পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এতে ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ দলের প্রধানের পদটি ফাঁকা হচ্ছে। পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নির্ধারণে এখন আরেকটি নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। ভোট আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
এতে অংশ নেয়ার জন্য সহকর্মী টোরি এমপিদের কাছ থেকে অন্তত ১০০টি মনোনয়নের প্রয়োজন হবে প্রার্থীদের; যার অর্থ দৌড়ে তিনজনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। কারণ পার্লামেন্টে ৩৫৭ জন টোরি এমপি আছেন।
বাস্তবে দুই জনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; অথবা সম্ভবত একজন, যিনি দলীয় সদস্যদের ভোট ছাড়াই নেতা হয়ে উঠবেন।
এই লড়াইয়ে কে কে থাকবেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন, ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট, বরিস জনসন, কেমি ব্যাডেনোচ, সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস আলোচনায় থাকলেও, শুক্রবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ঋষি সুনাক
চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে বরিস জনসনকে নেতার পদ থেকে প্রতিস্থাপনের দৌড়ে ছিলেন ঋষি সুনাক। রক্ষণশীল এমপিদের সর্বাধিক সমর্থন জিতে লিজ ট্রাসের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রচারে তিনি সতর্ক করেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর (ট্রাসের) কর পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। তবে তার বার্তা পার্টির সদস্যদের কাছে অতোটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।
সুনাক একবারই রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার নির্বাচনি এলাকা থেকে ২০১৫ সালে এমপি হয়েছিলেন। ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম মানুষই তাকে সমর্থন করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজকোষের চ্যান্সেলর হয়েছিলেন তিনি।
লকডাউন চলাকালীন অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে করোনা মহামারি সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল সুনাককে।
স্ত্রীর কর বিষয়ক বিতর্কের কারণে খ্যাতি ক্ষুণ্ন হয় সুনাকের। এর কিছু দিনপর লকডাউন নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাকে।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন ইতোমধ্যে সুনাকের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে গ্রীষ্ম কাটিয়ে তার যোগ্যতার বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়নি৷’
পেনি মর্ডান্ট
পেনি মর্ডান্ট চলতি সপ্তাহের শুরুতে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। সেদিন তিনি পার্লামেন্টে একটি জরুরি প্রশ্নের সময় লিজ ট্রাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
আত্মবিশ্বাসী মর্ডান্টের মধ্যে অনেকেই নেতৃত্বের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। দলের নেতৃত্ব প্রশ্নে সবশেষ দৌড়ে ছিলেন মর্ডান্ট। সহকর্মীরা তাকে ভালোই সমর্থন দিয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়েন তিনি।
লিজ ট্রাসের সমর্থন নিয়ে হাউস অফ কমন্সের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন মর্ডান্ট। যার অর্থ, নতুন রাজার জন্য অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন মর্ডান্ট। ডেভিড ক্যামেরনের অধীনে সশস্ত্রবাহিনীমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এমপি জন ল্যামন্ট, মারিয়া মিলার, বব সিলি এবং ড্যামিয়ান কলিন্স সমর্থন করছেন মর্ডান্টকে।
বরিস জনসন
মন্ত্রী ও এমপিদের গণবিদ্রোহের মুখে জুলাইয়ে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এতে ডাউনিং স্ট্রিটে লকডাউন পার্টিসহ নানা বিতর্কের অবসান ঘটে। ক্রিস পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দলীয় সমালোচনায় পড়েন তিনি।
অক্সব্রিজের এমপি বিশেষাধিকার কমিটির তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১০ নম্বরে লকডাউনের বিধিনিষেধগুলো অনুসরণ করা হয়েছিল বলে তিনি কমন্সকে বিভ্রান্ত করেছেন। জনসনসহ অনেককে পরে কোভিডবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করা হয়েছিল।
এতসবের পরও এমপি এবং দলের সাধারণ সদস্যের মধ্যে জনসনের জনপ্রিয়তা আছে। তার দীর্ঘদিনের সমর্থক রাজনীতিবিদ নাদিন ডরিস মনে করছেন, জনসনের ফিরে আসা উচিত। কারণ তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট পেয়েছেন।
অন্যান্য এমপি যারা ইতোমধ্যে জনসনের ১০ নম্বরে ফিরে আসার পক্ষে এসেছেন তাদের মধ্যে আছেন, পল ব্রিস্টো, ব্রেন্ডন ক্লার্ক-স্মিথ, আন্দ্রেয়া জেনকিন্স এবং মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট।
কেমি ব্যাডেনোচ
সাম্প্রতিকতম নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেমি ব্যাডেনোচ ‘বিস্ময়কর’ সফল প্রার্থী। যদিও তিনি জিততে পারেননি তবে এতে তার প্রোফাইল দারুণ সমৃদ্ধ হয়েছে।
একজন জুনিয়র মন্ত্রী হয়েও সিনিয়র কনজারভেটিভ মাইকেল গভের সমর্থন জিতেছিলেন তিনি। তথাকথিত ‘ওক’ সংস্কৃতির (জাতিগত কুসংস্কার এবং বৈষম্য সম্পর্কে সতর্কতা) ওপর তার আক্রমণাত্মক অবস্থানের কারণে আলোচনায় আসেন ব্যাডেনোচ।
দক্ষিণ লন্ডনের উইম্বলডননে জন্ম ব্যাডেনোচের। বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র এবং নাইজেরিয়ায়। এই দুই দেশে তার মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মা লেকচারার ছিলেন।
