× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

আন্তর্জাতিক
In the Russo Ukraine war which side of the Muslims?
google_news print-icon

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

ইউক্রেন
ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। একের পর এক অঞ্চল দখলে নিচ্ছে রুশ সেনারা। মুসলিম অধ্যুষিত চেচনিয়ার যোদ্ধারা যোগ দিয়েছে পুতিন বাহিনীর সঙ্গে। তবে ক্রিমিয়ার নির্বাসিত তাতার সম্প্রদায় (মুসলিম) পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাদের।    

আলি খাদজালি থাকেন রাশিয়া-ইউক্রেনের সীমানা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি শহর খারকিভে। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি ছয়টি স্বেচ্ছাসেবক দলের একটির সঙ্গে মানবিক সহায়তা এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ করছেন

৩০ বছরের টগবগে যুবক খাদজালি। পরনে টুপি, হুডি এবং কার্গো প্যান্ট। মে মাসের মাঝামাঝি এক বিকেলে কাজের বিরতিতে আছেন। রুশ বাহিনীকে শহর থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তীব্র গোলাবর্ষণে উত্তর শহরতলির অনেক জায়গা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

কামানের গর্জন এখনও এই নির্জন মহল্লায় প্রতিধ্বনিত হয়। মাঠের মধ্যে রঙিন দোলনাটি কীভাবে যেন এখনও অক্ষত।

খাদজালির জন্ম ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই খারকিভে। মা ইউক্রেনীয়, বাবা সিরীয়। ২০১১ সালে সেখানে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ায় আগ পর্যন্ত নিয়মিত সিরিয়ায় আসা-যাওয়া ছিল তার। ২০১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরে রাশিয়া। দেশটির নিয়ন্ত্রণ এখন অনেকটাই মস্কোর হাতে।

খাদজালি বলেন, ‘আমার মাতৃভূমি ইউক্রেন এবং সিরিয়া। দুই দেশই রুশ আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।’

যুদ্ধে যোগদান

২০১৫ সালের দিকে খাদজালি ইমাম হয়ে ওঠেন, যিনি যুদ্ধের মধ্যে আধ্যাত্মিক সেবা প্রদান দিয়ে থাকেন।

আগের বছর ময়দান রেভ্যুলেশন দেখেছিল ইউক্রেনীয়রা। প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের রাশিয়াপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছিল দেশটির জনগণ।

বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। নৃশংস এক ক্র্যাকডাউনে প্রাণ হারায় শতাধিক বিক্ষোভকারী, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়।

শেষ পর্যন্ত গদি ধরে রাখতে পারেননি ইয়ানুকোভিচ, তাকে উৎখাত করা হয়। এর পরই, রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদিরা দোনেস্ক এবং লুহানস্কের ডনবাস অঞ্চলে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

ইসা আকায়েভ ক্রিমিয়া নামক একটি ব্যাটালিয়নের প্রধান এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইকে ক্রিমিয়াতে ফিরে যাওয়ার লড়াই হিসাবে দেখেন। ছবি: আল জাজিরা

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করলে খাদজালি তার দেশকে (ইউক্রেন) সাহায্য করার উপায় খুঁজছিল। এক সময় তার মনে হয়, ডনবাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অল্প সংখ্যক মুসলিম সেনারা হয়ত তাকে সমর্থন দেবে।

খাদজালি বলেন, ‘যুদ্ধরত একটি দেশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী একটি ভূমিকা পালন করার চেয়ে ভাল উপায় কী হতে পারে?’

ইমাম হিসেবে নামাজে নেতৃত্ব দিতেন খাদজালি। হালাল খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেন। সেনাদের ধর্মীয় নির্দেশ, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং মানবাধিকার সম্পর্কে নির্দেশনা দিতেন।

তিনি বলেন, ‘সরল সেনাদের সঙ্গে কথা বলা আমার দায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হতে পারে।’

খাদজালি এখনও এই দায়িত্বগুলো পালন করেন। তবে এখন তার দায়িত্ব আরও বেশি। প্রায়শই তাকে বিপজ্জনক ফ্রন্ট-লাইনে লোকেদের সাহায্য করতে হয়।

খাদজালি বলেন, ‘আমাদের কাছে সাহায্যের প্রয়োজন এমন লোকদের একটি তালিকা রয়েছে। আমরা তাদের প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা করি। যেমন, আমরা বয়স্ক ব্যক্তিদের ওষুধ দিই, যাদের এটি প্রয়োজন। পরিবারগুলোয় নিত্যপণের সরবরাহ দিয়ে থাকি।’

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

খারকিভের কয়েক সপ্তাহের বোমা হামলার বিধ্বস্ত কয়েকটি ভবন।ছবি: আল জাজিরা

৪ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার ইউক্রেনে খ্রিস্টানরাই সংখ্যাগুরু। ১ শতাংশ মুসলমানের বাস সেখানে। রাশিয়ার আক্রমণের পর এদের অনেকে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। অনেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবিচারের ইতিহাস তুলে ধরছে।

ইউক্রেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠই ক্রিমিয়ান তাতার। তারা তুর্কি বংশোদ্ভূত সুন্নি মুসলিম। নিজ অঞ্চল ক্রিমিয়ায় ফিরে যেতে এরা লড়াই করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৪ সালে কৃষ্ণ সাগরের এই জায়গাটির দখল নেয় রাশিয়া।

ক্রিমিয়ান তাতার: অত্যাচারিত সাম্প্রতিক অতীত

ইউক্রেনে ইসলামের একটি দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। কেবল ভ্রমণকারী ব্যবসায়ী বা ধর্মপ্রচারকদের হাতে এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়নি। এখানকার মানুষের হৃদয়ে আছে ইসলাম। ক্রিমিয়ার খানাতে ১৫ থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত ইসলাম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ছাপ রেখে গেছে।

ক্রিমিয়ান তাতারদের সাম্প্রতিক অতীতে অত্যাচারিত হতে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্তালিন তাদের নির্বাসিত করেন। যাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল চেচনিয়া এবং ইঙ্গুতেটিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠী। বর্তমানে উত্তর ককেশাসের অঞ্চল দুটি রুশ প্রজাতন্ত্র। ১৯৪৪ সালে তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করা হয়।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

খাদজালি খারকিভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দেখেছেন তার মাতৃভূমি সিরিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ই রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। ছবি: আল জাজিরা

এখন চেচেন সেনারা রুশ-ইউক্রেন সংঘাতে দুই পক্ষেই লড়ছে। এটা অনেকটা একটি যুদ্ধের মধ্যে ছোট আরেক প্রক্সি যুদ্ধের মতো। চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ পুতিনের অনুগত। তার সেনারা চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র তুলে নিয়েছে।

আবার ওদিকে ইউক্রেনের পক্ষেও যুদ্ধ করছে চেচেনদের একটি অংশ। তাদের বেশিরভাগই বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক। স্বাধীনতার জন্য দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর প্রতিশোধ নেয়ার একটি সুযোগ এখন তাদের সামনে। লড়াইটা আসলে শুরু হয় ১৯৯৪ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলে এ লড়াই। যুদ্ধে রুশ বাহিনী চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।

১৯৪৪ সালের ১৮ মে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মি ক্রিমিয়া থেকে অক্ষ বাহিনীকে বিতাড়িত করার মাত্র কয়েকদিন পর ক্রিমিয়ান তাতারদের পুলিশ আটক করে। নাৎসিদের সহযোগিতার অভিযোগে তাদের তখন নির্বাসিত করা হয়। রেহাই পায়নি রেড আর্মিতে ক্রিমিয়ান তাতার এবং ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের নায়ক’ মর্যাদাপ্রাপ্তরাও।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

ইসা আকায়েভ উজবেকিস্তানে একটি নির্বাসিত ক্রিমিয়ান তাতার পরিবারে বেড়ে ওঠেন। ছবি: আল জাজিরা

