নারায়ণগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে ত্রাণ দিতে বাধ্য হওয়া ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদকে তার খরচের ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
তবে প্রশাসনের কেউ নয়, ফরিদকে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে অন্য একজনের মাধ্যমে। তিনি দাবি করেছেন, ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা দিযেছেন।
যদিও জেলা প্রশাসক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, সরকারি তহবিলের টাকা গেছে ফরিদ আহমেদের কাছে।
প্রশ্ন উঠেছে, টাকা প্রশাসন দিয়ে কেন এই লুকোচুরি কেন করছে।
সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার ফরিদ আহমেদ গত বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান।
ফোন পেয়ে ত্রাণ নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে হতবাক হয়ে যান উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। পরে তারা ভবন দেখে ইউএনওকে জানান।
তারা গিয়ে দেখেন ফরিদ আহমেদ চার তলা ভবনে থাকেন। জানতে পারেন, তার একটি গেঞ্জি কারখানা আছে।
এই তথ্য তারা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাকে। তিনি ঘটনাস্থলে এসে ফরিদকে বলেন, ১০০ মানুষকে ত্রাণ দিতে হবে। শনিবার বিকেলে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি নিজেও থাকবেন।
শনিবার ত্রাণ বিতরণের আয়োজনে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে ফরিদ আহমেদের জীবনের কঠিন কাহিনি। তিনি যে বাড়িটিতে থাকেন, তার পুরোটার মালিকানা তার নয়। তার যে গেঞ্জি কারখানা আছে, সেটি ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর বন্ধ হয়ে গেছে।
বিপাকে পড়া মানুষটি অন্য একটি কারখানায় কাটিং এর কাজ করতেন। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে সেটিও আর করতে পারেন না।
এর মধ্যে ইউএনওর আদেশে তিনি পড়েন দুশ্চিন্তায়। তাকে একজন বলেছেন, আদেশ না মানলে তিন মাসের কারাদণ্ড হবে।
পরে স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে টাকা যোগাড় করেন ফরিদ। তৈরি করেন ত্রাণের ১০০ প্যাকেট। শনিবার ইউএনও ঘটনাস্থলে এসে সেগুলো বিতরণ করেন।
এর মধ্যে নিউজবাংলায় প্রকাশ হয় ত্রাণ সত্যিই দরকার ছিল ফরিদের, ভুল ইউএনওর-শিরোনামে সংবাদ। শুরু হয় সমালোচনা।
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, টাকা ফেরত দেয়া হবে ফরিদ আহমেদকে।
এরপর দিনভর ফরিদের বাসার আশেপাশে অবস্থান করেন নিউজবাংলার প্রতিনিধি। সকাল থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তার বাসায় এসেছেন। কথা বলে গেছেন।
গোপনে দেয়া হলো টাকা
বিকেলে ফরিদকে ঘর হতে বের হতে দেখা যায়।
কোথায় যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সামনে যাই।’
কিছুক্ষণ পর বোরকা পরে তার স্ত্রী হিরন বেগম বের হন। আধা ঘণ্টা পরে তারা ফেরেন। এর আগে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বললেও তখন আর কিছু বলতে চাননি। দরজাও বন্ধ করে দেন।
কিছুক্ষণ পর বাসায় ডাকেন ফরিদ আহমেদ। বলেন, ‘আমারে টাকা দিছে, ৬০ হাজার।’
কে দিয়েছে- এমন প্রশ্নে বলেন, সাহিনুর ভাই টাকা দিছে।
টাকা দেয়ার সময় কি সই নিয়েছে?