পার্লামেন্টে আসার আগে তিনি স্যাফরন ওয়ালডেনের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক কউটস এবং দ্য স্পেক্টেটর ম্যাগাজিনে তিনি কাজ করেছেন। এখন তিনি সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তার পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে পদত্যাগ করেন ট্রাস। যদিও ব্র্যাভারম্যানের চলে যাওয়ার পেছনে ছিল বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। তারপরও ব্র্যাভারম্যানের পদত্যাগপত্র অভিবাসন নিয়ে মতবিরোধের ইঙ্গিত দেয়।
ব্র্যাভারম্যান সামাজিক ইস্যুতে তার দলের ডানপন্থীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন। তিনি বলতেন, অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা তার স্বপ্ন।
সাবেক ব্যারিস্টার ব্র্যাভারম্যান একজন ব্রেক্সিট সমর্থক। বরিস জনসনের সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি। পদত্যাগের পর তিনি নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়িয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে তিনি বাদ পড়েন।
কেনিয়া এবং মরিশাস থেকে ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন তার বাবা-মা। দুজনেই জড়িত ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে। ব্র্যাভারম্যানের মা ১৬ বছর কাউন্সিলর ছিলেন।
ব্রেভারম্যান ছিলেন প্রথম ক্যাবিনেট মন্ত্রী যিনি আইন সংস্কারের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। সংস্কার হওয়া আইনে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বেতন পাবেন মন্ত্রীরা। এটা না হলে ব্র্যাভারম্যান পদত্যাগ করতেন বলে গুঞ্জন আছে।
বেন ওয়ালেস
নেতৃস্থানীয় অনেক টোরি দলের বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত হলেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে মোটামুটি সবাই নিরাপদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখেন।
তবে শুক্রবার বেন ওয়ালেস দলের নেতৃত্ব নির্বাচন ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জানিয়েছেন, বর্তমান দায়িত্বেই (প্রতিরক্ষামন্ত্রী) স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তিনি।
ওয়ালেস বলেন, ‘কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবে তিনি বরিস জনসনকেই যোগ্য মনে করছি। কারণ ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি সরকার গঠনে পর্যাপ্ত ম্যান্ডেট অর্জন করেছিলেন।
বরিস জনসনের জবাবদিহিতার অভাব ছিল স্বীকার করে ওয়ালেস বলেছেন, সমালোচনা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা বিভাগে বিনিয়োগের তার অনন্য রেকর্ড আছে।
সেনাবাহিনীর সাবেক এই সদস্য ইউক্রেন যুদ্ধের পর ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমর্থন করছে লন্ডন।
এর আগে দলের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় লিজ ট্রাসকে সমর্থন করেছিলেন বেন ওয়ালেস।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে শুক্রবার রাতে কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দুই দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শোক পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় চার ব্যক্তিকে।
বন্দুক হামলার পর জড়িত সবাইকে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রোববারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কনসার্ট শুরুর আগে হলে আগত লোকজনের ওপর ওই হামলায় প্রাণ যায় তিন শিশুসহ ১৩৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হন ১৮২ জন।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি এখনও হাসপাতালে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দুক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে নিজ বাসভবন এলাকার একটি গির্জায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুতিন।
এর আগে ঘটনাস্থল ছয় হাজার ২০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রোকাস সিটি হলের বাইরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুশ নাগরিকরা। এ হলে সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’ পারফর্ম শুরু করার আগে হামলা চালান চার বন্দুকধারী।
বিশ্বজুড়ে নিন্দিত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), তবে পুতিন তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ না করে বলেছেন, হামলাকারীরা পালিয়ে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যে চার বন্ধুকধারী হামলা চালিয়েছে সেই চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৩৩ জনকে হত্যা ও ১৪০ জনের বেশি মানুষকে আহত করার ওই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত।
পুতিন বলেছেন, সবমিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বন্ধুকধারী ইউক্রেনে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হামলাকারীদের ইউক্রেনে সরিয়ে নেয়ার জন্য সীমান্তে প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
ভয়াবহ এ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন।
শনিবার টেলিগ্রামে আইএসের প্রচারমাধ্যম আমাক চার মুখোশধারীর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে এরাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অবশ্য আইএসের দাবি নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর শুক্রবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আসা লোকজনের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। ‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত হওয়া কনসার্টে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় তিনি রোববার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
