ইউরোপে শীত মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই জ্বালানি চাহিদার জোগান নিশ্চিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে-গোপনে চলছে নানান দেনদরবার। এরই মধ্যে রাখঢাক না রেখেই রুশ সহায়তা চেয়েছে হাঙ্গেরি। দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে মস্কোতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে হাঙ্গেরির দ্বন্দ্ব। কিন্তু কেন? যুক্তরাজ্যের দ্য স্পেকটেটরে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন সারোয়ার প্রতীক।
চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মস্কোতে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সাইয়ার্তোকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় দিলখোলা ভঙ্গিতে কথা বলেছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের ডানহাত হিসেবে পরিচিত সাইয়ার্তো স্বীকার করে নেন, আসন্ন তীব্র শীত মৌসুমে তার দেশ রাশিয়ার জ্বালানি সহায়তা ছাড়া চলতে পারবে না। জবাবে ল্যাভরভ প্রতিশ্রুতি দেন, বর্ধিত গ্যাস সরবরাহের জন্য হাঙ্গেরির অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে ‘বিবেচনা করবে’ ক্রেমলিন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি সদস্য দেশ তার জনগণকে উষ্ণ রাখতে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারকে তোয়াজ করছে- এমন অপমানজনক পরিস্থিতি ইইউর জন্য কল্পনা করাও কঠিন।
ল্যাভরভ-সাইয়োর্তো বৈঠকটি রাশিয়ার জন্য ছিল একটি স্বপ্ন। অর্থনৈতিক চাপের মুখে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় ঐক্য ক্রমেই ভেঙে পড়ছে এবং ডনবাসে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে এই বৈঠককে।
ভয়ানক অনিবার্য পরিস্থিতির মুখে রাশিয়ান গ্যাসের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মাত্রা কমছে। রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ব্লকের দেশগুলো মে মাসে অনেক চেষ্টা করে রাশিয়ান তেলের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞার দিকে গিয়েছিল।
তবে এর পরই আশঙ্কা তৈরি হয়, পুতিন জার্মানির মতো দেশগুলোকে শীত মৌসুমে ঠান্ডায় জমিয়ে দিতে গ্যাসের জোগান বন্ধ করে দেবেন। এই আশঙ্কা থেকেই ইউরোপের সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের জ্বালানির ব্যবহার যথাসাধ্য কমিয়ে আনতে এবং আসন্ন সংকট সম্পর্কে সচেতন হতে সতর্ক করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতি হাঙ্গেরির আগ্রহ অনেকের কাছে প্রচণ্ড বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সাইয়োর্তো হাঙ্গেরিতে দুটি পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে আর্জি জানিয়েছেন। এই চুল্লি দুটি নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসাটম।
তবে এমন যুক্তিও দেয়া যেতে পারে, বুদাপেস্ট বরং সৎ আচরণ করছে, যেখানে ইউরোপের অন্যরা হাঁটছে ঘুরপথে। জার্মানি নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে আরও বেশি গ্যাসের জোগান পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। যদিও দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এর আগে দাবি করেছিলেন, ‘পুতিনের আগ্রাসী, সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারত্ব অকল্পনীয়।’
বিপরীতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই হাঙ্গেরি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। দেশটি নিশ্চিত ছিল, রাশিয়ার ওপর ইউরোপের অপরিহার্য জ্বালানি নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ভণ্ডামিকে অনিবার্য করে তুলবে। গত সপ্তাহেই অরবান বলেছিলেন, ইইউ রাশিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে গিয়ে ‘নিজের ফুসফুসে নিজে গুলি করেছে’।
সংকটের মাঝে হাঁসফাঁস করা ইইউ একমাত্র উপায় হিসেবে ব্রাসেলসে আরও শক্তি কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে। উরসুলা ভন ডের লেয়েন গত বুধবার একটি জরুরি আইনের প্রস্তাব করেন, যা ইউরোপীয় কমিশনকে সদস্য দেশগুলোতে জ্বালানি রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেবে। এই আইন তৈরির ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর স্বাভাবিক ভেটো ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাব পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে বাজেভাবে মোকাবিলা করার একটি চেষ্টামাত্র। শীত মৌসুম সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের সরকার এখন গ্যাসের মজুত নিয়ে উৎকণ্ঠিত। এমন অবস্থায় ব্রাসেলসকে অতিরিক্ত ক্ষমতাবান করা নয়, দেশগুলো বরং জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিত করা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন। ফলে সদস্য দেশগুলোর একটি গ্রুপের বিরোধিতার মুখে প্রস্তাবটি বাতিল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি এবং প্রচেষ্টাটি মাঠে মারা গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
