‘৬০ সেকেন্ডেই জীবন বাঁচাবে মরিচের গুঁড়া’ শিরোনামে একটি পথ্য-পরামর্শ ঘুরছে ফেসবুকে। এতে বলা হয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব মরিচের গুঁড়ার সাহায্যে।
১৮ হাজার ১০০ ব্যবহারকারীর ‘প্রাথমিক শিক্ষক দর্পণ’ একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্টটি দেয়া হয় ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর। পোস্টদাতা হলেন ওই গ্রুপেরই অ্যাডমিন নাজমা ইসলাম।
ছবি আকারে পোস্টটি করেছেন নাজমা ইসলাম। যেখানে লেখা আছে (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), ‘হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিরভাগই মারা যান। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে খুব সহজেই হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষা করতে পারি৷
‘রান্নার কাজে প্রতিটি পরিবারেই শুঁকনো মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। আপনি কি জানেন- এই মরিচের গুঁড়াই হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচতে পারে? তাহলে চলুন জেনে নিই কীভাবে মরিচের গুঁড়া হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে পারে।
‘একটি গ্লাসে পানি নিন। এতে কিছু পরিমাণ মরিচের গুঁড়া নিয়ে নাড়ুন। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মিশ্রণটি এমনভাবে করতে হবে যেন এটি অনেক বেশি ঝাল লাগে। এরপর মিশ্রণের কয়েক ফোঁটা হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তির জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখে দিন। আপনার কাজ শেষ।
‘৬০ সেকেন্ডের মধ্যে দেখবেন হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জন ক্রিস্টোফার বলেন, এটা খুব সহজভাবে ও দ্রুত মানুষের জীবনরক্ষা করার অন্যতম উপায়।’
নাজমা ইসলামের এই পোস্টে বুধবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ ফেসবুক ব্যবহারকারী রিঅ্যাক্ট করেছেন। শেয়ার করা হয়েছে ৩২ হাজার বার। আর কমেন্ট জমা হয়েছে ১১২টি।
জেবুন্নেসা ঝুমুর নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী আক্ষেপ করে কমেন্ট করেছেন, ‘ইস আগে যদি জানতাম তাহলে মায়ের জন্য, ভায়ের জন্য চিকিৎসা দিতে পারতাম 😭’
এমন পোস্ট দেয়ায় অনেকে পোস্টদাতাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
মো. ফজলুল হক নামের একজন কমেন্ট করেছেন (বাক্য ও বানান অপরিবর্তিত), ‘সুনদর সংগ্রহ মানুষের কল্যাণে প্রচারিত হচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ চলে আসছে বাট আমরা জানি না এবং জানালেও তা মানিনা এখন গবেষকরা বললে তা মানি এবং মানার চেষ্টা করি। প্রচার করে থাকি। ধন্যবাদ।’
এই পোস্টের তথ্যের উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জন ক্রিস্টোফারের বরাত দেয়া হয়েছে তার অস্তিত্ব রয়েছে। তার পুরো নাম জন রেমন্ড ক্রিস্টোফার।
আমেরিকান এই ভেষজ ও প্রকৃতিবিদের জন্ম ১৯০৯ সালের ২৫ নভেম্বর, মারা যান ১৯৮৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি ভেষজ শাস্ত্র নিয়ে অসংখ্য বক্তৃতা ও প্রকাশনার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত ৫০টিরও বেশি ভেষজ সূত্র আবিষ্কার করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের স্প্রিংভিলে দ্য স্কুল অফ ন্যাচারাল হিলিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা।
মরিচের গুঁড়ায় হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি কমে- এমনটি কি বলেছেন জন ক্রিস্টোফার? এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি এ ধরনের টোটকা দিয়েছিলেন। তাকে উদ্ধৃত করে মরিচের গুঁড়া মিশ্রিত তরলের সাহায্যে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তদের ঝুঁকিমুক্ত করার উপায় সম্পর্কে অনলাইনে বেশ কিছু লেখালেখি পাওয়া গেছে।
মরিচের গুঁড়ার উপকারিতা নিয়ে জন ক্রিস্টোফারের সরাসরি উদ্ধৃতিও পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। তিনি বলেছেন, ‘৩৫ বছরের চিকিৎসাজীবনে এবং মানুষের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কিংবা শিক্ষাদানের সময়ে আমি কখনই জরুরি পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক-আক্রান্ত একজন রোগীকেও হারাইনি। এর কারণ হলো, খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে যখনই দেখেছি তারা তখনও শ্বাস নিচ্ছেন- আমি তাদের মরিচের গুঁড়া মিশ্রিত চা (এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ মরিচ গুঁড়া) খেতে দিই। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
এই পদ্ধতি হৃৎপিণ্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টোটকা দাবি করে তিনি বলেন, এই টোটকায় হৃদযন্ত্র দ্রুত সাড়া দেয়। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, শীতল চায়ের চেয়ে এই উষ্ণ চা দ্রুত কাজ করে। কারণ এটা ধমনির মাধ্যমে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে পৌঁছায়। তবে ফেসবুকে যেভাবে মরিচের গুঁড়ার তরল হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জিহ্বার নিচে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, জন ক্রিস্টোফার সে ধরনের কোনো পরামর্শ দেননি। তার পরামর্শ, গরম পানিতে এক চামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য পাকা মরিচের উপকারিতার তথ্য স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও পাওয়া গেছে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য বলছে, লাল মরিচ বিভিন্ন উপায়ে হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে। এটি প্রদাহ প্রতিরোধক। এই প্রদাহ হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। লাল মরিচ রক্তনালিকে সুস্থ রাখতে পারে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
গবেষকরা দেখেছেন, যারা নিয়মিত মরিচ খান এবং মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলেন, হার্ট অ্যাটাকে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।
