করোনা সংক্রমণ বাড়তে ইউকে স্ট্রেইন ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
দেশে রোগীদের অনেকের শরীরে ইউকে স্ট্রেইন পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ধরন তরুণদের আক্রান্ত করছে। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে দেশে ১০ জনের শরীরে পাওয়া ভাইরাসের মিল পাওয়া গেছে– স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন ঘোষণার পর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে নতুন স্ট্রেইনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন যে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এতে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের অবশ্যই প্রভাব রয়েছে। তবে শুধু ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নয়, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না বলেও সংক্রমণ বাড়ছে।’
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগেরটির চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। নতুন ওই স্ট্রেইন দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নতুন স্ট্রেইনকে টিকাও রুখতে পারে না। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন গবেষকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন একটু ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নতুন ধরনে কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। তখন দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার আওতায় নেয়া প্রয়োজন হয়। এ জন্য হাসপাতালগুলোকে জোরদার প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশকেই আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এমনকি তাদের একটা বড় অংশ তরুণ।’
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউয়ের ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, হাসপাতালের আইসিইউ বেডে এখন আগের চেয়ে বেশি তরুণরা ভর্তি হচ্ছেন।
ভাইরাসটি নিজ নিজ দেশে যাতে না ঢোকে, সেই চেষ্টাতেই এখন ব্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। অথচ বাংলাদেশে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কেবল যুক্তরাজ্য থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে সাত দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংক্রমণের মাত্রা বাড়ার পেছনে নতুন স্ট্রেইনও কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘টোটাল ১০ জনের মধ্যে (ইউকে ভ্যারিয়েন্ট) পেয়েছি। তারা সবাই যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা। তারা ঢাকায় ও সিলেটে অবস্থান করছেন। তাদের সবাইকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল।’
আলমগীর বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা বেশ কয়েকটি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আইডেন্টিফাই করি। ইউকেতে যে ভ্যারিয়েন্ট, তা হুবহু ছিল। এই পেশেন্টরা আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ইউকের মতো আমাদের এখানে স্প্রেডিং দেখিনি।’
নতুন ধরনটি দেশে ছড়ানোর বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইউকে থেকে যারা আসছে, তাদের প্রত্যেককে টেস্ট করিয়ে যাদের পজিটিভ আসছে, তাদের স্যাম্পল সিকুয়েন্সিং করছি। এটা করেই আমরা কয়েকটি পেয়েছি। সেটা অব্যাহত রয়েছে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে তারা যাদের কন্ট্রাক্টে এসেছে, তাদের ফলোআপে ১৪ দিন রেখে আমরা রেপিডেট টেস্ট করিয়েছি। তেমন কিছু পাইনি। আমরা এই ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি।’
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) জিনোম ল্যাবের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইনের সন্ধান মিলেছে অনেক আগেই। ব্রিটেন থেকে আসা কিছু লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এটি দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করে ফেলে।’
তবে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে নতুন স্ট্রেইনকে দায়ী করার মতো সিদ্ধান্তে এখনই যাওয়া ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা হয়েছে। তারা যেটা বলছে, হয়তো ঠিক হতে পারে। তবে আমাদের দেশে এ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। তবে এটা বলা যায়, করোনা রোগীদের আগের থেকে বেশি আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় আইসিইউ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিলেও সেটার কোনো বাস্তবায়ন এখন চোখে পড়েনি। এখনও অনেক জেলায় আইসিইউ ব্যবস্থা করা হয়নি।’
