পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এতে ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ দলের প্রধানের পদটি ফাঁকা হচ্ছে। পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নির্ধারণে এখন আরেকটি নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। ভোট আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
এতে অংশ নেয়ার জন্য সহকর্মী টোরি এমপিদের কাছ থেকে অন্তত ১০০টি মনোনয়নের প্রয়োজন হবে প্রার্থীদের; যার অর্থ দৌড়ে তিনজনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। কারণ পার্লামেন্টে ৩৫৭ জন টোরি এমপি আছেন।
বাস্তবে দুই জনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; অথবা সম্ভবত একজন, যিনি দলীয় সদস্যদের ভোট ছাড়াই নেতা হয়ে উঠবেন।
এই লড়াইয়ে কে কে থাকবেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন, ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট, বরিস জনসন, কেমি ব্যাডেনোচ, সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস আলোচনায় থাকলেও, শুক্রবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ঋষি সুনাক
চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে বরিস জনসনকে নেতার পদ থেকে প্রতিস্থাপনের দৌড়ে ছিলেন ঋষি সুনাক। রক্ষণশীল এমপিদের সর্বাধিক সমর্থন জিতে লিজ ট্রাসের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রচারে তিনি সতর্ক করেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর (ট্রাসের) কর পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। তবে তার বার্তা পার্টির সদস্যদের কাছে অতোটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।
সুনাক একবারই রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার নির্বাচনি এলাকা থেকে ২০১৫ সালে এমপি হয়েছিলেন। ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম মানুষই তাকে সমর্থন করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজকোষের চ্যান্সেলর হয়েছিলেন তিনি।
লকডাউন চলাকালীন অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে করোনা মহামারি সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল সুনাককে।
স্ত্রীর কর বিষয়ক বিতর্কের কারণে খ্যাতি ক্ষুণ্ন হয় সুনাকের। এর কিছু দিনপর লকডাউন নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাকে।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন ইতোমধ্যে সুনাকের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে গ্রীষ্ম কাটিয়ে তার যোগ্যতার বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়নি৷’
পেনি মর্ডান্ট
পেনি মর্ডান্ট চলতি সপ্তাহের শুরুতে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। সেদিন তিনি পার্লামেন্টে একটি জরুরি প্রশ্নের সময় লিজ ট্রাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
আত্মবিশ্বাসী মর্ডান্টের মধ্যে অনেকেই নেতৃত্বের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। দলের নেতৃত্ব প্রশ্নে সবশেষ দৌড়ে ছিলেন মর্ডান্ট। সহকর্মীরা তাকে ভালোই সমর্থন দিয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়েন তিনি।
লিজ ট্রাসের সমর্থন নিয়ে হাউস অফ কমন্সের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন মর্ডান্ট। যার অর্থ, নতুন রাজার জন্য অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন মর্ডান্ট। ডেভিড ক্যামেরনের অধীনে সশস্ত্রবাহিনীমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এমপি জন ল্যামন্ট, মারিয়া মিলার, বব সিলি এবং ড্যামিয়ান কলিন্স সমর্থন করছেন মর্ডান্টকে।
বরিস জনসন
মন্ত্রী ও এমপিদের গণবিদ্রোহের মুখে জুলাইয়ে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এতে ডাউনিং স্ট্রিটে লকডাউন পার্টিসহ নানা বিতর্কের অবসান ঘটে। ক্রিস পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দলীয় সমালোচনায় পড়েন তিনি।
অক্সব্রিজের এমপি বিশেষাধিকার কমিটির তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১০ নম্বরে লকডাউনের বিধিনিষেধগুলো অনুসরণ করা হয়েছিল বলে তিনি কমন্সকে বিভ্রান্ত করেছেন। জনসনসহ অনেককে পরে কোভিডবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করা হয়েছিল।
এতসবের পরও এমপি এবং দলের সাধারণ সদস্যের মধ্যে জনসনের জনপ্রিয়তা আছে। তার দীর্ঘদিনের সমর্থক রাজনীতিবিদ নাদিন ডরিস মনে করছেন, জনসনের ফিরে আসা উচিত। কারণ তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট পেয়েছেন।
অন্যান্য এমপি যারা ইতোমধ্যে জনসনের ১০ নম্বরে ফিরে আসার পক্ষে এসেছেন তাদের মধ্যে আছেন, পল ব্রিস্টো, ব্রেন্ডন ক্লার্ক-স্মিথ, আন্দ্রেয়া জেনকিন্স এবং মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট।
কেমি ব্যাডেনোচ
