ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশে আশ্রয়কেন্দ্রের ওপর একটি বিশাল গাছ ভেঙে পড়ায় নয়জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আরও আটজন আহত হন।
স্থানীয় সময় রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রদেশের সোপ্পেং জেলার মাত্তাবুলু গ্রামের বুলু মাতানরে সাংস্কৃতিক অঞ্চলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তীব্র বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া থেকে বাঁচতে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন দর্শনার্থীরা।
সোপ্পেংয়ের পুলিশপ্রধান ইউসুফ উসমান এক লিখিত বিবৃতিতে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মৃতের সংখ্যা নয়জন এবং আহত হয়েছেন আটজন।’
আহত লোকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসে পুরোনো গাছটি উপড়ে গিয়ে ছোট ঘরগুলোর ওপর পড়ে, যেখানে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং উদ্ধারকাজ শুরু করে।
আরও পড়ুন:সামরিক আইন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে জেলহাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।
বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার এএফপি এ খবর জানায় ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করেন এবং সংসদে সেনা ও হেলিকপ্টার পাঠান, কিন্তু পরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশটির একাধিক সেনা ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক ট্যাংক দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও কাতার পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি সতর্ক করে বলেছেন, এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতি স্পষ্ট আঘাত। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরায়েলের দখলদারত্বের নীতি মধ্যপ্রাচ্যে আরও সহিংসতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অস্ত্র যাতে অন্য কোনো শত্রুর হাতে না যায় সে লক্ষ্যে ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, দামেস্ক অভিমুখে ইসরায়েলি ট্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন মিথ্যা। আইডিএফের সৈন্যরা বাফার জোনে অবস্থান করছে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে সিরিয়ার সামরিক অস্ত্র যাতে শত্রুর হাতে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে গত তিনদিন ধরে সিরিয়াজুড়ে সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
সোমবার রাতে সিরিয়ায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দু’শতাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
তবে মঙ্গলবার অন্তত তিনটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা বাফার জোন অতিক্রম করেছে।
সিরীয় একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ইতোমধ্যে কাতানা শহরে পৌঁছে গেছে। এই শহরটি বাফার জোন থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে ও দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার জোরদার ও সুরক্ষার লক্ষ্যে কাজ করে।
মঙ্গলবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়েছে, সোমবার বিকেলে মানবাধিকার কাউন্সিলের সাংগঠনিক অধিবেশনে ২০২৫ সালের কর্মকাণ্ড নির্ধারণী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেনেভায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার কাউন্সিলের ব্যুরোতে কাজ করবেন।
মানবাধিকার কাউন্সিলের কার্যালয়ে একজন প্রেসিডেন্ট এবং চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের (এপিজি) প্রতিনিধিত্বকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংস্থায় কাজ করার সময় এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
এপিজি সর্বসম্মতিক্রমে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থিতা সমর্থন করে এবং কাউন্সিলের বৃহত্তর সদস্যপদ বিবেচনার জন্য মনোনয়ন দেয়।
অবশেষে প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সমাপ্ত হয়, যখন বাংলাদেশ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য কাউন্সিল সদস্যদের সর্বসম্মত সমর্থন অর্জন করে।
২০০৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের এই মর্যাদাপূর্ণ মানবাধিকার সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস এবং বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ও ক্রমবর্ধমান প্রভাবের স্বীকৃতির আরেকটি উদাহরণ।