পরিবারগুলোকে একপ্রকার অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে গরুর গাড়িতে চেপে তারা পাড়ি জমিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে; বেশিরভাগকে নির্বাসিত করা হয়েছিল উজবেকিস্তানে।

প্রায় দুই লাখ ক্রিমিয়ান তাতারকে সে সময় সরিয়ে নেয়া হয়। হাজার হাজার তাতার তখন নিহত হয়, অপুষ্টিতে ভুগেছিল অনেক মানুষ। খামার এবং কারাগারের মতো শ্রম শিবিরে তারা ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম করত।

সোভিয়েত কালার

উজবেকিস্তানের সমরকন্দ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের একটি যৌথ খামারে ক্রিমিয়ার তাতারদের অনেককে পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে এখন আছে ইউক্রেনে সেবারত একটি স্বেচ্ছাসেবক ইউনিটের কমান্ডার ইসা আকায়েভের পরিবার।

আকায়েভের বয়স ৫৭। লম্বা দাড়িওয়ালা ধার্মিক আকায়েভ ১৩ সন্তানের পিতা। রাজধানী কিয়েভে তিনি স্মরণ করেন ১৯৭০ এর দশকে উজবেকিস্তানে নির্বাসনের দিনগুলোর কথা, যেখানে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। তখন আকায়েভের বয়স ছিল ১০। তরুণ উদ্যমী আকায়েভ সেময়ে স্কাউট আন্দোলনের জন্য শিশুদের প্রস্তুত করেছিলেন।

আকায়েভ একটি সেনাশিবিরে যোগদানের জন্য তার জন্মভূমি ক্রিমিয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক শোতে তার শিক্ষককে বলেছিলেন, তিনি তার ক্রিমিয়ান তাতার ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কিছু করবেন।

আকায়েভ যখন বিভ্রান্ত হয়ে উজবেকিস্তানে ফেরেন, সেখানে তিনি তার মায়ের কাছে যান। বিরক্ত হলেও মা তাকে ঘটনাটি উপেক্ষা করতে বলেছিলেন। তাদের কাছে সাম্প্রদায়িক নির্বাসন ছিল একটি দীর্ঘ চাপা অসন্তোষ।

তবে আকায়েভের দাদি অতীতের ঘটনা চেপে রাখতে পারেননি। তিনি তাকে পুরনো দিনের ঘটনা বলেছেন।

দাবি একবার লাল নিশানের স্কার্ফের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, যা তিনি গর্ব করে গলায় পরতেন। এটিকে ‘সোভিয়েত কলার’ বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। এরপর তিনি আর কখনও আকায়েভের সামনে এটি পরেননি।

আকায়েভ বলেন, ‘তিনি (দাদি) প্রায়শই ক্রিমিয়ার কথা বলতেন। সেখানকার সৌন্দর্য, প্রকৃতি এবং সমুদ্র উপকূল নিয়ে কথা বলতেন। বলতেন কীভাবে রুশ অভিজাতরা তাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে।

ইউক্রেন এ নির্বাসনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রাশিয়া ক্রিমিয়ান তাতারদের এ ইতিহাস মনে রাখতে দিতে নারাজ। ২০১৪ সালের ১৮ মে ক্রিমিয়ায় হাজার হাজার মানুষ নির্বাসনের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশে যোগ দিয়েছিল রুশ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে।

দেশে ফেরার লড়াই

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন আকায়েভ ব্যবসা করতেন। সে সময়ে তিনি রাশিয়ান দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলেন।

অপ্রস্তুত ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সে সময় কোনো যুদ্ধ ছাড়াই উপদ্বীপ ছেড়ে দেয়। ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডের মতো অনেক কমান্ডার এমন আত্মসমর্পণ মেনে নিতে পারেননি।

আকিয়াভ বলেন, ‘সশস্ত্র প্রতিরোধে সমর্থন দেয়ার জন্য স্থানীয় ক্রিমিয়ান নেতাদের কাছে আবেদন করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক সময় বুঝতে পারি, রুশ এজেন্টরা আমাকে অনুসরণ করছে।

‘এমন পরিস্থিতে মূল ভূখণ্ড ইউক্রেনে পালানোর সিদ্ধান্ত নিই। ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফেরোপল থেকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে পালিয়ে যাই।

‘আমি সিমফেরোপল থেকে পরের স্টপেজের উদ্দেশে ট্রেনে চড়েছিলাম। তার আগে কাছের একটি দোকানের ফিটিং রুমে জামাকাপড় বদলে নেই। আমার সহকর্মী আমার পোশাক পরেছিলেন, কারণ যারা আমাকে অনুসরণ করছিল, তারা আমাকে পোশাকে চিনত। সে ওই পোশাকে আমার গাড়িতে উঠেছিল। আর আমি তার পোশাক পরে ফিটিং রুম থেকে বেরিয়ে আসি।’

আকায়েভ ও তার পরিবারের পাশপাশি ২০১৪ সাল থেকে ক্রিমিয়া থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩০ হাজার ক্রিমিয়ান তাতারের জন্য এটি সেই নির্বাসনেরই পুনরাবৃত্তি।

আকায়েভ বলেন, ‘ঈশ্বর বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, যারা তোমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমার জন্য এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা। আমাদের অবশ্যই ক্রিমিয়ায় ফিরে যেতে হবে। আমরা ফিরে যাবই।’

ক্রিমিয়া ছাড়ার কিছু পর আকায়েভ ডনবাসে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে লড়াই করার জন্য মুসলিম যোদ্ধাদের নিয়ে একটি ছোট দল গঠনে সাহায্য করেন।

ক্রিমিয়া স্কোয়াড

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুতে আকায়েভ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন যাতে তাকে দেখা যায় মুখোশ পরা অবস্থায় সশস্ত্র কমরেডদের মাঝে দাঁড়িয়ে। এ যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ না করার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান আকায়েভ। যারা রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে অনেক জমি আছে, সবাইকে কবর দেয়ার জন্য যা যথেষ্ট।’

রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের শুরুতে আকায়েভের বিচ্ছিন্ন দলে প্রায় ১৫ জন যোদ্ধা ছিল। এখন প্রায় ৫০ জন মুসলিম ক্রিমিয়ান তাতার যোদ্ধা রয়েছে তার দলে।

আকায়েভ বলেন, ‘আমরা মূলত পুনর্জাগরণের কাজ করি। সদ্য মুক্ত অঞ্চলগুলোতে স্কাউট এবং চেকপয়েন্ট পরিচালনা করি।’

মার্চের শেষ দিকে রাশিয়ান বাহিনী কিয়েভের চারপাশ থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তার দলের সদস্যরা মোটিজিন গ্রামে প্রবেশ করে। সেখানে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছে। গণকবর আবিষ্কার করেছে তারা।

আকায়েভ বলেন, ‘জঙ্গলে হাঁটতে গিয়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা এটি উদঘাটন করে। একজন যোদ্ধার তখন লক্ষ্য করে একটি হাত মাটি থেকে বেরিয়ে এসেছে। পা দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করার পর মরদেহ দেখতে পেয়েছিল আরেকজন। পরে আরও অনেক মরদেহের সন্ধান পাই।’

ইসমাগিলভের বয়স ৪৩। রাজধানী কিয়েভ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বুচারের বাসিন্দা তিনি। শহরটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে রুশ সেনাদের বর্বরতার চিহ্ন। ২০১৪ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত ডনবাস থেকে সেখানে চলে আসেন ইসমাগিলভ। ওই বছর তার শহর দখলে নেয় দোনেস্ক রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদিরা।

কিয়েভ অঞ্চল থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের পরের দিন ইসমাগিলভ তার অ্যাপার্টমেন্টে ফেরেন। দখলদার সেনারা ভবনটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে গিয়েছিল।

