কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে কঠোর পোশাকবিধি নিয়ে ইরানি নারীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে । ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ইরানে অন্তত ৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি।
নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করলেও প্রতিবাদের ঢেউ দেশটির অন্তত ৮০টি শহরে এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে প্রতিদিনই প্রাণ দিচ্ছে মানুষ। নিহতদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী-শিশুও রয়েছে।
মাহসাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভে নতুন করে আরও একটি নাম প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তিনি ২২ বছরের তরুণী হাদিস নাজাফি।
কারাজ শহরে ২১ সেপ্টেম্বর ওই বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।
এর চার দিন পর গত রোববার সাংবাদিক এবং নারী অধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে দেখা যায় এক তরুণী তার খোলা চুল ঝুঁটি বেধে বিক্ষোভে যোগ দিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। মাসিহ আলিনেজাদের দাবি ছিল, ওই তরুণীর নামই হাদিস নাফাফি। বিক্ষোভে যোগ দেয়ার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর ছয়টি গুলিতে তিনি প্রাণ হারান।
This is the funeral of 20 year old #HadisNajafi, who was shot dead on the streets by security forces for protesting yhe murder of #MahsaAmini by Hijab Police.
— Masih Alinejad 🏳️ (@AlinejadMasih) September 25, 2022
Hadis was a kind hearted girl and loved dancing. pic.twitter.com/tduxVe1SZf
ইরানের সাংবাদিক ফারজাদ সেফিকারানকে উদ্ধৃত করে আল আরাবিয়া জানায়, বিক্ষোভে নিহত হাদিসের মুখ, ঘাড় এবং বুকে গুলি লেগেছিল। স্থানীয় ঘায়েম হাসপাতালে নেয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়। আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনেও ভিডিওতে চুল বাঁধা তরুণীকে ‘হাদিস নাজাফি’ বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে সোমবার বিবিসি ফার্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আগে চুল বাঁধা ওই তরুণীর নাম হাদিস নাজাফি নয়। ওই তরুণী নিজেও বিবিসিকে একটি ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আমি বিক্ষোভে নিহত হাদিসা নাজাফি নই। তবে আমি নারীদের জন্য, মাহসাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’
زنی که بستن موهایش نماد جسارت و شجاعت معترضان در خیابانهای ایران شد، در تماس تصویری با بیبیسی فارسی گفت که او حدیث نجفی که خبر کشته شدنش اعلام شده نیست. او در پیامی ویدیویی میگوید «برای حدیثها و مهساها میجنگم.» pic.twitter.com/GdE9YfC1Rx
— BBC NEWS فارسی (@bbcpersian) September 26, 2022
চুল বেঁধে বিক্ষোভে অংশ নেয়া নারীকে ‘হাদিস নাজাফি’ বলে দাবি করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি অ্যানিমেশন ভাইরাল হয়েছে। তবে বিবিসি ফার্সির টুইটের পর ওই অ্যামিনেশনের নির্মাতা এলো নিকো শিরোনামে একটি সংশোধনী দেন। এলো নিকো লেখেন, বিবিসি জানিয়েছে চুল বাঁধা যে তরুণীর অ্যানিমেশন আমি করেছি, তিনি জীবিত আছেন।
বিবিসি ফার্সির প্রতিবেদনের পর হাদিসের মৃত্যুর প্রতিবেদন থেকে চুল বাঁধা তরুণীর ছবি সরিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
তবে এর দু’দিন পর ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দেশটির বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) বরাতে জানায়, ঝুঁটি বেঁধে বিক্ষোভে অংশ নেয়া ওই তরুণীর নাম হাদিস নাজাফি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এসব প্রতিবেদনের বরাতে বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমও ভাইরাল ভিডিওর তরুণী ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন দাবি করে বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ভাইরাল ভিডিওর তরুণী আর হাদিস নাজাফি যে আলাদা ব্যক্তি তা নিয়ে সোমবার রাতেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল নিউজবাংলা।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর গত মঙ্গলবার এই বিভ্রান্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। এতে বলা হয়, কয়েক ডজন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম চুল বেঁধে বিক্ষোভে সামিল হওয়া তরুণীকে হাদিস নাজাফি বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে ভিডিওর ওই তরুণীকে পরে হত্যা হরা হয়। তবে ভিডিওটিতে যাকে দেখা গেছে তিনি হাদিস নাজাফি নন।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল ভিডিওটির অপব্যবহার হলেও হাদিস নাজাফির মৃত্যুর ঘটনা সত্যি।
নেদারল্যান্ডভিত্তিক ফার্সি ভাষার রেডিও জামানেহ কথা বলেছে হাদিসের এক স্বজনের সঙ্গে। তার তথ্য অনুসারে, হাদিসের বয়স ২২ বছর। ইরানের কারাজে শহরে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভের সময় শর্টগানের অন্তত ২০টি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। বুকে, মুখে এবং ঘাড়ে লাগা এসব গুলিতে প্রাণ হারান হাদিস।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরান বিক্ষোভে নিহতদের যে তালিকা করেছে সেখানেও হাদিস নাজাফির নাম রয়েছে। তার পরিবার সোমবার বিবিসি ফার্সিকে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। হাদিসের মৃত্যু সনদও প্রকাশ করেছে পরিবার। ইনস্টাগ্রামে হাদিসের অ্যাকাউন্ট ‘রিমেম্বারিং’ রয়েছে।
হাদিসের বোন শিরিন নাজাফি রেডিও জামানেহকে জানান, পরিবারিক বন্ধুরা তাদের কাছে আলোচিত তরুণীর ভাইরাল ভিডিওটি পাঠিয়েছিলেন। এরপর তারা প্রাথমিকভাবে সাংবাদিকদের বলেছিলেন চুল বাঁধা তরুণীটি হাদিস হতে পারে। কারণ ভিডিওর তরুণীর চুল, পোশাক ও চশমা অনেকটা হাদিসের মতোই দেখাচ্ছিল। তবে আসল তরুণী পরে বিবিসিকে তার নিজের আরেকটি ভিডিও পাঠানোর পর হাদিসের পরিবার নিজেদের ভুল বুঝতে পারে।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #MahsaAmini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।
