পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ইরানে। দিনে দিনে জোরাল হচ্ছে বিক্ষোভ। রাজধানী তেহরানসহ দেশের নানা অঞ্চলে প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ অন্তত ১৮৫ জন।
ইরান বিক্ষোভের পরিণতি কী হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়েন। সংবাদমাধ্যমটির ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর প্যাট্রিক উইন্টুরের লেখা নিবন্ধটি অবলম্বনে বিশ্লেষণ তুলো ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
ইব্রাহিম রাইসি ২০২১ সালে জুনে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান গত মাসে। তিনি যখন নিউ ইয়র্কের মিলেনিয়াম হিল্টন হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন নিজ দেশে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদের বিক্ষোভ ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে রাইসির এই সাক্ষাতের শুরুতে ১০ মিনিটে একটা শর্ট ফিল্ম দেখানো হয়। তাতে ছিল দেশভ্রমণ ও ইরানিরা কীভাবে ‘নতুন ধারার গণতান্ত্রিক শাসনে সুখে-শান্তিতে বাস করছে’ সে বিষয়ক গুণগান। ইরানে ওই মুহূর্তে যা ঘটছিল সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিডিওটি অযৌক্তিক প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একইসঙ্গে এটি প্রমাণ করে, দেশটির শাসকদল কতটা ভ্রান্তিতে ভুগছে।
রাইসির প্রতিনিধিরা বিক্ষোভের বিষয়ে প্রশ্ন শুনতে শুরুতে রাজি হননি। এরপর রাইসি শুনতে রাজি হলেও তিনি পশ্চিমা দ্বিমুখী নীতি সম্পর্কে তীব্র সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। অনেক জোরে কথা বলা শুরু করায় হেডফোনের মাধ্যমে মৃদু স্বভাবের অনুবাদকের কথাগুলো বোঝা কঠিন হয়ে যায়।
রাইসি বলেন, আমিনির মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে তার স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ছয় মাসে যুক্তরাজ্যে ৮১ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে প্রতিদিন কতজন পুরুষ ও নারী নিহত হন?’
বিক্ষোভের দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর পরিষ্কার যে, ইরানে কতটা বিস্ফোরক পরিস্থিতি বিরাজ করছে সে সম্বন্ধে রাইসির খুব বেশি ধারণা নেই। গণগ্রেপ্তার ও অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর পরেও বিক্ষোভ শেষের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এটাও পরিষ্কার নয়, ইরানের পুরনো নেতৃত্ব নিজেদের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন মনে করছে কিনা, যে কারণে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শুভেচ্ছাদূত ও বৃটিশ-ইরানিয়ান অভিনেতা নাজানিন বোনিয়াদি মনে করেন, ইরানের রাজপথে নতুন কিছুর উত্থান ঘটেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার নিয়ে ১৪ বছর ধরে কাজ করছি। এ দীর্ঘ সময়ে আমি ইরানের শাসকদের বিপক্ষে এমন অসন্তোষ ও মোহভঙ্গের বহিঃপ্রকাশ দেখিনি। অবশ্য ইরান প্রতি দশকেই এমন ব্যাপক বিক্ষোভে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এর পরেও ১৯৯৯ সালের ছাত্র বিক্ষোভ বা ২০০৯ সালের গ্রিন মুভমেন্ট বা ২০১৯ এর নভেম্বরের বিক্ষোভের সঙ্গে বর্তমান বিক্ষোভের উত্তেজনা বা মাত্রার তুলনা করা যায় না।’
বিক্ষোভকারীরা যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের গাড়ি উলটে দিচ্ছে ও আয়াতুল্লাহ খোমেনির বিলবোর্ড ছিড়ে ফেলেছে- সেসব উদাহরণ সামনে আনছেন বোনিয়াদি।
তিনি যোগ করেন, “অভূতপূর্ব বিষয়টি হলো বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। আন্দোলনের যে স্লোগান ‘নারী, জীবন ও স্বাধীনতা’ সেটি ইরানের ইসলামিক মত বিরুদ্ধ। দেশটি নারীবিদ্বেষী, দমনমূলক ও ইসলামের পথে আত্মত্যাগের পক্ষে নিজেদের গড়ে তুলেছে। এ প্রতিবাদ শুধু কঠোর পোশাক নীতির বিরুদ্ধে নয়, বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরোধিতা ইরানি নারীদের বৃহত্তর সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবাল চেঞ্জ-এর ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক কাসরা আরাবির মতে, ইরানের এ প্রতিবাদ এখন বিপ্লবাত্মক।
