বুলেটের খোসা দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি শিল্পকর্মের ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
এ সংক্রান্ত পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনের শিল্পী দারিয়া মারচেঙ্কো এই শিল্পকর্মের স্রষ্টা। ‘দ্য ফেইস অফ ওয়ার’ শিরোনামের এই শিল্পকর্মটি রাস্তা থেকে কুড়ানো ৫০০০ বুলেটের খোসা দিয়ে বানানো।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান থেকে পোস্টটি শেয়ার করছেন অনেকে। এতে বলা হয়েছে ‘শিল্পের চেয়ে শক্তিশালী কোনো প্রতিবাদ নেই।‘
আলোচিত শিল্পকর্মটির কোনো সূত্র পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি। এটি কখন তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিবাদ হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে শিল্পকর্মটি।
এই ছবির উৎস এবং প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
দেখা গেছে, এই ছবিটি নিয়ে ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দেয়া হয় ১৩ মার্চ। অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্টটির বিবরণে লেখা হয়, ‘দিস ইজ আ ফ্যান্টাসটিক পিস অফ পলিটিক্যাল অর্ট আউট অফ ইউক্রেন…।’
অকুপাই ডেমোক্র্যাটস-এর ব্যবহার করা ছবিতে ফটোশপে লেখা হয়, “ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা ৫ হাজার বুলেটের খোসা ‘দ্য ট্রু ফেস অফ ওয়ার’ শিল্পকর্মের অলঙ্করণে ব্যবহার করা হয়েছে।“
ইউক্রেনের শিল্পী দারিয়া মারচেঙ্কোর নামও উল্লেখ রয়েছে ছবিতে।
ফ্যাক্টচেক
অনুসন্ধানে দেখা গেছে শিল্পকর্মটি মিথ্যা নয়, তবে সেটি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার নয়। দারিয়া মারচেঙ্কো এই ম্যুরালটি গড়েন এখন থেকে প্রায় সাত বছর আগে ২০১৫ সালে। ইউক্রেনের কিয়েভের এম সেভেন্টিন গ্যালারিতে ২০১৫ সালে ২৫ আগস্ট এর প্রথম প্রদর্শনী হয়।
ইউক্রেনে ২০১৪ সালে প্রবল জনবিক্ষোভের মাঝে রুশপন্থি হিসেবে পরিচিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ইইউর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক জোরদারের দাবি তুলে আয়োজিত ওই বিক্ষোভের সময় নিহত হন ২৮ জন।
এর পরেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সমর্থনে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে চলা সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষে প্রাণ হারিয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। এবার সামরিক অভিযানের শুরুতেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত শুরুর পরের বছর ২০১৫ সালে আলোচিত ম্যুরালটি তৈরি করেন দারিয়া মারচেঙ্কো। সে সময়ে ৩৩ বছর বয়স্ক দারিয়াকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এই শিল্পকর্মের প্রদর্শনীও হয়েছে। নিজের ওয়েবসাইটে ম্যুরালটি তৈরির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন দারিয়া। সেখানে তিনি লিখেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন অস্ত্রের প্রায় ৫ হাজার বুলেট সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে এই শিল্পকর্ম। এতে আলোর বহুমাত্রিক ব্যবহার করে যুদ্ধের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পুতিনের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
সেই চিত্রকর্মের ছবি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার হিসেবে প্রচার করা হয় অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের একটি ফেসবুক পেজে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই পোস্টটি সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। বাংলাভাষী ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও মূল ছবিটি ব্যবহার করে পোস্ট দিচ্ছেন।
এরই মধ্যে ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের দায় পড়েছে মূল পোস্টটির ওপর। স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ইউএসএ টুডের একটি বার্তা ওই পোস্টটির সঙ্গে যুক্ত করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ছবির শিরোনামে পরিবর্তন এনেছে অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস।
নতুন শিরোনামে সংশোধনী দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এই পোস্টটি ভ্রান্ত পরিপ্রক্ষিতের রেটিং পেয়েছে। ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, ম্যুরালটি ২০১৫ সালে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী ডনবাস প্রদেশের লড়াইয়ের সময় সংগ্রহ করা বুলেটের খোসা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি বর্তমান সময়ের আক্রমণকালের নয়। এটি ইউক্রেনের রাজনৈতিক শিল্পের একটি চমৎকার নিদর্শন …।’
আরও পড়ুন:ইসরাইলে ইরানের হামলাকে ‘সীমিত আকারের’ বর্ণনা করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, যদি ইরান বড় কোনো হামলা করতে চাইত, তাহলে ইহুদি শাসকগোষ্ঠীর (ইসরাইল) কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