সাম্প্রতিকতম নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেমি ব্যাডেনোচ ‘বিস্ময়কর’ সফল প্রার্থী। যদিও তিনি জিততে পারেননি তবে এতে তার প্রোফাইল দারুণ সমৃদ্ধ হয়েছে।
একজন জুনিয়র মন্ত্রী হয়েও সিনিয়র কনজারভেটিভ মাইকেল গভের সমর্থন জিতেছিলেন তিনি। তথাকথিত ‘ওক’ সংস্কৃতির (জাতিগত কুসংস্কার এবং বৈষম্য সম্পর্কে সতর্কতা) ওপর তার আক্রমণাত্মক অবস্থানের কারণে আলোচনায় আসেন ব্যাডেনোচ।
দক্ষিণ লন্ডনের উইম্বলডননে জন্ম ব্যাডেনোচের। বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র এবং নাইজেরিয়ায়। এই দুই দেশে তার মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মা লেকচারার ছিলেন।
পার্লামেন্টে আসার আগে তিনি স্যাফরন ওয়ালডেনের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক কউটস এবং দ্য স্পেক্টেটর ম্যাগাজিনে তিনি কাজ করেছেন। এখন তিনি সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তার পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে পদত্যাগ করেন ট্রাস। যদিও ব্র্যাভারম্যানের চলে যাওয়ার পেছনে ছিল বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। তারপরও ব্র্যাভারম্যানের পদত্যাগপত্র অভিবাসন নিয়ে মতবিরোধের ইঙ্গিত দেয়।
ব্র্যাভারম্যান সামাজিক ইস্যুতে তার দলের ডানপন্থীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন। তিনি বলতেন, অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা তার স্বপ্ন।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
সাবেক ব্যারিস্টার ব্র্যাভারম্যান একজন ব্রেক্সিট সমর্থক। বরিস জনসনের সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি। পদত্যাগের পর তিনি নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়িয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে তিনি বাদ পড়েন।
কেনিয়া এবং মরিশাস থেকে ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন তার বাবা-মা। দুজনেই জড়িত ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে। ব্র্যাভারম্যানের মা ১৬ বছর কাউন্সিলর ছিলেন।
ব্রেভারম্যান ছিলেন প্রথম ক্যাবিনেট মন্ত্রী যিনি আইন সংস্কারের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। সংস্কার হওয়া আইনে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বেতন পাবেন মন্ত্রীরা। এটা না হলে ব্র্যাভারম্যান পদত্যাগ করতেন বলে গুঞ্জন আছে।
বেন ওয়ালেস
নেতৃস্থানীয় অনেক টোরি দলের বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত হলেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে মোটামুটি সবাই নিরাপদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখেন।
তবে শুক্রবার বেন ওয়ালেস দলের নেতৃত্ব নির্বাচন ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জানিয়েছেন, বর্তমান দায়িত্বেই (প্রতিরক্ষামন্ত্রী) স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তিনি।
ওয়ালেস বলেন, ‘কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবে তিনি বরিস জনসনকেই যোগ্য মনে করছি। কারণ ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি সরকার গঠনে পর্যাপ্ত ম্যান্ডেট অর্জন করেছিলেন।
বরিস জনসনের জবাবদিহিতার অভাব ছিল স্বীকার করে ওয়ালেস বলেছেন, সমালোচনা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা বিভাগে বিনিয়োগের তার অনন্য রেকর্ড আছে।
সেনাবাহিনীর সাবেক এই সদস্য ইউক্রেন যুদ্ধের পর ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমর্থন করছে লন্ডন।
এর আগে দলের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় লিজ ট্রাসকে সমর্থন করেছিলেন বেন ওয়ালেস।
আরও পড়ুন:
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা পরোয়ানা অনুযায়ী কোনো দেশ তাকে গ্রেপ্তার করলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।
পুতিনের এই সহযোগী বুধবার এমন হুঁশিয়ারি দেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বরাবরই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা মেদভেদেভ।এরমধ্যে পরমাণু হামলারও হুমকি ছিল।
পুতিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মেদভেদেভ বলেন, ‘আসুন কল্পনা করা যাক । এটা স্পষ্ট যে, পুতিনকে গ্রেপ্তার করা এমন একটি পরিস্থিতি যা কখনই ঘটবে না , কিন্তু ধরুন সে যদি জার্মানিতে যায় ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাহলে কি হলো? রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
‘যদি এমনটি হয় তাহলে আমারা সর্বশক্তি দিয়ে তাদের চ্যান্সেলরের অফিসে হামলা করব। ’
গত শনিবার ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজ দেশে থাকতে পুতিনের গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নেই। যদি ক্রেমলিন তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করে তবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। তবে রাশিয়ার বাইরে কোনো দেশ চাইলে পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