দীর্ঘ ১৩ বছর ইসমাগিলভ ছিলেন ইউক্রেনের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম নেতা; দেশের সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের ইউক্রেনীয় ‘উম্মার’ মুফতি। মার্চে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সে যোগ দেন।

ট্রাকে করে সংঘাতময় ডনবাসে চিকিৎসকদের আনা-নেয়া এবং আহতদের সরিয়ে নেয়ায় নিজেকে নিযুক্ত করেছেন ইসমাগিলভ।

তিনি বলেন, ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে দূরে কোথাও প্রার্থনায় চোখ বন্ধ করে থাকার চেয়ে অসহায়দের সেবা করাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে আমার কাছে।’

অনলাইন ভিডিওতে পুতিনের ‘অন্যায় আগ্রাসনের’ নিন্দা জানানোর জন্য বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনকে সমর্থন করুন, তহবিল দিয়ে সমর্থন করুন, তথ্য দিয়ে সমর্থন করুন, সামরিকভাবে সমর্থন করুন।’

নিপীড়ন সব ক্রিমিয়ান তাতার পরিবারকে স্পর্শ করেছে

আকায়েভের মতো ইসমাইল রামাজানভের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধটি শুরু হয়ে গিয়েছিল রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর।

৩৬ বছরের ইসমাইল বলেন, ‘বড় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য আমরা ছোট মাতৃভূমি ছেড়েছি। আমি জানি একটি মুক্ত ইউক্রেন ছাড়া মুক্ত ক্রিমিয়া থাকবে না।’

রামাজানভ কিয়েভের কেন্দ্রে একটি ক্যাফেতে তার বন্ধু আনা ইসমন্তের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ক্রিমিয়ান তাতার পেস্ট্রি এবং চা খাচ্ছিলেন।

তিনি জানান, কীভাবে একজন কর্মী এবং সাংবাদিক হিসেবে তিনি ক্রিমিয়ার রাজনৈতিক বন্দিদের দুর্দশার বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গোপনে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারদের জামিনের অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্ল্যাশ মব আয়োজন করে থাকেন তিনি।

বেশিদিন নিজেকে আড়ালে রাখতে পারেননি রামাজানভ। ২০১৮ সালের জানুয়ারির এক ভোরে রুশ ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) এজেন্টরা রামাজানভকে তার বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে একটি সাদা ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তাকে ভীষণ পেটানো হয়। বিচারের অপেক্ষায় তাকে ছয় মাস জেলে কাটাতে হয়েছে।

রামাজানভ বলেন, ‘এফএসবি এজেন্টরা আমার বাড়িতে পিস্তলের কার্তুজ এবং চরমপন্থি বই রেখে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করার জন্য আমার বিচার করতে চেয়ছিল।’

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

আনা ইসমন্ট ইউক্রেনীয় সৈন্যদের জন্য পণ্য সংগ্রহ এবং তহবিল সংগ্রহ করছেন। ছবি: আল জাজিরা

খারকিভ হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন গ্রুপের মতে, এ ধরনের কৌশলগুলো রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সমালোচনার একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। দখলের পর অপহরণের ঘটনা নিয়মিত হয়ে ওঠে। কাউকে চুপ করানোর জন্য পুরো পরিবারকে হয়রানি করা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ১২৩ জন নথিভুক্ত ক্রিমিয়ান রাজনৈতিক বন্দি ছিল। এদের ৯৮ জনই ক্রিমিয়ান তাতার।

রামাজানভ বলেন, ‘এমন কোনো ক্রিমিয়ান তাতার পরিবার নেই, যাকে রুশ দমন-পীড়ন স্পর্শ করেনি।’

আইনে সামান্য পরিবর্তনের ফলে রামাজানভের আইনজীবীরা শেষ পর্যন্ত তার গ্রেপ্তারের এক বছর পর তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন। এরপর তিনি ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডে চলে যান।

সেনাদের জন্য ড্রোন সোর্সিং

ইসমন্তও যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। ২৬ বছর বয়সী লাজুক প্রকৃতির ইসমন্ত হিজাব পরে পণ্য সরবরাহ এবং তহবিল সংগ্রহ করেন। ১৮ বছর বয়সে ময়দান রেভ্যুলেশনের সময় থেকেই তিনি একজন কর্মী।

ইউক্রেনভিত্তিক সাহায্য সংস্থা অ্যানোমালির মাধ্যমে কাজ করেন তিনি। সক্রিয়ভাবে চিকিৎসা সরবরাহ, যানবাহন, খাদ্য, ড্রোন, থার্মাল ইমেজিং ডিভাইস এবং সেনাদের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে থাকেন এ তরুণী।

ইসমন্ত বলেন, ‘চেরনিহিভের সেনাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার কিট পাঠিয়েছিলাম। যখন আমি কিটের সঙ্গে তাদের ছবি দেখেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল আমিও তাদের অংশ।’

ময়দান রেভ্যুলেশনের সময় সহকর্মীদের মতো ইসমন্তও ইউক্রেনের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনে আগ্রহী ছিলেন। সে সময় তার এক ঘনিষ্ঠ মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যিনি পরে ডনবাসে যুদ্ধে মারা যান। গত বছর ইসলামে ধর্মান্তরিত হন ইসমন্ত।

ময়দানে সহিংসতা যখন চরম পর্যায়ে, তখন তার বন্ধু তাকে ‘কিছু’ সংগ্রহ করতে স্কোয়ার থেকে অনেক দূরে পাঠিয়েছিলেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, বন্ধু তাকে বিপদ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন।

শৈশবের বেশিরভাগ সময় ক্রিমিয়াতে কাটলেও এটি দখল হয়ে যাওয়ার পর ক্রিমিয়ান তাতার পরিবারগুলোকে সমর্থন করার জন্য ক্রিমিয়ান তাতার সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত হয়েছিলেন ইসমন্ত।

তিনি বলেন, ‘আমি ক্রিমিয়ার বেশ কয়েকটি পরিবারকে কিয়েভের জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছি।’

এই ধরনের একটি কোর্সের মাধ্যমেই তার দেখা হয়েছিল রামাজানভের সঙ্গে। সক্রিয়তা এবং স্বেচ্ছাসেবক কাজের মাধ্যমে দুজনের একটি দৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়।

ইসমন্ত এবং রামাজানভ তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া পোস্টগুলোতে অনুদানের জন্য ঘন ঘন আবেদন করে থাকেন। ইদানিং তাদের ঝোঁক ড্রোন সরবরাহের দিকে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এখন অবধি আনা খেরসন, মাইকোলাইভ, জাপোরিজিয়া, ইজিয়াম এবং এর আগে মারিউপোলের আশেপাশের ব্যাটালিয়নে ড্রোন পাঠিয়েছেন তারা।

যারা ফিরে এসেছে

ক্রিমিয়ায় রুশ শাসন এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত শাসনে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের ফলে এ উপদ্বীপের রূশ রূপান্তর ঘটে। নির্বাসনে পাঠিয়ে ক্রিমিয়ান তাতারদের বাড়িগুলোকে খালি করিয়েছিল রুশ অভিবাসীরা। জাতিগত রুশরা এখনও সেখানে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। তারপর যথাক্রমে ইউক্রেনীয় এবং ক্রিমিয়ান তাতাররা, যারা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

সোভিয়েত নিপীড়নের স্মৃতি এখনও অনেক ক্রিমিয়ান তাতারকে তাড়া করে। স্তালিনের যৌথ শাস্তির পর পুতিনের অধীনে নিপীড়নের ইতিহাস একটি নতুন অধ্যায় মাত্র।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর জন্মগ্রহণকারী অল্পবয়সী ক্রিমিয়ান তাতারদের কাছে সেই ক্ষত এখনও কাঁচা। নির্বাসিত চেচেন সম্প্রদায়গুলোকে চেচনিয়া ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও ক্রিমিয়ান তাতারদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি ৪৫ বছরেও।