ফরিদ বললেন, ‘হ’। পরে বলেন, ‘বাবা এখন যাও। যা হওয়ার হইছে আমি টাকা পাইছি।’
তার স্ত্রী হিরন বেগম বলেন, ‘আমগো ডাইকা নিয়া সাহিনুর ভাই টাকা দিছে। আমাগো আর কোনো কথা নাই।’
টাকার আনার সময় আপনাদেরকে কিছু বলা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভুল আমাদের।’
কী ভুল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা যান তো।’
পঞ্চায়ের কমিটির নেতার দাবি, টাকা দিয়েছেন তিনি
যিনি টাকা দিয়েছেন তার পুরো নাম সাহিনুর আলম। তিনি দেওভোগ নাগবাড়ি পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা।
সাহিনুর আলম বলেন, ‘ফরিদ আহমেদের বাড়িটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তারা সব ভাইবোন মিলে থাকে। তিনি দুই বার স্ট্রোক করছেন। এই এলাকায় একটি হোসিয়ারি দোকানে কাটিং মাস্টার। ইউএনও সাহেব যখন আসছে তখন উনি উনার তথ্যটা সঠিক ভাবে বলতে পারে নাই। পরে উনারে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ দিতে বলা হয়। কিন্তু উনি অসহায়। তাই টাকার ব্যবস্থা করতে স্বর্ণ বন্ধক রাখছে। এ হইলো অবস্থা।’
আপনার হাত দিয়ে কেন টাকা দেয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমারে প্রশাসন থেকে ফোন করছে। বলছে বলেন এটার যখন যা হয়ে গেছে গা, আপনি একটা ব্যবস্থা করেন। তাই আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ফরিদ আহমদ ও তার স্ত্রীর হাতে ৬০ হাজার টাকা দিছি।’
প্রশাসন থেকে টাকা দিতে বলা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, প্রশাসন থেকে বলে নাই। আমি আমার ব্যক্তিগত টাকা দিছি।’
ডিসি বললেন সরকারি তহবিলের টাকা
তবে সাহিনুরের বক্তব্যের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কথার মিল নেই।
জেলা প্রশাসন মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (আরিফা জহুরা) আমাকে জানিয়েছেন ফরিদ আহমদকে টাকা দেয়া হয়েছে।’
এই টাকা কে দিয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনি (ইউএনও) আমাকে জানিয়ে অফিস ফান্ড থেকে টাকা দেয়া হয়েছে। বিস্তারিত ইউএনও বলতে পারবেন।’
তবে দিনভর ফোন ধরছেন না ইউএনও।
নিজেকে আড়াল করেছেন ইউএনও
ইউএনও আরিফা জহুরা সকাল থেকেই ফোন ধরছেন না। ১৯ বার কল করার পর তিনি না ধরায় সদর উপজেলা ভবনে তার কার্যালয়ে যান নিউজবাংলার প্রতিনিধি। কিন্তু তার কক্ষে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।
আরিফা বসেন ভবনের দোতলার একটি কক্ষে। নিচতলা দিয়ে ঢুকতে গেলেই বাধা দেন নিরাপত্তাকর্মী। বলেন, ‘অনুমতি লাগবে ভেতরে যেতে।’
এই অনুমতি দেবেন ইউএনও নিজে। কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না, এই বিষয়টি জানালে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘ফোন ধরলে আইসেন।’
তবে এ ঘটনার আগে ইউএনও ফোন ধরেছিলেন, তার কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা বক্তব্যও নিয়ে এসেছেন। এমনকি ফরিদের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে আসার পর শনিবার সন্ধ্যায়ও সাংবাদিকরা তার কক্ষে ঢুকেছেন অবাধে। তিনি কথা বলেছেন হাসিমুখেই।
যে প্রশ্ন নাগরিক কমিটির নেতার
নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল করের টাকায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন বলছে ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু আমাদের দাবি হলো ইউএনও ভুল করেছেন। এর মাশুল কেন সরকার দেবে?