দেশে সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসা সেবাদান প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন ‘আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি। আপনি বলতে পারেন, এখনকার রোগীদের অবস্থা অনেক বেশি গুরুতর। আইসিইউ চিকিৎসাধীনদের বড় একটি অংশ তরুণ। যা আগে কখনই এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালনক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘নতুন ধরনের স্ট্রেইন নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে করোনায় কখনও কোনো বয়সের প্রটেকশন ছিল না। এই কারোনা ভাইরাস যেকোনো বয়সী মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। যে বেশি সংস্পর্শে আসবে, তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
‘এখন সব বয়সীরা বাইরে বের হচ্ছে, তাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ইউকে ভ্যারিয়েট কিছু কিছু পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণ বাড়তে অবশ্যই নতুন স্ট্রেইন ভূমিকা রাখছে।’
রাজধানীর কলাবাগানে মঙ্গলবার দুপুরে করোনা রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা উদ্বোধন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা
নাছিম বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কাজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর আগে ১০টি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে, ৪৩ জন ডাক্তার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস দিচ্ছে। এর পরিধি প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
রাজধানীর কলাবাগানে মঙ্গলবার দুপুরে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নাছিম বলেন, ‘জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমাদের জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে, জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়।
‘বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত একসাথে হয়ে দানবীয় কায়দায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে চায়। এরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা দিতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ ধর্মকে ঢাল করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ নীতি বাংলাদেশে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।’
এ সময় করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। মহামারির সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের প্রশংসা করেন তিনি।
নাছিম বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কাজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর আগে ১০টি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে, ৪৩ জন ডাক্তার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস দিচ্ছে। এর পরিধি প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
‘আজ ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে দাঁড়াচ্ছে, এটি অত্যন্ত মহৎ উদ্যোগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা একে স্বাগত জানাই।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, যে কেউ ০৯৬১১৯৯৭৭৭ হটলাইন নম্বরে ফোন করলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিনা মূল্যের অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা নিতে পারবে।
হাসপাতালে সামনের ওষুধের দোকানের মালিকরা বলছেন, স্যালাইনের দাম বেড়েছে। তবে নগরীর অন্য এলাকার দোকানে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে স্যালাইন।
বরিশাল সদরের জাগুয়া ইউনিয়নের আব্দুর রব ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রোববার। বেড না পেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের মাঠে।
ভ্যান চালক আব্দুর রবের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে না স্যালাইন, কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল দিয়া একটা স্যালাইন দেছেল শরীরে দেয়ার লইগ্গা। স্যালাইন শেষ হওয়ার পর নার্সগো ধারে চাইছেলাম, হেরা কইছে এহানে নাই। কইলো ফার্মেসি দিয়া কিন্না আনেন।
‘সরকারি হাসপাতালে যদি স্যালাইন না থাহে তয় মোগো মতো গরীব মাইনষে কেমনে চিকিৎসা নিমু। পরে হেই কথা মত দুইটা স্যালাইন কেনা লাগছে।’
আব্দুর রবসহ হাসপাতালে ভর্তি অন্য ডায়রিয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকানগুলো বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। ৯০ টাকার স্যালাইন কারও কাছে চাওয়া হচ্ছে ১২০ বা ১৩০ টাকা, কারও কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকাও।
সরেজমিনে সোমবার সকালে সদর হাসপাতালের সামনে দেখা গেল, ডায়রিয়া রোগীর স্বজনরা স্যালাইনের জন্য ভিড় করে আছেন ওষুধের দোকানগুলোতে।
জাকিয়া বেগম নামে এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, ‘এমনেই কোনো সিট পাই নাই। হের উপর স্যালাইনডাও কেনা লাগে যদি তয় কি চিকিৎসা দেয় বুঝিনা।
‘স্যালাইনের আসল দাম ৯০ টাহা, আর হেই স্যালাইন ফার্মেসি ওয়ালারা সিন্ডিকেট কইরা ১৩০ টাহায় বেচে। এহানের ডাক্তার নার্সরা একটা বা দু্ইটা দিয়াই কয় নাই শেষ স্যালাইন।’