তিনি বলেন, ‘যেসব মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা বলেছেন, তারা একটি বিপ্লবের মধ্যে আছেন এবং পিছু হঠবেন না। শাসক দলের পতনের শুরু এর মাধ্যমে। এটা সংস্কারের কোনো বিষয় নয়। এটা শাসক বদলের ডাক।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাটহ্যাম হাউজের সদস্য ড. সানাম ভাকিল অবশ্য এ আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক। তার মতে, এ আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি একটি বিশাল বিভাজন প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের শক্তি, গতি ও সাহসিকতা শাসক দলকে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তবে তাদের এ ধরনের আন্দোলনকে দমনের জন্য একটি ছঁক বাঁধা আছে, যেটি তারা অতীতে প্রয়োগ করেছে এবং এবারও করছে।’
ভাকিলের মতে নারী ও শিশুদের মারধরের বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়ার কিছুটা বিব্রত ইরান। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়াম যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
বৈশ্বিক সংহতি
প্রবাসী ইরানি, ইরানের ভেতর ও বাইরের সেলিব্রিটি ও ক্রীড়া তারকাদের অন্তর্ভুক্তি বিক্ষোভকে বৈশ্বিক মাত্রা দিয়েছে। ২৫ লাখ ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার রয়েছে ইরানি পপ তারকা দোনিয়া দাদরাসানের। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী এই তারকা নৈতিকতা পুলিশ নিয়ে একাধিক পোস্ট করেছেন। অন্য অনেকের মতো তিনিও ইরানের নারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিজের চুল কাটার ভিডিও পোস্ট করেছেন টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সুইডিশ সদস্য ও ইরাকি বংশোদ্ভূত আবির আল-সাহলানি গত ৪ অক্টোবর বক্তব্য দেয়ার সময় কাঁচি দিয়ে নিজের চুল কেটে ফেলেন। একই কাজ করেন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী সাবেক রাজনৈতিক বন্দি নাজানিন জাগারি-র্যাটক্লিফ। এরপর একে একে চুল কাটেন অস্কারজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী মারিয়ঁ কোতিয়াদ, জুলিয়েট বিনোশে ও শার্লট গেইনসবুর্গ।
তবে ইরানের শাসকদল, যাদের বেশিরভাগ নেতার বয়স আশির ওপরে, তারা যেন ভিন্ন কোনো জগতে বাস করেন। তাদের মতে, বাধ্যতামূলক হিজাব নারীকে বন্দি নয়, বরং মুক্তির পথ দেখায়; যা একটি বিশুদ্ধ ইসলামি সমাজ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেনি বিচার বিভাগের সাবেক প্রধান রাইসিকে নিজ হাতে বেছে নিয়েছিলেন। রাইসির দায়িত্ব ছিল খামেনির পাঁচটি মিস্টিক পর্যায় অর্জন করা। এগুলো হলো ইসলামি বিপ্লব, ইসলামি শাসন, ইসলামি সরকার, ইসলামি সমাজ ও ইসলামি সভ্যতা।
আগস্টে ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই রাইসি ইরানের ইসলামি দণ্ডবিধির ৬৩৮ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সার্বজনীন স্থানে হিজাব ব্যবহারের আইন কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেন।
ইরানে হিজাবের প্রতি সমর্থন বহু বছর ধরেই কমে আসছে। ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ নারী এতে বিশ্বাস করেন না বা মনে করেন তাদের ‘অন্যায়ভাবে পর্দা করানো’ হয়েছে।
তবে রক্ষণশীলরা এখন ইরানের রাজনীতির প্রতিটি স্তরে আধিপত্য বিস্তার করছেন। রাইসি ‘সতীত্বের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার কৌশল’ নামে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। এগুলো মূলত ২০০৫ সালে গৃহীত নীতির পুনরাবৃত্তি।
১১৫ পৃষ্ঠার পরিকল্পনার মূল নীতিগুলো প্রকাশ করেছে ইরানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরানওয়্যার। এগুলো হলো:
আগস্টের শেষ দিকে যে সব নারী এ নিয়ম মানেন না তাদেরকে সরকারি ব্যাংক, অফিসে প্রবেশ বা গণপরিবহনে উঠতে দেয়া হয়নি। বিশেষ করে বাস ও মেট্রোতে, এমনকি উত্তর তেহরান মেট্রোপলিটনের বাইরের এলাকাতেও কুখ্যাত নৈতিকতা পুলিশের দল আরও সক্রিয় ও সহিংস হয়ে ওঠে।
তাদের টহলের জন্য নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ কর্মকর্তারা নারীদের আটকাচ্ছে ও গাড়িতে তুলে নেয়ার পর এক ঘণ্টা ‘নতুন করে নৈতিকতা শিক্ষা’ দিচ্ছে।
মিডিয়া ক্র্যাকডাউন
এ রকম এক পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় কুর্দি নারী মাহসা আমিনির। মাহসা আমিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খালার বাড়িতে ভ্রমণ ও কেনাকাটার জন্য পাঁচ দিনের জন্য তেহরানে এসেছিলেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণী মাহসা সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম ইরানের সবচেয়ে বড় উর্মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান।
