আল জাজিরায় কাজ করা ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর জেনিন থেকে রিপোর্ট করার সময় ১১ মে সকালে মাথায় গুলির আঘাতে নিহত হন। তিনি সে সময় ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) একটি অভিযান কভার করছিলেন। ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার মাঝে এটি ছিল জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরিচালিত কয়েকটি অভিযানের অন্যতম। আইডিএফের কয়েকটি অভিযানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
সাংবাদিক শিরিন হত্যার পরের ঘটনার ভিডিও দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিশৃঙ্খল মুহূর্তগুলো দেখা যায় ভিডিওতে। দেখা গেছে, অন্যরা তার মরদেহের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
ভিডিও থেকে প্রমাণিত, শিরিনের মাথায় গুলি লেগেছিল।
ভিডিওতে যেমনটা দেখা গেছে, সে সময় শিরিন আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গে ছিলেন। তার পরনে পরিষ্কার অক্ষরে ‘প্রেস’ লেখা নীল রঙের ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট ছিল।
শিরিন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট দাবি করেন, ‘সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তার মারা যাওয়ার ‘সম্ভাবনা আছে’। তবে পরে এক সংবাদ সম্মলনে ইসরায়েলের ডিফেন্স মিনিস্টার বেনি গান্টজ বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে, আবার দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষের গুলিতেও তার মৃত্যু হতে পারে। আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আল জাজিরা এ ঘটনায় সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়, শিরিন কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সেটা ‘পরিষ্কার’ নয়।
ভিডিও, অডিও বিশ্লেষণ করে পুরো বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করেছে নেদারল্যান্ডসের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাইট বেলিংক্যাট। তাদের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
শিরিন হত্যার সময় তার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের দাবি, আইডিএফ সৈন্যরা কোনো সতর্ক বার্তা ছাড়াই তাদের ওপর গুলি চালায়। সাংবাদিকদের বিশ্বাস, তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হয়েছে।
এ হত্যায় আইডিএফ নিজেদের সৈনিকের দায় স্বীকার করে নিলেও, ১৩ মে তারা যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে শিরিনের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উন্মুক্ত সোর্সের ছবি ও ভিডিওতে দেখে কার গুলিতে শিরিন নিহত হয়েছেন পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে এগুলো থেকে বোঝা সম্ভব, ঘটনা কী ঘটেছিল এবং সেগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিবৃতির তুলনা করা যেতে পারে।
আইডিএফের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের সৈন্য ও শিরিনের মাঝখানে অন্য যোদ্ধা থাকতে পারে। এতে আরও বলা হয়, একজন ইসরায়েলি সৈন্যের বুলেট অসাবধানতাবশত তাকে আঘাত করে। তবে আইডিএফ ও সাংবাদিকদের মাঝে ওই রাস্তায় অন্য কোনো সশস্ত্র ব্যক্তির অস্তিত্ব ভিডিও ফুটেজে নেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকরা সরু ওই রাস্তায় এমন কোনো যোদ্ধাকে দেখেননি বা দেখলেও সেটা বলেননি। তাদের বক্তব্য তাই ইসরায়েলি সৈন্যদের থেকে আলাদা।
আইডিএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বন্দুকধারীরা আইডিএফ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ওইভাবে শিরিন আঘাত পেতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বন্দুকধারীরা একটি গলিপথ থেকে আইডিএফ সৈন্যদের দিকে দ্রুত গুলি ছুড়ছে।
শিরিনের মৃত্যুর পর মুহূর্তে যখন এক ব্যক্তি তার মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, সে সময় যে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে তা উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং তা ধীরগতির ও ইচ্ছাকৃত। এ থেকে বোঝা যায়, একঝাঁক গুলি না করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওগুলোতে চিত্রিত বন্দুকধারীদের অবস্থান আইডিএফ সৈন্যদের তুলনায় শিরিনের কাছ থেকে অনেক দূরে। অথবা তারা অবস্থান শিরিনকে দেখার বা লক্ষ্য করার মতো অবস্থানে নেই।
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ইমেজ ও ভিডিও আর সেই সঙ্গে বেলিংক্যাটের করা একটি অডিও বিশ্লেষণও সাক্ষীর সাক্ষ্যের দিকগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়।
