয়াবহ মোড় নিচ্ছিল, তখন আকস্মিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ মে ঘোষণা দেন, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির পরই উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত বন্ধ হয়।

প্রয়োজনে পাকিস্তানের আরও ভেতরে ঢুকে হামলা চালাবে ভারত।

ট্রুথ সোশ্যালের একটি পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি তোমাদের দুজনের সঙ্গেই কাজ করব। দেখব হাজার বছরের কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোনো সমাধানে আসা যায় কি না।’ প্রসঙ্গত, কাশ্মীর সমস্যা হাজার বছরের নয়। এই সমস্যার শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে।

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছিলেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে হয়েছে এবং প্রায় ‘তিন ডজন দেশ’ এতে জড়িত ছিল। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ভারত বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিবৃতি দিল্লির ‘রেড লাইন’ পরীক্ষা করেছে। দিল্লি সব সময় তার পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে দাবি করে এসেছে তারা যেন ভারত ও পাকিস্তানকে সমানভাবে বিবেচনা না করে। তারা পশ্চিমা নেতাদের একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তান সফর করা থেকেও নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে প্রায়শই ভারত ও পাকিস্তানকে সমানভাবে দেখা যায়। অনেকের ধারণা, এটি দিল্লির কূটনৈতিক মহলে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওয়াশিংটন ও দিল্লির মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তি আলোচনাকে এটি প্রভাবিত করবে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
The most Jewish Jews after Israel are in Iran

ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ইরানে

তাদের নিয়ে ভাবছে না নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ইরানে

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল দাবি করে, ইহুদিদের ব্যাপারে তারা সব সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক। দেশটিতে নাগরিকত্ববিষয়ক বিধিবিধানের দুটি প্রধান আইন রয়েছে- ১৯৫০ সালের ‘রিটার্ন-ল’ এবং ১৯৫২ সালের ‘নাগরিকত্ব আইন’।

রিটার্ন-ল অনুযায়ী, বিশ্বের যেকোনো ইহুদি বিনা শর্তে ইসরায়েলে অভিবাসনের অধিকার রাখেন এবং তাৎক্ষণিক ইসরায়েলের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। অথচ, ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদির বাস যেসব দেশে তার মধ্যে অন্যতম ইরানে। এই দেশেই এখনো নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি নেতানিয়াহু সরকার।

ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের উত্তাপে যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির, তখন সব মনযোগ ও আলোচনা থেকে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন ইরানে বসবাসরত ইহুদিরা। প্রায় ২ হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসের ধারক এই সম্প্রদায়টি আজও টিকে আছে ইরানের মূলধারার সমাজে। অথচ বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় তাদের অবস্থান ও উদ্বেগ প্রায় অনুপস্থিত।

বর্তমানে আনুমানিক ১৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার ইহুদি নাগরিক ইরানে বাস করছেন, যাদের অধিকাংশের বসবাস তেহরান, ইস্পাহান, শিরাজ, হামেদান ও তাবরিজের মতো শহরে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইহুদি জনগোষ্ঠী রয়েছে ইরানেই। দেশটির জাতীয় সংসদ ‘মজলিশে’ এই সম্প্রদায়ের জন্য একটি আসন সংরক্ষিত আছে।

ইহুদিদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবকাঠামোর উপস্থিতিও ইরানে সুপ্রতিষ্ঠিত। রাজধানী তেহরানে ছড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৫০টি সিনাগগ (ইহুদিদের প্রার্থনাগৃহ)। ইস্পাহানে আল-আকসা নামে একটি মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি বিখ্যাত সিনাগগ। ইরানে ইসলাম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের দুই ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি অবস্থানকে ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তেহরানে ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালিত একটি হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন।

ইরানের আবরিশামি সিনাগগের প্রবীণ রাব্বি ইয়োনেস হামামি লালেহজার এক সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে বলেছিলেন, ‘আমরা ২ হাজার ৭০০ বছর ধরে ইরানে বসবাস করছি। পারস্য রাজবংশের সময় থেকেই আমাদের ইতিহাস এই ভূখণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

পশ্চিম ইরানের হামেদান শহরে আজও বিদ্যমান রয়েছে এসথার ও তার চাচা মরদখাইয়ের সমাধি, যারা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বর্ণনায় পারস্য সম্রাট জার্শিসের (জেরেক্সেস) রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে ইরান ছিল ইহুদিদের নিরাপদ আশ্রয়। স্পেনের ‘ইনকুইজিশন’ বা ধর্মীয় নিপীড়নের সময় বহু ইহুদি ইরানে আশ্রয় পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর তাণ্ডব থেকে পলায়নরত বহু ইহুদি আশ্রয় নিয়েছিলেন তেহরানে।

তবে ইরানে ইহুদিদের ইতিহাস শুধু নিরাপদ সহাবস্থান আর ধর্মীয় সহনশীলতার গল্প নয়- এর মধ্যে রয়েছে কিছু কঠিন অধ্যায়ও। সাফাভি (১৬-১৮শ শতক) ও কাজার (১৯শ শতক) শাসনামলে বহু ইহুদিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই সময়গুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতা অনেকাংশেই সংকুচিত ছিল। আর ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর রাজনৈতিক পরিবেশের আমূল পরিবর্তনে ইরানে ইহুদিদের অবস্থান আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন নিরাপত্তা, পরিচয় ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে, ফলে বহু ইরানি ইহুদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশে স্থানান্তরিত হন।

মন্তব্য

p
উপরে