২০ মার্চ, ২০০৩। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন মারণাস্ত্র ধ্বংস করার নামে তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরাকে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট।
তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দাবি ছিল, ইরাকের ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র রয়েছে। আর তা থেকে ইরাকি জনগণকে মুক্ত করতে সেনা অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।
হামলা চালানোর আগে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বুশ বলেন, আমেরিকান এবং জোট বাহিনী ইরাকের জনগণকে মুক্ত করতে এবং বিশ্বকে মারাত্মক বিপদ থেকে রক্ষা করতে সামরিক অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বাস্তবতা হলো, ওই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ২০ বছর পার হয়ে গেলেও ইরাকে আজ পর্যন্ত কএনা মারণাস্ত্র পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এই অভিযোগেই ইরাকে হামলা চালানো হয়। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ঝুলানো হয় ফাঁসির দড়িতে।
সাদ্দামবিহীন ইরাকে জঙ্গি উত্থান হয়েছে। পড়ে গেছে দেশটির অর্থনীতিও। দেশটিতে একদিক দিয়ে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব, আরেকদিকে বেড়েছে ইরানের প্রভাবও।
যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালানোর পর ২ লাখ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। সেখানে আমেরিকার সেনা নিহত হয়েছে মাত্র সাড়ে চার হাজার।
এ যুদ্ধের ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। আর কেনই বা এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা নিয়েও তৈরি হয়েছে হাজারও প্রশ্ন।
ইরাকে যুদ্ধ শুরুর আগেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে হামলার ভিত্তি গড়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা। সাদ্দাম ১৯৯০ সালে প্রতিবেশী আরেক তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে আক্রমণ করে বসেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশের বাবা জর্জ এইচডব্লিউ বুশ। তিনি ইরাকে স্বাধীন গণতন্ত্র চালুর পক্ষে ছিলেন। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নব্য রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা সাদ্দামকে সরানোর জন্য মোক্ষম সুযোগ পেয়ে বসেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলার আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যায় ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর। এর জের ধরেই তারা ইরাকসহ ওই অঞ্চলে গণতন্ত্র ও স্বাধীন করার বিষয়টি বড় করে সামনে আনে। ইরাকে হামলা চালানোর যুতসই ক্ষেত্র তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত সাদ্দামবিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে বুশ প্রশাসন।
ইরাকে হামলা চালিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। যুদ্ধ শুরুর ১৯ দিন পর অর্থাৎ ৯ এপ্রিল বাগদাদ দখল করে নেয় আমেরিকান জোট। নানা যুক্তি তুলে ইরাকি জনগণকে পক্ষে টেনে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জোট বাহিনী ফিরদস স্কয়ারে থাকা সাদ্দামের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে।
এ ঘটনার এক মাস না পেরুতেই ২০০৩ সালের ১ মে বড় সেনা অভিযান শেষ করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট।
এরপর ইরাকজুড়ে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় তখন অনেক আমেরিকান সেনা চাকরি হারান।
ওই বছরের শেষের দিকে সাদ্দামকে তার জন্মস্থান তিরকিট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয়েছিল- এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক সাদ্দাম হোসেন একটি গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই তাকে পাকড়াও করা হয়েছে।
সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর হামলাকারী বাহিনীর মদদপুষ্ট আদালতে তার বিচার করা হয়। গণহত্যা ও মানবাধিকার বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার দিনে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, মারণাস্ত্র থাকার অজুহাতে ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল, সাদ্দামকে গ্রেপ্তারের পর সেই বক্তব্য থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানায়, ইরাকে কোনো মারণাস্ত্র বা পরমাণু অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কমিশন ২০০৫ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরাক নিয়ে তাদের গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
সাদ্দামকে সরানোর পর ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন প্রভিশনাল অথরিটি নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। যার প্রধান ছিলেন পল ব্রেমার। এ সময় ইরাকে সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা ভেঙে দেয়া হয়। এছাড়া ইরাকে বহু বছর ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টিকেও সরকার গঠনে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়। এসময় দেশটিতে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য বেকার হয়ে পড়ে এবং সরকার ও প্রশাসনে শূন্যতা তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ইরাকিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাঝে হাজার হাজার ইরাকি প্রাণ হারান। দেশটিতে আইএস জঙ্গিবাদের উত্থান হয় এবং গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