জ্ঞানের নানা শাখায় অবদান বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকা করেছে প্রভাবশালী বিজ্ঞান বিষয়ক ব্রিটিশ সাময়িকী ‘নেচার’। ২০২৪ সালের এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সাময়িকীটি সোমবার ‘দ্য রেভ্যুলিউশনারি ইকোনমিস্ট হু বিকাম দ্য আনলাইকলি লিডারস অফ বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখা তালিকাভুক্ত ১০ ব্যক্তির তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভের পর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ছাত্রনেতারা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। নেতৃত্বের কাজটি ড. ইউনূসের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ছয় দশকের কর্মজীবনে দারিদ্র্য বিমোচনে লড়াই করার জন্য ধারণার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার কাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের জন্য গবেষণা করা।
ড. ইউনূসের সঙ্গে ৩০ বছর ধরে কাজ করা অ্যালেক্স কাউন্টস বলেছেন, ‘তার বয়স আশির কোটায়। তবে তার শারীরিক ও মানসিক শক্তি এখনও অটুট। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ এবং তার যোগাযোগ পদ্ধতিও দুর্দান্ত।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ইউনূস। এরপর পড়াশুনার জন্য ১৯৬০-এর দশকে পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি পরিবেশগত অর্থনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস জর্জেসকু-রোগেনের অধীনে পড়াশোনা করেন। তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন ইউনূস। দেশ গঠনে নিজের ভূমিকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি। ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রোক্রেডিটের জন্য পরিচিত পেয়েছেন ড. ইউনূস। ওই ক্ষুদ্রঋণের পরিমাণ ১০০ ডলার বা তার চেয়ে কম। তিনি দেখিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ সমাজের প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য বদলে কেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক থাকাকালীন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন ড. ইউনূস। তিনি একটি মডেল তৈরি করেন যেখানে ব্যবসার মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে খুব অল্প পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে এই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে তার এই উদ্ভাবন। তবে এর অনেক সমালোচকও রয়েছে।
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের সংস্কারে নেতৃত্ব দেয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ড. ইউনূস কি ছাত্রদের সংস্কারের দাবি পূরণে সক্ষম হবেন? বিশেষ করে দুর্নীতির অবসান, নাগরিকদের অধিকার, কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কি সফল হবেন?
কার্যত সবাই এখন এ প্রশ্নটি করছে। এসবের পাশাপাশি ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
হোয়াইট হাউসে রোববার দেয়া বক্তব্যে জো বাইডেন বাশারের ক্ষমতাচ্যুতিকে সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনে সিরীয় নাগরিকদের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। এই কাজে সিরীয় নাগরিকদের সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।’
সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর উত্থানের বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘সিরীয় সরকারের পতন ন্যায়বিচারের মৌলিক ফল। সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ভোগান্তিতে থাকা জনগণের জন্য এই বিজয় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেয়া প্রেসিডেন্ট বাশারের পরিণতি কী হওয়া উচিত- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, ‘বাশার আল আসাদকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
আরও পড়ুন:বর্তমানে বিশ্বে মাত্র দু’জন নেতা আছেন। তাদের একজন আমি নিজে এবং অন্যজন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ান এমনটা মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা ইতার তাস।
এরদোয়ান বলেছেন, ‘আমি এটা বলছি না যে কারণ তাদের মধ্যে আমিও একজন আছি। ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় আছি, পুতিনের প্রায় কাছাকাছি। অন্যরা চলে গেছেন। এবং আমরা চাই আমাদের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
‘রাজনীতিতে সংলাপ অব্যাহত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের পদত্যাগের পর জার্মানিতে রাজনীতিও শেষ হয়ে গেছে।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারকে আমি খুব সম্মান করতাম। আমাদের প্রতিও তার সম্মানবোধ ছিল ভিন্ন রকমের। সত্যিই তিনি ছিলেন খুব ভালো একজন নেতা। ‘যেমন ধরুন- রমজানের সময় তিনি আমাদের ইফতারির টেবিলে বসে কখনও বিয়ার পান করতেন না। তিনি মুসলমানদের প্রতি খুব সম্মান দেখাতেন।’
এরদোয়ান আরও বলেন, ‘শ্রোয়েডারের সঙ্গে আমাদের সংলাপ এখনও চলে এবং তিনি মাঝে মাঝে তুরস্ক সফরে এলে তখনও তার সঙ্গে আমাদের সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা হয়।’