টেলিভিষণে দেয় ভাষণে পুতিন বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার পর চার বন্দুকধারী ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সীমান্তে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে তারা ধরা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুসারে তারা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি রাখা ছিল।
‘তারা যে-ই হোক, যারাই তাদের নির্দেশ দিক, আমি আবারও বলছি, যারা সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিয়েছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করব; তাদের শাস্তি দেব।’
দেশের জনগণের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না।’
রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সার্ভিসের দাবি, হামলাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টার আগে ইউক্রেনে নিজেদের লোকজনের সঙ্গে ‘সংযুক্ত’ ছিল।
তবে রাশিয়ার এ দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভ। অবশ্য তাদের আশঙ্কা, এ ঘটনার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।
শুক্রবার ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সের কনসার্ট হলে বন্দুক হামলা চালান ছদ্মবেশী হামলাকারীরা। গুলি করার পর ভবনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক ছিটিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কনসার্টে আসা লোকজনের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান বন্দুকধারীরা, যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, (মুসলিম বিরোধী) বিভিন্ন দেশে তাদের নিয়মিত হামলার অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইএসের কোন আঞ্চলিক সংগঠনটি এ হামলা করেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি সংগঠনটি।
ভেরিফায়েড ভিডিওতে দেখা যায়, হলে নিজেদের আসন গ্রহণ করছেন লোকজন। এরপর আর্তচিৎকারের সঙ্গে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ পাওয়া যায়। ওই সময় লোকজনকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন বন্দুকধারীরা। ওই সময় কনসার্ট হলে রক্তের মধ্যে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর গতকালের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আগত লোকজনের ওপর গুলি ছোড়েন বন্দুকধারীরা।
‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন:কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার এ তথ্য বিশ্ব মিডিয়াকে জানিয়েছে।
তদন্তকারী কমিটি আরও জানিয়েছে, এখনও ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসবের আমেজে চলছিল কনসার্ট। সেখানে হামলা হয় দুর্বৃত্তদের। রাশিয়ার মস্কোর এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক। এই হামলাকে পরিকল্পিত বলছে রাশিয়া।
এদিকে ক্রেমলিনের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন।
এর আগে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হামলায় এখন পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তার আগে, নিহতের সংখ্যা ৯৩ জন বলে জানানো হয়েছিল।
এ ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ হামলায় কারা জড়িত তেমন কিছুই নিশ্চিত করেনি।
কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি এটি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কিউবাসহ বিশ্বনেতারা।
আরও পড়ুন:মস্কোর উপকণ্ঠে কনসার্ট হলে শুক্রবারের প্রাণঘাতী হামলার বেশ আগে চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়াকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ক্রোকাস সিটি হলে ছদ্মবেশী বন্দুকধারীদের হামলায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত ও প্রায় ১৫০ জন আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হোয়াইট হাউস এমন দাবি করে বলে জানিয়েছে এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নারী মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসনের বরাতে বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্চের শুরুতে মস্কোতে কনসার্টসহ বড় জমায়েতে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে তথ্য পায় যুক্তরাষ্ট্র। সে তথ্যটি মস্কোকে জানায় ওয়াশিংটন।
তার ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সতর্কবার্তা দেয়ার দায়িত্বকেন্দ্রিক দীর্ঘদিনের নীতি মেনে চলছে। এর অংশ হিসেবে অপহরণ বা বেশ কিছু মানুষকে হত্যার সুনির্দিষ্ট হুমকি সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য বিভিন্ন দেশ বা গোষ্ঠীকে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কনসার্টে আসা লোকজনের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান বন্দুকধারীরা, যার দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর গতকালের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আগত লোকজনের ওপর গুলি ছোড়েন বন্দুকধারীরা।
‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা চালানো হয়।
ভেরিফায়েড ভিডিওতে দেখা যায়, হলে নিজেদের আসন গ্রহণ করছেন লোকজন। এরপর আর্তচিৎকারের সঙ্গে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ পাওয়া যায়। ওই সময় লোকজনকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন বন্দুকধারীরা। ওই সময় কনসার্ট হলে রক্তের মধ্যে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য