শিরিনের মৃত্যুর প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আইডিএফ বাহিনী এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, যা ১৯০ থেকে ২৫০ মিটার দক্ষিণে প্রসারিত। ওই অবস্থান থেকে শিরিনকে গুলি করা হয়েছিল। এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ টুইটারে পোস্ট করা অন্য একটি ভিডিওর অডিও বিশ্লেষণ থেকে অনুমান করা যায়, শিরিনের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীদের দিকে ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল। একই ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, বন্দুকের গুলিগুলো দক্ষিণে শুরু হয়েছে যখন পূর্বোক্ত ব্যক্তি শিরিনের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
শিরিনকে যে স্থানে গুলি করা হয়েছিল তার দক্ষিণে আইডিএফ সৈন্যদের আবির্ভাবের সঠিক সময় ফেসবুক ভিডিওটি থেকে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ও ক্যামেরা অপারেটরদের ধারণ করা ফুটেজ থেকে মেটাডেটা বা আইডিএফের ভিডিও এ বিষয়ে আরও স্পষ্টতা তৈরি করতে পারে। এটি শিরিনের মৃত্যুর সময় সৈন্যদের অবস্থানের সম্ভাবনাকে আরও নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হবে।
ঘটনাস্থল
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিরিনের সহকর্মীরা একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যাতে জেনিনে গুলি চালানোর পরের ঘটনাগুলো দেখা যায়।
শহরের পশ্চিমে বালাত আল শুহাদা রাস্তায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নিচের স্ক্রিনশটটি শিরিনের শুটিংয়ের পর নেয়া একটি ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে। এটি টুইটারে আল জাজিরার একজন প্রযোজক শেয়ার করেন। এটি ড্যাশবোর্ড ও ছাদে অবস্থিত ক্যামেরা থেকে রাস্তার চিত্র সংগ্রহ করা ক্রাউড সোর্সিং সাইট ম্যাপিলারির এক ব্যবহারকারীর ২০২০ সালের ওই স্থানের তোলা একটি ছবির সঙ্গে মিলে যায়।
হত্যার সময়
একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, শিরিন পড়ে আছেন। সেগুলোর ছায়ার দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে বের করা সম্ভব এ হত্যাকাণ্ড কখন ঘটেছে।
বেলিংক্যাট গোলাগুলির প্রথম যে ভিডিওটি পেয়েছে সেটি টেলিগ্রামে শেয়ার করা হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬.৩৬ মিনিটে। শিরিনের সঙ্গে থাকা আরেক সাংবাদিক আলি আল-সামুদি, যিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হন, তিনি ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পুরো সময় লাইভ স্ট্রিম করেন। তার লাইভ স্ট্রিম শুরু হয় সকাল ৬.৩৩ মিনিটে।
এই ভিডিওতে ছায়ার দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে সেই সময় নির্ণয় করা সম্ভব। ওপরে উল্লেখিত ভিডিও যেটি আল জাজিরার প্রযোজক শেয়ার করেছেন সেখানে ক্যামেরা বালাত আল শুহাদা সড়ক বরাবর পশ্চিম দিকে মুখ করা। এরপর ক্যামেরা ঘোরানো হয় দক্ষিণ দিকে যেখানে আবু আকলেহর মরদেহ পড়ে ছিল। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মানুষজন ও রোড সাইনের ছায়া পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম দিকে পড়েছে।
জেনিনে সকালের সংঘর্ষ
ওইদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় সকাল ৬টা নাগাদ। টেলিগ্রামে ৫.৫৯ মিনিটে শেয়ার করা একটি ভিডিও শিরিন মারা যাওয়ার স্থানের প্রায় ১২০ মিটার পূর্বদিকে রেকর্ড করা হয়। সেখানে গুলির শব্দ শোনা যায় এবং দূরের বিল্ডিংয়ের ওপর সাদা ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
শিরিনের মৃত্যুর পর, কয়েকজন ইসরায়েলি ভাষ্যকার জেনিনে অদেখা লক্ষ্যবস্তুতে সশস্ত্র লোকজন গুলি চালাচ্ছেন এমন বেশ কয়েকটি ভিডিওর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অন্য একটি ভিডিওতে (‘ভিডিও টু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) দেখা যায়, একটি গলিপথে একজন লোক রাইফেল দিয়ে গুলি করছেন৷ ইসরায়েলি মিডিয়া রিপোর্ট ও আইডিএফ জানিয়েছে, অভিযানের সকালে এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। যিনি গুলি করার অংশটি ভিডিও করেছেন তিনি অন্য সশস্ত্র ব্যক্তিদের দলের অংশ। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী শুরুতে বলেন, এই ভিডিওতে যে গুলি চালানো হয়েছে তাতেই শিরিন নিহত হয়েছেন। তবে, ফুটেজ বিশ্লেষণে এ ধরনের দাবি সঠিক বলে মনে হয়নি।
ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিটিসেলেম, ভিডিও টু ধারণের জায়গায় গিয়েছিল। তারা একটি ভিডিও করে যেখানে ওই জায়গাটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওই ভিডিওর মাধ্যমে বেলিংক্যাট ভিডিও টুর জিওলোকেশন নিশ্চিত হয়েছে। শিরিন যেখানে নিহত হন সেখান থেকে ওই লোকেশন ২৭০ মিটার দূরে।