তেহরানে তিনি একটি মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে তালাকানি পার্কে ঢোকার পর কী ঘটেছিল তা এখনও অস্পষ্ট। মাহসা তার ভাই কিয়ারশ আমিনিসহ তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গে হাঁটার সময় পুলিশ তাদের আটকায়।
নৈতিকতা পুলিশের অন্তত পাঁচজন সদস্য দাবি করেন মাহসা ইসলামি পোশাক আইন লঙ্ঘন করেছেন। স্বজনদের বাধা উপেক্ষা করে তাকে একটি ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
চাচাতো ভাই এরফান মোর্তেজার অভিযোগ, মাহসাকে পুলিশ ভ্যানে মারধর করা হয়। কয়েকদিন পর পুলিশের প্রকাশিত একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সংশোধন কেন্দ্রে মাহসা দাঁড়িয়ে থাকার একপর্যায়ে প্রথমে একটি চেয়ারের ওপর এবং পরে মেঝেতে পড়ে যান। তার স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং কাসরা হাসপাতালে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা লাগে।
মাহসা কার্যত ব্রেন ডেড ছিল। সাময়িকভাবে তার হৃৎযন্ত্র সচল করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এর তিন সপ্তাহ পর ইরানি কর্তৃপক্ষ মাহসার মৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অবশ্য এর আগেই মাহসার এক্স-রে ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছিল। সরকারি ভাষ্য অনুসারে, মাথায় আঘাতের কারণে মাহসা মারা যাননি। তার মৃত্যুর কারণ ছিল দীর্ঘমেয়াদি হৃদস্পন্দনজনিত জটিলতায়।
পরিবারের দাবি, আট বছর বয়সে মাহসার সামান্য স্নায়ু জটিলতা ধরা পড়ে, মস্তিষ্কের সম্ভাব্য টিউমার এর কারণ হতে পারে। তবে লেভোথাইরক্সিন ব্যবহারের মাধ্যমে সেটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। সম্প্রতি একজন চিকিৎসক তাদের জানান, মাহসা সম্পূর্ণ সেরে উঠেছেন।
গ্রেপ্তারের পর মানসিক আঘাতের ফলে মাহসার মস্তিষ্কে খিঁচুনির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তেমনটা হলে বিষয়টি পুলিশের পক্ষে যাবে, তারা বলতে পারবে মাহসাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়নি। নৈতিকতা পুলিশ মাহসার পরিবারকে বলেছে, গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ সদস্যরা বডি ক্যামেরা পরা ছিলেন না, যে কারণে ভ্যানে কী ঘটেছিল তার কোনো ফুটেজ নেই।
ইরানি কর্মকর্তাদের প্রতি মাহসার পরিবারের আইনজীবীদের আস্থা শূন্যের কাছাকাছি। সালেহ নিখবাখত শীর্ষস্থানীয় কুর্দি সংবাদ মাধ্যম রুদাওকে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, “জিনার (মাহসার কুর্দি ডাকনাম) বিষয়ে (ইরানি) সংস্থাগুলো যে সমস্ত দাবি করছে, যেমন তার দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ছিল সেসব মিথ্যা ও গুরুত্ব দেয়ার মতো নয়।
‘এ অঞ্চলে বন্দি হত্যা নতুন কিছু নয় বা শুধু জিনাই প্রথম এমনটি নয়। তাকে কুর্দিস্তানে হত্যা করা হলে তারা সত্যকে বিকৃত করার সুযোগ পেত। তবে এবার সেটি পারেনি।’
মাহসার বাবা এখনও শোকার্ত এবং সরকারি তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি নন। তিনি মাহসার মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করতে সরকারি প্রভাবমুক্ত নিউরোলজিস্টদের একটি তালিকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী যে সমস্ত সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের অধিকাংশ মাহসার মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে জড়িত। এ থেকে বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ সত্য অনুসন্ধানে উদাসীন।
সংস্কারবাদী শার্গ পত্রিকার সাংবাদিক নিলুফার হামেদির উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তিনি হাসপাতাল করিডোরে মাহসার মা-বাবার ছবি তুলেছেন এবং মাহসার মৃত্যুশয্যার যে ছবিটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে সেটিও তার তোলা।
হামেদিকে পরে তার বাড়ি থেকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। তার টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। তার স্বামী জানান, কারাবাসের ১৩তম দিনে তিনি জেল থেকে ফোন করেন। হামেদির স্বামী টুইট করেছে, হামেদি অন্য আটজনের সঙ্গে একটি কক্ষে ভালো আছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইরানের সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। সমালোচনামূলক টুইটের জন্য বরখাস্ত বা এমনকি কারারুদ্ধ হতে হয়েছে তাদের। ‘জনমতকে ব্যাহত করা’ ও ‘সরকারবিরোধী প্রচারণা’র মতো অভিযোগ সাংবাদিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সীমার কথা মনে করিয়ে দেয়।