ইউক্রেনে এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করছে রুশ সেনারা। এসময়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে খরচ হবে ৪১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, সময়ও দরকার হবে অন্তত ১০ বছর।
বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছে।
অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে যে অর্থ খরচ হবে তার একটি বড় অংশই যাবে বিভিন্ন শহর ও এলাকায় ধসে পড়ে ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরাতে বা পরিষ্কার করতে। এতেই লাগবে ৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, ন্যূনতম হিসাবে এ অর্থ খরচ হবে বলে ধরা হয়েছে। তবে যুদ্ধ যতদিন চলতে থাকবে খরচও বাড়বে।
গত সেপ্টেম্বরে অবশ্য এই খরচ ধরা হয়েছিল ৩৪৯ বিলিয়ন ডলার। এরপর এবার বিশ্ব ব্যাংক, ইউক্রেন সরকার, ইউরোপিয়ান কমিশন ও জাতিসংঘ এবার নতুন করে খরচের হিসাব দিলো।
প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধে ইউক্রেনের ২০ লাখ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ৬৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৬১টি শিশুসহ ৯৬৫৫ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আনা বজেরদে বলেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনে কয়েক বছর সময় লাগবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনও। যুদ্ধে প্রতিদিনই আসছে প্রাণহানির খবর।
পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়াকে এই হামলা বন্ধের অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ ছাড়া কয়েক দফা দুই দেশের বৈঠকেও আসেনি কোনো সমাধান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। বেড়েছে জ্বালানি, খাদ্যপণ্যসহ নানা পণ্যের দাম। ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
আরও পড়ুন:চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের রাশিয়া সফরে ইউরোপের পরাশক্তিটির সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত হয়েছে পূর্ব এশিয়ার বৈশ্বিক শক্তিটির।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যৌথ বিবৃতিতে সমালোচনা করেছেন পশ্চিমের।
এমন বাস্তবতায় সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। রাশিয়ার সঙ্গে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধরত দেশটিতে দ্রুত সময়ে ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়া সফরে মঙ্গলবার বন্ধুত্বের বেশ কিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। শি ও পুতিন পরস্পরকে প্রিয় বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বলে দাবি করেছেন।
দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে ম্লান করছে এবং ন্যাটো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নাক গলাচ্ছে।
ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে গত মাসে প্রকাশিত চীনের ১২ দফা প্রস্তাবের প্রশংসা করে সেটি প্রত্যাখ্যান করায় কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনা করেন পুতিন। অন্যদিকে শি যুদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ করেননি বললেই চলে। তিনি এ সংঘাতে চীন নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রাশিয়া ও চীনের এমন অবস্থানের সময় আইএমএফ জানিয়েছে, ইউক্রেনকে চার বছরে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার দিতে প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে সংস্থাটি। এ অর্থ বিধ্বস্ত অবকাঠামো মেরামত ও অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবনে কাজে লাগানো হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার জানিয়েছেন, ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দ্রুত ইউক্রেনের কাছে পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন সংকট নিরসনের যৌক্তিক পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেছেন, এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে না।
সোমবার রাশিয়ার মস্কোতে পা রাখার আগে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রুশ সংবাদপত্র রশিসকায়া গ্যাজেটায় লেখা নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেন।
শিকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার পর সৃষ্ট সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের আলোচনার ভিত্তি হতে পারে গত মাসে প্রকাশিত চীনের ১২ দফা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত দফাগুলোতে সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পরিহার, যুদ্ধবিরতি, শান্তি আলোচনা শুরু, মানবিক সংকট নিরসনসহ বিভিন্ন আহ্বান জানানো হয়।