‘কারণ, সরকারের টাকা জনগণের। যিনি ভুল করেছেন তিনিই টাকা দেবেন। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাই, ফরিদ আহমেদকে ত্রাণ সহায়তা করা হোক।’
এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের সাহায্য করা হয়েছে তারাও ওই এলাকার অসহায় মানুষই। তারা এমনিতেও সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। তাই সরকারি অনুদান টাকা থেকেই দেয়া হবে।’
তদন্ত কমিটি
ফরিদ আহমেদকে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম ব্যাপারীকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিকে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাইন বিল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে।’
ঘটনার শুরু যেভাবে
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় বাসা ফরিদ আহমেদের।
বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান তিনি। খাবার নিয়ে আসেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। পরে তারা ভবন দেখে ফোন দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা আসেন ঘটনাস্থলে। দেন শাস্তির ঘোষণা।
ইউএনও জানান, সরকার প্রতি প্যাকেটে যে পরিমাণ খাবার দেয় দুস্থদের, সেই পরিমাণ খাবারসহ ১০০ প্যাকেট করে বিতরণ করতে হবে।
নির্দেশমতো শনিবার বিকেলে ফরিদ আহমেদ সেই খাবার বিতরণও করেন। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও স্বয়ং।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরিদের জীবনের কাহিনি জেনেছে নিউজবাংলা। কিন্তু জানেননি ইউএনও।
ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে। কিন্তু এই বাড়ি ছয় ভাই ও এক বোনের। আমাগো সবার আংশিক ভাগ আছে। এর মধ্যে আমি নিচ তলায় থাকি। আমার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। মেয়ে মহিলা কলেজে পড়ে। তাদের নিয়া আমার সংসারে অনেক টানাটানি।’
৩৩৩ নম্বরে কেন ফোন
ইউএনও আরিফা জহুরা দাবি করেছেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে আসলেই খাবার পাওয়া যায় কি না, সেটি যাচাই করতেই ফোন করেছিলেন ফরিদ।
তবে ফরিদ বলেন উল্টো কথা।
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টা আমি এফএম রেডিও শুনি। সেখানে শুনছি ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে খাবার আসে। এ জন্য ফোন করছি কিন্তু জানতাম না এটা নিম্ন আয়ের মানুষের। আমিও তো পেটের দায়ে অভাবে পইড়াই ফোন করছি।
‘আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করছি। সেখান থেকে তারা বলছে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হইল। পরে তারা ফোন করে নাম, ঠিকানাসহ আমার ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করছে, আমি সব বলছি। এরপর তারা আইসা খাদ্য না দিয়া বরং আমারে ফাইন করে দিয়ে গেছে।’
জরিমানার আদেশের বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কাশিপুর ইউনিয়নে পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন। এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।
‘পরে আমি ভুলও স্বীকার করেছি। তার কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন এবং আমাকে ডেকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেন। ইউএনও স্যার চলে যাওয়ার পর ইউপি সদস্যসহ অনেক খাদ্য সহায়তা করা না হলে তিন মাসের সাজা হবে বলে জানানো হয়।’
এ ঘটনায় রোববার দুপুরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। বিকেলে সাড়ে ৫ টার দিকে ৬০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয় ফরিদ আহমেদকে।
আরও পড়ুন:গাজীপুরে টানা দুই ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। বুধবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুপুর ১২টার দিকে জয়দেবপুর শিমুলতলী সড়কের ডুয়েট গেটের পাশে এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। পরে মিছিল সহকারে ভুরুলিয়া রেলগেট, শিববাড়ি হয়ে চন্দনা চৌরাস্তায় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। গাজীপুর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সড়কপথ অবরোধের ফলে ঢাকা-জয়দেবপুর, শিমুলতলীগামী সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা জানান, যারা কারিগরি শিক্ষা এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও অযৌক্তিক দাবি নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
কর্মসূচিতে গাজীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অংশ নেন। এছাড়া এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রয়েল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভাওয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা জানান, দেশের ৪০ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও প্রায় চার লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। তাদের প্রতিটি দাবি দেশের চালিকাশক্তি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ারে আঘাত হানে। এই দাবি জাতীয় কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াবে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দাবি মানা না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মীমাংসিত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।
এদিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম দুটি মহাসড়ক অবরোধের ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দুই মহাসড়কের উভয়দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে গন্তব্যগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেন।
বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, দুপুর ১টা থেকে থেকে শিক্ষার্থীরা চন্দনা চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ি পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে রাখেন। বিকেল ৩টার দিকে তারা চলে যান।
উত্তরা ইপিজেডে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিক সাইফুল ও তার বাবা শফিকুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নীলফামারীতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ‘এভারগ্রীন প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেডের’ বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েক শত শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিসি অফিস-সার্কিট হাউজ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন ইপিজেডের এভারগ্রীন প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের শ্রমিক ছাইদুল ইসলাম সাইফুল। ওই দিনই তার বাবা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে কর্দমাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে মালিকপক্ষের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ডিবি পুলিশ সাইফুল ও তার বাবা শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়েরসহ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার সকাল থেকেই এভারগ্রীণ কারখানার শ্রমিকরা ইপিজেডের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিসি অফিসের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কারাগারাবন্দী শ্রমিক ছাইদুল ইসলাম সাইফুল ও তার বাবাকে আদালত জামিনে মুক্তি দিলে দুই ঘন্টা পর দুপুর দেড়টায় শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপর জেলা প্রশাসকের সম্মেলণ কক্ষে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠকে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে সম্মত হন।
বৈঠক শেষে জেলা পুলিশ সুপার এ.এফ. এম তারিক হোসেন খান বলেন, ‘সাইফুল সবার সামনেই স্বীকার করেছে যে সে নিজেই আত্মগোপনের মাধ্যমে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমরা শ্রমিকদের প্রতি সহনশীল হয়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সাইফুল ও তার বাবার জামিনের ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। আশা করি আগামীকাল থেকে উত্তরা ইপিজেডে আর কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। সুন্দরভাবে ইপিজেড পরিচালনা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকদের প্রধান যে দাবি ছিল সাইফুল ও তার বাবার নামে যে মামলা হয়েছে সেটি থেকে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া ও শ্রমিকদের আরও কিছু দাবি ছিল। বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা ছিল তাদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইপিজেডে শ্রমিকদের স্বার্থ ও দাবি রক্ষায় আগামী ৭ দিনের মধ্যে কারখানা শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পিসি কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
আনারস, কলা, চালা বাইদ, শাল গজারির অবারিত বন, মধুপুরের লাল মাটির গর্বের ধন। দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলের মধ্যে লাল মাটির মধুপুর গড় অন্যতম। গড় এলাকার মাটি ভূ-প্রকৃতিক বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যে রয়েছে অন্যসব কৃষি এলাকা থেকে ভিন্নতর। এক দিকে উর্বর মৃত্তিকা, অম্লত্ব, উঁচু বন্যা মুক্ত। রস-কষ শক্তি সামর্থ্যে বৈচিত্র্যময়। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। কোথাও বাইদ, কোথাও চালা। মধুপুরের মাটি পরিবেশ প্রতিবেশ প্রকৃতি সব মিলে যেন এক কৃষির নৈসর্গিক লীলা ভূমি। বলছিলাম মধুপুর গড়ের কৃষি রাজ্য কথা।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় মধুপুরে আনারস আর দেশি জাতের কিছু কলা আদা হলুদ কচু পেঁপেসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হতো। বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছিল না। বেশির ভাগ স্থলে ছিল শাল গজারির বন। দিন দিন বন উজাড়ের ফলে সংকুচিত হয় ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত সমতল এলাকার পাতা ঝরা শাল গজারি, সেগুণ, আজুলি, বহেড়া, হরিতকি, নিম, নিশিগন্ধা, সর্পগন্ধা, শিমুল, জারুল, খাড়াঝরা, অর্জুন, সিদা, মেহগুনি, বানর নড়ি, আনাইগোটা, তিতিজাম, ঢাকি জাম,আমলকীর রাজ্য ক্ষীন হতে থাকে। বাড়তে শুরু করে বাণিজ্যিক কৃষি চাষাবাদ।
এখন লাল মাটির চারদিকেই দিগন্ত জোড়া কৃষি ফসলের বৈচিত্র্যেভরা। মাঠে মাঠে শোভা আনারস কলা হলুদ পেপে কচু কফি কাজু বাদাম কাসাভা ড্রাগনসহ নানা ফসল। হাট বাজারে এ সময় কলা আনারসের মৌ মৌ গন্ধ বিরাজ করছে। সারা বছরই বাজারে নানা ধরনের শাকসবজি ফলমূল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাগম ঘটে।