বুধবার তিনি ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) বার্ষিক প্যারেডে দেয়া ভাষণে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন।
রাইসি বলেন, ‘এই হামলার জবাবে ইসরাইল যদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণও চালায়, তাহলে তার জবাব হবে বিশাল ও কঠোর।’
ইসরাইল-ইরান সংকট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যখন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের হুমকি বিরাজ করছে, সে সময়ই এই হুংকার দিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
সিরিয়ায় গত ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। এ হামলায় সাত বছর বয়সী এক ইসরায়েলি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ওই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে বার বার বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল।
শনিবারের ওই হামলার প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। তিনি জানান, ওই হামলার নাম দেয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিজ’। একইসঙ্গে ইসরাইল থেকে সম্প্রতি যে হুমকি দেয়া হচ্ছে তার জবাব কঠোর ও অগ্নিঝরা হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
১৩ই এপ্রিল ইসরাইলে ইরানের চালানো হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই অপারেশনের পরে বিশ্ববাসী দেখেছে যে, ‘ট্রু প্রমিজ’ ইহুদি রাষ্ট্রের মিথ্যা আধিপত্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
ভাষণে ইসরাইলি মিত্রদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব দেশ এই নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে, তারাও তাদের জাতির কাছে লজ্জিত হবে।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে দুই বছরে ৫০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য হারিয়েছে রাশিয়া। এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে বার্তা সংস্থা বিবিসি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত সেনাদের তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন বিবিসির প্রতিবেদকরা।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে। এরপর থেকে বিবিসি রাশিয়া, স্বাধীন মিডিয়া গ্রুপ মিডিয়াজোনা ও স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতের সংখ্যা গণনা করে আসছে। এই পরিসংখ্যান তৈরিতে কবরস্থানে সেনাদের কবর, বিবিসির অফিসিয়াল রিপোর্ট, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।=
বিবিসি অনুসন্ধান অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে ২৭ হাজার ৩০০ জনের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে সেনা নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রাশিয়া।
বিবিসি বলছে, সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ কর্তৃপক্ষের দেয়া সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা আট গুণ বেশি। যদিও বিবিসির বিশ্লেষণে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-অধিকৃত দোনেস্ক ও লুহানস্কে মৃতের সংখ্যা হিসাবে নেয়া হয়নি। সেটি হিসাবে নিলে রাশিয়ার পক্ষে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
অন্যদিকে বিবিসি ও মিডিয়াজোনার সঙ্গে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া জুড়ে ৭০টি কবরস্থানে নতুন সামরিক কবর গণনা করছেন। কবরস্থানগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে।
ছবি এবং ভিডিও থেকে বোঝা যায় যে এই নতুন কবরগুলোর বেশিরভাগই ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনা ও অফিসারদের।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, ‘২০২২ সালে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া জটিল সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য তার পেশাদার ও অভিজ্ঞ সেনাদের ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
‘যুদ্ধের মধ্যে সেই অভিজ্ঞ সেনাদের অনেকের মৃত বা আহত হওয়ায় তাদের স্থানে অল্প প্রশিক্ষণ বা সামরিক অভিজ্ঞতা আছে এমন স্বেচ্ছাসেবক, বেসামরিক এবং বন্দিদের ব্যবহার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেশাদার সেনারা যা করতে পারে, বিকল্প সেনারা তা করতে পারে না।’
আরও পড়ুন:মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র বৃষ্টিপাত ও ঝড়। এ ঘটনায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যায় স্থানীয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যার কবলে পড়ে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।
দেশটির জাতীয় আহওয়া কেন্দ্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আমিরাতের আবুধাবি প্রদেশের ওমান সীমান্তে অবস্থিত আল আইন শহরে ২৫৪ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ৭৫ বছরে অর্থাৎ ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এটিই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