শি বলেন, ‘(ইউক্রেন) সংকটের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো ও এর রাজনৈতিক সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে এই নথি (১২ দফা প্রস্তাব) ইতিবাচক বিষয় হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জটিল সমস্যার সহজ কোনো সমাধান নেই।’
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশটির ১২ দফায় যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন শি চিনপিং।
ইউরোপের দুই প্রতিবেশীর সংঘাতে চীন নিজেকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে, তবে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বজায় রেখেছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রথম কোনো বিশ্বনেতা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শি চিনপিং।
আরও পড়ুন:কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির চুক্তির মেয়াদ আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিশ্ববাজারে শস্যের সরবরাহ কমায় দাম বেড়ে যায়। সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম এ চুক্তি হয়। ওই সময় চুক্তির মেয়াদ ছিল ১২০ দিন।
মাঝে চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় রাশিয়া। তবে অনেক আলোচনার পর নভেম্বরেও আবারও চুক্তি নবায়ন করা হয়। যেটির মেয়াদ ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ শেষ হয়।
রাশিয়া বলেছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হলে কিছু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কমাতে হবে।
শনিবার জাতিসংঘ ও তুরস্ক চুক্তি নবায়নের কথা জানালেও মেয়াদ কতদিন বাড়ল তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ববাজারে রাশিয়ার খাদ্যপণ্য এবং সারের প্রসারের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি দ্য ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ নামের চুক্তিটি বিশ্বের বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহকারী দেশ। আবার রাশিয়া শীর্ষস্থানীয় সার রপ্তানিকারক দেশও।
ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী মিকোলা সোলস্কি জানিয়ুএছেন, জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মসূচির জন্য তার দেশ প্রায় ৫ লাখ টন গম সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। অনেকেরই প্রশ্ন এ পরোয়ানা বাস্তবায়ন হবে কি না আর হলেও তা কীভাবে সম্ভব?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজ দেশে থাকতে পুতিনের গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নেই। যদি ক্রেমলিন তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করে তবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। তবে রাশিয়ায় এ মুহূর্তে পুতিনের তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সেই হিসেবে পুতিনকে রাশিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা আইসিসির পক্ষে অসম্ভব।
তবে রাশিয়ার বাইরে থেকে গ্রেপ্তার হতে পারেন পুতিন। সে জন্য তাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোতে সফরে যাবেন না পুতিন। সুতরাং এসব মিলিয়ে বলা যেতে পারে রুশ প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা প্রায় অসম্ভব।
পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো ‘তাৎপর্য নেই’ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কোনো অর্থ আমাদের কাছে নেই। আইনগত দিক দিয়েও এর কোনো অর্থ নেই।’
ইউক্রেনে এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করছে রুশ সেনারা। এসময়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
শিশুদের বেআইনি নির্বাসন এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় বেআইনিভাবে স্থানান্তরের অভিযোগে পুতিনের গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। আন্তর্জাতিক এ আদালত একই অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা-বেলোয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
শুক্রবার এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিকে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো ‘তাৎপর্য নেই’ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কোনো অর্থ আমাদের কাছে নেই। আইনগত দিক দিয়েও এর কোনো অর্থ নেই।’
ইউক্রেনে এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করছে রুশ সেনারা। এসময়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
শিশুদের বেআইনি নির্বাসন এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় বেআইনিভাবে স্থানান্তরের অভিযোগে পুতিনের গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। আন্তর্জাতিক এ আদালত একই অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা-বেলোয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য