গারো বাজার মহিষমারা গেলে ছানোয়ার হোসেন নামের এক কৃষক তার কফি বাগান ঘুরে ঘুরে দেখান। চমৎকার বাগান। তিনি এ চাষে সাড়া জাগিয়েছে। শুধু জানোয়ার হোসেনই নয় তার মতো ছোট বড় কৃষক কফি করেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। গোবুদিয়া ও ইদিলপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান নামের কৃষক কাজু বাদাম কফি চাষ করেছে। তার মতো অনেক কৃষক কাজু বাদামের গাছ লাগিয়েছে কৃষি বিভাগ জানায়।
সরজমিনে গারো বাজারের ছানোয়ার হোসেন তার বাগান ঘুরে দেখালেন একখণ্ড কৃষির রাজ্য। মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, আনারস, কফি, বাতাবি লেবু (জাম্বুরা), লেবুসহ নানা ফল ফসলে গড়ে তোলেছেন তার কৃষি একখণ্ড রাজ্য। সব মিলে গারো বাজারের এ কৃষক ছানোয়ার পেয়েছে অনেক পদক ও সম্মাননা।
কৃষকরা জানান, এভাবে দিন দিন মধুপুরের লাল মাটিতে আবাদ হচ্ছে নতুন নতুন ফল ফসল। কৃষি ফসলের বহরে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ফসল। সুদুর ফিলিপাইনের উন্নত জাতের আনারস চাষের নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে । এ আনারসের জাতের নাম এমডি-২। কৃষি ও কৃষকের আশা এ জাতের আনারসের ফলন ভালো হলে লাল মাটির মধুপুর কৃষি অঞ্চলে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
মধুপুরে এখন উচ্চ ফলনশীল জাতের নানা ফসলের বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চল জামাল পুর জেলার কিছু অংশ জুড়ে গাজীপুর পর্যন্ত লাল মাটি। বন আলু, বনের নানা ভেষজ বৃক্ষ গারোদের প্রিয় খাবারের অংশ ও ভেষজ চিকিৎসার উপকরণ। শুধু ৩৭০.৮৪ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে ১১ টি ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মাঝারি প্রান্তিক চাষি। কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার ৯৫০ এর মতো।
এ কৃষি রাজ্যের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে যেমন কৃষকরা লাভবান তেমনি দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রা। সমৃদ্ধ হবে মধুপুর এমনটাই মনে করছে স্থানীয়রা।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, মধুপুর মাটি আবহাওয়া ভূপ্রকৃতি কৃষি ফসলের জন্য উপযোগী। এ মাটিতে প্রায় সব ধরনের ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ এলাকার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। তারা কৃষকদের সহযোগিতা পরামর্শ দিয়ে থাকে বলে জানান।
তরুণদের উদ্দেশ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “ফ্যাসিবাদের মতো কঠিন রোগ বাংলাদেশ থেকে সড়াতে পেরেছি, তামাক দূর করতে পারব না কেন?” তিনি আরো বলেন, তরুণদের উদ্দেশ্য করেই তামাক কোম্পানিগুলো কূটকৌশল সাজায়। কারণ, ২০-২৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের যদি তামাকে আসক্ত করা যায়, তবে তারা অন্তত ৫০ বছর ধরে সিগারেটের বাজার নিশ্চিত করতে পারবে।
উপদেষ্টা আজ বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নারী মৈত্রী আয়োজিত "নারী, শিশু ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব" -শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলো ক্যাবিনেটে তোলার জন্য। তবে রাজস্ব কমে যাবে-এ অজুহাতে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি হাই লেভেল কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দুই দফা বৈঠকও করেছে। কিন্তু তামাক কোম্পানির লবিং এতই শক্তিশালী যে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সবসময় জুজুর ভয় দেখায় যে, তামাক থেকে রাজস্ব আহরণ ছাড়া সরকার চলতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রদেয় আয়করের মধ্যে বহু ফাঁকি রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা তরুণ সমাজকে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।" তরুণ প্রজন্ম সচেতন হলে কোনো তামাক কোম্পানি আর তাদের টার্গেট করতে পারবে না।
সভায় জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, শিক্ষক ফোরাম, ইয়ূথ ফোরাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ।
একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন উর্মী খাতুন (২৫)। কিন্তু সেখানেই তিনি হারিয়েছেন তার শেষ সম্বল, সম্মান ও মানসিক শান্তি। প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন এই নারী। বুধবার শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উর্মী খাতুন জানান, পারিবারিক কিছু জটিলতার কারণে গত মার্চ মাসে শহরের ফরিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া ওঠেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার পুরো বিষয়টি তদারকি করেন ফরিদের ভাগ্নে ইদ্রিস আলী। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের অগ্রীম ভাড়ার পরিবর্তে উর্মী তার মায়ের দেওয়া শেষ স্মৃতি ৪ ভরি ওজনের একটি সোনার চেইন তোলে দেন ইদ্রিসের হাতে। কিন্তু চেইন হাতে পেয়েই বদলে যেতে থাকে ইদ্রিস ও তার মামা ফরিদের আচরণ। ভাড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করে উর্মীকে বাসা থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে তারা। শুধু তাই নয়, ইদ্রিস একাধিকবার উর্মীর একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উর্মী বলেন, ‘এই শহরে আমি কাউকে চিনতাম না। বিশ্বাস করে শেষ সম্বলটা তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বোঝতে পারছি, কত বড় ভুল করেছি। ইদ্রিস শুধু প্রতারণাই করেনি, সে আমাকে বারবার মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। থানায় জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সুবিচার পাইনি। আজ আমি শঙ্কিত, আতঙ্কিত প্রাণনাশের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