হাসপাতালের সামনের দি সেবা মেডিক্যাল হল নামের ওষুধের দোকানের কর্মচারি মো. বদরুদ্দোজার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন স্যালাইনের দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হাজার মিলির কলেরা স্যালাইন রেট ৯০ টাকা করেই। তবে প্রোডাকশন কম থাকায় কোম্পানি অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে।’
হাজরা মেডিক্যাল হলের মো. শুভ বলেন, ‘৫০০ মিলির কলেরা স্যালাইনের দাম ৭০ টাকা আর হাজার মিলির কোম্পানি রেট ৯০ টাকা। অনেকে বেশি দাম রেখেছে। কিন্তু আমরা তা করিনি।’
নগরীর অন্য এলাকার ওষুধের দোকানে গিয়ে জানা গেল, স্যালাইনের দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বিএম কলেজ এলাকার মা মেডিক্যাল হলের মালিক মো. কাদের বলেন, ‘কলেরা স্যালাইনের দাম বাড়েনি। যারা বেশি দাম নিচ্ছে তারা অবৈধভাবে তা নিচ্ছে।’
এদিকে, রোগীদের স্যালাইন বেশি কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে একজন রোগীকে তিন থেকে চারটি স্যালাইন আমরা দিয়ে থাকি। এর বেশি স্যালাইন লাগলে তাদের কিনতে হয় বাইরে থেকে। এমনিতে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই আমাদের।’
ওষুধের দোকানের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্যলাইনের সংকট দেখিয়ে নার্সরা রোগীদের তা কিনতে বাধ্য করছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
বরিশাল বিভাগে কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশালে এর আগে এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা। শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।’
তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে স্বস্তি পেতে মানুষ পান্তা কিংবা শরবত খাচ্ছে বেশি। এসব তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহারের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বলে তার মত।
বাসুদেব কুমার দাস গত রোববার জানিয়েছিলেন, বরিশাল বিভাগে ১৮ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ১১৪। সব থেকে বেশি আক্রান্ত দ্বীপ জেলা ভোলায়। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৪২১। পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৬ হাজার ৭৩৭, পিরোজপুরে ৩ হাজার ৭৫০, বরগুনায় ৪ হাজার ৩৫৩ এবং ঝালকাঠিতে আক্রান্ত ২ হাজার ৯৯৮ জন।
জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী সেখানে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৪ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। জায়গা সল্পতার কারণে অনেককে মাঠে, ভ্যানে, গাছ তলায় বা ড্রেনের পাশে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
ভারতকে ভ্রমণ নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য। ছবি: এএফপি
ভারতে কমপক্ষে ১০৩ জনের শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক সোমবার ভারতকে লাল তালিকায় যুক্ত করার কথা জানান। এতে ভারতের কেউ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ায় যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষিদ্ধের তালিকায় নাম উঠেছে ভারতের।
দেশটিতে কমপক্ষে ১০৩ জনের শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক সোমবার এই ঘোষণা দেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভারত সফরের কথা থাকলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। এরপরই দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভারতকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কথা জানান।
ম্যাট হ্যানকক জানান, গত ১০ দিন যারা ভারতে আছেন, তারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তবে ব্রিটিশ অথবা আইরিশ পাসপোর্ট ব্যবহারকারী কিংবা ব্রিটিশ নাগরিকরা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারলেও তাদের সরকারিভাবে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
আগামী শুক্রবার থেকে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর এই সময়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭৬১ জন।
এমন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশটিতে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রও।
দেশটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতে এখন সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায় চলছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যে কেউ দেশটিতে ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি টিকা নেয়া থাকলেও আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতে দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি, বেড ও ওষুধের অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জুলাই পর্যন্ত টিকার অগ্রিম মূল্য হিসেবে সিরামকে তিন হাজার কোটি রুপি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