সাদ্দামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি শিয়া ও কুর্দিদের ঘোর বিরোধী। সাদ্দাম-পরবর্তী সময়ে এই সম্প্রদায়গুলোকে ক্ষমতার অংশ বানাতে চেষ্টা চালাতে থাকে কোয়ালিশন প্রভিশনাল অথরিটি।
তারা ইরাক গভর্নিং কাউন্সিলে (আইজিসি) মুহাসা বা কোটাভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা চালুর কথা জানায়, যাতে শিয়া ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে আনুপাতিক হারে সরকারে রাখার কথা বলা হয়।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, এই ব্যবস্থাটি ২০০৩ সালের পর ইরাকের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী দলগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি সাম্প্রদায়িক বিভাজনগুলোকে আরও গভীর করে তোলে। যার জন্য আজও ভুগছে ইরাক ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো।
সংঘাতের মধ্যেই ২০০৫ সালে ইরাকে নির্বাচন হয়। এতে ক্ষমতায় আসে শিয়া সম্প্রদায়ের দল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নুরি আল মালিকি, যিনি একজন শিয়া মতাবলম্বী। এছাড়া স্পিকার ছিলেন সুন্নি ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন একজন কুর্দি।
ইরান ও তার সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সঙ্গে নুরির সুসম্পর্ক ছিল। ইরাকের সুন্নি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করতে সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতি এবং অকার্যকরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে ইরাকজুড়ে পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এক সময়ে আনবার ও ফালুজায় সুন্নি বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে শিয়া ধর্মীয় নেতা মুকতাদা আল-সদরের অনুসারীরা তৎপর হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে সহিংসতা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলে কড়া নিরাপত্তা আরোপ করায় তাদের মধ্যে কিছু মানুষ সে সময় আইএসকে সমর্থন করতে শুরু করে। বাড়তে থাকে আইএস-এর কলেবর।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালে তার সেনাদের ইরাক থেকে ফিরিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আইএস জঙ্গিদের উত্থান হয়। গোষ্ঠীটি ২০১৪ সালে স্বাধীন খিলাফত ঘোষণা করে। অবশ্য এর তিন বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী আইএস-কে অনেকটাই নির্মূল করতে সক্ষম হয়।
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের যৌথ হামলা ও তাদের প্রস্থানের পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় আন্দোলন দেখা দেয় ২০১৯ সালে। ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইরাক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। আন্দোলনকারীরা দেশটির সংসদকে একটি নতুন নির্বাচনী আইন গ্রহণ করতে বাধ্য করে। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় ছয় শতাধিক বিক্ষোভকারী।
ইরাকে ২০২০ সালে ওই আন্দোলন স্থিমিত হয়ে আসে। নেপথ্যের কারণ ছিল করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ।
যাহোক, আজকের ইরাক একটি জোট সরকার দিয়ে চলছে। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এই সরকারের অবস্থান যথেষ্টই দুর্বল। কেননা ক্ষমতাসীনরা ১৫ শতাংশেরও কম ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছে। বিক্ষোভে যোগ দেয়া অনেক ইরাকি নেতৃত্বহীন রাজনৈতিক দলের অংশ হয়েছেন, কেউ বা আবার সশস্ত্র উপায়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এতে জনসাধারণের স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক ইরাকি শিয়া নেতা আল সদরকে সমর্থন দিচ্ছেন। কারণ সদরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
গত বছরের আগস্টে সদরের সমর্থক ও শিয়াবিরোধীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে ৩০ জন নিহত হন। এ থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধের দুই দশক পরও অস্থিরতার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে ইরাক।
আরও পড়ুন:ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সীমান্তে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান বাহিনীর গুলিতে দুই সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্রটি।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে সীমান্তচৌকিতে গোলাগুলির সময় এ প্রাণহানি হয় বলে জানায় দেশটি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তালেবান বাহিনী বিনা উসকানিতে ইরানের ওপর হামলা চালায়। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ইরানের দুই সীমান্তরক্ষী নিহত ও দুই বেসামরিক নাগরিক আহত হন।
ইরান পুলিশের উপপ্রধান কাসেই রেজাই শনিবার জানান, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কের নীতি লঙ্ঘন করে সীমান্তচৌকিতে গুলি শুরু করে তালেবান।