বাড়ির মালিক ফরিদ হোসেন ও তার ভাগিনা ইদ্রিস আলী বলেন, অভিযোগুলো সঠিক নয়। উর্মীর কয়েক মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে। যার কারণে এমনটা মিথ্যা ছড়াতে পারে। চেইন নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব মিথ্যা রটানোর কোনো মানে হয় না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে, কয়েক দশকের চিত্তাকর্ষক জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি নতুন দৃষ্টান্তে রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত। যদিও দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য উল্লেখযোগ্য, প্রকৃত সমৃদ্ধি পরিমাণগত মেট্রিক্সের বাইরেও বিস্তৃত। এই নতুন পর্যায়ে কেবল কৌশলগত অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন নেই বরং আমরা কীভাবে অগ্রগতি পরিমাপ করি তার একটি মৌলিক পুনর্বিবেচনারও প্রয়োজন- যা প্রতিটি নাগরিকের জীবিত অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণকে ধারণ করে। বাংলাদেশে অপরাধ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জাতীয় অগ্রগতির বিষয়ে আপনার প্রতিফলন কয়েক দশক ধরে চলমান গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে। এখানে বিবেচনা করার জন্য কিছু মূল বিষয় রয়েছে- জাতীয় অগ্রগতির সূচক হিসেবে রয়েছে ।
১ অপরাধের ধারণা: মোবাইল ফোন চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাই প্রায়শই একটি জাতির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার সূচক হিসেবে দেখা হয়। উচ্চ অপরাধের হার অন্তর্নিহিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো প্রতিফলিত করতে পারে।
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৮২ সালের আপনার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে অপরাধ কীভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় এবং রিপোর্ট করা হয় তা নিয়ে উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক ব্যবহৃত পরিভাষা জনসাধারণের ধারণা এবং মামলাগুলোর গুরুত্বকে প্রভাবিত করতে পারে।
দীর্ঘকাল ধরে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) জাতীয় সাফল্যের প্রাথমিক বারোমিটার হিসেবে কাজ করেছে। তবুও, এই সূচকটি একটি অসম্পূর্ণ বর্ণনা প্রদান করে। এটি অর্থনৈতিক উৎপাদন পরিমাপ করে কিন্তু বৈষম্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মানের বিষয়ে নীরব থাকে। একটি দেশ ক্রমবর্ধমান জিডিপি পরিসংখ্যান নিয়ে গর্ব করতে পারে যখন তার নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতা, সীমিত সুযোগ এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা ক্ষয় নিয়ে লড়াই করে। বাংলাদেশের এখন সুযোগ রয়েছে উন্নয়নের জন্য আরও সামগ্রিক এবং মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ার- যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কল্যাণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লক্ষ্য নয়, বরং একই মুদ্রার দুটি দিক।
উন্নয়নের সাধনা অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে- এতে মানুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুখ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এই কারণেই একটি নতুন উন্নয়ন সূচকের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন যা সামাজিক আস্থা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়সঙ্গত সুযোগের হিসাব করে জিডিপির পরিপূরক হবে। কল্পনা করুন এমন একটি সূচক যা অন্ধকারের পরে বাড়ি ফেরার একজন মহিলার আত্মবিশ্বাস, আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারী একজন ছোট ব্যবসার মালিকের আস্থা, অথবা একটি পরিবার তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি যে সুরক্ষা বোধ করে তা প্রতিফলিত করে। এই ধরনের কাঠামো গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ প্রকৃত অগ্রগতির অর্থ কী তা পুনর্নির্ধারণে বিশ্বব্যাপী অগ্রগামী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আইন প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ- পুলিশিং কার্যকারিতা: আপনার মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ করার সময় পুলিশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের অভাব সম্পর্কে আপনার বক্তব্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা সম্পর্কে চলমান উদ্বেগগুলো তুলে ধরে। প্রযুক্তির ব্যবহার: তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজের ওপর নির্ভরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অভিজ্ঞতা পুলিশ পদ্ধতির পর্যাপ্ততা এবং উপলব্ধ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তাদের ইচ্ছা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
