বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার দুই মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ নিলে সুরক্ষা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি মিলবে। কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত লোককে সিরামের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হয়েছে তাদের সবাই দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি টিকা সংকটের কারণে। প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ লোক অপেক্ষায় আছেন এই টিকার।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিরামের টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে যে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ অপেক্ষায় আছেন তারা কী করবেন? তারা কি দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোনো কোম্পানির টিকা গ্রহণ করবেন? নাকি সিরামের জন্যই অপেক্ষায় থাকবেন?
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তারা বলছেন, মোটা দাগে সব টিকারই একই ধরনের কার্যকারিতা আছে। এ ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন না হয়ে, সিরামের টিকার জন্য অপেক্ষা না করে যে টিকা পাওয়া যায় তাই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সরকার চাইছে দেশের ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনতে। এ হিসাবে অন্তত সাড়ে ১৩ কোটি লোককে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন ২৭ কোটি ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর ৭ জুন সোমবার পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৩ হাজার ১৯৩ ডোজ, যার প্রায় সবই সিরামের। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ২৩ হাজার ১৭৮ জন। বিভিন্ন কারণে টিকা নষ্ট হয়েছে ৯০ হাজার ৪১৮ ডোজ। সরকারের কাছে সিরামের টিকার মজুত রয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৯ ডোজ, যা দিয়ে কয়েক দিন চলবে টিকা কার্যক্রম।
যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন সিরামের টিকা আসা স্থগিত থাকলেও দেশে এসেছে চীনের সিনোফার্মার ৫ লাখ ডোজ, যে টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে গত ২৫ মে। তবে তা শুধু মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে। ৭ জুন সোমবার পর্যন্ত এই টিকার দুই হাজার ডোজ দেয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক টিকা বণ্টনের জোট কোভ্যাক্স থেকে আসা ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়। কবে নাগাদ এই টিকা প্রয়োগ শুরু হবে তা সোমবার পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিরামের মোট টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ। চীন থেকে উপহার হিসেবে এসেছে সিনোফার্মার ৫ লাখ টিকা। ১৩ জুন আসার কথা উপহারের আরও ৬ লাখ ডোজ। এর মাঝে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ এসেছে গত ১ জুন। রাশিয়ার স্পুৎনিক-ফাইভ টিকার ৫০ লাখ ডোজের কেনার আলোচনা চলছে। এর বাইরে চীন ও রাশিয়া থেকে দেড় কোটি ডোজ করে কিনতে চায় সরকার।
প্রথম ডোজে সিরামের টিকা নেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নায়ীমূল কাদির। গত এপ্রিলের শুরুতেই তিনি প্রথম ডোজ নেন। কিন্তু দুই মাস পরও তার কাছে দ্বিতীয় ডোজের জন্য এসএমএস আসেনি। ৭৮ বছর বয়সী এই নাগরিক এখন দিন গুনছেন, সেই এসএমএসের জন্য।
করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে উদ্বেগ-অনিশ্চয়তায় থাকা এই প্রবীণ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। আমি জানি, এই রোগের যন্ত্রণা কী। তাই আমি দ্রুত টিকা নিতে চেয়েছিলাম। প্রথম ডোজ নিয়ে বসে আছি।
‘কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের কোনো খবর নেই। কত দিন পরে পাব তাও জানি না। আর এই দ্বিতীয় ডোজ না নিলে কী হবে তাও বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি পরিষ্কার করা হচ্ছে না। পুরোটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।’
দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে এই নায়ীমূল কাদিরের মতো অনিশ্চয়তায় আছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের ম্যানেজার সাজিয়া আফরিন। প্রতিদিন অফিস করতে বাইরে বের হতে হয় তার। তাই দুই মাস আগে করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর আট সপ্তাহ পার হলেও দ্বিতীয় ডোজের এসএমএসই পাননি।
‘এখন আমার দ্বিতীয় ডোজ টিকার কী হবে জানি না। আর কত দিন অপেক্ষা করব- সেটাও বুঝতে পারছি না। কত দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে টিকা কর্যকর থাকবে তাও তো জানি না’, বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু নায়ীমূল কাদির আর সাজিয়া আফরিনই নন, তাদের মতো সাড়ে ১৩ লাখ নাগরিক অপেক্ষায় আছেন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার। তবে এই অপেক্ষা কতটা দীর্ঘ হবে তা বলা যাচ্ছে না।
কারণ হিসেবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতে করোনার ব্যাপক বিস্তার আর যুক্তরাষ্ট্র কাঁচামাল দেয়া বন্ধ করে দেয়ায় উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় ভারত সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ কারণে বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে পারেনি সিরাম।
নাগরিকদের উদ্বেগের প্রসঙ্গে নিউজবাংলা কথা বলেছে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু সিরামের টিকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, এক ডোজ টিকা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে ঘরে বসে না থেকে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেয়া ভালো। কারণ, এই দুই টিকাই মানুষের শরীরে প্রায় একই ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে।’
এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন হলো ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হচ্ছে ডিএনএ ভাইরাস ক্যারিয়ার ভ্যাকসিন। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা।