বিটিসেলেমের ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সশস্ত্র লোকটি যে গলিতে গুলি চালাচ্ছিল সেটির শেষে একটি প্রাচীর রয়েছে। শিরিন যেখানে নিহত হয়েছেন সেটি এ জায়গা নয়। অর্থাৎ, ভিডিও টু-তে গুলি করতে থাকা ব্যক্তিটির গুলি চালিয়ে শিরিনকে হত্যা করা সম্ভব নয়। যদিও সোশ্যাল মিডিয়াতে এর উল্টোটা চাউর হয়েছে।
১১ মে সকালে জেনিনে অভিযানের সময় রেকর্ড করা ভিডিও টুর সমর্থনে বেশ কিছু তথ্য আছে। প্রথমত, বেলিংক্যাট প্রথমে ভিডিও পায় ১১ মে সকাল ৬টা ৪১ মিনিটে টেলিগ্রামে। এই ভিডিওর ফ্রেমের একাধিক রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানের পর তা থেকে ওই সময়ের আগে কোনো ফল পাওয়া যায়নি৷
দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলি রাজনীতিক ও মিডিয়ার দাবিতে যে ভিডিওটি রেকর্ড করা হয় সেখানে বিটিসেলেমের টিম গিয়েছিল। ওই ভিডিওর বন্দুকধারী শিরিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে এমনটা দাবি ছিল ইসরায়েলের। সবশেষে, আইডিএফের বডি ক্যামের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সৈন্যরা একটি সমান্তরাল গলিপথে নেমে যাচ্ছে, যেখানে ভিডিও টুর বন্দুকধারী তার অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ছিল।
‘সকালে জেনিনে আইডিএফ সৈন্যদের সকালের কার্যক্রম’ শীর্ষক আইডিএফ প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সৈন্যরা বিটিসেলেমের ভিডিওতে যে গলি দেখা গেছে সে রকম একটা গলিপথ দিয়ে যাচ্ছে। এই দুই ভিডিওর তুলনা করলে দেখা যায়, ভিডিও টুর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ও আইডিএফ সৈন্যরা সমান্তরাল গলিপথে অবস্থান করছিল। শিরিন যখন নিহত হন তখন ওই দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল।
আইডিএফের বডিক্যাম ভিডিওর শেষে দেখা গেছে সৈন্যরা একটি রাস্তায় দৌড়ে বেরিয়ে আসে। সেখানে তখন পাঁচটি সাঁজোয়া যান অপেক্ষা করছিল। আইডিএফের এই অবস্থানটি ছিল, যেখানে শিরিনকে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখান থেকে একই রাস্তার দক্ষিণে। কনভয়ের সামনের গাড়িটি শিরিনকে গুলি করার স্থান থেকে প্রায় ১৯০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আর পেছনের গাড়ির দূরত্ব ছিল ২৫০ মিটার।
ফেসবুকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একই আইডিএফ গাড়ির কনভয় যাচ্ছে ও একই স্থানে এসে থামছে, যে স্থানটি আইডিএফের বডি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে। আপলোডের সময়টি আইডিএফ সৈন্যরা কখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে তার একটি উচ্চসীমা বেঁধে দেয়। অন্য কথায়, ভিডিওটি অবশ্যই ৬টা ৪০ মিনিটের আগে রেকর্ড হয়েছে। কারণ ওই সময় সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়।
ভিডিওটি বাড়ির ভেতর থেকে রেকর্ড করা হয়েছে বলে যে ব্যক্তি এটি রেকর্ড করেছেন তার নিরাপত্তার স্বার্থে বেলিংক্যাট এটির সঙ্গে কোনো লিঙ্ক রাখেনি।
বডিক্যাম ভিডিওর শেষে আইডিএফের অবস্থান একজন ক্যামেরা ক্রু প্রায় ১০০ মিটার উত্তরে ছয়টি ভিডিওর একটি সিরিজে রেকর্ড করেন। তার অবস্থান ছিল আইডিএফের অবস্থান এবং শিরিনকে গুলি করা স্থানের মধ্যে। এই ভিডিওগুলো টেলিগ্রামে পোস্ট করা হয়।
আইডিএফ বডি ক্যামেরার ফুটেজ ও টেলিগ্রাম ভিডিওগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, শিরিনকে যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় সে জায়গার প্রায় ২০০ মিটার নিচে রাস্তার একটি অংশ আইডিএফের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভিডিও থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, তার পাশের রাস্তাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সংঘর্ষ হচ্ছিল। এমন কোনো ফুটেজ বা ছবি পাওয়া যায়নি, যা থেকে বোঝা সম্ভব আইডিএফ সৈন্য ও শিরিনের মধ্যে কোনো ফিলিস্তিনি যোদ্ধা অবস্থান করছিল।
তবে আরেকটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে (‘ভিডিও থ্রি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) কাছাকাছি রাস্তার কোণে একদল ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে৷ তাদের গোলাগুলি করতে দেখা যাচ্ছে। আইডিএফ সাঁজোয়া কনভয়ের দক্ষিণে আনুমানিক এক ব্লক দূরত্বে ভিডিওটির নেয়া হয়েছে (ম্যাপিলারিতে যা দেখা যাচ্ছে)।