৩. জনসাধারণের আস্থা: যদি নাগরিকরা মনে করেন যে তাদের উদ্বেগগুলো পর্যাপ্তভাবে সমাধান করা হয়নি, তাহলে এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর আস্থা হ্রাস করতে পারে এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিতে অবদান রাখতে পারে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো কেবল অতীতের অবশিষ্টাংশ নয়; এগুলো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় চলমান চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিফলিত করে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজন: পুলিশিং অনুশীলনে সংস্কার: পুলিশ বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করা।
সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা তৈরি করা।
প্রযুক্তির ব্যবহার: অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাধানে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। ১৯৮২ সালের পর থেকে কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, এই চ্যালেঞ্জগুলোর স্থায়িত্ব ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশে নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় অগ্রগতি বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য এই বিষয়গুলোর সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নতুন সূচকের একটি প্রতিশ্রুতিশীল উপাদান হলো আলী (২০২৫) দ্বারা প্রস্তাবিত দৈনিক নিরাপত্তা সূচক (ডিএসআই), যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণকে ব্যাহত করে এমন অপরাধগুরো ট্র্যাক করবে- বিশেষ করে মোবাইল ফোন চুরি। আজকের ডিজিটাল যুগে, একটি স্মার্টফোন একটি যোগাযোগ যন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি; এটি আর্থিক পরিষেবার প্রবেশদ্বার, ব্যক্তিগত ও পেশাদার তথ্যেরভাণ্ডার এবং সম্প্রদায় এবং সুযোগের জন্য একটি জীবনরেখা। একটি ফোন হারানো বা চুরি কেবল বস্তুগত বঞ্চনা নয় বরং একজনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থার ভাঙনের প্রতিনিধিত্ব করে। ডিএসআই হ্রাস এমন একটি সমাজের ইঙ্গিত দেবে যেখানে আইনের শাসন শক্তিশালী, সামাজিক আস্থা বেশি এবং নাগরিকরা ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবাধে এবং নিরাপদে জড়িত হতে পারে। ব্যাংকিং খাতের চেয়ে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আর কোথাও এত স্পষ্ট নয়। আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন (২০২৪) অনুসারে, দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭.৫৬ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে- যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সমগ্র জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। এটি কেবল একটি চক্রাকার মন্দা নয় বরং গভীর কাঠামোগত সমস্যার লক্ষণ: অপর্যাপ্ত তদারকি, অযৌক্তিক ঋণদান পদ্ধতি এবং জবাবদিহিতার অভাব।
এই দুর্বলতাগুলো জনসাধারণের আস্থা হ্রাস করেছে, বেসরকারি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে রোধ করেছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ঘাটতি এবং রপ্তানি বৈচিত্র্যের অভাবের ফলে এই চ্যালেঞ্জগুলো দশকের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিচ্ছে। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যেই পুনর্বিকরণের সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকিং সংকট ব্লকচেইন এবং রিয়েল-টাইম অডিটিং সিস্টেমের মতো স্বচ্ছ, প্রযুক্তি-চালিত সমাধান গ্রহণকে অনুঘটক করতে পারে। একইভাবে, জ্বালানি ঘাটতি পুনর্বিকরণযোগ্য উৎস এবং দেশীয় জ্বালানি স্থিতিস্থাপকতার দিকে উত্তরণকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বাংলাদেশ টাকা কোড সঠিক, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে আমরা বাংলাদেশি টাকা ব্যবহার করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
স্বয়ংক্রিয় প্রতিবেদন, স্বাধীন তদারকি এবং ফিনটেক উদ্ভাবনের প্রবর্তন স্বচ্ছতা এবং আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে। একটি স্থিতিশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা কেবল সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং উদ্যোক্তা, ছোট ব্যবসা এবং তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবকদের ঋণ প্রবাহকে সক্ষম করার জন্যও অপরিহার্য। ফিনটেক সমাধান গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারে, একটি দক্ষ এবং নিরাপদ আর্থিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে। এই রূপান্তর জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং ডিজিটাল আর্থিক সম্পদ রক্ষা করে একটি উচ্চতর দৈনিক নিরাপত্তা সূচক (DSI) তৈরিতে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং প্রবাসী সম্প্রদায়গুলো অমূল্য সম্পদ। রেমিট্যান্স, যা প্রায়শই অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণোদনা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। তদুপরি, সামাজিক ব্যাংকিং মডেলগুলো বিকাশ করা- আর্থিক মধ্যস্থতাকারীরা যা ক্ষুদ্র-সঞ্চয়কে ক্ষুদ্র-বিনিয়োগে রূপান্তরিত করে- সম্প্রদায়গুলো ক্ষমতায়ন করতে পারে, মহিলা উদ্যোক্তাদের সমর্থন করতে পারে এবং নিচ থেকে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে পারে। এই পদ্ধতিটি নিষ্ক্রিয় সঞ্চয়কে সক্রিয় বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারে, সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং দৈনিক নিরাপত্তা সূচককে উন্নত করতে পারে।