‘আশার কথা হলো, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এবং চায়নিজ টিকা- দুটোই করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। তাই চায়নিজ ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দিলে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া যাচ্ছে না, তাই একটা টিকা দিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বসে না থেকে চীনের টিকা দেয়া ভালো। কারণ এই দুই টিকাই মানুষের শরীরে প্রায় একই ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে।’
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাক্তার সায়েদুল রহমান খসরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ১২ সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে প্রথমে মানুষ টিকা নিচ্ছিল না। তাই আট সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার নিয়ম করা হয়েছিল।
‘আবার কানাডা ১৬ সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছিল, যাতে বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়া যায়। বেসিক্যালি টিকা ১২ সপ্তাহ কার্যকর। মূল কথা হলো- এইসব ভ্যাকসিনের বয়স ৬ মাসের বেশি হয়নি। তাই এগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। এখন বিশ্বে যে সময় ব্যবধানে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে, সেটা গবেষণা করে দেয়া হচ্ছে না। ক্যালকুলেশন করে দেয়া হচ্ছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না, কত সপ্তাহ ব্যবধানে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমরা সিরামের টিকা আপাতত পাচ্ছি না, তাই আমি মনে করি বসে না থেকে আমরা অন্য টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নিতে পারি। কারণ আমরা দেখেছি, বিশ্বের কয়েকটি দেশ প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার করে দ্বিতীয় ডোজে ফাইজার ও স্পুৎনিক-ফাইভের টিকাও দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে করণীয় কী কী, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার।
এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা তার ভাষায় তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্কতা
সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে এবং এটি আরও কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করতে পারে। এ সময় কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য এই তাপদাহের সময় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া লাগবে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়া লাগবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সময় এটি একটানা দীর্ঘসময় ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া লাগবে এবং এগুলো যারা পরিচালনা করেন, শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একটানা কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে তাদেরকেও বিরতি দিতে হবে। তাহলে কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার শঙ্কা হ্রাস পাবে এবং সীমিত থাকবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত রাখা
সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, এখনই চেক করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। একটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে অথবা একটি মাল্টিপ্লাগ থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নেয়া যাবে না। এই জাতীয় সংযোগ থেকে কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারে সতর্কতা
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যখন ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অফ করে রাখতে হবে।
রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এ ছাড়া আমরা আবাসিক ভবনে যারা রান্নার কাজ করি, রান্না রেখে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে অবশ্যই চুলা পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গ্রামেগঞ্জে রান্না করছি যেখানে ছাই যেন উত্তপ্ত না থাকে, ছাইও নিশ্চিন্তভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে।
ধূমপান পরিহার
আবাসিক ভবন ও কারখানায় কোনোভাবেই কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। অপরিহার্য ক্ষেত্রে বাইরে যারা ধূমপান করবেন, বিড়ি-সিগারেটের শেষ অংশ সতর্কভাবে, সচেতনভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গাড়িতে চলাচলের সময় ধূমপান করে যেখানে সেখানে কিন্তু সিগারেটের অংশ ফেলা যাবে না।
বারবিকিউ পার্টি না করা
বাড়ির ছাদে, বারান্দায় অথবা আশপাশে দাহ্য বস্তু আছে, এমন খোলা জায়গায় এ সময় বারবিকিউ পার্টি করবেন না। কারণ একটি স্ফূলিঙ্গ উড়ে গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিকে পুরোপুরি না বলুন।
গাড়িতে অবস্থান ও পার্কিংয়ে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশন থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহের সময় অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাড়িতে অবস্থান করবেন না। সবাই সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ফিলিং স্টেশনের মালিক এবং যারা কর্মরত আছেন, তাদের এ ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করবেন না। গাড়ি ছায়ার মধ্যে পার্কিং করবেন বা যেখানে ছায়া আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করবেন।
আগুন নিয়ে খেলা পরিহার
এ সময় বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না এবং আপনার হাতের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংরক্ষণ করুন। সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন এবং এগুলোর সামনে কোনো ব্যারিয়ার তৈরি করবেন না।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পেতে
আপনার সতর্কতা এবং আপনার প্রতিবেশীকে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে কিন্তু নিরাপদ থাকা সম্ভব। এ ছাড়া আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইলে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন। যেকোনো সময় ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত রেসপন্স করার জন্য ১৬১৬৩ হটলাইন অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটতম ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বরে দ্রুত কল করুন এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য