ভিডিওতে স্বল্প বিরতি দিয়ে পরপর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ভিডিও টু, ভিডিও থ্রি ও আইডিএফ বডি ক্যাম ভিডিও একসঙ্গে বিবেচনায় নিলে জেনিনে ওইদিন সকালে ভিডিওতে ধারণ করা দুটি পক্ষের অবস্থানের একটি আনুমানিক চিত্র পাওয়া যায়।
ভিডিও থ্রি ঠিক কোন সময়ে ধারণ করা হয়েছে সেটা বের করা সম্ভব হয়নি।
তবে লক্ষণীয় বিষয়, যে ভিডিওটি আল জাজিরার এক সাংবাদিক পোস্ট করেছেন যেখানে শিরিনের সহকর্মীকে গোলাগুলির মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে; সেখানে শটগুলো লক্ষ্য করে ও ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে বলে মনে হয়। উদ্দেশ্যহীন ও একাধারে গুলি ছোড়া হয়নি। গুলি ছোড়ার এই প্যাটার্নটি ক্রসফায়ারের নয়, বরং সাংবাদিকদের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে করার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। ভিডিও থ্রির ব্যক্তিদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে আইডিএফ কনভয়ের দক্ষিণে ও শিরিনের অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা দূরে।
এ ছাড়া বেলিংক্যাটের করা একটি অডিও বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, শিরিনের মৃত্যুর পরপর তার অবস্থানের দিকে গুলি চালানো হয়েছিল ভিডিও থ্রি-তে সশস্ত্র লোকদের অবস্থানের কাছ থেকে।
বুলেটের গতি ও শব্দ
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক রবার্ট সি. মারের সঙ্গে কথা বলেছে বেলিংক্যাট। মার অডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও আইডিএফ ও অন্য অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে শুটার ও শিরিনের কাছে থাকা ক্যামেরাধারীর দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য তাকে অনুরোধ করে বেলিংক্যাট। ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, শিরিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও দক্ষিণ দিক থেকে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ হতে থাকে।
বেলিংক্যাটকে করা ই-মেইলে মার লেখেন, ‘ভিডিওতে থাকা অডিও শুনে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, ১ মিনিট ৫৬.২৫ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ১৯.৫৩৮ সেকেন্ডে দুইবার গুলির শব্দ পাওয়া যায়। দুটি শব্দের ক্ষেত্রেই শুরুতে একটি শক্তিশালী ক্র্যাক সাউন্ড ও ৩০০ মিলিসেকেন্ড (.৩ সেকেন্ড) পর একটা দুর্বল শব্দ পাওয়া যায়।
‘আমার মতে, শুরুর শব্দটা কোনো সুপারসনিক বুলেটের শক ওয়েভ ক্যামেরার মাইক অতিক্রম করার সময়ের শব্দ। পরের শব্দটা বন্দুকের নলের বিস্ফোরণের।’
ঘটনার সময় আইডিএফ বা ফিলিস্তিনিদের ব্যবহৃত অধিকাংশ অস্ত্রগুলোকে উপরোক্ত ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো এম ফোর বা সিআর ফিফটিন সিরিজের ৫.৫৬ মিলিমিটার রাইফেল। যেগুলো ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ছিল ২৯২ থেকে ৩৬৮ মিমি। ২০১০ সালে সুইডেনের ন্যাটো ওয়েপনস অ্যান্ড সেনসরস ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি প্রেজেন্টেশনে ৫.৫৬ মিমি গুলির ক্ষেত্রে নলের গতি ও ব্যারেলের দৈর্ঘ্যের একটি তুলনা প্রকাশ করে।
সেখানে বলা হয়, ন্যাটোর ব্যবহৃত গুলি এসএস ওয়ানওনাইন ৫.৫৬ মিমি ব্যবহার করলে বুলেটের গতি দাঁড়াবে প্রতি সেকেন্ডে ৮২০ থেকে ৮৬৬ মিটার। এ থেকে বোঝা যায়, ওপরের ভিডিওতে ক্যামেরা থেকে রাইফেল ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূরত্বে ছিল।
মার এই হিসেবের সঙ্গে সাবধানতা ও সতর্কতার একটি নোট যোগ করেন। তিনি লেখেন, ‘দূরত্বের অনুমান বাতাসের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে, যেহেতু এটি শব্দের গতিকে প্রভাবিত করে।’
বুলেটের ক্যালিবার বিশ্লেষণ করা প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে শিরিনকে যে বুলেটটি হত্যা করে সেটি ছিল ৫.৫৬ মিমি।
মার উল্লেখ করেছেন, বুলেটের অনুমিত গতিতে সামান্য পার্থক্যের ফলে গণনায় পরিবর্তন হতে পারে। তিনি যোগ করেন, ‘সম্ভবত বড় প্রশ্ন হল বুলেটের গতি সম্পর্কে আমার অনুমান। যদি বুলেটটি ধীর সুপারসনিক গতিতে ছোটে তবে দূরত্বের অনুমান দীর্ঘ হবে। আর যদি বুলেটটি দ্রুত সুপারসনিক গতিতে ছোটে, তবে দূরত্বের অনুমান কম হবে।’
দৃষ্টিরেখা
ওই অঞ্চলের ছবি থেকে আরও কিছু ক্লু পাওয়া যায়। যা থেকে ধারণা করা সম্ভব শিরিন ও অন্য সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ওই শুটার কোথায় অবস্থান করছিল।
জেনিন ক্যাম্প টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করা একটি ছবি তোলা হয়েছে যেখানে শিরিন নিহত হয়েছেন। এটি অনেকগুলো ছবির একটি, যেখানে ফিলিস্তিনিরা তার মৃত্যুর স্থানে ফুল দিচ্ছেন। ক্যামেরাটি সরাসরি দক্ষিণ দিকে মুখ করা, যা আইডিএফ কনভয় এবং সশস্ত্র লোকদের অবস্থান থেকে দৃষ্টি রেখা কী হতে পারে সেটার একটা আনুমানিক ধারনা দেয়।