আরও পড়ুন:চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রবিবার জানিয়েছে, দীর্ঘ বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ এক ভূমিধসের কারণে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ চাপা পড়েছেন, যাদের মধ্যে ২৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে শনিবার ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ইবিন শহরের জিনপিং গ্রামে ভূমিধস হয়।
সাংহাই থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনে তীব্র আবহাওয়া বিপর্যস্ত হয়েছে। গত বছর বন্যায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন ঘটছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিসিটিভি জানায়, প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে, সম্প্রতি দীর্ঘ বৃষ্টিপাত এবং ভূতাত্ত্বিক কারণের প্রভাবে এ বিপর্যয় ঘটেছে।
স্থানীয় কাউন্টি সরকার রবিবার এএফপিকে জানায়, শনিবার দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সিসিটিভি আরও জানায়, চূড়ান্ত সংখ্যা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
সংবাদমাধ্যমটি প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা অন্ধকারে ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে টর্চলাইট নিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং পরবর্তী পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৬ দশমিক ৯।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৯টা ১৯ মিনিটে দক্ষিণ জাপানের কিউশু অঞ্চলে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পরপরই ওই অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।
টোকিও থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানায়, সোমবার ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে কিউশু অঞ্চল। তবে ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের পর মিয়াজাকি ও কোচির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রিফেকচারে এক মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের বিষয়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা এক্সে জানায়, কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে বা উপকূলের দিকে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
জাপানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়াজাকি শহরে এরই মধ্যে ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাদেশিক এ রাজধানীতে প্রায় চার লাখ মানুষ বসবাস করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পের পর পশ্চিম জাপানের ইকাতা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্প যে অঞ্চলে আঘাত হেনেছে, তার কাছাকাছি এলাকায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন:চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ শিজাংয়ে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৩ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৯টা ৫ মিনিটে জিগাজে শহরের ডিংরি কাউন্টিতে ভূমিকম্প আঘাত হানে।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া হতাহতের সংখ্যাটি নিশ্চিত করে খবর প্রকাশ করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ মাত্রা ৬ দশমিক ৮ বলে জানায়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তিব্বত অঞ্চলে, যেখানে ভারত ও ইউরেশিয়া টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে। এটি হিমালয়ের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতাকেও প্রভাবিত করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের আশপাশের গড় উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ২০০ মিটার (১৩ হাজার ৮০০ ফুট)। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের চারপাশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটি তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার (২৪০ মাইল) এবং এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জিগাজে থেকে ২৩ কিলোমিটার (১৪ মাইল) দূরে অবস্থিত।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ভূমিকম্পে বাসিন্দারা চমকে উঠেন। তারা তাদের বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। তবে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, গত ১০০ বছরে এ অঞ্চলে ৬ বা তারও বেশি মাত্রার ১০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে তদন্তকারীরা তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, ইউনকে এরই মধ্যে আইনপ্রণেতারা দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার পর গ্রেপ্তার হলে ইউন সুক হবেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি অভিশংসিত হওয়ার পর গ্রেপ্তার হলেন।
প্রেসিডেন্ট ইউন গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণকালে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার এ ঘোষণার পর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রাখেন। মাত্র ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়।
দেশটির দুর্নীতি তদন্তকারী কার্যালয় (সিআইও) বলছে, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর শুরু হয়েছে। তদন্তকারী কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও পুলিশকে ইওলের বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থল থেকে এএফপির সাংবাদিক জানান, জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি লি ডাই-হোয়ানসহ তদন্তকারী কর্মীরা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করেই বাসভবনের ঢোকার চেষ্টা করছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, ইওলের বাসভবনের ভেতরে থাকা সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের প্রতিহত করেছে।
প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাকর্মীরা তদন্তকারীদের পরোয়ানা মানবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাকর্মীরা এর আগে ইওলের বাসভবনে পুলিশের প্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছেন।