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে, একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে শরীয়তপুর জেলায় আদালতে রিপোর্ট করার সময় তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্রের রেকর্ডের সাথে মিল রেখেছিলেন। এই ধরনের ব্যক্তিদের আইনের অধীনে জবাবদিহি করতে হবে, কারণ জনসাধারণকে এই ধরণের কাজের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হবে না। অনেক সাধারণ নাগরিক সবসময় অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক নন। মনে হচ্ছে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তনের বিষয়ে আপনি একটি গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এই ধরনের অসদাচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অন্যদেরও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করতে পারে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এই ধরনের অসদাচরণ যাতে জনসাধারণের ওপর প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে সরে এসে ঐকমত্যভিত্তিক, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কৌশলের দিকে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিগত পূর্বাভাসযোগ্যতা, প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। সুশাসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে যা দেশীয় এবং বিদেশি উভয় বিনিয়োগকেই উৎসাহিত করে। ডিএসআই বাস্তবায়ন কেবল নিরাপত্তা পরিমাপের চেয়েও বেশি কিছু করবে- এটি এটি তৈরিতে সহায়তা করবে। ফোন-সম্পর্কিত অপরাধ হ্রাসের ওপর মনোযোগ দেওয়ার ফলে পুলিশিং, ন্যায়বিচার প্রদান এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার উন্নতি প্রয়োজন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করবে, নিশ্চিত করবে যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সকলের উপকার করবে। তদুপরি, ডিএসআই বৃহত্তর উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ এবং বিশ্বস্ত ব্যাংকগুলো ভৌত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তায় অবদান রাখে। একইভাবে, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ অপরাধের জন্য প্রণোদনা হ্রাস করে। এইভাবে, ডিএসআই কেবল উন্নয়নের ফলাফল নয়- এটি এর জন্য একটি অনুঘটক।
আজ গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারণ করবে যে বাংলাদেশ স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে কেস স্টাডি হয়ে ওঠে নাকি পুরোনো মডেল এবং মেট্রিক্স দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। দৈনিক নিরাপত্তা সূচকের মতো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ, শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, বৈচিত্র্যকরণে বিনিয়োগ এবং জনগণের ক্ষমতা কাজে লাগানোর মাধ্যমে, বাংলাদেশ এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে পারে যেখানে সমৃদ্ধি কেবল অর্থনৈতিক উৎপাদনের মাধ্যমে নয়, বরং মানবিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তার মাধ্যমেও পরিমাপ করা হবে।
আগামী যাত্রার জন্য দূরদৃষ্টি, সহযোগিতা এবং সাহসের প্রয়োজন। স্থিতিস্থাপকতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষমতার ইতিহাসের সাথে, বাংলাদেশ একটি নতুন যুগের জন্য সমৃদ্ধিকে পুনর্নির্ধারণ করার জন্য অনন্য অবস্থানে রয়েছে- এবং বিশ্বকে দেখানোর জন্য যে প্রকৃত উন্নয়ন মানে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং অন্তর্ভুক্ত বোধ করে। তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি দূর করার ওপর মনোনিবেশ করে এবং কৌশলগত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে, বাংলাদেশ তার সকল নাগরিকের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করতে পারে, নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ব্যক্তির একটি ন্যায়সঙ্গত এবং প্রাণবন্ত সমাজে উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অর্থায়নের সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি অবকাঠামো এবং যৌথ উদ্যোগের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক পদ্ধতি সহজীকরণ এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্কার, পাশাপাশি বৈচিত্র্যের সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য বাজার গবেষণা উদ্যোগ অপরিহার্য। সবুজ প্রযুক্তি প্রণোদনা এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি অনুশীলনের মাধ্যমে টেকসইতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা কর্মসূচি তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে। এই কৌশলগুলো গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে পারে, একটি একক খাতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে এবং আরও স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে পারে। ১৯৮২ সালের পর থেকে কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, এই চ্যালেঞ্জগুলোর স্থায়িত্ব ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশে নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় অগ্রগতি বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য