ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত ইউনিয়ন হরিণমারী। আর এই ইউনিয়নের নয়াপাড়ার গ্রামে রয়েছে প্রায় ২০০ বছর বয়সী একটি আমগাছ।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটা বিশালাকৃতির ঝাউগাছ। গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ডাল। এই আমগাছটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবে পরিচিত।
গাছের ডালগুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে একটু উপরে উঠেই মাটিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও উঠেছে উপরের দিকে। দেখতে অনেকটা টেউয়ের মতো।
কাণ্ড থেকে বের হয়েছে গাছটির ২০টি শাখা। শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫০ ফুট। গাছের প্রতিটি ডালে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়। ডালগুলো একেকটা মাঝারি সাইজের আমগাছের মতো।
তিন বিঘা জায়গাজুড়ে গাছটির অবস্থান। এর বর্তমান মালিক দুই ভাই সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তারাও সঠিক বলতে পারেন না যে, ঠিক কবে গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। তাদেরও ধারণা, প্রায় ২০০ বছর হবে গাছটির বয়স।
উপমহাদেশজুড়ে সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছ আর নেই। ফলে এটি দেখতে প্রতিদিন শ শ মানুষ ভিড় করে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে তাদের উপস্থিতি থাকে বেশি।
সাইদুর রহমান বলেন, ‘গাছটি আমার বাবার দাদার দাদা লাগিয়েছিলেন বলে শুনেছি। এর বয়স আনুমানিক ২০০ বছর হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দেখতে আসে।
‘প্রতিজনের কাছ থেকে আমরা ৩০ টাকা করে নিই। টিকিট বিক্রি করে যা পাই, তা দিয়ে আমার দুই ভাই মিলে গাছটির যত্ন নিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এখানে একটি পিকনিক স্পট গড়ে তুলব। এ কারণে আমরা জায়গাটি একটু সুন্দর করার চেষ্টা করেছি। ঈদে অনেক মানুষ গাছটি একপলক দেখার জন্য আসে।’
নুর ইসলাম বলেন, ‘গাছের বয়স বেশি হলেও গাছে প্রতিবছর অনেক আম আসে। অন্য আমের তুলনায় এই আমের দাম বেশি।
‘গাছটি যাতে ভালো থাকে এর জন্য নিয়মিত স্প্রে ও ওষুধ ব্যবহার করি। যারা এই আমগাছ দেখতে আসে তারাই আম কিনে নিয়ে যায়। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই তা বিক্রি করা হয়।’
আমগাছ দেখতে আসা সাঈদ হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি দিনাজপুর থেকে এসেছি। আমাদের দেশে এত সুন্দর আর বড় আমগাছ আছে তা আমরা অনেকেই জানি না।
‘এখানে ভালো একটা পিকনিক স্পট হতে পারে। তবে যাতায়াতের ব্যবস্থা অনেক খারাপ। যাতায়াতব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে সবদিক দিয়ে ভালো হয়।’
বীরগঞ্জ থেকে আসা কলিকা রানি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে গাছটি দেখার ইচ্ছা ছিল। নানা কারণে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। আজ আসার পর দারুণ লাগছে।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের হরিণমারীতে যে আমগাছটি রয়েছে, তা আমাদের জন্য গৌরবের। প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে গাছটি।
‘আমরা সরকারের তরফ থেকে এটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করছি। আর গাছটি কীভাবে আরও বেশি দিন বেঁচে থাকে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের পর এবার ভেসে এলো দুটি মৃত কচ্ছপ। এদের একটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি, অন্যটির ৩৫ কেজি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম দিকে কচ্ছপ দুটিকে দেখতে পান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু। পরবর্তীতে সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বাচ্চুর ধারণা, ডিম ছাড়তে কচ্ছপগুলো উপকুলে এসেছিল। তবে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এগুলো মারা গিয়েছে।
কচ্ছপ দুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির এ সদস্য।
এ বিষয়ে ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘মূলত কদিন ধরে সমুদ্রে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ার কারণে কচ্ছপ দুটি তীরে আসতে পারে। কারণ এই কচ্ছপগুলো জেলিফিশ খেতে পছন্দ করে।’