ভারতে টিকা উৎপাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেককে শতভাগ অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করে রেখেছে দেশটির সরকার।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই পর্যন্ত টিকার অগ্রিম মূল্য হিসেবে সিরামকে তিন হাজার কোটি রুপি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আবারও রেকর্ড মৃত্যুর মধ্যেই এলো এ খবর। দেশটিতে সোমবার এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ জনের, মহামারিকালে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ফলে এক বছরে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।
দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ১ কোটি ৫৩ লাখের বেশি মানুষ। টানা ষষ্ঠ দিনের মতো দুই লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। গত এক সপ্তাহে এ সংখ্যা ১৬ লাখের বেশি।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে আছে ভারত। প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরই অবস্থান দেশটির।
এমন পরিস্থিতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়াতে তৎপর হয়েছে ভারত সরকার। গত সপ্তাহে ভারত বায়োটেকের বেঙ্গালুরু কারখানার জন্য ৬৫ কোটি রুপির তহবিলে অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কোভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াতে নেয়া হয় এ পদক্ষেপ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কোভিশিল্ড। অন্যদিকে ভারতীয় গবেষকদের উদ্ভাবিত কোভ্যাকসিন উৎপাদন করছে ভারত বায়োটেক।
টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং ধাপে ধাপে উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে প্রতিষ্ঠান দুটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে দেশটির সরকার। অর্থায়নের প্রাথমিক লক্ষ্য, টিকা প্রস্তুতে কাঁচামাল আমদানি, কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও টিকা উৎপাদন ও বণ্টন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে করোনার টিকার মজুত শেষ হয়ে আসছে বলে উদ্বেগের মধ্যেই এসব তথ্য প্রকাশ করল ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।
সোমবার সকালেই পাঞ্জাব সরকার কেন্দ্রকে হুঁশিয়ার করে জানায়, রাজ্যটিতে আর মাত্র তিন দিন টিকা দেয়ার মতো ডোজ মজুত আছে। শুক্রবার অন্ধ্র প্রদেশ জানায়, রাজ্যটিতে টিকার মজুত সম্পূর্ণ শেষ।
টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় বলে চলতি মাসের শুরুতেই মুম্বাই-পুনেসহ রাজ্যের শতাধিক টিকাকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয় মহারাষ্ট্রে।
চলতি সপ্তাহেই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, টিকা উৎপাদনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে টিকা আমদানির কথাও ভাবছে।
যদিও এর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ছিল, করোনাভাইরাসের টিকার ঘাটতি নেই ভারতে।
এদিকে আগামী ১ মে থেকে ভারতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের প্রত্যেকের জন্য টিকা কার্যক্রম শুরু করছে ভারত। বর্তমানে টিকা নেয়ার জন্য দেশটিতে ন্যূনতম বয়স ৪৫ বছর।
গত ১৬ জানুয়ারি ভারতে টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে এক বা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।
সিঙ্গাপুরে এক বছর ধরে ডরমেটরিতে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের কম্পাউন্ড থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ছবি: সংগৃহীত
৩০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ‘কর্মস্থলে নির্মাণ করা ডরমেটরিতেই এক বছর বন্দি অবস্থায় রয়েছি। সেখান থেকে আমার কাজের স্থানে কেবল যেতে পারি । এর বাইরে কোথাও যাওয়ার অধিকার নেই আমার। আমি এখনও টিকা পাইনি।’
সিঙ্গাপুরে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এক বছর ধরে কর্মস্থলে নির্মিত ডরমেটরিতে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের কম্পাউন্ড থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
সংক্রমণ রোধে দেশটির সরকারের নেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ লাখ ২০ হাজার অভিবাসী এসব ডরমেটরিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের মাঝে সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ার পরও তাদের মুক্তভাবে কাজে ফেরা ও মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না দেশটির সরকার। কবে অনুমতি পেতে পারেন, সে বিষয়েও কোনো আশাও দেখছেন না শ্রমিকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সোমবারের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদক ফিলিপ হাইজমানসের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের এক শ্রমিক জানান, ‘আমার বাইরে যাওয়ার কোনো স্বাধীনতা নেই। শুধু ডরমেটরি থেকে কাজের স্থানে যেতে পারি। কাজ শেষে আবারও ডরমেটরিতে ফিরতে হয়।’
৩০ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ‘কর্মস্থলে নির্মাণ করা ডরমেটরিতেই বন্দি অবস্থায় রয়েছি। সেখান থেকে আমার কাজের স্থান নির্মাণাধীন ভবনেই কেবল যেতে পারি আমি। এর বাইরে কোথাও যাওয়ার অধিকার নেই আমার। আমি এখনও টিকা পাইনি।’