আইডিএফের কনভয় ও ভিডিও টু এবং ভিডিও থ্রিতে সশস্ত্র লোকদের অবস্থান থেকে উত্তরে দৃষ্টিসীমা/রেখা একটি কবরস্থানের প্রাচীর দ্বারা আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। কবরস্থান ও এর প্রাচীরের কারণে রাস্তাটি একক একটি সরু লেনের রাস্তায় পরিণত হয়।
এই প্রাচীরটি স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির পাশাপাশি ওইদিনের ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান।
কবরস্থানের প্রাচীরই শুধু রাস্তার উত্তরে দেখার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। সারা সকাল জুড়ে, রাস্তার পশ্চিম দিকে গাড়ি পার্ক করা ছিল, যা আইডিএফ কনভয়ের রাস্তার স্তরের অবস্থান থেকে উত্তরে গুলি করা ও ভিডিও টু এবং ভিডিও থ্রিতে সশস্ত্র লোকদের গুলি করাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।
টেলিগ্রামে শেয়ার করা আরেকটি ছবিতে কবরস্থানের প্রাচীর ও হলুদ গাড়ির কারণে দৃষ্টিসীমার বাধা স্পষ্ট। ছবিটি রাস্তার দক্ষিণ দিকে একটি পাহাড় থেকে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে শিরিন নিহত হওয়ার অবস্থান উত্তরে।
ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আইডিএফ অবস্থান থেকে আবু আকলেহকে যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখানে দৃষ্টিসীমা সংকীর্ণ।
এটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তি যিনি শিরিনকে সাহায্য করতে গেছেন, তার আচরণ থেকে বোঝা যায়, তাদের দিকে তখনও দক্ষিণ থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। যেমনটা ভিডিওতে দেখা গেছে। ভিডিওর ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে শিরিনকে তোলার চেষ্টার সময় ওই ব্যক্তি রাস্তার কেন্দ্রের দিকে পূর্ব দিকে সরে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন। উভয় সময় আমরা একটি করে গুলির শব্দ শুনতে পাই, যা লোকটির যথেষ্ট কাছাকাছি। যার ফলে তিনি রাস্তার পশ্চিম দিকের একটি দেয়ালের সঙ্গে নিজেকে চেপে আড়াল হতে বাধ্য করে। ওপরের ছবিতে দেখা হলুদ গাড়ি ও নিচের ছবিতে গাছটি দেয়ালের কাছাকাছি দাঁড়ালে তার আড়াল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আইডিএফ অবস্থানের সামান্য পশ্চিমে একটি উঁচু ভবন থাকায় শুটার একটি উঁচু অবস্থান থেকে গুলি চালাতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। এটি শিরিন ও তার সহকর্মীরা গাছের আড়াল থেকে ও প্রাচীর থেকে দূরে সরে গেলে তা দেখার একটি অবস্থান তৈরি করে।
ওপেন সোর্সের সারসংক্ষেপ
বর্তমানে ওপেন সোর্স ভিডিওগুলো থেকে শিরিনকে হত্যা করার নির্দিষ্ট মুহূর্ত বা তাকে গুলি করার বিশদ বিবরণ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে, একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য আইডিএফ সৈন্যদের দিকে ইঙ্গিত করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিওগুলো তাদের দাবিকে নাকচ করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি তাদের সমর্থন করে বলে মনে হয়।
ওপেন সোর্স ভিডিওতে দেখা যায়, আইডিএফ সৈন্যরা ও সশস্ত্র গোষ্ঠী রাস্তায় লড়াই করার সময় শিরিন রাস্তায় পড়ে ছিলেন। সে সময় আইডিএফের একটি স্পষ্ট গতিপথ ছিল ও যেখানে তাকে গুলি করা হয় তারা সেটার কাছে অবস্থান করছিল। এটি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য আরও বাধাগ্রস্ত ও দূরবর্তী অবস্থান।
বডিক্যাম ফুটেজে দেখা আইডিএফ সাঁজোয়া যানবাহনের নেতৃস্থানীয় যানটি শিরিনকে গুলি করার স্থান থেকে প্রায় ১৯০ মিটার দূরে অবস্থান করছিল। ভিডিও থ্রিতে রাস্তায় গুলি চালাতে দেখা গেছে যে সশস্ত্র দলটিকে তারা ছিল প্রায় ৩০০ মিটার দূরে।
শিরিন হত্যার পর ধারণ করা একটি ভিডিওর প্রাথমিক ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বন্দুকের গোলাগুলি প্রায় ১৭৭ থেকে ১৮৪ মিটার দূরে শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে যে অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা ওই এলাকায় আইডিএফ ও সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অনুমান আইডিএফের অবস্থান এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবস্থানের চেয়ে সাংবাদিক হত্যার স্থানের মধ্যে আনুমানিক দূরত্বের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলেহকে ১৩ মে পূর্ব জেরুজালেমের মাউন্ট জায়ন প্রোটেস্ট্যান্ট কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী চতুর্থ দফা জিম্মি-বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