হামেদিকে হয়ত পুলিশ বাহিনী আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রেখেছিল। কারণ তিনি আগেও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে নৈতিকতা পুলিশের একটি ঘটনা প্রকাশ করেন। নৈতিকতা পুলিশ ২৮ এপ্রিল একটি পার্কে শিশুকে নিয়ে হাঁটতে থাকা এক দম্পতিকে অভিযুক্ত করে এবং তাদের পরিচয়পত্রের নম্বর জানানোর দাবি করে।
তারা পরীক্ষা করতে চেয়েছিল ওই নারী আগে কোনো নৈতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন কিনা। বাগবিতণ্ডার পর পুলিশ মারিয়া আরেফি নামে ওই নারীর ওপর মরিচের গুড়া স্প্রে করে এবং তার স্বামী সাবেক ইরানি বক্সিং চ্যাম্পিয়ন রেজা মোরাদখানিকে চারবার গুলি করে। জরুরিভিত্তিতে রেজার ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করা হয়।
সংস্কারপন্থি হাম্মিহান পত্রিকার প্রতিবেদক এলাহেহ মোহাম্মদিকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তার দোষ, তিনি মাহসার শহর সাকযে অনুষ্ঠিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি মর্মান্তিক বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি শুধু মাহসার পরিবারের যন্ত্রণা তুলে ধরেননি, একই সঙ্গে পুরো ঘটনাকে পুলিশ যে ধামাচাপা দিচ্ছে সেটা নিয়ে পরিবারের অভিযোগও তুলে ধরেন। করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় কারচাক কারাগারের অভ্যন্তরে নাজুক পরিস্থিতি প্রকাশ করার পর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এক বছরের জন্য লেখালেখিতে নিষিদ্ধ ছিলেন মোহাম্মদি।
গণগ্রেপ্তার
অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুলের খেলার মাঠে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মনে হচ্ছে ইরান একটি পুরো উল্টো দুনিয়ায় বসবাস করছে, যেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে ও ছাত্ররা কারাগারের সেল দখল করছে।
সরকার অনিবার্যভাবে পুলিশের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের বিরুদ্ধে দৃষ্টিনিবদ্ধ করছে এবং শাসক দলের সমর্থনে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত মিছিল বের করা হচ্ছে। তারা নারীদের ওপর সহিংসতার মাত্রা বাড়ানোর বিষয়টিও অস্বীকার করছে।
১৭ বছর ছুঁইছুঁই নিকা শাকরামির মৃত্যুও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। তারা বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিক্ষোভে নিকাকে হত্যা করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার কয়েক দিন ধরে তাকে খুঁজছিল। পরে তার মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।
কর্মকর্তারা সরকারি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নিকার মৃত্যু বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে যুক্ত নয়, তিনি দুর্ঘটনাবশত ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে নিকার মার দাবি, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাদের যেসব আত্মীয় শাসকদের টিভিতে গিয়ে সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছেন, তার পুরোটাই সাজানো।
অন্যদিকে, ১৬ বছর বয়সী সারিনা ইসমাইলজাদেহর মায়ের দাবি তার মেয়ে পুলিশের ব্যাটনের আঘাতে নিহত হয়েছেন। এখানেও পুলিশ বলছে সারিনা আত্মহত্যা করেছেন।
কয়েকজন বিক্ষোভকারী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তাদের এখন আর পিছু হটার সম্ভাবনা নেই।
একজন বলেন, ‘আমরা তাদের (শাসক) বিধিনিষেধ সহ্য করব না। কঠোর পোশাক নীতি মেনে চলব না। আমাদের জীবন ও আমাদের পছন্দের অধিকার আছে। আমি রাস্তা-ঘাটে মৃতদেহ দেখেছি, তাদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না।’
গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়েনি, জোর করে তাদের পিছু হটিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা আছে। একইসঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ক্ষীণ প্রত্যাশা রয়েছে, সরকার স্বেচ্ছায় নৈতিকতা পুলিশের ভূমিকায় সংশোধন আনবে।