২০০৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জিহ্বায় থাকা যে স্নায়ু রিসেপ্টর মরিচের ঝাল অনুভবে কাজ করে, সেই একই রিসেপ্টর হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে থাকে।
তবে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মরিচের গুঁড়ার সাহায্যে হৃদরোগ চিকিৎসার সম্ভাবনা নাকচ করছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা চিকিৎসক সোহেল হায়দার চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মরিচের গুঁড়া হৃদরোগের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’
ফেসবুকের পোস্টটি তার চোখে পড়েনি জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘মেডিক্যাল সায়েন্স বা অন্য কোনো চিকিৎসায় এ পদ্ধতিতে এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নেই।’
এ ধরনের পোস্টের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের টেনশন নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের পরিচালক মাহফুজুর রহমানও বললেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় এমন কোনো টোটকার তথ্য তিনি কখনও শোনেননি।
এই হৃদরোগ চিকিৎসক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য মেডিক্যাল সায়েন্সে আছে কি না আমার জানা নেই। যদি থাকত, যেহেতু আমি হার্ট নিয়ে কাজ করি, অবশ্যই আমি এ বিষয়ে জানতাম।’
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
বরং মরিচের গুঁড়া ব্যবহার নিয়ে উল্টো সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের শরীরের অবস্থা অনুযায়ী এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। অনেকের এটার কারণে মুখে ঘা দেখা দিতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে একটু ঝাল লাগার পর তা ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে এটার ব্যবহার না করাই উত্তম।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপের দংশনে আহত হয়েছেন মিলন আলী নামে এক কৃষক। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় মিলন আলী সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মিলন আলী ওই এলাকার তোবজুল হকের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন আলী বলেন, ‘সাপের ধরন চিহ্নিত করতে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সাপটি ধরে আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তাই সে সাপটি ব্যাগে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা সাপটি দেখে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মামুন কবির জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি একটি সাপের বাচ্চাসহ হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিশঙ্কামুক্ত। তারপরও আমরা ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
মাদারীপুরের শিবচরে একই দিনে তিনজনকে সাপে দংশন করেছে। তাদের মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শিবচর উপজেলার চর বাচামারা গ্রামের লোকমান খান বাড়ির পাশে বাদাম ক্ষেতে রাখা ঝাকার নিচ থেকে হাতে কাঁচি তুলছিলেন। এ সময় একটি সাপ তার হাতে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। চিকিৎসকরা তাকে এন্টিভেনম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বজনদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। এজন্য স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের আলেপখাঁর খাঁড়াকান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বাড়িতে পালা থেকে গরুর জন্য খড় বের করার সময় একটি সাপ তাকে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
একই দিন সকালে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা গ্রামের মোসলেম কাজী বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে একটি সাপে দংশন করে। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা সুলতানা বলেন, সাপের দংশনে আহত তিনজন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দুজনকে বিষধর সাপে কাটেনি। তাই তাদেরকে এন্টিভেনম দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তাদেরকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা উচিত। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা উচিত।
জেনেভা সফর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে এই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকের ওপর কোনো আক্রমণ যেমন আমি সহ্য করব না, তেমন রোগীর প্রতি কোনো চিকিৎসকের অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না।
রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ও বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ মাস। এই অল্প সময়ে আমি যেখানে গিয়েছি একটা কথাই বলেছি, আমি যেমন চিকিৎসকেরও মন্ত্রী, ঠিক তেমনি আমি রোগীদেরও মন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শুধু একটা প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি, তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাও, তোমাদের বিষয়গুলোও আমি দেখব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আর বানু প্রমুখ।
নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অতি সাধারণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াও সীমিত। ডাক্তারের কাছে এলে তারা প্রথমে চায় একটু ভালো ব্যবহার। একটু ভালো করে তাদের সাথে কথা বলা, একটু মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। এটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া। আমি মনে করি সে স্বপ্ন পূরণ করার কারিগর হচ্ছো তোমরা। যারা আজকে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছো। আমার বিশ্বাস, তোমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএস স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১০৩ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৭১ জন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ১৫৩ জন যোগদান করেন।
দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মন্তব্য