নেতানিয়াহু রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সাথে কথা বলেছেন এবং ওয়াশিংটনে তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যস্থতাকারী ও প্রতিনিধিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। ৪২ দিনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা আগামী মাসে শেষ হবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, উইটকফ প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের সঙ্গেও কথা বলবেন।
প্রথম পর্যায়ে হামাস শনিবার ইসরায়েলি হেফাজত থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।
জিম্মি ওফের কালদেরন ও ইয়ার্ডেন বিবাসকে হামাস যোদ্ধারা মঞ্চে কুচকাওয়াজ করে দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিসে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করে। আমেরিকান-ইসরায়েলি কিথ সিগেলকে উত্তরে গাজা শহরের বন্দরে একই ধরনের অনুষ্ঠান করে মুক্তি দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী পরে নিশ্চিত করেছে যে, তিনজনই ইসরায়েলে ফিরে এসেছেন।
ইসরায়েলি প্রচার গোষ্ঠী হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম তাদের মুক্তিকে ‘অন্ধকারে আলোর রশ্মি’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে জিম্মিদের আটক রাখার পর গাজার যোদ্ধারা ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুসারে তাদের মুক্তি দিতে শুরু করেন।
হামাস ও তার মিত্র ইসলামিক জিহাদ এখন পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছে। শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু।
গত শনিবার ১৮৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যাদের একজন মিসরীয়। বাকি সবাই ফিলিস্তিনি।
হামাস সূত্র জানায়, আগামী শনিবার পঞ্চম জিম্মি-বন্দি বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে।
ছয় সপ্তাহের এ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি প্রায় এক হাজার ৯০০ জনকে মুক্তি দেওয়া, যাদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনি।
আরও পড়ুন:ইসরায়েল নেটজারিম করিডোরের মধ্য দিয়ে রুট খুলে দেওয়ার পর মাত্র দুই ঘণ্টায় দুই লাখ বাস্তচ্যুত ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরেছেন।
তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ১৫ মাসের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো প্রিয়জনদের কাছে ফিরলেন।
ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, অসংখ্য ফিলিস্তিনি কোলে সন্তান, কাঁধে ব্যাগপত্র নিয়ে উপকূলীয় পথ ধরে উত্তর দিকে হেঁটে রওনা হয়েছেন। কিন্তু যারা গাড়িতে রওনা হয়েছেন, তাদের বিভিন্ন চেক পোস্টে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
গাজার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপির সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন, ক্রসিং খোলার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ২ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ হেঁটে হেঁটে উত্তর গাজায় ফিরেছেন।
পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে এএফপি জানায়, ফিরে এসে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই পাননি। তারপরও ফিরে আসার আনন্দ ছিল চোখেমুখে।
কাঁধে বেশ কয়েকটি ব্যাগ ঝুলিয়ে উত্তর গাজায় ফেরা আহমেদ নামের এক বাস্তুচ্যুত তরুণ বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিবারের সাথে দেখা করতে চাই। আমি আমার মা এবং বাবাকে দেখতে চাই। আমরা ১৫ মাস ধরে তাদের দেখিনি।’
আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি দেড় বছর ধরে আমার পরিবারের সাথে দেখা করিনি। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছি।
‘আমরা ক্লান্ত। আমরা গাজায় যেতে চাই। আমরা আর কোথাও যেতে চাই না।’
গত ২৫ জানুয়ারি ফিলিস্তিনিদের উত্তরে ফিরে আসার কথা ছিল, কিন্তু ইসরায়েলি জিম্মি আরবেল ইয়াহুদকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে তারা আটকে পড়েন।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ফিলিস্তিনিদের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে হেঁটে আল-রশিদ স্ট্রিট এবং সকাল ৯টা থেকে যানবাহনে সালাহ আল-দিন স্ট্রিট পার হতে হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের আকস্মিক হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। দীর্ঘ দেড় বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিল নারী ও শিশু।
গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে প্রায় ১৭ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
আরও পড়ুন:রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এক নিমেষে বন্ধ করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। দেশটির এক সিদ্ধান্তেই ‘সঙ্গে সঙ্গে’ যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতদিন কেন সেটা ঘটল না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।
পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সৌদি আরবের কী করা উচিত, সেটাও বলে দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, সৌদি আরব ও তেল রপ্তানিকারী অন্য দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া। তা হলেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে।
আল জাজিরার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভা চলছে। সেখানেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ফোরামের ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তেল রপ্তানিকারী দেশগুলো যে এখনও তেলের দাম কমায়নি, তাতে তিনি বিস্মিত।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল সৌদিসহ অন্যদের।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের সদস্যদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি ও ওপেকের সবাইকে আমি বলব, তেলের দাম কমান। আপনাদের এটা করতেই হবে।
‘সত্যি কথা বলতে, এখনও যে এটা করা হয়নি, তাতে আমি অবাক। তেলের দাম কমলে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘খনিজ তেলের দাম এখন অনেক বেশি। তাই যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে আপনাদের তেলের দাম কমাতে হবে।
‘যা হচ্ছে, তার জন্য ওই দেশগুলো অনেকাংশে দায়ী। এত মানুষ মারা যাচ্ছে! তেলের দাম কমার পর আমি সুদের হারও কমাতে বলব।’
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর প্রায় তিন বছর ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত।
দীর্ঘ এ সময়ে দুই পক্ষের পাল্টা হামলায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলে আসছেন ট্রাম্প।
তিনি প্রায়ই বলতেন, ক্ষমতায় থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধান করে ফেলতেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। বৈঠকের আয়োজন চলছে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর অবিলম্বে এ সংঘাতের সমাধান দাবি করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে বলেও হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের সঙ্গে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে এমন খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের জন্য ক্রমাগত হুমকি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে ইরান-সমর্থিত হামাস।
যুদ্ধে একই পরিমাণ হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে আভাস দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে যায় হামাস ও ইসরায়েল। এর আগে ১৫ মাসের যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয় গাজা উপত্যকা। পুরো মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
খবরে বলা হয়, হামাসে যোগ দেওয়া নতুন সদস্যরা বয়সে তরুণ ও অপ্রশিক্ষিত। তাদের এখন শুধু নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের অফিসে যোগাযোগ করা হলে সাড়া মেলেনি।
গত ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গাজায় যতজন যোদ্ধা হারিয়েছে হামাস, ততজনই তারা নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে। এটি একটি চিরস্থায়ী বিদ্রোহ ও যুদ্ধেরই প্রস্তুতি।’
এ বিষয়ে তার কাছ থেকে আর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গাজা যুদ্ধে প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধা নিহত হন।’
হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েল।
গেল বছরের জুলাইয়ে হামাসের সামারিক শাখার প্রধান আবু ওবায়দা বলেন, ‘তারা কয়েক হাজার নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিতে সক্ষম।’
এবারের যুদ্ধে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও গাজা উপত্যকায় গভীরভাবে নিজের অবস্থান জারি রেখেছে সংগঠনটি।
গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে হামাস সেখানে নিরাপত্তা কার্যক্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি নাগরিকদের মৌলিক সেবাগুলোও তারা পুনর্বহাল করতে সক্ষম হয়।