ওই ঘটনার পর হাঙ্গেরি আরেকটি অবন্ধুসুলভ আঘাত করেছে। বুদাপেস্ট ইইউর প্রস্তাবিত জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ছাড়াও আরেক ধাপ এগিয়ে আগামী মাস থেকে গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে অরবান বেশি জোর দিচ্ছেন জাতীয়তাবাদের ওপর। তিনি বিশ্বাস করেন, ইইউর অবস্থান হাঙ্গেরির জন্য ক্ষতিকর এবং নিজ দেশের জ্বালানি নীতি পরিচালনার ক্ষমতা নিজেদের হাতেই থাকা উচিত।
তার এই মনোভাব ইউক্রেনকে সাহায্য করছে না। তবে হাঙ্গেরির অবস্থানের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে বুদাপেস্টের অর্থনৈতিক সংকট এবং বাস্তবকে বুঝতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অদক্ষতাকেও বিবেচনায় নেয়া উচিত। এগুলোই বুদাপেস্টকে পুতিনের আরও বেশি আলিঙ্গনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
হাঙ্গেরির অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে, সমালোচকরা মনে করছেন সেখানে ‘অরবানমিক্স’ ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। ইউরোর বিপরীতে হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রার রেকর্ড দরপতন হয়েছে, উদ্যোক্তাদের জন্য ট্যাক্স ছাড় বাতিল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বুদাপেস্টে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশে।
অরবান গত এপ্রিলে নির্বাচনের সময় হাঙ্গেরিয়ানদের যুদ্ধের প্রভাব থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ কারণে চলমান অর্থনৈতিক ঝড় তার অবস্থান দুর্বল করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইইউ নিজেও হাঙ্গেরিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কোভিড মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের অর্থ আটকে রাখার পাশাপাশি দেশটির জন্য তহবিল সহায়তা সংকোচনের নতুন ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থাটি।
ব্রাসেলস এবং বুদাপেস্টে অরবানের বিরোধীদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হাঙ্গেরিকে একটি শীতল সঙ্গ দিয়ে চলছে। এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করতে পারে। কারণ পশ্চিম থেকে সহানুভূতির ঘাটতিতে সামনের কঠিন সময়ে সাহায্যের জন্য প্রাচ্যের দিকে ফিরে তাকাতে খুব সামান্য তাগিদই বোধ করবেন অরবান।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে ইউক্রেন, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র গোপনে সরবরাহ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
বিবিসি বৃহস্পতিবার জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদিত ৩০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ। চলতি বছরের মার্চে সহায়তার অনুমোদন দেয়া হয়। এপ্রিলে অস্ত্রগুলো ইউক্রেনে পাঠানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য অন্তত একবার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের জন্য নতুন করে ছয় হাজার ১০০ কোটি ডলার সহায়তার প্যাকেজে সই করেছেন বাইডেন।
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে বিভিন্ন সময়ে ওয়াশিংটনকে তাগিদ দিয়ে আসছিল কিয়েভ, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর আগে ইউক্রেনকে মধ্যমপাল্লার আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস তথা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দেয়া হয়েছিল।
ইউরোপের দেশটিকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে রাজি হচ্ছিল না বৈশ্বিক পরাশক্তিটি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দিতে বাইডেন ফেব্রুয়ারিতে সবুজ সংকেত দেন। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দূরপাল্লার এটিএসিএমএস সরবরাহ করেছে বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি।’
আরও পড়ুন:নথিপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে আইন পাস করেছে যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অফ লর্ডসের বিরোধিতা এবং নানা বিতর্কের পর পার্লামেন্টে মঙ্গলবার সকালে এ সংক্রান্ত বিলটি পাস করে আইনে পরিণত করা হয় বলে জানায় বিবিসি।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসে বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৩১৭টি এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৩৭ টি। মোটামুটি বড় ব্যবধানেই বিলটি পাস হয়।
এ আইনে রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেখানে কিছু আশ্রয়প্রার্থী পাঠানো সরকারের পরিকল্পনার একটি মূল অংশ।
হাউস অব লর্ডস থেকে এই বিলের বিষয়ে দুটি আপত্তি জানানো হয়। সেই বিষয়ে হাউস অব কমনসে বিতর্ক শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। পরে দীর্ঘ বিতর্ক শেষে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে বিলটি পাস হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোমবার জানান, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর ফ্লাইট ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করতে চান। প্রথম ফ্লাইট জুলাইয়ে রুয়ান্ডায় রওনা হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার ঋষি বলেন, ‘আমরা বিমানঘাঁটি প্রস্তুত রেখেছি। বাণিজ্যিক বিমান ভাড়া করেছি এবং অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে পাহারা দিয়ে রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০ স্টাফকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আর কোনো যদি এবং কিন্তু নেই। ফ্লাইটগুলো রুয়ান্ডায় যাচ্ছে। আমরা প্রস্তুত, ফ্লাইটগুলো পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