তিনি ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সিকে (আইআরএনএ) বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকাল ১০টার দিকে আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনী সব ধরনের অস্ত্র দিয়ে জাবল সীমান্ত রেজিমেন্টের সাসোলি থানার দিকে গুলি চালাতে থাকে।’
কাসেম রেজাইয়ের ভাষ্য, ইরানের ‘সাহসী’ সীমান্তরক্ষীরা ‘বিনা উসকানিতে’ চালানো এ গুলির সমুচিত জবাব দিয়েছেন।
হামলার পর পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত প্রটোকল অনুযায়ী ইরানের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ার বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান চালিয়ে ১৬২ অভিবাসী নির্মাণশ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ১১৮ বাংলাদেশি রয়েছেন।
দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান বুকিট কিয়ারা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের মধ্যে মিয়ানমারের ২৩ জন, ইন্দোনেশিয়ার ১১ জন ও পাকিস্তানের ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন।
দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ‘ডিবিকেএল’ শুক্রবার তাদের ফেসবুক পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অভিযানে রয়্যাল মালয়েশীয় পুলিশ, নির্মাণশিল্প উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে।
আরও পড়ুন:ইরানের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের উদ্বেগের জবাব দিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্রটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজ অ্যাকাউন্টে শুক্রবার এক পোস্টে ইরানের অবস্থান তুলে ধরেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি।
ইরানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ইরান ‘খাইবার’ তথা ‘খোরামশহর ৪’ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমা রাষ্ট্র দুটি।
কানানি তার পোস্টে বলেন, ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন সরকার ইরানের বিভিন্ন শহর ও নিরীহ মানুষের ওপর যে ‘সামরিক আগ্রাসন’ ও বোমা হামলা চালিয়েছিল, তাতে উসকানি ও অস্ত্রের জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের। দেশ দুটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক। তারাই এখন ইরানের উন্নতি ও প্রতিরক্ষা শক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
কানানির ভাষ্য, পশ্চিমা সরকারগুলো ইরানকে শক্তিশালী অবস্থায় দেখতে চায় না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর খোররামশহর মুক্ত হওয়ার ৪১তম বার্ষিকীতে ইরান খাইবার নামের মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করে। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি।
খাইবার তরল জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এটি দেড় হাজার কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও সংখ্যাবৃদ্ধি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরানের এমন তৎপরতা জাতিসংঘের প্রস্তাবের লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন:তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রোববার অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে কমেছে নির্বাচনী উত্তাপ।
দেশটির ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানিয়েছে আল জাজিরা।
তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে। এর আগে অনেক ভোটারই প্রথম দফার মতো আগ্রহ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
তুরস্কের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু ইস্তাম্বুলের টোফেন এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে চা পানের সময় ৪৯ বছর বয়সী সোনার উগুরলু আল জাজিরাকে বলেন, ‘এটা অদ্ভুত অনুভূতি। আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। অথচ আমি জানি আরেক দফা আছে রোববার।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি আবার ভোট দেব, তবে বিষয়টি অদ্ভুত লাগছে। কারণ দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় সবকিছু অনেক শান্ত লাগছে।’
তুরস্কের ভোটারদের অনেকে মনে করছেন, দ্বিতীয় দফায় জয়ী হবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এর মধ্য দিয়ে তার ২০ বছরের শাসনকাল আরও ৫ বছর বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোলু পান প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডেই জিতেছিলেন এরদোয়ান।
ইস্তাম্বুলের চিহানগির এলাকার একটি কাপড়ের দোকানের স্বত্বাধিকারী ওলজাই বলেন, ‘১৪ মের (প্রথম দফা ভোটের দিন) আগে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম। মনে হচ্ছিল আমরা তার (রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান) হাত থেকে অবশেষে মুক্তি পাব, তবে এখন মনে হচ্ছে তাকে হারানো যাবে না।’
৩৪ বছর বয়সী এ ব্যক্তি বলেন, ‘ফের আগের মতো উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়া কঠিন। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টির সুরাহা হয়ে গেছে, তবে অবশ্যই আমি (ভোট) দেব। কারণ এটা আমার দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন:দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার সিয়াম রিপ এলাকায় শুক্রবার এক খামারিকে হত্যা করে দেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে ৪০টি কুমির।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