মঙ্গলবার দিনের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কমে এলেও বুধবার সকাল থেকেই জলাবদ্ধতার কারণে দুবাই বিমানবন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বেশ কিছু ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।
বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের অন্যতম দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের ফ্লাইট শিডিউল উল্লেখযোগ্য আকারে বিঘ্নিত হয়েছে। অসংখ্য ফ্লাইটকে ভিন্ন দেশে অবতরণ করতে বলা হয়েছে বা আগমন বিলম্বিত করা হয়েছে।
দুবাই ছাড়তে আগ্রহী যাত্রীদের বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে বলা হয়েছে।
বিমানবন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক এক্স অ্যাকাউন্টে জানানো হয়, ‘অত্যন্ত বৈরি পরিবেশে আমরা বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থিতিশীল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, আরব আমিরাতের ৭০ বছর বয়সী এক নাগরিক মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন। দেশের উত্তরের রাস আল খায়মাহ প্রদেশে আকস্মিক বন্যায় তার গাড়িটি ডুবে যায়।
আরব আমিরাতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে আছে ধসে পড়া সড়ক ও দালান। এগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ওমানে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।
কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে।
বুধবার এক সূত্র এএফপিকে এ কথা জানিয়েছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র জানান, গরম আহাওয়ার কারণে দেশটির বয়স্ক কারাবন্দিদের ‘প্রয়োজনীয় যত্ন’ নেয়া হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ৭৮ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ীর ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ সাময়িক বা সাজা হ্রাসের অংশ কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি অভুত্থানে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। আটক করা হয় সু চি সহ বেশ কিছু নেতাকে।
অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়।
জান্তা সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু মামলায় গোপনে বিচারকাজ শেষ করে কয়েক বছরের কারাদণ্ড হয়েছে অং সান সু চির।
ইসরায়েলে ইরান সরাসরি হামলা চালানোর পর পশ্চিমাসহ অনেক দেশই বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আরোপ করা হয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। এবার যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর আরও কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে।
ইয়েলেন বলছেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে ইরানের ওপর। তাদের তেল বাণিজ্যেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে, আমি পুরোপুরি আশা করি যে, আমরা আগামী দিনে ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেব।’
ইয়েলেন বলেন, ‘আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞার পূর্বরূপ দেখি না। তবে আমার কাছে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন ব্যাহত করার সব বিকল্প আছে।’
তিনি বলেন, আগেও ট্রেজারি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট তেল রপ্তানি করার ক্ষমতা হ্রাস করে ইরানের ‘অস্থিতিশীল’ আচরণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রেজারি সেক্রেটারি বলেন, ‘স্পষ্টতই, ইরান কিছু তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আরও কিছু করার আছে। আমি আমাদের প্রকৃত নিষেধাজ্ঞার কার্যক্রমের পূর্বরূপ দেখাতে চাই না, তবে অবশ্যই আমরা সমাধান করতে পারি।’
গত শনিবার ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রথম বারের মতো সরাসরি হামলা চালানো শুরু করে ইরান। শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করে এই হামলা হয়।
এই হামলায় একটি সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে আহত হয়েছে এবং একটি সামরিক স্থাপনা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই হামলার পর পরই প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে নানা পক্ষ।
আরও পড়ুন:
ইরানের জবাবের পর ইসরায়েল যে পাল্টা হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার প্রতি আরও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি বলেছেন, ইসরায়েল যদি আবার আক্রমণ চালায়, তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার জবাব দেবে ইরান।