তিনি জানান, যে দুটি কচ্ছপ এসেছে, এদের বৈজ্ঞানিক নাম লেপিডোসেলিস ওলিভেসিয়া (Lepidochelys Olivacea)। এরা সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বেঁচে থাকে।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘একটি কচ্ছপের লেজে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সম্ভবত, কোনো কিছুর সঙ্গে আটকে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি জানান, এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বেশকিছু কচ্ছপের দেখা মিলছিল এই সৈকতে। তবে ২০২৪ সালে এই প্রথম মৃত কচ্ছপ এসেছে কুয়াকাটায়। এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সমুদ্রের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে জানান রাজু।
কলাপাড়া উপজেলার বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসি। মৃত কচ্ছপ থেকে দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তাৎক্ষণিক সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কুয়াকাটা সৈকতজুড়ে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের কারণে পর্যটকসহ জেলেদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক যুগের তুলনায় এ বছর অস্বাভাবিক হারে মৃত জেলিফিশ সৈকতে ভেসে আসছে।
কেন প্রতি বছর ঠিক এই সময়টাতেই সৈকতে মৃত জেলিফিশের আবির্ভাব ঘটে, সেটি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর গবেষণা করলেও আজ অবধি এর সদুত্তর মেলেনি।
আরও পড়ুন:সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাতাসের নিম্ন মানে প্রথম সারিতে রয়েছে ঢাকা।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউ এয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ১৮০ স্কোর নিয়ে ১০০টি শহরের মধ্যে বায়ুর নিম্ন মানে দ্বিতীয় ছিল ঢাকা।
একই সময়ে প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই ও ভারতের দিল্লি।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ দিনের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৩ গুণ বেশি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৮০। এর মানে হলো ওই সময়টাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিতে হয় রাজধানীবাসীকে।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানিটির র্যাঙ্কিংয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৬৭ নিয়ে রাজধানীর বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে।
একই সময়ে যথাক্রমে ১৮৬ ও ১৭২ স্কোর নিয়ে তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারতের দিল্লি ও থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ সকালের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৪ গুণ বেশি।
এ সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আইকিউএয়ার চারটি পরামর্শ দিয়েছে। এক, বাইরে গিয়ে ব্যায়াম না করা; দুই, বাসা-বাড়ির জানালা বন্ধ রাখা যেন দূষিত বায়ু ঘরে প্রবেশ না করতে পারে; তিন, বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা এবং চার, এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৬৭। এর মানে হলো ওই সময়টাতে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাসের মধ্যে বসবাস করতে হয় রাজধানীবাসীকে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে টানা তিন দিন ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর ছিল। মানে সামান্য হেরফের হলেও অস্বাস্থ্যকর বাতাসের চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে ঢাকা।
একই সময় ১০০টি দেশের এ তালিকায় ২৫ স্কোর নিয়ে সর্বশেষ অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের কাবুলের বাতাস ছিল ‘ভালো’।
আরও পড়ুন:সুন্দরবনের লোনা পানির চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানোর পর দেখা যাচ্ছে, এর তিনটি সুন্দরবনে ফিরে গেলেও একটি বহু পথ ঘুরে এখন বরিশাল বিভাগের জেলা পিরোজপুরের নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি জানতে সম্প্রতি চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় চলে যায়। তবে একটি কুমির বন ছেড়ে মংলা, বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকে পড়েছে।
মাত্র ১১ দিনে প্রায় একশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিরটি বুধবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালির একটি নদীতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশা, নির্দিষ্ট সময় পর আবারও সুন্দরবনে ফিরে আসবে। তবে আপাতত সে তার নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজছে।