সিয়াম রিপ পুলিশের প্রধান মে স্যাভরির বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুমিরগুলো হামলে পড়ে লুয়ান ন্যামের ওপর।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পারিবারিক ঘেরে ডিম পাড়া কুমিরকে লাঠি দিয়ে একটি খাঁচা থেকে সরানোর চেষ্টা করছিলেন ৭২ বছর বয়সী ন্যাম। হঠাৎ সেই লাঠিতে কুমির কামড় দিলে পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা স্যাভরি জানান, হাতে থাকা লাঠিতে কুমিরের কামড়ের কারণে ন্যাম পড়ে যান ঘেরে। এর পরই একের পর এক কুমির এসে ঘিরে ধরে খামারিকে। সরীসৃপগুলো ন্যামের দেহ টেনে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। খামারির রক্তে সয়লাব হয়ে যায় ঘের।
বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, ন্যামের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রক্তের ওপর বিচরণ করছে কুমিরগুলো।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ন্যামের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সিয়াম রিপ পুলিশের প্রধান জানান, ন্যামের মরদেহে অসংখ্য কামড়ের চিহ্ন ছিল। তার দুই হাত ও এক পা কুমির খেয়ে ফেলে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কুমিরের হামলায় প্রাণ হারানো ন্যাম স্থানীয় কুমির খামারি সমিতির সভাপতি ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তাকে এ ব্যবসা ছাড়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছিল।
আরও পড়ুন:জাপানে বৃহস্পতিবার ছুরিকাঘাত ও গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যিনি একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাপানের নাগানো অঞ্চলের নাকানো শহরের কাছ থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনে চালানো এ হামলায় গভীর রাতে প্রাপ্তবয়স্ক এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই নারীকে ঘটনাস্থলে আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
পুলিশের এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, সন্দেহভাজনকে শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কিয়োদো নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সন্দেহভাজন তার বাবার বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা ধরে লুকিয়ে ছিলেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলাকারী শুরুতে কয়েকজনকে বড় ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে জরুরি কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন তিনি।
জাপানের মফস্বল এলাকাটিতে হামলার শুরু বৃহস্পতিবার বিকেলে। এতে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ৪৬ বছর বয়সী ইয়োশিকি তামাই ও ৬১ বছর বয়সী তাকু ইকেউচি।
আরও পড়ুন:কৌশলগত কারণে ইউক্রেন যুদ্ধে বাখমুত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সে কারণে রাশিয়া যেমন বাখমুতের পূর্ণ দখল নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ইউক্রেনও তেমনই শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া। ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে বাখমুতেই সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে।
গত ১০ মাস ধরে চলা লড়াইয়ের এক প্রকার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে এক সময়ে লবণ-খনির জন্য বিখ্যাত শহরটি। রাশিয়ার একের এক হামলায় শহরের বেশিরভাগ স্কুল, বাড়ি ও দোকানপাট ধুলায় মিশে গেছে।
এর মধ্যে রাশিয়া বাখমুতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করেছে। বিষয়টির উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সেনাবাহিনী ও ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
তবে ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাশিয়ার ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘বাখমুতে যুদ্ধের তীব্রতা কমলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছরপূর্তিতে ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত এক বছরে বাখমুতে ঘটা ধ্বংসযজ্ঞের স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস। সময়ের ধারাবাহিকতায় বাখমুতে ধ্বংসের মাত্রা বুঝতে সহযোগিতা করবে ছবিগুলো।
যুদ্ধের আগে বাখমুতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও বর্তমানে তা কয়েক হাজারে নেমে এসেছে।
রেড ক্রসের তথ্য অনুসারে, ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও বর্তমানে ১০ হাজারের মতো বেসামরিক, খুবই বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ইউক্রেনীয় নাগরিক সেখানে বসবাস করছেন।
কৌশলগত যুদ্ধের পরিবর্তে বর্তমানে বাখমুত যুদ্ধ প্রতীকী লড়াইয়ে রূপ নিচ্ছে। বছর পেরিয়ে চলা যুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সোলেদার শহর দখল ছিল প্রত্যক্ষভাবে রাশিয়ার প্রথম বড় অর্জন। সেই শহরটির দখল অবশ্য ক্রেমলিন বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। এবার কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহর দখলে নিতে পারলে তা হবে রুশ বাহিনীর বড় অর্জন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য