এর আগে নথিপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তরের জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিনসেন্ট বাইরুতার সঙ্গে এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নিজ দেশের অভিবাসী কেন্দ্রগুলো থেকে সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রুয়ান্ডা পাঠাবে ব্রিটেন। সেই সঙ্গে ব্রিটেন থেকে যাওয়া অভিবাসীদের অন্য কোনো দেশে পাঠানো যাবে না বলে রুয়ান্ডারকে শর্ত দেয়া হয়েছে।
ওই সময় চুক্তিতে মতানৈক্য থাকায় যুক্তরাজ্যের অভিবাসনমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন রবার্ট জেনরিক।
আরও পড়ুন:গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়া বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ ব্রিটন জন টিনিসউড জানালেন তার ১১১ বছরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য।
টিনিসউডকে উদ্ধৃত করে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টিনিসউড মনে করেন, এত বছর বেঁচে থাকাটা তার ভাগ্যে ছিল। তার ডায়েটে বিশেষ কোনো গোপনীয়তা ছিল না। প্রতি শুক্রবার টিনিসউডের প্রিয় খাবার মাছ এবং চিপস।
এর আগে ১১৪ বছরের দীর্ঘজীবন শেষে ২ এপ্রিল মারা যান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরা। ‘তিও’ ডাকনামে পরিচিত এ ব্যক্তি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার নাগরিক।
ভিসেন্তে পেরেজ মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকারসূত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসটি পান ব্রিটন জন টিনিসউড।
উত্তর ইংল্যান্ডের মার্সিসাইডে ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং প্রাক্তন ডাক পরিষেবা কর্মী। টিনিসউডের বয়স ১১১ বছর এবং ২২২ দিন।
দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আপনার আয়ু হয়ত দীর্ঘ হবে অথবা কম হবে। এখানে আপনার কিছুই করার নেই।’
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। তার বয়স বর্তমানে ১১৭ বছর।
পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে শুক্রবার রাতে কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দুই দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শোক পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় চার ব্যক্তিকে।
বন্দুক হামলার পর জড়িত সবাইকে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রোববারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কনসার্ট শুরুর আগে হলে আগত লোকজনের ওপর ওই হামলায় প্রাণ যায় তিন শিশুসহ ১৩৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হন ১৮২ জন।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি এখনও হাসপাতালে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দুক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে নিজ বাসভবন এলাকার একটি গির্জায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুতিন।
এর আগে ঘটনাস্থল ছয় হাজার ২০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রোকাস সিটি হলের বাইরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুশ নাগরিকরা। এ হলে সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’ পারফর্ম শুরু করার আগে হামলা চালান চার বন্দুকধারী।
বিশ্বজুড়ে নিন্দিত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), তবে পুতিন তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ না করে বলেছেন, হামলাকারীরা পালিয়ে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যে চার বন্ধুকধারী হামলা চালিয়েছে সেই চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৩৩ জনকে হত্যা ও ১৪০ জনের বেশি মানুষকে আহত করার ওই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত।
পুতিন বলেছেন, সবমিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বন্ধুকধারী ইউক্রেনে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হামলাকারীদের ইউক্রেনে সরিয়ে নেয়ার জন্য সীমান্তে প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
ভয়াবহ এ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন।
শনিবার টেলিগ্রামে আইএসের প্রচারমাধ্যম আমাক চার মুখোশধারীর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে এরাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অবশ্য আইএসের দাবি নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর শুক্রবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আসা লোকজনের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। ‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য