স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে ১৬ মার্চ কুমিরটি অবমুক্ত করা হয়েছিল সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। এরপর এটি মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকেছে।
বন সংরক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা মূলত এই গবেষণার মাধ্যমে তাদের আচরণ ও বসবাসের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করেছি। যে কুমিরটি বনের বাইরে গেছে সে হয়তো তার বসবাসের জন্য সুবিধাজনক জায়গা খুঁজছে।’
কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে, জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।
আইইউসিএন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘সুন্দরবনের কুমির কোথায় কিভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো গবেষণা হয়নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে গবেষণাটি করা হচ্ছে।’
বিশ্বে পাখি, কচ্ছপ, নেকড়েসহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে তাদের আচরণ নিয়ে গবেষণার নজির রয়েছে। তবে বাংলাদেশের কুমির নিয়ে এভাবে গবেষণা এই প্রথম।
গবেষণাটি যেভাবে শুরু
লোনা পানির মোট চারটি কুমিরের গায়ে ১৩ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়। এর মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী কুমির।
এদের মধ্যে পুরুষ কুমির ‘জুলিয়েট’ সুন্দরবনের করমজলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে ছিল। আর স্ত্রী কুমির ‘মধু’কে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া বাকি দুটি কুমির ফাঁদ পেতে ধরা হয় সুন্দরবনের খাল থেকে। এই চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ স্থাপন করে ছেড়ে দেয়া হয় সুন্দরবনের খালে।
আইইউসিএন এই কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে কুমির গবেষক ড. সামারাভিরা ও পল বেরিকে।
আইইউসিএন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘গবেষক টিমের পরিকল্পনা ছিল মোট পাঁচটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানোর। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করি আমরা। তবে শেষ পর্যন্ত একটি বাদে মোট চারটি কুমিরের গায়ে বসানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।’
যেভাবে বসানো হল স্যাটেলাইট ট্যাগ
১৩ মার্চ সুন্দরবনের করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে বাছাই করা হয় জুলিয়েট নামের একটি কুমিরকে। সকালেই সেটির শরীরে ট্যাগ বসানোর কাজ শুরু হয়। ট্যাগ বসানো শেষে কুমিরটিকে ছেড়ে দেয়া হয় সুন্দরবনে করমজলের খালে।
যশোরের চিড়িয়াখানা থেকে আনা ‘মধু’ নামের কুমিরটি আনা হয়েছিলো আগেই। একই দিনে সেটির গায়েও স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে ছাড়া হয় একই খালে।
গবেষক দল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইল্ড লাইফ কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এই স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার কিট। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি পানির নিচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
কুমিরের গায়ে বসানো এই ট্রান্সমিটার কিটটির মেয়াদ এক বছর। ব্যাটারিচালিত এই যন্ত্রে থাকে একটি ক্ষুদ্র অ্যান্টেনা, যেটি সরাসরি যুক্ত থাকে স্যাটেলাইটের সঙ্গে। ট্যাগ লাগানোর পরই চালু হয়ে যায় এর লোকেশন অপশন। সেটি প্রতি ঘণ্টার আপডেট তথ্য ম্যাপের মাধ্যমে শেয়ার করে।
গবেষক দলের সদস্য দীপু বলেন, ‘কিটটির মেয়াদ এক বছর হলেও চাইলে তা আরও বাড়ানো যাবে।’
এর পরের দুদিন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের খাল থেকে ফাঁদ পেতে ধরা হয় আরও দু’টি কুমির। সেই দুটির গায়েও একইভাবে বসানো হয় এই স্যাটেলাইট ট্যাগ।
কুমিরের মাথার উপরের অংশে আঁশের মতো স্কেল থাকে। স্যাটেলাইট ট্যাগটি বসানোর জন্য সেখানে ছোট একটি ছিদ্র করতে হয়। ওই ছিদ্রের মধ্যেই বসানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘এই ট্রান্সমিটার চিপ খুব হালকা। ওজন দুই গ্রামেরও কম। এ ধরনের চিপ বসানো হলে তাতে কুমিরের কোনো ক্ষতি হয় না।’
ট্যাগ বসানো কুমিরগুলো এখন কোথায়?