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন সংগঠন অভিবাসী শ্রমিকদের এমন বন্দি জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে।
হিউম্যানিটেরিয়ান অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিকসের অপারেশন ম্যানেজার লুক টান বলেন, ‘ডরমেটরিগুলোতে বসবাসকারী শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।’
এক বছর আগে, ডরমেটরিগুলোতে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সরকারের নেয়া এমন বিধিনিষেধ সংক্রমণ রোধে সফলতা দেখায়। গত নভেম্বরের পর থেকে এই ডরমেটরিগুলোতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ জনেরও কম।
দেশটির জনশক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, কমিউনিটির অন্যদের সঙ্গে মাসে একবার এই শ্রমিকদের দেখা করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা।
এই মুখপাত্র আরও বলেন ‘এই ডরমেটরিগুলোতে বসবাসকারী অন্তত ৯ হাজার শ্রমিককে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে এ বছর মার্চে। আরও ৩০ হাজার শ্রমিককে দ্বিতীয় ধাপে টিকার আওতায় আনা হবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পার্লামেন্টে জানানো হয়, ডরমেটরিগুলোর অভিবাসী শ্রমিকরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
চিকিৎসক দলের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজকে ম্যাডামের ১২তম দিন শুরু হয়েছে। কাজেই এই যে ১২ তম দিন, ১৩ ও ১৪তম দিন, এই টাইমটা হচ্ছে গুরত্বপূর্ণ...করোনার জন্য সেকেন্ড উইকের লাস্ট ফেজে আমরা আছি।’
করোনা আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গত ৪২ ঘণ্টায় জ্বর ছিল না বলে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিত্সক দলের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
সোমবার রাত পৌনে ১২টায় গুলশানে বেগম জিয়ার বাসভবন থেকে বেরিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের এই মেডিক্যাল টিমের একজন, সিদ্দিক বলেছিলেন যে আগামী ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকে ম্যাডামের ১২তম দিন শুরু হয়েছে। কাজেই এই যে ১২ তম দিন, ১৩ ও ১৪ তম দিন, এই টাইমটা হচ্ছে গুরত্বপূর্ণ...করোনার জন্য সেকেন্ড উইকের লাস্ট ফেজে আমরা আছি।’
এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সকলের অবগতির জন্য দেশবাসীকে জানাতে চাই, গতকাল ভোর ছয়টা থেকে আজকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ওনার (খালেদা জিয়া) কোনো ধরনের জ্বর আসেনি। এটা একটা ভালো দিক। এবং এটাকে আমরা একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে গণ্য করছি। ওনার সেশন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। বিপি ডাক্তারি ভাষায় অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। ওনার অন্যান্য উপসর্গ, সেটিও বৃদ্ধি পায়নি, অথবা নতুনভাবে হয় নাই।
‘কাজেই এই অবস্থায় আপনারা বা আমরা সবাই বলতে পারি ওনার চিকিৎসা যেভাবে চলছে, উনি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছেন।’
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করে করে বলেন, ‘এভাবে যদি আগামী দুই দিন যায়, ইনশাআল্লাহ আমরা আশা করতে পারি, করোনা থেকে হয়তো ভালো একটা পর্যায়ে উনি যেতে পারবেন এবং সে জন্য দেশবাসীর কাছে আপনাদের মাধ্যমে আমরা দোয়া চাই।’
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আজকে আমাদের যে রুটিন চেকআপ, আমাদের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত, সে জন্য আমি এবং মামুন আমরা দুজনে এসেছিলাম। যদিও সারা দিন আমাদের ভিজিল্যান্স অর্থাৎ মনিটরিং টিম ওনার স্যাচুরেশন, পালস, ব্লাড প্রেশার দেখেন। সারা দিনই কয়েক ঘণ্টা পরপর এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপরও আমরা ফিজিক্যালি যে রুটিন পরীক্ষা, তার জন্য আসছিলাম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
বিএমএর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান লকডাউন চলাকালীন সময়ে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক ‘হয়রানি’ ও ‘নিগ্রহের’ শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
চলমান লকডাউনে মুভমেন্ট পাসের নামে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘হয়রানি’ করছে বলে দাবি অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ)। এতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কিত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের শীর্ষ পর্যায়ের এই সংগঠন।
সোমবার সংগঠনটি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসক সাঈদা শওকত জেনির সঙ্গে পুলিশের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনিকে ‘হেনস্তার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখাও।