ইসমাইল কার্ট-উমের ১৯৯১ সালে ক্রিমিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন প্রাচীন খানাতের রাজধানী বাখচিসারাইতে।

অনেকের মতো কার্ট-উমের কাছে জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন শক্ত চ্যালেঞ্জের। তাদের জন্মভূমিতে বিদেশিরা আবাস গেড়েছে। এসব বিদেশিদের কাছে তারা এখন বিশ্বাসঘাতক।

কার্ট-উমার বলেন, ‘অন্যান্য ক্রিমিয়ান আমাদের প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি খুব বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করতে পারে। অনেকেই আমাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখে।’

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

ইসমাইল কার্ট-উমেরের সামরিক জোটে গায়ক হিসেবে ভূমিকা সেনাদের মনোবল চাঙা রাখতে সাহায্য করছে। ছবি: আল জাজিরা

কার্ট-উমের এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, যখন সমাজ থেকে কুসংস্কার ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে। প্রবাসের কষ্টের গল্প শুনে বড় হয়েছেন তিনি।

কার্ট-উমের দাদা সোভিয়েত রেড আর্মির সদস্য ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশিরভাগ সময় যুদ্ধক্ষেত্রে কেটেছে তার। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্রিমিয়া ছাড়ার জন্য তাকে মাত্র তিন দিন সময় দিয়েছিল সোভিয়েত সরকার। কার্ট-উমেরের বাবাকে আফগানিস্তান যুদ্ধে পাঠিয়েছিল সোভিয়েত শাসকরা।

২০১৪ সালে কার্ট-উমর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ক্লাসিক্যাল মিউজিকের প্রশিক্ষিত গায়ক হিসেবে।

কার্ট-উমার বলেন, ‘প্রত্যেকেরই এখন কর্তব্য আছে। আমার বন্দুক নাও থাকতে পারে। তবে আমি অন্যভাবে অবদান রাখি।’

ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের জন্য গান

ইসমন্তের মতো কার্ট-উমেরও জন্ম ময়দান রেভ্যুলেশনের সময়ে। বেশ কয়েক বছর তিনি ওই বিদ্রোহের স্মরণে অনুষ্ঠানগুলোতে গান গেয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে কার্ট-উমের বিভিন্ন জায়গায় তার ব্যান্ডের সঙ্গে ভ্রমণ এবং পারফর্ম করছেন। তিনি তার ভূমিকাকে মনোবল গড়ে তোলা এবং মানুষের হৃদয়ে ইউক্রেনীয় জাতিয়তার বোধ জাগানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখেন।

গানের আসরে কার্ট-উমেরকে একজন ক্রিমিয়ান তাতার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এতে তিনি ও তার দল যে অভ্যর্থনা পান, তাতে তারা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হন।

স্বাধীনতার যুদ্ধ

ইউক্রেনের ধর্মীয় সহনশীলতা ও উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমদের আকৃষ্ট করেছে। দেশপ্রেমবোধ তাদের মধ্যে অনেক তীব্র।

আকায়েভ বলেন, ‘ইউক্রেন এমন একটি দেশ, যেটি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে।’

ক্রিমিয়ান তাতার এবং অন্যান্য যারা রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়েছে, তারা এই যুদ্ধের ঝুঁকি জানে।

ইসমাগিলভ বলেন, ‘মুসলিমরা ভাল করেই জানে রাশিয়া তাদের ভূখণ্ড (ইউক্রেন) দখলে নিলে কী ঘটবে। এটি রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ার মতোই হবে, যেখানে মুসলমানদের গুম করা হয়, জেলে পুরে রাখা হয়।’

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মুসলমানরা কোন পক্ষে?

খাদজালির জ্যাকেটের চিহ্ন তাকে একজন স্বেচ্ছাসেবক ইমাম হিসেবে চিহ্নিত করে। ওপরের লেখাটি ‘ইমাম চ্যাপলিন’, নীচে ‘ইউক্রেন’ লেখা। ছবি: আল জাজিরা

খাদজালি এবং অন্যদের জন্য যুদ্ধ হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ সমাজের প্রতীক। ইসমন্ত বলেন, ‘একসঙ্গে থাকলেই আপনি জিততে পারবেন, বেঁচে থাকতে পারবেন। আমাদের ইউক্রেনীয়দের এই অভাব ছিল। একটি জাতি হিসেবে আমরা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সূচনার মাধ্যমে তা উপলব্ধি করেছি। আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ।’

আরও পড়ুন:
ইউক্রেনের কালো তালিকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক
রুশ হামলার তোয়াক্কা না করে স্বাভাবিক জীবনে
ইউক্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬ জাহাজ
সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় জেলেনস্কি
বন্দি ইউক্রেনীয় সেনাদের মারল কে

মন্তব্য

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক
35 crore bridge is not working due to lack of connecting roads
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা

সংযোগ সড়কের অভাবে কাজে আসছে না ৩৫ কোটির সেতু

সংযোগ সড়কের অভাবে কাজে আসছে না ৩৫ কোটির সেতু সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাড়িয়ে আছে সেতুটি। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ দেখে ভাবছিলাম, আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে, কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা না থাকায় আমরা কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারি না। আগের মতো নৌকায় করেই খেতের ফসল আনতে হচ্ছে। আমাগো মনের আশা মনেই রইল। তাহলে সরকার এত টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করল কেন?’

প্রান্তিক জনগণের যাতায়াত সুবিধা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে আসছে না সরকারের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাড়িয়ে আছে সেটি।

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডারস এবং মেসার্স কহিনুর এন্টাইপ্রাইজ। সংযোগ সড়ক ছাড়াই ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথমার্ধে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০ কোটি থাকলেও পরবর্তীতে সংযোগ সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের আরও পাঁচ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর সেতু ও সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় উন্নয়নকাজের ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৪৫৪ হাজার টাকা। তবে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবহারোপযোগী হয়নি সেতুটি।

স্থানীয় মির্জাপুর এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ দেখে ভাবছিলাম, আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে, কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা না থাকায় আমরা কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারি না। আগের মতো নৌকায় করেই খেতের ফসল আনতে হচ্ছে। আমাগো মনের আশা মনেই রইল। তাহলে সরকার এত টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করল কেন?’

আরেক কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সেতুর পাশে আমার দেড় শতাংশ কৃষিজমি আছে। সেতুর রাস্তার জন্য আমার জমি নিতে চাইছে। এলাকার মানুষের ভালোর জন্য আমার জমি দিতে চাইছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে খালি শুনতেছি, আমাগো জমি অধিগ্রহণ করা হবে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমিতে আগের মতো ইরি ধানের আবাদ করছি।’

স্থানীয় বালিয়াবাধা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের পর একদিনের জন্যও কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারে নাই। সেতুটি ব্যবহার করতে পারলে সেতুর আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো।

‘সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় আমাদের ও আশপাশের এলাকার মানুষকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করবে সরকার।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার জমির মালিকদের বাধার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের জায়গা বুঝে পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আর সংযোগ সড়কের কাজ করতে আমাদের সময় লাগবে ৪-৫ মাস। আমরা যত দ্রুত পারব, তত দ্রুত কাজ শুরু করব।’

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।

তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ভূমি জটিলতা কেটে যাবে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছে।’

ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মানিকগঞ্জ ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর এল এ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুত ভূমির মালিকদের তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।’

আরও পড়ুন:
ভাঙা সেতুতে ভোগান্তি ৪০ গ্রামের মানুষের
বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই সেতু নির্মাণ, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা
খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
সরকারি খালে পারিবারিক সেতু
সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, জনদুর্ভোগ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Hotel resorts in Ruma and Thanchi are empty due to lack of tourists