বিক্ষোভের মূল কারণ জানতে রাজনৈতিক অভিজাতরা আত্ম-অনুসন্ধান করেছেন। তারা এও বোঝার চেষ্টা করছেন নৈতিকতা পুলিশের নৃশংস পদ্ধতি তরুণ প্রজন্মের মন পরিবর্তনে সক্ষম কিনা। বিশেষ করে যখন তরুণদের অনেকেই ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছেন।
অভিজাতদের মধ্যে কেউ কেউ স্বীকার করছেন, ২০২১ সালে রাইসি নির্বাচনে জয়ী হলেও প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ভোটে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। রাইসি ভোটারদের মাত্র ২৫ শতাংশের সমর্থন পান।
তেহরান সম্মিলিতভাবে ইরানে চলমান রাজনৈতিক প্রহেলিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমন অবস্থায় কেবল সরকারি আদেশ দিয়ে একটি সাংস্কৃতিক ক্র্যাকডাউন চাপিয়ে দেয়া ঝামেলাপূর্ণ।
আয়াতুল্লাহ খামেনির ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ও আত্মীয় গোলামালি হাদ্দাদ-আদেল তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজ দ্রুত আল্লাহবিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মেরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমারা আমাদের দেশের জন্য যে সমস্যাটি তৈরি করেছে তা হলো পরিবারকে ধ্বংস করা। কারণ পরিবার হল ধার্মিকতার শয্যা। পরিবার নড়বড়ে হয়ে গেলে ধার্মিকতা শেকড়সহ পুড়ে যাবে।’
ইরানের বয়োজ্যেষ্ঠ ধর্মনেতাদের একজন নাসের মাকারেম শিরাজি দাঙ্গার জন্য তিনটি কারণকে দায়ী করেছেন: ‘বিদেশি শত্রু, ভার্চুয়াল বা অনলাইন জগত ও মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবিকা সমস্যা।’
অন্যরা ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে ঘিরে পশ্চিমা ঈর্ষাকে দায়ী করেছেন। ইসলামবাদের বিপরীতে জাতীয়তাবাদকে অবলম্বন করে তারা ইরানকে ভেঙে ফেলার পশ্চিমা ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন।
তবে সরকার স্পষ্টতই বিক্ষোভের তীব্রতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। বিক্ষোভকারীদের তারা দুর্বল হিসেবে বিবেচনা করছে। কট্টরপন্থিরা নজিরবিহীন ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দমনের আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হিরব বা আল্লাহ বিরোধিতার অভিযোগ এনে বিচারের দাবি তুলছেন। ইরানে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এটি পরিস্থিতিকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি সৈন্যরা অভিযান চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা গাজার দুটি প্রধান হাসপাতালে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সেসব গণকবরের স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বস্ত তদন্তকারীদের অবশ্যই স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। গাজার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য আরও সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘গাজা শহরের আল শিফা মেডিক্যাল সেন্টার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল ধ্বংস এবং ইসরায়েলিরা চলে যাওয়ার পর ওইসব স্থাপনার আশপাশে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে আমি আতঙ্কিত।’
এই হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়মুক্তির বিদ্যমান পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে এতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে হাসপাতালগুলো বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী। আর যুদ্ধে অংশ নিতে অক্ষম এমন বেসামরিক নাগরিক, বন্দি ও অন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ।’
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল হাসপাতালগুলোতে গণকবরের খবরকে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সরকারের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ থামাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে প্রশাসন।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে (এনওয়াইইউ) বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্প ভাঙতে সোমবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিনের শুরুতে ইয়েল থেকে বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সশরীরে ক্লাস বাতিল করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