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাঘেরি বলেন, ‘ইসরায়েলের যেকোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তেহরানের পাল্টা আক্রমণ হবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। ইরান এবার জবাব দেয়ার জন্য ১২ দিন অপেক্ষা করবে না; এমনকি, এক ঘণ্টাও দেরি করবে না।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ফজল শেকারচি। তিনি বলেন, ইরান প্রমাণ করেছে যে তারা যুদ্ধবাজ নয় ও যুদ্ধের বিস্তার চায় না। তবে ইসরায়েল যদি প্রতিশোধ বা উসকানিমূলক কোনো আগ্রাসন চালায়, তবে ইরান আরও শক্তিশালী জবাব দেবে।
গত শনিবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানায় তেহরান। দামেস্কে ১ এপ্রিলের ওই হামলার পরপরই কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান।
ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েল ঠিক কী পদক্ষেপ নেবে, তা নির্দিষ্ট করেননি জেনারেল হারজি। তাছাড়া কবে, কখন ইসরায়েল এই জবাব দেবে, তার কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি তিনি। ইসরায়েলের মিত্ররা ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে তারা এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা ইরানের আছে
ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইরানকে সরাসরি সমর্থন দেয়নি চীন। তবে এবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যা বললেন, তাতে দেশটি ইরানের পক্ষে আছে বলেই মনে হতে পারে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের। এ অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, তারা সেটি দেখছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় ওয়াং ই বলেন, ইরান নিজেদের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের চিন্তা করে হামলা করেছে বলে জানিয়েছে। সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত চীনের বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোতে হামলা না করার দিকে যেভাবে ইরান জোর দিয়েছে তাতে সমর্থন দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ওয়াং ইকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা নিয়ে ইরানও চিন্তিত। এ নিয়ে তারা পরিকল্পনা করছে। এই উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে সে জন্য তারা সব করতে রাজি।
ইরানের হামলার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফাহিয়ান আল সৌদের সঙ্গেও কথা বলেন ওয়াং ই। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রিয়াদের সঙ্গে কাজ করতে বেইজিং প্রস্তুত বলে জানান তিনি। এমনকি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও কাজ করবে চীন।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে একজন কমান্ডারসহ ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাত কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ হামলার জবাবে গত রোববার ভোরে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের হামলায় খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান সহায়তা করেছে।
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল কী করে, তা দেখতে উদগ্রীব পুরো বিশ্ব। তবে এখনই ইসরায়েলকে কিছু না করার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য সোমবার ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রগুলো আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইসরায়েলকে সংযত থাকতে বলেছেন।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের জের ধরে মিয়ানমারের সেনা ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে গত ৩ দিনে মিয়ানমার থেকে মোট ২৯ জন বাংলাদেশে এসেছেন।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মো. শরীফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে নতুন করে ১২ জন এবং দুপুরে আরও একজন পালিয়ে আসেন। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশফাড়ি সীমান্ত দিয়ে একজন, রেজুপাড়া সীমান্ত দিয়ে দুজন এবং জমছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১০ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
এই ১৩ জনের সবাই দেশটির বিজিপি ও সেনা সদস্য, তবে কোন বাহিনীর কত জন সদস্য, তা নিশ্চিত করতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানিয়েছেন, তাদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলো জমা নিয়ে বিজিবি নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। পরে তাদের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে বাইশফাড়ি সীমান্ত দিয়ে ২ সেনা সদস্য বাংলাদেশে আসেন। এছাড়া রোববার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আসেন বিজিপির আরও ১৪ জন সদস্য।
১১ বিজিবি হেফাজতে আগে থেকেই ১৮০ জন আশ্রিত রয়েছে। এ নিয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০৯ জনে।
ওই ১৮০ জনের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৩ জন সদস্য গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে এদেশে আসেন। তার আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য।
এ ছাড়াও কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য