পর্যটক-শূন্যতায় রুমা ও থানচির হোটেল রিসোর্ট ফাঁকা

পর্যটক-শূন্যতায় রুমা ও থানচির হোটেল রিসোর্ট ফাঁকা বান্দরবানের থানচি উপজেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট তমা তুঙ্গী। ফাইল ছবি
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে-আতঙ্কে পর্যটকরা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতি বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়। বছর ঘুরে এসব উৎসব এলেও এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। বিশেষত জেলার রুমা ও থানচিতে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। হোটেল-রিসোট পড়ে থাকছে ফাঁকা। দেখা মিলছে না দেশি-বিদেশি পর্যটকের।

সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থানকারী জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ইতোমধ্যে এসব স্পটের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানচির অবস্থান। আর রোয়াংছড়ি ২০ কিলোমিটার ও রুমার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার।

বান্দরবান-থানচি সড়কের মাঝামাঝি জীবননগর নামক স্থানে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলগিরি। নীল দিগন্ত বিস্তৃত এলাকাটি ম্রো অধ্যুষিত।

থানচি-আলিকদম সংযোগ সড়কে থানচি সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ক্রাউডং (মারমা) ডিম পাহাড় (বাংলা)। নৌপথে সাংগু নদী বেয়ে তিন্দু ইউনিয়নে রয়েছে রাজা পাথর (বাংলা)।

এরপর রয়েছে রেমাক্রী খাল। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। এছাড়াও রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট।

বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত প্রাকৃতিক হ্রদ হলো বগা লেক। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তিন হাজার সাতশ’ ফুট উচুঁতে এর অবস্থান। লেকটি পাহাড় চূড়ায় ১৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।

বগা লেক নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল বিজয় (তাজিং ডং)। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ ফুট। রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে এর অবস্থান।

রুমা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। শীত মৌসুমে এই পর্বত দেখতে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।

এছাড়াও রয়েছে কেওকারাডং, জলপ্রপাতের পানি ঝিরসহ অনেক পর্যটন স্পট। আবার জেলার থানচিতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নাফাখুম ঝরনা, আমিয়াখুং ঝরনা, ভেলাখুং ঝরনা, সাত ভাই খুং ঝরনা, লাংলুক ঝরনা, লৈক্ষ্যং ঝরনা, চিংড়িৎ ঝরনা।

প্রকৃতি এতোসব সম্ভার সাজিয়ে বসে আছে। কিন্তু তা দেখার জন্য পর্যটকের আগমন ঘটছে না। সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ভয় আর আতঙ্কে তারা পার্বত্য এসব পর্যটন স্পট এড়িয়ে চলছেন।

পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায়। বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ফলে এসব দর্শনীয় স্থানে যাতায়াত করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন পর্যটকরা। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচলও সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।

রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ চলে গেল। এসব উৎসবের ছুটিতে এখানে হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হওয়ার কথা। কিন্তু এবার সেসবের কিছুই হয়নি।

হঠাৎ করে ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে। পরদিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে পড়েছে বান্দরবান।

কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ভয়-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নেয় পর্যটকরা। অথচ এই সময়টাতে থানচি রেমাক্রীতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হওয়ার কথা ছিল।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক না আসার কারণে এই ঈদ মৌসুমে তাদেরকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।

নৌকার এক মাঝি জানান, থানচিতে পর্যটকের ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। এখানে নৌকার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। আর এসব নৌকা চালানোর জন্য সমসংখ্যক মাঝি রয়েছেন। তাদের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটক। নৌকা চালাতে পারলে সংসারের চাকা ঘুরবে, অন্যথায় উপোস থাকতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, ‘সরকারিভাবে পর্যটকদের এই এলাকা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তবে এমন পরিস্থিতি শোনার পর আর কেউ এখানে ঘুরতে আসবে বলে মনেও হয় না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিটরা অনেক কষ্ট ও লোকসানে পড়বে বোঝা যাচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ-এর শতাধিক অস্ত্রধারী ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিস সংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে। পরদিন থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়।

যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। এরপর কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এসব ঘটনায় আটটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। দুদিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন:
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুট: গ্রেপ্তার আরও চার আসামি
রুমায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুই কেএনএফ সদস্য আটক
বান্দরবানে ৫ কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার, দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ
পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কম্বিং অপারেশন চলবে: সেনাপ্রধান
বান্দরবানের ঘটনার প্রভাব পড়বে না পর্যটনে: টুরিস্ট পুলিশ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Expats and rich people are the target of fraud traps with women

নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ, টার্গেট প্রবাসী ও ধনাঢ্যরা

নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ, টার্গেট প্রবাসী ও ধনাঢ্যরা এই গজারী বাগানে ডেকে নিয়েই ফাঁদে ফেলা হয় বলে অভিযোগ নাজমুলের। ছবি: নিউজবাংলা
প্রস্তাবিত স্থানে আগে থেকেই তৈরি থাকেন চক্রের সদস্যরা। ওই ব্যক্তি পৌঁছানোমাত্র তাকে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেলে মারপিটসহ জোরপূর্বক নকল বিয়ে দেন কাজী ডেকে। দেনমোহর ধার্য করেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে ডিভোর্সের নামে সেই দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

প্রথমে প্রবাস ফেরত ও টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের টার্গেট, পরে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে ডেকে আনেন ডেটিংয়ের জন্য। প্রস্তাবিত স্থানে আগে থেকেই তৈরি থাকেন চক্রের সদস্যরা। ওই ব্যক্তি পৌঁছানোমাত্র তাকে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন।

চাঁদা না পেলে মারপিটসহ জোরপূর্বক নকল বিয়ে দেন কাজী ডেকে। দেনমোহর ধার্য করেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে ডিভোর্সের নামে সেই দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এমনই প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে চাম্বলতলা গ্রামে।

গত ২১ মার্চ এই চক্রের সদস্যদের কাছে প্রতারণার শিকার হন ঘাটাইল উপজেলার রহমতখাঁর বাইদ গ্রামের দুলাল মন্ডলের প্রবাস ফেরত ছেলে নাজমুল ইসলাম। এরপর বিচার চেয়ে তিনি টাঙ্গাইল আদালতে কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

আসামিরা হলেন- মো. জাহিদুল হাসান জাহিদ, সৌরভ তালুকদার, হুমায়ুন সিকদার রানা, বাবুল হোসেন, মো. জুয়েল, রিজান, সুজন, রায়হান, কাজী মো. তাহেরুল ইসলাম তাহের ও রাশেদা বেগম।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে দেশে ফেরেন নাজমুল ইসলাম। গত ২১ মার্চ চাম্বলতলা গ্রামের আবু তালুকদারের বাড়িতে তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ৯টার দিকে সৌরভ তালুকদারের মাধ্যমে নাজমুলকে ডেকে নিয়ে নাজিম উদ্দিনের বাড়ির উত্তর পাশের গজারী বাগানে নিয়ে যান জাহিদুল। সেখানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। চাঁদা না দিলে নাজিম উদ্দিনের নাবালিকা মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়।

সে সময় টাকা দিতে অস্বীকার করায় ব্যাপক মারধরের শিকার হন নাজমুল। পরে তারা কয়েকটি কার্টিজ পেপারে খুনের ভয় দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেন এবং সুমাইয়াকে কাবিন ছাড়াই বিবাহের নামে নাজমুলের বাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দেন। এমনকি পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।

তবে মুক্তি পেয়ে আদালতে মামলা করেন বলে নিউজবাংলাকে জানান নাজমুল।

ঘটনার বিষয়ে সুমাইয়া জানায়, সে নাজমুলকে চিনত না। জাহিদুল তার দুঃসম্পর্কের মামা হয়। জাহিদুলের কথায় সে এমনটি করেছে। প্রথমে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ তার।

স্থানীয়দের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি এমন প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা নারীদের ব্যবহার করছে। আর স্থানীয় কাজীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।