গাজার শাসক দল হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সাঁড়াশি হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সেই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভ ও উত্তপ্ত বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বেড়েই চলেছে।
উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরাই বলছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি-বিদ্বেষ ও ইসলাম-বিদ্বেষ উভয় ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেকে এনে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার পর এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এরপর থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। এনওয়াইইউ এবং ইয়েল ছাড়াও বার্কলের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, এমারসন কলেজ এবং টাফ্টসে ক্যাম্প স্থাপন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা-হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
অন্যান্য বিক্ষোভকারীর মতো এনওয়াইইউ-এর বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলি দখলদারত্বে আগ্রহী অস্ত্র প্রস্তুতকারক এবং সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আর্থিক অনুদান না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আলেহান্দ্রো তানন নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। এই বিক্ষোভ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনীয়।’
এক বিক্ষোভকারী সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্যালেস্টাইনের পাশে আছি এবং সব মানুষের মুক্তির পক্ষে।’
এনওয়াইইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজনেস স্কুলের বাইরে মূল ক্যাম্পে ৫০ জন ছিল। তারা এই বিক্ষোভকে অননুমোদিত বলে বর্ণনা করে বলেছে, এর ফলে ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার শুরু করে। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কানেক্টিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল। তাদের অনেকেই বিক্ষোভস্থল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিমূলক আচরণের উল্লেখ করে ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। সেখানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:ইরানের মাটিতে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আরেকবার ‘ভুল’ করলে তেহরানের জবাব হবে বিপর্যয়কর।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি লাহোরে (জিসিইউএল) মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাঙ্গনের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বৈঠকে রাইসি এ বার্তা দেন বলে জানায় প্রেস টিভি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, বক্তব্যে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে সম্প্রতি ইসরায়েলের মাটিতে তেহরানের আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরেন রাইসি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দামেস্কে ইসরায়েলের হামলাটি ছিল সব আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের বিরোধী। এ কারণে ইসরায়েলকে শাস্তি দিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলকে ফের ভুল না করার বিষয়ে সতর্ক করে রাইসি বলেন, ‘জায়নবাদী সরকার যদি আরেকবার ভুল করে ইরানের মাটিতে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে এবং এই শাসনব্যবস্থার কতটা অবশিষ্ট থাকবে, তা পরিষ্কার নয়।’
গত ১৩ এপ্রিল ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামে অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক শ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ কাজে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র রাষ্ট্রগুলো।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় একটি সামরিক মহড়ার সময় মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলভার সাড়ে ৯টার দিকে মালয়েশিয়ার লুমু শহরে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনীর কুচকাওয়াজের জন্য একটি সামরিক মহড়া চলাকালীন মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর ওই দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়। পরে বিধ্বস্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় বাহন দুটি। কেউই বেঁচে নেই।