কুমির প্রজনন কেন্দ্রের জুলিয়েট, যশোরের চিড়িয়াখানা থেকে আনা মধু এবং সুন্দরবনের খাল থেকে ফাঁদ পেতে ধরা আরও দুটি কুমিরের গতিপথ পর্যালোচনা করা হচ্ছে অবমুক্ত করার দিন থেকেই।
গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এর মধ্যে তিনটি কুমিরই আছে সুন্দরবনের মধ্যে। কিন্তু একটি কুমির অন্য পথে চলতে শুরু করেছে।
১৬ মার্চ যে কুমিরটিকে সুন্দরবনের জংলা খাল থেকে ধরে গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়, এর পরদিন থেকেই কুমিরটি সুন্দরবন ছেড়ে ছুটছে লোকালয়ের দিকে।
গত দশ দিনে গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কুমিরটি সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্ট থেকে মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলায় পৌঁছেছে।
স্যাটেলাইট তথ্য বলছে, বাকি তিনটি কুমিরই এখন অবস্থান করছে সুন্দরবনের মধ্যে নদী ও খালে। এর মধ্যে জুলিয়েট ও মধু হারবাড়িয়া পয়েন্টের কাছাকাছি নদীতে রয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। অন্য কুমিরটিকে করমজল থেকে ধরে ট্যাগ বসিয়ে সেখানকার খালে ছাড়া হয়েছিলো। সেটি এখন আশপাশের খালেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনটি কুমির সুন্দরবনের মধ্যে থাকলেও একটি কেন এত পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ের নদীগুলোতে ঢুকে পড়েছে সেটি নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে গবেষক দলেরও।
গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলছেন, ‘লোনা পানির কুমিরগুলো আসলে কোন দিকে মুভ করে সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের এক গবেষণার ধারণাকে স্পষ্ট করছে।’
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিচের দিকে সমুদ্রের কাছে নদীতেও অনেক স্যালাইন থাকে। আবার কোনো কুমির যদি কম লবণাক্ততা পছন্দ করে, সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে আশপাশের নদী-খালগুলোতে যায়।
বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ওই এলাকার পানিতে লবণাক্ততা কম বলে হয়তো কুমিরটি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কিংবা সে যা খায় সেগুলো হয়তো সে বেশি পাচ্ছে। আর সে কারণে কুমিরটি ওদিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
কুমির নিয়ে এ ধরনের গবেষণা কেন?
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনা পানির কুমির দেখা যায়। তারপরও এই পরিবেশে লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন খুব একটা হচ্ছে না।
আইইউসিএন-এর গবেষক দলটি বলছে, কুমির নিয়ে এর আগে কিছু গবেষণা হলেও বিশদ কোনো কাজ হয়নি। এ কারণেই কুমিরের অভ্যাস আচরণ জানার জন্য এই গবেষণা করা হচ্ছে।
গবেষক দীপু বলেন, ‘কুমির কোন অঞ্চলে ডিম পাড়ে, কোন অঞ্চলে স্ত্রী-পুরুষের সংখ্যা কেমন সেটা জানার জন্য এমন গবেষণার পরিকল্পনা অনেক দিন আগে থেকেই ছিল। এবার প্রথমবারের মতো তা শুরু হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞ ও বন কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা লবণাক্ততা বাড়া-কমার কারণেও জীবন-জীবিকায় এক ধরণের প্রভাব পড়ছে। হুমকির মুখে পড়ছে এই বন্যপ্রাণীটি। কুমিরগুলোকে বাঁচাতে তাই এ ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জিআইজেড-এর ‘ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অব সুন্দরবন ম্যানগ্রোভস অ্যান্ড দ্য মেরিন প্রোটেকটেড এরিয়া সোয়াস অফ নো গ্রাউন্ড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি চলছে।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘লোনা পানির কুমির নিয়ে এই গবেষণা ফলপ্রসূ হলে মিঠা পানির কুমির নিয়েও এভাবে গবেষণা করা দরকার বলে মনে করি আমরা।’
কেন হুমকির মুখে কুমির?