আরও পড়ুন:সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। আর এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রধানের নাম আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি।
এইচটিএস রোববার এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জালিম শাসক বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মধ্য দিয়ে এক অন্ধকার যুগের সমাপ্তি ঘটল। আর সূচনা হলো এক নতুন যুগের।
বাশার আল-আসাদের দেশ ছেড়ে পালানো, তার টানা দুই যুগের সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচটিএসের প্রধান জোলানিকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সবচেয়ে কার্যকর’ ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জোলানি।
এইচটিএস ঘোষিত লক্ষ্যই ছিল বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা। এইচটিএস আজ এই লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দিল।
রোববার বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে জোলানি রাজধানীতে সব সামরিক বাহিনীকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আশপাশে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জোলানির জন্ম একটি সচ্ছল পরিবারে, ১৯৮২ সালে। তিনি রাজধানী দামেস্কের অভিজাত এলাকা মাজেহে বেড়ে ওঠেন। শিক্ষা জীবনে তিনি বরাবরই মেধার স্বাক্ষর রেখে এসেছেন।
জোলানির প্রকৃত নাম আহমেদ আল-শারা। তিনি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম পিবিএসকে বলেন যে তার গৃহীত নাম আল-জোলানি, গোলান (জোলান) হাইটসে তার পরিবারের শেকড়ের স্মারক। তিনি জানান, ১৯৬৭ সালে এই অঞ্চলটি ইসরায়েল সংযুক্ত করে নেয়ার পর তার দাদাকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
দামেস্কে থাকাকালে জোলানি ঠিক কী করতেন তা জানা যায়নি। মিডলইস্ট আই নিউজ ওয়েবসাইট জানায়, ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের পর জোলানি প্রথম জিহাদি চিন্তাধারার দিকে আকৃষ্ট হন। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসনের পর তিনি যুদ্ধে অংশ নিতে সিরিয়া ত্যাগ করেন।
আবু মুসাব আল-জারকাভির নেতৃত্বে ইরাকে আল-কায়েদায় যোগদান করেন জোলানি। ২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে পাঁচ বছর আটক রাখা হয়।
গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে বাশার আল-আসাদ সহিংসতার পথ বেছে নেন। এর জেরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
জোলানি দেশে ফিরে আসেন এবং আল-কায়েদার সিরিয়ার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর আমির আবু বকর আল-বাগদাদির আনুগত্য অস্বীকার করে আল-কায়েদার আইমান আল-জাওয়াহিরির প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন।
এক সময় জোলানির মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আল-কায়েদার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ‘বিশ্বব্যাপী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার পথ থেকে সরে আসেন। এমন কিছুর পরিবর্তে সিরিয়া সীমান্তের ভেতরে নিজের গোষ্ঠীর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করেন তিনি।
জোলানি ২০১৫ সালের মে মাসে বলেছিলেন যে আইএসের বিপরীতে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা তার নেই। তিনি আরও ঘোষণা করেছিলেন যে আসাদ পরাজিত হলে সংখ্যালঘু আলাভিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক আক্রমণ হবে না।
জোলানির এই পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে জোলানির গোষ্ঠীটি বহুজাতিক বা আন্তঃদেশীয় গোষ্ঠীর বদলে একটি জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বাশার আল-আসাদ সরকার ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। সিরিয়ার এ অঞ্চল তখনও বিদ্রোহীদের দখলে। চলতি বছর জোলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আল-নুসরা বিলুপ্ত করেন। গঠন করেন নতুন সংগঠন জাভাত ফাতেহ আল-শাম।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে আলেপ্পো থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা ইদলিবে পালিয়ে আসেন। এ সময়ে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে জোলানি গঠন করেন এইচটিএস।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জোলানি বলেছিলেন যে তার আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো আসাদকে উৎখাত করা।
জোলানি এখন স্পটলাইটে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার, বিবৃতিও দিচ্ছেন। সিরিয়ায় আগামী দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে বা হতে পারে তার ইঙ্গিত পেতে জোলানি বক্তব্য শোনার জন্য সারাক্ষণ মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে আছেন সিরীয়রা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য