এদিকে জানতে চাইলে ওই বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করেন কাজী তাহেরুল ইসলাম তাহের। জানান, এ ধরনের বিয়ে তিনি পড়াননি। তবে তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ওসি আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা
হাইকোর্টের রায় জালিয়াতি, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
ভুয়া এনআইডি তৈরি করে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ
ভুয়া নিয়োগপত্রে চাকরি, প্রতারক চক্রের হোতসহ আটক ২
মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
The Facebook video returned the sister who was lost 30 years ago

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে রাজধানীর মহাখালীতে আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’র স্টুডিওতে সোমবার হাস্যোজ্জ্বল রাশিদা (বাঁয়ে) ও রহিমা। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে এসে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩০ বছর আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান রাশিদা। পরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বাসে চেপে বসেন। কিন্তু সেই বাস তাকে নিয়ে যায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এনায়েতপুরে। এরপরের গল্প অনেক দীর্ঘ।

এ যেন রূপকথার কল্পকাহিনী। ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও’র সূত্র ধরে তিন দশক পর দেখা হলো দুই বোনের। অঝোরে কাঁদলেন ওরা। এই কান্না হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার। এই কান্না আনন্দের।

হারিয়ে যাওয়া বড় বোনের নাম রাশিদা। তার বর্তমান ঠিকানা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে সোনার বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৫ নম্বর ঘর। আর তাকে খুঁজে পাওয়া ছোট বোনের নাম রহিমা খাতুন।

রহিমার ঠিকানা ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের একটি বাড়ি। এখানে গৃহকর্মী হিসেবে থাকেন তিনি। তার মায়ের বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। সেখানে থাকেন তার মা মোছাম্মৎ বেগম ও ছোট ভাই ইউনুস।

সন্তানদের ছোট রেখেই মারা যান তাদের বাবা আকুব্বর। এরপর ওদের মা পুনরায় বিয়ে করেন। সেই বাবাও মারা গেছেন সাত বছর আগে।

রাশিদা তার পরিবারের খোঁজ না জানলেও তার অবস্থানস্থলের সঙ্গে মা ও ভাইবোনের দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। এক পাশে কুষ্টিয়া, অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। মাঝখানে শুধু পাবনা জেলা।

গুগলের ম্যাপের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। গাড়িতে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট। অথচ এই পথটুকুর দূরত্ব ঘুচতে লেগে গেছে দীর্ঘ ৩০টি বছর।

ঘটনাটা শুরু করা যাক ৩০ বছর আগের এনায়েতপুর গ্রাম থেকে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এই গ্রামে ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকত চার সদস্যের একটি পরিবার। মা মোছাম্মাদ বেগম, দুই বোন সাত বছর বয়সী রাশিদা ও চার বছর বয়সী রহিমা এবং দুই বছর বয়সী একমাত্র ভাই ইউনুস।

পরিবারটিতে অভাব-অনটন ছিলো নিত্যদিনের মোছাম্মৎ বেগম সে সময় পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করতে বড় মেয়ে রাশিদাকে কাজে পাঠান কুমারখালীর লতিফ নামের এক ব্যক্তির ঢাকার বাসায়।

এরপর হঠাৎ একদিন গৃহকর্তা লতিফের কাছ থেকে খবর আসে যে রাশিদা তার ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মা আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মেয়ের খোঁজ পাননি। নিজের নামে থাকা স্যামান্য জমিটুকু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে রাশিদাকে খুজতে থাকেন মা। এক পর্যায়ে সেই টাকাও শেষ হয়ে যায়। আর নিখোঁজই থেকে যান রাশিদা। এই পর্যায়ে নিজ বাড়িতে বসে মেয়ের ফিরে আশায় পথ চেয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না মায়ের।

ছোট দুই ভাই-বোন রহিমা ও ইউনুস বোড় বোন রাশিদা হারিয়ে যাওয়ার মর্ম না বুঝলেও মায়ের প্রতিটি দিন কাটতে থাকে বড় মেয়ের আশায় পথ চেয়ে থেকে। এভাবেই রাশিদার পথ চেয়ে মায়ের কেটে যায় ৩০টি বছর।

এনায়েতপুর গ্রামের ছোট্ট বাড়িটিতে এখন একাই থাকেন রাশিদার মা বেগম। সাত বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে দিন কাটে তার। একমাত্র ছেলে ইউনুস থাকে কুষ্টিয়া শহরে। আর ছোট বোন রহিমা কাজ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটি বাসায়।

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে
দীর্ঘ ৩০ বছর পর পরস্পরকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুই বোন। ছবি: নিউজবাংলা

যেভাবে রাশিদার খোঁজ পান রহিমা

চলতি এপ্রিল মাসে ১৬ তারিখ, রাত সাড়ে ১১টা। কুমারখালী থেকে রহিমার ফোনে আসা একটা কল সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। যেন আকাশ থেকে পড়েন রহিমা। নিউজবাংলাকে সে সময়ের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দেন তিনি।

রহিমা বলেন, ‘আমি ঢাকায় যে বাসায় কাজ করি তাদের দেশের বাড়ি ঝিনাইদ শহরের আদর্শপাড়ায়। ঈদের ছুটিতে তারা ঝিনাইদহে যান। আর আমি চলে যাই কুমারখালীতে। ১৭ এপ্রিল আমাদের ঢাকায় চলে আসার কথা। তাই ১৬ তারিখেই কুমারখালী থেকে ঝিনাইদহে গিয়ে আমার গৃহকর্তার বাসায় অবস্থান করি।’

তিনি বলেন, “১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার সময় হঠাৎ আমাদের গ্রাম থেকে এক চাচা ফোনে জানান যে ফেসবুকে আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা, পর্ব-৫৭৫’ নামের এক অনুষ্ঠানে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ে আমাদের গ্রামের নাম বলে নাকি আমার বোন দাবি করছে। সে সময় চাচা আমাকে ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান দেখতে বলেন।”

রহিমা বলেন, ‘এরপর আমি বাসার লোকজনে সহযোগিতায় ফেসবুকের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওটা দেখি। ভিডিওর ওই মেয়েকে প্রথম দেখায়ই আমার বুকের মধ্যে একটা বাড়ি মারে! সব কিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। আমার গা তখন কাঁপছিলো! মুখ দিয়ে কোন কথা আসছিলো না।

‘তবে প্রথম দেখায়ই আমি চিনে ফেলি যে এটা আমারই বড় বোন রাশিদা। চিনবো না? আমার রক্ত, আমি এক দেখায়ই চিনবো। একদম আমার মতো দেখতে। তাছাড়া ভিডিওতে সে বলছে তার ছোট বোনের নাম রহিমা, ভাইয়ের নাম ইউনুস, মায়ের নাম বেগম। সবই মিলে যায়।’

রহিমা বলতে থাকেন, ‘তখন সব কিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধু আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো। আমি কল্পনাও করিনি আমি আমার বড় বোনকে আর খুঁজে পাবো!’