বাংলাদেশে লোনা পানির কুমির সুন্দরবনের বাইরে দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীর একটি তালিকা তৈরি করে। ‘আইউসিএন রেড লিস্ট’ নামে পরিচিত ওই তালিকায় লোনা পানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশেই লোনা পানির কুমির দেখা যায়। এর বাইরে অন্য যেসব কুমির রয়েছে তার অধিকাংশই চিড়িয়াখানাগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তাই কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে কুমির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
কুমির প্রজনন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আজাদ কবীর বলেন, ‘এ পর্যন্ত কয়েক দফায় এই প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া লোনা পানির দুই শতাধিক কুমির ছাড়া হয়েছে সুন্দরবনের খালগুলোতে। এর মধ্যে লোনা পানির কুমির ১০৭টি আর মিষ্টি পানির কুমির আছে মাত্র তিনটি।’
গবেষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পানিতে লবণাক্ততা হ্রাস-বৃদ্ধি, নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরা, নৌযান চলাচল বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে সুন্দরবনে কুমিরের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর মধ্যে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জাল ফেলে মাছ ধরা হয় না। মিঠা পানির কুমিরগুলো জালে ধরা পড়ে। অনেক কুমির এ কারণে হারিয়ে গেছে। একই কারণে হুমকিতে আছে লোনা পানির কুমিরও।’
বর্তমানে সুন্দরবনে কতগুলো কুমির আছে তা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেলেও এ নিয়ে সঠিক কোনো জরিপ বা তথ্য নেই বন বিভাগ কিংবা গবেষকদের কাছে। কেননা বিভিন্ন সময় যে গবেষণা হয়েছে সেসব তথ্যে বেশ গরমিল রয়েছে।
গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘একটি গবেষণা তথ্য বলছে সুন্দরবনে কুমির আছে দেড়শ’ থেকে দুশ’টি। আরেক গবেষণার তথ্য বলছে আড়াইশ’ থেকে তিনশ” লোনা পানির কুমির আছে সুন্দরবনে। সঠিক কোনো তথ্য কারও কাছে নেই।’
এই গবেষক একটি ধারণা দিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনে কুমির বসবাসের পরিবেশ ও ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কুমির অনেক কম রয়েছে।’
তবে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি বলছেন, ‘সুন্দরবনের নদী ও খালে বর্তমানে দুশ’র বেশি কুমির নেই।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পর্যটক বৃদ্ধি, মাছ ধরাসহ নানা কারণে আস্তে আস্তে কুমির যে বন থেকে সরে যাচ্ছে তার একটি উদাহরণ হতে পারে এই গবেষণা। যেমনটি দেখা গেছে স্যাটেলাইটের তথ্যেও।’
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে সকালের একটি সময়ে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ঢাকার বাতাস।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউ এয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টা ১১ মিনিটে ১৯৬ স্কোর নিয়ে ১২২টি শহরের মধ্যে বায়ুর নিম্ন মানে দ্বিতীয় ছিল ঢাকা।
একই সময়ে প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের দিল্লি।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ দিনের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৩ গুণ বেশি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ১০টা ১১ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৯৬। এর মানে হলো ওই সময়টাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিতে হয় রাজধানীবাসীকে।
আরও পড়ুন:সাগর-কন্যা কুয়াকাটার সৈকত জুড়ে আবারও মৃত জেলি ফিশের ছড়াছড়ি। গত পনের দিন ধরে চরগঙ্গামতি পয়েন্টসহ আশপাশের সৈকত এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে মৃত জেলি ফিশে। গত বছরও এখানে একই চিত্র দেখা গেছে এবং তা এই সময়টাতেই।
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা হাজার হাজার জেলি ফিশ সৈকতের বালুতে আটকে মারা যাচ্ছে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের তুলনায় চরগঙ্গামতি পয়েন্টে পর্যটক কম থাকায় এটি কারও বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। তবে এগুলো এভাবে পড়ে থাকলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে জিরো পয়েন্টের আশপাশ এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সৈকত জুড়ে জেলি ফিশের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় জেলেদেরও। কারণ তারা ঠিকভাবে সাগরে জাল ফেলতে পারছেন না। এসব পয়েন্টে জাল ফেললেই জীবিত জেলি ফিশ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। জেলি ফিশে জাল আটকে যাচ্ছে।
মৃত জেলি ফিশগুলোর কোনোটা দেখতে চাঁদের মতো আবার কোনোটা অক্টোপাসের মতো। সৈকত থেকে এগুলোকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকরা।