রোববার এলিফ্যান্ট রোডে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া নিয়ে ডা. জেনির সঙ্গে পুলিশের তর্ক হয়, যা এক পর্যায়ে উত্তপ্ত বিতণ্ডায় রূপ নেয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয় এবং দিনভর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে বিএমএ।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান লকডাউন চলাকালীন সময়ে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক ‘হয়রানি’ ও ‘নিগ্রহের’ শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের হয়রানি বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এভাবে চিকিৎসক হয়রানি চলতে থাকলে আমার ঠিকভাবে কাজ করতে পারব না, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এটা দুঃখজনক।’
পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পালন করা কঠিন উল্লেখ করে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘অধিদপ্তরের জানা উচিত দেশের ৮০ শতাংশ চিকিৎসকের কাছে কোনো ডাক্তরি পরিচয়পত্র নেই।’
এ ঘটনায় পুলিশের সংগঠনগুলো জেনিকেই দোষারূপ করে সোমবার বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।
বিবৃতিতে পুলিশের সংগঠনটি, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনৈক চিকিত্সক কর্তৃক এহেন অপেশাদার ও অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত।…একজন গর্বিত পেশার সদস্য হয়ে অন্য একজন পেশাদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ বা অসৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়।’
মহামারিকালে ঘরের বাইরে আসলে পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক জানিয়ে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন এবং কর্তব্যরত বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে।’
‘জেনিকে হেনন্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন ‘ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ’- এফডিএসআরও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নকডাউনে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে বা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় নারী চিকিৎসককে সুপরিকল্পিত ভাবে হেনস্থার করা হয়েছে। এটার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ও ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো একটি মহল করোনাকালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত করতে এবং সরকারের ও পুলিশের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘোষণাকে আইনশৃঙ্খালা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচারের আওয়াত আনা উচিত।
‘আমরা আশা করব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা এ রকম হয়রানি করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
যা যা ঘটেছে
মুভমেন্ট পাসের আওতামুক্ত হওয়া সত্ত্বেও লকডাউন শুরুর দিন বুধবার সকালে কর্মস্থলে যেতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক চিকিৎসক।
স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কর্মরত নাজমুল ইসলাম হৃদয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরও মুভমেন্ট পাস না থাকায় জরিমানা করা হয়। বিষয়টি জানিয়ে তার স্ত্রী ইসরাত জাহান ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তার সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
একইভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন চিকিৎসক দম্পতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার কামরুন নাহার মুক্তা ও গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার এনামুল কবির খান।
ডা. মুক্তা নিউজবাংলাকে জানান, তার বাসা এলিফ্যান্ট রোডেই। সকালে তাকে হাসপাতালে নামিয়ে গাড়ি নিয়ে চালক ফিরছিলেন। তিনি তাকে তার আইডি কার্ড দিয়ে পুলিশকে দেখাতে বলেন।
পুলিশ আটকালে চালক জানান, চিকিৎসককে হাসপাতালে দিয়ে এসেছেন। প্রমাণ স্বরূপ তিনি চিকিৎসকের আইডি কার্ড দেখান। পুলিশ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করলে চালক কথা বলার জন্য ফোনে ওই চিকিৎসককে ধরিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
ডা. মুক্তা বলেন, ‘পুলিশি ঝামেলা এড়াতে ড্রাইভারকে আমার আইডি কার্ড দিয়ে দিই। পুলিশ আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরেও সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেয়। এমনকি বেশি কথা বললে ছয় মাসের জেল দেয়ার হুমকি দেয়।
এনামুল কবির খান আরও কিছু ঘটনা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান হাবিব রাজু ডিউটি সেরে সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে পুলিশ তাকে নামিয়ে সিএনজি রেখে বাসায় যেতে বলে।’
ডা. মুক্তা ও এনামুল কবির খানের মতো হয়রানির শিকার হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুজরাত আরফিনও।
এই চিকিৎসককেও ঢাকা মেডিক্যালে নামিয়ে বাসায় ফিরছিল গাড়িচালক। শাহবাগ মোড়ে গাড়ি থামিয়ে জরিমানা করা হয়। চিকিৎসকের গাড়ি শোনার পরেও ভ্রুক্ষেপ ছিল না পুলিশের।
মন্তব্য