সিনিয়র প্রসিকিউটর লি ডাই-হোয়ানসহ তদন্তকারীরা ইউনকে আটক করার জন্য তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইউনের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
দেশটির দুর্নীতি তদন্তকারী কার্যালয় বলছে, প্রেসিডেন্ট ইউন সুকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা শুরু হয়েছে। তদন্তকারী কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও পুলিশকে ইওলের বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে।
ইউনের আইনি দল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করে বলেছে, এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আরও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইওলের আইনজীবী ইওন ক্যাপ কিউন বলেছেন, বেআইনি পরোয়ানা কার্যকর করা বৈধ নয়।
ঘটনাস্থল থেকে এএফপির সাংবাদিক জানান, প্রেসিডেন্টের বাসভবন চত্বরে পুলিশের কয়েক ডজন বাস, শত শত পোশাকধারী পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
ইওলের সমর্থকদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ইওলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২ হাজার ৭০০ পুলিশ ও ১৩৫টি পুলিশের বাস ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে একটি আদালত তাকে আটক করার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করেন।
আরও পড়ুন:গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) সম্পর্কে গোয়েন্দাদের ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরাক-যুদ্ধ পরিচালিত হয় বলে স্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড।
বুধবার হাওয়ার্ড বলেন, এটি হতাশাজনক যে, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র শনাক্ত করতে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানগুলোতে ভুল হয়েছিল।
তবে তিনি বিশ্বাস করেন, অস্ট্রেলিয়াকে যুদ্ধে জড়িত করার সিদ্ধান্তটি জাতীয় স্বার্থে ছিল।
ন্যাশনাল আর্কাইভ অফ অস্ট্রেলিয়ার (এনএএ) ২০০৪ সালের আগের মন্ত্রিসভার নথি প্রকাশের সঙ্গে তার মন্তব্যগুলো মিলে যায়।
প্রতি বছর ১ জানুয়ারি এনএএ ২০ বছর আগের মন্ত্রিসভার নথি জনসম্মুখে প্রকাশ করে।
২০০৩ সালের নথিগুলোর কিছু নিখোঁজ হওয়ার কারণে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বিলম্বে প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, হাওয়ার্ডের সরকার ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছিল। ওই বছরের কয়েক মাস আগে মার্চে অস্ট্রেলিয়াকে প্রকাশ্যে ইরাক-যুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা হয়।
২০০৪ সালের একটি তদন্তে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের পরিমাণ এবং প্রকৃতি সঠিকভাবে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হাওয়ার্ড বুধবার বলেন, যুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
বল প্রয়োগের অনুমোদনের জন্য জাতিসংঘের কোনো অনুমোদন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইরাকে আক্রমণ শুরু করেন।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মিশনটি ছিল ‘ইরাককে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থেকে নিরস্ত্র করা, সন্ত্রাসবাদে সাদ্দাম হোসেনের সমর্থন শেষ করা এবং ইরাকি জনগণকে মুক্ত করা। পরবর্তীতে তার এই অভিযোগ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে (বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর) হাঙরের আক্রমণে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এএফপি।
অস্ট্রেলিয়ার জরুরি সেবা সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী নিহত ওই ব্যক্তি দেশটির পূর্ব উপকূলের হাম্পি দ্বীপে শনিবার বিকেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মাছ ধরছিলেন।
কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, আক্রান্ত হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যে লোকটি ঘটনাস্থলে মারা যান। ঘাতক হাঙর লোকটির ঘাড়ে কামড় বসিয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়াতে সর্বশেষ হাঙরের আক্রমণ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। সে সময় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একটি নির্জন সার্ফিং স্পটে সাদা হাঙরের আক্রমণে ১৫ বছর বয়সী একটি ছেলে প্রাণ হারায়।
ডেটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৭৯১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে হাঙরের আক্রমণে ২৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
১৮১ জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি থেকে এ পর্যন্ত মাত্র দুজনকে উদ্ধার করতে পেরেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়।
রাজধানী সিউল থেকে প্রায় ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মুয়ান শহরের বিমানবন্দরে ১৮১ জন আরোহী নিয়ে অবতরণ করছিল জেজু এয়ারের ফ্লাইটটি। ওই সময় রানওয়ে থেকে পিছলে ছিটকে গিয়ে কংক্রিটের দেয়ালে ধাক্কা মারলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
দেশটির জাতীয় অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩২টি ফায়ার ট্রাক ও বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।
মুয়ান অগ্নিনির্বাপণ সংস্থার প্রধান লি জিয়ং-হিয়ন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ব্রিফিংয়ে বলেন, উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। অগ্নিকাণ্ডে বিমানটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কেবল বিমানের লেজের অংশটি শনাক্তযোগ্য ছিল।
লি বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি, বিমানটি পাখির দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে কি না, দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সরকারি তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান চলাচলের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গুয়ামে কোরিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২২৮ আরোহী নিহত হওয়ার পর ২০২৪ সালের শেষ মুহূর্তে এমন বিমান দুর্ঘটনা দেখল দেশটি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য