পটুয়াখালী জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলি ফিশ সমুদ্রের এক আজব প্রাণি। এগুলোকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসর যুগের প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
‘জেলি ফিশের মাথা, হৃৎপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। সম্পূর্ণ নরম দেহ বা জিলেটিনাস দেহ নিয়ে এটা গঠিত। বিভিন্ন প্রজাতির জেলি ফিশ পৃথিবির সব সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা লেগুনে বিস্তৃত রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে এগুলো টিকে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জেলি ফিশ প্রকৃতপক্ষে লোনা পানির প্রাণি। এরা সাধারণত সাঁতার কাটার উপযুক্ত নয়। কারণ এদের সাঁতার কাটার কোনো দৈহিক শক্তি বা অঙ্গ নেই। তবে উল্লম্বভাবে সামান্য চলাচলে ভার্টিকেল প্রোপালশন সিস্টেম রয়েছে, যার মাধ্যমে এগুলো পানির গভীর থেকে উপরে এবং উপর থেকে গভীরে গমনাগমন করতে পারে। পার্শ্বীয় চলাচল বা সামন্তরাল পথ ভ্রমণে এরা মোটেই উপযুক্ত নয়। তাই জেলি ফিশ পানির স্রোত বা বাতাসের গতির ওপর নির্ভরশীল থাকে।
‘সমুদ্রের স্রোত, জোয়ার বা সামদ্রিক বাতাসের তোড়ে এগুলো সমুদ্র থেকে উপকূলে বা সমুদ্রতীরে বা বিচে এসে আটকে পড়ে। স্রোতের বিপরীতে যাওর অক্ষমতার জন্য এখানেই এদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে।
‘জেলি ফিশ সাধারণত উপযুক্ত লবণাক্ততায় প্রজনন করে থাকে এবং নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে মারা যায়। প্রচুর খাবার, সঠিক অক্সিজেন ও লবণাক্ততা পেলে জেলি ফিশ দ্রুত বংশ বিস্তার করে।
‘কিছু প্রজাতির জেলি ফিশের স্টিং থাকে। আর তাতে ভেনম বা বিষ থাকে; যদিও এই বিষ মৃত্যুঝুঁকির মতো নয়। তবে চুলকানি, লাল বার্ন হয়ে যাওয়া বা কিছু ক্ষেত্রে চোখে লাগলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘কুয়াকাটার বিচে আটকে পড়া এসব জেলি ফিশ সাদা জেলি ফিশ নামে পরিচিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাঙটাটা। এরা মোটেই বিষাক্ত প্রজাতির নয়। এদের স্টিং নেই যেখানে বিষ থাকতে পারে। তবে এই প্রজাতির জেলি ফিশের সংস্পর্শে কিছুটা চুলকানি হতে পারে।’
প্রতি বছর মার্চ মাসের দিকে সাগর উপকূলে জেলি ফিশের বিস্তারের কারণ সম্পর্কে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ থেকে জুলাই মাসে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন ভালো থাকে। পাশাপাশি অনুকূল তাপমাত্রা ও ও লবণাক্ততা প্রজননের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় সাদা জেলি ফিশ এই সময়ে ব্যাপকমাত্রায় প্রজনন করে পপুলেশন ব্লুমস তৈরি করে। পরবর্তীতে সাগরের ঢেউ, স্রোত ও বাতাসের শক্তিতে এগুলো উপকূলভাগে চলে আসতে বাধ্য হয়।
‘এ কারণেই প্রতি বছর মার্চ মাসের শুরুতে বা কিছু ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসব জেলিফিশ উপকূলে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। তবে তাপমাত্রা কমে গেলে বা সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই এগুলো মারা যাবে।’
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, সাগরে অধিক পরিমাণ মাছ আহরণের কারণেও জেলি ফিশের ব্যাপক বংশ বিস্তার হতে পারে। কারণ অনেক সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণি জেলি ফিশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাই সাগরে কিছু প্রয়োজনীয় মাছ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই জেলি ফিশের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের সাগর সীমায় সরকার যে ৬৫ দিনের জন্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) তা অব্যাহত থাকলে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জেলি ফিশের সংখ্যা বা ব্লুমস প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ হবে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে সকালের একটি সময়ে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ঢাকার বাতাস।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউ এয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে ১৭৭ স্কোর নিয়ে ১২১টি শহরের মধ্যে বায়ুর নিম্ন মানে তৃতীয় ছিল ঢাকা।
একই সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের দিল্লি ও পাকিস্তানের লাহোর।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ দিনের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২১ গুণ বেশি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আজ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৭৭। এর মানে হলো ওই সময়টাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিতে হয় রাজধানীবাসীকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য