গাজা যুদ্ধে কতজন হামাস যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন, আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের ভাষ্য, ফিলিস্তিনি এ প্রতিরোধ বাহিনীর ব্যাপক শক্তি ক্ষয় হয়েছে। সম্ভবত কয়েক হাজার যোদ্ধা খুইয়েছে তারা।
ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালান হামাস যোদ্ধারা। এতে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়াও ২৫০ ইসরায়েলিকে তারা জিম্মি করেছিল।
পরবর্তী সময়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস) জানিয়েছেন, তার দেশ আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত সংস্কার ‘অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরব এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওভাল অফিসে ফিরে আসার জন্য ট্রাম্পকে নিজের এবং বাদশাহ সালমানের অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
বিন সালমান বলেন, সৌদি নেতারা আমেরিকার জনগণের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ওই সময় ট্রাম্প বাদশাহ সালমান ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুবরাজ এমবিএস ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র সরঞ্জামের একটি অংশ সৌদি আরবে তৈরি হবে। এ উদ্যোগ আমেরিকা ও সৌদি আরবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘উভয় দেশের জন্য ভালো বাণিজ্য, ভালো সুবিধা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এটি আমাদের নিরাপত্তাকে সহায়তা করবে।’
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদেও নিজেদের মধ্যে এ সহযোগিতা ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে তিনি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে রিয়াদে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তরবারি নৃত্য এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সে সময় সৌদি বাদশাহ দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘কলার অব আবদুল আজিজ আল সৌদ’-এ ভূষিত করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে।
প্রথম দফার শাসনামলে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনের নিচ থেকে ২১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উপত্যকায় ৫ হাজার নারী ও শিশুসহ ১৪ হাজার ২০০ মানুষ এখনও নিখোঁজ।
গাজা সীমান্তের কাছে গত বছরের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে কিব্বুৎজ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বেশ কিছু ইসরায়েলি বাসিন্দাকে হত্যা করেন এবং নারী-পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধসহ প্রায় ২৪০ জনকে অপহরণ করেন। সে সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিন ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় এবং উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে।
গত ১৫ জানুয়ারি মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দিয়েছিল, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময়ও করেছে।
হামাস যোদ্ধারা তিন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলও ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪২ দিনে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে। গত ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
শারা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তিনিই (ট্রাম্প) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার নেতা।
‘আমরা সংলাপ এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উন্মুখ।’
শারার ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদ্রোহী অভিযানের নেতৃত্ব দেয়।
১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধ্বংসাত্মক সংঘাতের পর দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য সিরিয়ার নতুন নেতারা আর্থিক সহায়তা চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং সিরিয়ার প্রতিবেশীরাও নতুন শাসকের প্রতি ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা’ মোকাবিলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর জিহাদিদের বিতাড়িত করার সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেয় এবং হাজার হাজার সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাদের আত্মীয়দের বন্দি রাখা বেশ কিছু কারাগার ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জিহাদি-বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য