নানা মাধ্যমে এর ফুটেজও প্রকাশিত হয়েছে।
রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই ১০ জনকে মৃত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। লুমুত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে মরদেহ শনাক্তের জন্য। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
যে দুটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে এর মধ্যে একটি হলো এইচওএম এম৫০৩-৩। এতে সাতজন আলোরী ছিলেন। চলমান ট্র্যাকে বিধ্বস্ত হয়েছে এই উড়োজাহাজটি। অন্যটি ফেনেক এম৫০২-৬। এতে ছিলেন তিনজন আরোহী। এটি বিধ্বস্ত হয় কাছাকাছি একটি সুইমিং পুলে।
রাজ্যের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়য়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
এর আগে গত মার্চ মাসে একটি মালয়েশিয়ান কোস্ট গার্ড উড়োজাহাজ প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় মালয়েশিয়ার আংসা দ্বীপের কাছে সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনার পর পাইলট, কো-পাইলট এবং এতে থাকা দুই যাত্রীকে জেলেরা উদ্ধার করেন।
এক রাতে ৮০ বারেরও বেশি ভূমিকম্পে দফায় দফায় কেঁপে উঠল তাইওয়ান। স্থানীয় সময় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসব কম্পন অনুভূত হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্পের উৎপত্তি পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েনে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশিমক ৩।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া প্রশাসনের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে প্রথম যে ভূমিকম্প আঘাত হানে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশিমক ৫। রাজধানী তাইপেতেও এ কম্পন অনুভূত হয়। এরপর দফায় দফায় কম্পন অনুভূত হতে থাকে। বিশেষ করে মঙ্গলবার সকালে আঘাত হানা দুটি ভূমিকম্প ছিল তীব্র।
রিখটার স্কেলে প্রথমটির তীব্রতা ছিল ৬.০ এবং দ্বিতীয়টির ৬.৩।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল। এতে অন্তত ১৭ জন মারা গেছে। অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তীব্র এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল হুয়ালিয়েন শহরের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে।
তাইওয়ানে গত ২৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর আগে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তাইওয়ানে আঘাত আনে। তাতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায়।
এদিকে নতুন এ ভূমিকম্পের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপক দলকে পাঠানো হয়েছে।
কেউ হতাহত হয়নি বলে তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বলে তাইওয়ানে ঘন ঘন ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আরও পড়ুন:কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার ভারি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়েছে আরেক মরুর দেশ সৌদি আরব। রাজধানী রিয়াদের কিছু অঞ্চলসহ দেশটির অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাটও।
সৌদি আরবের আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা জারি করে বলেছে, আগামী কয়েকদিন বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। সতর্কতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, শনিবার থেকে রাজধানী রিয়াদসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজধানী রিয়াদ ছাড়াও দিরিয়াহ, হুরায়মালা, ধুর্মা থেকে কুয়াইয়াহ পর্যন্ত।
আবহাওয়ার চলমান এ পরিস্থিতি মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সময়কালে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সতর্কতার অংশ হিসেবে সৌদি আরবের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টির সময় উপত্যকা ও জলাবদ্ধ এলাকা থেকে নাগরিকদের দূরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সবশেষ গেল সপ্তাহে অতি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায় দুবাই ও শারজাহতে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য