‘তখন শুধুই ভাবছিলাম- হারিয়ে যাওয়ার পর আমার বোনের কত কষ্টই না হয়েছে। কত আপদ-বিপদই না তার পার করতে হয়েছে। তখন থেকেই মনের মধ্যে দুমড়ে-মুছড়ে যাচ্ছে, কখন আমি আমার বোনকে সামনা-সামনি দেখতে পাবো? কখন বোনকে একটু জড়িয়ে ধরবো? বলেন রহিমা।

রহিমা আরও বলেন, “ওই রাতেই আমাদের বাসা থেকে ফেসবুকের ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান যারা করেন তাদের মধ্যে তানভীর ও আরিফ নামের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা বলে- ‘আপনারা ঢাকায় আসেন। আমরা রাশিদাকেও ঢাকায় এনে একদিন সময় করে আপনাদের একসঙ্গে মিলিয়ে দেব।’ এরপর আমি কুমারখালীতে মাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। মা মনে হয় এখন বোনকে দেখার আশায় ঘুমাতে পারছে না। শুধু কান্নাকাটি করছে।”

দু’বোনের দেখা হয় যেভাবে

আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠান থেকে তানভীর ও আরিফ নামের দুজন রহিমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ২২ এপ্রিল (সোমবার) বিকেলে মহাখালীতে অবস্থিত তাদের স্টুডিওতে যেতে। সেখানেই তাদের ক্যামেরার সামনে হারিয়ে যাওয়ার পর দুই বোনের প্রথম দেখা হবে।

মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সময় হাতে রেখেই রওনা দেন রহিমা। এরপর বিকেল ৫টায় রহিমার জীবনে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানের স্টুডিওতে দেখা হয় ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বড় বোন রাশিদার সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর এনায়েতপুর গ্রামে থাকা রহিমার মা বেগমের সঙ্গেও ভিডিও কলে দেখা ও কথা হয় রাশিদার। সে সময় মা-মেয়ে দু’জনই অঝোরে কাঁদতে থাকেন। ফিরে পাওয়া মেয়েকে উদ্দেশ করে মা বলতে থাকেন- ‘তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। আমি তোকে ছুঁয়ে দেখবো।’

রাশিদা স্টুডিও থেকে বের হয়ে রহিমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘তোর তো নাকফুল ছিলো না, এখন তোর নাকে নাকফুল। তুই কত বড় হয়ে গেছিস। আমার ছোট ভাইটাও মনে হয় অনেক বড় হয়ে গেছে। মাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে খুব মন চাচ্ছে।’

এই পর্যায়ে দুই বোনের কান্নায় আর সব কথা হারিয়ে যায়।

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে
বাঁ থেকে- রাশিদা, রহিমা, রহিমার বড় ছেলে রাহুল ও রাশিদার বড় ছেলে শাকিল। ছবি: নিউজবাংলা

রাশিদার জীবনের গল্প

৩০ বছর আগে রাশিদার হারিয়ে যাওয়ার গল্প জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় মা যে বাড়িতে আমাকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলো সেখানে বাসার লোকজন আমাকে খুব মারতো। একদিন মেরে তারা আমার মাথা দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছিল। সেদিনই রাগ করে ওই বাসা থেকে পালিয়ে একটা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গাড়িতে উঠে বসি।

‘ওই বাসে ওঠার বিশেষ কারণও ছিল। বাসের লোকজন বলছিলো যে উল্লাপাড়ায় একটা এনায়েতপুর আছে। সে সময় আমার মনে ছিলো যে আমার বাড়িও এনায়েতপুরে। কিন্তু আমার জেলা কুষ্টিয়া, থানা কুমারখালী সেটা তখন মনে ছিলো না।’

রাশিদা বলেন, উল্লাপাড়ার এনায়েতপুরে গিয়ে দেখি এটা আমার বাড়ির এনায়েতপুর না। তখন ওই এনায়েতপুরের এক মহিলা তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়। তাদেরও কোনো মেয়ে সন্তান ছিল না। এর কিছুদিন পর তারা আমাকে তাদের পারিচিত একজনের ঢাকার শ্যামলীর বাসায় কাজ করতে পাঠায়। সেখানে আমি অনেক বছর থাকি।’

রাশিদা জানান, শ্যামলীর ওই বাসার লোকজন তাকে একসময় বিয়ে দিয়ে দেন। তার স্বামীর বাড়িও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি উল্লাপাড়ায় চলে যান। তখন থেকে তিনি এখানেই ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় আমার স্বামী করোনায় মারা যায়। তারপর সরকার আমার থাকার জন্য এনায়েতপুরের এক আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটা বাড়ি বরাদ্দ দেয়। এখন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে টিউবওয়েল বসানোর কাজ করে এবং মেঝো ছেলে এতিমখানায় থাকে। আর ছোট সন্তান মেয়েটা আমার সাথেই থাকে। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি।’

ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’র খোঁজ পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘আমি যে বাড়িতে কাজ করি ওই বাড়ির মেয়ে আমাকে এই অনুষ্ঠানের খোঁজ দেয়। সেই আমাকে এখানে নিয়ে আসে।’

রাশিদা বলেন, ‘এখন আমার একটাই চাওয়া আমার ভিটেয় (বাড়ি) যাওয়া। আমি আজ সিরাজগঞ্জ চলে যাব। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় মায়ের কাছে যাব। মায়েরে ছুঁয়ে দেখব।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘সামান্য জেলা আর থানার নাম মনে না থাকায় আজ ৩০ বছর আমি আমার পরিবার থেকে আলাদা। আমার শুধু মনে ছিলো এনায়েতপুর গ্রামের কথা। কুমারখালীর এনায়েতপুরের খোঁজে বের হয়ে আমি এখনও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আরেক এনায়েতপুরের বাসিন্দা হয়ে আছি।’

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
People of 40 villages suffered due to the broken bridge

ভাঙা সেতুতে ভোগান্তি ৪০ গ্রামের মানুষের

ভাঙা সেতুতে ভোগান্তি ৪০ গ্রামের মানুষের স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেতুর ভাঙা অংশে বাঁশের মাচাল বিছিয়ে চলছে হালকা যানবাহন। ছবি: নিউজবাংলা
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘সেতুটি অনেক আগের। এ কারণে ভেঙে গেছে, তবে সেতুটি দিয়ে প্রায় ৪০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ও নওদা শালুয়া খালের ওপরে নির্মিত সেতু ভেঙে পড়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে বাঁশের মাচাল দিয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ।

উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সেতুর পূর্ব পাশের ভারী যানবাহন চলাচল একদম বন্ধ হয়ে গেছে।

নলকা-শালুয়া সেতু দিয়ে চলাচলকারী জানান, কয়েক যুগ আগে নির্মিত সেতুটি গত পাঁচ বছর ধরে নড়বড়ে ছিল। এ অবস্থায় স্থানীয় ইটভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচল করায় সম্প্রতি সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়েছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে অটোরিকশা ভ্যানসহ হালকা যানবাহন এখনও চলাচল করছে।

তারা জানান, বর্তমানে ভাঙা অংশের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় ওই ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁশের মাচাল বিছিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে, তবে খুঁটির নড়বড়ে অবস্থা।

জরুরি ভিত্তিতে নলকা-শালুয়া সেতু সংস্কার বা পুনরায় নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ভাঙা সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও কাজ হচ্ছে না। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসী মিলে সামান্য চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মুহূর্তে সেতু ভেঙে মানুষের মৃত্যুসহ বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারে।’

পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘সেতুটি অনেক আগের। এ কারণে ভেঙে গেছে, তবে সেতুটি দিয়ে প্রায় ৪০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সেতুর যাবতীয় তথ্যাদি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।’

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘সেতু পরিদর্শন শেষে এলজিইডিকে জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত জনগণের ভোগান্তি নিরসন করা হবে।’

আরও পড়ুন:
খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
সরকারি খালে পারিবারিক সেতু
৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক, চালক ও যাত্রীদের স্বস্তি
সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, জনদুর্ভোগ
যানজটে নাকাল বাঁশখালীর এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Almost closed import of perishable goods through Benapole port
পেট্রাপোলে সময়ক্ষেপণ

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে ওপারেই। ছবি: নিউজবাংলা
পণ্য আমদানিকারকরা জানান, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল পণ্য আমদানি থেকে, কিন্তু বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। 

গত কয়েক মাস ধরে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র ৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানিত নিয়ম চালু করেছে।

এদিকে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে পরদিন। ফলে অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে না পেরে নষ্ট হচ্ছে ওপারেই।

সিরিয়ালের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওপারে ট্রাক আটকে থাকায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে তারা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে।

সেইসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি

পণ্য আমদানিকারকরা জানান, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল পণ্য আমদানি থেকে। কিন্তু বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি, ক্যাপসিকাম, কাচা মরিচসহ অন্য পচনশীল পণ্য আমদানি হয় দুপুরের পরপরই। ফলে সন্ধ্যার আগেই এসব পণ্য চালান খালাস হয়ে চলে যেত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু গত মাসখানেক ধরে ভারতীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র পাঁচ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানির নিয়ম চালু করেছে।

‘কোনো কোনো চালান সিরিয়াল পেয়ে রাতে প্রবেশের অনুমতি পেলেও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় পরদিন বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পণ্য চালান পচন ধরতে শুরু করে।’

পচনশীল পণ্য আমদানিকারকদের দাবি, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জেনারেল গুডস আমদানির অনুমতি দেয়া হোক। শুধু পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর থেকে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য একসঙ্গে সব পচনশীল পণ্য চালান আমদানির অনুমতি দিলে পচনশীল পণ্য খুব দ্রুত সময়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।

তারা জানান, গত মাসখানেক আগেও এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি হতো। যা থেকে সরকার প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছিল। ফলে বর্তমানে আমদানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ট্রাকে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তিকরণ বিধিমালা-২০২১ নামে একটি নতুন বিধিমালা জারি করেন। যার আওতায় ৬৩ ধরনের পচনশীল পণ্যের শুল্কায়নসহ সব কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ মার্চ ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনিল কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজারকে বলা হয়েছে। পচনশীল পণ্য দ্রুত রপ্তানির বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।

বেনাপোল আমদানীকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাসের নিয়ম থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রতিপালন করছেন না।

পচনশীল পণ্য দ্রুত আমদানিতে সিরিয়ালের নামে দীর্ঘসূত্রিতা প্রথা বাতিল করে পূর্বের ন্যায় আমদানির পণ্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের দাবি করেছেন আমদানিকারকরা।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে পেট্রাপোল পোর্ট ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানিয়েছি অন্য পণ্যের সঙ্গে পচনশীল পণ্যের গাড়ির সারা দিনব্যাপী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে সে অনুযায়ী সিরিয়াল মেইনটেন করার জন্য তাকে আমি অনুরোধ করেছি।’

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দরে আগের তুলনায় আমদানি কমে গেছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও অনেক কমে গেছে।

আরও পড়ুন:
ভারত থেকে চার চালানে ১০০০ টন আলু আমদানি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে বেনাপোলে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে সন্ধ্যার পর পচনশীল পণ্য আনা যাবে না
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্লেন্ডিং মেশিনে প্রায় আড়াই কেজি স্বর্ণ

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
In three years the money donated to Pagla Mosque has increased three times

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা সাধারণত প্রতি তিন মাস পর পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। ছবি: নিউজবাংলা
ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। আর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মেলে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের বেশি সময়কালে মসজিদটিতে দানের টাকা বেড়েছে সোয়া তিন গুণের বেশি।  

মনের বাসনা পূরণের আশায় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে প্রতিনিয়ত টাকা, অলংকারের মতো বিভিন্ন বস্তু ও হাঁস, মুরগির মতো জীবিত প্রাণী দান করেন স্থানীয়সহ অন্য জেলার লোকজন।

সাধারণত প্রতি তিন মাস পর দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে থাকে আলোচনায়।

দানবাক্স গণনার পর প্রতিবারই টাকার পরিমাণটা সাধারণত আগের মাসের চেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। গত তিন বছরের হিসাবে দেখা যায়, কিছু ব্যতিক্রম বাদে প্রতিবারই বেড়েছে দানের টাকা।

কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। সম্প্রসারণের পর মসজিদের আওতাধীন জায়গা দাঁড়িয়েছে তিন একর ৮৮ শতাংশে।

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

তিন বছরের কোন সময়ে কত টাকা দান

পাগলা মসজিদে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্সের টাকা গণনা করা হয়েছিল। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল গণনা করা হয় টাকা।

ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। আর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মেলে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের বেশি সময়কালে মসজিদটিতে দানের টাকা বেড়েছে সোয়া তিন গুণের বেশি।

মসজিদটিতে ২০২১ সালের ১৯ জুন পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ টাকা। একই বছরের ৬ নভেম্বর পাওয়া যায় রেকর্ড পরিমাণ তিন কোটি সাত লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা।

পরে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া ওই বছরের ৩ জুলাই পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। একই বছরের ২ অক্টোবর মেলে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা।

তিন মাস এক দিন পর ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

এরপর রমজানের কারণে চার মাস পর ৬ মে দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ১৯টি বস্তায় রেকর্ড পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার, হীরা ও বিপুল পরিমাণ রুপা পাওয়া গিয়েছিল। ওই বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল এ মসজিদের আটটি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পান।

একই বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন রেকর্ড ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময়ে পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।

পাগলা মসজিদে আটটি দানবাক্স থাকলেও তখন থেকে একটি বাড়ানো হয়।

গত বছরের পর এবার ৪ মাস না যেতেই আলোচিত ও ঐতিহাসিক মসজিদটির দানবাক্সে সব রেকর্ড ভেঙে মেলে পৌনে আট কোটি টাকা।

দান করেন কারা

দিনের পাশাপাশি গভীর রাতে গোপনে অনেকে দান করে থাকেন পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলোতে। টাকা, অলংকারের পাশাপাশি প্রতিদিন মসজিদে দান করা হয় হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল। কারা দান করেন এসব টাকা এবং কোন খাতে ব্যয় হয় এসব অর্থ, সে তথ্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন এ মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন ২৭ বছর ধরে, যার ভাষ্য, ‘শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’

তিনি জানান, অতীতে এ মসজিদে কেবল আশপাশের এলাকার মানুষ দান করতেন। আর এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে টাকা-পয়সা দান করেন। এ ছাড়া বিদেশিরা অনেক সময় আসেন। পুরো মসজিদ ঘুরে দেখে যাওয়ার সময় দানবাক্সে বৈদেশিক মুদ্রা দান করেন।

মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলেন, এখানে দান করার পর তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করেন তারা।

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

টাকা ব্যয় হয় যেসব খাতে

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ বাবদ ব্যয় হয় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ১২৪ জন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য এবং অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের জন্য ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও করোনাকালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তিনি জানান, পাগলা মসজিদের টাকায় ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ১৩০ জন এতিম শিশু পড়াশোনা করছে। মসজিদের টাকায় তাদের যাবতীয় ভরণপোষণ ও জামাকাপড় দেয়া হয়ে থাকে। ওয়াকফ এস্টেটের অডিটর দিয়ে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হয়।

শওকত উদ্দিন জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ৩১ সদস্যের কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই কমিটিতে আছেন।

অতীতে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করা হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অনুদান বন্ধ রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ দানের টাকার বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ এ এলাকার মানুষের একটি আবেগের স্থান, যে কারণে আমরা প্রতিবারই দান হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকি।

‘আমরা মানুষের স্বপ্ন ও ইচ্ছা অনুযায়ী বর্তমান মসজিদের স্থানে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে এমন একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করব। আধুনিক স্থাপত্যের এ মসজিদ নির্মাণে অচিরেই নকশা চূড়ান্ত করাসহ কাজ শুরু হবে।’

তিনি জানান, প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া দানের টাকায় জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।

দানের টাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামি কমপ্লেক্স

মেয়র পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

আরও পড়ুন:
বেনাপোল ছেড়ে ভোমরায়, নেপথ্যে...
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে টিসিবি
তিন দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে: প্রতিমন্ত্রী
ভারত থেকে আরও ৩০০ টন আলু আমদানি
নারীর দান করা দুই হাত জোড়া লাগল পুরুষের শরীরে

মন্তব্য

p
উপরে